bv cvVK GwU ‡Kvb Kv‡jvRv`y ev Zš¿g‡š¿i eB bq | GB eB‡Z Avwg ‡`Lv‡Z
‡Póv K‡iwQ wKfv‡e nvRvi nvRvi eQi c~e© ‡_‡K ïiæ n‡q Av‡Rv Avgv‡`i gv‡S wfbœ
iƒ‡c GB weÁvb I c«hyw³i ¯^Y©hy‡M wU‡K Av‡Q Kv‡jvRv`y | ejv ‡h‡Z cv‡i nvRvi
nvRvi eQi a‡i P‡j Avmv AwggvswmZ inm¨¸‡jvi Z_¨c~Y© I ‡hŠw³K SECRET REVEALED UvB‡ci GK wbtk¦v‡m c‡o
‡djevi gZ eB | G‡j‡g‡jv , LvcQvov ,m~PxcÎwenxb
‡jLv g‡b n‡Z cv‡i , wKš‘ GB eB‡qi GKgvÎ g~j w_g n‡jv Avgv‡`i eZ©gvb
weÁvb Gi DrcwË ‡Kv_v ‡_‡K wKfv‡e Avi
Avm‡j AvR‡Ki weÁvbB wK hv`ywe`¨v GB in‡m¨i mÜv‡b c«K…Z mZ¨ m¤^‡Ü Rvb‡Z c«vmw½K
Ac«vmw½K D`vniYg~jK wKQyUv ev‡R eKv ?‡m
Rb¨ m~PxcÎ wb®ú«‡qvRb|cy‡ivUv bv co‡j w_g aiv ‡`‡ebv| ZvB cov ‡k‡l Avcbvi Kv‡Q cwi®‹vi n‡q hv‡e ,
wKfv‡e myc«vPxb gvbe mf¨Zvi ïiæ ‡_‡K Av‡Rv ch©šÍ GK inm¨gq kw³ , GK kw³kvjx
¸ßwe`¨v hy‡M hy‡M bvbv iƒ‡c gvbe mf¨Zv I c…w_ex‡K wbqš¿b Ki‡Q,hv me hy‡M wQ‡jv
,eZ©gv‡b Av‡Q ,fwel¨‡Z&I Avm‡e Av‡iK iƒ‡c | MZvbyMwZK eB‡qi evB‡i GK bZyb
mvm‡cÝ Gi mÜvb ‡c‡Z PvB‡j , Avcbvi cv‡k P‡j ‡eov‡bv ¸ßwe`¨vi aviK inm¨ gvbe
,mf¨Zv ,M‡elYv-M‡elK wPb‡Z PvB‡j ‡e÷ eyK
Kv‡jvRv`y THE BLACK MAGIC –SECRET BEHIND THE SCIENCE -2018
কালোজাদু
THE BLACK MAGIC
সৈয়দ মেহবুব রহমান
ইন্দ্রনীলা পাবলিশার্স
যশোর
কালোজাদু
THE BLACK MAGIC
সৈয়দ মেহবুব
রহমান
ইন্দ্রনীলা পাবলিশার্স
যশোর
প্রথম প্রকাশ সেপ্টেম্বর ২০১৮
কপিরাইট ও সর্বসত্ত্ব লেখক কতৃক সংরক্ষিত , এই বইয়ের কোন অংশ হুবহু নকল করা বা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত
অন্য কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার কপিরাইট আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ ।
মূল্য
– 300/- UvKv gvÎ
ISBN- 978-984-34-5060-9
(2)
কবিতা-
জনম-জন্মান্তর
শুনতে কি পাও মহাকালের কান্না
শুনতে কি পাও মৃত্তিকাগর্ভে হারানো সুদুরের কান্না
ইচ্ছা হয় ঘুরে আসি সেই সূদুরের দিনগুলোতে
যেখাতে হয়তো আমি ছিলাম এক বীরযোদ্ধার বেশে
নয়তো কোন অপ্সরীর প্রিয়তম হয়ে
কোন এক স্নিগ্ধ গোধুলীবেলায়
বসেছিলাম চোখে চোখ রেখে
এই পদ্মা-মেঘনা , গঙ্গা-যমুনা-স্বরসতী
, ঝিলম বা ইরাবতীর তটে
সৈয়দ মেহবুব রহমান
12-12-2017 Bs
h‡kvi
(3)
উ ৎ স র্গ
মা-বাবা
ও
ভাইবোন (সুইট,জুয়েল,নাইস,শাওন,রাসেল,শোভন)
, নানা-নানী , ছোট মামv ¯^cb, রাকিব , রাফসান , সাদিয়া
‘‘বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা স্ত্রী শান্তা ও কন্যা নীলমের প্রতি বিরক্তিকর লেখা
স্বত্তেও যারা ছিল আমার পান্ডুলিপি রচনার নিঃসঙ্গ সময়ের একমাত্র শ্রোতা”।
উদ্ধৃতি-
‘‘একটা জিনিস খেয়াল করলাম পৃথিবীর সকল লেখক রাত জেগে, শত কর্মব্যস্ততার মাঝে
অনেক কষ্ট স্বীকার করে গ্রন্থ রচনা করেন , কিন্তু নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান না,
ব্যাপারটা ভাবতেই লেখকদেরকে নিজেকে নিজের প্রতি বিরাট অকৃতজ্ঞ মনে হয় , তাই আমি এই
বই রচনার ক্ষেত্রে নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম”
(4)
(5)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ভূমিকা
bv cvVK GwU ‡Kvb Kv‡jvRv`y ev Zš¿g‡š¿i eB bq | GB eB‡Z Avwg ‡`Lv‡Z
‡Póv K‡iwQ wKfv‡e nvRvi nvRvi eQi c~e© ‡_‡K ïiæ n‡q Av‡Rv Avgv‡`i gv‡S wfbœ
iƒ‡c GB weÁvb I c«hyw³i ¯^Y©hy‡M wU‡K Av‡Q Kv‡jvRv`y | ejv ‡h‡Z cv‡i nvRvi
nvRvi eQi a‡i P‡j Avmv AwggvswmZ inm¨¸‡jvi Z_¨c~Y© I ‡hŠw³K SECRET REVEALED UvB‡ci GK wbtk¦v‡m c‡o
‡djevi gZ eB | G‡j‡g‡jv , LvcQvov ,m~PxcÎwenxb
‡jLv g‡b n‡Z cv‡i , wKš‘ GB eB‡qi GKgvÎ g~j w_g n‡jv Avgv‡`i eZ©gvb
weÁvb Gi DrcwË ‡Kv_v ‡_‡K wKfv‡e Avi
Avm‡j AvR‡Ki weÁvbB wK hv`ywe`¨v GB in‡m¨i mÜv‡b c«K…Z mZ¨ m¤^‡Ü Rvb‡Z c«vmw½K
Ac«vmw½K D`vniYg~jK wKQyUv ev‡R eKv ?‡m
Rb¨ m~PxcÎ wb®ú«‡qvRb|cy‡ivUv bv co‡j w_g aiv ‡`‡ebv| ZvB cov ‡k‡l Avcbvi Kv‡Q cwi®‹vi n‡q hv‡e ,
wKfv‡e myc«vPxb gvbe mf¨Zvi ïiæ ‡_‡K Av‡Rv ch©šÍ GK inm¨gq kw³ , GK kw³kvjx
¸ßwe`¨v hy‡M hy‡M bvbv iƒ‡c gvbe mf¨Zv I c…w_ex‡K wbqš¿b Ki‡Q,hv me hy‡M wQ‡jv
,eZ©gv‡b Av‡Q ,fwel¨‡Z&I Avm‡e Av‡iK iƒ‡c | MZvbyMwZK eB‡qi evB‡i GK bZyb
mvm‡cÝ Gi mÜvb ‡c‡Z PvB‡j , Avcbvi cv‡k P‡j ‡eov‡bv ¸ßwe`¨vi aviK inm¨ gvbe
,mf¨Zv ,M‡elYv-M‡elK wPb‡Z PvB‡j ‡e÷ eyK
Kv‡jvRv`y THE BLACK MAGIC –SECRET BEHIND THE SCIENCE -2018
পৃথিবীতে আর
বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে যে বিষয়গুলো রহস্যাবৃত আর অমিমাংসীত সেগুলোর সন্তুষ্টিজনক
উত্তর পেতে আমাদের মনে একটা আলাদা অব্যক্ত কৌতুহল জাগে ।আসলে ভূত বলে কিছু কি আছে
? আমরা আধুনিক মানুষরাই কি শুধু উন্নত ? মানব সমাজ ক্রমশ বিবর্তনে উন্নত নাকি
মানুষ তার সৃষ্টি ও জন্মলগ্ন থেকেই উন্নত জ্ঞানের অধিকারী, মানুষের পৃথিবীতে
আগমনের শুরুটা ঠিক কত আগে থেকে ১০ লাখ বছর আগে থেকে নাকি ০৬ হাজার বছর আগে থেকে?
কালোজাদু বাণ টোনা, জ্যোতিষ বাণী এ এগুলো কি সত্যি নাকি স্রেফ ভন্ডামী? স্রষ্ঠা ও তার সৃষ্টি
সম্বন্ধে অবারিত কৌতুহল, স্রষ্ঠা কে, তাকে কেন অনাদি
অনন্ত বলা হয়? এসব রহস্যঘেরা প্রশ্ন আমাদর মনে কখনো কখনো কোন ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে
মনে প্রবল দোলা দিয়ে যায় ।মন খোজে মন মানার মত প্রশ্নোত্তর । কিন্তু কোন উত্তরই
কেন জানি মনকে সন্তুষ্ট করতে পারেনা , জিজ্ঞাসু মনের তৃপ্তি বা পিপাসা মেটাতে পারেনা । এ সব অতি জটিল প্রশ্নের উত্তর
নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ও অতি স্বল্পজ্ঞানে দেবার চেষ্টা করেছি মাত্র, অকাট্য ও ১০০
ভাগ সত্য এবং প্রমাণিত কোন মতবাদ দিইনি বা বলছিনা এগুলো ১০০ ভাগ সত্য এবং প্রমাণিত
।শুধুমাত্র কিছু প্রচলিত প্রাচীন ও আধুনিক বই পত্র, উইকি, বিদেশী কিছু ওয়েবসাইট এর সামান্য সহায়তা, জনশ্রুতি ,সাধারণের ভিতর অসাধারণ যে বিষয়
আমাদের অজানা বা দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায় এবং নিজ জ্ঞানে ও ভাবনাতে সকল জাতি ও ধর্মের প্রতি
সমান শ্রদ্ধা রেখে যেটুকু যৌক্তিক মনে হয়েছে সেটুকু লিখেছি ও ব্যাখা দাড় করানোর
চেষ্টা করেছি মাত্র। মনে রাখবেন সবকিছুর উপর স্রষ্ঠা একমাত্র সত্য আর আপনি যে ধর্মের হোননা কেন জানবেন যে মানবতা আপনার
ধর্মের কেন সকল ধর্মেরই মূলভিত্তি । লেখার কোথাও কোথাও ছন্দহীন ও খাপছাড়া মনে হতে
পারে, এটা এ কারণে হতে পারে যে বইটা লেখা শুরু করেছি প্রায় বছর তিনেক আগে থেকে ।সাথে অত্যাধিক
কর্মব্যস্ততা, পড়াশোনা, নানা কারণে মুড সুইং করার কারণে নিয়মিত লিখতে বসা হয়নি ।
(6)
পাঠক ও যে কোন
ধর্মাবলম্বী জ্ঞানী ও গুণী মানুষের প্রতি অনুরোধ রইলো লেখার কোন প্রকার ভুলে আমার
প্রতি রুষ্ট না হবার জন্য ।
আচ্ছা কোন কিছু কি
নেই বললেই নেই হয়ে যায় ? প্রবাদ আছে যা রটে তা কিছুটা বটে ।পুরাকাল –বর্তমান
কাল - ভবিষ্যত কাল এই তিনই ÔÔকালোজাদু ÕÕএর উপজীব্য ।বলতে
পারেন এটা ÔÔ পাস্ট ফিকশন ÕÕ টাইপের বই । সায়েন্স ফিকশন নামটির সাথে আপনারা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
ফ্যানরা পরিচিত ।তবে ÔÔ পাস্ট ফিকশন ÕÕ নামক আজগুবি নামটি হয়তো আমিই প্রথম
কোথাও ব্যবহার করলাম এ জন্য যে আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে যতটা আগ্রহ আছে অতীত নিয়ে ততটা
আগ্রহ আমাদের নেই ।এর যৌক্তিক কারণ ও আছে কারণ দিনতো চলে যাচ্ছেই ।যা অতীত হয়ে
গেছে তাতো এক কায়দাতে গেছেই ।কিন্তু চিন্তা হলো ভবিষ্যত নিয়ে ।কারণ বেঁচে থাকলে
ভবিষ্যতকে ফেস করতে/মোকাবেলা করতে হবে আপনার ।বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবাটাই
বুদ্ধিমানের কাজ ।তবে অতীত নিয়ে যদি মানুষের আগ্রহ একেবারে না থাকতো তবে
ইতিহাস(HISTORY) নামে কোন বিষয় (SUBJECT) থাকতোনা ।প্রত্নতত্ববিদ, নৃতত্ববিদ,
ঐতিহাসিক এনারা থাকবার প্রশ্নই থাকতোনা ।আমি উচ্চমাধ্যমিক পর্য্যন্ত বিজ্ঞানের
ছাত্র ছিলাম ।পরবর্তী শিক্ষাজীবনটুকু মানবিক বিভাগের ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করেছি ।ইতিহাস
বিষয়টা আমার বরাবরই প্রিয় । স্নাতকোত্তর এ ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে
কেন জানি মনে হলো বিজ্ঞান আর ইতিহাসের(প্রাচীন হোক বা ইসঃ ইতিহাস হোক)মধ্যেও কেমন
একটা সুনিবিড় সংযোগ আছে ।মানুষের অতীতের কাহিনী বা সমাজ ব্যবস্থা যেমন ইতিহাসের আওতা বা অবদানের
বাইরে নয় তেমনি বিজ্ঞানের ও বাইরে নয় । অতীতের বা মহাকালের গর্ভে ডুব দেওয়ার ভিতর অদ্ভুত একটা রহস্যময়তা ও সাসপেন্স
আছে, হয়তো অতীত কে অতীত ভেবে বা “পাস্ট ইজ পাস্ট” ভেবে এসব আমরা ভাবনাতে ও নিয়ে আসতে চাইনা। আচ্ছা আজ আমরা যে খ্রিস্টাব্দ অতিবাহিত করছি, তার থেকে অনেক অনেক শতাব্দী আগে ধরুন আজ থেকে দশ বা বিশ হাজার বছর আগেও তো এই
পৃথিবীতে মানুষ বসবাস করতো। অনেকের হয়তো জানতে ইচ্ছা করে তারা কি করতো, কেমন ছিল তাদের
জীবন, আমরা যেমন পড়েছি আসলে কি তারা কতটা উন্নত বা অনুন্নত ছিলো এটা নিয়ে দন্দ -সন্দেহ - বিতর্ক চলে আসছে অনেক কাল
(7)
আগে থেকে। মানুষের জানার এই অপার আগ্রহ থেকেই বোধ হয় এইচ জি ওয়েলসের টাইম মেশিন, আর্থার সি
ক্লার্ক এর সায়েন্স ফিকশন কালজয়ী হয়ে যায় । অপার আগ্রহ, কৌতুহল, কল্পনা আছে বলেই
আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ন যুগে আমরা বসবাস করছি ।কিছু জিনিসের ব্যাখ্যা না থাকলে ও অনর্থক অবাস্তব হলেও তা আমাদের কে এক প্রকার
আনন্দ দেয়। এই যেমন ধরুন বিজ্ঞান
বলে ভূত বলে কিছু নেই , কিন্তু তারপরেও ভূতের বই আমাদের অবসরে প্রিয়, সারা পৃথিবীর উন্নত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি
গুলোতে, এফ এম রেডিও গুলো তে, গুগল প্লে স্টোরে ভুতের পিডিএফ বই, হরহামেশাই ভূত
এফ এম, আহট, এলিয়েনের কাহিনী, তুমুল দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে প্রচারিত হচ্ছে ।মানুষের অজানাকে জানার দূর্বার ইচ্ছা, রহস্যের প্রতি দূর্নিবার আকর্ষন আছে বলেই তো এই প্রোগ্রামগুলোর দর্শকেরও অভাব
হয়না ,
হোকনা অবাস্তব, অযৌক্তিক আর
সামান্য বাস্তবের মিশেল, কিন্তু সিনেমা আর ভুতের গল্প মিথ্যা জেনেও অদ্ভুত
এক আকর্ষন কাজ করে আমাদের ভিতর !।
এই বইটি পড়বার সময় আপনার মনে হতে পারে অনেক
কথাই মন গড়া বা অযৌক্তিক অথবা স্রেফ আবহমান বাংলার গ্রাম ও শহরে চলে আসা জনশ্রুতি
বা কুসংস্কার অথবা স্থানে স্থানে স্রেফ
ভূতের গল্পের বই ।এটা এজন্য হতে পারে যে
বইয়ের নামের সাথে বিষয়বস্তু ও কাহিনীর মিল রাখার জন্য এগুলো উদাহরণ এবং সাথে আমার
লেখার মৌলিকত্ব ধরে রাখার প্রচেষ্টা ও কপি পেস্ট থেকে দুরে থাকা । স্রেফ পাঠক মনে
কৌতুহল ও চমক জাগানো বইটির উদ্দেশ্য নয় । যুক্তিযুক্ত উদাহরন, যুক্তি, ও ইতিহাস
দিয়ে আমরা ঘুরে আসবো অতীত –বর্তমান –ভবিষ্যত । সাথে সাথে দাড় করানোর চেষ্টা করবো
অনেক অমিমাংসীত প্রশ্নের যুক্তিপূর্ন উত্তর । তবে বলবোনা যা লিখছি যা বলছি সবই ১০০
% সত্য, এটা হলো যুক্তি – বিজ্ঞান - ইতিহাসের আলোকে অথবা শুধু আমার
ছোট মাথায় স্বল্পজ্ঞানে কৌতুহল নিবৃত্তির প্রচেষ্টা মাত্র । হতে পারে ভারতের আদালত
সিরিয়ালের সেই বিখ্যাত সংলাপের মত Òযেটা দেখা যায় সেটা
হয়না , আর যেটা হয় সেটা দেখা যায়না Ó। আমি যেহেতু অতি
সামান্য একজন মানুষ তার উপর আহামারি জ্ঞান বা সার্টিফিকেট এর অধিকারী নই এবং
যেহেতু মানুষ মাত্রই ভুল করে , সেহেতু আমার লেখার ভুল স্বাভাবিক ও ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখবেন আবারো এ অনুরোধ রইলো ।
বিনীত
সৈয়দ মেহবুব রহমান
(8)
শুরুতেই বলে রাখি প্রথম
দিকের কয়েকপাতার লেখাগুলো অকারন মনে হতে পারে । মূল বিষয়বস্তু ও পরবর্তী লেখাগুলো বোঝবার
সূবিধার্থে শুরুতে কয়েকপাতা সাধারণ ও গতানুগতিক জানা ইতিহাস টাইপের লেখা।কিছু
উল্লেখযোগ্য সভ্যতা ও তার পরিচিতি (সভ্যতাগুলোর নাম –সর্বপ্রাচীন থেকে শুরু, সেই
সভ্যতার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ,শাসক , ঘটনা )
মেসোপটেমিয় সভ্যতা – বর্তমান ইরাকের
টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল এই সভ্যতা । বর্তমান
ইরাক, সিরিয়া , তুরস্কের উত্তরাংশ ও ইরানের খুযেস্তান প্রদেশ নিয়ে
ছিলো এই সভ্যতা । খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ থেকে ৩০০০ অব্দের মধ্যে উন্মেষ ঘটেছিলো এই
সভ্যতার ।রোমান, পারসিয়ানদের মাঝে হাতবদল হতে হতে ৭০০ খ্রিস্টাব্দে এসে এখানে
মুসলিম সভ্যতার উন্মেষ ঘটে । মুসলিম খিলাফতের শাসনামলে পরবর্তীতে এই অঞ্চল ইরাক
নামে পরিচিতি লাভ করে ।মেসোপটেমিয়া শব্দটি গ্রীক শব্দ । এর অর্থ হলো দুটি নদীর
মধ্যবর্তী অঞ্চল ।নলখাগড়ার জঙ্গল ও খেজুর গাছ ছিলো এই অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ ।
পরবর্তীতে টাইগ্রীস ও ইউফ্রেটিস নদীর পলি জমে ভরাট হয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দ
থেকেই এখানে মানুষের সমবেত হবার মাধ্যমে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে । দূর্বল প্রতিরক্ষার
মাধ্যমে বারবার বহিশত্রুর আক্রমনে বার বার আক্রান্ত হতে হতে এই সভ্যতা ভাগ হয়ে এর
ভিতর বেশ কটি সভ্যতার উন্মেষ ঘটে
।উত্তরাংশে আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতা । আর
ব্যবিলনের উত্তরে আক্কাদ ও দক্ষিনে সুমেরীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে ।
সভ্যতায়
এদের অবদান t –
০১) এদের
সভ্যতায় ধর্ম পালন, মন্দিরের উল্লেখ ও দেবতার পুজার উল্লেখ রয়েছে ।
০২) মাটির
নিচে জল রয়েছে এবং ভূপৃষ্ঠ পানির উপর ভাসমান এটা তারা মনে করতো ।
(9)
০৩) এরা
মন্দিরে ফসল জমা দেয়ার জন্য ও কে কতটুকু ফসল জমা দিলো সেই হিসাব রাখার সুবিধার্থে
গণিত শাস্ত্রের উদ্ভাবন করে । এদের গণণার সীমা ছিলো ষাট পর্যন্ত । এখান থেকেই
ষাট মিনিটে এক ঘন্টা ও ষাট সেকেন্ডে এক মিনিটের হিসাব আসে । তারাই প্রথমে ১২ মাসে
০১ বছর ও ৩০ দিনে এক মাস এই হিসাবের প্রচলন করে ।
০৪) তামা
ও টিনের সংমিশ্রনে ব্রোঞ্জ ধাতুর আবিষ্কার তারা করেছিলো ।
০৫) তারা
পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রীতে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, ১২ টি রাশিচক্র ও জলঘড়ির
আবিষ্কার তারাই করেছিলো ।
০৬) গিলগামেশ
নামে তাদের সেমেটিক ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিলো ।
০৭) সম্রাট নেবুচাদনেজারের
রহস্যময় ঝুলন্ত উদ্যান এখনো পৃথিবীর ০৭ টি প্রাচীন সপ্তাশ্চার্যের একটি ।
এখন আপনি দেখুন এই সভ্যতার আবিষ্কৃত সময়,
রাশিচক্র, পদক দিতে গিয়ে ব্রোঞ্জের ব্যবহার আমরা করছি না ?
মিশরীয় সভ্যতা - খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে মিশরে এ সভ্যতার
সুচনা হয় ।ফারাও সাম্রাজ্যের সুচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে ।এই রাজবংশের
উত্তরাধিকারীরা বংশানুক্রমে ফারাও হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ।খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতকে
লিবিয়ার এক বর্বর জাতির হাতে পতন হয় ৩০০০ হাজার বছরের প্রাচীন ফারাও রাজবংশের ।
সভ্যতায় মিশরীয়দের উল্লেখযোগ্য অবদান –
১) মিশরের পিরামিড
২) মমি
৩) হায়ারোগ্লিফিকস
৪) জ্যোতির্বিদ্যা
(10)
৫) বিভিন্ন অজ্ঞাত
রাসায়নিকের গুণ আবিষ্কার ।
৬) চিকিৎসা শাস্ত্রের
অস্ত্রোপচার,হাড় জোড়া লাগানো এ গুলো সম্বন্ধে তারা জানতো
যদিও যুক্তির বাইরে হয়তো বা অবিশ্বাস্য বা
সুপার ন্যাচারাল বলিনা কেন কিছু গুপ্তবিদ্যা বা ব্যাখাতীত কিছু বিষয় এ সভ্যতায় ছিল
(শুধুমাত্র এ সভ্যতাতে নয় , সমস্ত গুপ্তবিদ্যা পুরাকালে বিভিন্ন সভ্যতাতে পূর্ণ শক্তিতে বিদ্যমান ছিল , কিন্তু পরবর্তীতে উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষন ,উপযুক্ত উত্তরাধিকার ,নির্দিষ্ট
স্থানে চর্চার সীমাবদ্ধতা এবং গোপনীয়তা , যে কোন কারণে চর্চার বা গুপ্তবিদ্যা
উদ্ভাবনের সেই নগরী ধ্বংস হয়ে যাওয়া , নতুন সহজতর বিদ্যার বা যন্ত্রের উদ্ভাবন ,এসব
কারণে কথিত সব অতি ক্ষমতা বা গুপ্তবিদ্যা
হারিয়ে গেছে , বা হয়তো আপনার আমার এ সভ্যতাতে অন্য কায়দাতে বা অন্য রুপে
বিরাজমান থাকতেও পারে)যেটার ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক
ভাবে তেমন স্বীকৃত সত্যতা না থাকলেও , বা সামান্য
কিছুর উল্লেখ থাকলেও ; সেগুলোর ভাসা ভাসা
কিছু রেফারেন্স দিয়ে এই গ্রন্থের নামের স্বার্থকতা বোঝাতে সক্ষম হবো বলে
মনে করি ।
ভারতীয় সভ্যতা –
বলতে গেলে যত সভ্যতা
আছে তার ভিতর জ্ঞানে বিজ্ঞানে বৈচিত্রে ভারতীয় সভ্যতার মত সভ্যতা বোধ হয় আর নেই ।
গণিত , জ্যোতিষবিদ্যা , শিল্প-সংস্কৃতি , আয়ুর্বেদ এর চরম উৎকর্ষ কি নেই এই
সভ্যতায়। বলা যেতে পারে পৃথিবীর যত গুলো আবিষ্কৃত সভ্যতা পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে
ভারতীয় সভ্যতার মত ভেরিয়েশন কোন কিছুতেই নেই । আমাদের বাংলাদেশ থেকে শুরু করে
ভারতকে কেন্দ্র করে শ্রীলঙ্কা , আফগানিস্তান , পকিস্তান , নেপাল , ভুটান , এ রকম
বিশাল এলাকা ছিলো এ সভ্যতার অন্তর্গত । চমক হিসেবে ছড়িয়ে আছে ভারতীয় সভ্যতায় ছড়িয়ে
থাকা নানা উপকথা , মিথ ।
(11)
এ ছাড়াও চীনা সভ্যতা , অ্যাজটেক
, মায়ান সভ্যতা অনেক সভ্যতাই ছিলো পৃথিবীতে ।
এবার আসবো আমাদের মূল ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ও
তর্কের বিপরতে বিতর্ক ও আলোচনায় ।
প্রসঙ্গ , আপেক্ষিকতা t -
প্রাচীনকালের মানুষ
ছিলো গুহাবাসী। তারা ঘর বাড়ি নির্মান করতে জানতো না , আগুনের ব্যবহার জানতোনা,
স্থায়ী ভাবে চাষ করতে জানতোনা, খাদ্যের জন্য ছিলো শিকার ও যাযাবর জীবনের উপর নির্ভরশীল
। পরিধানের জন্য কাপড় ছিলোনা ।গাছের পাতা, ছাল বাকল ও পশুর চামড়া পরিধান করে লজ্জা
নিবারন করতো ।টোটালি এটা বোঝানো হচ্ছে বা চিরকালই
আমরা জেনে বুঝে এসেছি যে প্রাচীন
বা প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ এ রকম ভাবনার অতীত অনুন্নত জীবন যাপন করতো । ছিলো
খাদ্যের ও ফসলের জন্য শিকার করা ও প্রকৃতির উপর নির্ভরতা, যেখানে ছিলো গ্রীষ্মের
দুর্বিষহ গরম, প্রতিকারে ছিলোনা এখনকার বৈদ্যুতিক ফ্যান বা এ.সি, ছিলো গন্তব্য
স্থলের দুরত্ব, ছিলোনা এখনকার মত বিমান , ট্রেন, ইন্জিন
চালিত যান বাহন, পানিতে চলমান স্পিড বোট । এ রকমই যদি হয় তবে তা ছিলো আমাদেরও চরম অনুন্নত ভাবনারও অতীত অন্ধকার জীবন ।
আসলে অনুন্নত বা
প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কি বুঝি । যীশু খ্রীষ্টের জন্মের পূর্ববর্তী পাঁচ-ছয় হাজার বছর বা আজ থেকে সাত –আট হাজার
বছর পূর্ব পর্যন্ত সময় কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। অর্থাৎ এই সময়ের আগের কোন
ইতিহাস মানুষের কাছে নেই, তাই এটি প্রাগৈতিহাসিক যুগ , অর্থাৎ ইতিহাসের আগের যুগ।
মানব ইতিহাসে ওই সময়ের সুনির্দিষ্ট কোন ইতিহাস নেই । তবে বিজ্ঞানীরা এই প্রাগৈতিহাসিক যুগকে ভাগ
করেছেন প্রস্তর যুগ , ব্রোঞ্জ যুগ ও লৌহ
যুগ এই কয়েকটা ভাগে। পৃথিবীর যত ইতিহাস পাই তার আবির্ভাব বা শুরু যুগ হলো লৌহ
যুগের শেষে ।
(12)
প্রকৃষ্ট উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে ব্রিটেন
এর লৌহযুগ শেষ হয় রোমান বিজয় এর মাধ্যমে , এর পর হতে ব্রিটেন এর লিখিত ইতিহাস এর
শুরু । এক লাখ (১,০০,০০০) খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ থেকে শুরু করে চল্লিশ হাজার(৪০,০০০)
বছর পূর্ব পর্যন্ত সময়কাল এই প্রস্তর যুগ ।এই যুগের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো কৃষির
উদ্ভাবন, বন্যপ্রানীকে গৃহপালিত পশুতে রূপান্তর ও তামার আকরিক গলিয়ে তামার
ব্যবহারের মাধ্যমে ধাতুর ব্যবহার শুরু । কথাটা এখানেই কপার বা তামার গলনাংক ১০৮৫
ডিগ্রী সেলসিয়াস । কাঠের চুলার আগুনের তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৫৯৩
ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্য্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব ।তো সেই সময়ে (আমাদের ভাষাতে অনুন্নত
যুগ) তামা আকরিক সংগ্রহ থেকে শুরু করে তামার ১০৮৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস গলনাংকে পৌছে
তামার ধাতব বস্তু বা তৈজস তৈরি করাটা যে গল্প কথা নয় সেটা নবম শ্রেনীর একজন
সায়েন্স স্টুডেন্ট মাত্র খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবে
কিন্তু একটা জিনিস
কি জানেন , আমার কিন্তু মনে হয় মানুষ তার আদিমতম পর্যায় থেকেই চির উন্নত । মানুষের
সমাজ ব্যবস্থা , খাদ্য , বাসস্থান চিরকালই এমন । যুগে যুগে তার জীবনযাত্রা ও
সুযোগের রূপ পরিবর্তন হয়েছে মাত্র । যুগে যুগে
ভিন্ন রুপে ভিন্ন মাত্রাতে বিজ্ঞান ফিরে এসেছে তার কাছে । বিজ্ঞান ছাড়া কোন
যুগেই চলতে পারেনি মানুষ । মানুষ তার সৃষ্টির শুরু হতে যত শতাব্দী অতিক্রম করেছে
তার সাথে ছিলো বিজ্ঞান অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হিসেবে ।
তাহলে প্রশ্ন এসে যায়
তাই যদি হবে তাহলে আমরা অনুন্নত বিজ্ঞান বিহীন মানুষের ইতিহাস পাই কি করে ? আসলে
পৃথিবীর সব অংশে মানব সভ্যতার সমান পত্তন হয়নি সকল কালে, সকল যুগে । প্রাচীন
সভ্যতায় উল্লেখযোগ্য হিসেবে গ্রীক, রোমান, মিশরীয়, ভারতীয়, ইনকা সভ্যতার উল্লেখ
আমরা পাই । এই সভ্যতা গুলোর অবদান হিসেবে ইউনানী ঔষধ, আয়ুর্বেদিক ঔষধ, মিসরের
পিরামিড, অ্যাস্ট্রোলজি উল্লেখযোগ্য । এ
ছাড়া এই সভ্যতাগুলোর থেকে আমরা বিভিন্ন মহা কাহিনী আখ্যান নির্ভর গ্রন্থ পাই ।
(13)
মহাভারত, হোমারের ইলিয়ড ও ওডিসি উল্লেখযোগ্য
(ইলিয়ড ও ওডিসির ট্রয় প্রসঙ্গে পরে আসছি ) | আসলে একটা সভ্যতা
উন্নত না অনুন্নত ছিলো সেটার রায় দিতে
গেলে শুধু মাত্র বর্তমান যুগের মত আবিষ্কার গুলো ছিলো কিনা বা এখনকার যুগের মত
সুযোগ সুবিধা ছিলো কিনা এটা দিয়ে সেই যুগকে বিবেচনা করা চলেনা । উন্নত এবং জীবনের
সঙ্গা যায়গা এবং আবিষ্কার এবং আপেক্ষিকতা ÔÔ(আপেক্ষিকতা ZZ¡ g‡Z mve©Rbxb mZ¨ e‡j wKQz ‡bB , mZ¨ `„wó, ¯’vb,
cwi‡ek , ক্ষমতা †f‡` wfbœ n‡Z cv‡i ) ভেদে ভিন্ন হতে পারে । ধরুন আপনি একটা যায়গাতে স্থির ভাবে
দাড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে দিয়ে একটি ১৫০ কি.মি/ঘন্টা গতিবেগে একটি ট্রেন চলে
যাচ্ছে । আপনি তখন ট্রেনটিকে আপনার সামনে দিয়ে আধা দৃশ্যমান ও দ্রুত ধাবমান একটি
অবজেক্ট হিসাবে দেখছেন । ধরুন পাশাপাশি দুটি ট্রেন –ÔকÕ
ও ট্রেন – ÔখÕ রাখা আছে
। এই দুইটি ট্রেন কে রাখা হলো নির্দিষ্ট একটা দুরত্ত্বে । এই দুইটি ট্রেনের স্টার্টিং পয়েন্ট একেবারে
এক দাগে রাখা হলো, এই দুইটি ট্রেনের গতি একই সেকেন্ড রাখা হলো । তখন আপনি ক অথবা খ
যে ট্রেনের যাত্রীই হোন না কেন উভয় ট্রেনের যাত্রীরা পরষ্পরকে স্থির ও একই স্থানে
স্থির দেখবে । শুধু মাত্র যদি কোন যাত্রী
ট্রেনের চাকার দিকে তাকান তবে তিনি দেখবেন চাকা গতিশীল ।এটাই আপেক্ষিকতা ।
জীব হতে হলেই যে আমাদের মানুষের বসবাসের মত উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে এমন কথা নেই
। কারন মানুষই একমাত্র জীব নয় । প্রত্যেকটি জীব এর ভিতর ভাষাগত ও জীবনযাত্রাতে
রয়েছে বিস্তর ফারাক , একটা দুর্বোধ্য
দুরত্ব রয়েছে প্রাণীকুলের ভিতর । আমরা মানুষ হয়ে সকল প্রাণী জগতের ভাষা ও জীবনাচরন
কি বুঝি ? । প্রাণীর কথা না হয় বাদ দিলাম । শুধুমাত্র আমরা মানব জাতির ভিতর কত
বৈচিত্র , কত প্রকারভেদ প্রকরণ । মানব জাতির রয়েছে কত প্রকার ভাষা, এক জনের
চেহারার সাথে আরেকজনের চেহারার মিল নেই । দু জন চাইনিজ বা তামিল যদি তাদের নিজস্ব
ভাষাতে কথা বলে আর তার পাশে একজন বাঙালী যদি দাড়ানো থাকে তবে তখন কি কিছু বুঝতে
পারবে ? চাইনিজ ও তামিল ভাষায় কথা বলা মানুষ দুটোর ভাষা বাঙালীর কাছে দুর্বোধ্য বা
পাখির কিচিরমিচির ছাড়া আর কিছু মনে হবেনা ।
(14)
ঠিক পশু পাখিদের ভাষা বা ডাক আমাদের কাছে শুধুই
ডাক বা কিচিরমিচিরমনে হয় । কিন্তু না তাদের এই ধ্বনি (যেটা শুধু আমাদের কাছে পাখির
কিচিরমিচির ,কুকুরের ঘেউ , গরুর হাম্বা) শুধু অর্থহীন ধ্বনি নয় । এর মাঝেই লুকিয়ে
আছে মানব জাতির জ্ঞানের বাইরে প্রাণী
জগতের এক অজানা – দূর্বোধ্য জগৎ । হতে
পারে পশু পাখির সেই জগতে সেই দূর্বোধ্য ভাষাতে লুকিয়ে আছে মানবজাতির অজানা
বিষ্ময়কর জ্ঞানের এক জগৎ ।প্রাণী জগতের এই সব জ্ঞানগুলো যদি মানবজাতির আয়ত্বে আসতো
তবে নিঃসন্দেহে মানবজাতির বিজ্ঞান কয়েকধাপ এগিয়ে যেতো। এই কথাটার অর্থ বোঝার আগে
চলুন জেনে নেই এ পর্য্যন্ত যে যে
প্রাণীদের অত্যাশ্চর্য্য ক্ষমতা মানব চোখে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয়ের বিস্ময়কর কিছু তথ্য -
০১) মাছিরা খুব কম সময়
বাঁচে ,এদের জীবনকাল মাত্র ১৪ দিন ।
০২) বিড়ালের প্রতি কানে রয়েছে ৩২ টি মাংশ
পেশী । এদের শ্রবন ক্ষমতা প্রবল ।
০৩) প্রতিটি মানুষের বিপরীতে রয়েছে এক মিলিয়ন
পিপিলিকা । এরা কখনো ঘুমায়না এদের কোন ফুসফুস নেই ।
০৪) প্রজাপতির দুই চোখে এক হাজারের ও বেশি
লেন্স রয়েছে ।
০৫) শামুক এমন এক প্রvণী যার চোখ নষ্ট হয়ে গেলে আবার নতুন চোখ গজায় ।
০৬) কুকুরের নাকের প্রিন্ট ইউনিক, এই প্রিন্ট
দিয়ে এক কুকুর থেকে আরেক কুকুর কে আলাদা করা যায় ।
০৭) পেঁচা নিজের ঘাড়কে ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত
ঘোরাতে পারে ।
০৮) নিশাচর প্রাণীরা রাতের অন্ধকারে বা অতি
স্বল্প আলোতে দেখতে পাই, এটা আমরা সবাই জানি । কিন্তু তারা এটা কিসের ভিত্তিতে
দেখে জানেন ? আচ্ছা আপনি কোন বস্তুতে যদি তাপ থাকে তা কি দেখতে পান ?
(15)
দেখতে পাননা , কারন তাপকে দেখা যায়না ছুয়ে অনুভব করা যায় । কিন্তু নিশাচর প্রানীরা
এই তাপকে দেখতে পাই ! সকল প্রাণীদের দেহে প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হয়, কারন আমরা বা
প্রাণীরা যে খাদ্য গ্রহন করে তা oxygen এর সাথে জারিত হয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য
উৎপন্ন করে এবং সেই শর্করা রক্তে মিশে কোষে পৌছায় ।
তখন দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনে
কোষের ভিতর শর্করা পুড়ে তাপ উৎপন্ন করে ।অর্থাৎ তাপ বিকিরন করতে থাকে । এসব তাপ
ultra-violet(অতি বেগুনী রশ্মি ) সংবেদী চোখে ধরা পড়ে । এর ফলে দুর থেকে প্রাণী
অথবা মানুষের দেহ অবয়ব খুব সহজে নিশাচরী প্রাণীরা দেখতে পায় । এর কারন নিশাচরদের
আছে Tapetum Lucidum । আর এর উপর ভিত্তি করে আবিষ্কৃত হয়েছে Infrared
Technology ।
০৯) মিলানোফীলা(MILANOPHILA) নামক এক জাতের গূবড়ে
পোকা আছে যারা ১২ কিলোমিটার দূর থেকে বনের আগুণ লাগা বুঝতে পারে ।
১০)
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে ২০০ এর বেশি ভাষা আছে কিন্তু লিখিত কোন রূপ
নেই ।
১১) অক্টোপাসের
কোন মস্তিষ্ক নেই কিন্তু একাধিক হৃদপিণ্ড আছে ।
১২) রেড ফ্লাট
বার্ক বিটেল নামক লাল রঙের সুন্দর একটি পোকা মাইনাস ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও মারা
যায়না ।
১৩) উটের দুধ
থেকে দই তৈরি করা যায়না ।
১৪) সাপের ছোবলে
ঘোড়া এবং বেজি মরেনা ।ঘোড়ার রক্তে সাপের বিষ ঢুকিয়ে তৈরি হয় সাপে
কাটা মানুষ কে বাঁচানোর ইনজেকশন এন্টিভেনম ।ঘোড়া না থাকলে
তাহলে কিভাবে সর্প বিষ প্রতিরোধী ইনজেকশন বানাতাম আমরা ।
১৫)লেজ কাটলে
ঘোড়া মারা যায় ।
(16)
১৬)হাতি ০৩ থেকে
১২ মাইল দূর থেকে পানি কোথায় আছে জেনে ফেলে । কিভাবে পানির
সন্ধান এত দূর থেকে পায় জানেন ? এর রহস্য লুকিয়ে আছে বিস্ময়কর ভাবে হাতির শুঁড়ে । হাতি তার শুঁড় দিয়ে একপ্রকার তরঙ্গ সৃষ্টি করে । যে পানি শনাক্তকারী তরঙ্গ পানিতে গিয়ে ফিরে এসে জানান দেয় পানির উপস্থিতি ।
১৭)মশার ৪৭ টি
দাঁত আছে ।মিলিপডের plenipes প্রজাতির ৭৫০ টি পা থাকতে পারে ।
১৮)একটি মশা মাত্র
এক সেকেন্ডে ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপটাতে পারে ।আর এই এক
সেকেন্ড এ যখন ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপটাতে শুরু করে তখনি আমরা শুনতে পায় মশা কানের
গোঁড়ায় ভন ভন করছে ।মশা কামড়ায় রক্তের গ্রুপ দেখে ।ব্লাড গ্রুপ O রা কে সবথেকে বেশি মশার কামড় খায় । ব্লাড গ্রুপ
A সবথেকে কম কামড় খায় । তাহলে মশা কোন বিজ্ঞান বা বুদ্ধির উপর নির্ভর করে রক্তের
গ্রুপ চেনে সেটা আমাদের অজ্ঞাত ।
১৯) আমাদের
পৃথিবী ঘন্টায় প্রায় ৬৭০০০ মাইল বেগে সামনের দিকে ছুটে চলেছে
২০) ইলেক্ট্রিক
ইল মাছ ৬৫০ ভোল্ট এর বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে ।
২১)প্রতি
ঘন্টাতে আমাদের বিশ্বজগত চতুর্দিকে ১০০ কোটি মাইল বিস্তৃত হচ্ছে মানে আমাদের বিশ্বজগতের আয়তন প্রতিদিন চারদিকে ১০০
কোটি মাইল বাড়ছে ।
২২)মানুষের
চাইতে কুকুরের নাসিকা দিয়ে গন্ধ নেবার
ক্ষমতা ১০০০ থেকে ২৮০০০ গুন বেশি ।
২৩) আপনি যদি
আকশে উড়তে চান কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই তাহলে আপনাকে সেকেন্ডে ০৭ মাইল দৌড়ে যাবার
মত শক্তি থাকতে হবে ।
২৪)আমাদের
হৃদপিণ্ড দিনে এক লক্ষ বার স্পন্দন বা বিট তৈরি করে ।
(17)
২৫)পৃথিবীর সবচেয়ে
দামি কফি কফি লুয়াক হল সিভেট বিড়ালের কফি বিজ খেয়ে ত্যাগ করা মল , কফি বীজ খেয়ে যে
মল ত্যাগ করে সিভেট বিড়াল সেই মলই হলো সব থেকে দামি কফি কফি লুয়াক ।
২৬) মরুভুমির
তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৭৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস উঠতে পারে ।
২৭) একটা
বজ্রপাতে ১০ মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ সৃষ্টি হতে পারে ।
২৮) আপনার ঘরে
আলো দেওয়া বাতিটি সেকেন্ডে ৫০ বার জলছে আর নিভছে কিন্তু আপনি সেটা দেখতে পাচ্ছেননা
।
২৯)মানুষ শুনতে
পায় ২০ হাজার হার্জ এর শব্দ ,কুকুর ৪০ হাজার , ডলফিন দেড় লাখ ,বাদুড় ০২ লাখ হার্জ কম্পনের সব্দ শুনতে পায় । তাহলে অনেক
অজানা শব্দ আমরা শুনতে পায়না ।কি জানি কত অজানা কথা লুকিয়ে আছে সেই মানুষের শোনার
সামর্থ্যের বাইরের শব্দে ।
৩০)যে প্রানীর
আকার যত ছোট সে আশে পাশের গতিশীল বস্তুকে তত ধীরে দেখে । এজন্য মাছির দিকে আপনি যত
জোরে হাত নিয়ে যান না কেন সে দেখে ফেলে ,আপনার হাতের গতির কারনেও আপনার হাতটা সে
দেখতে পায় , সাধারনত আমরা গতিশীল বস্তু আবছা দেখতে পাই । কিন্তু সে সব পরিষ্কার
দেখে ।
৩১) সকল পোকামাকড়
থেকে পিপড়ার মস্তিষ্কে আড়াই লাখ বেশি কোষ
আছে ।
৩২) পৃথিবীর সকল
নদী নালা খাল বিল সাগর মহাসাগর এ যত পানি
আছে তার তিন গুন বেশি পানি আছে পৃথিবীর ভিতরে ।
৩৩) পৃথিবীর
মাটির নিচে এত স্বর্ন রয়েছে যে তা দিয়ে পুরো পৃথিবী কে ১.৫ ফুট পুরু স্বর্নের আস্তরন
দিয়ে মুড়ে দেওয়া যাবে ।
(18)
৩৪)চাঁদ না
থাকলে পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টার বদলে দিন হত মাত্র ০৬ ঘণ্টায় ।
৩৫)আমরা যতবার
হাচি দিই ততবার আমাদের মস্তিস্কের বেশ কিছু কোষ মারা যায় , যদিও সেই কোষ গুলো দ্রুত
তৈরি হয়ে আবার আমাদের মস্তিষ্ক এর ক্ষয় কে পুরন করে ফেলে ।
৩৬) মধু হল মৌমাছির
বমি ।
৩৭) আমাদের চোখের
কর্নিয়া হল এমন একটা অঙ্গ যেটাতে শরীরের রক্ত মোটেই পৌছায়না ।রক্ত বাদেই এই অঙ্গটি
তার কাজ করে যাচ্ছে , তাহলে এটা কি করে চলে ,আর বিষ্ময়কর বাপার হল এটি বাতাস থেকে
সরাসরি অক্সিজেন নেয় ।
৩৮) আমাদের
হৃদপিন্ডের রক্ত পাম্প করার যে শক্তি তা দিয়ে অনায়াসে তিনতলা বাড়ির ছাদে পানি তোলা
যাবে ।
৩৯)প্রজাপতি তার
পা দিয়ে খাবারের স্বাদ গ্রহন করে ।
৪০)আমেরিকার
ক্যালিফোর্নিয়া এর হোয়াইট পাহাড়ের একটি পাঈন গাছ(বিরিষ্টলকন পাইন –PINUS LONGAEVA) আজ পর্যন্ত দীর্ঘতম জীবিত গাছ , গাছটির বয়স
৫০০০ বছর প্রায় ।
৪২)আমাদের মস্তিষ্কের
প্রায় ২৫ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে ।
৪৩)প্রতি বছর চাঁদ পৃথিবী থেকে দেড় ইঞ্চি দূরে সরে যাচ্ছে ।
৪৪) মানুষের শরীরে
নার্ভ বা স্নায়ুর পরিমান ১০০ বিলিয়ন ।
(19)
৪৫) ম্যামথ নামে হাতির পূর্ব পুরুষ যেটি সেই প্রানি টি
কিন্তু মিসরের পিরামিড তৈরির সময়ে পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল ।
৪৫) মধু সহজে নষ্ট হয়না । তিন হাজার বছরের পুরনো মধুও খাবার উপযোগী থাকে
।
৪৬) টিভিতে সিগন্যাল না থাকলে আমরা যে ঝিরিঝিরি বা জোনাকি পোকার
মত দাপাদাপি দেখি সেটা কিন্তু বিগ ব্যাঙ বা যে
মহাবিস্ফোরনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি তার তেজস্ক্রিয়তা , বর্তমানের এল
ই ডি টিভিতে এগুলো দেখা যায়না বললেই চলে , আগের ক্যাথোড রে টিভিতে দেখা যেতো বেশি
।
৪৭) গোল্ড ফিশ তার
স্মৃতি ০৩ সেকেন্ড আগের স্মৃতি ধরে রাখতে পারে ,তার দেখা কোন কিছু ০৪ সেকেন্ড হয়ে
গেলেই সে ভুলে যায় ।
৪৮) আন্তর্জাতিক
মহাকাশ স্টেশনের মহাকাশচারীরা দিনে প্রায় ১৫ বার সূর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখেন ।
৪৯) একটা
প্রজাপতির ১২ হাজার চোখ থাকে ।
৫০)পাখিদের
মধ্যে একমাত্র নিশাচর পেঁচা নীল রঙ দেখতে পায় ।
৫১) উট পাখির
মগজ তার চোখের থেকে ছোট ।
৫২) মাছ চোখ
খুলে ঘুমায় ।
৫৩) তেলাপোকা
তার মাথা ছাড়া ০৯ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে ।
(20)
৫৪) এক ধরনের আর্টিফিশিয়াল
ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার আবিষ্কার এর চেষ্টা করছেন আমেরিকান করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গবেষকরা ।এটা দিয়ে ধরা যাবে যে ব্যাপারটা তাহলো আপনি যদি বাঙালি হয়ে চাইনিজ ভাষা লেখেন
তবে আপনি যে বাঙালি সেটা ধরা যাবে ।
৫৫) একটা অভিযোগ
বা কথা প্রায়ই শোনা যায় দাদা নানাদের মুখে যে , আগের মত খাবারে আর স্বাদ নেই , আমাদের সময়ের খাবারে
ব্যাপক স্বাদ ছিল ।কথাটা আসলে বলা ভুল । কারন হল মানুষ জন্ম গ্রহন করে ০৯ থেকে ১০ হাজার স্বাদ কোরক নিয়ে ।এটা হলও একেবারে ছোটবেলার কথা ।আপনি এই যে ৪০
বা ৫০ বছর বয়ষে এসে অভিযোগ করছেন কোন কিছুতে আগের মত স্বাদ নেই , এখনকার জিনিষ
ভেজাল এটার কারন হল আপনার স্বাদ কোরক গুলো বয়সের সাথে
সাথে জিহ্ববা থেকে কমতে থাকে ।এ কারনে ছোটবেলাতে
থেকে তরুন বয়ষ পর্যন্ত স্বাদ কোরক গুলো সম্পুর্ণ
থাকা এবং কার্যকরী তরতাজা থাকাতে যে কোন খাবারের স্বাদ আমরা ভালভাবে পাই । কিন্তু দেখা যায় একটা বয়সে এসে আমাদের জিহ্ববার
এই স্বাদ কোরকগুলো কমে যেতে থাকে এবং কার্যকরীতা হারাতে থাকে
, সে জন্য দাদা নানারা যখন যুবক থেকে বার্ধক্যে পৌছান তখন তারা এই অভিযোগ করেনে যে
খাবারে আগের মত স্বাদ নেই ,আসলে খাবারের স্বাদ ঠিক আছে কিন্তু ওনাদের যে জিহ্ববার
কোরক ক্ষতিগ্রস্ত বা বয়সের সাথে সাথে কমে গেছে সেটা ওনারা বা আমরা কেউ বুঝতে
পারেননা ।
৫৬) আচ্ছা
প্রায়শই আমরা শুনে থাকি জ্যোতিষ বিদ্যা , ভুত প্রেত , যাদু এগুলো একেবারে ডাহা
ভুয়া ।কিন্তু ভুয়া বলুন আর যাই বলুন ঐতিহাসিক ভাবে এগুলো ০২-০৪ হাজার বছর ধরে
মানুষের সাথে ব্যাপক ভাবে জড়িয়ে আছে ।এবং আপনি যত
যুক্তিই দিননা কেন জ্যোতিষ বিদ্যার উপকার ভোগী আর আর ভূতের দর্শনধারী লোকের অভাব তো
নেই বরং শতকরা হিসেবে বেশ ভাল সংখ্যাতে পাবেন আপনি এদের ।
(21)
- পৃথিবীতে আপনি ভৌতিক যেমন অনেক বাস্তব উদাহরন পাবেন তেমনি জ্যোতিষ বানী অনেকের
জীবনে ফলেছে এমন লোক আপনি সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের ধনী ও উচ্চ
পর্যায়ের মানুষেও পাবেন ।এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কোন
যুক্তি থাকুক আর নাই থাকুক ।বৈজ্ঞানিক যুক্তি না থাকলেও ভাগ্য বিশ্বাস মানুষের মাঝে
থাকবে ।পৃথিবীতে কিছু জিনিষ চিরকালই বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার বাইরে থাকবে ।
৫৭) এই মহাবিশ্বের বয়স যতদিন আপনার বয়স ও ততদিন
,মানে মহাবিশ্ব যদি ১০০০ কোটি বছর বয়সের হয়ে থাকে তো আপনার বয়স ও তাই ।এটা কোন যুক্তিতে বলা হয় জানেন ? এটা বলা হয় এই যুক্তিতে যে আপনি বা আমি তো পৃথিবী বা মহাবিশ্বে বিদ্যমান ধাতু বা বস্তু দিয়ে তৈরি ,
আমাদের শরীর যেসব পদার্থ বা ধাতু দিয়ে তৈরি সেই সব পদার্থ , বা ব্যাকটেরিয়া ,বা
ধাতু গুলো আমাদের শরীরে আসার আগে মহাবিশ্ব সৃষ্টি শুরু থেকেই তৈরি হয়েছে ।সে জন্য আপনি বা
আমি হলাম পদার্থের ভিন্ন অবস্থার রুপান্তর মাত্র , কিন্তু আমাদের দেহ তৈরির কাঁচামাল ঠিকই মহাবিশ্ব সৃষ্টির সম পুরাতন , সেই
হিসেবে আমাদের বয়স কম নয় !!! ।
৫৮) কালোজাদু আর বিজ্ঞান একই জিনিষ , বিজ্ঞান
যদি অশিক্ষিত , বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিবিহীন মুনি ঋষিদের
হাতে গিয়ে পড়ে আর তাদের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকে তবে সেটা হয়ে যায় তন্ত্র ,মন্ত্র ,কাল
যাদু । আর যদি বিজ্ঞান এর আবিষ্কার ল্যাব এ বসা উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রিধারী ব্যাক্তির
দ্বারা আবিষ্কার হয়ে মানুষের কল্যানে ছড়িয়ে যায় তবে সেটা হয় বিজ্ঞানের আশীর্বাদ বা
বিজ্ঞানের আবিষ্কার ।মুলত বিজ্ঞান আর
কালজাদু তন্ত্র মন্ত্র সবই বিজ্ঞানের ভেরিয়েসন বা রুপ , যদি
সত্যিকারের কার্যকরী তন্ত্র মন্ত্র থাকে ।এই মূহূর্তে খেয়াল আসছেনা কিন্তু কোথায় যেন পড়েছিলাম ভারতের কোন এক উপজাতিরা
কোন রকম শিক্ষাজ্ঞান ছাড়াই বংশপরষ্পরাতে প্রাপ্ত জ্ঞান দ্বারা নিখুতভাবে কাটা নাক
জোড় লাগাতে পারতো । ধরুন আপনি এমন একটা শক্তির সন্ধান পেলেন যেটা পৃথিবীতে সবার
অজানা , আপনি এটা যদি নিজের নামে পেটেন্ট করে বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহার করেন
তবে মোবাইল , কম্পিউটার , টেলিভিশন এর মত সারা পৃথিবীর মানুষ ব্যবহার করে উপকৃত
হবে , সাথে আপনি হয়ে উঠবেন মানব ইতিহাসে অমর এবং আর্থিক ভাবে সম্পদশালী।
(22)
কিন্তু যদি এমনটা হয়
আপনি অজানা যে শক্তির সন্ধান পেয়েছেন সেটা গোপন রাখলেন আর সেটার ব্যবহার
একমাত্র আপনি জানলেন তাহলে আপনি অতিমানব বা সুপার ম্যান হয়ে থাকবেন , বা
বংশানুক্রমে বা বিশেষ কোন গোষ্ঠী গঠন করলেন , বিষয়টা এমন যে শুধুমাত্র গোপন সেই
গোষ্ঠীর সদস্যরা আপনার সেই বিদ্যার ব্যাপারে জানলো এবং বংশানুক্রমে সেই গুলো তাদের
ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকলো বা উপযুক্ত উত্তরাধিকার বা সংরক্ষন অভাবে আবিষ্কৃত বিদ্যা
হারিয়ে গেল এরকমটা হতে পারে । অবিশ্বাস্য
হলেও এরকম কেউ বা কিছু আপনার চারপাশে বা আধুনিক পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।বাংলাদেশ
ও ভারতের কিছু যায়গা , কিছু মন্দির , চীনের সাওলিন টেম্পল ও মার্শাল আর্ট , ইলুমিনাতি
, মায়া সভ্যতা , ফ্রী মেসন , রথসচাইল্ড পরিবার , ভ্যাটিকান এর গোপন লাইব্রেরী , ফারাও
রাজবংশ ও পিরামিড ,ব্যাবিলনীয়,চৈনিক সুমেরীয় সভ্যতা ,ষোড়শ শতকের অজ্ঞাত ভাষাতে লেখা ভয়নেচ পান্ডুলিপি (কি কারনে , কি বিষয়ে বা কেন
লেখা হয়েছিল কেউ জানেনা , তবে ধারনা করা হয় রসায়ন শাস্ত্রের বর্তমান বিজ্ঞানেও নেই
এমন কিছু বিশেষ বিদ্যা এতে বিশেষ কোন ভাষায় লেখা , যেটা প্রচলিত কোন ভাষা নয় ,
কারো বানানো বাক্তিগত ভাষা ), সম্রাট অশোকের
দি নাইন , তিব্বতের(তিব্বত তো এ যুগেও মানুষের কাছে খুব বেশি কিছু না জানা
একটা যায়গা ) ভিক্ষুরা এসবই কালযাদু বা
রহস্যময় সেই ভয়নেচ পান্ডুলিপি
(23)
- গুপ্তবিদ্যার উদাহরন , কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে সম্রাট অশোক
চিন্তা করলেন তিনি আর যুদ্ধ বিগ্রহ করবেননা ।যতদিন বেঁচে থাকবেন মানব কল্যান ,
জ্ঞান সাধনা আর ধর্ম নিয়ে পড়ে থাকবেন ।দেশের সকল জ্ঞানীদের থেকে বেছে শ্রেষ্ঠ নয়জন
কে তিনি নির্বাচন করলেন ।এইচ জি ওয়েলস বলেছিলেন তার ‘’Outline Of World
History’’ গ্রন্থে যে সকল ভারতবর্ষের ইতিহাসে হাজার সম্রাট থাকতে
পারেন কিন্তু , অশোক এক আকাশে এক তাঁরা হিসেবে আলাদা ভাবে জ্বলবেন ।রক্তপিপাসু
চণ্ডাশোক যিনি কিনা কলিঙ্গ যুদ্ধ দেখে রক্তপাত ছেড়ে দেন। ১৯২৩ সালে আমেরিকান লেখক Talbot
mundy এর the nine unknown
নামে একটা উপন্যাস লেখেন যেটা মুলত এই মিথ নিয়ে লেখা প্রথম
কোন উপন্যাস। এবার আসুন দেখে নিই সম্রাট অশোকের দি নাইন বা নয়জন মহাজ্ঞানী
ব্যক্তিরা কতটুকু জ্ঞানী ছিলেন সে বিষয়ে, এই নয়জনের কাজ ছিল নয়রকম , নয়টি বিষয়ে
তাদের যে জ্ঞান সেটা শুনলে এই আধুনিক যুগেও আপনি শিউরে উঠবেন , বলা হয় আধুনিক
যুগের এত আবিষ্কার এ এই নয়টি বইয়ের অবদান অবশ্যই স্বীকার করতে হবে –
(24)
১। প্রথম বইটিতে
আলোচনা করা হয়েছিল , প্রোপাগান্ডার(প্রচার – হোক সত্য বা মিথ্যা , সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য করা ) কলাকৌশল ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ
সম্পর্কে। মান্ডি নামক একজন
মনিষীর মতে, ‘বিজ্ঞানের সবচেয়ে ভয়ংকর ট্রিকস
হলো জনগনের অভিমত কে নিয়ন্ত্রণ করা। কেননা
এর সাহায্যে যে কারো পক্ষে সম্ভব সমগ্র বিশ্বকে নিজের মত করে শাসন
করা যুদ্ধ বা চাপ প্রয়োগ না করেই মানুষ কে নিজের
করে নেওয়া ।’
২। দ্বিতীয় বইতে
আলোচনা করা হয়েছিল শারীরবিদ্যা(ANATOMY) সম্পর্কে , মানুষের
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম এবং বর্তমান শারীরবিদ্যা(ANATOMY) থেকে বাতিক্রম অনেক কিছু ছিল, একটি উদাহরণ হল, সেখানে
ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল যে কীভাবে স্রেফ স্পর্শের মাধ্যমে একজন মানুষের প্রাণ কেড়ে
নেয়া সম্ভব । নির্দিষ্ট
কিছু স্নায়ুর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ বা পরিবর্তন করে দেয়ার মাধ্যমে মানবহত্যার
এই বিরল পন্থাকে বলা হতো স্পর্শমৃত্যু।মার্শাল
আর্ট কিংবদন্তী ব্রুসলীর মৃত্যূ ও নাকি এই একই কায়দায় হয়েছিলো ।যদিও মৃত্যূর জন্য
কারন বলা হয়েছিল ঔষধের প্বার্শ প্রতিক্রিয়া ও মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশে ফোলাভাব।
আপনারা হয়তো প্রাচীন চীনে আজ থেকে কমপক্ষে ২৫০০ বছর আগে আবিষ্কৃত আকুপাংচার
পদ্ধতির কথা জানেন নিশ্চয়। এটা হল
এমন এক পদ্ধতি যেটার মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে চাপ দিয়ে শরীরের
বিভিন্ন গ্রন্থি গুলোর কার্যক্রম গুলো সঠিক ও পূর্ণ ভাবে পরিচালনা করে , এই
প্রেশার গুলো দিয়ে মানুষের ভালো করাও যায় , ক্ষতিও করা যায়। ধরুন
আকুপ্রেসার মতে আপনার পায়ের তলায় নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্টে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপ
দিয়ে আপনার লিভার, চোখ, কিডনি এই অঙ্গগুলোর কার্যক্রম এর উন্নতি ঘটানো সম্ভব ,
আবার যদি আপনি পায়ের তলাতে জোরে যদি আঘাত করেন তাহলে , সেটা আবার উপরোক্ত
অঙ্গগুলোর ক্ষতি সাধন করবে এটা নিশ্চিত । তাহলে
আকুপ্রেসার এর এমন কোন বিন্দু আছে যেটা বর্তমান আকুপ্রেসার এর বইগুলোতে নেই , সেই
পয়েন্ট টা এমন হল যে আপনার সাথে কেউ সৌজন্য সাক্ষাতের সময় করমর্দন করলো আর আপনার
হাতে হোক বা কোলাকুলির সময়ে পিঠেই হোক এমন কোন একটা ডেডলি আকুপ্রসার অ্যাপ্লাই
(25)
করলো যে আপনার গুরুত্বপূর্ণ নির্দিষ্ট কিছু
অঙ্গ বা স্নায়ুর কার্যক্রম সেদিন থেকে বন্ধ হয়ে আপনি দু মাস পর মারা গেলেন । একপ্রকার
স্লো পয়জন এর কাজ করলো
আকুপ্রেসার এর সেই গুপ্ত বা হারানো মুদ্রাটি । এরকম কি কোন কিছুর স্বীকার হয়েছিলেন ব্রুস লি ?!!।
inm¨gq- w` bvBb
৩। তৃতীয় বইতে
আলোচনা করা হয়েছিল অণুজীব বিজ্ঞান(microbiology) ও জৈব প্রযুক্তি(biotechnology) নিয়ে । অণুজীব
বিজ্ঞান(microbiology) কাজে লাগে বর্তমান এর ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস এর গবেষণাতে । এখনকার যত
এন্টিবায়োটিক , বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন সবই এন্টিবায়োটিক অণুজীব
বিজ্ঞান(microbiology) কল্যানে । আর জৈব প্রযুক্তি (biotechnology) দিয়ে
আধুনিক যুগের যে সব কাজ হচ্ছে টা হল বেকারির কিছু কাজ , brewery(মদ তৈরির কারখানা ) শিল্পে মদ ও বিয়ার তৈরি ,
পেনিসিলিন এর আবিষ্কার এর কাজে ।
(26)
জৈব প্রযুক্তি(biotechnology) এর যাদুকরী দিক টা না
বললেই নয় সেগুলো হল ধরুন শুধুমাত্র একটা গাছের সামান্য কিছু কোষ বা টিস্যু কলা
সংগ্রহ করে একটা পাত্রে রেখে দেওয়া হল আর সেখানে ওই গাছের প্রতিরুপ একটি গাছ তৈরি
হতে পারে , হুবহু একজন মানুষ বা প্রাণীর প্রতিরুপ সৃষ্টি বা ক্লোনিং সবই এই জৈব
প্রযুক্তি(biotechnology) এর অবদান । দূর ভবিষ্যতে
হয়তো এই জৈব প্রযুক্তি(biotechnology) এর কল্যাণে আমাদের কে গরু
বা ছাগলের মাংস খেতে আর পশু জবাই করা লাগবেনা ল্যাব এ একটুকরো গরুর মাংস বা গরুর
মাংশের কোষ থেকে কয়েক মন মাংস তৈরি সম্ভব হবে
।
৪। চতুর্থ বইতে
আলোচনা করা হয়েছিল রসায়ন ও ধাতুর রূপান্তর বিষয়ে। এক ভারতীয়
কিংবদন্তী মতে , ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে
যখন ভয়াবহ রকমের খরা দেখা দিয়েছিল, তখনকার মন্দির গুলো ও
ধর্মীয় ত্রান কার্যক্রমের সাথে জড়িত সংগঠনগুলো কোন এক গোপন উৎস থেকে বিপুল পরিমাণে
সোনা পেয়েছিল। কারন তখন স্বর্ণ দিয়ে
মুদ্রা তৈরি হতো এবং সর্বোচ্চ মানের মুদ্রা ছিল স্বর্ণমুদ্রা । তাহলে কি তথাকথিত
পরশপাথর আবিষ্কারের সুত্র তাদের কাছে ছিল ?
কলিঙ্গ যুদ্ধের প্রান্তর বর্তমান
ছবি ভুবনেশ্বর উড়িষ্যা , দয়া নদীর তীর
(27)
৫। পঞ্চম
বইতে ছিল টেরেস্ট্রিয়াল কিংবা
এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল, যোগাযোগের সব ধরণের উপায় সম্পর্কে বিশদ বিবরণ
দেয়া ছিল । হয়তো
বর্তমানের প্রচলিত সব জ্বীন হাজির করার ব্যাপারটা ছিল এই সবের অন্তর্ভুক্ত । সেটা তখন বাস্তবে হতো , আর
এখন হয়তো শুধুমাত্র তন্ত্র মন্ত্র নামে টিকে আছে । মুল কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়তো
হারিয়ে গেছে । এ থেকে ধারণা করা হয়, Òনয়
Ó নামক রহস্যময় নয়জন মহাজ্ঞানী
বাক্তি এলিয়েন তথা ভিনগ্রহবাসীর অস্তিত্ব
সম্পর্কেও অবগত ছিল । হতে পারে
এলিয়েন হল প্রাচীন গুহাচিত্রের রহস্যময় মানব বা জ্বীন যাই হোক একটা কিছু।
৬।ষষ্ঠ বইতে
আলোচনা করা হয়েছিল অভিকর্ষ বলের গোপন রহস্য নিয়ে, এবং প্রাচীন
বৈদিক বিমান তৈরীর নিয়মকানুন সম্পর্কে । মানে
কিভাবে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ভেদ করে বাতাসে ভেসে থাকা সম্ভব এবং কোন উড়ে বেড়ানোর
যন্ত্র আবিষ্কার সম্ভব সেটা বলা হয়েছিল ।
৭। সপ্তম বইতে
আলোচনা করা হয়েছিল সৃষ্টিরহস্য ও মহাজাগতিক নানা বিষয় বস্তু
নিয়ে। জীবের প্রান , ইচ্ছামত
আয়ু লাভ বা আয়ু দীর্ঘায়িত করা , পৃথিবীর ও প্রানের সৃষ্টি , ঈশ্বরতত্ব অনেক
আধ্যাত্মিক গুঢ় বিষয়ের আলোচনা ছিল এখানে ।
৮। অষ্টম বইতে
আলোচনা করা হয়েছিল আলোর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে এবং
কীভাবে আলোকে ব্যবহার করা যায় একটি কার্যকরী অস্ত্র হিসেবে । লেসার রশ্মি টাইপের কিছু
একটা না হোক অন্তত আলোর বহুমাত্রিক ব্যবহার সম্বন্ধে এতে বর্ণনা ছিল ।
৯। নবম বইটির
বিষয়বস্তু ছিল সমাজবিজ্ঞান (social
science)। এতে
আলোচনা করা হয়েছিল কীভাবে সমাজের ক্রমবিকাশ ঘটে , এবং কীভাবেই
বা এটি ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে পারে বা ধ্বংস হতে পারে । মানে মানব সভ্যতা কিভাবে উৎকর্ষে পৌছায় আবার
ধ্বংস হয়ে , ধ্বংস থেকে শুরু করে আবার উন্নতির শিখরের চক্রে বন্দি সেটাই আলোচনা
করা হয়েছিল ।
(28)
দি নাইন নামক এই সংগঠনের বৈশিষ্ট্য হলো এই রহস্যময় মিথ সংগঠনের সদস্য
সংখ্যা নয়(০৯) জনের বেশি হবেনা । কোন
একজনের মৃত্যু ঘটলেই তবে তার জায়গা নেয় নতুন আরেকজন ।এবং এই নয়জনই ওই পূর্ব
নয়জনের দ্বারা পূর্ব থেকে পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষার মাধ্যমে গোপনে মনোনিত । এভাবে
চিরকাল এই নয় রহস্যময়ের
সদস্য সংখ্যা নয়জনই থাকে এবং এই নয়জনের বাইরে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে
কখনোই কোন মানুষ অবগত ছিল না , বর্তমানে ও নেই আর ভবিষ্যতেও থাকবে না এটাই স্বাভাবিক
, এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকাটা এই সংগঠনের সদস্যদের প্রধান শর্ত । এবং
অবশ্যই গোপন এই সংগঠনের সদস্যদের মানসিক ভাবে সৎ , নির্লোভী , মানবতাবাদী , সংযমী
, এসব মহৎ গুনে ভরা পূর্ব জীবনের রেকর্ড থাকা লাগবে ।কারন এরকম সুপার ন্যাচারাল
ক্ষমতা যদি কোন সামান্যতম দুনিয়ার প্রতি মোহ আছে এমন লোকের হাতে পড়ে তবে মানবজাতির
ক্ষতি মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র ।
যদিও কারা এই গুপ্ত সংগঠনের সদস্য সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলার কোন
উপায় নেই , নিশ্চিত ভাবে আঙ্গুল তোলা
যায় কারো দিকে এমন কোন প্রমান পত্র ও নেই । তারপরও যুগ যুগ ধরে এর অতীত ও
বর্তমান সদস্যদের ব্যাপারে নানা গুজব প্রচলিত রয়েছে। ধারণা
করা হয় , দি নাইন এর সদস্যরা
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে , এবং তাদের
মধ্যে অনেকেই বিশ্ব ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি
মানুষের জন্য কতটুকু নিরাপদ এরকম নিয়ন্ত্রণ এর খুবই উঁচু পদে আসীন রয়েছে ।
আজ পর্যন্ত অসাবধানতা বা অসতর্কতা বশত নয়
রহস্যময়ের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে এখন পর্যন্ত যাদের নাম উঠে এসেছে বা ফাস
হয়েছে , তাদের মধ্যে দশম শতকের
প্রভাবশালী পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার ও উপমহাদেশে রকেট
বিজ্ঞানের জনক বিক্রম সারাভাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। GQvov
w` bvB‡bi M‡elYvq ev AbymÜv‡b divmx AwZc«vK…Z M‡elK jyBm R¨vKwjqU Ges divmx physician
Ges e¨vK‡Uwiqv M‡elK Av‡jKRvÛvi B‡qiwm‡bi
bvg we‡klfv‡e D‡jøL‡hvM¨
তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়না , এনাদেরকে সন্দেহভাজন
এর তালিকাতে রাখা হয় । আমি আপনি চিরকাল দেখে
(29)
আসছি এমন গোবেচারা মানুষদের ভিতরও লুকিয়ে থাকতে পারে অনেক
আশ্চর্য ক্ষমতা ।হয়তো আমরা বুঝতে পারিনা । কিন্তু আপনার দেখা দিনের গোবেচারা
মানুষটি তো হতে পারে রাতের অন্ধকারে এক অপরাধজগতের সম্রাট ।একটা ঈদের নাটকে ১০ বছর
আগে এ রকম একটা অভিনয় দেখেছিলাম সেজন্য বললাম প্রাচীন বিশ্ব ইতিহাস এর একটু
গভীরে বা মিথ পর্যায়ে পড়াশোনাতে গেলে আপনারা একটা জিনিষ
দেখতে পারবেন যে নিজস্ব জ্ঞানকে কুক্ষীগত করে
রাখাই হলো গুপ্ত সংগঠনগুলোর বা অতি ক্ষমতার মানুষদের
প্রধান কাজ বা অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য । এমনটি আমরা শুধু দি নাইন বা
ইলুমিনাতির ক্ষেত্রেই দেখিনি, দেখেছি প্রাচীন মিশরীয় ফারাউ , তিব্বতীয় মংক বা
সন্ন্যাসী গোষ্ঠী , মায়ান পুরোহিত , মুক্ত ম্যাসন , রোসিক্রুসিয়ান ও আরো
অনেকের ক্ষেত্রেই। তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান অন্য
কারও সামনে প্রকাশ করত না বা জনসাধারনের জন্য
উন্মুক্ত করতনা বলেই হয়ে উঠেছিল অদম্য শক্তি বা সুপার
ন্যাচারাল ক্ষমতার অধিকারী। এবং এরকমটিই আমরা দেখতে পাই দি নাইন এর ক্ষেত্রেও। এখন
তাদের কী অবস্থা সে সম্পর্কে আমরা হয়ত অবগত নই , কিন্তু এতটুকু
অনুমান আমরা করতেই পারি যে, যতই
দিন যাচ্ছে, তাদের জ্ঞানের পরিধি ততই আকাশ ছোঁয়া
হচ্ছে বা বেড়েই চলেছে আপনার আমার চোখের
আড়ালে থেকে । একটা ছোট উদাহরণ আপনাদের কে দিই , এখনকার
যুগে এই যে কোকা কোলা কোম্পানি যে কোক তৈরি করে , বা সেভেন আপ তৈরি করে , বা
মিরিন্ডা তৈরি করে এদের স্বাদ দেখবেন পুরো পৃথিবীর অন্যান্য সকল সফ্ট ড্রিংকস থেকে
ভিন্ন , অন্যরা তৈরি করলে এদের কাছাকাছি হয় কিন্তু এদের সমান হয়না ।এ রকম
বিখ্যাত অনেক খাবার পণ্য , ইলেকট্রনিক্স পণ্য , মোবাইল অনেক কিছুই
আপনি পাবেন যেগুলো ফর্মুলা জানা স্বত্তেও এবং একই পার্টস দিয়ে তৈরি পণ্য
কোম্পানীভেদে দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সার্ভিস কম বেশি হয়ে থাকে । ঔষধ ও কসমেটিক্স এর
উপাদান বা ফর্মুলা সব কোম্পানীরই একরকম , কিন্তু কোন কোম্পানীর ঔষধ বা কসমেটিক্স এ
মানুষ উপকার একটু বেশি পায় কেন ? সার্বজনীন সুত্রের বাইরে গিয়ে তারা কিন্তু
আলাদাভাবে তাদের গবেষকদের দিয়ে চিরকাল সুত্র অতি গোপনীয় রেখে কোম্পানীকে শীর্ষ অবস্থানে
রাখে । তেল মসলা
(30)
তো সব রাধুনীই তরকারিতে ব্যবহার করে থাকে
,কিন্তু সবার রান্না কি স্বাদের হয়ে থাকে
? ফ্রাইড চিকেন তো এখন প্রায় প্রতি মোড় এ পাওয়া যায় |কিন্তু কেএফসি
কেন অনন্য ? একটা কথা শুনেছিলাম যে কোকা কোলা কোম্পানির
পানীয় তৈরির সুত্র জানতো মাত্র দুজন , এবং তাদের দুজনের এক বিমানে চড়া থেকে শুরু
করে একসাথে কোন স্থানে যাওয়া বা মিলিত হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ । এ সবই এক কায়দার
গুপ্তবিদ্যার উদাহরণ।আচ্ছা প্রতিভাবান যে সব লোকেরা আছেন তারাও কিন্তু এক
প্রকার গুপ্তবিদ্যার উদাহরণ তারা নিজেরাও কিন্তু তা বুঝতে পারেননা ।যদি বলেন কেমন
, তাহলে বুঝিয়ে বলি ধরুন আপনি শত চেষ্টা করে গলাতে নতুন সুর বা ভালো সুর আনতে
পারেননা ।কিন্তু যিনি একজন ভালো সুরকার বা ভালো কন্ঠশিল্পী তার ছোয়াতে কিন্তু সাথে
সাথেই সেটা সুমধুর হয়ে ওঠে , কিন্তু তিনি নিজেও অ্যাকচুয়ালি কিভাবে তার কন্ঠে
সুন্দর সুর আসে সেটা আপনাকে শেখাতে পারবেননা বা নিজেও বুঝতে পারবেনা।আবার টিভিতে
দেখেন কোন খেলোয়াড় প্রচন্ড গতিতে বল করছে , আপনি কিন্তু চাইলেই বা ০৫ বছর প্রাকটিস
করলেও ওরকম হতে পারবেন এটা মোটেই বলা যাবেনা।কারণ ওই বোলার এর এমন একটা পেশী বলটা
ছোড়বার জন্য প্রচন্ড ফোর্স তৈরি করছে যেটা বোলার নিজে বোঝাতো দুরে থাক বিজ্ঞান ও ধরতে পারবেনা । আচ্ছা এখনকার বিজ্ঞানীরা কি সব
আবিষ্কার আমাদের হাতে ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন , রসায়নের সব
সুত্র কি স্নাতোকোত্তর পর্য্যন্তর বইয়েও আছে ? এই প্রশ্নটার উত্তর একটু ভেবে বলুন তো । আমার
মনে হয় যতটুকু মানবজাতির জন্য জানা নিরাপদ ততটুকুই আমরা পাঠ্যবইয়ে পাই ।
৫৯)
পুনর্জন্ম বলে কি কিছু থাকে ? আচ্ছা যদি থাকে তবে পুর্বের জন্ম ভুলে যাই কেন ,
আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন আজ থেকে ০৫ বছর
আগের অমুক তারিখে সকালে কি খেয়েছিলেন ? দুপুরে কি খেয়েছিলেন এগুলো কেও হঠাৎ করে
জিজ্ঞাসা করলে কি বলতে পারবেন ? অথচ আপনি
তো ওই দিনে খেয়েছেন , ওই দিন ফেলে এসেছেন, তাহলে মনে নেই কেন ? তবে বিশেষ বিশেষ
কিছু জিনিস,
(31)
বিশেষ কিছু দিন
আমাদের মনে থাকে, তেমন ভাবে আমরা স্বপ্নে
মাঝে মাঝে অপরিচিত মানুষের মাঝে নিজেকে দেখি, অপরিচিত সাজে নিজেকে, অপরিচিত মানুষ,
অপরিচিত পরিবেশ, অপরিচিত স্থানে দেখি এগুলো কি কোন জনমের ভুলে যাওয়া বা হারিয়ে
যাওয়া কোন দিন ? সুদুর অতীতে হারিয়ে
যাওয়া ফেলে আসা সেই দিন ? কে জানে,শুধু বাজে যুক্তি
দেখালাম আর বিনোদন দিলাম মাত্র ,
বিনোদন নিন পড়ে, বাস্তব না ভাবাই ভালো, কারন একটা কথা আছে যত মত তত পথ, সবার সাথে
সবার চিন্তা মিলতে হবে এমন কথা নেই, টিভি, সিনেমা, নাটক, ইন্টারনেট ফেসবুক ,বই পত্র সবই হলো
বিনোদনের জন্য, এগুলোর সব সত্যি হতে হবে এমন কথা নেই। শুনেছি পৃথিবীতে একটা
মানুষের মত দেখতে ০৭ টা মানুষ থাকে যাদেরকে বলে Doppelgangers বলে, এই Doppelgangers বা চেহারার মিল আপনার
সমসাময়িক সময়ের মানুষ হতে পারে, বা আপনার
সেই Doppelgangers টি হতে পারে আপনার থেকে কয়েক হাজার
বছর আগের বা আপনার মত দেখতে মানুষ টি আসতে পারে আরো ৫০০ বা হাজার বছর পর , তো আসুন
Doppelgangers দের কয়েকটি ছবি দেখা যাক –
কে বিজয় প্রকাশ আর কে শান আলাদা করুন দেখি
(32)
দক্ষিন আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইন জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেইগ
দুজনই বিখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী,
(33)
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার নাসের হুসেইন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
১ম বিশ্বযুদ্ধের একজন সৈনিক , ২য় বিশ্বযুদ্ধের একজন সৈনিক , এবং বর্তমানের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
(34)
(35)
বামের জন ১৯৬০ এর দশকের মহিলা জুডি জিপার আর ডানের জন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও
বামের জন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা , আর ডানের জন ইন্দোনেশিয়ার ইলহাম আনাস
(36)
বামের জন বেস্ট অ্যাকশন হিরো
সিল্ভেস্টার স্ট্যালোন , ডানের জন এর ছবি ইটালিয়ান চিত্রশিল্পী রাফায়েলের ১৫০০
সালের একটি চিত্রকর্ম থেকে নেওয়া
এই চিত্রকর্মটি পোপ ৯ম গ্রেগরি এর
একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জগৎবিখ্যাত ইটালিয়ান চিত্রকর রাফায়েল(১৪৮৩-১৫২০ ইং ) এর
হাতে ১৫১১ সালে অংকিত , এই চিত্রের সর্ববামের লোকটি কে সিলভেস্টার স্ট্যালোন এর মত
লাগছে কি ? রাফায়েল এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোন দুজনই ইটালিয়ান
(37)
রেসলার শন মাইকেল ও বলিউড
লিজেন্ড অক্ষয় কুমার
বিশ্বাস করুন আর
নাই করুন আমি কিন্তু বলিউড হিরো ঋত্বিক রোশনের একজন DOPPELGANGER কে আমাদের যশোর এর ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এ দেখেছি বেশ
একটু বড় হয়ে, ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের ভিতর প্রায়ই স্কুলে আসা যাওয়ার পথে অবাক
হয়ে ওনাকে দেখতাম , বেশ স্মার্ট আর ধনী
পরিবারের ছেলে বলে মনে হতো ওনাকে ।আবারও বলছি, ৯০% মিল বলিউড হিরো ঋত্বিকের ফেস
এর সাথে, এখনো উনি আছেন কিন্তু এখন হয়তো বয়সের
কিছুটা ছাপ পড়তে পারে ওনার চেহারাতে। পরিচয় না থাকাতে ওনার ছবিটা দিতে পারলাম না ।
তো এখন কি আর বলবো বলুন, কাকতালীয় ব্যাপার, DOPPELGANGER,
পূর্বজন্ম পরজন্ম যাই বলিনা কেন, সাধারন ব্যাপার হলেই বা কি আর পূনর্জন্ম হলেই বা
কি ? পূর্বের কিছু যেহেতু আমাদের মনে থাকেনা, সেহেতু পূনর্জন্ম হলেই বা কি লাভ
। আমাদের বর্তমান জীবনের স্মৃতি তিলে
তিলে ক্ষয়ে যায়, এক সপ্তাহ আগের অনেক কিছুই আমরা ভুলে যাই, অতীত জীবনের কিছুই তো
আমাদের মনে থাকছেনা, তার থেকে একটাই মানুষ, একটাই জীবন, একটাই জন্ম, জীবন টা
সূন্দর লাইফ ইজ বিউটিফুল, এটাই মেনে নেওয়া ভালো ।
(38)
৬০)একটা তর্ক প্রায়ই লেগে আছে যে মহাবিশ্বে মানুষ ছাড়া আর কোন বুদ্ধিমান প্রানী বা জীব
আছে কিনা ।অবশ্যই আছে, কারন কি জানেন, কারন জীব হতে হলেই
যে মানুষের মত খাওন,চলন এবং বেঁচে থাকার পরিবেশ হতে হবে এমন কারন নেই । সেটা মানুষ তার জ্ঞান সীমাবদ্ধতা বা মাত্রার সীমাবদ্ধতার কারনে বুঝুক আর না
বুঝুক । আর ২য় যুক্তি হলো আমাদের গালাক্সী তে ৩০০ বিলিয়ন
এর মত তাঁরা বা গ্রহ নক্ষত্র আছে । এই গ্রহ
নক্ষত্রের ০৫ টি গ্রহ বা নক্ষত্রের যদি প্রতি একটি তেও পানি থাকে তবুও সম্ভাবনার
গ্রহ হয় ৬০ বিলিয়ন ।আমাদের গ্যালাক্সী ছোট তাই এই অবস্থা। এমন এমন গালাক্সী আছে যাদের তাঁরা ০১
ট্রিলিয়ন ।আমাদের এই মহাবিশ্বে ১৭০ বিলিয়ন (০১
বিলিয়ন =১০০,০০,০০,০০০) গালাক্সী আছে।
প্রত্যেক গালাক্সী যদি এক ট্রিলিয়ন গ্রহ নক্ষত্র ধারন করে
তবে ২৩৮,০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ টির মত গ্রহ তাঁরা নক্ষত্র আছে ।এর একটিতে ও কি থাকবেনা কেউ ? ।আর আপনি আমি কোন কিছুর সন্ধান পেতে পেতে অনেক সভ্যতা ধংশ হয়ে যাবে ।কারন আমাদের অনুসন্ধানী যান দিয়ে পৌছাতে পৌছাতে দেখা গেল এমন এক গ্রহে জীবন
আছে সেখানে পৌছান আমাদের হিসাবে এবং যন্ত্রের ক্ষমতাতে ০৫ বিলিয়ন বছর লাগবে
। সেই সভ্যতার আপনি কিভাবে সন্ধান পাবেন , কেউ যদি থেকে থাকে পৃথিবীর মানুষের
মত, অনেক সময় ভিনগ্রহে প্রান খুজতে বা রেসপন্স পেতে নানা রকম তরঙ্গ ব্যবহার করেন
বিজ্ঞানীর, কিন্তু এটা যে ভিনগ্রহীরা বুঝবে এমন কথা আছে না কি ? ধরুন সুর্যের তাপ দিন কে দিন বাড়ছে ।একসময় দেখা গেল পৃথিবীর তাপ বসবাসের উপযুক্ততা ছাড়িয়ে গেছে , তখন আমাদের কে
অন্য গ্রহ দেখতে হবে । অনেক বিজ্ঞানী বলেন আমাদের মানব সভ্যতা পুরনো
কোন গ্রহের উপনিবেশ মাত্র । আর একটা জিনিস
মাত্রা বলে একটা জিনিস আছে সেটা যদি আমরা আয়ত্ত করতে পারি
তবেই আমরা অনেক রহস্য ভেদ করতে পারব,নচেৎ এই সুবিশাল ভাবনার
অতীত মহাবিশ্বের কিঞ্চিত পরিমান রহস্য আমরা ভেদ করতে পারবনা । পরিষ্কার ভাবে আপনাদের সাথে বিভিন্ন মাত্রা নিয়ে আলোচনা করি, আমরা তৃতীয়
মাত্রার আর আমরা তৃতীয় মাত্রার পর্যন্ত দেখতে পাই, কিন্তু যদি মাত্রা হয়ে যায় ১০টি মানে ১০ম মাত্রা
পর্যন্ত যদি মানুষ ধরতে পারে তবে কি হতে পারে ? আসুন দেখে আসি –
(39)
প্রথম মাত্রাঃ প্রথম
মাত্রার প্রাণী হলে আপনি শুধু কোন একটি সরলরেখা বরাবর দেখতে ও চলতে পারবেন। আপনার জগত হয়ে যাবে ওই সরলরেখার মধ্যে। আপনার জগতের বিজ্ঞানীরা তত্ত্ব দিবে যে, আমাদের
এই মহাবিশ্ব সরলরৈখিক। বিগব্যাং
এর পর কোন এক কারনে মহাবিশ্বের সকল পদার্থ সরল রেখাকেই বেছে নিয়েছে। আপনিও কিন্তু হুট হাট করে বিভিন্ন বস্তুকে আপনার জগতে আসতে এবং উধাও
হয়ে যেতে দেখতেন।
দ্বিতীয় মাত্রাঃ অসীম সংখ্যক একমাত্রিক সরলরেখা পাশাপাশি
স্থাপিত হয়ে একটি দ্বিমাত্রিক সমতল তৈরী হয়। দ্বিমাত্রার
প্রাণী হলে আপনার কাছে মহাবিশ্ব হবে দ্বিমাত্রিক। আর মজার ব্যাপার হলো, আপনি তখন চাইলেই শূণ্য ও
প্রথম মাত্রার প্রাণীকে ভয় দেখাতে পারবেন।
আপনি যখন প্রথম
মাত্রার প্রাণীর অবস্থিত রেখা বা শূণ্য মাত্রার প্রাণীর অবস্থিত বিন্দুর উপর দাঁড়াবেন, তখন
তারা আপনাকে দেখতে পারবে। কিন্তু
যদি একটু সরে যান তখন আর আপনাকে দেখতে পারবেনা তারা।
তৃতীয় মাত্রাঃ
ত্রিমাত্রিক প্রাণী সম্পর্কে শুধু একটি কথা বলাই যথেষ্ট। মানুষ ত্রিমাত্রিক প্রাণী। আমরা
ত্রিমাত্রিক প্রাণী বলেই আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে বুঝতে পারিনা। কারন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাজকর্ম আরও বেশী মাত্রায় ঘটে থাকে। নোবেলবিজয়ী বিখ্যাত মার্কিন পদার্থ বিজ্ঞানী
রিচার্ড ফাইনম্যান(১৯১৮-১৯৮৮) তার THE CHARACTER OF
PHYSICAL LAW -(1965) গ্রন্থে বলেন আমার নিশ্চিত
ভাবে মনে হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্স কোন বাক্তিই বুঝতে পারেনা। তাহলে বুঝুন ব্যাপারটা কত জটিল যে এই বিদ্যা দ্বারা সঙ্ঘটিত কোন
ঘটনা মানুষের বোঝার ক্ষমতার বাইরে, এটা নিয়ে আমরা শুধু পড়াশোনা করছি মাত্র,
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত যখন আবিষ্কার হয়েছিল তখন সেটা বুঝত খুব কম লোকেই,
কিন্তু সেটা সর্বসাধারণের বোঝার পর্যায়ে আসতে গিয়ে মানুষের বিজ্ঞান প্রযুক্তি কে
অনেক উন্নত হতে হয়েছে ।যেমন ৪০ বছর আগে মানুষ মোবাইল নামক কিছু
আবিষ্কার হতে পারে এটা চিন্তাও করতে পারেনি,
(40)
তার বিহীন ভাবে হাজার মাইল
দূর থেকে কথা বলাটা বিস্ময় বটে, যেখানে শুধু আলাদা নাম্বার এর উপর ভিত্তি করে আলাদা
নির্দিষ্ট বাক্তির নাম্বার এই ফোন যাচ্ছে, আকাশ পথে কোথাও সংঘর্ষ হয়ে এক নাম্বার
আরেক নাম্বার এর বাক্তির কাছে যাচ্ছেনা, আপনার আমার পাশের খালি যায়গাটা যে রহস্যময়
একটা কিছুতে পূর্ণ বা আপনি আমি যে অদৃশ্য
কোন মাধ্যমের ভিতর বসবাস করছি সেটা এই মোবাইল বা টিভি না দেখলে বোঝা যেতনা ।
চতুর্থ মাত্রাঃ যদি আপনি চতুর্থ
মাত্রার ঘনক তৈরী করতে চান তবে আপনাকে অসীম
সংখ্যক ত্রিমাত্রিক ঘনক পাশাপাশি যুক্ত করতে হবে। চতুর্মাত্রিক পদার্থ সময়কে অতিক্রম করতে পারে । অর্থাৎ আপনি যদি
চতুর্মাত্রিক প্রাণী হোন, তাহলে আপনি চাইলেই অতীতে অথবা ভবিষ্যতে যেতে
পারবেন।
মানে সময় ভ্রমন(TIME TRAVELL) সম্ভব
হবে। এভাবে আপনি চাইলেই অতীতে গিয়ে কোন
কিছু পরিবর্তন করে বর্তমানকে পরিবর্তন করতে পারবেন । অবশ্য টাইম মেশিন বা টাইম ট্রাভেল এর এই
তত্ত্বটা পারষ্পরিক সাংঘর্ষিক ।কারণ আপনি পিছনে যাবেন সমস্যা নেই , কিন্তু বর্তমান
পরিবর্তন করার মতো কিছু করলে পৃথিবী ধ্বংস হতে সময় লাগবেনা ,কারণ মানব যার যার
ইচ্ছামতো পৃথিবীর পরিবর্তন করলে শেটা নিশ্চয় কারো জন্য হিতকর হবেনা ব্যাপারটা ।
পঞ্চম মাত্রাঃ পঞ্চম
মাত্রায় গেলে আপনি আপনার সমান্তরাল ভবিষ্যতগুলোতে যেতে পারবেন। মানে ধরুন আপনার এখন মনে হলো যে, এখন আপনি প্রিয়ার হাতে
হাত রেখে সমুদ্রে জ্যোৎস্না স্নান করবেন, তাহলে এখন আপনি
মূহুর্তের মধ্যেই দেখবেন আপনি প্রিয়াকে নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে আছেন। মানে বাপারটা আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মত । তার
জন্যে অতীতকে যেভাবে পরিবর্তন করা দরকার হবে, অতীত নিজেই সেভাবে
পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ব্যাপারটা
খুবই মজার । আরেকটা বিষয়ে বলি তা হলো, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাজ হচ্ছে পঞ্চম
মাত্রায়। যে কণা পঞ্চম মাত্রার উপর যতো বেশি
দখল রাখবে, সেই কণা ততো বেশী তরঙ্গধর্ম প্রদর্শন করে । ফোটন কণা পঞ্চম মাত্রায় থাকে বলেই একটি
ফোটন কণা একই সময়ে ভিন্ন যায়গায় অবস্থান করতে পারে।
(41)
ষষ্ঠ মাত্রাঃ ষষ্ঠ
মাত্রায় আপনি বিগব্যাং বা মহাবিষ্ফোরণ এর পর
এই মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে চলে যেতে পারবেন। আপনি
হয়তো চিন্তা করতে পারেন, এই কাজ আপনি চতুর্থ মাত্রাতেই করতে পারবেন। হুদাই ষষ্ঠ মাত্রাতে যাবার কি দরকার? আসলে আপনি চতুর্থ
মাত্রা ব্যাবহার করে অতীতে যেতে পারবেন, কিন্তু নিজের
জন্মের আগে যেতে পারবেন না। নিজের
জন্মের আগে যেতে হলে আপনাকে ষষ্ঠ মাত্রাতেই যেতে হবে । বিভিন্ন জ্ঞানী
স্কলাররা মনে করেন কাউকে যদি হিন্দুদের দেবতা শিবের মত ক্ষমতার অবতার হতে হয় তবে
তাকে কমপক্ষে এই ষষ্ঠ মাত্রার ক্ষমতাবান বা ষষ্ঠ মাত্রার মানুষ বা সৃষ্টি বা এলিয়েন হতে হবে ।
এ রকমটা ভেবে অনেক বিজ্ঞানীরা বা
ভারতীয়রা, গ্রীক, ইনকা, মায়া সভ্যতাতে অবতারদের সাথে
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল এবং প্রাচীন
অ্যাটমিক এনার্জির সন্ধান পান ।এ রকম একটা বিস্ফোরক ব্যাপার ঘটে ভারতীয় বর্তমান
সময়ের বিখ্যাত যোগী সাধুগুরু(jaggi vasudev)এর রহস্য অনুষ্ঠান MYSTIC OF
INDIA তে অভিনেত্রী
কঙ্গনা রণৌত এর উপস্থিতির একটি c‡e©| এই অনুষ্ঠানটিতে ভারতের সকল নামী ব্যাক্তিত্বের উপস্থিতি ও আধ্যাতিক আলোচনা
লক্ষনীয় ।ইচ্ছা হলে আর কঙ্গনার নিজ ভাবনার বা মতামতের
ভুল কথা ছাড়া কিছু মনে না করলে জাস্ট জানার জন্য এই ভিডিও লিংকটি আপনার ব্রাউজারে
পেস্ট করে দেখতে পারেন । মনে হয় নিছক আলোচনা ক্ষেত্রে বেফাস মন্তব্য করে ফেলেছেন ,যেমনটা
হয় আমাদের দেশে শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় সেন্স অফ হিউমার অনুষ্ঠানে।
সঠিক মত হিসেবে বলেননি। লিংকটি https://www.youtube.com/watch?v=rRKMqFPI8sI/হিন্দী ভালো বুঝলে
কঙ্গনা রণৌত এর এই পর্বটি পুরো দেখলে অনেক জ্ঞানমুলক ব্যাপার সম্বন্ধে আপনি
জানতে পারবেন ।
সপ্তম মাত্রাঃ সপ্তম মাত্রার প্রাণী হলে আপনি বা আমি আমাদের মহাবিশ্ব
এমন না হয়ে অন্য যেমন হতে পারতো সেই সকল মহাবিশ্বে যেতে পারতাম ।
অষ্টম মাত্রাঃ অষ্টম মাত্রায় গেলে আপনি যেতে পারতেন অন্য যে কোন
সমান্তরাল মহাবিশ্বে (PARALLEL
UNIVERSE )।
(42)
নবম মাত্রাঃ নবম মাত্রায় যদি আপনি কখনো যেতে পারেন তবে আপনি যেকোন
মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে চলে যেতে পারবেন। তবে অষ্টম মাত্রা ও ষষ্ঠ মাত্রা ব্যাবহার করেও কাজটি আপনি করতে
পারতেন। অষ্টম মাত্রা ব্যাবহার করে অন্য কোন
মহাবিশ্বে এবং পরে ষষ্ঠ মাত্রা ব্যাবহার করে সেই মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে যাওয়া
সম্ভব। তবে এটি একটু সময় সাপেক্ষ। নবম মাত্রা দিয়ে আপনি মুহুর্তেই যে কোন
মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে যেতে পারবেন। ওহ মাই
গড, এগুলো কি ভাবা যায় !!!!!! এগুলো সব স্ট্রিং থিওরি এর কথা ।স্ট্রিং থিওরি এর মতে এই মাত্রা ১০ টি মতান্তরে ১১ টি ।
তবে এই বিজ্ঞানের দেওয়া মাত্রার
সঙ্গা থেকেই বুঝুন কেন আল কোরআনে স্রষ্ঠাকে মহাজ্ঞানী বলা হয়, মাত্রার সঙ্গাতেই যদি কোন কিছুর ইচ্ছা
বা কল্পনা করলে হতে পারে তাহলে স্রষ্ঠার বাণী হও বললেই সব সৃষ্টি হয়েছে সেটা সত্য
হবেনা কেন ? এই মাত্রার এই ব্যাপারটা আমি বুঝিনা, আমি বুঝি অন্যভাবে আমি যেভাবে
বুঝি সেটা এই বইয়ের পরবর্তী অংশে আছে ।
আমরা জানি বল (FORCE) হল চার প্রকার, মহাকর্ষ বল, তাড়িত
চৌম্বক বল , সবল নিউক্লীয় বল, দূর্বল
নিউক্লীয় বল । কিন্তু আরো একটা বল আছে যেটা এই সকল বলগুলোর একটা কমপ্লেক্স, কিন্তু
এই বলগুলোর একটাও না । বলা হয় প্রাচীন মিশরীয় ফারাউরা এই বল কিছুটা হলে ধরতে
শিখেছিল ।
২০১৭ তে হাঙ্গেরীর পদার্থবিদ আটিলা ক্রাজনাওর্ক্ প্রোটন কণাকে লিথিয়াম – ৭ নামক লিথিয়ামের আইসোটোপ দিয়ে আঘাত করে উৎপন্ন হওয়া পরীক্ষার
ফলাফলে ফিফথ ফোর্সের কিছুটা আচ পান । হয়তো দুর ভবিষ্যতে ওনার এই সুত্র ধরে
মানুষ রহস্যময় ক্ষমতাধর ফিফথ ফোর্সকে আয়ত্ব করে ফেলবে ।
চোখ, কান, নাক,
জিভ, ত্বক এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় মানুষের। কিন্তু আরও একটা ইন্দ্রিয় আছে মানুষের,
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, সেটাকে অনেকে বলতে চান আমাদের মন বা মস্তিষ্ক ।কিন্তু এক্সাকটলি
আমাদের মন বা মস্তিষ্ক ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নয়। তবে কী ? সেটার আলোচনা আমিও করতে পারবো
কিছুটা, কিন্তু সেটা করতে গেলে আলোচনার কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। তবে গবেষক দের মতে
আমাদের মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অংশ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কাজ করে। অনেকে এটাকে অবসেন্স
মাইন্ড বা অবচেতন মন বলে থাকেন । কিন্তু এটা সেটাও না। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ক্ষমতা ০৫ টি
সুপার ন্যাচারাল
(43)
বিদ্যা/বিষয়ের
সমষ্টি(টেলিপ্যাথি, মাইক্রেমেট্রি,প্রিকগনিশন,রিকগনিশ্ন, ক্লিয়ারভয়েন্স )। তবে
ব্রুস উইলিসের ÔÔ দি সিক্সথ সেন্স ÕÕ(১৯৯৯)মুভি দেখলে এটা সম্বন্ধে কিছুটা অনুমান আপনি পেতে পারেন । সিক্সথ
সেন্সের অধিকারীরা ভূত দেখা , মৃত মানুষের আত্বা দেখা, কারো মৃত্যূ সম্বন্ধে ভবিষ্যতবাণী সহ অসীম
স্মৃতিশক্তির অধিকারী হতে পারেন । কেউ বলেন এটা সাইকোপ্যাথ জাতীয় সমস্যা, কেউ বলেন
এটা অবিশ্বাস ও করা যায়না , কালেভদ্রে অনেক সময় মেলে ব্যাপারটা বলে ।
৬১) পুরাণ কি ? পুরাণ কি মিথ্যা ? পুরাণ কি শুধু মিথ ? পুরাণ কি শুধু উপকথা রুপকথা ? মোটেই
না পুরাণ সুদূর অতীতের এক হারিয়ে যাওয়া সত্য, সুদূর অতীতের হারিয়ে যাওয়া এক অকাট্য বাস্তব ।ইলিয়ড,অডিসি,
ট্রয়, রামায়ন মহাভারত,আটলান্টিস কিছুই মিথ্যা নয় । মিথ্যা যদি হত তাহলে ইরাম, ট্রয়, মহাস্থান গড়, উয়ারি বটেশ্বর,
হেরাক্লিওন পুনরায় আবিষ্কার হতোনা । তাহলে পুরাণ মিথ্যা
কেন হয়ে যায়, গুরুত্ব কেন হারায় ? এই
কারনে হারায় যে পৃথিবীতে চিরকাল আজ চলে
গিয়ে নতুন এক আগামী আসছে, সেই আগামীর
জিনিষের কাছে পিছনের জিনিষ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে ।গুরুত্ব হারানো সত্য ইতিহাসের নামই পুরাণ
।আমাদের এই সভ্যতায় একমাত্র চুড়ান্ত উন্নত সভ্যতা নয় , এই সভ্যতার জন্মের আগেও
অনেকবার পৃথিবীতে আমাদের মত বিজ্ঞানময় আধুনিক সভ্যতার জন্ম হয়েছে , ভিন্ন কারনে তা
আবার ধ্বংশ ও হয়ে গিয়েছে ।
আপনার দাদা আর তার দাদার
নাম ঊর্ধে আপনি জানেন কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার দাদার
নাম আপনি জানেন না বলে তিনি ছিলেননা, ব্রিটিশ শাসনের দাপটে আজ থেকে ৪০ বা ৫০ বছর আগের বইয়ে আমরা ব্রিটিশ শাসন ভালভাবে পড়তাম,
তারপর এল পাকিস্তান শাসন, তারপর আমরা এখন পড়ি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের কাছে কিন্তু
ব্রিটিশ ইতিহাসের মুল্য প্রায় উঠে গেছে
, মৌর্য ,গুপ্ত ,পাল এসব শাসন ইতিহাসে
উল্লেখ আছে, কিন্তু গুরুত্ত হারাতে হারাতে আজ এগুলো পুরাণ এর পাতায় চলে গেছে, আচ্ছা ১৭৫৭ সাল এর ২৩ শে জুন
নবাব সিরাজ উদ্দৌলা হেরে যান, কিন্তু
পলাশী দিবস তো
কেও পালন করিনা,কারন এটা ও গুরুত্ত হারিয়ে ফেলেছে , এভাবে আমরা ১৯৭১ এ স্বাধীন হয়েছি তাই ১৯৭১ এর এত দাম ,কারণ এটা নিকট
বা বর্তমানের স্বাধীনতা।
(44)
? আর ভৌগলিক
কারনে বাংলাদেশ কখন যদি মানচিত্র পরিবর্তিত হয় তবে ইতিহাস তো আরো বদলে
যাবে । হয়তো পানির নিচে ডুবে
অনেক যায়গা হারিয়ে যাবে, আমাদের বাংলাদেশের অনেক যায়গার পুর্ব নাম তো আমরা ভুলে গেছি সেগুলো
গুরুত্ত হারিয়েছে, আচ্ছা যদি বলি বাংলাদেশের চন্দ্রদীপ যাব,
বা যদি বলি খলিফাতবাদ যাব, এগুলো যথাক্রমে বরিশাল এবং যশোর
এর পুর্ব নাম, এই নাম গুলো কিন্তু পুরাণ এর উদাহরন ।আর গঙ্গারিডি নামটা তো পুরাণ এর খাতাতে চলে গেছে, এই গঙ্গারিডি দখল করতে সম্রাট
আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট এসে ফিরে গিয়েছিলেন না পেরে সেটা কজন জানে, যশোর এর বর্তমান দড়াটানা মোড়ের ভৈরব নদে একসময় মিসরীয় নাবিকরা ২০০০-৩০০০ বছর আগে নৌকা ভেড়াতো বাবসার জন্য এগুলো কে জানে, এগুলো ও কিন্তু সেই
পুরাণ এর উদাহরন ।
পূরাণ হলো সেই সব ঘটনার বা ইতিহাসের সমষ্টি যেটা বাস্তব
সত্য হওয়া স্বত্তেও কালের আবর্তে গুরুত্ব হারাতে হারাতে এক সময় রূপকথা হয়ে যায় ।
৬২) বর্তমানের বড় বন জঙ্গল ,নদী সাগর মহাসাগর, বর্তমানের বড় মরুভুমি
,বর্তমানের উত্তর মেরু দক্ষিন মেরুর বরফ ঢাকা অঞ্চল সবগুলো
কিন্তু একসময়ের মহাসভ্যতার কবর মানে একসময় এই যায়গাগুলোতে নির্ঘাত বড়
বড় সভ্যতা ছিল ।দেখা যায় সুন্দরবন এর যায়গাতে ২০০০ বছর আগে সুন্দরবন ছিলনা , ছিল ব্যস্ততম জনকোলাহল এর যায়গা , ০৫
হাজার বছর আগে সাহারা বা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভুমিতে হয়ত ব্যস্ততম এবং সুজলা সুফলা কোন সভ্যতা ছিল ।আটলান্টিক মহাসাগরের যায়গাতে আটলান্টিস ছিল ।
৬৩) মহাশূণ্যের গন্ধটা কেমন,
মহাশূণ্যে যখন নভোচারীরা বের হন তখন ওই যে ওয়েল্ডিং বা ঝালাইয়ের দোকানে লোহা পোড়া
যে গন্ধ বের হয় সেই রকম গন্ধ ।আর গ্যালাক্সী গুলোর কেন্দ্রের থেকে রাসপবেরীর গন্ধ
আসে । মূলত ইথাইল ফরমেটের(C3H6O2) অস্তিত্ব থেকে ই এই গন্ধ আসে ।
৬৪) ভিডিও
ব্যাপারটা বা ছবি তোলার ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হয় না, ব্যাপারটা আপনার আমার কাছে কত
সাধারন একটা ব্যাপার, কিন্তু এটা কত সহজ ভাবে আমাদের সময় কে ধরে রাখছে , এর পিছনে
কত জটিল একটা সমীকরণ কাজ করে
(45)
জানেন ? আপনি
যদি কোন ভিডিও দেখেন তবে সেই ভিডিওর প্রত্যেকটি সেকেন্ড
অন্তত পক্ষে ২৪ টি স্থির ছবি বহন করছে ,মানে
আপনি এক সেকেন্ড ভিডিও দেখার সময় ভাবতেও পারছেননা যে, এই এক সেকেন্ডে আপনার সামনে দিয়ে অন্তত ২৪ টি
স্থির চিত্র বা ফটো চলে যাচ্ছে ।আর সুপার স্পীড হাই রেজুলেশন ক্যামেরা সেকেন্ডে ০১ মিলিয়ন স্থির চিত্র নিতে
পারে ।আপনি আমি এই ক্যামেরা আবিষ্কার পূর্বে না হওয়াতে সত্যিই দূর্ভাগা, যদি ০২
হাজার বছর পূর্বে থেকে ক্যামেরা থাকতো, তাহলে আপনি আমি কাদের দেখতে পারতাম,
পৃথিবীর সব থেকে স্মরণীয় সময় গুলো যে গত ০২ হাজার বছরে চলে গেছে ।
৬৫)আমাদের শরীরে
০১ ট্রিলিয়ন ব্যাক্টেরিয়া থাকে {০১ ট্রিলিয়ন =১,০০০, ০০০, ০০০,০০০ টি মাত্র}
।যার ওজন ০২ কেজি ।মানে আমাদের শরীরের মোট ওজনের
০২ কেজি ওজন হলো
ব্যাক্টেরিয়ার ওজন । এর কোনটা আমাদের জন্য উপকারি, কোনগুলো অপকারী ।এদের যদি আমরা মেরে ফেলতাম শরীর থেকে তাহলে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা
ইমিউন সিস্টেম /এন্টিবডি একেবারে শূণ্য হয়ে যেত ।দৃশ্যমান যে কোন জীবের শরীরকে বলা
যেতে পারে ভিন্ন ভিন্ন জীবের ও ভিন্ন ভিন্ন জটিল যন্ত্রের একত্রিত রূপ মাত্র ।
(46)
৬৬) আচ্ছা মানুষ
কি কোনদিন প্রানের সন্ধান পাবে , আমরা যে ধারাতে খুজছি সেটা আমাদের জীবন ধরনের
সাথের মিল রেখে ভয়েজার নামক মহাকাশ যানটি ০৬ বিলিয়ন
কিলো দূর থেকে পৃথিবীর যে ছবি পাঠিয়েছে
তাতে পৃথিবীকে আলোকজ্জল তাঁরা ছাড়া আর কিছু মনে হয়না , পূর্বের ছবিটা খেয়াল
করেছেন কি ?
৬৭) পৃথিবীতে যত
বালুকনা আছে তার থেকে ১০ হাজার গুন বেশি হল মহাকাশের নক্ষত্রের সংখা ।
৬৮) আমরা পুরো
পৃথিবীর মানুষ যতটুকু পানি পান করি সেটা হল পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ০১% !!!!!
৬৯) সাগরে ছড়িয়ে
ও খনি হিসেবে থাকা স্বর্ণের পরিমাণ ৯০ লাখ
টন । মানবজাতি আজ পর্য্যন্ত খনি থেকে মাত্র আধা লাখ টন স্বর্ণ তুলেছে ।
৭০)০৭ কোটি বছর
আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণী ডাইনোসর কে যারা শুধু অতিকায় প্রাণী বলে জানি সেই
ডাইনোসরের diplodocus নামের ১১০ ফুট উচ্চতার যেমন প্রজাতি ছিলো তেমনি ANCHIORNIS নামে মাত্র ১১০ গ্রাম ওজনের ডায়নোসর ও ছিলো । theropod নামক ডাইনোসর এর একটি প্রজাতি থেকে পাখির সৃষ্টি
বলে মনে করেন বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা ।
৭১) একজন মানুষ
দিনে ২৩০৪০ বার শ্বাস প্রশ্বাস নেয় ।
৭২) পৃথিবীর সকল সমুদ্রের মিলে যতটুকু যায়গা হবে তার ৯৫%
যায়গা মানুষের
কাছে
অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে ।
৭৩) কবুতর অতি
বেগুনি রশ্মি বা ইউ ভি রে(ultra violet ray ) দেখতে পায়
৭৪) প্রাকৃতিক মুক্তা ভিনেগারের মাঝে গলে যায় ।
৭৫) আসল হীরাকে এসিড দিয়েও গলানো সম্ভব নয় । শুধুমাত্র উচ্চ
তাপমাত্রা দিয়ে
গলানো যায় ।
৭৬) সেকেন্ডে আলোর গতিতে ছুটলেও নিকটস্থ ছায়াপথ এন্ড্রোমিডাতে
যেতে
আমাদের ২০
লক্ষ বছর লাগবে ।
(47)
৭৭) একটি মানুষের শরীরের সব রক্ত খেতে নাকি ১২ লক্ষ মশার
প্রয়োজন ।
৭৮) পৃথিবীতে প্রতি বছর ১০ লাখ ভূমিকম্প হয় । কিন্তু আমাদের
টের পাবর মত
ভূমিকম্প হয়
হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র ।
৭৯) আমাদের মস্তিষ্ক ১০ হাজার বিভিন্ন গন্ধ চিনে ও মনে
রাখতে পারে ।
৮০) বাঁশ গাছের কয়েকটি বিরল প্রজাতি আছে যেগুলো দিনে ০৩ ফুট বাড়তে
পারে ।
৮১) পৃথিবীর
সব থেকে দূর্লভ মৌল এস্টেটিন, সারা পৃথিবীতে মাত্র ২৮ গ্রাম আছে ।
৮২) পিপড়ার পাকস্থলী ০২ টি ।
৮৩) পিপড়ার কামড়ে
আমাদের চামড়াতে ফরমিক এসিড(CH2O2) ঢুকিয়ে দেয়
৮৪) ২০০১ সালে ভারতের কেরালাতে রক্ত লাল রঙের রহস্যময়
বৃষ্টি হয়েছিল ।
85) Avgiv Avm‡jB Lvjx †Pv‡Li Pvu‡`i gvÎ 59% †`L‡Z cvB|
evKx 41% Avgiv †`L‡Z cvB bv| Avevi Pvu‡`i GB 41% wM‡q hw` Avcwb `vovb Z‡e †mLvb
†L‡K c„w_ex‡K Avcwb †`L‡Z cv‡eb bv|
86) Pvu‡`i Kvi‡Y c„w_exi N~Y©b ïw³ cÖwZ 100 eQ‡ii †`o
wgwj †m‡KÛ K‡g h‡”Q|
অনেক লম্বা তথ্য কনিকার পর এবার ফিরে আসি সেই ভাষার
প্রসঙ্গে, কিন্তু যদি ওই বাঙালী লোকটি খুব ভালোভাবে চাইনিজ ম্যান্ডারীন বা তামিল
ভাষা জানে তাহলে তার কাছে আরো একটা জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও অজানা জীবনযাত্রা,
ওই ভাষাভাষী মানুষের সুখ দুঃখ, দিনলিপির মধ্যে তার জন যে একটা পর্দা রয়েছে সেটা
সরে নতুন একটা জগৎ তার সামনে উন্মোচিত হবে । ঠিক এমনই আমাদের সৃষ্টি জগতের সকল
সৃষ্টির মাঝে দুরত্ব রয়েছে ।মানুষ হয়ে মানব জাতির সকল ভাষা আমরা বুঝিনা ।
পশু পাখিদের একটা জগৎ রয়েছে, তাদের একটা
নিজস্ব ভাষা ও নির্দিষ্ট নিয়মে আবদ্ধ জীবনযাত্রা রয়েছে । যেটা আমরা বুঝতে পারিনা,
আবার আমরা যেটা করছি, যেটা বলছি সেটা হয়তো মানুষ ব্যাতীত অন্যান্য সৃষ্টি জগতের
কাছে দূর্বোধ্য , অনর্থক, বা ধারনার অতীত হতে পারে । সুতরাং, এতক্ষন এই কথা ও
উদাহরন
(48)
গুলো দিয়ে সময় নষ্ট করার অর্থ হলো পাঠকের
যাতে বইয়ের ভাব বস্তু বুঝতে অসুবিধা না হয়, পাঠক মাত্রই যেন বুঝতে পারেন জীবন,
বুদ্ধি বা সভ্যতার সঙ্গা, পরিবেশ ও কালভেদে ভিন্ন হতে পারে, জীবন, বুদ্ধি বা
সভ্যতার পরিমাপ বিচার আপেক্ষিক, ও মানুষ একেক যুগে তার প্রয়োজনে একটা না একটা
বিদ্যা ও চালিকা শক্তি আবিষ্কার করেছে । সময়ের আবর্তনে সেই অতি বিদ্যা হারিয়ে গেছে
, মানুষ আবার পরিশ্রম করেছে আবার উদ্ভাবন করেছে নতুন অতি বিদ্যা নতুন চালিকা শক্তি
।কিভাবে মানুষ সুপার এনার্জি ও সুপার নলেজ আবিষ্কার করে সভ্যতার স্বর্ন শিখরে
আরোহন করে, আবার কিভাবে একটা সভ্যতা কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে আবার কিভাবে বর্তমান
সভ্যতা হারিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে একেবারে সর্বশেষে আলোচনা করবো ।তবে বলছিনা এই
গ্রন্থের সবকিছু অকাট্যভাবে আপনারা বিশ্বাস করুন, শুধু মাত্র শক্তিশালী কিছু
যুক্তির আলোকে আপনাদের মূল্যবান কিছু সময় নষ্ট করবো ।আপনি যদি আপেক্ষিকতা বোঝেন
তাহলে পরবর্তী লেখাগুলো বুঝতে অসুবিধা হবেনা আশা করি এবং এ জন্য এত লেখা যে আমরা
যে জগতে বসবাস করি সেখানে আমাদের সাথে পাশাপাশি, কাছে, দুরে আমাদের মতে অসংখ্যা যে
সব সাধারন সৃষ্টি(গৃহপালিত বা বন্য পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ) বসবাস করছে, এবং আমরা
যাদেরকে বা যে সব কিছুকে, বা যে সব ব্যাপারকে সাধারন ভেবে উড়িয়ে দিই বা ভাবনায় আনিনা
সে গুলোর ভিতর অজানা একটা জগৎ, অজানা কোন রহস্য, অজানা কোন বিজ্ঞান আছে কিনা একটু
ভেবে বা আলোচনা করে সময় কাটাই চলুন ।
মানুষের পৃথক চেহারা – পৃথিবীতে বর্তমানে
মানব জাতির জনসংখ্যা ৭০০ কোটি । এই ৭০০ কোটি মানুষের চেহারা এক জনের থেকে আরেক
জনের ভিন্ন । এই যে পৃথিবীতে আমরা কত যায়গায় ভ্রমণ করছি, কত মানুষ পথে ঘাটে চলতে
আমরা দেখি, কিন্তু কখনো কি দেখেছেন হুবহু আপনার
কার্বন কপি বা মিরর ইমেজ কাউকে, মানে হুবহু আপনার চেহারার একজন আপনার মুখোমুখি হতে
? দেখেননি । তবে বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা মতে
প্রত্যেক মানুষর কয়েকজন জন প্রতিরূপ রয়েছে, তবে সেগুলো চেহারার ৬০-৮০% মিল ।হুবহু
নয় আবার মানুষের প্রত্যেকের ফিংগার প্রিন্ট সম্পূর্ন ইউনিক । কারো ফিংগার প্রিন্ট
কারো সাথে মিলবেনা ।
(49)
তো কথা হলো আমরা তো একেক জন মানুষ প্রত্যকে
প্রত্যেককে আলাদা করে চিনতে পারি, মা এর চেহারার সাথে বাবার চেহারা গুলিয়ে ফেলিনা
। ভাইয়ের সাথে বন্ধুর চেহারা গুলিয়ে ফেলিনা।একজন মানুষ থেকে আরেক জন মানুষের
চেহারা কেন পৃথক করা সম্ভব হয় এটা বোঝাতে একটা ছোট্ট উদাহরন দিই । আপনার এন্ড্রয়েড
মোবাইল সেটে যদি adobe reader সেট না করা থাকে তাহলে আপনি নিশ্চই পিডিএফ কোন গল্প
বা ফাইল পড়তে পারবেননা । যদি কোন
অডিও বা ভিডিও প্লেয়ার না থাকে তবে কোন mp3
বা video music প্লে করতে পারবেন না ।যারা
ওয়েব ডিজাইনার তারা html, css, javascript এর যে সব কোডগুলো সাজিয়ে একটা প্রিমিয়াম
থিম তৈরি করেন বা BBC, CNN , দেশ বিদেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো ডিজাইন
করেন, এবং সেগুলো আমাদের চোখে ইন্টারনেট ও ব্রাউজার সহযোগে দৃশ্যমান হয়ে দেখা
দিচ্ছে ।কখনো কি এই সুসজ্জিত ওয়েবসাইটগুলো প্রোগ্রামার দের করা যে সব হিজিবিজি
কোডিং উপর চলছে তা আপনারা কি দেখেছেন? ড্রিমওয়েভার সফটওয়্যার, ইন্টারনেট কানেকশন,
ওয়েব ব্রাউজার ছাড়া এই কোডিং আমাদের চোখে সুন্দর হয়ে দৃশ্যমান হয়ে ধরা দেবেনা, নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ব্যাতীত শুধুমাত্র হিজিবিজি কিছু লেখা ছাড়া আর কিছু
নয় ।তেমনি পৃথিবীর যত পশুপাখি আছে তারা কিন্তু নিজেদের কে একজন থেকে আরেকজনকে
পৃথক করতে পারে ।এটা আপনি আপনার গৃহপালিত পশু পাখি গুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে
খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন ।একটা মুরগী তার ছানা গুলো বাদে অন্য ছানা গুলোকে ঠিকই
পৃথক করে ফেলে বা আক্রমন করে । একটা গরুর বাছুর ঠিকই দুধ খাবার জন্য দশটা গাভীর
ভিতর থেকে তার মাকে ঠিকই আলাদা করে চিনে তার কাছে এসে দুগ্ধ পান করে । এতক্ষন এটাই
বলছি আপনি আস্তিক হোন আর নাস্তিক হোন মহান স্রষ্ঠা তার সৃষ্টির ভিতর
একেক সৃষ্টিতে একেকটা সফটওয়্যার বা রিডার সেট করে দিয়েছেন । স্রষ্ঠা যে সৃষ্টির ভিতর যতটুকু ক্ষমতাসম্পন্ন রিডার সফটওয়্যার দিয়েছেন
ততটুকুই আমরা অনুধাবন করতে পারি, ততটুকুই আমরা বুঝতে পারি, আর স্বল্পজ্ঞানের কারনে
অন্যান্য মাখলুকাতকে শুধুমাত্র দু পা বিশিষ্ট বা চার পা
(50)
-বিশিষ্ট শুধু মাত্র খেয়ে দেয়ে জীবনধারকারী
কিছু মনে করি ।এ জন্যই আমরা স্বল্প
জ্ঞানে ১০০ গরু / মুরগী এক যায়গায় দেখলে
১০০টি গরুর/মুরগীর চেহারায় ভিন্নতা কিছু দেখিনা ।আপনার যদি একটা পোষা টিয়া থাকে আর
সেই টিয়াকে যদি ১০০ টিয়ার ভিতর ছেড়ে দিলে আপনি তাকে আলাদা করতে পারবেননা ।কিন্তু
পশু পাখিরা তাদের স্ব স্ব প্রজাতিতে এক জন আরেকজনকে আলাদা করতে পারে কিন্তু আপনার ভাইকে একলক্ষ মানুষের ভিতর ছেড়ে
দিলেও আপনি তাকে পৃথক করতে পারবেন ।এটাই বলছি যে মহাবিজ্ঞানী স্রষ্ঠা যে সৃষ্টির রিডারে যতটুকু সীমা দিয়েছেন সে ততটুকু দেখতে পায় ও বুঝতে
পারে ।এটা এক প্রকার চেহারা পৃথককারী সফটওয়্যার।এটা যদি আমাদের ভিতর না থাকতো তো
আমরা মানুষরা অন্যান্য পশুপাখির চেহারায় যেমন কোন পার্থক্য পাইনা তেমনি আমরা
মানুষরাও এক জন আরেকজনকে পৃথক করতে পারতামনা । কারন সবার দুটো চোখ, দুটো হাত, দুটো
পা রয়েছে ।একটু এডাল্ট টাইপের কথায় আসি ,পৃথিবীতে সকল নারী পুরুষের শারীরিক ও যৌন
গঠন একই,, কিন্তু তারপরেও কেন আমরা কোন বিশেষ পুরুষ বা নারীর ভিতর অনেক বেশি
যৌনাকর্ষন অনুভব করি বা কিসের ভিত্তিতে বলতে পারেন ? উত্তরটা হলো তার চেহারা বা
মুখশ্রীর আকর্ষন // এটাই এক প্রাণী আরেক প্রাণীতে আলাদা করে সনাক্ত করতে পারেনা, এ
জন্যই এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে বেসিক স্ট্রাকচারে দেখে, পার্থক্য ধরতে পারেনা ।
তাহলে
কথা হলো আমরা যেটা বুঝি বা দেখি সেটাই কি শেষ কথা ! সৃষ্টি জগতের অগনিত এই সৃষ্টি
পশুপাখি কি দেখছে বা তারা কি বুঝে চলে সেই তাদের চোখে যদি আমরা দেখতে পেতাম তাহলে
হয়তো অজানা কোন এক বিজ্ঞান আমাদের চোখে ধরা দিত । কে বলতে পারে মানব সভ্যতা কোনদিন
তাদের বিজ্ঞান কে এই পর্যায়ে উন্নীত করতে পারবে কিনা ? জগদীস চন্দ্র বসু যদি
ক্রেসকোগ্রাফ আবিষ্কার না করতেন তাহলে তো পৃথিবীর মানুষের কাছে গাছের ও জীবন আছে
বোধ আছে এটা অজানা থেকে যেতো ।আবার বর্তমানে আবার
এক্তা চাঞ্চল্যকর তথ্য আবিষ্কার হয়েছে গাছের সম্বন্ধে ।ক্রেস্কোগ্রাফ দিয়ে শুধু গাছের জীবন আর স্পন্দন
সম্পর্কে জানা যেত, কিন্তু তার শতবর্ষ পর এসে এখন নতুন একটি গবেষনা বলছে যে আমরা
যে গাছেদের স্থির এবং একজন থেকে একজন কে
(51)
পৃথক মনে করি ,
সেই গাছেরা নাকি একপ্রকার নির্দিষ্ট ছত্রাকের সাহায্যে একটি গাছ
মাটির নিচ দিয়ে মুলের
মাধ্যমে বিভিন্ন গাছের সাথে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মত বাপক ভাবে যোগাযোগ রক্ষা
করে চলেছে, এই কায়দাতে গাছ অন্য প্রজাতির গাছ কে মেরেও ফেলতে পারে । ওহ মাই গড কি বিস্ময়কর বাপার তাইনা। হয়তো একদিন নবী হযরত
সুলায়মান আলাইহিস সালাম এর হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা কাহিনীর সত্যতা মিলবে, যে
তিনি সকল মাখলুকাতের বা সৃষ্টিজগতের সকল প্রাণীর ভাষা বুঝতেন ।পশু পাখির ডাক বা
পাখির কিচিরমিচির যে শুধু কিচিরমিচির নয়, এর ভিতর লুকিয়ে থাকতে পারে আমাদের মত
সমৃদ্ধ সাবলীল ভাষা ও অজানা জ্ঞান তা হয়তো কালের আবর্তে আবিষ্কার হবে ।জ্বীন নামক
অতিমানবীয় ক্ষমতাধর একটা জাতি আছে যারা তার হুকুমে কাজ করতো । আবার ধর্মগ্রন্থ মতে
কিছু পশুপাখি অদৃশ্য কোন কিছু দেখে ডেকে ওঠে, কুকুর ও গাধার ব্যাপারে এরকমটা শুনতে
পাওয়া যায় ।মাঝে মাঝে খেয়াল করবেন বিশেষ করে গভীর রাতে যখন জেগে থাকেন তখন কখনো
সখনো দেখবেন কুকুরের হাড় হিম করা ডাক ।হতে পারে একদিন বিজ্ঞানের ডাইমেনশন ভেদী
উন্নতিতে এগুলোর সত্যতা আমাদের সামনে আসবে আসলেই কি তারা আমাদের মাত্রা ও দৃষ্টির
বাইরের কিছু দেখে ডাক দেয় কিনা ।
মানব ভাষা – ভাষা বলতে কি বুঝি ?
ভাষা হলো আমাদের ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যম । এই ভাষাতেই আমরা কথা বলছি, আমাদের
প্রিয় সাহিত্য উপন্যাস পাঠ করছি, পথে ঘাটে চলাফেরা করছি, বন্ধুদের সংগে আড্ডা
দেওয়া থেকে শুরু করে সকল কাজ কর্ম যেখানে কিছু বোঝানো বা বলার ব্যাপার রয়েছে সেখানেই
ব্যবহার করছি ভাষা । একেবারে সুক্ষ বিশ্লেষনে আসি । গতানুগতিক ক্লাসের বইয়ের বাইরে
আসবো অনেকবার এই গ্রন্থে । তো ভাষা কি ? আপনি গরমকালে একটা গাছের তলাতে বসে আছেন ।
গাছ থেকে একটা ফল পড়লো । ফলটির নাম আম দেওয়া হলো । আপনি বাঙালী । আর এই আম নামটি
কবে থেকে বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে এসেছে এ ব্যাপারে বাংলা ভাষার ইতিহাসে কোন উল্লেখ
নেই । তো এই আম কে আম নাম না দিয়ে যদি তাল নাম দেওয়া হতো তবে আমকে আমরা আমকে তাল
বলে চিনতাম ।
(52)
আবার ইংরেজীতে
এটাকে mango বলা হয় । ভাষার একটা ক্ষুদ্র সমষ্টি হলো শব্দ ।আম বা mango হলো শব্দ
।শব্দ গঠিত হয় কয়েকটি ধ্বনির সমন্বয়ে । আম=আ+ম ।এখানে আ ও ম হলো ধ্বনি ।তো বিষয়
হলো পৃথিবীতে একেক অঞ্চলের বা একেক দেশের অধিবাসীরা আম ফলটির নাম একেক রকম দিয়েছে
।তো এই ভাষার সংগা হলো একটি বস্তু বা বিষয় বা ভাব বা আবেগকে একেক অঞ্চলের
অধিবাসীরা একেক ধ্বনি সমষ্টির মাধ্যমে একেকটা শব্দ বা নাম হিসেবে প্রকাশ করেছে ।
আর সেটাই হয়েছে ভাষা । অঞ্চল ভেদে একটা বস্তুকে বা বিষয়কে সেই জনগোষ্ঠী একটা
বস্তুর যে নাম দিয়েছে সেটাই হলো ভাষার ভিন্নতা । আর ভাষা বা নাম অঞ্চলভেদে যাই
হোকনা কেন ভাষার ভিত্তি যে ধ্বনি সেটা কিন্তু সব ভাষাতেই এক ও অভিন্ন । যদি বলেন
কেমন, তাহলে আসুন দেখি বাংলাতে এ বর্ণ, ইংরেজীতে A, আরবীতে আলিফ ।লক্ষ্যনীয় তিনটা
ভাষাই সম্পূর্ণ আলাদা বর্ণমালাও আলাদা । কিন্তু বেসিক বা মূলভিত্তি ধ্বনি যেটা
একটাক্ষুদ্র শব্দের একক সেটা কিন্তু এক ও অভিন্ন । Linguisticsociety of America
এর ২০০৯ এর তথ্য মতে পৃথিবীতে স্বতন্ত্র ভাষা আছে ৬৯০৯ টি ।
এই
৬৯০৯ টির মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা হলো ১১ টি । বাংলা, চীনা, ইংরেজী, আরবী,
হিন্দী, স্প্য্যানীশ, রুশ, পর্তুগীজ, জাপানী, জার্মান ও ফরাসী।পাপুয়া নিউগিনিতে
খোজ পাওয়া যায় ৮৫০ ট ভাষার, এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৬৭০ টি ভাষার খোজ পাওয়া যায় ।যদি
শুনে না থাকেন ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি ভাষার নাম বলি । ইন্দোনশিয়ার প্রধান ভাষা
ইন্দোনেশিয়ান তথা মালয় ভাষা । এছাড়া বাকি ভাষা গুলো হলো সান্দানিজ, মুশি, বানজারিস,
সাসাক, বাতাক টোবা , মোংগোন্টো, নিয়াস ইত্যাদি । এ ছাড়া আরো অনেক ভাষা রয়েছে ।
সবগুলোর নাম লেখা এখানে নিস্প্রোয়জন ।পাপুয়া নিউগিনিতে সর্বাধিক প্রচললিত ভাষাগুলো
হলো টক পিসিন, হিরিমোটু, পাপুয়া নিউগিনি
সাইন ল্যাংগগুয়েজ । আচ্ছা এত কথা তো বললাম । কখনো কি মনে প্রশ্ন জাগেনা এত ভাষা
এলো কোথা থেকে । পৃথিবীর সকল মানুষ তো এক আদম-হাওয়ার বংশধর । তাহলে কেন এত ভাষা
হবে ।এক আরবী বা সংস্কৃত ভাষা হবার কথা ।এর পিছনে অনেকগুলো কারন থাকতে পারে ।
(53)
ধরুন
কালের আবর্তে আমাদের মানবজাতির আদি পিতা মাতা থেকে মানব বংশবিস্তার ঘটেছে এটা সবাই
মানেন এক বাক্যে । সেটা আপনি আমি ধর্ম বা মতবাদ ভেদে আদম-হাওয়া / অ্যাডাম-ইভ / মনু-শতরূপা যাই বলি না কেন একজনই ।এখন দেখা গেলো আমাদের আদি
পিতামাতা থেকে বংশবৃদ্ধির স্বাভাবিক ধারাতে মানুষের বংশবৃদ্ধিতো হয়েছে এটাও
স্বাভাবিক । এবারে কালে কালে মানুষের সংখ্যা লাখে তো পৌছালো । লাখ থেকে কয়েক লক্ষ,
কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি । কয়েক কোটি থেকে শত কোটি, শত কোটি থেকে আজকের ৭০০ কোটি
। পৃথিবীতে যত মানুষ অদ্যবদি মারা গেছে তার থেকে বেশি মানুষ আজ জীবিত বসবাস করছে
পৃথিবীতে । তো যখন আদি পিতামাতা থেকে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলো হতে পারে সেটা
কয়েক হাজার বা কয়েকলক্ষ।মানুষের স্বভাববশত মানুষ তার প্রয়োজনে সমাজ গঠন করেছে ও
একতাবদ্ধ থেকেছে ঠিকই ।আবার তাদের প্রয়োজনে আলাদা গোষ্ঠী বা গোত্রও গড়ে তোলে । হতে
পারে সেটা জমিজমা, খাদ্যের অপ্রতুলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারনে মানুষ আলাদা
হয়ে গেছে তার মুল বংশ থেকে ।
এবার
সে তার পূর্ববাসস্থান থেকে এসে দেখা গেলো আলাদা কোন সতন্ত্র স্থানে এসে পৌছালো ।
তার সাথে দশ বিশ হাজার লোক আছে । তাদের নিয়ে সে পৌছালো জনমানবহীন কোন ঘাসময়
প্রান্তরে, কোন পাহাড়ী অঞ্চলে বা মরু প্রান্তরে ।সে যদি পূর্বে থাকতো কোন মরু
অঞ্চলে তো ঠান্ডা বা নাতিশীতোঞ্চ অঞ্চলে
এসে সে তার পোশাক ,চলাফেরা খাবার সবই চেন্জ করে ফেলবে । কারন ওখানে যেটা পেতো
এখানে সে সেই পশু থেকে শুরু করে খাবার, মাছ সবই পূর্ব পরিচিত না পেয়ে আলাদা পাবে । এবারে তার সাথে যত লোক এসেছে, গোত্র প্রধান হিসেবে মানে
তাদেরকে তো থাকার যায়গা করে দিতে হবে । তখন তারা ইচ্ছামত তাদের যার যতটুকু যায়গা
লাগে দখলে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করলো । তার আগে অবশ্য মানুষ যাযাবরের মত বসবাস
করতো । যখন দেখলো বার বার এত বৃহৎ জনগোষ্ঠী নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নয় ।তখন
মানুষের মাথায় স্থায়ী বসবাস, চাষ-আবাদ এর ধারনা এলো ।
(54)
তখন নতুন স্থানে এসে নতুন গাছপালা, নতুন
পশুপাখি দেখলো ।এই নতুন পশুপাখির তো একটা নাম দিতে হবে, নতুন গাছপালার একটা নাম
দিতে হবে ।অন্য জাতি থেকে নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য
ভিন্ন ভাষা গড়ে তোলাও একটা কারণ হতে পারে। ফলে জন্ম হলো নতুন ভাষার । এবার গোত্রপ্রধান
হয়তো চাইলেন আমরা আমাদের মূল বাসস্থান থেকে অনেক দুরে এসে যখন বসবাস করছি আমাদের
সবকিছুই যেহেতু পরিবেশের সাথে আলাদা আইডেন্টিটি ও স্বতন্ত্রতা হয়ে গেছে, চলুন আমরা
সবকিছুর নতুন নাম দিই । সবাই নতুন নামে সবকিছু ডাকবে ও চিনবে । দেখা গেলো
গোত্রপ্রধান বা রাজার নির্দেশ মোতাবেক সবাই সেই নতুন নামে ডাকতে শুরু করলো ।রাজা
হয়তো নিজের নামে বা তার অনুগত জনগোষ্ঠীর দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলের দেওয়া নামে ভাষার
নামে ভাষা প্রচলন করলেন ।যেমন ইংলিশ ভাষাভাষীদের নামে ইংল্যান্ড, বাঙালীর ভাষার
নামে বাংলাদেশ, মালয় ভাষাভষী বা জাতির নামে মালয়েশিয়া ইত্যাদি । তখনতো পৃথিবী
শুধুই ফাঁকা।জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জাতিগোষ্ঠী আলাদা স্থানে বসবাস করলো, সাথে
সাথে ভাষা পরিবর্তন হতে শুরু করলো । আপনি সামান্য উদাহরন হিসাবে বাংলাদেশের কথা
বলি । আমাদের ভাষা বাংলা ।
আঞ্চলিকতা
ভেদে আপনি নোয়াখালি, সিলেট, বরিশাল, চট্টগামের কথাই ধরুন । দেখবেন এগুলোও বাংলা
ভাষা হলেও আপনার বুঝতে কষ্ট হচ্ছে । আচ্ছা আপনাকে যদি বলি মেকুর কি আপনি বুঝবেন ? মেকুর
হলো বিড়াল । যশোরে অনেক যায়গায় বিড়ালের এই নাম ছোটবেলায় শুনেছি। আবার যদি বলি হাইনসেলে
আমি । এর মানে কি, এর অর্থ হলো রান্নাঘর এ আমি ।এই শব্দটা ও যশোরের অনেক গ্রামে
আগের নানীদের মুখ শোনা যায় ।আচ্ছা ঘুনি কি । ঘুনি হলো বর্ষাকালে মাছ ধরার
ফাঁদ বা খাঁচাবিশেষ যেটাতে মাছ বা সাপ
ঢুকতে পারে বের হতে পারেনা । আবার ঘরামীরা (গৃহ বাড়ি নির্মাণ মিস্ত্রী
)ঘরের কাজে এসে বলতো জিনেরী লাগবে । জিনেরী মানে পেরেক ।তো এই শব্দগুলো
ভাষাবীদ বা সুশীল সমাজের নাও জানা থাকতে পারে বা আপনারা জানতেও পারেন । তো কথা হলো
যে লাউ সেই কদু ।
(55)
তাহলে কেউ কি বলতে পারবেন কেন শুদ্ধ শব্দ
থাকতে এই শব্দগুলোর প্রচলন ছিলো যশোরে ।এর উত্তর কিন্তু আমার জানা নেই ।আবার
বর্তমানের জেনারেশন এই ভাষাগুলো ব্যবহার করছেনা ।এভাবে মূলত ভাষা সৃষ্টি ও বিলুপ্ত
হয় ।আজকের কথায় ধরুন আমরা বাঙালীরা দু লাইন ইংরেজী শিখে, আমরা ক্রমশ বাংলিশ হয়ে
পড়ছি ।বাংলা হারাচ্ছে তার মূল শব্দ ভান্ডার, প্রতিস্থাপিত হচ্ছে নতুন শব্দে
।পাঁচশো বছর আগের বাংলার সাথে এখনকার বাংলার মিল খুব কম । ধরুন আগের সাহিত্যে একটা
বাক্য ছিল দোস্ত একটা বিষয় নিয় দ্বন্দে আছি । এখন সেটা বলছি কনফিউশনে আছি । তারপর
ফেসবুকে আমরা লল(বোকা বা ব্যাঙ্গার্থে) , ব্রো (brother) এই জাতীয় শব্দতো তৈরি করেই ফেলেছি ।শুধী দর্শক শ্রোতা না বলে
হাই ভিউয়ার্স বলছি।আর ক্লাসে অ্যাসাইইনমেন্ট, হোমওয়ার্ক, ক্যারিয়ার এগুলোতো
পার্মানেন্ট হয়ে গেছে ।এভাবে ভাষা তৈরি হয় নষ্ট হয়, বদলায়, প্রয়োজন ফুরালে বিলুপ্ত
হয় । চাক, কোডা, আসোচীন, পাংখুয়া, মেগম ভাষার মত কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষাতাত্বিক
নৃগোষ্ঠী রয়েছে বাংলাদেশে । যে ভাষায় কথা বলে মাত্র দুই হাজারের ও কম লোক ।এবং এই
ভাষাভাষীদের ছেলেমেয়েরা জীবিকার ও জীবনযাত্রার
প্রয়োজনে বাংলা ভাষাতে অভ্যস্ত হচ্ছে । একদিন তাদের সে ভাষা বিলুপ্ত ও হবে
কালের গর্ভে ।
যেমন
বাইবেল বা তৌরাত এর ভাষা ছিল হিব্রু বা ইবরানী ভাষা যা খিস্ট্রীয় ৪০০ সালে
পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায় । তবে দুটি পবিত্র গ্রন্থের ভাষা ছিলো বলে ১৮৮১ সালে
এলিজিয়ের বেন এহুদা নামক এক রুশ বংশোদ্ভুত ইহুদীর হাতে এ
ভাষার পূনর্জন্ম হয় ।যেটা এখন ঈসরাইলের ২য় ভাষা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে । তবে এটা
মডার্ন হিব্রু নামে অভিহিত, প্রাচীন হিব্রুর সাথে পার্থক্য আছে বলে গবেষকদের অভিমত
।কেন বিতর্ক আছে জানেন কারন এলিজিয়েরের আবিষ্কারের ০৫ থেকে ০৬ দশক পরে ১৯৪৭
সালে ডেড সী এর পশ্চিম তীরে কুমরান গুহাতে
প্রাচীন হিব্রু ভাষাতে লেখা পান্ডুলিপি পায় দু জন বেদুইন বালক ।পরে যেটা গবেষকদের
হাতে আসে।এ গুলোর বয়স প্রায় ২০০০ বছরের কাছাকাছি ছিলো এবং এই স্ক্রোলের ৪০% লেখার
এখনো পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি ।এগুলোকে বলা
হয় ডেডসী স্ক্রল ।
(56)
উদ্ধারকৃত
প্রাচীন ডেডসি স্ক্রোল
তবে
এখনকার পর্যন্ত গবেষনামতে সকল ভাষার মূল পাওয়া যায় ইন্দোইউরোপীয়ান ভাষা(এই ভাষাগোষ্ঠীর
প্রাচীন লিপি ব্রাক্ষ্মী লিপি) থেকে । আমাদের বাংলা ভাষার সাথে দেখবেন আসাম ও
উড়িষ্যার ভাষার মিল আছে । এগুলো ইন্দো ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য ।ভাষার উৎপত্তি
ও উদাহরন অনেক আছে । বোঝবার জন্য সহজ দুটো
উদাহরন দিই । যেমন আমরা যেটা mouse বা ইদুর বলি সেটা লতিনা ও গ্রীকে muus, রুশ ভাষায় mish, সংস্কৃতে মূস বা মূষিক । আবার
ইংরেজী নোজ শব্দটা লাতিনে nass, রুশ ভাষায় nos, সংস্কৃতেও নাস বা নাসারন্ধ্র ।
আবার আমরা বাংলা বলি বমি ইংরেজীতে সেটা ভমিট । আবার বিশ্বের সৃষ্টিতত্বের প্রচলিত
অনেক কথাতেও মিল পাওয়া যায় । আমাদের ইসলাম ধর্মের নুহ আঃ এর মহাপ্লাবন এর কাহিনীর
সাথে হিন্দু ধর্মের বশিষ্ঠমুনি ও মৎসঅবতার কাহিনী প্রায় এক ।বিজ্ঞানমতে সময়কালটা
১০,০০০ বছর আগের হবুতি সন বা কোন গবেষকের মতে ৪৫০০ বছর আগের ।একেবারে একরকম উপকথা
প্রচলিত আছে লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে তবে ভিন্ন নামে । তবে
(57)
দুঃখিত নাম মনে করতে পারলাম না এই মুহুর্তে।এ
থেকেই বোঝা যায় ভাষার উৎপত্তি – বিকাশ ও ধবংশ সম্বন্ধে ও মানবজাতির উৎপত্তি
সম্বন্ধে বা আদিপিতা একজনই ।
ডাইমেনশন
বা মাত্রা -ভূত-প্রেত -রুহ ও তার
অস্তিত্ব তথা প্যারানরমাল জগৎ - আমাদের দেখার জন্য স্রষ্ঠা দুটো চোখ দিয়েছেন । এই দুটি চোখের সাহায্যে আমরা দেখছি পৃথিবীর সকল
সৌন্দর্য্য । চোখ মেলতেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে সুন্দর সুনীল আকাশ, রাতের আকাশের
জ্যোৎস্না ভরা চাঁদ, হাজারটা তাঁরাময় আকাশ , শ্রাবণের
বৃষ্টিস্নাত মেঘের দিন, ভোরের সূর্যোদয়, গোধুলির সূর্যাস্ত , নীল সমুদ্রের
সৌন্দর্য , ওই বন-পাহাড় এর অবারিত সৌন্দর্য, বাঘ, টিয়া, ময়ুর , চিত্রল হরিণ, স্রষ্ঠার সৃষ্টি কত সুন্দর জীব জগত এই সবই দেখছি অমুল্য এই চোখের কল্যানে
।ভাবুনতো আজ থেকে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই । তাহলে এক কথায় আপনার কাছে পৃথিবী
হয়ে পড়বে মূল্যহীন ।আর আমরা চোখে যা দেখি সেটাই বাস্তব । আমরা বিশ্বাস করি আমাদের
চোখ যা দেখে আর কান যা শোনে তাই বাস্তব ।
আসলেই
কি তাই ? আমাদের চোখ কি সব দেখতে পায় ? আমাদের কান কি সব শুনতে পাই ? মানুষের
শ্রাব্যতার সীমা ২০(বিশ) থেকে ২০,০০০(বিশ হাজার ) হার্জ । ২০ হার্জ এর নিচে ও
২০,০০০ হার্জ এর উপরের শব্দ মানুষ শুনতে পাইনা ।এর উপরেও তো শব্দ আছে । কুকুর
৩৫০০০ (৩৫ হাজার হার্জ ) পর্যন্ত শব্দ শুনতে পাই , আর বাদুর সর্বোচ্চ ১০০০০০(এক
লাখ হার্জ ) পর্যন্ত শব্দ শুনতে পাই ।আমাদের যদি আরো বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শোনবার
ক্ষমতা থাকতো তবে আমরা হয়তো অনেক অজানা জানতে পারতাম অথবা অনেক শব্দ সহ্য না করতে
পেরে মারা যেতাম । কিছু প্রজাতির তিমি মাছ মাত্র ০৭(সাত) হার্জ কম্পাঙ্কের সাউন্ড
শুনতে পাই পানিতে, যাকে বলে ইনফ্রাসনিক সাউন্ড । আমাদের শরীর বিশেষ করে আমাদের
মস্তিষ্ক চালাতে ২০ ওয়াট বিদ্যুৎ এর দরকার । এখন তো
(58)
মোবাইলে ক্যামেরা আছে, সেটা ১.৩ মেগাপিক্সেল
থেকে শুরু করে DSLR ক্যামেরার ১২০ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ক্যামেরা আছে । আপনি আমি যে
চোখ দিয়ে দেখি সেটা কিন্তু এক মহাশক্তিশালী ক্যামেরা ।আমাদের চোখ হলো ৫৭৬
মেগাপিক্সেলের এক শক্তিশালী ক্যামেরা । ফলে অনেক রং যেটা ক্যামেরাতে ধরা পড়েনা
সেখানে আমাদের চোখ প্রায় ০১ কোটি রং আলাদাভাবে সনাক্ত করতে পারে । এক কোটি রং কি
দেখেছেন ? যেহেতু আমাদের চোখ ও কানের দেখা ও শোনার একটা সীমাবদ্ধতা আছে সেহেতু
আমাদের চোখ ও কানের দেখা ও শোনার বাইরে নিঃসন্দেহে অনেক কিছু থাকাটা বিচিত্র কিছু
নয় । আমাদের চোখ অনেক রশ্মি ধরতে পারেনা । ধরুন এক্স-রে বা রণ্জন রশ্মি আবিষ্কার
আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রমাণ । আমাদের চোখ সেটাই দেখে যেটা
পৃথিবীতে আছে , যে রশ্মি পৃথিবীতে আছে, যে রশ্মি/আলো/রং আমাদের চোখের ধারন
ক্ষমতাতে আছে সেটাই সে দেখতে পারে, কান সেটাই শোনে যা তার শ্রাব্যতার সীমার মধ্যে
আছে । আমাদের শরীরের আলো তৈরির ক্ষমতা আছে । আমাদের শরীর থেকে এক প্রকার আলো বের
হয় । খালি চোখে আমরা সেটা দেখতে পাইনা ।হাইভোল্টেজ আবেশে যে কোন বস্তুর চারপাশে এক
ধরনের জ্যোতির্ময় বলয় দেখা যায় ।সেটা সর্বপ্রথম ধারণ করবার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন সেমিওন
ডেভিডোভিচ কিরলিয়ান ১৯৩৯ সালে ।মানবদেহের সাথে একটি তড়িৎ চৌম্বকীয় বা
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড ক্রিয়াশীল ।এ ধারনাটি ১৯৩৯ সালের আগ পর্যন্ত আনুমানিক
বা ধারনাগত ছিলো । কিন্তু কিরলিয়ানফটোগ্রাফি
ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড পরিমাপের যন্ত্র নিয়ে গবেষনাতে দেখা গেছে যে একটি
উচ্চ ক্রিয়াশীল ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড প্রতিটি জীবের দেহে প্রবাহিত হচ্ছে ।
যেটা কিরলিয়ান ফটোগ্রাফি মেথডে ধরা সম্ভব হয় ।এ ফিল্ডের প্রাবল্যতা পরিমাপযোগ্য
এবং এটা পরিবর্তনশীল বলে প্রমাণিত হয়েছে । বিভিন্ন কারণে এ ফিল্ড বা জ্যোতির
কমবেশি হয় । ক্ষেত্রবিশেষে কিছু অসুস্থতা ও বার্ধ্যকের বয়সে এই কিরলিয়ান
ফটোগ্রাফিতে রশ্মির প্রাবল্য বা সুস্পষ্টতা কম দেখা যায় । অর্থাৎ উদ্ভিদ হোক আর
প্রাণী হোক তথা মানবজাতির ক্ষেত্রেও এটি বয়সের সাথে সাথে
(59)
এই আলো কমতে থাকে ।কিরলিয়ানের মতে এটা লাইফ
সোর্সের প্রকাশ বা জীবনীশক্তি ধরার media ।
কিরলিয়ান
ফটোগ্রাফিতে তোলা পাতার ছবি
মেডিটেশনে কিরলিয়ান ফটোগ্রাফী
(60)
খটখটে পদার্থবিদদের মতে ইলেকট্রিক ডিসচার্জ
ফটোগ্রাফি ছাড়া আর কিছু নয় ।কোনটা সত্যি বলবো ? সত্যি সেটা মনে হয় যে যে চোখে দেখে
।ধরুন আমরা জীবনের একটা স্টেপে গিয়ে প্রেমে পড়ি। প্রেম নিয়ে আমাদের সে কি আবেগ, কত
সাহিত্য ,কবিতা, গান , সিনেমা, কত বিশেষণ,
কত প্রেমাবেগ, লাইলী-মজনু, শিরী-ফরহাদ কত আখ্যান , আবার এই প্রেমাবেগে অনেক
প্রেমীযুগলের একসাথে বিষপানে আত্বহনন, একই রশিতে ঝুলে আত্বহত্যা কত কি ।প্রেম
স্বর্গীয়, জনম জন্মান্তরের বন্ধন কত কি শুনি আমরা ।এবারে আসি এই খটখটে বিজ্ঞান
দিলোতো আপনার আমার খেয়াল ও আবেগের জগতে জল ঢেলে । রসায়ন বিজ্ঞান বলে
কাম-প্রেম-আবেগ এ সবই হলো টেস্টোস্টেরন-এস্ট্রোজেন, ডোপামিন, নোরপাইনফ্রাইন,
সেরাটোনিন, এন্ড্রোফিন এর খেলা । নামটা রসায়ন, কিন্তু একেবারে রসকসবিহীন ।
তবে
যতই বিজ্ঞানময় হোক না কেন, বিজ্ঞানের
দৃষ্টিতে সবকিছু বিচার না করে আমাদের উচিত কিছু জিনিস আমাদের আবেগ ও সাহিত্যে
সীমাবদ্ধ রাখা ।ধরুন আপনি আমি বূঝলাম প্রেম-ভালোবাসা তো শুধুই হরমোনের খেলা, সংসার-সন্তান
সবকিছুই তো আপনার আমার বানানো সামাজিক সিস্টেম ।স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন পবিত্র
কালেমা পড়ে বা হিন্দুদের মত অগ্নি সাক্ষী রেখে সাতপাক ঘুরে সাতজনমের বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়া সম্পর্ক বলে এ সম্পর্ক থেকে একমাত্র মৃত্যূ ছাড়া আমাদের কেউ আলাদা করতে
পারবেনা এ রকম সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে আছে আমাদের সাথে, পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে কি হবে,
বাস্তব ভিত্তি থাকুক বা না থাকুক আমাদের বিশ্বাস আছে জন্ম-মৃত্যূ-বিয়ে এই তিন
বিধাতা নিয়ে । এই পুরনো বিশ্বাস গুলোকে অকাট্য ভাবে বিশ্বাস করা বোধ হয় যথেষ্ট
ভালো মানব সমাজ ও জাতির জন্য।ধরুন বিজ্ঞান মনষ্কতায় ও দৃষ্টিতে আমরা সবকিছু ভাবলাম
বা ভাবতে শুরু করলাম, যেমন প্রেম বলে কিছু নেই সবই রাসায়নিক ব্যাপার-স্যাপার, যৌনতা
বা ইজ্জত সম্মান বলে কিছু নেই, ফ্রি সেক্স কান্ট্রি বা সোসাইটি তো রয়েছে, তারা
যেটা পারে আমরা পারিনা কেন, এক সঙ্গী বা সঙ্গীনির বাহুডোরে একঘেয়ে যৌনজীবনের থেকে
রঙিন
(61)
যৌনজীবন যেখানে ইচ্ছামত সঙ্গী বা সঙ্গীনি
পরিবর্তন করা যায় সেটা ভালো, সন্তান জন্মদান বিবাহ না করেও সম্ভব, পিতৃ বা মাতৃ
পরিচয়ের কি দরকার , সন্তান কোলে পিঠে মানুষ না করে বেবি পালনের কোন কেয়ার সেন্টারে
পালতে দিলে হয়, টেস্টটিউব বেবি, গর্ভ ভাড়া করে সন্তান জন্মদান তথা সেরোগোসির
পদ্ধতি অনেক কিছুই শুনি আমরা ।এতক্ষন আমাদের রক্ষণশীলতার বাইরে যে কথাগুলো বললাম
মানে সনাতন নিয়ম ভেঙে আমরা যদি কেউ এ রকম হতে থাকি কোন সমস্যা নেই । আমার লাইফে
আমি ইচ্ছামত মাদক নেবো, ইচ্ছামত বহুগামী-সমকামী হবো, অযথা মানবিক বোধ না রেখে
কাউকে খুন করবো তাতে কার কি আসে যায় ? তাতে কার কি ।তাতেও
অসুবিধা নেই, অসুবিধা নেই ততক্ষন যতক্ষন এটা কিছু মানুষের ভিতর থাকে ।অসুবিধা তখনই
যখন সবাই এই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে যাবে । ধরুন কালো আছে তাই শ্বেত চামড়ার এত দাম, অসুন্দর
আছে বলে সুন্দরীর এত দাম, সব প্রাণী পাতা খায়না, সব প্রাণী মাংস খায়না বলেই কিন্তু
ভারসাম্য টিকে আছে।
সবাই
যদি আউট অফ কন্ট্রোভার্সাল রুল মানে রক্ষণশীলতার বাইরে চলে যেতাম তাহলেই
মানবজাতি ও সমাজের চুড়ান্ত ধবংশ হতে বেশিদিন লাগতোনা ।ধরুন ১০০ ছেলে আছে একটি দেশে,
এই ১০০ জনের সবাই চায় উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হতে , ধরুন এই ১০০ জন ছাড়া আর কোন
ছেলেই নেই সেখানে, এবং সবাই লক্ষ্য অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ের বিলাসবহুল জীবনের
অধিকারী হলো ।এবার এদের খেদমতে লোক পাবে কোথায় ।হয় তাদের সিস্টেমটাই ধবংশ হয়ে যাবে
বা অন্য দেশের কম যোগ্যতার জনগোষ্ঠী থেকে
তাদের অধীনে তাদের কলকারখানা চালাবার জন্য শ্রমিক আনবে । আবার তার এই শ্রমিক তার
অধীনে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছে । মালিক মনে করছে আমার অধীনে হাজার
হাজার লোক আছে , আমি কত বড় একজন শিল্পপতি, আবার আমাদের দেশ থেকে যে শ্রমিক বিদেশে
যাচ্ছে সে মাসিক বেতনেই সন্তুষ্ট । তা দিয়েই সে তার দেশে থাকা স্ত্রী পরিজন ও মা
বাবা সন্তান ও নিজের ভবিষ্যত গড়তে পারছে । যে বেতন সে
(62)
পাচ্ছে তা হয়তো তার কোম্পানী মালিকের একদিনের
খরচের দশভাগের ও
একভাগ ও না ।এভাবে স্রষ্ঠা ভালো-মন্দ, ধনী
-গরীব, সুন্দর অসুন্দর, মানবিকতা সব কিছুই সৃষ্টি করে রেখেছেন । আপেক্ষিকতা এমন এক
তত্ব যা দিয়ে শুধু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয় , আমাদের মানবজীবন ও সুন্দর করে ব্যাখা করে দেওয়া যায় । এ জন্যই বলে
জীবন যেখানে যেমন, যার কাছে যাতে সুখ, সবার চোখে সুন্দরের সঙ্গা এক হলে নির্দিষ্ট
কিছু ছেলেমেয়ে ছাড়া আর কারো বিয়ে হতোনা, নির্দিষ্ট কিছু ফুল ফল ও খাবার সুন্দরের
সঙ্গা হয়ে থাকতো, সমাজ সংসার, মা-বাবা , সন্তান মায়ার বন্ধন সামাজিক শৃঙ্খলা কিছুই
থাকতোনা, যদি আমাদের সবার কাছে অরক্ষণশীলতা ভালো লাগতো, তাহলে কি হতো নিজ ভাবনায়
একটু ভেবে সোস্যাল মিডিয়া কমেন্টে বা মেসেজে জানান ।কেউ কৃষিকাজ করছে বলেই আপনাকে
রোদ বৃষ্টিতে পুড়তে বা ভিজতে হচ্ছেনা, গোড়ামী মনে হলেও কোন মোড়ল ধরণের লোক সামাজিক অনুশাসন বজায়
রেখেছেন বলে সমাজে পারিবারিক বন্ধন অটুট আছে, সবাই বিশৃঙ্খল হবার সুযোগ পাচ্ছিনা, একটা ভালোমন্দের অনুপাত(ratio)ঠিক আছে বলেই হয়তো সব ঠিকঠাক আছে, তা না হলে হয়তো প্রাণীজগতের অন্যান্য প্রাণীর মত
যাযাবর হয় উঠতাম ।
তারপরও
মৌমাছি, পিপিলীকা এদের শৃঙ্খলা ও সমাজবদ্ধতা দেখুন ।এ জন্য আমাদের ব্যাক্তিগত
–পারিবারিক-সামাজিক লাইফে সব যায়গায় যুক্তি ও বিজ্ঞান রেখে কিছু আবেগ ও সনাতন
সেন্টিমেন্ট আবশ্যক ভাবে থাকা দরকার, শিকড়কে অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে, ভুলে
গেলে চলবেনা ।তা নাহলে প্রাচ্যের
পারিবারিক ও সামাজিক সৌন্দর্য ও সুনাম অক্ষুন্ন থাকেনা ।আবার যেখান থেকে শুরু
করেছিলাম আমাদের চোখ যে যে রশ্মি ধরতে পারে বা ওই যে বললাম এক কোটির মত
রং আলাদাভাবে ধরতে পারে ।তো এক কোটির মত রং বা রশ্মি আমরা কি দেখেছি ? ।
হাতে গোনা কয়েকটি রং ছাড়া আমরা আর কিছু
দেখিনা ।ঊর্ধে গেলে দেখি ওই বারটি রংয়ের মিশ্রনে তৈরি নানা কম্বিনেশন ।তো অদেখা সব
রশ্মির ভিতর দিয়ে যদি আমরা আমাদের জগৎ দেখি তাহলে নানা রকম অদেখা এক জগৎ আমাদের
সামনে দেখা দেবে । আমাদের চোখ যদি এখন যতটুকু বড়
(63)
দেখে বা যে যে রং শনাক্ত করতে পারে তার বাইরে
যদি কিছু পারতো তাহলে আরো একটা জগৎ দেখতো । বর্ণান্ধতার কথা হয়তো শুনেছেন সবাই ।
আমাদের চোখের কোণ কোষ রং শনাক্তকরনের জন্য দায়ী । মুলত লাল, সবুজ ও নীল এই
তিনটি রং সে ধরে । এখন যদি এই কোন কোষের কোন বর্ণালী সনাক্তকরন কোষ নষ্ট হয়ে যায়
তাহলে, সেই লোক হয়তো লাল রক্ত দেখে বলতে পারলোনা এটা কোন রং সে দেখছে। আবার যদি
ধরি কথার কথা, কোন ব্যাক্তির চোখ গড গিফটেড ভাবে, বিজ্ঞানের সুত্রের বাইরে
গিয়ে এই তিন মৌলিক রংয়ের বাইরে কোন একটি
অজানা রশ্মি বা রং শনাক্ত করতে সক্ষম হলো তাহলে সে যা দেখবে আপনি আমি সাধারন
চর্মচক্ষুতে তা দেখতে পাবোনা, বরং তার দেখাকে পাগলের প্রলাপ ভাববো ।আপনার চোখ আপনার টিভির রিমোট থেকে নির্গত রশ্মি দেখতে পায়না , কিন্তু আপনার মোবাইলের ক্যামেরা তা ধরে ফেলে । এক্সরের ভিতর দিয়ে
যখন আমরা কোন মানুষ দেখলে আমাদের এই চোখ দিয়েই একজন সুন্দর মানুষকে দেখি কঙ্কাল
ছাড়া আর কিছু না হিসেবে । তাহলে দাড়াচ্ছে আজ যদি সূর্য্য UV-RAY(ULTRA-VIOLET) বা অতি বেগুনি রশ্মি না ছেড়ে X-RAY বিকিরণ করতো
পৃথিবীর উপর তাহলে আমাদের চোখ কি দেখতো, যা দেখতো সেটা দেখা খুবই সহজ । এ জন্য
আপনি প্রথমে একটা ছবি তুলুন আপনার হাতে থাকা মোবাইলে ।
তারপর সেটাকে মোবাইলে ইন্সটল করা ফটো
এডিটর দিয়ে নেগেটিভ বা সোলার ইফেক্ট দিয়ে দেখুন । পৃথিবীটা হয়ে যেতো আপনার হাতে
আসা X-RAY রিপোর্ট ইমেজের মত । শুধু সেটা না X-RAY এর বাজে প্রভাবে ক্যান্সার,
টিউমারে সৃষ্টিজগত ধবংশ হয় যেতো, অথবা অভিযোজিত হয়ে আমরা XRAY প্রুফ হয়ে যেতাম ।
(64)
আমাদের চোখে দেখা পৃথিবী
পৃথিবীর চারপাশটা যদি ইনফ্রারেড ওয়েভ
দিয়ে ঘেরা থাকতো তবে পৃথিবীর বাইরে গিয়ে পৃথিবীকে এমন রঙে দেখতেন
(65)
পৃথিবীর চারপাশটা
যদি X-RAY দিয়ে ঘেরা থাকতো তবে পৃথিবীর বাইরে গিয়ে পৃথিবীকে এমন রঙে দেখতেন
পৃথিবীর চারপাশটা যদি গামা রশ্মি দিয়ে ঘেরা থাকতো তবে পৃথিবীর বাইরে
গিয়ে পৃথিবীকে এমন রঙে দেখতেন
(66)
এটাই
হলো কথা । আমরা আমাদের খালি চোখে যা দেখছি , চর্মচক্ষুতে যা দেখছি সেটাই কি শেষ
কথা, এর বাইরে কি আর কিছু নেই বা থাকতে পারেনা । অবশ্যই পারে, যা আমরা দেখছি সেটাই
শেষ কথা না । এর বাইরে অনেক কিছুই আছে । ন্যানোটেকনোলজি
নিয়ে এখন বিস্তর গবেষণা হচ্ছে । ন্যানোটেকনোলজি টা কে একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝাই,
ধরুন আপনার ঘরে একটা টেবিল আছে, আপনি সেখান বসে পড়াশুনা করেন, এখন আপনি সম্পূর্ন
বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ থাকলেন ।কিন্তু হয়ে গেলেন ছোটখাটো ব্যাকটেরিয়া বা
ভাইরাসের মত ।তখন এই টেবিলটাকে মাইক্রোস্কোপ এর সাহায্য ছাড়া যেমন / টেবিলের কাঠের
যে রূপ দেখা যেতোনা, ঠিক টেবিলের সেই রূপ আপনি এখন এমনিতে দেখতে পাচ্ছেন ।এটাই হলো
ন্যানোটেকনোলজি ।এক সময় হয়তো নানোটেকনোলজির মাধ্যমে এত ক্ষুদ্র রোবট আবিষ্কার
সম্ভব হবে যেটা আপনার শরীরে ঢুকে বিনা কাটাছেড়াতে জটিল ও ঝুকিপূর্ণ অপারেশন করে
বেরিয়ে আসবে ।
আমার
ওজন ৭০ কিলো গ্রাম । এটা কি শেষ কথা ? এটা কি মহাবিশ্বের সবখানে সমান ? এই
মুহুর্তে চাঁদে গেলে বা মঙ্গল গ্রহে গেলে আমার ওজন বা ভর এক থাকবেনা । কারণ ওজন বা
ভর আপনি যে স্থানে বসে পরিমাপ করছেন সেটা সে স্থানের অভিকর্ষজ বল / অভিকর্ষজ ত্বরণ
ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর নির্ভর করবে ।ধরুন আপনার ওজন ৭০ কেজি আপনি চাঁদে গেলে
আপনার ওজন হবে ০৭ কেজি , আপনি পৃথিবীতে এক লাফে এক ফুট উপরে উঠলে চাঁদে অনায়াসে ০৬
ফুট উচ্চতায় বিনা কষ্টে উঠতে পারবেন । তাহলে
আমি মানব , আমার ক্ষমতার সঙ্গাটাও আপেক্ষিক ।
দ্রব্যগুণ ও স্থানগুনে আমার ক্ষমতার সঙ্গা ভিন্ন হয়ে যেতে পারে । আপনি
আমি একটা গাছ বা মানুষকে যতটুকু বড় দেখছি বা ছোট দেখছি আসলেই কি সেটা তত বড় বা ছোট
। এর উত্তরটাও আপেক্ষিক । আমার চোখের লেন্স এই গাছ বা মানুষটাকে নির্দিষ্ট
RESOLUTION বা ZOOM এ দেখছে
(67)
কাঠ কাটলে এ রকম দেখা যায় কি , microscope এর
নিচে দেখা একটি কাষ্ঠল উদ্ভিদের অংশ , খালি চোখে যেটা আমরা দেখিনা
এক ধরনের মশা বা
মাছি জাতীয় পতঙ্গের চোখ মাইক্রোস্কোপ এর নিচে
(68)
এটা কোন পর্বতের গিরিখাদের ছবি নয় বা মহাকাশের থেকে নেওয়া পৃথিবী পৃষ্ঠের ছবি ও নয়, একটা
বাচ্চা ছেলের দাঁতের ফাটল , ১৪০০ গুণ বিবর্ধিত করে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ এর নিচে
তোলা ।
সে জন্যই তো আমি সেটাকে ওইটুকু দেখছি । আমি
মানুষ আমি উড়তে পারিনা । কিন্তু এই উড়তে না পারাটাও আপেক্ষিক ।আমি উড়তে পারিনা
পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট সীমাতে ।পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৫০০ কি.মি উপরে আপনাকে নিয়ে ছেড়ে দিলে আপনি তখন নিজেকে
ওজনহীন মনে করবেন এবং ভেসে বেড়াবেন অবশ্য সেখানে একটা ঘুর্ণণ ও রয়েছে, এই ঘূর্ণণ
না থাকলে অবশ্য গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহ সব পতিত হয়ে যেতো ,পৃথিবী গিয়ে পড়তো সূর্য্, চাঁদ
পড়তো পৃথিবীতে । কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট ও একই নিয়ম মেনে চলে ।একে পৃথিবী
থেকে বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ স্তর
এক্সোস্ফিয়ার এর কাছাকাছি বা উপরে ওঠানো হয় জ্বালানীর জোরে জোর করে । তারপর এর
জ্বালানী শেষ হলেও এটি অনন্তকাল ধরে পৃথিবীর ঘূর্ণন এর সাথে ঘুরতে থাকে । আবার
কসমিক রে বা মহাজাগতিক রশ্মি অনবরত পৃথিবীতে এসে আঘাত হানছে ।আঘাত হানছে জীব জগতের
উপর অনবরত ভাবে ।
(69)
ক্ষেত্র বিশেষে এটা দিনের পর দিন অনবরত ভাবে
আমাদের কোষের ক্ষয় ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে । পৃথিবীর বায়ুমন্ডল থেকে
ওজোনস্তরের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে অতিবেগুনী রশ্মি ও কসমিক রে খুব সহজেই তার
ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারছে আমাদের উপর । ফলে তেজস্ক্রিয়তা জনিত রোগব্যাধীতে
আক্রান্ত হবার ঝুকিও বাড়ছে । মহাজাগতিক রশ্মির সঠিক উৎপত্তিস্থল নির্দিষ্ট নয়
।ধারনা করা হয় লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দুরের সুপারনোভা থেকে এগুলো আসছে । মহাবিশ্ব
সৃষ্টির শুরু থেকেই এগুলো সমানে পতিত হচ্ছে পৃথিবীর উপর।সবশেষে এটাই দাড়াচ্ছে যে
আমরা যেটা দেখছি, যেটা শুনছি সবটাই আপেক্ষিক ও সাজানো একটা পরিবেশ । এটাই শেষ কথা
নয় । যেভাবে সিনেমা সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটাই সেভাবে আমরা দেখছি ও শুনছি । তাহলে
আমরা যেটা দেখছি ও শুনছি তার বাইরে তো এক মহা অজানা, মহা রহস্যময়, এক অলৌকিক জগৎ
থাকতেই পারে ।এটা অসম্ভব অবাস্তব, অযৌক্তিক বা গাজাখুরী গল্প বা অনুমান ভিত্তিক
কথা নয় । লোক সমাজে বহুকাল ধরে প্রচলিত জ্বীন-ভূত –প্রেত-রূহ তথা প্যারানরমাল জগৎ
নেই বলে দেওয়াটা হয়তো অতি বিজ্ঞান বা অতি বাস্তবতাবাদে সম্ভব ।কিন্তু একবার
ভাবুনতো এ সব নেই বলে দেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত ।
ভিডিও
ক্যামেরা আবিষ্কারের আগে মানুষ কি কখনো ভাবতো যে, আমাদের ইচ্ছাকৃত মূহুর্ত
ক্যামেরার রিল বা মেমোরিতে ধরে রাখা সম্ভব ! এখন যেটা সম্ভব নয়, বিজ্ঞানের কল্যানে
হয়তো একদিন তা সম্ভব । কে ভেবেছিলো যে মোবাইল দিয়ে হাজার মাইল দুরের লোকের সাথে
কথা বলা সম্ভব ।মোবাইল ব্যবহার করছেন বলে, ব্যাপারটা বুঝতে পারছেননা । একটু ভেবে
দেখেছেন কত জটিল ব্যাপারটা । পৃথিবী বলি
আর বিশ্বজগৎই বলি তা অপার শক্তির আধার । পৃথিবীতে যত গাছপালা আছে তার হাতেগোনা
কয়েকটি ছাড়া আমরা এখনো সবগুলোর গুণাগুণ সম্বন্ধে জানতে পারিনি । এর ভিতর কোনটার
আছে জ্বালানী তেল প্রদান গুণ, দুরারোগ্য ব্যাধির ঔষধ প্রদান গুণ । পৃথিবীতে লক্ষ
লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে । হাতে গোনা হয়তো শত থেকে হাজার খানেক উদ্ভিদের প্রজাতির
ভেষজ, ফল, কাঠ ও ফসলের জন্য আমরা ব্যবহার করি, বাকি ৯৯% উদ্ভিদের ব্যবহার আমাদের
অজানা । সামান্য যদি বলি আমের কয়েকটি জাতের নাম বলুন যেগুলোর নাম
(70)
আগে কেউ শোনেনি তাই আপনি আমি বলতে পারবোনা
।এই ধরুন ফ্লোরিগান , আরুমানিস , কালাপাহাড়ী ইত্যাদি ।হতে পারে এর কোনটার
ভিতর লুকিয়ে আছে দুরারোগ্য রোগ বিধান ঔষধ, বা বার্ধক্য প্রতিরোধী গুণ, বা অজানা
অত্যাশ্চর্য কোন গুণ ।পৃথিবীর সব প্রাণীর সন্ধানও কিন্তু আমরা পাইনি , পৃথিবীর জলে , স্থলে , পাহাড়ে , গুহাতে , বনে ও ভূগর্ভে এখনো লুকিয়ে আছে অনেক অদেখা অজানা সভ্যতার মানুষ , বিভিন্ন অদেখা পশু পাখি , যে মানুষদের বর্ণণা বা যে সকল পশু বা প্রাণীর বর্ণনা আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানীদের ও জানা নেই ।হয়তো ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কোনদিন তাদের খোজ পেয়ে যাবো । মানুষ কালে কালে বিভিন্ন অতি আশ্চর্য শক্তির
সন্ধান পেয়েছে , আশ্চর্য দ্রব্যগুন আবিষ্কার করেছে, সভ্যতাকে চরম উন্নতিতে নিয়ে
গেছে, অদৃষ্টের প্রভাবে যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা ভৌগলিক পরিবর্তনের কারণে
ধবংশ হয়ে গেছে । আমার মনে হয় আমাদের এই যুগের মত সভ্যতার ছোয়া পৃথিবী অনেকবার
পেয়েছে আবার ধবংশ ও হয়ে গেছে ,আলকেমি নামক ৫০ জনের একটা সংগঠনের অনেক অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার আজ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত । কতবার মানুষ সভ্যতার চরম শিখরে আরোহন করেছে আবার অনুন্নত অবস্থায় ফিরে গেছে
তার ঠিক নেই । যত উন্নত আমরা হই না কেন আমাদের বসবাসের ভূখন্ড ২০০ ফুট মাটি বা
পানির নিচে যাবেনা এটা বলতে পারিনা বা নিশ্চয়তা দিতে পারিনা, কারন আমরা ভেসে আছি
পানি আর তেলের উপর মাটির জাহাজে । নিশ্চয়তা দিতে পারিনা বা ঠেকাতে পারিনা
প্রাকৃতিক দূর্যোগ , ভূমিকম্প, সুনামী, ভূমিধ্বস, মহাযুদ্ধ। তাহলে আজ যেটা আছে / নেই সেটা ভবিষ্যতে আছে বা নেই হয়ে যাবেনা এমন
নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে কি ? জ্বীন –ভূতের গল্প বা হন্টেড প্লেসগুলো নিয়ে চলে আসা
কাহিনীগুলো শুধু কাহিনী হোক বা লোকশ্রুতিই হোক এগুলো চলে আসছে যুগ যুগ ধরে, সুদুর
অতীত থেকে ।
বিজ্ঞান যেমন বলেই দিয়েছে ভুত-প্রেত-জ্বীন-আত্বা –প্রেতাত্বা এ সব অবচেতন মনের
নিছক খেয়াল বা অলস মস্তিস্কের কল্পনা প্রসূত গল্প মাত্র, তেমনি আধিভৌতিক এসব ব্যাপারগুলোর পক্ষে বলা মানুষ ও গবেষকের ও অভাব নেই ।
হ্যারি প্রাইস, স্যার উইলিয়াম ক্রুকস , কার্লিস ওসিস উল্লেখযোগ্য নাম ভৌতিক
গবেষণাতে ।
(71)
আর আমাদের সামনেই তো আধুনিক যুগে সৌদি আরবে
ওয়াদি আল জ্বীন নামক যায়গা(মদিনার আল বায়দা উপত্যাকা তে) এই ওয়াদি আল জীন এ কোন গাড়ি
ইঞ্জিন বন্ধ করলে চললে ১২০ কিমি গতিতে মদিনার দিকে উল্টো
চলতে শুরু করে, যে কোন জিনিস ফেলে দিলে সেটাও পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে থাকে, সৌদি
সরকার এই এলাকা সাম্প্রতিক কালে চলাচলের জন্য অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, অনেকে
মনে করেন এটা ওই এলাকাতে মাধ্যাকর্ষণের বিপরীত সুত্র এবং কেউ কেউ একটা মিথ এর দাবি
করেন যে যদিও এটার একেবারে কোন সঠিক ভিত্তি নেই , সেটা হল একবার হুজুর সাঃ এর একদল
জীনের সাথে দেখা হয় , তারা কোন এক কারনে চুক্তি করে যে আমাদের এলাকায় মানুষ আসবে
না , তখন থেকে এখানে কোন মানুষ বা গাড়ি যাই আসুক তাকে উল্টো দিকে মানে মদিনার দিকে
ফেরত দেওয়া হয় । সৌদি সরকার এই যায়গাতে বিকাল ০৪ টার পর চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে
। ভারত সীমান্তের লাদাখ, বাংলাদেশের গানস অফ বরিশাল নামক মিথ (১৮৯০ সালে টিডি
লাটুস এর এক প্রতিবেদনে ১৮৭০ সালে প্রথম শোনা এক বিকট শব্দের উল্লেখ আছে,
মিস্টপুফার্স বা গঙ্গা ব্রক্ষপুত্র ডেল্টার অব্যাখ্যাত শব্দ বলে যাকে আর কি, এটা
বরিশালের তৎকালীন অববাহিকাতে শোনা যেতো , ১৮৮৬ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির
হিসাব অনুযায়ী খুলনা ও নারায়নগন্জেও এ শব্দ শোনা গেছে বলে জানা যায় , সাধারণত নদী
অববাহিকায় ভুকম্পন ও নদীর তলদেশের প্লেটের স্থানচ্যুতির মাধ্যমেও এই বিকট রহস্যময় শব্দের উৎপত্তি । কামানের গোলার শব্দের
সাথে এর মিল আছে ।এমন একটা শব্দ শুনলেন যেটা শুনে আপনার মনে হল বোমা বিস্ফোরণের মত
, গুলির শব্দ এর মত , কিন্তু বাইরে এসে দেখলেন কোন বোমা গুলি কিছুই বিস্ফোরিত হয়নি
।প্রকৃতি আপনা থেকে উৎপন্ন করেছে এ শব্দ এই রহস্যময় শব্দই রহস্য ইতিহাসে গানস অফ বরিশাল হয়ে আছে । তবে ১৯৫০ এর পর এরকম শব্দ আজ পর্যন্ত কউ শোনেনি),
হিমালয়ের অমর মানুষ মিথ, হিমালয়ের ইয়েতি বা তুষারমানব রহস্য , হিমালয়ের রক্ত তুষার
এ সব সহ হাজার হাজার মিথ সারা পৃথিবীজুড়ে এই যুগেও রয়েছে ।।বিজ্ঞানীদের
জানামতে পৃথিবীর মরুভূমি , জঙ্গল ও সমুদ্রের নির্দিষ্ট কিছু
যায়গা বিজ্ঞান , চুম্বক ও মাধ্যাকর্ষণের সুত্র মানেনা , বিজ্ঞানীদের কাছে
অনাবিষ্কৃত এ রকম অনেক যায়গা এখনো থাকতে পারে ।
(72)
**** গ্রাম বাংলাতে বা শহরে প্রচলিত কিছু কমন ভৌতিক ঘটনা ও তার ব্যাখ্যা ***
ঘরের চালে গভীর
রাতে ইট পাটকেল পড়া – ঘরের চালে গভীর রাতে ঢিল পড়া ,
কিছু যেন চালের বা ছাদের উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে এরকম অনেক কিছু আমরা প্রায়ি শুনে
থাকি ।এগুলো সাধারনত ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাড়াই আমাদের
কাছে । এগুলোর ক্ষেত্রে সাধারনত অতিপ্রাকৃত কিছু হবার কারন গুলো অস্বীকার করে ফেলা
যায় খূব সহজেই । কারণ ইট-পাটকেল ঢিল এগুলো সাধারণত কারোর ছোড়া হতে পারে ।আবার হতে পারে লক্ষ করে দেখবেন কোন কোন বাড়ির পিছনে দিকে নারকেল গাছ থাকে ,
সুপারী গাছ থাকে ।সেসব থেকে টিনের চালে এগুলো পড়ে
। কেউ দুষ্টুমী বশত ঢিল ছুড়তে পারে । আগে শোনা যেতো
মানুষ গ্রামে বা পাড়াতে এটা সেটা দেখতো । এখন দেখে না
কেনো ,আচ্ছা আপনার আমার বাড়ীর আশেপাশে কি আপনি বা আমি আধিভৌতিক কি কিছু দেখি ?
দেখিনা বলা যায় ১০০ % নিশ্চিত। তাহলে প্রকৃত ঘটনাটা
কি ? । এখন বলতে গেলে সবজায়গাতে মানুষ এর
কোলাহল, বলতে গেলে লোকে লোকারণ্য, বলতে গেলে মানুষ দখল করে নিয়েছে সব যায়গা । যেটুকু যা ফাকা যায়গা ছিলো সেটাও ও দখল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন নতুন উন্নয়নের
ধাক্কাতে । বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ঊল্লেখ পাওয়া যায় জ্বীন
,ভূত এগুলো নির্জন স্থানে থাকে , মানব বসতি থেকে বেশ দুরে থাকে । তাহলে এরা বসবাস করে সব নির্জন স্থানে । কিন্তু
সর্বক্ষণ নির্জনে গেলেই কী দেখা যায় এদের । আজ পর্যন্ত যত
মানুষ এসব দেখেছে তারা কেউই এগূলো দেখাতে পারেনি , অন্য কাউকে যখন তখন ডেকে নিয়ে দেখাতে । কিন্তু তারপরেও মানুষ কী এগুলোর গল্প বা ভয় কে সম্পূর্ণ রূপে ছাড়তে পেরেছে । ছাড়তে পারেনি । আচ্ছা এখন কী নির্জন স্থান গূলো আছে , তেমন
নেই ।আর
মানুষের বিজ্ঞানমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক মানব সৃষ্ট ভৌতিক কাহিনী বিলুপ্ত হয়েছে ।
তবে এখনকার যুগে মানুষের বাড়ীর ছাদ
গূলো বলা চলে দিন এবং রাতে সম্পূর্ণ রূপে নির্জন । ছাদে কেউ যায়না বললেই চলে । রাতের ছাদ গুলো
আড্ডাখানা নয়তো এসবের !!। হয়তোবা । বর্তমানের
বহুতল ভবনের ছাদগুলো এদের জন্য নিরাপদ
আড্ডার যায়গা হয়ে যায়নিতো ।
(73)
আমার এসব গাজাখুরী গল্প না বিশ্বাস করলেও চলবে । তবে বইটার বিষয়বস্তু গূলো আজগুবী
ব্যাপার নিয়ে হলেও , যুক্তি , সম্ভাবনা আর হারানো কিছু জ্ঞান নিয়ে এর
আলোচনা । সব কিছু এখানে প্রমাণিত সত্য হবে তা নয় । ইন্টারনেট ঘেটে
পৃথিবীর অনেক ভৌতিক যায়গার নাম দিতে পারতাম ।কিন্তু দিলাম না
এজন্য যে সেগূলো আপনাদের ভূত কাহিনী প্রেমী পাঠক দের কারো না কারো পড়া । আসলে আমি মনে করি ভূত দেখার পিছনে বা ভৌতিক কাহিনীর পিছনে দুটো কারন থাকতে
পারে ।
প্রথমত – মানুষের সবার
চোখ থেকে লাখে বা হাজারে একজনের ভিন্ন রশ্মি ধরার ক্ষমতা থাকতে পারে । সে ওই রশ্মি
রং ধরতে পারার কারনে সে অদ্ভূত যে জিনিসটি দেখলো সেটা বাকি নয় লক্ষ নিরানব্বই
হাজার মানুষের কাছে অদেখাই রইলো । ফলে সবাই ব্যাপারটা সত্যি হওয়া সত্ত্বেও
গাজাখুরি বলে উড়িয়ে দিলো । পূর্বেই অধরা সিক্সথ সেন্সের কথা বলেছি ।
দ্বিতীয়ত অনেকে বিশেষ কারণে বা ব্যাক্তিগত স্বার্থ
উদ্ধারে ভৌতিক কাহিনীর রটনা করতে পারে বা জ্বীনে ধরার অভিনয় করতে পারে । যেমন আমরা
ভন্ড সাধুদের জ্বীন তাড়াতে বা রোগ সারাতে নানা
রকম অদ্ভূত সব কুকীর্তির খবর প্রায়ই পত্রিকায় দেখি । ভূত দেখানোর ফ্রড অনেক
ট্রিকস আছে । বইয়ে সেগুলো আর লিখলাম না । বিজ্ঞানের এই স্বর্ণ যুগে ভূত দেখানো বা
ভৌতিক পরিবেশ তৈরি কোন ব্যাপারই না ।
**** আগুন উড়ে যাওয়া -গ্রাম এ একটা গল্প প্রায় শুনি আমরা ,আজ থেকে
বেশ আগে ছোটোবেলাতে শুনতাম, এখনো অনেক সময়ে শুনি, কেউ একজন রাতে যখন সে বের হয়েছে হঠাৎ তার থেকে খানিকটা সামনে দিয়ে
আগুন এর পিণ্ড উড়ে গেছে
আগুণ এর পিণ্ড উড়তে দেখাটা এমন কোন
ব্যাপার নয় । অনেক কাল আগে থেকে সেই সুদূর প্রাচীন থেকে
জাহাজ এর নাবিক, রাতের মরুযাত্রীরা সবাই দেখত যে আকাশ ঠিক আগুন ছুটে আসছে । এটাকে অনেকে বলেন তাঁরা খসা বা উল্কাপাত ।
(74)
আকাশ থেকে আসা
কোন পাথর বা ধাতব খণ্ড যখন বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন সেটা জ্বলে ওঠে । অনেক সময় পতিত হবার উচ্চতা এবং কোনের উপর নির্ভর করে সেটা অনেকক্ষণ দেখা যেতে
পারে । কিন্তু যখন আপনি সেটা গিয়ে দেখলেন কোন গাছের উপর পতিত হয়ে অনেকক্ষণ জ্বলছে বা
আপনার সামনে দিয়ে খুব নিচে দিয়ে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো । এটা কে কি ঊল্কা বলা যাবে , বা ঊল্কা
তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে ? । বিজ্ঞানীদের
এসব ক্ষেত্রে যুক্তি একটাই প্রমান দেখান , যখন ঘটে ডেকে নিয়ে দেখান, দেখাতে
পারবেননা তো, এটাই আমার কাছে সবথেকে বোরিং একটা যুক্তি মনে হয় , একতরফা যুক্তি মনে
হয় , গৎবাধা উত্তর মনে হয় । কারণ যখন ঘটবে সেটা দেখানোর জন্য মানুষ যখন
ডেকে নিয়ে যাবে তখন তো এটা স্বাভাবিক ভাবে আর সর্বসাধারণের দেখার জন্য বসে থাকবে
না ।ভৌতিক ঘটনা হঠাৎ করে আপনার মানসিক দুর্বলতা ,হ্যালুসিনেশন, নির্জন পরিবেশ বা বিভিন্ন
কারনে হতে পারে । সর্বসাধারণের সামনে ঘটেছে এমন টা কখনও হয়না । যেই দেখেছে বলতে গেলে যখন একা ছিলো সেই মানুষটি ।এই কারনে ভুত প্রেতের ব্যাপারটা কখনো দেখা সম্ভব হয়না , প্রমান করবার মত
প্রমান ও পাওয়া যায়না । এই ধরুন ভারতীয় যুক্তিবাদী বিজ্ঞান সঙ্ঘের
প্রতিষ্ঠাতা প্রবির ঘোষ ০৩ সেপ্টেম্বর
২০১২ তে একটি টেলিভিশন চ্যানেল এ হাজির হন নাগেরবাজার এর উড়ালপূলের ভুত দেখার জন্য
। সেখানে কোন ভুত নেই বলার জন্য তিনি লাইভ এ যান, অনেক মানুষ ব্যাপারটা দেখে,
অবশেষে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দেখা যায় ভুত বলে কিছু নেই । প্রমান হয়ে যায় সেখানে ভুত বলে কিছু নেই ।কিন্তু
ব্যাপারটা কি হল, আমার মনে হয় এরকম পরীক্ষাটা যুক্তিযুক্ত নয় , আপনি লাইভ দেখলে কিছু
পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না । আছে কি নেই বুঝতে হলে একেবারে একা বিনা
ঘোষনাতে গিয়ে দেখলে হয় ব্যাপারটা ।
আমাদের দেশে এবিসি রেডিও তে জনপ্রিয় আরজে কিবরিয়া ভাইয়ের উপস্থাপনায় ডর
নামে একটা অনুষ্ঠানে ডর লাইভ এ যেতেন, কিন্তু ভৌতিক যায়গা
গুলোতে দলবেধে
গিয়ে , আধুনিক ক্যামেরা দিয়ে হইহুল্লোড় করে কি ভুত দেখা
(75)
সম্ভব !। ভূত দেখার
একটা আইডিয়া হতে পারে তা হল কারো গায়ে যদি
একটা সিসি কামেরা বসিয়ে তাকে হন্টেড প্লেস এ পাঠানো যায় আর তার আর কয়েক মাইল এর
ভিতর কেউ না থাকে তাহলে হয়তো কিছুটা প্রমান পাওয়া যেতে পারে, ,আছে কি এরকম সাহসী
কেউ ? এরকম
সাহস কি আছে কারো, মনে হয় নেই ।আবার বিভিন্ন পীর ফকির
ঋষি দরবেশ দের অলৌকিকত্ব কে অনেকে প্রতারনা বা হাত সাফাই বলে থাকেন ।আমার কথা হলো ঢালাও ভাবে প্রতারনা বা হাত সাফাই বলাটা যুক্তির কথা নয়, কারনটা
হল আপনি যেটা জানেননা এবং অসম্ভব বলে মনে করেন সেটা তার কাছে এক অজানা বিজ্ঞানের
জন্য সম্ভব বলে মনে হচ্ছে । অলৌকিক বলে কিছু নেই ,আর আপনি যেটা কেই অলৌকিক
বলে মনে করেন সেটা হলো আমাদের অজানা বিজ্ঞান, সব অলৌকিক ঘটনার পিছনে থাকে একটা বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যা ।অলৌকিক ঘটনা হল অজানা এক বিজ্ঞানের ঘটনা ।যে বিজ্ঞান আমরা জানিনা , যে ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই সেটাই আমাদের চোখে অলৌকিক
হিসেবে ধরা দেয় । মুলত অলৌকিক যত কিছু ঘটুক না কেন তা অবশ্যই একটা অজানা
বিজ্ঞানের খেলা । প্রত্যেক অলৌকিক বা ভৌতিক ঘটনার পিছনে দায়ী হলো আমাদের
অজানা এক অলৌকিক বিজ্ঞানের জগত এর খেলা ।
অবশ্য যদি আপনি কখনো অলৌকিক কিছু দেখতে পায় । এই আগুন ধরবার পিছনেও সেইরকম অজানা কোন বিজ্ঞান কাজ
করছে । পৃথিবীতে আমরা আসা
আর যাওয়ার খেলাতে এক অভিনেতা মাত্র । কিন্তু কখনো অদেখা কিছু দেখেছেন , আসলে হাতে কলমে
ধরিয়ে বা চোখে আঙ্গুল দিয়ে অদ্ভুত কিছু
দেখানো যায়না । আপনার খোলা চোখ কান ই সাহায্য করতে পারে অনেক অদ্ভুত কিছু
দেখতে। হাতে নাতে কিছু
দেখানো যাবেনা বা দেখাতে পারবনা যদিও তবে কিছু ধারনা আপনাদের দিতে পারব পাঠক ইউটিউব আছে বলে কিছুটা অদ্ভুতের ছোয়া আপনাদের
দিতে পারি ।
ইউটিউব এ যান আর লিখুন illusion এই শব্দটি আর এই illusion শব্দটিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখুন বিভিন্ন ভাবে যেমন illusion এর আগে লাগিয়ে দিন mind blowing , তারপর illusion
এর আগে লাগিয়ে দিন optical , এরকম ভাবে illusion
এর আগে মন মত কয়েকটা শব্দ লাগিয়ে নিলে রহস্যময় অনেক
(76)
কিছু আপনি দেখতে পারবেন, youtube এ ভুত বা GHOST লিখে দেখার দরকার নেই, কারন ভুতের
অনেক এডিটেড বা সম্পাদিত নকল ভিডিও পাবেন , আসল কিছু না পাবার সম্ভাবনা ৯০%। তবে illusion
আর top magicians magic লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক অজানা রহস্য
আপনার কাছে পরিষ্কার হবে । মরিচীকার নাম শুনেছেন না, সেটাও কিন্তু এক প্রকার optical
illusion ।আসুন কিছু illusion এর স্থির চিত্র দিই, ছবিগুলো স্থির
কিন্তু আপনি ঘূণায়মান বা নড়ছে ভেবে ভুল করবেন, এর পিছনে আছে আপনার বা আমার সাধারণ
জ্ঞানের বাইরে মাথা খাটিয়ে আকানো
প্যাটার্ণ, আসুন ছবিগুলো দেখে নিই –
- .
(77)
এই ছবিটার নাকের লাল বিন্দুতে ৩০ সেকেন্ড রাতে এক নজরে
পলকহীন তাকিয়ে থাকুন । তারপর সাদা দেয়ালে ওই পলকহীন অবস্থায় তাকান , স্পষ্ট মাইকেল
জ্যাকসন এর ফটো দেখবেন সাদা দেয়ালে
(78)
মরূভূমির
মূসাফির ঠিকই পানি দেখে কিন্তু বাস্তবে কিন্তু তা নেই । এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
হলো মরূভূমির প্রচন্ড রৌদ্রে ও তাপে বায়ুমন্ডলে পানির কৃত্রিম চিত্র সৃষ্টি , এর
ছোট সংস্করণ দেখবেন গ্রীষ্মকালের দুপুরে যখন প্রাণীকুলের জীবন অতিষ্ট তখন নতুন
চকচকে টিনের চালে তাকালে কিছুটা মরিচীকার নমুনা দেখতে পাবেন ।মনে
পড়ে ছোটবেলার কথা ওই যে ধরুন রাতে সাইকেলের সামনে যখন আমরা বসে থাকতাম হতে পারে
সেটা বাবার সাথে রাতে সাইকেল এ চড়ে কোথাও যাওয়া , তখন বলতাম বাবা চাঁদ আমাদের সাথে
সাথে দৌড়াচ্ছে, ওই যে বাড়ির উঠানে যে চাঁদ ছিল সেটা আমাদের সাথে এত দূর চলে এসেছ,
এটাও কিন্তু একপ্রকার দৃষ্টিবিভ্রম । চাঁদ কিন্তু তার
যায়গাতেই বিদ্যমান, কিন্তু তাকে সবখান থেকে দেখা যায় বলেই চলন্ত কিছুর উপর বসে
থাকলে আমাদের মনে হয় সে আমাদের সাথে যাচ্ছে। বাসে চড়লে মনে
হয় জানালার বাইরের গাছগুলো, ঘরবাড়ি বা মানুষগুলো আমাদের সাথে সাথে দৌড়াচ্ছে। এটা
কিন্তু মনে হয় আমাদের বাস গতিশীল আর বাসের জানালার বাইরের জিনিসগুলো স্থির বা কম
গতিশীল বলে ।যদি জানালার বাইরের জিনিসগুলি বাসের সমান গতিশীল
হতো তাহলে আমরা দেখতাম সেগুলো স্থির ।কিন্তু আসলে সেগুলো
গতিশীল, কিন্তু দেখলাম স্থির, তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়ালো ।চোখের
দেখার কি এক অদ্ভুত ভুল ।আমার নিজের একটা মজার খেলা আর
অভিজ্ঞতার কথা বলি, অনেকে হয়তো খেয়াল করে থাকবেন ব্যাপারটা ।তবুও
বলি, আমি যখনই মাথার উপর ছাদবিহীন গাড়ীতে কোথাও যাই, ধরুন সেটা রিকশা বা ভ্যান,
তখনই আকাশের দিকে চেয়ে থাকি চিবুক উচু করে যতটা উপরে তাকানো যায় ।এতে একটা বিভ্রমের সৃষ্টি হয় , বিভ্রমটা হল মনে হবে যেন আপনি রিকশা বা
ভ্যান থেকে আস্তে আস্তে আকাশে উঠে যাচ্ছেন ম্যাজিক এর মত ।গাড়িটা
যত দ্রুত চলবে আপনার বিভ্রমটা তত বেশি বাস্তব মনে হবে ।তবে
নিজের কাছে বিশাল একটা মজাকর অনুভুতি হয় ।illusion বা
দৃষ্টিবিভ্রম সবশেষে আরো একটা বড় উদাহরণ দিই।আমরা একসময় শোয়েব আখতারের বোলিং দেখতাম ।
(79)
আপনি এখনো ইউটিউবে দেখবেন শোয়েব আখতার
যখন বোলিং করেন যে কারোরই সেটা দেখে মনে হবে তিনি ছুড়ে বল করছেন, ক্রিকেটের কেতাবি
ভাষাতে যেটা বলে চাকিং। কিন্তু না তিনি হাত ঘুরিয়েই বল করেন, কিন্তু ওনার
হাতের গঠনগত ত্রুটির কারনে বোলিং করতে
দেখলে মনে হয় চাকিং করছেন ।
শোয়েব আখতারের হাতের গঠনে
আপনি কি ব্যাতিক্রম কিছু দেখছেন ??
(80)
**নির্জনে সাদা কাপড়ে লোক
দেখা বা মৃত মানুষ কে কোথাও দেখা -- আচ্ছা এটা কেন হয় বলতে পারবেন । আপনি কখনো দেখেছেন ?। বলা হয় কবর
স্থানে “ঘুল”
নামক এক প্রকার জ্বীন থাকে তারাই এরকম রুপ ধরে, বা হতে পারে কারিন জ্বীনের মৃত
বাক্তির রুপ ধারন। হতেই পারে, আপনি কি কখন দেখেছেন । গভীর
রাতে কবরস্থানে যাবার মত সাহস কি আপনার আছে , আমার তো নেইই । আপনাদের এত সাহস
না থাকা ভালো । আমরা তো সবকিছু চোখ বুজে নেই বলি, কিন্তু কি জানি কেউ কি
এসব নিয়ে পরীক্ষা করে বলে ব্যাপারটা। মুলত এই সব ঘটনা গুলো নির্দিষ্ট সময় বা ফ্রেম এ বেধে
পর্যবেক্ষন সম্ভব নয় বলেই এগুলো মানুষের পরীক্ষাতে নেই হয়ে গেছে। কিন্তু
প্রমাণিত নেই হবার পরেও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করে। কি আছে বা নেই
ব্যাপারটা অনেকটা রহস্যময়। আসলে সময় বলে কি কিছু আছে , সময় তো আমাদের বানান
একটা সিসটেম বা কাল পরিবর্তনের একক মাত্র, ঘড়ি তো সুর্য্যের আলো আর পৃথিবীর
আবর্তনের হিসেব করে আমরা সময় নামক একটা ব্যাপারের জন্ম দিয়েছি। ধরুন সুর্য্য পৃথিবির একপাশে আলো দেই,একপাশে পৃথিবীর
ঘুর্ননের কারনে অন্ধকার, আরেকপাশে খরা, একই সময়ে একপাশে বাপক বৃষ্টি বা ব্যাপক শীতকাল
এরকম চলছে। আসলে কি জানেন
গুরু বা শক্তিমানের শ্রেষ্ঠত কিসে জানেন, শক্তিমানের শ্রেষ্ঠত্ব কিসে বা প্রকৃতির
রহস্যময়তা কিসে এটা বোঝবার সূবিধার্থে একটা কয়েক লাইনের গল্প বলি। একবার একজন
যাদুকর টেলিভিশন এ একটা যাদু দেখাচ্ছেন, যাদুটা এমন যে তার হাতে একটা ডিম আছে,
দর্শক সবাই দেখল একটা ডিম যাদুকরের হাতে, ভাল করে দেখা হল তার হাতে আর কিছু নেই।
এবার যাদু মন্ত্র বিড়বিড় করার মত কিছু পড়ে হাত ঘোরালেন সবাই দেখলেন ডিমটা হাতে ভেঙে
একটা মুরগীর বাচ্চা বেরিয়ে এল। সবাই ভাবলো এটাই যাদু, কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরেই
দেখা গেল হাতের আরেক ঘুর্নিতে মুরগীর বাচ্চাটা হাতে নিতেই সেটা ডিম হয়ে গেলো। শ্রেষ্ঠত্বের
বা অব্যাখ্যায়িত আরো একটা উদাহরন দিই। ধরুন একটা লোক ০৫ তলা থেকে কোন লাইফ সাপোর্ট ছাড়া পড়লো,
কিন্তু মরলোনা । এ রকম ঘটনা কিন্তু ঘটে বাস্তবেই ।
(81)
কোন এক ক্রিকেট দলের নাম ÔÔকÕÕ ,
এই ÔÔকÕÕ দলের দরকার ০৬ বলে ০৩ রান , হাতে ০৪ উইকেট। তাহলে ÔÔকÕÕ’ দল এর না
জেতার কোন কারণ নেই।কিন্তু দেখা গেলো প্রতিপক্ষ দলের একজন বোলার সবগুলো উইকেট তুলে
নিলো মাত্র ০১ রান দিয়ে । ফলশ্রুতিতে ক দল হেরে গেলো অবিশ্বাস্যভাবে ।আবার ধরুন
দুটো দলের ফুটবল খেলা হচ্ছে । একটা দল ৮০ মিনিট পর্য্যন্ত দুই গোল দিয়ে এগিয়ে আছে
। ফলশ্রুতিতে ২য় দল গোলশূন্য থাকায় তাদের কোনরকমই জেতার সম্ভাবনা নেই । কিন্তু শেষ
১০ মিনিটে গোলশূন্য দলটি ০৩ টি গোল দিয়ে জিতে গেল । অবিশ্বাস্য আর অসম্ভব শোনা
গেলেও ক্রিকেট আর ফুটবলে এরকম ম্যাচ এর নজির বেশ কিছু আছে । এ রকম উদাহরণটা দিলাম
ক্ষমতার উপর ক্ষমতার (ট্রাম্প ওভার ট্রাম্প) কিছুটা বোঝানোর জন্য বা অতিপ্রাকৃত বা
অলৌকিক মানে কি সেটা বোঝানোর জন্য । ধরুন আমরা জানি আমাদের মানবদেহের কোন অঙ্গের
কি কাজ , অপারেশন বা শল্য চিকিৎসা আর ঔষধ সবই আমাদের কাছে আছে, তারপরও কি একটা রহস্য যেন থেকে যায় মনে হয় তাইনা । মানব সন্তান জন্মের
প্রক্রিয়া আমরা জানি , কিন্তু , তারপরেও একটা রহস্য কিন্তু থেকেই যায়, আমাদের
চোখের আড়ালে অদৃশ্য একটা শক্তির দ্বারা ১০ মাস সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়, আমরা সবাই এত
সাবধানে পথ চলেও দূর্ঘটনায় পড়ি, ব্যাপারটা হলো সব খেলোয়াড় বল দেখে খেলে কিন্তু
তারপরেও আউট হতে হয় কোন না কোন বলে ।আমরা এ রকম একটা অদৃশ্য শক্তির হাতে
নিয়ন্ত্রিত যে নিজের জ্ঞানে আর নিজের হাতেই কখন নিজের অপছন্দের কাজ করে বসবো তার
ঠিক নেই। আমরা সবাই ঝেড়ে দৌড়াতে পারি ,
কিন্তু উসাইন বোল্ট সবাই হতে পারিনা।কবিতা আর গল্পের লেখক লক্ষ লক্ষ হলেও নজরুল,
রবি ঠাকুর আর কেউ হলোনা ।মার্শাল আর্ট অনেকে দেখালেও আর কেউ ব্রুস লি হলোনা। ফুটবল
সবাই কম বেশি খেলি, সব দেশেই কঠোর প্রশিক্ষনের একটা জাতীয় দল আছে , কিন্তু সবাই
পেলে,ম্যারাডোনা, মেসি রোনালদো নেইমার হয়না । আমাদের জব্দ ভূমিকম্প প্রতিরোধী রড
আছে, দক্ষ ইন্জিনিয়ার এর প্ল্যান এ বাড়ি আছে , কিন্তু তবুও ভুমিকম্প ও এর
ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে পারিনা ।
(82)
নদী শাসন করবার সব উপায় আছে
কিন্তু বন্যা ঠেকাতে পারিনা, নদীভাঙন ঠিকই সময়মত হয়ে যায় সবাই চায় টাকা সমৃদ্ধ
সুখের জীবন, কিন্তু শতকরা ০৫ জন ও সেই সোনার জীবন ধরতে পারেনা।কেমনে কেমনে সেই
টাকার পিছনে ছোটা মানুষটার জীবন বার্ধ্যকে এসে যায় , ত্রিশ বছর ধরে খেটেও অবস্থা
সেই এক রকমই আছে যখন উপলব্ধি করে তখন আর কিছু করার থাকেনা ।নিজের উপর আত্ববিশ্বাসী
মানুষটি তখন হয়ে যায় ভাগ্যবিশ্বাসী। এই ঘটনাগুলোর পিছনে কারণ হিসেবে আপনি
বিজ্ঞের মত অনেক কিছু বলবেন, যুক্তি
দেখাবেন কিন্তু কিছুতেই আপনি এই অদৃশ্য শক্তির তৎপরতা ঠকিয়ে রাখতে পারবেননা ।শিক্ষক
হলেও সব ছাত্রকে আপনি ১০০ তে ৯০ পাবার মত তৈরি করতে পারবেননা। সব কথার শেষেও একটা
কিছু থাকা, যুগে যুগে কালে কালে এই যে মানুষের হাতে থাকার পরও কিছুই হাতে নেই
উপলব্ধি হওয়া, সব কিছু শেষ হয়ে হয়ে যাবার
পরেও কিছু একটা থাকা আর কারো উপস্থিতি থাকার নামই সর্বশক্তিমান স্রষ্ঠার
অস্তিত্বের প্রমাণ । এটাই বোধ হয় স্রষ্ঠার শ্রেষ্ঠত, সবার শক্তি, দম্ভ, দৃষ্টিসীমা,
ক্ষমতা, কল্পনার যেখানে শেষ এর ও শেষ স্রষ্ঠার
সেখান থেকে শুরু মাত্র, শেষ কোথায় সেটা কল্পনাতেও আসা অসম্ভব ।
ভুতের পোড়োবাড়ি , সাদা কাপড়ে লোক দাড়িয়ে থাকা এসব কিছুর একটা ব্যাখ্যা থাকতে
পারে বা হতে পারে এগুলো বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের খেয়াল মাত্র । তবে
যে যুগই হোক আর মানুষ যত আধুনিক হোক উপযুক্ত পরিবেশে পড়লে ভুতের ভয় বা রহস্যময়
ঘটনা আপনাকে বা আমাকে সাক্ষী বানাতে ভূল
করবেনা । যুক্তি থাকুক আর নাই থাকুক ।হোক সেটা হ্যালুসিনেশন বা ইলিউশন ।
কয়েকটা ভুতের গল্প(বিশ্বাস করতে বলিনি কিন্তু ,শুধু বিজ্ঞানমুলক একঘেয়েমী
কাটানো এবং উদাহরণ ও ব্যাখ্যার প্রয়োজনে )----
১)বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে ফেসবুকে আমার পোস্ট (স্ক্রিনসট সহ ) - ব্যাপারটা বলি কাকতালীয় না কি শুধুমাত্র বাস্তবতা
নাকি ভৌতিক, কি করে বলব ।বিশ্বকাপ ২০১৮ তে এসে জার্মানির বিদায়ে হঠাৎ
একটা ব্যাপার খেয়াল করে স্ট্যাটাস দিলাম ।স্ট্যাট্যাস টার
স্ক্রিনশট সহ দিয়ে দিলাম এখানে ।
(83)
(84)
এখন ব্যাপারটা কে কি বলবেন ? বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক
ব্যাখ্যা আছে বটে, কিন্তু ভৌতিক বা অভিশাপ বলার যুক্তিও এখানে কম নেই ।কারন পুর্বের বিশ্বকাপ এ তারা যে টিম নিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল, পরবর্তী বিশ্বকাপ
এ ও সেই টিম নিয়ে আসছে,বাছাই পর্বেও ভাল
খেলছে, কিন্তু বিশ্বকাপ এ এসে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দের বেহাল দশা হয়ে যায় । আছে এটার কোন ব্যাখ্যা আপনার কাছে ।আর আর্জেন্টিনার
সাপোর্টার হওয়ার কারণে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে ফ্রান্সের কাছে হেরে বন্ধু ও সহকর্মী
মহলে আর্জিতিনার সাপোর্টার হয়ে গেলাম ।
২) আবার দেখুন LM-LIONEL MESSI
LM- LUKA MODRIC
দুজনেরই জার্সি নাম্বার ১০, দুজন
যথাক্রমে ২০১৪ এবং ২০১৮ তে সবার অনুমান ভুল করে, ফেভারিট এর বাইরে থেকে সবার
অনুমান ভুল করে ওনারা ফাইনাল এ উঠে যান । কিন্তু দুজন
কেই রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ।কি কাকতালীয় মিল
তাইনা । আসলে এর অনেক যুক্তিযুক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে তাইনা ।রহস্যময় এবং কাকতালীয় বা ভৌতিক জিনিসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অবশ্যই হয় ।কিন্তু এত ব্যাখ্যা এত, এত বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা থাকার পর ও রহস্য এবং কাকতালীয়
ঘটনা পৃথিবীতে অতীতে ঘটেছে, বর্তমানে ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে ।বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলেও সকল রহস্য আর ভৌতিক ঘটনার একটা বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে ।কিন্তু এত ব্যাখ্যার
পরেও রহস্যময় ঘটনা ঘটে ।পৃথিবীতে সব সত্য প্রকাশ করা যায়না,কিছু চরম সত্য আড়ালেই
থেকে যায়, সব কিছুর প্রমাণ দেওয়া যায়না,সৃষ্টি ও ঘটনার কারিগরেরা আড়ালেই থেকে যায়
,সব সত্য প্রকাশ পেলে আপনার বা আমার অস্তিত্ব অথবা জীবনের রং থাকতোনা ,একেই বলে ভৌতিক বা রহস্যময় ঘটনা ও তার কারিশমা। হতে পারে এটাই মানুষের ভুত দেখার
কারন ।যে ভুত দেখবে সে মস্তিস্ক দোষে হোক,
আর সত্যিই দেখুক সে ভয় পাবে, বিশ্বাস করবে, কিন্তু যারা দেখেনি তারা সন্দেহের চোখে
দেখবে, হয়তো কিছুটা বিশ্বাস করবে কেউ, কেউবা করবেনা ।
৩) একদিন আমি অফিস শেষে বাসাতে ফিরছিলাম । সালটা ২০১৬ এর শেষে দিক ,শীতকাল, আকাশে বড় পুর্ণিমার চাঁদ ।যশোর ভোলা ট্যাঙ্ক রোডের অফিস থেকে ডিউটি শেষ
করে বাসাতে ফিরছি ।
(85)
সেদিন অফিস এ
একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটু বেশি রাত হয়ে গেল ।প্রায় ১১ টার মত বেজে গেল, অফিস ডিউটি থেকে বের হতে হতে, সাইকেল চালিয়ে
যাতায়াত করিনা যেহেতু, ইজিবাইক বা মোটর লাগান রিকসাই ভরসা । তো কোন রিকসাই সেই রাতে কিসমত নওয়াপাড়া শেষে বাহাদুরপুর বিলের নতুন হওয়া
আবাসিক এলাকা হাইওয়ে টাউন এ যেতে রাজি হলোনা ।যায়গাটা যশোর
যুব উন্নয়ন অফিস এর পাশে অবস্থিত হাইওয়ে টাউন নাম হলে হবে কি ? পুরাটাই গ্রাম এর
ফাকা মাঠের মাঝে নির্জন এলাকা ।বাহাদুরপুরের বিল কালের
পরিক্রমায় ও বিবর্তনে পানিশূন্য হয়ে মানব বসতি গড়ে উঠেছে ।তবে এখনও শুকনো মাটিতে ঘাসের সাথে বিলবাওড়ের জলজ উদ্ভিদ হেলেঞ্চা, কলমি, বিন্না
ঘাস (যশোরের আঞ্চলিক ভাষাতে পেতেল বন) জন্মে। প্রায় চতুর্দিকে গ্রাম ঘেরা এ রকম
একটা যায়গাতে ভাড়া বাসাতে থাকি । উপশহর এর পাশে হয়েও সম্পূর্ণ গ্রাম আবহের যায়গাটা খুব ভালো
লাগতো। এই মুল জমজমাট শহর এলাকা দড়াটানা ছেড়ে কোন রিক্সাওয়ালা নির্জন ওই এলাকাতে
যেতে রাজি হলোনা, এমনকি দিনের বেলার ৪০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিতে চেয়েও রাজি হলোনা
। অগত্যা দড়াটানা মোড় এ একজন ইজিবাইক চালক পাওয়া গেল ।যার বাড়ি বাহাদুরপুর এর কোন এক জায়গাতে । সদর হাসপাতালে
রোগী দিতে এসেছিলেন ।এখন একা যেতে হবে, আমাদের পেয়ে ওনার বেশ ভাল
হলো । তো ইজিবাইক এ আমি, এক বুড়ো চাচা, আর মধ্য বয়সী একজন লোক । মাত্র মোবাইল এর ঘড়ি দেখে লাফিয়ে উঠলাম, ১২ টা প্রায় বাজতে চলেছে ।শীতের রাত ১২ টা প্রায় মানে বেশ রাত ।গায়ের সোয়েটার
টা খুলে ফেললাম, বুড়ো চাচা গ্রামের সরল হাসিতে বললেন, কি হলো ,শীতের রাতে জ্যাকট
খুলছো কেন, আমি বললাম খেয়েই মাত্র দৌড় দিয়ে দড়াটানা পৌছেছি । সে জন্য এ অবস্থা । বেশ হাপাচ্ছি তখনো ,যদিও দড়াটানা এসেছি ২০
মিনিট হয়ে গেছে । আগের বুড়োরা যেমন বলেন, ঠিক তেমনি করে উনি বলা
শুরু করলেন ,তোমাদের বয়সে আমাদের এরকম শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতো । শীতের রাতে রস চুরি করেছি, মাঘের শীতের কনকনে সকালে কোমর পানিতে নেমে মাছ ধরেছি ।
(86)
এখন আর গায়ে শক্তি পাইনা । বুঝলে বাপু বয়সই
সবকিছু । এই দেখ আমার সামনের উপরের পাটির দাঁত দুটো নেই । কেন নেই জানো, যুবক বয়সে মানুষ অনেক কিছু করে, ভবিষ্যতে ভাল না মন্দ না ভেবেই
করে । আমাকে মুরব্বিরা মানা করত বাঁশি বাজাস না, আমি ছিলাম বাশির প্রচন্ড ভক্ত ।সময় পেলেই বাঁশি বাজাতাম ।ভর রৌদ্রতপ্ত দুপুরে
গরু চরাতে গিয়ে ও বাঁশি বাজাতাম । আর রাতে একা বসে ফাঁকা
মাঠে বাঁশি বাজানোর অভ্যাস তো ছিলই ।আহ কি সুন্দর
পূর্ণিমার ভরা চাঁদ এর জ্যোৎস্না রাত।(দিগন্ত বিস্তৃত ফাঁকা মাঠের ঝিরি বাতাস আর
সাথে সুর তরঙ্গের বাশরীর সুর। ব্যাপারটা আমার কল্পনায় মাত্রাতিরিক্ত রোমান্টিক হয়ে
ধরা দিলো) আমার বাবা আবার আমার এই অভ্যাসটার ঘোর বিরোধী ছিলেন । মোটেই দেখতে পারতেননা । কানের উপর চটকানা
বসিয়ে দিতেন । তো বাবার থেকে সাবধান থাকতাম । একদিন হল কি বিকালের দিকে বাঁশি বাজাতে বাজাতে এমন মগ্ন হয়ে গেছি যে মাগরিবের
আযান এ সম্বিৎ ফিরে পেলাম । গরু নিয়ে ফিরতে হবে । কিন্তু দুটো গরু দেখলাম না । বাকি গরু গুলো পেলাম । এখন হলো কি আমি ভেবেছিলাম ওই দুটো গরু বাড়িতে ফিরে গেছে । বাড়িতে যেইনা ঢুকেছি তখনি দেখি বাবা বেশ ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে হারিকেনের কাঁচ মুচছেন আর বলছেন,
বলি নবাবের ব্যাটা আর দুটো গরু কি আমি নিয়ে আসব । সারাদিন শুধু ওই বাঁশির ঘোড়ার ডিম নিয়ে পড়ে থাক । গরু নিয়ে না এলে এ বাড়ির ভাত তোর জন্য চিরকালের জন্য বন্ধ ।বাড়ি থেকে বের হq, এই বলে বাবা রাগে আমার দিকে কাগ (আঞ্চলিক ভাসাতে লম্ফতে(সলতে দিয়ে
কুপি বাতি)কেরসিন ঢালার জন্য এক ধরনের চোঙ ব্যবহার করা হত ) আমার দিকে ছুড়ে দিলেন। আমি আব্বার মেজাজ খারাপ দেখে বাড়ির বাইরে চলে গেলাম ।ভাবলাম এ আর বিশেষ কি, তাড়াতাড়ি গরু খুজে নিয়ে বাড়ি ফিরব, যাবে আর কোথায় । গ্রামের কারো বাড়ি বা ঘরের পিছনে হয়ত কলা গাছ খাচ্ছে । এই ভেবে বেরিয়ে পড়লাম । কোথায় কি, সারা গ্রাম
খুজে কোথাও গরু দুটোর দেখা পেলাম না । বেমালুম গায়েব
হয়ে গেছে । আমার গ্রাম আড়পাড়া এর শেষ সীমানা বালিয়াডাঙ্গা
।তারপর মাঠ টা পেরোলে পরে পাঁচবাড়িয়া গ্রাম ।
(87)
পাঁচবাড়ীয়া গ্রাম
এ চলে গেলো নাকি !। মনে সন্দেহটা
ঢুকতেই হাটা শুরু করলাম পাঁচবাড়িয়ার উদ্দ্যেশে ।সেখানে গরু কি থাকবে, এই রাত কি গরু ওখানে যাবে । বেশ ০২ কিলোমিটার এর মত ফাঁকা মাঠ । শীতের রাত, আকাশে
ভরা জ্যোৎস্না ।মাঠের ভিতর দিয়ে হেটে যাচ্ছি ।কোথাও গরু দেখলাম না ।মাঠ পেরিয়ে পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের সীমানাতে ঢুকে
পড়েছি । মনুষ্য বসতি কয়েকঘর মাত্র এ পাশে, আমি যে পাশে মাঠের ভিতর দিয়ে উঠেছি, বেশ
ভাল মত ঝোপঝাড় জঙ্গল আছে, এমন সময় আমার খেয়াল হলো খাওয়া হয়নি, পানির পিপাসা তা অবশ্য
শীতে লাগেনি ।খিদে ও তেমন লাগেনি, তবে খেতে পারলে ভাল হত । এমন সাত পাচ ভাবতে ভাবতে দেখি আমি এমন একটা যায়গাতে দাড়িয়ে যে যায়গাটা নদীর
পাড়ে ।ঘটনা অন্তত ৪০ বছর আগের ।বেশ কয়েকশ গজ দূরে
বৈদ্যনাথের মন্দির আছে ।এই মন্দিরে বাবা বৈদ্যনাথের একটা বিগ্রহ পাথর
সংরক্ষিত আছে, যেটা নাকি পাশের এই বুড়িভৈরব নদীতে ভেসে এসেছিল। উপরে জ্যোৎস্না,
কুয়াশার ভাব এ আমার আবার মাথাতে পাগলামি ঢুকে গেল । সেই বাঁশির পাগলামি । বাঁশিটা যে লুঙ্গির সাথে কোমরে আছে এতক্ষন
খেয়াল করিনি ।এতক্ষনে খেয়াল হলো কনকনে শীতে চাদরটা গায়ে ভালভাবে পেচিয়ে নিয়ে
নদীর পাশে পরিস্কার যায়গা দেখে শুরু করলাম বাঁশির সুর তোলা ।বাঁশির সুমধুর সুর এ আস্তে আস্তে আমি নিজেই মোহিত হয়ে যাচ্ছি । আজ কেন জানি বাঁশির সুরটা একটু বেশি সুরেলা মনে হলো । সুরটা আনকোরা একেবারে নতুন । আমি বাঁশি বাজাচ্ছি তো
বাজাচ্ছি । বাঁশির সুর এ আমি একেবারে নিজেকে বিলীন করে
দিয়েছি । হঠাৎ আমার মনে হলো বাঁশি বাজাতে বাজাতে আমার বাশির সুর আরো মধুর হয়ে যাচ্ছে ।বাঁশির সুর এত সুন্দর হতে পারে তা এতদিন বাশি বাজিয়েছি কখনো খেয়াল করিনি ।কেমন যেন বাশির সুরের সাথে ঝুম ঝুম করে হাল্কা নুপুরের একটা আওয়াজ হচ্ছে ।আওয়াজ টা এমন যে কাঁচ এর সাথে কাঁচ এর হাল্কা ঘর্ষনে টুংটাং টুংটাং যে আওয়াজ
হয় তেমন । আর এদিকে আমার বাঁশির সুর এখন এমন একটা স্তরে পৌছে গেছে বলে মনে হচ্ছে যে নদীর
পানিতে প্রতিধ্বনি তৈরি করে অপার্থিব সুরের এক মুর্ছনা গড়ে তুলেছে । আমার এতক্ষন কিছু হয়নি ।
(88)
সব নিজের মনপ্রান দিয়ে বাজানোর ফল ভেবে
উপভোগ করছিলাম সব । কিন্তু হঠাৎ একটা জিনিস আমাকে ভয় ঢুকিয়ে দিল । আচ্ছা এই নুপুরের শব্দ আসছে কোত্থেকে । তার থেকে বড়
কথা হলো কারা যেন আমার চারপাশ দিয়ে ঘুরছে আর হাসছে, তবে হাসিগুলো বেশ নিম্ন স্বরে ।ওই পৌষের শীতেও সামান্য ঘর্মাক্ত হয়ে উঠলাম । কিন্তু বিচলিত
হলাম না মোটেও, একটা কথা শুনেছিলাম যে কেন একা একা ভরদুপুরে আর রাতে মাঠে বাসি
বাজাতে নেই, সেই কথার কারনে বাঁশি বাজানো থামালাম না । কারন হলো এখন যদি বাশি বাজানো থামাই আর আমার পাশে যাদের শব্দ শুনছি তারা যদি
অশরিরী কিছু হয় তবে বাঁশি থামালেই তারা আরো বিরক্ত হয়ে বংশীবাদক কে আক্রমন করতে
পারে । একমাত্র এই বাঁশি তখনি থামবে যখন ফজরের আযান দেবে আর না হয় কোন মানুষের দল
যদি আমার দিকে আসে । আমি যেখানে বসা সেখান থেকে জোরে চিৎকার দিয়ে
তেমন লাভ হবেনা ।কারনটা হলো শীতের রাতে সবাই লেপ মুড়ি দিয়ে যে
যার মত ঘুমাচ্ছে । আর এমন সময় বাঁশি থামালে তেনারা আমার ঘাড় মটকে
দিতে পারে । কি বলব হয়ত ভাগ্যে বেঁচে ফেরা ছিল, এমন সময় কয়েকজন
লোকের কন্ঠস্বর শুনলাম, এই কেরে বাঁশি বাজায় ? সাথে সাথে সব সুনশান, আমার আশেপাশে
নুপুরের ঝুম ঝুম আর নদী থেকে বাঁশির শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে জলতরঙ্গ হয়ে ফিরে আসছেনা
। আমি সাহস করে তাকাতেই দেখি কয়েকজন লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার সামনে
দাড়ানো, সাজ পোশাকে তেমন খারাপ কিছু মনে হলনা, তবে মনে হয় অন্য কোন গ্রাম থেকে কোন
অনুষ্ঠানের দাওয়াত খেয়ে ফিরছিল ।হয়তো খাওয়ার পর চা বিড়ি
আর তাসের আড্ডাতে দেরি হয়ে গেছে ।আমার মত মাঠের ভিতর দিয়ে সোজা চলে এসেছে ।আমাকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে সব খুলে বললাম । সে রাতের মত
ওনাদের বাড়িতে আমাকে থাকতে হলো । ওনারা এও বললেন ও রকম
বাগান যায়গাতে কেউ বসে ! । অত রাতে খাবারের ব্যবস্থাও হলো, আমার বাঁশির
সুর শুনে ওনাদের এই কৌতুহল হয় যে গ্রামে তো কেউ বাঁশি বাজায়না, তাহলে কে ওখানে এত
সুরেলা বাঁশি বাজাচ্ছে, গরমকাল হলেও এক কথা থাকে, এত পাগল কে যে শীতের এই রাতে বাঁশি
বাজাবে ।এই কারনে বোধ হয় আমি বেঁচে যাই সেরাতে ।
(89)
রাতে ওনাদের বাড়িতে খেয়ে সকালে, ওনাদের এক
জনের সাথে গরু খুজতে গিয়ে বেশিদুর দৌড়াতে হলনা । কয়েক বাড়ি পরেই পাওয়া গেল নচ্ছার গরু দুইটাকে ।
৪) বিল জলেশ্বর
আমার নানাবাড়ি বাঘারপাড়া উপজেলাতে , বিল জলেশ্বর অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত বিল । সময়টা ১৯৯২ হবে সম্ভবত , আনুমানিক তিন বছর বয়সে একটি ছেলে হারিয়ে যায় । নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে ওই বয়সে বাড়ি
থেকে তিন কিলোমিটার দুরের বিলে বছর তিনেকের বাচ্চার পক্ষে একা যাওয়া সম্ভব নয় ।ঘটনা দুপুরের একটু পরপরই । বেশ কয়েকঘন্টা খুজে
কোথাও ছেলেটিকে পাওয়া গেলোনা । এমন সময় সন্ধ্যা হয়ে
গেছে । গ্রাম এ বিল থেকে ধান কেটে ফেরার সময় একজন ছেলেটিকে পান যিনি সম্পর্কে ছেলেটির গ্রাম সম্পর্কে আত্বীয়
হয় ।যিনি সন্ধ্যার সময় গ্রামে পৌছাতে না পৌছাতেই
গ্রামে খবর রটে গেল আসাদ একটা বাচ্চা ছেলেকে পেয়েছে বিল থেকে ধান কেটে ফিরে আসার
সময় । এমন কথা শুনে সবাই হৈ হৈ করে ওনার বাড়িতে চলে গেল । বাচ্চা টা কে দেখে সবাই হতচকিত হয়ে গেল । এ তো সেই
বাচ্চাটা । কিন্তু এতটুকু বাচ্চা তিন কিলোমিটার দুরের বিল
এ গেল কি করে । কেউ কি নিয়ে গেছিল , নাকি নিজে চলে গিয়েছিল ,
ওই বয়সে নিজে যাবার ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য , নিজে যাওয়া তো সম্ভব
নয় ।ফলে গ্রামে তৎকালীন প্রচলনে যা হলো জ্বীনে নিয়ে যাবার গল্প হয়ে গেলো ব্যাপারটা
। না সত্যিই অতিপ্রাকৃত কিছু , যেহেতু বিজ্ঞান এই সম্ভাবনা
নাকচ করে দেয় সেহেতু , ব্যাখ্যা আসতে পারে
কেউ কি শত্রুতা বশত ক্ষতি করতে চেয়েছিল বা তৎকালীন ছেলেধরা ব্যাপার নয় তো ? এই গল্পটা কিন্তু আমাকে নিয়ে আমার নানা বাড়ির গ্রামে এক সময় প্রচলিত ছিল ,
বয়স্ক মানুষেরা আমাকে দেখলে গল্পে গল্পে এই ঘটনাটা বলতো , গল্পটা বিশ্বাস হলো আপনাদের ? বিশ্বাস না করাটা
স্বাভাবিক ।ভুতের গল্পের বই নয় এটি বলে গল্প আর বাড়ালাম না , আসলে বিশ্বাস করা না করা যার
যার ব্যাপার । ভুত কাউকে জোর করে দেখা যায়না । ভুত বা তার ভয় বা অতিপ্রাকৃত কিছুর অনুভুতি বা দেখার জন্য একটা পরিবেশ লাগে ।
(90)
আমাদের বর্তমান ঘনবসতি পুর্ণ, আলো ঝলমল যায়গাতে এটা দেখা বা অনুভব করা যাবেনা
একদমই । আসলে মানুষের সুন্দর চেহারা বা পোশাকের আড়ালে যে ভয়ংকর ক্ষতিকর বা কুৎসিৎ
মানসিকতা থাকে সেটাকে ভূতের থেকে কম কিছু বলা যাবেনা । পৃথিবীর সব থেকে হিংস্র আর
ভয়ংকর প্রাণী বাঘ –সিংহ-সাপ এগুলো । কিন্তু এরা আর
কটা মানুষ বা প্রাণী হত্যা করে, তার থেকে মানুষ কয়েকশো গুন বেশি হিংস্র। আর ভুত দেখার পরিবেশে থাকতে হয় একা । আসলে কেউ যদি ভুত দেখতে চান, বা ভুত কি, আছে কি নেই জানতে চান তাহলে বেরিয়ে
পরুন সম্পুর্ণ একা এবং শুধুমাত্র এমন এক পরিবেশে যেখানে মাইল এর পর মাইল ধুধু মাঠ
আছে, কোন মানব বসতি নেই, নেই কোন বিদ্যুৎ বাতি, একা একা হাটুন সেই মাঠ দিয়ে, সেই
রাস্তা দিয়ে, যদি সত্যিই ভুত অনভুব বা দেখার ইচ্ছা থাকে তাহলে এরকম পরিবেশে একা
বের হলে আশা করি আপনার উত্তর আপনি নিশ্চিত পেয়ে যাবেন । তবে এরকম চেষ্টা করে কেউ কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমি দায়ি নই । সম্পুর্ণ নিজ দায়িত্বে নিজ ঝুকিতে কাজ করুন । পৃথিবিতে যা দেখা যায়না তা নেই বলে দেওয়াটা বোকামি । আপনার গায়ে যদি আঘাত বা কোন কারনে ব্যাথা হয় তাহলে আপনি কি ব্যাথা দেখাতে
পারবেন, মাথা ব্যাথা হলে সেটা কি দেখাতে পারবেন, পারবেননা, শুধু বলতে পারবেন ব্যাথা
হয়েছে কিনা । কিন্তু আমি যদি বলি ব্যাথা বলে কিছু নেই,
সেটাও সঠিক হবে এই যুক্তিতে যে আপনি যে মিথ্যা বলছেননা, ব্যাথা নিয়ে তার প্রমান কি
? আপনি তো কোন সুবিধা আদায়ের জন্য ও মিথ্যা ব্যাথার নাটক করতেই পারেন ।
৫) আমি চাকুরির
বদলিজনিত কারনে উন্নত বাসা না পাওয়াতে কিছুদিন
পুরাতন একটা বাসাতে থাকতাম , বাসাটা অবশ্য
বেশ পুরাতন , তা অন্তত পক্ষে ৬০ বছরের কম হবেনা । তো বাসার আশে পাশে অনেক গাছ আছে ।রাতে মনে হতো
আমি একটা জঙ্গলের ভিতর কোন পোড়োবাড়িতে আছি। একদিন আমি বারান্দাতে দাড়িয়ে আছি। এমন সময় একটা গাছ এর পাতা নড়তে দেখলাম ।মনে করলাম বাতাস
বইছে হয়তো । কিন্তু অদ্ভুত লাগলো এটা যে আশেপাশের চালতা,
লম্বু, সজনা কোন গাছের পাতা নড়ছেনা ।কিন্তু ওই আতা
গাছটির পাতা নড়ছে ।
(91)
নড়ছে মানে বেশ আলোড়িত হচ্ছে ।আলোড়ন টা এমন যে বাতাস এ পাতা নড়া নয় ।গাছ এর এ ডাল
থেকে ওই ডালে কেউ গেলে যেমন হয় তেমন নড়ছে ।
৬)একদিন আমি বাসাতে একা । আমার স্ত্রী গেছে বাবার বাড়িতে । এমন দিনে প্রচন্ড কর্ম ব্যস্ত দিন কাটিয়ে আমি
রাত ০১ টার দিকে ঘুমাতে গেলাম ঘরের
বৈদ্যুতিক আলো বন্ধ করে দিয়েছি । বিছানায় বালিশে যেই না একটু চিৎ কাত
হয়েছি অমনি মনে হলো কেউ যেন আমার গলা টিপে ধরল । মনে করলাম হয়ত সারাদিন অত্যন্ত কর্মব্যস্ততা
গেছে বলে এ ভ্রম, ব্যাপারটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আবার ঘুমালাম, ০৫ মিনিট হয়নি, এমন
সময় মনে হলে কালো করে কেউ আমার পাশে শুয়ে আছে, আমার গলার উপর হাত দিয়ে । এবার আমি সম্পুর্ণ সজাগ হয়ে গেলাম, কিন্তু
অনুভব করলাম আমার সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে,গলা বন্ধ হয়ে গেছে , চিৎকার করতে পারছিনা,
কিছু সময় পরে দেখলাম পাশে আর কেউ নেই, ধড়মড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে সাহস করে ঘরের লাইট অন করে দিলাম, দেখলাম ঘরে অবশ্য কেউ নেই । তাড়াতাড়ি মোবাইল দিয়ে ফোন করে রাতে ডিউটি করছে
এমন দুজন লোক ডেকে সব ঘটনা খুলে বলতে ওনারা আমাকে বললেন লাইট অন করে ঘুমান, কোন ভয়
নেই, পরে শুনলাম কেউ একজন
এই রুম এ অনেক আগে মারা গেছে এবং পাশের রুমে আমাদের একজন অতি সিনিয়র কলিগ চাকুরিরত
অবস্থাতেই বুড়ো বয়সে মারা গেছিল। ব্যাপারটা মানসিক বিভ্রমের কারণে হওয়া বোবা ভুতের
ব্যাপার হবে।চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা স্বাভাবিক মানসিক সমস্যা বা ডিজঅর্ডার বলা হয় ।
৭) ঘটনাটা ২০০১ সালের নভেম্বর মাস । একদিন খবর পেলাম আমার বোন ভয় পেয়েছে নানি বাড়িতে
প্রচন্ড জ্বর ১০০ ডিগ্রিতো হবেই । কি করে জ্বর এল
, কেন ভয় পেলি বলতেই ও যা বলল সেটা শুনে আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম।এরকম ব্যাপার হলে তো আমি মুর্ছা যেতাম । ও নানু বাড়িতে
গিয়ে পানির কলের দিকে এগিয়েছিল মাত্র । হঠাৎ নজর এ এলো
যে ওর সামনে দিয়ে একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড উড়ে গেল ব্যাপারটা তা নয়, আরো সিরিয়াস হলো যে আগুনটা
সামনের কদবেল গাছের ডালে বেশ অনেক্ষন জ্বলন্ত থেকে নিভে গেল । গাছে কোথাও পোড়া দাগ পাওয়া যায়নি পরে ।
(92)
০৮) একটা প্রচলিত গল্প আছে যে একজন
লোক বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে গিয়েছিল
শ্মশান এ একটা ডাল পুতে রেখে আসবে, সেটা করতে
গিয়ে নিজের লুঙ্গিতে ডাল পুতেছিল, ভুত
নিয়ে এ রকম একটা নির্মম হাসির গল্প আছে । এক লোক গল্প করছিল তার বেশ কিছ বন্ধুদের সাথে ।গল্পে গল্পে কথা উঠলো যে কে কত সাহসী তার প্রমান
দিতে হবে । তার ভিতর এক জন ছিল যে সে খুব সাহসী লোক ।সে বলল আমি
সাহসী কি প্রমান দিতে হবে বলো । তখন বন্ধুরা বলল তুমি
রাত ০২ টার সময়ে শ্মশানে গিয়ে একটা ডাল পুতে আসবে আমরা তুমি আসার পর সবাই মিলে সেই
ডালটা দেখে আসব যে তুমি পুতে এসেছ কিনা ।তাহলে তোমাকে
সবাই মিলে তোমার ইচ্ছা মত ভরপুর খাওয়াবে । তো বন্ধুটি তো বুঝে গেল ভয়ে তার হাত পা সেধিয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু উপায় নেই, বাজি যেহেতু ধরেই ফেলেছে ।সাহস তো দূরে থাক সে কখনো ভাবেনি যে রাত ০২ টার সময় শ্মশান এর নিঝুম পরিবেশের ভয়াবহতা , বা লোকালয়
থেকে ০২ কিলোমিটার দুরের স্রোতস্বিনী নদীর ধারের শ্মশান এত ভয়ংকর হতে পারে। দূরে চাঁদের আলোয় নদীর দিকে তাকালেও
গায়ের ভিতর ঝাড়া দিয়ে উঠছে ।ব্যাপারটা এত
ভয়ংকর যে কোন দিন বন্ধুদের কাছে বসে গল্প করে ভেবে দেখেনি । আজ একটা মড়া পুড়িয়েছে, সেই একটা মড়া পোড়া গন্ধ আসছে ।যাক এত কিছু
ভেবে লাভ নেই।ডাল টা পুতে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে বুকে যায় । এই দিলাম পুতে এবার ফিরতে গিয়ে দেখে ওরে বাবা কে যেন পিছন থেকে টেনে ধরে
রেখেছে।এবার সে ভাবলো এবার কাকে যে দেখতে হবে
ভয়ে গা ঘেমে সেখানেই বন্ধুটি মরে পরে রইলো ।সারা রাত বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করে সকালে তার বন্ধুরা সবাই চলে গেল বন্ধুর
বাড়ি, সেখানে না খুজে পেয়ে শ্মশানে গিয়ে দেখল বন্ধুটি মরে পড়ে আছে ।কিন্তু একটা অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করলো দেখলো বন্ধুটির লুঙ্গির একটা
কোন সেই ডাল এ আটকানো আছে ।মানে ও ডাল পুততে গিয়ে নিজের লুঙ্গিতে পুতে ফেলেছিল, ডাল পুতে ফেরবার পথে ওর
মনে হয়েছিল ওর লুঙ্গি কেউ টেনে ধরে রেখেছে।এই ভয়েই সে মারা
গিয়েছিল ।আসলে মানুষকে বনের বাঘ এ খায়না, খায়
মনের বাঘ এ , ভূত থাকে আপনার অন্তরে ।
(93)
০৯) গ্রামে একটা গল্প প্রচলিত ছিল যে রাতে মাছ ধরতে গিয়েছে কেউ ,
সেখানে ভুত এ সব কাচা মাছ খেয়ে ফেলছিল,
ভুতটা ছিল তার বন্ধুরুপী ভুত। ঘটনাটা ছিল এমন যে সে
রাতে দুই বন্ধুতে মিলে মাছ ধরতে গিয়েছিল এক বন্ধু মাছ ধরছিল আর এক বন্ধু নৌকার এক
কোনে বসে ছিল হঠাৎ খেয়াল করল যে হাড়িতে যে কটা মাছ রেখেছে সেই মাছ আর নেই, গেল কোথায় , হঠাৎ দেখলো যে সেই বন্ধুটির মুখে রক্ত লেগে আছে আর সে হাঁসছে । তখন সে ভাবলো
যে এ আমার বন্ধু নয় । এ হলো অন্য কিছু, মানুষ কি কাঁচা মাছ খেতে পারে।বলি কেন পারেনা,নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ বাদে মানুষ পারেনা এহেন কোন কাজ আছে কি, যারা সাইকি বা মানসিক রোগের এর ডাক্তার তাদের কাছে
এরকম হাজারটা অদ্ভুত চরিত্রের রোগী আসে ।কত বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ আছে না দেখলে বোঝা
যাবেনা । মানুষের কলিজা খেকো মানুষ আছে , মানুষের মাংস খায় এমন মানুষ আছে , বালি পাথর খায় এমন মানুষ আছে, টিকটিকির লেজ খাই এমন মানুষ আছে , আর মাছ তো মামূলী ব্যাপার
মাত্র ।জাপানীরা তো কাচা মাছ খায়, সাপের জুস খায় কোরিয়ানরা ।কুকুর খায় ভিয়েতনামীরা, কোরিয়ানরা
।তাই বলে আপনি আমি তাদের বলবো ভূত সেটা তো
হয়না । দেখা গেলো ঐ বন্ধুটির কাঁচা মাছের নেশা ছিলো , রাতে নৌকায় বসে খেতে খেতে কত খাচ্ছে সেই দিকে
খেয়াল ছিলোনা, সব মাছের পুরো খাবে এমন কথা নেই, আধা খেয়ে খেয়ে ফেলে দিয়েছে ।বাচ্চাদের কে
অনেক সময় দেখেছেন চক অথবা বালি খেতে, এটা সাধারনত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষাতে pica (পিকা) বা আয়রন অভাব
বা রক্তস্বল্পতা নামে পরিচিত । অনেকে বলে থাকেন কিছুটা যকৃতদুষ্টি হতেও পারে। এখন
আপনি বা আমি নিজের কাছের মানুষদেরই অনেক বিকৃত অভ্যাস এর খবর রাখিনা। পত্রিকাতে এমন পাওয়া গেছে যে একটা লোক খুন বা ধর্ষন করে এসে নিজের পরিবারের
সাথে এসে রাতের খাবার খেয়েছে , আনন্দের সাথে টিভি দেখেছে , কিন্তু তার পরিবার
সামান্যতম আচও করতে পারেনি ব্যাপারটা ।সেখানে কাঁচা
মাছ খাওয়া তো কোন ব্যাপার না ।এখন ওই বন্ধুটি কাঁচা মাছ খাওয়ারত অবস্থাতে ওই রুপে ধরা পড়ে চরম লজ্জিত হয়ে বন্ধুটির সাথে ধস্তাধস্তি করে
বন্ধুটিকে আঘাত করে নৌকা থেকে পালিয়ে এলো ।
(94)
আর বন্ধুটি সকালে জ্ঞান ফিরে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেখল সে স্বাভাবিক কাজ করে বেড়াচ্ছে
। বন্ধুটির গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। বন্ধুটি নাটক
করে বেড়াচ্ছে এই যে সে রাতে সে কোথাও যায়নি । এবং ভুক্তভোগী
বন্ধুকে ব্যাপারটা বুঝাতে সক্ষম ও হলো সে । এভাবে
দোষী মানুষের কত দোষ যে ভুত আর নিরীহ
নির্দোষী মানুষের উপর পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই।আর সুস্থ
বন্ধুটি মাছ খাওয়া বন্ধুটির বিকৃত অভ্যাস বা অসুস্থতা স্বম্বন্ধে কোনদিনই জানতোনা।এই
না জানাটাই তার কাছে ধরা দিয়েছে ভূতরূপে।আচ্ছা যারা সিরিয়াল কিলার তারা তো তাদের
পরিবারের কাছে খুন করে এসেও স্বাভাবিক চলেছে, একসাথে রাতের খাবার খেয়েছে , তারপর
যখন একদিন ধরা পড়ে তখন তাদের পরিবারই বিষ্ময়ে ভাবে এই কাজ আমাদের অমুক করতে পারে
কখনো ? ওর রূপ ধরে ভুতে করেছে এসব । যদিও মানুষ সৃষ্টির সেরা তবুও মানুষের
থেকে হিংস্র আর কোন প্রাণী নেই , মানুষের থেকে ভূত বেশি ভয়ংকর নয় ।
এবার আসি কিছু কুসংস্কারের কথাতে –
**** গ্রামে ও শহরে পূর্বে বহুল প্রচলিত একটা
ব্যাপার ছিল যে রাতে মাছ কেনা বা বাড়িতে নিয়ে আসা যাবেনা। এর পিছনে গল্প ছিল যে
কেউ রাস্তা দিয়ে মাছ নিয়ে এলে তার পিছন পিছন মাছ লোভী ভুতটি ও পিছু নেয়। সাদা
কাপড়ে সামনে এসে বা পুরনো গাছ তলাতে লোকটি আসা মাত্রই নাকি সুরে বলে উঠতো এঁই
আঁমাকে মাঁছটা দিঁবি ? তো আর কি মাছটা ফেলে হয়তো দিলেন ভো দৌড়, অনেক সময় মাছ না
দেওয়াতে ঘাড় মটকে দিল। এটার কি ব্যাখ্যা হতে পারে ? খুবই সহজ এর উত্তর, এখানে ভুত
নয়, আছে মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো দেখা যেত যার হাতে বাজারের যে কোন সবথেকে
বড় মাছ অথবা ইলিশ মাছ আছে এমন লোকেদের সাথে। তো আপনারা জানেন এই মাছ গুলো সবযুগেই
মূল্যবান ছিল এবং সবার এগুলো কিনে খাবার সামর্থ্য সবকালেই নেই , শুনতে খারাপ শোনা
গেলেও এটা মানুষেরই কাজ। তৎকালীন বিদ্যুৎ বিহীন যুগের গ্রাম আর শহর গুলো এই চিত্র
দৃশ্যায়নের উপযুক্ত মঞ্চ বটে ।
**** দুই তালগাছ এ পা দিয়ে অতি লম্বা ভুত দাড়িয়ে
আছে। এটা কোন ব্যাপারই না । রণপা ব্যবহার করে এরকম নাটক মঞ্চস্থ করা কোন ব্যাপারই
না ।
(95)
**** রাতে বা সন্ধ্যার পর ঘর ঝাড়ু দেওয়া বা নখ কাটা
ঘোর অমঙ্গলজনক, কারণটা কি ? কারন হল তখনকার দিনে বিদ্যুৎ ছিলোনা, রাতের টিমটিমে
বাতিগুলোতে ঘরের মেঝে গুলো আবছা অন্ধকার হয়ে থাকতো বলা চলে। তো যদি ঘর ঝাড়ু দেবার সময় মহিলাদের কোন
স্বর্ণালংকার ঝাড়ুর সাথে চলে যায় তাহলে তা টেরও পাওয়া যাবেনা। আর নখ কাটতে গিয়ে
অন্ধকারে হাত বা পায়ের আঙুলে উল্টো পাল্টা ভাবে কেটে যেতে পারে সেজন্য এ সব প্রচলন
। আরো কত কুসংস্কার আছে
, যেমন কাকের ডাক , পেঁচার ডাক অশুভ ।জমজ কলা খেলে জমজ সন্তান হয় , এ রকম ব্যাপার
। কুসংস্কার কিন্তু সমাজের অগ্রগতির জন্য ভয়াবহ বাধা হয়ে
যেতে পারে ।এই কুসংস্কারই কিন্তু সতীদাহ প্রথা , জাত পাত বর্ণভেদ , নিরক্ষরতা
,সাস্থ্য অসচেতনতার জন্ম দিয়েছিল । হাল আমলে আফ্রিকার দেশগুলোতে আলবিনো(Albinism)
মানুষদের শরীর তাদের কাছে আপনা মাংসে হরিণা বৈরির মত হয়ে গেছে শুধু কুসংস্কার ও
কালোজাদুর কারনে ।এছাড়া মানসিক রোগ আর শূচিবাই তো আছে ।
তাহলে এত ঘটনা যখন আছে , ব্যাখ্যাও যখন
আছে তাহলে ভুত কেন দেখা যায়না বা কেন মানুষ এখনো ভুত দেখেনি, বা ভূত না মানুষের
কীর্তি এটা উদঘাটন কেন হয়নি ? ।এর কারন হতে পারে ভুত
না মানুষ এটা যাচাই করতে গিয়ে যদি সত্যি ভূতের সাথে দেখা হয়ে যায় ? অথবা ভুত বা
অতিপ্রাকৃত কিছু দেখার বা সনাক্তকরণের মত কোন যন্ত্র মানুষের এখনো আবিষ্কার হয়নি ।আচ্ছা একটা সময় মানুষ মানুষের ছবি তুলে দেখাতে পারতোনা কোথাও গেলে আনুমানিক আঁকা
বা তার সম্বন্ধে বর্ণনা দেওয়া যেত মাত্র কিন্তু তাই বলে কি সেই মানুষ অথবা কোন
বর্ণিত জিনিস ছিলনা ।ঠিক তা নয়, সেই মানুষ তা তখন ছিল, এখন যেমন ক্যামেরা আবিষ্কার হয়েছে বলে
আমরা একজন মানুষ সহজেই তার স্মৃতিকে জীবন্ত
ধারন করতে পারছে । এই ব্যাপারটাই তো বড় একটা ভৌতিক ব্যাপার, বড়
একটা বিজ্ঞানময় ব্যাপার, বড় একটা কালোজাদু
।যে আশ্চর্য ব্যাপারটা সবার জানা এবং সবাই ব্যবহার করছে সেটাকে বলি বিজ্ঞান,
যেটা সবাই জানেনা, সবাই ধরতে পারেনা সেটাই হলো ভৌতিক বা সেই বিদ্যা হলো কালোজাদু ।
(96)
হ্যা এটা রহস্য ও বিজ্ঞানের সর্বশেষ
স্বীকারোক্তি । বেশিরভাগ ভুতের গল্পগুলো এ রকম হয় গভীর রাতে একা পথে চলছেন, মনে
হচ্ছে কেউ যেন পিছনে আসছে , কারো যেন পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু পেছনে তাকালে
কেউ নেই, হঠাৎ রাতে টিনের চালে কেউ যেন হেটে বেড়াচ্ছে, টিনের চালে ইট পড়ার শব্দ, সাদা শাড়ি পরে কেউ যেন দাড়িয়ে আছে,হঠাৎ করে রাতে দেখলেন কোন আগুন
উড়ে চলেছে , পোড়োবড়িতে কাদের যেন হেটে চলে বেড়াতে দেখা যায়।
বিলে
বা নদীতে গভীর রাতে মাছ ধরছেন দেখা গেল আপনার বন্ধু রূপধারী যে আপনার সাথে ছিলো সে
হয়তো আপনার এতক্ষণ ধরে রাখা মাছগুলো সব
কাচাই খেয়ে ফেলেছে যেটা একটু আগে বললাম,কারো মৃত্যূর পর
তাকে আবার কোথাও দেখা গেল, একা বাড়িতে ভুতের ভয় পেয়েছে কেউ । এ রকম কত কি শুনি আমরা । এ গুলো সব কিছুর একটা ব্যাখ্যা আছে,
সত্যতা কতটুকু আছে জানিনা ।আগেই বলেছি মানুষের শ্রাব্যতার সীমা ২০ হার্জ থেকে শুরু
। তার নিচের শব্দ মানুষ শুনতে পায়না ।একে বলে ইনফ্রাসাউন্ড । এই সাউন্ডটা আমরা
শুনতে পাইনা । কিন্তু অনেকের মস্তিষ্ক অবচেতন মনে এই সাউন্ড ধরে ফেলে, এই সাউন্ড
ধরে ফেলার কারণে আপনার হঠাৎ করে ভাল লাগা বা অসস্তির বোধ হতে পারে । ধরুন আমরা যখন
বাসে চড়ি তখন দেখা যায়, অনেকের মাথা ঘোরায় ও বমিভাব হয় । এটাকে বলা হয় মোশন সিকনেস
।এর কারণ দুইটা একটা হলো অপটিক্যাল ইলিউশন, যখন মস্তিষ্ক দেখে বাইরে সবকিছু চলমান
এবং গাড়ির ভিতরে দেখে সবকিছু স্থির । আমাদের অনেকের মস্তিষ্কের নার্ভ এই ইলিউশানটা
নিতে পারেনা । মূলত স্নায়ুর এক প্রকার অনভ্যস্ততা থেকে এটা হয় ।আরেকটা কারণ হলো
ইনফ্রাসাউন্ড । ২০ হার্জের নিচের শব্দটা হলো ইনফ্রাসাউন্ড ।এই মাত্রার শব্দ শোনা
যায়না । কিন্তু অবচেতন মন মস্তিষ্ক বা ধ্যানমগ্ন মন এটা ধরতে পারে ।এই শব্দ আমাদের
অন্ত্র ও স্নায়ুকে প্রভাবিত করে আর সাথে গাড়ির ধোয়া ও গন্ধ যোগ হয় , ফলশ্রুতিতে
বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা সমস্যা হয় ।আবার যারা নিয়মিত যানবাহনে চড়ে অভ্যস্ত তাদের
এই ধরনের সমস্যা হয়না বললেই চলে ।তো যেটা বলছিলাম বিজ্ঞানীরা যেখানে মানুষ ভূত
দেখেছেন বা হন্টেড প্লেস এর কথা শোনা
(97)
যায়, সেখানে ক্ষেত্রবিশেষে শক্তিশালী বা মৃদূ
তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব পেয়েছেন ।আসলে ভৌতিক বা আধিভৌতিক অবৈজ্ঞানিক যাই
ঘটুক না কেন সব কিছুর একটা ব্যাখ্যা দাড় করানো যায় ।একটা ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেই
জিনিসটা মিমাংসা হয়ে যায় তা নয় ।নেই বললে নেই হয়ে যায় তা নয় । বর্তমানে দেখা
যাচ্ছে পূর্বের অনেক মতবাদ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে । দেখা গেলো ২০ বছর আগের বিজ্ঞানী
বলছেন ডিম ওজন বাড়ায় এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর । ২০ বছর পর বিজ্ঞানীরা বলছেন যে
ডিম ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং এর কোলেষ্টরল ও ক্ষতিকর নয় । আসলে জ্বীন বা ভুত অথবা
অশরীরি আছে কিনা এর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক সুপ্রাচীন । প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগন ,
আশিরীয় সভ্যতার লোকজন জ্বীন জাতির অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো ।ভারতীয় ও মিশরীয়
সভ্যতায় তো অনেক গল্পকথা বা উপকথায় উল্লেখ পাওয়া যায় অশরিরী ও প্রেতাত্বাদের
।প্রাচীন প্রচলিত অনেক তন্ত্র মন্ত্র ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে গুলো অশরিরী হাজির,
বশীকরণ ও বিতাড়নের জন্য । সকল সভ্যতায় ছড়িয়ে আছে এ রকম হাজার হাজার তন্ত্র মন্ত্র । আজকের এই বিজ্ঞান যুগেও আমরা
এসব বৈজ্ঞানিক ভাবে সম্পূর্ন না করে দিলেও এসবে মনে মনে বিশ্বাস করেন এমন শিক্ষিত লোকেরও অভাব নেই ।তা
যদি না হয় তা হলে টেলিভিশন খুললেই কোন কোন চ্যানেলে সব
সমস্যা নিশ্চয়তা সমাধানে সিদ্ধহস্ত
বিভিন্ন বাবাদের বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায় এটা তো দেখেছেন তাইনা? তো বিশ্বাস যদি
মানুষ নাই করে তবে এদের পসার হয় কি করে ? আবার জ্যোতিষবাণী বা জ্যোতিষবিদ্যা ভুয়া
বলে সবাই বলছি , তারপরও দেখুন সবকয়টি জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকা গুলোতে আজকের
রাশিফল নামে একটা অংশ থাকে । জ্বীন-ভূত-প্রেত-জ্যোতিষ এসবে স্বীকৃত ভাবে বিশ্বাস
করিনা বলা হয় সমাজে বা বলা হয় বিশ্বাস করবার মত যৌক্তিকতা বা বৈজ্ঞানিক ভাবে এর
কোন ভিত্তি নেই।তবে সাধারণত মানুষ তার কোন
দূর্বল মুহূর্তে এগুলো বিশ্বাস করে অধিকাংশে ।ধরুন যার হাতে প্রচুর অর্থ আছে সে
কিন্তু ভাববেনা তার কালকের দিনটা কেমন যাবে , যাত্রা শুভ কিনা, আবার লাগাতার
দারিদ্র কষাঘাতে পড়া মানুষটা হয়তো এ সবে
(98)
ক্রমাগত বিশ্বাস করতো এখন আর বিশ্বাস করেনা,
আবার একজন মানুষ যদি ব্যাপারটা বিশ্বাস করে তবে হয়তো সে এমন কিছু জীবনে পেলো সেটা
সে পাবার যোগ্য ছিলোনা, বা অপত্যাশিত ভাবে পেলো, তখনও তার ভিতর ভাগ্য বিশ্বাস এসে
যেতে পারে । মানুষের বিশ্বাস এর ভিন্নতা তৈরি হয়
পরিস্থিতি, মন ও তার পারিপ্বার্শিক পরিবেশ ভেদে ।ধরুন আপনার কোন একটা জরুরি
কাজ সেরে ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, রাত
তখন একটা, আপনাকে হেটে আসতে হবে ০৫ কিলোমিটার নির্জন রাস্তা দিয়ে, রাস্তার কোথাও
একটা গাড়িঘোড়া নেই, একটা জনমানুষ নেই, আপনার কাছে লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে, অতএব
কোন মানুষের এ্যটাকের ভয়ও আপনি পাচ্ছেননা , আপনার যাত্রা পথে বড় একটা কবরস্তান আছে
, সেখানে আলোও কম, গল্প শুনেছেন ওই কবরস্তানের সামনে মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব
আজানের আগে কিছু সাদা কাপড়ের লোক কে ঘুরতে দেখেছেন, কোন বাচ্চা কবরে বসে কাঁদে,
হঠাৎ করে কালো কাপড় পরা একটা লোক সামনে এসে অদৃশ্য হয়ে যায়, কবরস্তান পার হবার পর
আপনার বাড়ি যেতে একটা তেপান্তরের ফসলের
মাঠ পড়ে, মাঠের দু পাশে ফাকা , মাঠের ভিতর বড় একটা শতবর্ষী বট বা শিমুল গাছ আছে ।
আপনি শুনেছেন মাঝে মাঝে বটতলায় জ্বীনরা রাতে আসর জমায়, বা আগুন উড়ে বেড়াতে দেখা
যায়, বা মাঝে মাঝে মাঠের ওই রাস্তা দিয়ে গলাকাটা একজন লোক ঘুরে বেড়ায়, অনেকদিন আগে
একটা লোককে দূর্বৃত্তরা গলা কেটে খুন করে রেখে যায় এই মাঠে, হতে পারে সেই লোকের
আত্ত্বা, ব্যাস হয়ে গেলো আপনার কর্ম সাবাড় । আপনি ছিলেন সায়েন্স এর ছাত্র, আপনি
পড়েছেন ভুত বলে কিছু হয়না, আপনি জানেন রাতের আকাশে যে আগুন উড়ে বেড়ায় সেটা হলো
উল্কাপাত, বিল জলাভুমির আগুন মিথেন গ্যাসের প্রভাবে হয়, আপনি শুনেছেন হঠাৎ করে
নির্মল পরিষ্কার যায়গায় বোটকা দুর্গন্ধ অপদেবতা বা বাজে আত্বার উপস্থিতি, ব্যাস
হয়ে গেলো, আপনি দেখছেননা ওটা ইদুর–ছুচো না টয়লেটের গন্ধ । আপনি তো চিরকাল বুক
ফুলিয়ে বলে এসেছেন ও বিশ্বাস করে এসেছেন ভূত বলে কিছু হয়না, এ সব অলস মস্তিষ্কের
প্রসূত গল্প । কিন্তু কাহিনী যে পরিবেশ ভেদে ভিন্ন হয়ে যায় সেটা আপনি এই নির্জনতায়
খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করছেন ।
(99)
বৈদ্যুতিক বাতির নিচে বসে, নেই
বলে যেটা তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়া যায়, সেটা
কিন্তু এখন কোনমতে উড়িয়ে দিতে পারছেননা ।হঠাৎ করে মনে হলো কেউ হেসে উঠলো, কেউ মনে
হচ্ছে হাত ঘষছে, কেউ মনে হলো হাততালি দিলো, কেউ যেনো পিছনে হেটে আসছে, আবার পিছনে
তাকালে কেউ নেই । আপনার হার্টটা খুব লাফাচ্ছে, পা টা গরম হয়ে যাচ্ছে, আমাদের সমাজে
এ রকম মানুষ পুরুষ হোক বা নারী হোক শতকরা ৮০ জন এ রকম ভীতু । কারণটা এবার আমার
নিজস্ব মতামতে বলি, ধরুন আপনি অশরিরী নেই বলে যে গল্প দেন সেটা আপনি আপনার ঘরে বা
চায়ের দোকানে বন্ধু ও মানব সমাবেশে বলেন ।
যে বিজ্ঞানী বলেন ও সব গাজাখুরি, বিজ্ঞানের ভাষাতে হ্যালুসিনেশন বা অলীক ভাবনা,
ইলিউশন বা দৃষ্টিবিভ্রম তারা কিন্তু ল্যাবের মডার্ণ টেকনোলজি সমৃদ্ধ ঘরে বসে বলেন
। কিন্তু কজন আছে যে কোন হন্টেড প্লেসে বাজি ধরে একা রাত্রিযাপন করতে পারবেন ? যার
০৫ কি.মি. এর ভিতর কোন মানুষ নেই, দেখবেন আসর ফাঁকা হয়ে যাবে,সিসি ক্যামেরা সেট
করে দিলেও যাবেনা । দেখুন জনসমাগম স্থলে গরম চা খেতে খেতে
পাশে দশজন বন্ধু নিয়ে আর পকেটে পয়সা থাকলে অনেক কথা বলা যায় ।কি আছে কি নেই এটা
বুঝতে হলে আপনাকে সেই পরীক্ষা ও পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে ।পরীক্ষা কতটা ভয়ংকর, ছাত্রজীবনে
ক্লাস পরীক্ষায় ভালো মার্কস পাওয়া কতটা কষ্টের সেটা বুঝতে হলে সাজেশনের বাইরে আসা
প্রশ্ন ও হলে শিক্ষকদের কড়া গার্ড ছাড়া বোঝা যাবেনা ।ধরুন
সারা বছর আড্ডাবাজি ও ডেটিং এ ব্যস্ত থাকলাম, কোচিং এ গেলাম, বইয়ে প্রশ্ন আছে ২০০,
কোচিং বা স্কুল শিক্ষক সাজেশন দিলেন ৩০ টা প্রশ্ন, বা ফাস করা প্রশ্ন পেলাম যার ভিতর থেকে ১০
টা প্রশ্নই আসবে, আপনিও পড়লেন সেটা, আর পরীক্ষা দিলেন,
ভালো মার্কসও পেলেন, আর বলে বেড়াতে লাগলেন পরীক্ষা কঠিন কিছু হলো,যারা পরীক্ষাতে
ভলো রেজাল্টের জন্য রাতদিন এক করে পড়ে তারা কি বোকা তাইনা ?আসলে এই দুইরকম পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট ভালো হলেও সমস্যা নেই, পার্থক্য থেকেই যাবে, ঘাটতি থাকলে জীবনের
যে কোন এক স্টেজে এসে আপনাকে কিঞ্চিৎ হলেও ভুগতে হবে।এখনকার জেনারেশনের আপনি আমি
এখনকার যুগে সব কিছুই না বুঝে
(100)
ইগনোর করি, বাস্তবতা কি জিনিস, কত নির্মম,
বাস্তবতার কোপে না পড়েই আমরা যা না তাই বলি, আমাদের ভিতর কেমন একটা হামবড়া ভাব
প্রবল, ঘরে বসে টিভি সেটের সামনে বসে যখন আপনার প্রিয় দলের ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প
কখনো ১৫৫ কিলো গতির বোলারের করা বলে উড়ে যায় ।তখন আপনি বিজ্ঞের মত গাল পাড়তে থাকেন,
অমুক প্লেয়ার কে দিয়ে হবেনা, কানা বলটা একটু দেখে খেলবিনা
!বলটাতো তোর ব্যাট সোজা যাচ্ছিলো, আসুন একটা হিসাব করি, আপনি বা আমি কি কোনদিন ১৫০-১৬০
গতির বল কাকে বলে জানি ? ১২৮ কি.মি গতি তো ক্রিকেট পেস বোলিংয়ে কোন গতিই না, তো সেই গতির বল যখন
বোলারের হাত থেকে উড়ে এসে পিচ টাচ করে তখন ব্যাটসম্যানকে বলটাকে কি করে খেলতে হয়
জানেন ? বলটা
খেলার জন্য জন্য মাত্র 0.27 sec/(০.২৭ সেকেন্ড)সময় পাই ব্যাটসম্যান,মানে এর
মাঝে ব্যাট চালাতে না পারলে বলটা অনর্থক রানশূন্য হিসেবে উইকেট কিপার এর হাতে চলে
যাবে ।0.27 sec/(০.২৭ সেকেন্ড)সময় মানে ০১ সেকেন্ড এর অর্ধেকের ও কম সময়, তো ভাইয়েরা এই আধা সেকেন্ড এর কম সময়ে বলটা শুধু
দেখতে পেলে হবেনা, আধা সেকেন্ডের কম সময়ের ভিতর বলটা কোথায় পড়লো দেখতে হবে, আবার
বলটা যদি স্ট্রেট না এসে ইনসুইং, আউটসুইং, স্লোয়ার, কাটার, ইয়র্কার আসে কিনা সেটাও বুঝতে হবে, এবার বোলারের ডেলিভারির ধরন অনুযায়ী
শট খেলতে হবে, পুল, ফ্লিক, না স্কুপ কি শট খেলা যায় সেটাও ওই আধা সেকেন্ডের ভিতরের
সিদ্ধান্তে খেলতে হবে, আবার ফিল্ডারদের অবস্থান, কত বলে দলের কত রান দরকার সে
টেনশনও থাকে ব্যাটসম্যানের মাথায়, এখন একটা ডু অর ডাই পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করি, ১২ বলে ৩০ রান
লাগবে, উইকেটে একমাত্র সেট ব্যাটসম্যান আপনি, এটা লাস্ট উইকেট, আপনার অপর প্রান্তে
যে ম্যান আছেন তিনি বোলিং ছাড়া ব্যাটিংয়ের
ব টাও বোঝেননা, আপনার দল বিশ্বকাপের ফাইনালে, এই প্রথমবার ফাইনালে উঠেছে,
আপনার চোখে ভেসে উঠলো দেশে আপনাকে টিজ করা কয়েকজন নিন্দুক টিভি সেটের সামনে বসে
আছে, যারা
(101)
আপনার খেলা নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বসে সব
সময়, আরো ভাবছেন দর্শক যে পাগলের পাগল, হেরে গেলে আমার বাড়ি ভাংচুর করবে, আবার
আপনার দলের সিলেকশন কমিটিতে কয়েকজন আছেন যারা আপনাকে বাদ দেবার একটা ছুতো খুজছেন, দল
হারলে আপনি বাদ আর আপনার দলের টপ অর্ডার-মিডল অর্ডাররা ঠিকমতো ব্যাটিং করলে আপনাকে
এত ভাবতে হতোনা । ওদিকে খেলার ভেণ্যু বাইরের
দেশের কোন স্টেডিয়াম, আপনার নাম ভেসে আসছেনা গ্যালারী থেকে, লাখ খানেক
দর্শক সিংহনাদে গর্জন করে উঠছে জনসন ও স্টার্ক এর নামে, গো জনসন, গো স্টার্ক,
প্রথম ওভারটা মিশেল জনসন, পরের টা মিশেল স্টার্ক এর, সর্বোচ্চ গতি, সর্বোচ্চ সুইং এর মোকাবেলা, জীবন আপনাকে এই পরিস্থিতে
যুক্তি ও বিশ্বাসের বাইরে নিয়ে যাবে, যুক্তির বাইরে একটা জগৎ আছে সেই অভিজ্ঞতা
আপনি তখন পাবেন, হাজারটা যুক্তিও তখন আপনার জন্য অকার্য্যকর মনে হবে ।গতিটা ১২৮
kph নয় বস, ১৫০-১৬০ kph, ১২৮ এ আধা
সেকেন্ড সময় পেলে ১৬০ এ কয় সেকেন্ড সময় পাওয়া যাবে ? ।আপনি আমি চিরকাল যে মাঠে
বন্ধু বান্ধব দের সাথে যে টেনিস বা টেপ টেনিস বল এ স্কুলের মাঠে খেলে এসেছি সেটাতে
সর্বসাকূল্যে ১২০ kph এর বেশি ওঠেনা, আর ১২০ kph গতি কোন বন্ধুর হাতে থাকলে আমরা
তার বল খেলতে পারিনা, সময় ক্ষেত্রে বলি অত জোরে বল করা যাবেনা বা বলি ওই আস্তে বল
কর, গোয়ারের মত বল করিসনা ।তবু ওই টেনিস বলে ১২০ kph গতি ওঠে এমন লোক পাওয়া দুস্কর,
অধিকাংশ বন্ধুদের হাতে গতি ১০০ থেকে ১১০
kph এর বেশি হয়না ।এ জন্য রবি বা গ্রামীন ফোনের
পেসার হান্টে সর্বোচচ ১৩০ এর ধারে কাছে গতির বোলার পায় ,পরবর্তীতে কোচ করিয়ে তাকে
১০-২০ kph স্পিড বাড়ানো হয়, সেটাও সময়,
কঠোর পরিশ্রম ও খেলোয়াড়ের শরীরের গঠনের উপর নির্ভর করে । কারণ বলের গতি
সেই বোলারের শরীর, উচ্চতা, পেশী ও বোলিং এ্যাকশন, স্ট্যমিনা অনেক কিছুর উপর নির্ভর
করে ।তাহলে বুঝুন আমরা কি দেখেছি ! গতি কাকে বলে সে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়নি ।আবার
কথা হলো পেসার হান্টের ক্ষেত্রে কাঠের(কর্ক)
এর বল ব্যবহার করা হয় ।এরপরেও ১৩০ গতির বোলার পাওয়া কষ্ট হয়ে যায় ।
(102)
কারণ কাঠের বল টেনিস বল থেকে কমপক্ষে ২০ kph
বেশি গতি দেয় আপনাকে ।এরও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে ।শোয়েব আখতার যদি টেনিস বল দিয়ে
একটা বল করেন এবং কাঠের বল দিয়ে একটা বল করেন, তাহলে দুটো বলই ওনার হাত থেকে সমান
গতিতে বের হবে ।কিন্তু কাঠের বলটি বাতাসের বাধা ভেদ করে তার ভরবেগ(momentum)একই
রেখে ব্যাটসম্যানের কাছে পৌছবে, অপরদিক টেনিস বল হাল্কা হওয়ায় বাতাসের বাধা ভেদ
করে যেতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গিয়ে ব্যাটসম্যান পর্যন্ত পৌছে স্পিন বোলিং এর মত
গতি দেখাবে ।টেপ টেনিস অবশ্য কিছুটা বেশি গতি দেয় । তাহলে বুঝুন, টেনিস বা টেপ
টেনিস এ আমরা কত কম গতির বল মোকাবেলা করি বা খেলি ।সব থেকে বড় মূল
কথা হলো ব্যাটসম্যান বা বোলাররা খেলেন শুধু বল ছুড়ে দিলাম আর পেটালাম
বুদ্ধি দিয়ে নয় । তারা খেলেন মূলত সায়েন্স অফ স্পোর্টস ব্যবহার করে ।সাধারণ
একটা কথা বলি, রিভার্স সুইং করেন যে বোলাররা তারা কিন্তু শুধু বল করলেই হয়না ।
রিভার্স সুইং করাতে গেলে বলের কোন পাশ ক্ষয়ে গেছে, কোন পাশ উজ্জল আছে সেটা দেখতে
হয়, মাঠে বাতাস আছে কিনা সেটা দেখতে হয়, বাতাস থাকলেও বাতাসের প্রবাহ কোনদিকে সেটা
দেখতে হয়, এতো সামান্য একটা বিষ্ময়কর রহস্য, আরো কত সায়েন্স জেনে একজন ব্যটসম্যান
ও বোলারকে খেলতে হয় তার হিসাব নেই । সেটা একমাত্র তাদের কোচাররাই ভালো জানেন।ধরুন
মুস্তাফিজ ভালো কাটার দিতে পারেন । তিনি কাটার মাস্টার । কিন্তু সামান্য যদি তার
পা ফেলাতে বা বডি মুভমেন্টে ভুল হলেও ওনার বল কাটার হবেনা । কাটার শুধু হাতের
আঙুলের কারসাজিতে নয় । সাথে পুরো বডি মুভমেন্ট, পায়ের স্টেপ, কাধের পেশী, এমনকি
ওনার শরীরের ওজনের সাথেও সম্পর্ক আছে । আর ২০১৬-২০১৭ তে ইনজুরি থেকে ফেরার পর কেউ
কেউ তো সন্দেহ প্রকাশ করছে তার সামর্থ্য কি শেষ হয়ে গেছে ।আশা করি তিনি আবার কামব্যাক করবেন । যে ইউনিক এবং বিধ্বংশী একই সাথে ভয়ংকর
স্লোয়ার, কাটার, ইয়র্কারে তিনি হয়ে উঠছিলেন আতঙ্ক, সেটা
কি তার ভক্তেরা ভুলতে পারবে ? মনে আছে FIZZ
এর ভয়ংকর ইয়র্কারে IPL এ আন্দ্রে রাসেলের বোল্ড
হওয়াটা । আন্দ্রে রাসেল বলটা খেলতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে
(103)
পড়ে যান ।আরো বলি ইস
মাত্র ০৩ বলে ০১ রান নিয়ে বাংলাদেশ দল জিততে
পারলোনা, পাড়ার পোলাপান এর থেকে ভালো খেলতে
পারে, etc,etc , তো ধরুন একজন বোলার, পরিণত বয়স
নয়, লাখো দর্শকের শেষ মুহুর্তের গর্জন এসব কিছুর সাথে পরিচিত নন উনি, শেষ মুহুর্তে শক্ত রাখার মত এই নার্ভ ওই
সময়ে ওনার না থাকাটাই স্বাভাবিক, ওনার হাতের কাটার ওনাকে প্রত্যাশার থেকে বেশি
খ্যাতি এনে দিয়েছে, আমরা তার সমর্থক রা তাকে অতিমানব ভেবে ফেলেছি, কিন্তু উনি ওই
রকম পরিস্থিতি কখনো ফেস করেননি, ফলে অনভিজ্ঞতা হয়তো তাকে এরকম পরিস্থিতে আনাড়ী করে
ফেলতে পারে। আপনি খুবই মাসলস বহুল একজন মানুষ, সিক্স প্যাক শরীরও তৈরি করেছেন, বা
আপনার চুলটা সিল্কি, স্কিনটা খুব সুন্দর, তো আপনি একটা কালো চামড়ার শরীরের লোক কে
দেখে মনে মনে একটু অহংকারী হন , কোকড়া চুলোকে দেখে নিজের সিল্কি চুলের জন্য
অহংকারী হন । ভাবুনতো আপনি বা আমি যদি কালো চামড়া ও
কোকড়া চুল নিয়ে জন্মগ্রহণ করতাম তো কি করার ছিলো
আপনার বা আমার, আপনার মাসলসম্যান এর মত বডি আছে , খুব খেটে
তৈরি করেছেন, ধরুন আপনি বা আমি এমন একটা পরিবারে বা
দলিত শ্রেণীতে জন্মগ্রহণ করতাম যদি যাদের নুন আনতে
পান্তা ফুরায়, পরিবারের অধিকাংশ সদস্য অপুষ্টিতে ভোগে, সেখানে জন্মগ্রহণ করলে আপনি বা আমি কি অতিমানবীয় দেহ গঠনের কথা ভাবতে পারতাম
? পরিশ্রম দিয়ে ওই পরিস্থিতি থেকে উত্তরন হয়ে ব্যায়াম এর অবসর ও খাবার যোগাড় করতে
আপনার বা আমার শখের বয়স ও সময়টা চলে যেতো, আপনার যদি অভিনেতা হবার শখ থাকে, বা মডেল হবার
শখ থাকে, তবে আপনি সেটা ইচ্ছা করলেই পারবেননা, হয়তো আপনার পরিবারের রক্ষণশীলতা ,
আপনি ইন্সপায়ার করবার মত বা পাশে থাকবার মত
কোন সিনেমা সংশ্লিষ্ট
ব্যাক্তিত্ত্বের সান্নিধ্য বা চোখে না পড়েন, বা অর্থের জোর যদি
না থাকে তবে আপনি যত হ্যান্ডসাম বা প্রতিভভাধর হোননা কেন আপনি নামী অভিনেতা হতে
পারবেননা । খেলাধুলা সেক্টরটা ভিন্ন কথা । কারন রোদে পুড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খাটবার
একটা ব্যাপার সেখানে থাকে । এ জন্য দেখুন ক্রিকেট বা ফুটবল গ্রেটদের অধিকাংশই
ছোটবেলা অতি পরিশ্রমী তো অবশ্যই
(104)
সবাই ছিলেন অনেককে চরম দরিদ্রতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে , আবার তাদের ছেলেরা কেউ তাদের মত নামী হয়নি বা হবেনা ভবিষ্যতে, হতে পারে সেটা পেলে, ম্যারাডোনা ।মেসি, দি ফেনোমেনন ব্রাজিলের রোনাল্ডো, দ্যা ফিজ মোস্তাফিজ, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের ক্যাপটেন সালমা খাতুন,
বেলজিয়ামের রোমেলা লুকাকু যেই হোক না কেন ।আবার জীবন
থেকে নেওয়া বলে একটা কথা আছে, সে জন্য রবি ঠাকুরের ছেলে রবি ঠাকুর হয়নি, সত্যজিতের
ছেলে সত্যজিত হয়নি, আর অভিনেতা অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে যদি আমার লেখাতে সন্দেহ থাকে
তবে আপনি ঢালিউড, বলিউড, তামিল সব সিনেমা জগতের
অভিনেতা অভিনেত্রীদের পরিবার নিয়ে একটু পড়াশোনা করুন বুঝতে পারবেন
ব্যাপারটা, অবশ্যই তাদের অভিনয় গুণ ও প্রতিভা অসাধারন, তবে এটাই কিন্তু একেকটা সেক্টরের নিয়ম, আলাদা সিস্টেম আছে,
ব্যতিক্রম কিছু থাকতে পারে, কিন্তু ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারে তবে সার্বজনীন
প্রযোজ্য নয়।খেলোয়াড়দের ছেলেরা খেলোয়াড় হয়তো এ জন্য হয়না কারণ খেলোয়াড়রা অধিকাংশই
খেলার প্রতি ভালোবাসা বশত অভাব অভিযোগের ভিতর দিয়ে কষ্টসহিষ্ণু ভাবে উঠে এসেছেন
।তারকা হয়ে যাবার পর অঢেল অর্থের কারণে বাড়িতে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা থাকে । ওনাদের
সন্তানের সাতপুরুষ বসে খাবার মত অর্থ ও বিলাসিতার ভিতর থেকে কষ্ট করবার, ঘন্টার পর
ঘন্টা রোদ থাকবার ক্ষমতা হারায় ।ফলে ঘরে তার বাবার মত গ্রেটম্যান ও বাবার অর্জিত
টিপস সত্ত্বেও খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ওঠা হয়না ।খেলোয়াড়দের নিত্যদিনের কষ্ট বা ফিটনেস
ক্যম্প এর কষ্ট সম্বন্ধে তো জানেনই ।মানুষের জীবনে একটি ঘটনা
অথবা দূর্ঘটনা বা আইডিয়া তাকে ফকির ও বানাতে পারে, আবার ফকির থেকে রাজা ও বানাতে
পারে, সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তোলে ।এখানেই হলো ভাগ্যের বা তকদীরের খেলা ।
তকদীরের খেল মানে ঘরে বসে ম্যাজিক করে কিছু পাওয়া নয়, ধনী বা গরীবের ছেলে বলে কথা
নয় । তকদীর বা ভাগ্য হলো আপনার জীবনে ঘটা কোন ঘটনার রিএ্যাকশন ও পরিশ্রমের বা
আপনার মানসিকতার ফল । ধরুন দুজন ক ও খ দুজন সুদর্শন, অভিনয় প্রতিভাধারী লোক, ক এর
বাবা ধনী এবং পরিচালক ও প্রযোজক, আর খ এর সুদর্শন ও অভিনয় ছাড়া আর কোন
কিছুই নেই, তাহলে নিঃসন্দেহে ক এগিয়ে
(105)
থাকবে পিতার কারনে সবক্ষেত্রে, এটাই ভাগ্য
বাকি সব নাম খ্যাতি ক এর পরিশ্রম এর ফল।আবার একজন
উচ্চশিক্ষিত ও বড় পেশাজীবী লোক এর ছেলের কাছে জীবনে বড় হওয়া এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়া
যতটা সহজ বিপরীত অবস্থার লোকের ছেলের জন্য বিষয় গুলো এত সহজ হবেনা, বাতিক্রম যে
নেই তা নয়, কিন্তু বাতিক্রম উদাহরণ নয়, আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাদের কে দেখা যায়
খুব সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়েছে তাদের অধিকাংশই কিছু না কিছু সহযোগিতা
পেয়েছে কারো না কারো কাছে, মানে জীবনে নিচুতলা থেকে উপরের তলাতে ওঠবার জন্য তাদের
কে কেউ না কেউ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে , সেটা হতে পারে অর্থ দিয়ে, বা কাজ দিয়ে , বা
বুদ্ধি দিয়ে । সুতরাং, যেটা বলছিলাম, সব কাজের একটা থিম
বা সিক্রেট থাকে । যেটা হঠাৎ করে চাইলে পাবেননা ।যে মুদি দোকানী, সে জানে কোথা
থেকে ০৫ টাকায় জিনিস কিনে ০৮ টাকায় বিক্রি করা যাবে, সেই রকম কথা, পুরোপুরি একটা
লাভ ক্ষতির হিসাব ।আপনি একজন ধনী লোক, আপনার ছেলে ভালো
খেয়ে, গাড়িতে চড়ে, ভালো পোশাকে স্কুলে যাচ্ছে, আপনার ছেলে ভালো রেজাল্ট করে, ভালো
নাচতে গাইতে ও পারে, কিন্তু আপনি আপনার বাসাতে যে কাজের ছেলেটাকে বা মেয়েটাকে রেখেছেন, তাকে কিন্তু
তিনবেলা পারলে থাপ্পড় দিচ্ছেন, না থাপ্পড় মারলেও মুখে যা তা বলে গালি দিচ্ছেন, আর আপনমনে ভাবছেন আপনি যেমন জ্ঞানে , গুনে ধনে সেরা, আপনার ছেলেও তাই । কিন্তু
কখনো ভেবে দেখেছেন আপনি বাসায় আপনার ছেলের বয়সী যে ছেলেটাকে দিয়ে , বাজার করা ,
থালাবাসন পরিষ্কার করাচ্ছেন, গর্দভের বাচ্চা বলছেন, সেই ছেলেটা যদি সম সুযোগ পেতো তাহলে কিছু করতে পারতো কিনা ?আপেক্ষিকতার বিচারে লাঠি আর তলোয়ারধারীর লড়াইকে যেমন এক বা সম লড়াই বলা যাবেনা
তেমনি সুযোগ পেয়ে বড় আর সুযোগ না থেকে বড় কে এক নিক্তিতে পরিমাপ করা যাবেনা , লাঠি হাতে লড়তে আসা প্রতিযোগী কে বন্দুক
হাতে করে সহজেই হারিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু তাতে গৌরবের কিছু নেই, যোগ্যতার বিচারটাও
আপেক্ষিক, মোগল বাদশাহের ছেলে শাহজাদা বা অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান এর ছেলে
সুলতান হওয়া মানে এটা নয় যে, শাহজাদার
থেকে ততোধিক যোগ্যতার আর কোন যুবক ওই দেশে ছিলোনা
(106)
অভিনেতা বা অভিনেত্রীর ছেলে বা মেয়ে অভিনেতা
বা অভিনেত্রী হওয়া মানে এই নয় যে তার সন্তানের থেকে প্রতিভা এবং সৌন্দর্যে এগিয়ে
আর কোন ছেলে বা মেয়ে দেশে নেই । লাইম লাইটে আসার
সৌভাগ্যটা সবার হয় না, জন্ম সুত্রে যে সোনার চামচ মুখে জন্ম নেই তার জন্য পৃথিবীর
সংগ্রাম যত সহজ, ঠিক ততগুন কঠিন জীবন সংগ্রামে পতিত হয় যে বস্তির কুঁড়েঘর এ জন্ম
নেয়। সাধারনের
থেকে সুযোগ পেলেও কিছু করা সম্ভব তা হাল আমলের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।আসলে
সাফল্যের চুড়া থেকে জন্মগতভাবে/জন্মসূত্রে আমরা একেকজন একেক রকম দুরত্বে অবস্থান
করি ।সাফল্যের চুড়া যার কাছে জন্মগত ভাবে যত কাছে থাকে সে তত দ্রুত সাফল্য বা
যোগ্যতা অর্জন করে ।আবার সব কাজ সবাইকে দিয়ে হয়না । একটা মাছ গাছে উঠতে পারে কিনা,
সেই মাপকাঠিতে পরিমাপ করলে মাছ চিরটি কাল আপনার চোখে
অযোগ্য, অকর্মা থেকে যাবে, কারন সে গাছে উঠতে পারেনা সেজন্য ।কিন্তু একবার
তিনি কি ভাবেন যিনি
বলেন যে মাছ গাছে উঠতে পারেনা, ডাঙায় শ্বাস নিতে পারেনা । কিন্তু তিনি কি ভাবেন যে
তিনি মাছের মত পানির নিচে শ্বাস গ্রহন করতে পারেননা । এভাবে ভাবলে দেখা যাবে যে মাছ যা পারে, যেটা দেখে ও ভাবে সেটা আমরা
পারিনা । এ জন্যই বলছি যোগ্যতার বিচার আপেক্ষিকতা ও ভাববার অ্যাঙ্গেল বা দৃষ্টিকোন
থেকে আপেক্ষিক ।ভূমিকা বা শুরুর অংশেই বলেছি সুপ্রিয় পাঠক যে এই বইয়ের মূল থিমই
হলো আপেক্ষিকতা ।আপনারা স্বাভাবিক চোখে যা
দেখেন, যা শোনেন, যেটা বোঝেন, সেটা শুধু চর্মচোখে না দেখে আপেক্ষিকতার দৃষ্টিকোন থেকে একটু উল্টেপাল্টে
দেখুন দেখবেন সৃষ্টির অনেক ছোটখাটো রহস্য, সৃষ্টিরহস্য সহ মনের গহীনে জমা ব্যাক্তিগত ও সামাজিক অনেক প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজ থেকেই
পেয়ে যাবেন ।আর মনে নির্দিষ্ট একটা মানসিকতাকে আকড়ে ধরে বা নির্দিষ্ট একটা
মানসিকতার দলবাজী না করে বা পক্ষ না নিয়ে মনকে ভাববার স্বাধীনতা দিন, দেখবেন
সত্যটা এমনিতেই বেরিয়ে আসবে। অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর, আপনার জীবনের অনেক সিদ্ধান্তহীনতাতে
আটকে থাকা কাজ করবেন কি করবেন না ,
(107)
-এর
মীমাংসা হয়ে যাবে ।জীবনে আমরা সবকিছুতে কনফিউশন এ ভুগি, কাজটা কি করবো, না করবনা
এসব নিয়ে ভেবে আমাদের অনেক খানি সময় চলে যায় বা অনেক সময় কাজটা করা হয়ে ওঠেনা।
একটা জিনিস ভাববেন জীবনের খাতায় বা ইতিহাসের পাতাতে কনফিউশন এর জন্য কোন যায়গা
থাকেনা ।ইতিহাসের পাতা লেখে জয়ী এবং পরাজিতের ইতিহাস ও নাম। আপনি পরীক্ষাতে জিপিএ-০৫
পাননি এই বাজে স্মৃতি আঁকড়ে ধরে থেকে লাভ হবেনা, প্রেমে ব্যার্থ হয়েছেন, প্রেয়সী
আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে , এই চিন্তাতে আপনি নেশা ধরলেন, জীবনের আশা ছেড়ে দিলেন এটা
কখনোয় সমাধান হতে পারেনা, জীবন এত ছোট নয়, এত ঠুনকো নয় ভাই।ব্লেড রানার খ্যাত অস্কার
পিসটোরিয়াস যদি দুটো পা না থেকে বিশ্ব এথলেটিক্স এ দৌড়বিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে
পারে, কে এফ সির মালিক কলনেল স্যান্ডার্স যদি ৭০ বছর এ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন,
জীবনকে নিয়ে নতুন করে সপ্ন দেখতে পারেন, আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা জীবনে কোন
দিন চাকুরির চেষ্টা করে না পেয়েও আজ আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা, একবার একটা চাকুরীর
পরীক্ষা এত সোজা হয়েছিল যে সকল চাকুরি প্রার্থী চাকুরী পেয়ে গিয়েছিলো, শুধুমাত্র
তিনি বাদ পড়েছিলেন, আর সেই মানুষটি কিনা এখন পৃথিবীর হাতেগোনা ধনীর ভিতর একজন,
জাস্ট ভাবা যায়না, অর্থাভাবে শতাব্দীর সেরা কয়েকজন হলিউড একশন হিরোর একজন একশন
রকি-রাম্বো খ্যাত অভিনেতা সিল্ভেস্টার স্ট্যালোনকে একসময় অভাবের তাড়নাতে তার পোষা
কুকুরটা মাত্র কয়েক ডলারে বিক্রি করে দিতে হয়েছিল, পরবর্তীতে তার পরিশ্রম প্রতিষ্ঠা
এবং খ্যাতি তাকে এত টাকার মালিক করে দেয় যে তিনি পরবর্তীতে তিনি তার সেই
কুকুরটি কয়েকশো গুন বেশি টাকা দিয়ে কিনে নেন, দি ব্যান্ডিট কুইন বা দস্যু রাণী
খ্যাত ফুলন দেবী ১৭ দিন পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েও আর ০৫ টা মেয়ের মত আত্মহত্যা
না করে জীবনে কামব্যাক করেন। আসলে মানব ক্ষমতার অদ্ভুত একটা শক্তি আছে সেটা মানুষ
ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনি জানেন গুগল ম্যাপে যত তথ্য রয়েছে তার পরিমাণ ২০
পেটাবাইট আর মানুষের মস্তিস্কে যে তথ্য
আছে ।
(108)
তার পরিমাণ হল ২০০০ পেটাবাইট(১০০০ কিলোবাইট-০১
মেগাবাইট-১০০০ মেগাবাইট -০১ গিগাবাইট -১০০০ গিগাবাইট -০১ টেরাবাইট -১০০০ টেরাবাইট-০১
পেটাবাইট ,{মুলত ১০২৪ কিলোবাইট হবে, বোঝার সুবিধার্থে ১০০০ করে একক ব্যাবহার
করেছি} তাহলে ২০০০ পেটাবাইট মানে কি দাড়াচ্ছে বুঝুন তো । এটা কি কল্পনা করা যায় !!
,হয়না
বা নেই বললেই সেটা হয়না বা না হয়ে যায়না । এক সময় বলা হতো চাষার ছেলে চাষা হয়,
পরবর্তীতে বহু চাষার ছেলে বড় কিছু হয় দেখিয়েছে, ২০ বছর আগেও ভাবা হতো মেয়েরা
পড়ালেখা শিখে কি ল্যন্ডলর্ড হবে, জর্জ ব্যারিষ্টার হবে ? কিন্তু সুযোগ পেলে তারাও
যে জর্জ,ব্যরিষ্টার,ডাক্তার,ডিসি,এসপি,পাইলট সবই হচ্ছে, হয়তো সৃষ্টিগত কারনে
নারী-পুরুষের সামর্থ্যতে কিছুটা কম বেশি বা সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হতে পারে, সেই সীমাবদ্ধতা থেকেও যাবে, তবে সেটা কথা নয় । একটা মাছ পানিতে থাকে ।পানিতে বসে
একটা মাছ যদি বিজ্ঞের মত বলতে থাকে এবং ফাইনাল একটা ডিসিশন দেয় বা এই সিদ্ধান্তে
উপনীত হয় যে পানির উপরে আর কোন জগৎ নেই, সেখানে কিভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব, কারণ বাঁচতে
তো পানির দরকার, মাছ নিয়ে ডাঙার প্রাণীরা রান্না –বান্না করে খায় এটা আমরা শুনেছি
সব ভুয়া কথা । আমাদের একমাত্র খায় জলের, সাপ, ব্যঙ কুমিরেরা ।কোন মাছ হয়তো আর একটু
জ্ঞানমূলক মতবাদ দিলো যে, যার যখন সময় হয়ে যায় , পানির জগৎ থেকে সে অদৃশ্য হয়ে যায়
। হয়তো সেটা সে মাছেদের জগতে বলে বা মতবাদটা প্রচলন করে প্রমাণ দিয়ে অমর হয়ে রইলো
। কিন্তু সত্যটা কি সেটা উপলব্ধির ক্ষমতা মাছের আছে কি ? স্থলে মানুষ, হাতি, ঘোড়া,
বাঘ, গাড়ি, বাড়ি এসব আছে এটা কি মাছকে দেখালেও বুঝতে পারবে ?হয়তো জলে ও স্থলে চরে
বেড়ানো উভচর সাপ ও ব্যাঙের মাধ্যমে কিছু ধারনা পেতে পারে ।কিন্তু তার ভিতরও কথা
থাকে ।সাপ ব্যাঙকে খায়। আবার সাপ ও ব্যাঙ উভয়ই মাছেদের খায় । আর সাপ ও ব্যাঙের ও কি
মানব জীবন, স্থলের অফিস আদালত, মানুষের দৈনন্দিন জীবন এসবের বোঝবার ক্ষমতা কি আছে ? এটাকেই আমার মতে আমি মনে করি
তথাকথিত ডাইমেনশন বা মাত্রা ।
(109)
বলা
যেতে পারে ডাইমেনশন বা মাত্রা হলো আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের
এমন এক সীমাবদ্ধতা, যার অভাবে আমরা মহাবিশ্বের অন্য প্রাণীর অস্তিত্ব গ্রহ বা
পরলোক সম্বন্ধে জানতে পারছিনা । এই যে আমরা অনেকেই না বুঝে বলে দিই ভুত জ্বীন অশরিরীরী নেই ,
অনেকে তো নাস্তিক হিসেবে বলে দেন স্রষ্ঠা নেই বা পরলোক নেই
এটা বলেন তারা হলেন সব থেকে বড় বোকা ।হুযুর
(সাঃ)এর মিরাজের ঘটনায় স্রষ্ঠা ও নবীর মাঝে পর্দার
যে কথা উল্লেখ আছে বা মূসা (আঃ) তূর
পাহাড়ে স্রষ্ঠাকে দেখতে চাওয়ায় যে একটি পর্দা সরার কারণে
নুরের তাজাল্লী পতিত হয় তূর পাহাড় ভস্মীভূত হয়ে যায় ।আসলে এই পর্দাটা হলো তথাকথিত
মাত্রা বা ডাইমেনশন বা মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ।এর বেশি জ্ঞান স্রষ্ঠা মানুষের ভিতর দেননি । ধরুন আজ ২০১৭ সাল, আজ থেকে ১০০ বছরের
কিছু বেশি সময় আগে আমরা ওড়বার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারিনি ।তখন আমরা পৃথিবীর
বাইরের এই মহাকাশের এত বিশালতা সম্বন্ধে জানতামনা ।আকাশের তারা যে আমাদের থেকে
কয়েকলক্ষ আলোকবর্ষ দুরে । আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ০১ লক্ষ ৮৪ হাজার মাইল বা ০৩ লক্ষ কিলোমিটার প্রতি
সেকেন্ডে। তাহলে এবার হিসাব করুন আলো ০১ মিনিটে কতটুকু
যায়, ০১ ঘণ্টাতে কতটুকু যায়, ০১ দিনে, ০১ সপ্তাহে, ০১ মাসে, ০১ বছরে কতটুকু যায়
সেটাই হল আলোকবর্ষ ।মানে ৫৮৭৮৬২৫ মিলিয়ন বা ০৬ ট্রিলিয়ন মাইল এর সমান পথ
অতিক্রম করে ।কিলোমিটার এর এর হিসেবে ৯৪৬০৭৩০৪৭২৫৮১ কিলোমিটার, পৃথিবী থেকে
চাঁদ মাত্র ১.২৯ আলোক সেকেন্ড, সূর্য ০৮ আলোক মিনিট, পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহ ১২.৭
আলোক মিনিট, সব থেকে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টরাই ৪.৩ আলোক বর্ষ দূরে, পৃথিবী
থেকে মিল্কিওয়ে গালাক্সির শেষ প্রান্ত ৫২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। দুরে অবস্থিত,
মহাকাশের শেষ কোথায় সেটা ও কি আমরা জানি ? এটাই হলো পর্দা বা মাত্রা বা ডাইমেনশন ।
একেকটা পর্দা চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়া
মানে নতুন জ্ঞান লাভ করে জ্ঞানী হওয়া, জ্ঞানের একটা নতুন স্তরে উপনীত হওয়া ,আমরা
যখন বর্তমান বিজ্ঞানের থেকে উন্নত হবো, তখন আমরা নতুন কিছুর সন্ধান পাবো, নতুন কিছু জানতে পারবো ।
(110)
অর্থাৎ
অজানা কোন কিছু জানতে পারা মানে পৃথিবী ও অসীম মহাকাশের অসীম সংখ্যাক পর্দা দিয়ে
আড়াল করে রাখা রহস্যের ভিতর থেকে একটা একটা রহস্যে ঘেরা বিষয়ের উপর থেকে পর্দা সরে
গেলো । পর্দার আড়ালের একটা বিষয় সামনে চলে এলো ।
আচ্ছা আমরা কথায় কথায় বলি অক্সিজেন আছে যে গ্রহে , পানি আছে যে গ্রহে সেটাতে
জীবের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব । অক্সিজেন বা পানি ছাড়া আর কোন কিছু অবলম্বন করে জীব
থাকতে পারাটা অসম্ভব কিছু কি ? ।আমাদের যেমন বেচে থাকতে হচ্ছে অক্সিজেন দিয়ে, তেমনি এমন কোন প্রাণী থাকতে পারে
যার অক্সিজেন লাগেনা । যেমন ধরুন আমি আপনি পানির
ভিতর নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ডুবে থাকলে মারা যাই, তার মানে কি দাড়ায় পানিতে কিছু
বসবাস করতে পারেনা ।না সেটা ভাবা বোকামি, পানির জগতেও অগনিত সৃষ্টি রয়েছে । নিজে যেখানে বাচতে পারিনা, যেতে পারিনা,
যেটা দেখিনা, দেখিনি যে যায়গা কোনদিন সেখানে কিছু থাকতে পারেনা এটা ভাবা কি
অবুদ্ধিমানের পরিচয় নয় ?। ধরুন পা
না থেকে সাপ কিভাবে হাটতে পারে, কান না থেকেও জিহ্বা দিয়ে কিভাবে শোনে ।আছে বা
নেই, পারা বা না পারা বাক্তি, স্থান, কাল এবং যায়গা ভেদে আপেক্ষিক একটা ব্যাপার
।অতি গতিশীল একটা যান আমরা যদি কখনো আবিষ্কার করতে পারি তবে অনেক কিছ সম্ভব মানুষের
দ্বারা করা। বর্তমানে মানুষের তৈরি রকেটের সর্বোচ্চ গতি সেকেন্ডে ১৬.২৬ কিলোমিটার
মানে ঘণ্টাতে ৫৮৫৩৬ কিলোমিটার মাত্র । আর ৪৭৮ কিলোগ্রাম ওজনের একটা স্পেসশিপ ঘণ্টাতে ৫৮০০০ কিলোমিটার এর কাছাকাছি অতিক্রম করতে পারে মানে সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার
এর মত এখন টাইম মেশিন আবিষ্কারের কয়েকটা আইডিয়া আছে তা হল মানুষ যদি আলোর বেগের
থেকে বেশি গতির কোন যান আবিষ্কার করতে পারে তাহলে সে অতীত দেখতে পাবে, মানে টাইম
মেশিন দিয়ে সে অতীতে পৃথিবীতে কি ঘটেছিল তা সে দেখতে পাবে, আলোর থেকে বেশি গতি,
ভাবা যায় !! ইজ ইট পসিবল ? ।
তো ওই যে বলছিলাম নির্জন রাস্তায় আপনি
আসছিলেন আর যে সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন, যেমন, হঠাৎ করে মনে হলো কেউ হেসে
উঠলো, কেউ মনে হচ্ছে হাত ঘষছে, কেউ কাঁদছে ।
(111)
কেউ
মনে হলো হাততালি দিলো, কেউ যেনো পিছনে হেটে আসছে, আবার পিছনে তাকালে কেউ নেই এইসব।
এ সবের নানা ব্যাখ্যা হতে পারে।রাতের প্রকৃতি থাকে নির্জন ।আপনার আমার চলাচলের সময়টা
সাধারণত রাত আটটা থেকে দশটার ভিতর সীমাবদ্ধ থাকে ।নির্জনতা বা নির্জন পথ দিয়ে
চলাচল, অথবা নির্জন পরিবেশের সংস্পর্ষে সাধারণত আমাদের এই যুগের মানুষদের চলা হয়না
বললেই চলে। আমরা এই পরিবেশটার সাথে পরিচিত নই ।জন কোলাহল ও যান্ত্রিক জীবনের ভিতর
দিয়ে চলতে চলতে আমরা নির্জনতার সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত হয়ে যায়। রাতের নির্জনতায়
অনেক দুরের শব্দ ও আমাদের কানে ভেসে আসতে পারে। আপনি যদি মাটিতে
কান পাতেন তাহলেও অনেক দুরের শব্দ শোনা যেতে পারে ।অনেক সময় শিশু কিশোরদের দুষ্টুমী
করে রেল লাইনে কান পাততে দেখা যায় ।দেখা
যায় ট্রেন যখন দুই এক কিলো দুরে থাকে তখন ট্রেনের
শব্দ মাটিতে কান পাতলে শোনা যায় ।বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে ground vibration।
ঝিঝি পোকা ডাকবার শব্দও পাওয়া যায় গ্রামের নির্জন রাস্তায় ।যেটাতো আমরা ভুলতে
বসেছি। আপনি হয়তো নির্জন রাস্তাতে কান্নার শব্দ পাচ্ছেন । রাত তখন একটা । হতে পারে
সেটা দুশো থেকে ৫০০ গজ দুর থেকে ভেসে আসা কোন কান্নার শব্দ । হতে পারে সেটা রাতে
উঠে ঝামেলা করবার মত কোন বাচ্চার কান্না ।হঠাৎ বিকট হাসির শব্দ শুনলেন । সেটা হতে
পারে ফাকা মাঠে কারো হাসির শব্দ । ভাবছেন ফাকা মাঠে হাসির শব্দ এত রাতে আসবে কোথা
থেকে ।ধরুন গ্রামে অনেকের অভ্যাস থাকে রাতে মাছ ধরতে যাওয়া , বন্ধুরা মিলে পিকনিক
বা হতে পারে গভীর রাতে মাদকের নেশা করা কোন ব্যাক্তির উপস্থিতিতে এমন হাসির শব্দ ।
ধরুন হাড় মটমট করে ভাঙার কোন শব্দ পেলেন । মোটামুটি ঘাবড়ে গেছেন তাইনা । দেখুনতো
আশে পাশে কোথাও কুকুর দেখতে পান কিনা , কোথা থেকে হয়তো একটা
হাড় নিয়ে এসে চিবোচ্ছে । আশেপাশে কোন বাঁশ বাগান যদি থাকে তবে হতে পারে সেটা দুটো বাঁশ
গাছের বাতাসের কারণে বাড়ি খাওয়া বা ঘর্ষণ ।
(112)
হঠাৎ
করে কোথাও মনে হলো বাচ্চাদের মত ঝুনঝুনি(গ্রামে প্রচলিত বাচ্চাদের খেলনা বিশেষ)
বাজালো আশেপাশে কেউ,বা হাল্কা ঝাড়ু দেবার মত শব্দ। এবার একটু সাবধান হোন ।হয়তো
বইয়ে পড়েছেন rattle স্নেক জাতীয় সাপেদের লেজে ঝুনঝুনি জাতীয় একটা ব্যাপার থাকে বা
হতে পারে ভাইপার । লেজ ঝাকা দিলে ঝুনঝুনির
মত শব্দ হয় । তো আশেপাশে সাপ থাকতে পারে । হঠাৎ দেখলেন ভূতের গল্পে পড়া জলন্ত
চোখের মত দুটো জলন্ত চোখ আপনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একদৃষ্টে
তাকিয়ে আছে কোন ঝোপের আড়াল থেকে । আপনি জানেন হয়তো নিশাচর প্রাণীদের চোখ রাতের
অন্ধকারে জ্বলে ।হতে পারে সেটা কুকুর, বিড়াল, বাঘ বা মেছো বাঘ ।হয়তো দেখলেন সামনে দিয়ে কেউ হেটে চলেছে
।কোন কথা বলছেনা । চুল উস্কোখুস্কো । হতে পারে কোন পাগল ।দেখলেন
কালো কাপড় পরা মানুষের বাচ্চা সাইজের একটা কিছু উড়ে গেলো ।হতে পারে সেটা কোন বড়সড়
বাদুড় ।গাছের ডালে হুতোম পেচার তাকানো ও ডাকের শব্দেও আপনি ভয় পেতে পারেন ।ছাদে বা
টিনের চালে ঢিল পড়ার শব্দ বা কারো হেটে যাবার শব্দ ।এটার কারণ হতে পারে টিনের চালে
বা ছাদের উপর দিয়ে বিড়াল ইদুর ধরতে উঠলো, বা বাদর বা হনুমান জাতীয় কিছু হেটে গেলো,
টিনের চালে ঢিল পড়ার শব্দ সেটাও হতে পারে, আশেপাশে নারিকেল গাছ থাকলে তার ছোট ছোট
ফল পড়ার শব্দ । হয়তো দুর থেকে ভেসে আসছে করুন সুরে বাঁশির শব্দ ।এটা ভূতের মনে না
করাই ভালো । হয়তো গ্রামের কোন উদাসী বা রোম্যান্টিক লোকের বাজানো বাঁশির সুর । এই
প্রসঙ্গে আমার শোনা একটা ঘটনা বলবো ও সাথে কিছু ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা বলবো ।তার আগে
বলে নিই, ভূত বা অশরিরী কি, আপনি আমি সাধারণত ভূতে ভয় পাই কেন ,আসলে ভূত বলুন আর
যাই বলুন সেটা হতে পারে আপনার আমার অপরিচিত এই রাতের প্রকৃতির চির অপরিচিত নির্জন
রূপ ।অজানা ব্যাখ্যাবিহীন ব্যাপারটাই হলো ভূত। আপনার এই রাতের
পরিবেশটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অপরিচিত হবার কারণে যৌক্তিক ভয় ।এ রকম কোন সিচুয়েশনে
পড়লে চিরকাল মাথা ঠান্ডা রাখবেন ।ভয়ও পাবেননা, দৌড় বা তাড়াহুড়া করবেননা । দেখা
গেলো হিতে বিপরীত হতে পারে।
(113)
আশেপাশে
কুকুর থাকলে আপনাকে তাড়া করলে নির্ঘাত জখম ও ইনজেকশন দেবার ব্যবস্থা হতে পারে ।আসলে
আমরা আমাদের সকল হিতৈষী বেষ্টিত বা চিরকাল জনকোলাহলে বেষ্টিত থেকে আমাদের
হইহুল্লোড়ের বাইরে নির্জন প্রকৃতির একটা রূপ আছে সেটা সম্পর্কে ধারণা না থাকাটাই
হয়তো আমাদের সামনে ভূত হয়ে দেখা দেয় ।রাতের নির্জন জঙ্গল, জ্যোৎস্না রাতের নদীর
রূপ, রাতচরা পশু পাখি কীটপতঙ্গ এর অজানা এক নতুন পরিবেশে কজন বেড়িয়েছেন ।আবার
সবকিছু কোলাহল বাদ দিয়ে আপনার ঘরের দরজা, জানালা হালকা বন্ধ করে দিন ।ঘরটা গাড়ি চলাচল ও মনুষ্য চলাচলের
রাস্তা থেকে দুরে হতে হবে, এবং ঘরটা হতে হবে নীচতলা, বাড়ির চারপাশে গাছপালা থাকতে
হবে, বাড়িতে কেউ থাকবেনা, বাসা একেবারে ফাকা, এবার ঘরে আসুন, মেঝেতে বসে চুপচাপ চোখ বন্ধ করুন ।পৃথিবীর সবকিছু ভুলে যান।
ভুলে যান আপনার নাম পরিচয় থেকে আপনার প্রিয় মুখগুলোকে ।চোখ বুজে আপনি দেখছেন
অন্ধকারটাকে আর কান শুনছে কিছু শোনা যায়
কিনা ।এভাবে আধঘন্টা থাকুন । শুধু অনুভব করুন বন্ধ চোখ আর কান কি শুনছে ও
দেখছে ।গভীর রাতেও একই পরিবেশে একই কাজটা করুন । নতুন কিছু অনুভব হবে ।এটা
মেডিটেশন, বোগাস বা হেয়ালি যাই বলুননা কেন, যে শব্দ শুনতে পারেননা স্বাভাবিক কানে,
যে অনুভব হয়না স্বাভাবিক চলনে সেটা হয়তো অনুভব হবে যদি কনসেনট্রেশন বা মনযোগ ঠিক
থাকে । দিনের কোলাহলে রাতের রহস্যময়
অন্ধকার থাকেনা, নিশাচরেরা বের হয়না, যদি কোন সুক্ষ্ণ কিছু থাকে তবে সেটাও
দৃশ্যমান হতে হয়তো একটা পরিবেশের দরকার হয়, যেমন সাদা রঙের কিছুর দৃশ্যময়তা ফুটতে
কালো ক্যনভাসের দরকার হয় । সুতরাং ভূত ও যুক্তির বাইরে কিছু নয় । সবই অজানা
যুক্তির যুক্তিযুক্ত খেলা, ভূত মানেই পথ আটকানো সাদা কাপড় পরা পেত্নী নয়,
মামদো-হামদো-ব্রক্ষ্মদৈত্য নয়।রাতের অন্ধকারে যৌক্তিক
কাজ, দিনের বেলার স্বাভাবিক কাজ, দিনের বেলার হাস্যকর অনেক কাজ, দিনের বেলাতে
খেয়াল না করা কাজ, রাতে হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক ও অতিপ্রাকৃত, অনেক ক্ষেত্রে মহা ভয়ংকর।
(114)
কেন জানেন দিন আর রাত একই জিনিস,
আশ্চর্য কিছু নয়, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে পৃথিবী জীবের উপযোগী হবার শুরু থেকেই
দিন রাতের এই খেলা চলে আসছে ।দিন ও রাত মানে হল
পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারনে পৃথিবীর এক পিঠে যখন রোদ পড়ে সেই পিঠে দিন আর যে পিঠে রোদ
পড়েনা সেই পিঠ হল রাত ।পৃথিবীর এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মানে দিন রাতের
এই খেলা নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই ।কিন্তু দিন নিয়ে তত
কৌতূহল না থাকলে ও যত আজগুবি আর রহস্য কথা, উপকথা, মিথ সব এই রাত নিয়ে ।কারন হল রাত একটা কালো কানভাস, কালো পর্দার অপর নাম, না পড়া এক মহা রহস্য
উপন্যাসের নাম ।কালো ক্যানভাসে যেমন যা কিছু ফুটিয়ে তোলা সহজ
হয়, যে কোন কিছু আঁকলে সেটা সুন্দর হয়ে ফোটে, সামান্য আঁচড় ও বোঝা যায় খালি চোখে,
কালো পর্দার আড়ালে যেমন কোন কিছু চলে গেলে তা আর দৃশ্যমান থাকেনা, চোখের আড়াল হয়ে
যায়, তেমনি রাত এই লুকোচুরি খেলা আর সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসা সেই ভুত পেত্নী,
আত্মার সেই লীলাভূমি । এই নিয়ে আমরা কত ভয় পাই, কত মন্ত্র পড়ি, কত
সাবধানতা নিয়ে থাকি ।সারা পৃথিবী, সারা মানবজাতি যখন, সমস্ত
প্রাণীকুল যখন ঘুমে মগ্ন ,তখন কি আসলেই আর একটা জগতের প্রানীরা নেমে আসে ? এ
প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান ও দিতে
পারেনি । যে টুকু আমরা জানি সেটুকু হল লোকমুখে
শোনা জনশ্রুতি, বিভিন্ন দেশের রুপকথা আর আধুনিক যুগে স্বীকৃত কয়েকটি হন্টেড প্লেস ছাড়া আর কিছু এ সম্বন্ধে শোনা যায়না । বিজ্ঞান পরিষ্কার বলে দিয়েছে এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, এ নিছক মনের দুর্বলতা,
অবচেতন মনের অলস চিন্তা মাত্র ।তার পরেও মানুষ ভয় পায়
রাতকে, রাতের অন্ধকার কে ।রাতের অন্ধকারে সঠিক বা ভুয়া যেকোন দৃশ্য দৃশ্যায়ন করা যায় ।ওই যে বলেছিলাম ভুত – প্রেত- অদৃশ্য যা কিছু তা সবাই
দেখেনা ।সেগুলো দেখে মানুষ তখন যখন মানুষ খুব ভীত থাকে,
তখন সে বাস্তবতা ভুলে কল্পনার জগতে চলে আসে।কল্পনার ভিতর সে
ডুবে গিয়েছে কখন সে নিজেও টের পায়না ।এটা হল সেই
হ্যালুসিনেশন।আর এক জাতীয় মানুষ আছে যারা থাকে জন্মগত ভাবে
অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী ।আপনি বা আমিও হয়তো
অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী ।
(115)
কিন্তু আপনি বা আমি সেটা হয়তো কোনদিন জীবনেও বুঝতে পারবনা বা উপলব্ধি করতে
পারবোনা যে আপনার বা আমার ভিতর বিশেষ কোন প্রতিভা অথবা বিশেষ কোন ক্ষমতা লুকিয়ে
আছে যেটা আরেকজনের ভিতরে নেই ।এই বুঝতে না পারবার
জন্য আমাদের পরিবেশ এবং পরিস্থিতি দায়ী।ধরুন আপনার কখনো
পানিতে নামা হয়নি ।দেখা গেলো আপনি পানিতে ডুব দিয়ে স্বাভাবিক একজন
মানুষের থেকে ০৩ গুন সময় পানির নিচে থাকতে পারেন ।কিন্তু চিরকাল শহরে বসবাস আর গ্রামের পুকুরে কোন দিন বন্ধু বান্ধব দের সাথে
খেলাধুলার অভ্যাস না থাকার কারনে আপনি নিজে এবং জগতবাসী কোনদিনই আপনার এই
অতিমানবীয় ক্ষমতা সম্বন্ধে জানতে পারলোনা ।আবার আপনি ধরুন
কোন মানুষ কে একবার দেখে হুবহু সেই লোকটিকে আকতে পারেন, কিন্তু বর্তমানের
প্রেক্ষাপটে এটা দরকার না হওয়াতে এবং মোবাইল কামেরার সহজলভ্যতার কারনে হাতে অঙ্কন
একপ্রকার উঠে গিয়েছে ।ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার প্রতিভা নিজের অজান্তে
হারিয়ে যাবার সাথে সাথে পৃথিবী থেকে মানব ক্ষমতার অনেক শিল্প নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।একসময় শুনেছি শিশু-কিশোর-যুবারা প্রতিদিন ০৫-১০ কিলোমিটার হেটে স্কুলে যেতো
আবার ০৫-১০ কিলোমিটার হেটে বাড়ী ফিরত।এটাতো এখনকার
পিডিয়াসিওর, কমপ্ল্যান খাওয়া বাচ্চা, বা এনার্জি ড্রিংকস খাওয়া যুবকদের ভিতরও
দেখতে পাওয়া যাবেনা । আবার দেখুন আগে মানুষ ব্যবসার বড় বড় যোগ বা গুন অনায়াসে হাতের
আঙুলের কর গুনে করে দিতে পারতো। কিন্তু এখন দোকানদার বা ব্যবসায়ীরা ক্যালকুলেটর
ছাড়া এরকম বড় হিসাব নিকাশ ভাবতেই পারেন না ।এখন বলব এরকম
অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী একজন মেয়ের সম্বন্ধে ।
ÔÔনাটালিয়া নাতাশা
নিকলায়েভনা ডেমকিনা ÕÕ ওরফে নাতাশা ডেমকিনা ।১৯৮৭ সালে রাশিয়া
তে জন্ম গ্রহন করেন ।এনার একটি বিশেষ ক্ষমতার কথা সবার সামনে আসে যখন ওনার বয়স
মাত্র ১০ বছর । নাতাশার ভাষ্য মতে ১৯৯৭ সালের কোন একদিন তিনি তার মায়ের সাথে
বসেছিলেন । হঠাৎ নাতাশা খেয়াল করেন তিনি তার মায়ের শরীরের অভ্যন্তরের অঙ্গ ও
টিস্যু কলা দেখতে পাচ্ছেন ।এর আগে তিনি নিজের ভিতর এই ক্ষমতার কোন নমুনা উপলব্ধি
করতে পারেননি ।
(116)
হঠাৎ করে ১০ বছর বয়স থেকে তিনি এরকম
ক্ষমতার অধিকারী হন ।সাধারণত যেটি যেকোন মেডিকেল ডায়াগনসিস এর সমতুল্য। ধরুন
এক্সরে দিয়ে মানুষের শরীরের ভিতরের বিভিন্ন হাড়ের চিত্র দেখা সম্ভব।কিন্তু যখন
ধরুন আপনার পাকস্থলী তে আলসার এর ক্ষত আছে সেটা দেখতে যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করা
হয় তাকে বলা হয় এন্ডোস্কপি। আর এই এন্ডোসকপির কাজটি নাতাশা শুধু মাত্র চোখের
দৃষ্টিতে করে ফেলতেন।২০০৪ সালে ডিসকভারি চ্যানেল নাতাশা কে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী
তৈরি করে।একই সালে ইংল্যান্ড এর ÔÔদি সান ÕÕপত্রিকা নাতাশা কে ইংল্যান্ড এ নিয়ে আসে।সেখানে সদ্য কার দুর্ঘটনাতে আক্রান্ত
একজন মহিলা কে নিয়ে আসা হয়, নাতাশা তখন দুর্ঘটনাতে পতিত মহিলা টিকে দেখে নির্দিষ্ট
করে বলেন ওনার শরীরের কয়েকটি যায়গাতে
ফ্রাকচার আছে এবং কয়েকটি ধাতব পিন ওনার শরীরে ঢুকে গেছে ।পরে মহিলাটিকে এক্সরে এবং
স্ক্যান করে দেখা যায় যে নাতাশার কথা এবং রিপোর্ট একই কথা বলছে ।এভাবে তিনি
নিউইয়র্ক এর সাইকোলজি এর প্রোফেসর রে হীমান এর
নেওয়া এনাটমিকাল মুভমেন্ট এর পরীক্ষাতে ১০০ % নিখুত ভাবে উত্তীর্ণ হন এবং জাপান এর
টোকিও ইলেকট্রিক্যাল ইউনিভার্সিটি এর প্রোফেসর ইওশি মাচি এর নেওয়া পরীক্ষাতেও
উত্তীর্ণ হন ।এর মাঝে হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন করি, মানুষের ভিতর বর্তমানে
একটি কথা প্রচলিত আছে মোবাইল টাওয়ার আসবার পর নাকি দেশি নারিকেল গাছের নারিকেলের
ফলন কমে গেছে, কথাটা কি সত্যি ? যদি সত্যি তাই হয় তবে সেটা কেন হয় ?
এতক্ষন ওয়ান্ডার
গার্ল নাতাশার ব্যাপারে যে কথা গুলো বলা হলো সেটা আসলে কিভাবে তিনি পেলেন। এটা কি
তার চোখে উপস্থিত বা তৈরি হওয়া কোন জিনোমের
উপস্থিতি ? নাকি কোন মন্ত্র বা অলৌকিক অশরীরী কারো তার সাথে উপস্থিতি। আবার
মালয়েশিয়ার লীউ থো লিন কে বলা হয় চুম্বক মানব। তিনি সর্বোচ্চ ৩৬ কেজি পর্যন্ত ধাতব
বস্তু কোন দড়ি বা আঠার সাহায্য ছাড়াই নিজের শরীরের সাথে আটকে রাখতে পারেন ।
(117)
যেটা চুম্বক ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়
।তাছাড়া বিজ্ঞানীরা ওনার শরীর স্ক্যান করে বা পরীক্ষা করে কোন লুকানো চুম্বক ,বা
চুম্বক ক্ষেত্রের উপস্থিতি পাননি।
ভিয়েতনাম এর ÔÔথাই গকÕÕ(১৯৪২) আর আমেরিকার আল হারপিন(১৮৬২-১৯৪৭) এই
দুজন লোকের একজন ৪৭ বছর আর একজন জীবনে
কোনদিন ঘুমাননি।যদিও তাদের না ঘুমান নিয়ে বিতর্ক
আছে ।
আবার ÔÔউয়িম হফ ÕÕ( ১৯৫৯- )নামক নেদারল্যান্ড এর একজন বাক্তি
যিনি বরফমানব নামে পরিচিত । -২০(মাইনাস ২০ ডিগ্রি) ডিগ্রি হিমাঙ্কের বরফের ভিতর
অনায়াসে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকতে পারেন ।বলা হয় এই অসাধ্য সাধন তিনি
শিখেছেন প্রাচীন তিব্বতের টুমো পদ্ধতির ধ্যান শিখে ।
আবার জাপানের ÔÔইসাও মাচিরÕÕ দিকে যদি আপনি ১৬০ km/h গতিতে একটা অতি ক্ষুদ্র কোন কিছু মানে একটা ছোলার দানা যদি
ছুড়ে দেন তবে তিনি সেটিও তার হাতে থাকা সামুরাই তলোয়ার দিয়ে দুভাগ করে কেটে ফেলবেন
!আর যদি একটি টেনিস বল ৮৬০ km/h গতিতে ছুড়ে মারেন তবে তিনি সেটিও তার তলোয়ার দিয়ে দুভাগ করে ফেলবেন
।অবিশ্বাস্য নয় কি ব্যাপারটা । যেখানে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান রা ১৬০ গ্রাম এর বেশ
বড় একটা বলকে বড় একটা লম্বা চওড়া ব্যাট দিয়ে ১৩০ গতিতে এলেও মিস করে ফেলেন ।
আমাদের দেশের
রাজশাহীর বাঘা উপজেলাতে ÔÔ বাবুল আক্তার ÕÕ নামে একজন ব্যাক্তি আছেন যিনি এক
বসাতে ১৮ কেজি খাসীর মাংশ এবং ১০০ টি মুরগীর ডিম খেতে পারেন । যদিও এখন বয়সের
কারনে তিনি এখন খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন তবুও তার এই খাওয়া রেকর্ড হিসেবে রয়েছে ।
(118)
বাবুল আক্তার
শারিরীক শক্তির
প্রমান হিসেবে ১১ মণ ওজনের কাঠের গুড়ি উঁচু করে বয়ে নিয়ে যাওয়া,এক টানা ১৫-২০
কিলোমিটার দৌড়, একটানা ০৪ ঘণ্টা সাতার কাটার রেকর্ড আছে তার । অসম্ভব শক্তিশালী
খাদক এই মানুষটি ১৯৭৩ সালে জন্ম গ্রহন করেন। উনাকে কি ঠিকমতো কোচ করলে বাংলাদেশ
থেকে গর্ব করার মত একজন কুস্তিগির হতে পারতেন না ?
১৯৭৫ সালের ০৩
রা এপ্রিল। দৈনিক বাংলা নামক একটি জাতীয় পত্রিকাতে একটা খবর ছাপা হয়। খবরটি হল একজন
অদ্ভুত পিশাচ মানুষ কে নিয়ে। নাম তার খলিলুল্লাহ ।
(119)
নরমাংশ খেকো খলিলুল্লাহ
কি করতো সে
জানেন ? দু একদিন পরপরই তার মৃত মানুষের কলিজা অথবা মাংশ খাবার প্রয়োজন হতো ।
মানুষের মাংশ না খেতে পেলে সে পাগল হয়ে যেতো । সব সময় মর্গের পাশে বা নতুন কবরের
পাশে সে অবস্থান করতো । ২০০৫ সালে স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার । কেন মানুষ মানুষখেকো
হয়, এ রকম এক গবেষণাতে দেখা গেছে কুরু নামক একটা রোগের প্রতিরোধী জিন পৃথিবীর প্রায়
সকল মানবজাতি বয়ে বেড়াচ্ছে।কারণ মানুষের মাংশ খেলে কুরু(laughing sickness শেষে সর্বশরীর প্যারালাইসিস)নামক
রোগটি হতে পারে। আর স্বভাবত মানুষের শরীর এমন যে সে যে কাজটি করে সেই কাজ বা
খাদ্যে যদি কোন জীবাণু থাকে তবে মানব শরীর স্বভাবগত কারণে তার এন্টিবডি তৈরি করে।এই
রোগ প্রতিরোধী জিন পাবার কারণে বলা হলো কোন এক সময় সব মানুষ কি মানুষখেকো ছিলো
তাহলে ? ব্যাপারটা রহস্যময় |
(120)
সব জাতিগোষ্ঠী মানুষখেকো হতে পারে কি ? হয়তো অন্য কোন
প্রাণীর মাংশ থেকে হতেও পারে, যেমন গরু থেকে ম্যাডকাউ রোগ, কুরু আর ম্যাডকাউ দুটোর
পরিণতি একই ।
***** বয়স ধরে রাখা বা চিরতরুণ থাকবার জন্য আমরা কত
চেষ্টা না করি ।এন্টি এজিং ক্রিম, এন্টিঅক্সিড্যান্ট হার্বস, প্লাস্টিক সার্জারীসহ
কত কি ট্রাই করি, তাইনা ।কিন্তু বয়স
কিন্তু আমাদের ছেড়ে কথা বলেনা । সময় মত সে ঠিকই মধ্য দুপুরের তেজী সূর্য্যের মত যুবক কে অস্তমিত সূর্য্যের মত ঠান্ডা করে ফেলে ,
আর আগুনের শিখার মত রূপবতী জ্বলন্ত রূপসী ছুড়ি কে পচা চামড়ার বুড়ি করে ফেলতে
কার্পণ্য করেনা ।কিন্তু সিঙ্গাপুর এর চুয়ান্ডো ট্যান (Chuando
Tan) যেন কোন এক যাদু মন্ত্র বলে বয়স কে এক অদৃশ্য শিকলে বেঁধে ফেলেছেন। ২০১৭ তে এসে কে বলবে ওনার বয়স ৫২ বছর ? ৫২
সংখ্যাটাকে কে ওল্টালে হয় ২৫। আমি আবারও বলছি আপনি ৫২ বছর বয়সী চুয়ান্ডোকে দেখলে
ভাববেন ২৫ এর এক যুবক !!!! ২০১৭ এ চুয়ান্ডোর ছবিটা দেখুন –
২০১৭ তে চুয়ান্ডো ট্যান –বয়স ৫২ বছর
(121)
কয়েকজন
সাস্থ্যবিজ্ঞানী চুয়ান্ডোর শরীরের এই বিষ্ময়কর জন্মগত এন্টিএজিং বা বয়স ধরে রাখবার
ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিশেষ কোন ব্যাপার দেখতে পাননি। বিজ্ঞানীরা অথবা
অনুসন্ধিৎসূরা গবেষণাতে পান যেসব তথ্য তা হলো –
০১)তিনি খাবার গ্রহণে বয়সের উপর প্রভাব ফেলে এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলেন , এটা
ব্যতিক্রম কিছুনা , বয়স ধরে রাখা নিয়ে সচেতন মানুষেরা মাত্রই এটা করে থাকেন ।
০২) তিনি কোন প্লাস্টিক সার্জারীর আশ্রয় নেননি ।
০৩) শুধুমাত্র বয়সের ছাপ উনার চুল ও দাড়িতে পড়েছে । তবে সাদা চুল কালো করতে
উনি হেয়ার ডাই মানে হেয়ার কালার ব্যবহার করেন । তবে কি জানেন, বিজ্ঞানীরা
ব্যাতিক্রম কিছু না পেলেও চুয়ান্ডো কিন্তু ব্যাতিক্রম কিছু অবশ্যই বহন করছেন,
বিজ্ঞানীরা আজ হয়তো কিছু পাননি, ভবিষ্যতে হয়তো পাবেন, সেটা হয়তো আমাদের আমৃত্যূ
তরুণ থাকতে সহায়তা করবে ।হয়তো তার নিজের ভিতর গোপন করে রাখা কোন খাদ্যভাস, হয়তো
তার শরীরের ব্যাতিক্রম কোন জেনেটিকস। কারণ
ছাড়া কিছু হয়না এই পৃথিবীতে ।কোনটা আমাদের জানা আর কোনটা হয়তো কোনদিন জানা হয়না। ধরুন
সব মাছে প্রোটিন আছে এটা ধ্রুব সত্য, কিন্তু আলাদা কিছু আছে বলে কোনটা রুই, কোনটা
ইলিশ, কোনটা টাকি মাছ। হাঁস আর মুরগীর ডিম এক রকম হলেও একটা উপাদান এর পার্থ্যকের দুটো ডিম থেকে দু রকম বাচ্চা সৃষ্টি হয়।
******** এবারে আসি দুজন মার্শাল
আর্টিস্ট এর অদ্ভুত ও অতিমানবীয় ক্ষমতার কথাতে । মানব ক্ষমতার
অতিমানবীয় আরো এক দৃষ্টান্ত।
ব্রুস লি(২৭
নভেম্বর ১৯৪০- ২০ জুলাই ১৯৭৩) , মার্শাল আর্ট ফর এভার অনলি লিজেন্ড ।এবার এই
কিংবদন্তীর শারিরীক অসম্ভব কিছু ক্ষমতার কথা জেনে নিই চলুন –
উচ্চতা – ০৫ ফুট ০৭ ইঞ্চি
ওজন -- ৫৮ কেজি – ৬৪
কেজি
(122)
কি মনে হচ্ছে আন্ডারওয়েট রোগা পটকা এই
মানুষটি আর কিই বা করতে পারে বা কতটুকু শক্তিশালীই বা হতে পারে ।
এবার তাহলে
শুনুন –
ব্রুস লি - BRUCE LEE
ব্রুস লি – মুভি ENTER THE DRAGON
##ব্রুস লি ১১৫
থেকে ১২০ কেজি ওজনের একটা মানুষকে পিঠে রেখে ১০ থেকে ২০ বার বুক ডন দিতে পারতেন ।
## শুধু মাত্র নানচাকু ব্যাবহার করে ১৬০০ পাউন্ডের মত বল তৈরি করতে
পারতেন।
## ব্রুস লির
ওজন(৫৮ কেজি ) সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলীর(১০৭-১১৫ কেজি ) অর্ধেক হয়েও
মোহাম্মদ আলীর(৩৫০ পাউন্ড) থেকেও বেশি ওজনের বক্সিং দিতে পারতেন ।
(123)
## ইমফ্লাক্স বা
অল্প যায়গায় অতিরিক্ত শক্তি তত্ব তিনিই তৈরি করেন ।মানে আপনি যে ঘুষি দুই ফুট দুর
থেকে টেনে যা করবেন তার থেকে বেশি উনি করবেন মাত্র ০১ ইঞ্চি দুর থেকে ঘুষি দিয়ে
।একে বলে ০১ ইঞ্চি পাঞ্চ । এই এক ইঞ্চি পাঞ্চ দিয়ে তিনি একজন লোককে ০৫ মিটার
দুরত্বে ছিটকে ফেলতে পারতেন ।
## এক সেকেন্ডে
ছয়টা লাথি মারতে পারতেন ।
## ৯০ কেজি
ওজনের একজন মানুষ যদি আপনি বা আমি যেই
হইনা কেন আর আপনি বা আমি যদি ব্রুস
লির মার্শাল আর্টের স্কিপ সাইডকিক বা লাথি খাই তাহলে
২০(৬০ ফুট বা বর্তমানের ০৬ তলা বিল্ডিং র উচ্চতা সমান দুরত্ব) মিটার দুরে
উড়ে গিয়ে পড়বো ।
## আপনি বা আমি
একবারে কতগুলো পুশআপ দিতে পারবো ১০ বা ২০ বা ৫০ টি ? ব্রুসলি একবারে কোন বিরতি না
নিয়েই ১৫০০ পুশআপ দিতে পারতেন দুই হাতে ভর
দিয়ে !!, আর এক হাতের পুশআপ ৪০০ দিতে পারতেন একবারে, আর আঙুলে ভর দিয়ে পারতেন ২০০ !!।
## ব্রুস লি ১৩৫
কেজি বালির ব্যাগে লাথি দিলে সেটি ১৫ ফুট
উপরে উঠে যাবে ।
## পুরুষদের শারিরীক
সৌষ্ঠবে বর্তমানের শৌখিন শরীরের প্রতি সচেতন যুবকদের জনপ্রিয় সিক্স প্যাক ট্রেন্ড যোগ করেন তিনি ।
## ব্রুস লি টেবিল
টেনিস ব্যাটের সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র নানচাকু দিয়ে মানে নানচাকু ঘুরিয়ে টেবিল
টেনিস খেলে টেবিল টেনিসের ব্যাট হাতে খেলছে এমন যে কোন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় কে
হারিয়ে দিতে পারতেন ।
তাহলে ব্রুস লি
কে সুপারম্যান না বলে সুপারহিউম্যান বলাটাও কম হয়ে
যায়না? !!
**** বাংলার
গর্ব বা আন্তর্জাতিক ব্যুথান গ্রান্ডমাস্টার বা থান্ডার শিনম্যান বা বজ্রমুণি ডঃ
ম্যাক ইউরি –
মুল নাম
আনোয়ারুল কামাল ইউরি। ঝিনাইদহ ক্যাডেটের ছাত্র ছিলেন। প্রাচীন হারিয়ে যাওয়া
মার্শাল আর্ট এর বিদ্যাগুলোকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা ওনার এক বিশেষ অর্জন।দক্ষিন
ভারতের লুপ্ত বিদ্যা ভার্মা কালাই নামে মার্শাল আর্ট যেটাকে ÔÔহিলিং ও কিলিং“ এই দুই কাজেই
ব্যবহার করা যায়।
(124)
প্রাচীন দূর্বল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা
আত্বরক্ষার কাজে এটি ব্যবহার করতো ।চল্লিশটির বেশি ফাইটিং স্টাইলে সমান পারদর্শী
তিনি ।
বাংলার গর্ব ডঃ ম্যাক ইউরি
মূল বিশেষত্ব বা
থান্ডার শিনম্যান উপাধি তাকে এনে দেয় বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ২০১২ সালের ০৭ ই মে
ডিসকভারি চ্যানেলের সুপার হিউম্যান শোডাউন প্রোগ্রামে হাজির হয়ে পায়ের জঙ্ঘাস্থি
দিয়ে তিনটা একত্রিত করা বেসবল ব্যাট ভেঙে ফেলেন ।বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য্য হয়ে পরীক্ষা
করতে গিয়ে আরো আশ্চর্য হয়ে যান। গবেষনাতে বের হয়ে আসে যে তিনি অসম্ভব দ্রুত
মস্তিষ্কের আলফা লেভেলে পৌছে যেতে পারেন এবং পায়ের পেশীর ৯৬% ব্যবহার করতে পারেন,
এবং তাতে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা ২২২০ পাউন্ড শক্তির সমান কারন প্রতিটা হাইগ্রেড
বেসবল ব্যাট ভাঙতে ৭৪০ পাউন্ড শক্তির দরকার!!!!!!! আবারও শ্রদ্ধা বাংলার এই
জীবন্ত কিংবদন্তীকে।
(125)
সালমান শাহ -
অপ্রাসঙ্গিক
হলেও বলি বাংলা ফিল্মের রাজকুমার সালমান
শাহ(১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ -০৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) এর কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। ওনার
কয়েকটি বিস্ময়কর ফ্যাক্ট বলি –
.
সালমান শাহ
##মৃত্যূর ২২
বছর পর ২০১৮ তে এসেও তিনি জীবিত যে কোন নায়কের থেকেও বেশি জনপ্রিয় । তার আগের
নায়কের থেকেও জনপ্রিয় ।দুর ভবিষ্যতেও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়বে বলে মনে হয়না ।
## সালমান শাহ এর
মাত্র ০৩ বছর এর ক্যারিয়ারে ২৭ টি সিনেমার কোনটিই ফ্লপ হয়নি ।সবগুলোই ব্যবসা সফল।
এটা একটা সেই রকম রেকর্ড বিশ্বের যে কোন সিনে হিরোর জন্য।এমনকি যে গুলোর অর্ধেক
অংশের শুটিং মৃত্যুর পর তার ডামি অভিনেতা ব্যবহার করে করা হয়েছে সেগুলোও। সপ্নের
নায়ক, শুধু তুমি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
(126)
## সালমান শাহ এর ইউনিক স্টাইল এখনো ফ্যাশন সচেতনদের জন্য
আইকনিক একটা ব্যাপার । এবং ফ্যাশন গুলো এত বছরেও পুরাতন বা ব্যাকডেটেড হয়নি ।
আপডেটেডই মনে হয় এত বছর পর ।
## উনার আকস্মিক মৃত্যূতে বেশ কজন মেয়ে ভক্তের আত্বহত্যার
খবর পাওয়া যায় । হলিউড বলিউডে বা পৃথিবীর
কোন রোমান্টিক ফিল্মস্টার এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেননি যে তার জন্য কোন
নারীভক্তরা আত্বহত্যা করতে পারে ।
সালমান শাহ এর উপরোক্ত ব্যাপারগুলো থেকে বুঝুন হিপ্নোটিজম
আর স্টারিজম কাকে বলে ?
ÔÔ জেফ থমসন ÕÕ
## ÔÔ টমাস জেফরি থমসন ÕÕ (জন্ম ১৯৫০ অস্ট্রেলিয়া ) ওরফে জেফ থমসন(১৯৭২-১৯৮৫)। এখন পর্য্যন্ত
পাকিস্তানী পেস লিজেন্ড শোয়েব আক্তার কে ধরা হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ গতিস্পন্ন বোলার।
২০০৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে বিশ্বকাপের ম্যাচে
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই রেকর্ড করেন । বলের গতি ছিল ১৬১.৩ কি.মি প্রতি ঘন্টাতে । তবে
একটা বিতর্ক প্রচলিত আছে যে সে সময়ের বিপক্ষদলীয়
কিছু খেলোয়াড় দের মতে এবং অস্ট্রেলিয়ান উইকেট কিপার রডনি মার্শ এর মতে জেফ
থমসন তার ক্যারিয়ারের প্রথম কয়েকবছর ১৭০ থেকে ১৮০ কি.মি গতিতে বল করতে পারতেন !!!!
। তখন বলের গতি পরিমাপক যন্ত্র বা স্পিডগান ছিলোনা বা আবিষ্কৃত হয়নি তখনও ।
জেফ থমসন
(127)
গতির বিষয়টা এখনো বিতর্কিত, তবে ১৯৭৫ এ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সাথে ম্যাচে একটি হাইস্পিড ফটোসনিক ক্যামেরাতে ১৬০.৪৫ গতিতে বল
করেন এটা পরিমাপ করা হয়। স্পিডগান ক্রিকেটে আসতে আসতে ওনার গতি ১৫০ এর ঘরে নেমে
আসে। ফলে ওনার গতির ব্যাপারটা রহস্য বা ক্রিকেটের মিথ হিসেবেই থেকে যায়। তবে ওনার
সময়ে ওনাকে ফেস করা ব্যাটসম্যানেরা অনেকেই ১৭০ গতির ব্যাপারটা স্বীকার করেন।
এবার একবার ভাবুনতো ভিডিও ক্যামেরা বা ফটো তোলার কোন টেকনোলজি না থাকাতে গত মানব
সৃষ্টির শুরু থেকে বিগত ১৮০ বছরের আগ পর্যন্ত কত কিছু আমাদের কাছে অদেখা রইলো, আর
কালের গর্ভে হারিয়ে গেলো, ব্যাপারটা জেফ থমসনের জন্য বললাম না, স্পিডগান না থাকার
জন্য ১৭০ গতির বল যেমন পরিমাপ করে জেফ থমসনের স্বীকৃতি বঞ্চিত থাকা আর ক্যামেরা
আবিষ্কার না হওয়ায় বিগত ১৮০০ বছরের আগের ইতিহাসের সরাসরি ভিডিও না থাকবার ভিতর
একটা আফসোস আছে সেটাই বললাম। মানে ১৮০০ সাল এর প্রথমদিক পর্য্যন্ত যত ইতিহাস তা লিখিত ও হাতে অঙ্কিত।
ক্যামেরা দ্বারা তোলা ও ভিডিও করা ১০০% নিখুত বা প্রমাণিত দলিল নেই ।ক্যামেরার ইতিহাসটা
যদি বলি সেটাও বিস্ময়কর। ১০২১ সালে ইরাকী বিজ্ঞানী ইবন আল হাইসাম তার বুক অফ
অপটিকস এ ক্যামেরার একটা নকশা ও কার্যাদীর আইডিয়া দেন। হালাকু খানের বাগদাদ
আক্রমণের কারনে হোক আর মুসলিম জাতির জ্ঞান বিজ্ঞানের থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারনে
হোক ওনার এই আইডিয়া পরবর্তীতে মুসলিম জাতি কাজে লাগাতে পারেনি এবং এই প্রচেষ্টাও আর এগোয়নি। যেমন হিন্দু পুরাণ বা
মহাভারতের ইতিহাসে বিমানা নামে হারিয়ে যাওয়া একটা চ্যাপ্টার এর কথা বলা হয় । যেটা
নাকি বর্তমানের বিমান বা উড়োজাহাজ তৈরির ফর্মুলায়। আসলে আধুনিক আবিষ্কার কয়েকহাজার
বছর আগেই হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো নির্দিষ্ট দল বা সংঘের হাত থেকে এসে সার্বজনীন
হতে এত সময় লেগে গেলো। তবে মিথোলজির এই সুত্র ধরে একজন ভারতীয় শিবকর তলপেড়ে ১৮৯৫ সালে
নাকি আবিষ্কারের কাছে পৌছে গেছিলেন। তার ৪৭ বছর আগে জন স্ট্রিংফেলোও একই কাজ করেন।
(128)
তবে ১৯০৩ সালে
রাইট ভ্রাতৃদ্বয় চুড়ান্তভাবে এটা আবিষ্কার করে ফেলেন মনুষ্য আরোহণ সহ। বলা হয় রাইট
ভ্রাতৃদ্বয়ের পূর্বের দুজন উপযুক্ত আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সফল হননি, যেটা রাইট
ভ্রাতৃদ্বয় পেয়েছিলেন। ফিরে আসি ক্যামেরার ব্যাপারে।
১৬৮৫ সালে জোহান জ্যান নামে একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ক্যামেরার একটা ডিজাইন তৈরি
করেন । জোসেফ নাইসফোর নিপসে ১৮১৪ সালে ক্যামেরার প্রথম ক্লিকটি করেন ।
আশ্চর্য, বিষ্ময়,
গুপ্তবিদ্যা(কারো না কারো হাতে আবিষ্কৃত বিদ্যা অথবা
বিজ্ঞান যেটার নিয়ন্ত্রন সাধারণের হাতে আসেনি বা যে বিদ্যার সুবিধা সাধারণের জন্য
উন্মুক্ত হয়নি , এর অধিকাংশই পদার্থবিদ্যা , রসায়ন , বিশেষ পাউয়ারফুল কিছু ধ্বনি শব্দ বা ম্যাজিক স্পেল এর অজানা সব অধ্যায় ছাড়া আর কিছু নয়), অলৌকিক
আর ভৌতিক ব্যাপারটা বোধ হয় অনেকটা এরকম রহস্যময় আর
প্রাগৈতিহাসিক ।
হয় ধরুন আপনি শুনলেন
অমুক রাস্তাটা হন্টেড, ওই রাস্তায় কেউ খুন হয়েছিল, অমুক বাঁওড়ে, অমুক মাঠে, অমুক জঙ্গলে এটা দেখা যায় সেটা দেখা যায়, এই ভয়ে ওই রাস্তাতে চলেনা কেউ, পুলিশ অনেক
তদন্ত করে দেখলো, খুনটা ক্লুলেস । এসব শোনা যায় প্রচলিত ভৌতিক কাহিনীগুলোতে ।হঠাৎ শুনলেন কোন বাচ্চাকে হঠাৎ করে পাওয়া
যাচ্ছেনা ।আপাত দৃষ্টিতে এগুলো মানুষের কাছে ভয়ানক
ব্যাপার এবং একটা সময় এগুলো কোন এলাকাকে ভয়ের বানিয়ে ফেলে।দেখা যায় যে এসব ঘটনার
কারনে আমরা কোন একটা এলাকাকে হন্টেড ভেবে বসি, সন্ধ্যার পর সেখান দিয়ে লোকজন চলাচল
করিনা, নানা কেচ্ছা কাহিনী শোনা যায় সেই যায়গা গুলো নিয়ে ।শুধু শুধু ভয় না পেয়ে
আমরা কিন্তু কেউ সাহস করে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখিনা ।ভাল মত তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে
এগুলো হয়তো ওই এলাকা বাবহারকারী কোন স্বার্থান্বেষী লোকের একটা সিন ক্রিয়েশন মাত্র।যেমন
বেশ কয়েক বছর আগে আসামের কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে সন্ধ্যার পর ভুত দেখা যেতে লাগলো
।গ্রামের পাশ দিয়ে ছোটখাটো একটা জঙ্গল আছে ।
(129)
সেই জঙ্গল পার
হয়ে আবার একটা রেল স্টেশন আছে ।প্রতিদিন সন্ধ্যার পর
যে লোক ই বাইরে যায় সেই লোকই ভুত দেখে ।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর জঙ্গল আর রেল
রাস্তার পাশ দিয়ে তো যাওয়া যায়না বললেই চলে ।গ্রামবাসীরা তো
ভয়ে আতঙ্কে সন্ধ্যার পর বাইরে যাওয়া বন্ধ করেই দিল ।অতি উৎসাহী কিছু যুবক ব্যাপারটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আর কিছুটা ভয়ের মিশেলে
অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠলো ।কয়েকদিন ব্যাপারটা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে
দেখা গেলো তাদের সাথেও বিভিন্ন রহস্যময় ব্যাপার ঘটছে ।প্রকৃত অর্থেই আতঙ্কিত হয়ে তারা পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হলো।পুলিশের কয়েক সপ্তাহ তদন্তে আর কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণের ফলে দেখা গেলো
সবই সন্দেহজনক ব্যাপারস্যাপার । ফলশ্রুতিতে থলের বিড়াল
বেরিয়ে এলো, ধরা পরলো কয়েকজন কালপ্রিট যারা গ্রামের ওই জঙ্গল আর রেলওয়ের সাইড টার
নির্জনতার সুযোগ নিয়ে মাদক চোরাচালান করতো
আর মাদক চোরাচালান এঁর যায়গাটা সংরক্ষিত রাখতেই এই ভুতের নাটক ।তাহলে কি বঝা যায়, যে ভুত বলে কিছু নেই ? মনে হয় না, ভুত অবশ্যই আছে, সেটা ভুত
বলেন, অতি প্রাকৃত বলেন, অবচেতন মনের হালুসিনেসন বলেন আর যাই বলেন ভুত বলে কিছু
অবশ্যই হয়।কেউ হয়তো দেখে, কেউ জীবনে কখনো দেখেনা।আর ভুতের অস্তিত্ব কেউ শিকার করুক
আর নাই করুক জ্বীন বলে একটা জিনিস যে আছে এটা আমাদের মুসলমান ধর্ম সহ প্রাচীন বিভিন্ন
দেশের সাহিত্যে গ্রন্থে জ্বীনের উল্লেখ
আছে।জ্বীন হল অদৃশ্য একটা জাতি।যারা মানবজাতিকে দেখতে পায় কিন্তু মানুষেরা তাদের
দেখতে পায়না।জ্বীন আগুনের তৈরি।এরা মুহূর্তে চোখের পলকে হাজার মাইল পথ অতিক্রম
করতে পারে , যে কোন পশুপাখির রুপ ধারণ করতে পারে ।
(130)
প্রাচীন বিভিন্ন জাতিতে রহস্যময় আকৃতি হতে পারে বিখ্যাত মানুষ বা জ্বীন বা (126)
অপদেবতা বিশ্বাস এর প্রতিকৃতি
(131)
প্রাচীন বিভিন্ন জাতিতে রহস্যময় আকৃতি হতে পারে বিখ্যাত মানুষ বা জ্বীন বা অপদেবতা বিশ্বাস এর প্রতিকৃতি -২
(132)
মানব জাতি সৃষ্টির পূর্বে জ্বীনদের
সৃষ্টি । জ্বীনরা বৃদ্ধ বয়সে পুনরায় যুবক
বয়সের শুরুতে ফিরে আসে ।বলা হয়ে থাকে সাপ এবং কুকুর একপ্রকার জ্বীন ।প্রাপ্ত বয়স্ক
হতে মানুষের লাগে ২৫ বছর আর জীনদের লাগে ৩০০ বছর ।মোটামুটি একটা হিসাব করলে দাড়ায়
যে জ্বীনরা মানুষের থেকে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে কয়েক লক্ষ বছর এগিয়ে। তথা কথিত
এলিয়েন হয়তো এই জ্বীনেরাই ।জ্বীন দেখার মত বিজ্ঞান এর জ্ঞান অর্জন করতে মানব
সভ্যতার আরো অনেক বছর লেগে যাবার কথা। হযরত সুলাইমান আঃ এর সেনা বাহিনীতে জ্বীন ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায় এবং
জ্বীন জাতি হযরত সুলাইমান আঃ বশীভূত ছিল বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনের
সুরা জ্বীন এ জ্বীন জাতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে। আমাদের
পিছনে লেগে থাকে বা সঙ্গী হয়ে থাকে এমন জ্বীন কে বলা হয় কারিন নামক জ্বীন।এরা সবসময়
আমাদের কে নিয়ে খারাপ বা নিষিদ্ধ কাজ গুলো করতে ওয়াসওয়াসা দেয় । নাম ভেদে মারিদ,
সিলা, ঘুল, ইফ্রিদ, খাঞ্জাব, অলহান
বিভিন্ন প্রকার জ্বীন রয়েছে । জ্বীন থাকে একটা ভিন্ন ডাইমেন্সনে। পথে ঘাটে হাটে
মাঠে আমরা যত মানুষ দেখি তারা সবাই আমাদের পরিচিত নয়। এর ভিতর কে কি, কার কি নাম,
কোথায় যাবে আমরা কেউ জানিনা পথে চলতে গেলে একজন মানুষ সম্বন্ধে। সেই সুযোগটা নিয়ে
আমাদের সাথেই জ্বীনদের চলে ফিরে বেড়ানো বিচিত্র কিছু নয়। জ্বীন দের অস্তিত্ব
প্রমানের জন্য কার্যকরী কোন তত্ত্ব না পাওয়া গেলেও দিন দিন এন্টিম্যাটার এর ধারনা
যত প্রগাঢ় হচ্ছে তত বেশি ভাবে জ্বীনদের অস্তিত্ব এর সপক্ষে প্রমান
মিলছে। পার্টিকেল ফিজিক্স এ এন্টিম্যাটার এর ধারনা প্রতিপদার্থের ধারনাতে রুপ
নিয়েছে ।ডায়নামো বা ক্রিস অ্যাঞ্জেল এর যাদু দেখলে আপনি বুঝবেন কালযাদু বলে কিছু
একটা আছে, প্রচলিত স্টেজ ম্যাজিক নয় এগুলো, কোন ট্রিক্স থাকবার প্রশ্নই আসেনা
তাদের যাদুতে, ডায়নামোর কয়েকটা যাদুর কথা বলি, হাজার হাজার মানুষের সামনে টেমস
নদীর উপর দিয়ে হেটে যাওয়া, অন্তত ৫০ জন লোকের সামনে খোলা মাঠে খালি বালতি থেকে
অনবরত মাছ বর্ষণ, জিম এ গিয়ে তার শরীর এবং তার থেকে ১০ গুন শক্তিশালী ও কয়েকগুণ
বেশি আয়তনের বডিবিল্ডার দের থেকেও বেশি ভার অনায়াসে তোলা যেটা এককথাতে ট্রিক্স
ব্যবহার অসম্ভব ।
(133)
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে এনারা যদি এত
ক্ষমতাবান হন তবে পৃথিবীতে এত অভাব, অভিযোগ বা যুদ্ধ কি এনারা ম্যাজিক করে দূর করে
দিতে পারতেন না, অভাবী লোকেদের ঘরে ঘরে গিয়ে কি এনারা পারতেন না তাদের অভাব দূর
করে দিতে? জগতের কল্যাণ করতে? না ইচ্ছা থাকলেও তা পারবেননা, কারন অনেকগুলো হতে
পারে ০১ নং কারন হতে পারে – জোরদার ভাবে বলা হয় এনারা
প্রাচীন সেই সব গুপ্তবিদ্যার উচ্চস্তরের সাধক, যে সাধনা গুলো শয়তানের উপাসনার
মাধ্যমে প্রাপ্তি ঘটে, সকল ধর্ম মতে শয়তান মানবজাতির ভালো চাইবেনা, শুধু মাত্র তার
উপাসনার খাতিরে তার সাধকদের এইসব ক্ষমতা সে দিয়ে থাকে, যেটা দিয়ে নিজের আরাম আয়েশ
ও বিলাসবহুল জীবনের জন্য ম্যাজিক দেখাতে পারে, নিজেকে বিস্ময় হিসেবে অমর করে রাখতে
পারে, কিন্তু পৃথিবীতে স্রষ্ঠার সাথে শয়তানের প্রতিজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে যায় এমন কিছু
তার সাধক কে সে করতে দেবেনা , একটু অনিয়মে সাধকের মৃত্যু হতে পারে , সুতরাং
মানুষের প্রবৃত্তি হল পাঁচ জনের কল্যাণ করতে গিয়ে যদি নিজেকে বিপদে পড়তে হয় নিজের
ক্ষতি হয় তার থেকে যদি নিজের কর্মে নিজে ভালো থাকা যায় সেটাই ভালো, এরকম হতে পারে
, দেখুন আর একটা বাস্তব উদাহরণ দিই, আমাদের সমাজে এমন ধনী মানুষ আছে যারা ০৭ পুরুষ
বসে খাবার মত ধনসম্পদ সঞ্চয় করে ফেলেছে, কিন্তু মানুষের উপকার বা এলাকার উন্নয়ন
কিছুই করেনা কেন ? যাদুকর দের ব্যাপার টাও সেরকম, তারা যাদের কাছ থেকে ক্ষমতা পায়
তাদের নিষেধাজ্ঞা থাকে, আবার তারা যে জ্বীন বা শয়তানের কাছ থেকে ক্ষমতা পায় তাদের
ও আছে পরিবেশ এবং কাল ভেদে সীমাবদ্ধতা । এসব কারনে যাদুকর রা ক্ষমতা থাকলেও সবকিছু
করতে পারেনা । আপনারা হয়তো বলবেন এসব যদি সত্য হয় তবে জ্যোতিষী সবার ভবিষ্যৎ বলতে
পারে, কিন্তু নিজের ঘরে আগুন লাগবে কবে সেটা জানেনা কেন ? কাওকে হেয় করতে এটাই
কিন্তু একমাত্র প্রশ্ন নয়, কয়েকটি প্রশ্ন রাখি, একজন চিকিৎসক তো সারা জীবন অন্যের
চিকিৎসা করে বেড়ান, কিন্তু নিজে রোগাক্রান্ত হলে তাকে অন্য চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে
হয় কেন, একজন রাজমিস্ত্রি ,
(134)
সারা জীবন অন্যের ০৫ তলা বিল্ডিং তৈরি
করে দেয়, কিন্তু নিজে ০৫ তলা বিল্ডিং নির্মান এর সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনা, একজন
নাপিত বা নরসুন্দর কত সুন্দর করে কতজনের চুল কাটে, কিন্তু নিজের চুল কাটতে অন্য
নাপিতের কাছে যেতে হয় , শিক্ষকদের উপর সমান শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, শিক্ষকদের ছোট
করতে নয় একজন শিক্ষক এর কত ছাত্রই তো শিক্ষকের থেকে কম জ্ঞান নিয়ে বড় বড় পেশা বা
ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হয় তার ছাত্ররা, কিন্তু তিনি শিক্ষক এত কিছু জেনেও কেন
ছাত্রদের মত বড় পেশাতে যেতে পারেননি ? সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীরা কত দম্পতির বা
প্রেমিক যুগলের সুখী ও রোমান্স জীবনের অনুপ্রেরণা, কিন্তু দেখা যায় নিজের জীবনে
নিঃসঙ্গ ও রোমান্সবিহীন জীবন কাটাতে হয় তাদের, এ জন্য কারো ক্ষমতার স্বল্পতা বা
সীমাবদ্ধতা জেনে তাকে হেয় করা ঠিক নয়, মনে চাইলেই সব প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়া
যায়না ।সব নেই মানে নেই নয়, সব হ্যা মানে হ্যা নয় ।
কেউ কেউ জ্বীন জাতিকে
তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ দ্বারা ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করে থাকেন । উল্লেখ আছে যে
কুকুর, উট, গাধা এরা নাকি জ্বীনদের দেখতে পারে । মানুষ যেমন মাটির তৈরি হলেও তার
ভিতর আগুন, পানি, বাতাস এর ও সংমিশ্রণ আছে
তেমনি জ্বীন আগুনের তৈরি হলেও জ্বীন এর
ভিতর জলীয় বস্তুর সংমিশ্রণ লক্ষণীয় । জ্বীন আমরা যেমন অতিমানবীয় মনে করি তা নয়,
তাদের ও সীমাবদ্ধতা আছে জ্বীন বিশেষজ্ঞদের মতে । বিশেষ করে লোহা, বিদ্যুৎ,
বজ্রপাত, কিছু দোয়া কালাম বা মন্ত্র, লেবু, বৃষ্টির সময় আয়নাইজেশন এরকম কিছু জিনিস
প্রতিরোধ করে চলা নাকি জ্বীনদের জন্য সো টাফ ।
পবিত্র কুরআনের সুরা জ্বীন এর আয়াত ০১ এ
বলা হয়েছে বলুন আমার প্রতি অহি নাজিল করা হয়েছে যে , জ্বীনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে , অতঃপর তারা বলেছে আমরা
বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি । জ্বীনের আক্রমন থেকে নিরাপদ থাকার জন্য
আয়াতুল কুরসি এবং সুরা নাস এর কথা বলা আছে । এতক্ষন যে গুলো বলা হল জ্বীন সম্বন্ধে
দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বই , মনিষীদের কথা এবং তথ্য উপাত্ত থেকে নেওয়া ।
(135)
আর ভুত এর
ব্যাপারটা একটু ভিন্ন ভুত বলতে সাধারনত বুঝি এমন কোন মানুষের রুপধারী কোন জিনিস বা
সৃষ্টি যে কিনা কোন মানুষ মারা গেলে সেই মরা মানুষ টা যদি কারো সামনে দেখা দেয়
সেটা হল প্রচলিত ভাষাতে ভুত ।আপনার বাসাতে একটা উঠান আছে সেখানে একটা গাছ আছে, আর
সেই গাছে আপনি রাতে দেখলেন একটা সাদা বা কালো কাপড় পরা কেউ বসে আছে । আপনাকে দেখে
রক্তাত্ত মুখে বিকৃত অথচ নিঃশব্দ একটা হাসি দিল, আপনি বাড়িতে একা, আবার হতে পারে
আপনি ধরুন বাড়িতে একা, রাতে বাথরুমে গেলেন, বাথরুমের আয়নাতে তাকাতেই দেখলেন আপনার
মত একজন বেশ রক্ত চোখে আপনার দিকে আয়নার ভিতর থেকে তাকিয়ে আছে, এই আয়নাতে ভুত দেখার
ব্যাপারটা নিয়ে দুটো মিথ আছে, ১ম টা হল ব্লাডি
মেরি- ১৫৫৩ সালের ইংল্যান্ডের রানি
মেরি টিউডরই ছিলেন ব্লাডি মেরি, যিনি রাজা ফিলিপের স্ত্রী ছিলেন তখন,
ক্ষমতার প্রভাবে তিনি প্রটেস্টাণ্ট দের পুড়িয়ে হত্যা করতেন, তার কোন সন্তান না
হওয়াতে এবং দু বার মৃত সন্তান হওয়াতে তাকে রাজা ফিলিপ ত্যাগ করেন ।হতাশা তে তিনি
১৫৫৮ সালের নভেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন ব্লাডি মেরি । তার নিষ্ঠুরতার কারনে নাম হয়
ব্লাডি মেরি ।মেরির মৃতূ্যর পর থেকে জন্ম হয় এই মিথের যে একাকী অন্ধকার ঘরে গভীর
রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে তিনবার ব্লাডি মেরি বললে চোখ দিয়ে রক্ত
পড়ছে এ রকম একজন মহিলা হাজির হয়, অনেক সময় আয়নার সামনের লোকটিকে হত্যাও করে ।ব্লাডি
মেরির এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে গিয়ে অনেকে
মৃত্যূবরণ করেছে । আর একটা প্রচলিত মিথ হলো রাত বারোটার পর থেকে আয়নাতে তাকানো ঠিক
নয় । এতে অদৃশ্য জ্বীন বা শয়তান প্রবেশ করে । ভুত নিয়ে আসলে আমরা চিরটি কাল এ রকম
অনেক কিছু শুনে আসছি। সত্যি হোক আর মিথ্যা হোক এগুলো আমাদের সমাজে সহ বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে আবহমান কাল থেকে একা বাড়িতে, একা পথে চলতে আমাদের মনে স্থান দখল করে
নিয়েছে, সমৃদ্ধ করেছে হরর সিনেমা, ভৌতিক সাহিত্য, বাচ্চাদের বিছানাতে শুয়ে নানী – দাদীদের কাছে ভুতের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে দুর্দান্ত সেই স্মৃতির
যায়গাটা । কোথাও আবার মৃত আত্বা আহবানে প্ল্যানচেট নামক একটি বিতর্কিত
পদ্ধতির আশ্রয় নেয়ার কথা শুনতে পাওয়া যায় ।রহস্যময় জিনিসগুলো ভুল বিশ্বাস করলাম
কিন্তু এগুলো তারপরেও মানুষের মাঝ থেকে বিলুপ্ত হচ্ছেনা ।
(136)
এ নিয়ে বেশি
তর্ক না করে না হয় বললাম ভুত বলে কিছু নেই, আর একা বাড়িতে বা অন্ধকারে ভুতের কথা
ভেবে একটু ভয় ভয় ফ্লেভার না হয় নিলাম তাতে কি আর এত মহাভারত অশুদ্ধ হবে বলি!!
। ভৌতিক মানে শুধু অদৃশ্য
ভূত নয় , বাস্তব অস্তিত্বের মানুষের দ্বারা করা ক্লুলেস বিকৃত কাজও তো ভৌতিক বলা
যায় , ভূত মানে বাস্তব আর অবাস্তবের ক্লুলেস কাজ ।মানুষের মনের বিকৃত বা নিষ্ঠুর
দিকের থেকে ভয়ংকর ভূত আর নেই ।আবার মিথ্যা
বললে সব মিথ্যা হয়ে যায়না ।আসলে আসল ঘটনাটার রহস্য প্রায়শ ঘটনার ক্ষেত্রে জানা
হয়না আমাদের ।আমাদের জীবনটা খুব ছোট ।আমাদের সবার জীবনটা যায় রুটি রুজির চিন্তা আর ভবিষ্যতের যোগাড় যন্ত্রতে
।আমরা ঘরে বসে বই পড়ে বলে ফেলেছি অনেক কিছু নেই।আমাদের এই টুকু মানব জীবন, মাত্র
৬০-৭০ বছরের জীবন মাত্র। তার ভিতর কোন নিশ্চয়তা নেই যে আপনি বেঁচে থাকবেন, যখন তখন
আপনি আমি যে কোন দুর্ঘটনাতে বা অসুস্থতাতে আমরা অকালে মারা যেতে পারি। কি দেখা যায় এই টুকু জীবনে, কি
দেখেছি আমরা ।আমরা যা বলি, যা নিয়ে অহংকার করি সবই ঘরে বসে, আরামদায়ক বিছানাতে
শুয়ে শুয়ে ।জীবন এবং জীবনের ভয়াবহতা আমরা দেখিনি ।আপনি কখনো পাথর ফাটা রোদ দেখেছেন
? আপনি শুয়ে আছেন, হঠাৎ আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, বুকের উপর দিয়ে দেখলেন বিষধর একটা
সাপ বেয়ে অন্য কোন দিকে চলে গেলো, আপনি
কখনো মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে দেখেছেন যে মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে জীবনটা কত
অমূল্য মনে হয়, ধরুন আপনি একটা জাহাজে করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছেন,
সমুদ্রের মাঝামাঝি এসে পড়েছে আপনাদের জাহাজ, যেখান থেকে ডাঙ্গা বা স্থলভাগ অন্তত কম
করে হলেও ২০০ মাইল দূরে, হঠাৎ প্রলয়ঙ্করী একটা ঝড়
উঠলো সমুদ্রে, আপনাকে বহনকারী জাহাজটি ডুবে গেলো, আপনি একাই বেঁচে রইলেন,
আপনার হাতে কোন একটা অবলম্বন সম্বল করে আপনি পানিতে ভেসে রয়েছেন, হতে পারে সেটা
একটা কাঠ এর টুকরা বা যে কোন কিছু , ৫০০ মাইল এর বিস্তৃত কুল কিনারা বিহীন
সমুদ্রের উত্তাল জলরাশির ভিতর সামান্য চাঁদের আলোময় রাতে আপনি একা ভেসে রয়েছেন, বাঁচবেন
কিনা সে নিশ্চয়তা নেই আপনার, ২০০০ ফুট গভীর জলরাশি, অসংখা হিংস্র জলজ প্রানিতে
পরিপূর্ণ, তাহলে আপনার তখন কি অনুভূতি হতে পারে, কখনো হাজার মাইল এর ধুধু মরুভুমিতে
ভ্রমণকারী হিসেবে গিয়ে দেখেছেন|
(137)
পানির পিপাসাতে ছুটোছুটি করে দেখেছেন,
সেই পানি যার উপর নির্ভর করছে আপনার জীবন, কখনো যুদ্ধের ভয়াবহতা কি জিনিস একবার
বিছানাতে শুয়ে ভেবে দেখেছেন, আপনি কখনো যুদ্ধ পরিস্থিতি বা যুদ্ধের ভিতর জীবন
অতিবাহিত করেছেন ? আপনি কি ১ম বিশ্বযুদ্ধ বা ২য় বিশ্বযুদ্ধ এর ভিতর দিয়ে জীবন
অতিবাহিত করে দেখেছেন ? বা ১৯৭১ এর যুদ্ধের ভিতর টাইম মেশিনে যাওয়া সম্ভব হলে যদি
বিভীষিকা নিজ অভিজ্ঞতাতে দেখতে পেতেন বা ভুক্তভোগী হতেন তাহলে কি হতে পারতো একবার
কল্পনা করুন তো ? মানুষ নামে হায়েনারা তো গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়, নির্বিচারে
লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করতো, জাহান্নামেও এতটা বিভীষিকা আছে কিনা আমাদের জানা নেই
যতটা বিভীষিকা একটা যুদ্ধ ক্ষেত্রে বা যুদ্ধের দেশে সংঘটিত হয় ।দুইতি বিশ্বযুদ্ধ
মিলে ১৫ কোটি প্রানহানি, কলিঙ্গ যুদ্ধে ০১
লক্ষ লোক এর মৃত্যু, ইরাকে হালাকু খানের অভিযানে ২০ লাখ লোকের মৃত্যু, ১৯৭১ এ আমাদের
দেশের ৩০ লাখ লোকের মৃত্যু, এ গুলো কি সোজা কথা মনে হচ্ছে? এরকম অভিশাপ যে দেশের উপর
পড়বে তারা কি বিভীষিকা দেখেনি, সর্বক্ষণ ঘাড়ের উপর মৃত্যু দূতের নিশ্বাস, এবার কার
পালা আসে এরকম একটা বোধ, ক্ষুধা তৃষ্ণা, ঘুমানোর যায়গার অভাব, ঝড় বৃষ্টিতে ভেজা,
শরণার্থী শিবিরের মহা মানবেতর জীবন যাপন, নিজের চোখের সামনে আপনজনদের হারানোর
চিরবেদনার স্মৃতি, নারীর অস্মমান কি দেখেনি তারা ।একবার বর্তমানের ইরাক বা সিরিয়ার
মত দেশের নাগরিক, বা মায়ানমারের রোহিঙ্গা হিসেবে নিজেকে গভীরভাবে ভাবুন নিজেকে, কল্পনা করলে তো আর মারা যাবেন না , জীবনে কত সময়
তো আমরা বাজে কাজে নষ্ট করলাম, এরকম একটা ভাবনা বা কল্পনা করে না হয় ১০ মিনিট সময়
অপচয় করলেন। এভাবে একটু ভেবে না দেখলে আসল ব্যাপারটা প্রকৃত উপলব্ধি করতে পারবেন
না বলেই কল্পনা করতে বললাম। তা না হলে তো ৭১ এর পাকিস্তানিদের টর্চারিং সেল, নাৎসী
হিটলারের টর্চারিং সেল বা কোরিয়ার টর্চার সেল বা আবু গারিব কারাগারের নৃশংস টর্চার
সেলের নৃশংস কায়দায় মানুষ মারার বর্ণনা দিতে পারতাম, বা নারী নির্যাতনের গল্প গুলো
ও বেশ রসালো কায়দাতে লিখতে পারতাম|| স্বর্গ-নরক-রাক্ষস-পিশাচ-দানব সবই মানুষের মাঝে । ।রূপকথার চরিত্র নয় , মানুষ
ও তার কর্মের ভিন্ন রূপ এগুলো ।
(138)
কিন্তু যুদ্ধপরিস্থিতির হত্যা ও নারী
নির্যাতনের বর্ননা পড়বার থেকে যদি কল্পনা করেন তবে যুদ্ধে মৃত মানুষগুলো ও
সম্ভ্রমহারা নারী দের প্রতি আপনি ন্যাচারালি যে একটা মনোকষ্ট ও মায়া অনুভব করবেন
এবং অত্যাচারীদের প্রতি যে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন সেটা কোন দেশ ও জাতির গন্ডি মানবেনা।
মানুষ ও মানবতাই আপনার কাছে মুখ্য হয়ে দাড়াবে। মহাকাল তার আপন গতিতে অতিবাহিত হয়ে
যাবে, কিন্তু কোনদিন কেউ এই নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মানুষ গুলোকে জানবেও না, যার মনে
মানবতা আছে তার মন এই সব নির্মম অতীতকে স্মরণ করে কেঁদে উঠবে , অত্যাচারী ও
হত্যাকারীদের শত শত বছর ধরে অভিশাপ দিয়ে আসবে । আবার দেখুন পৃথিবীর বিচার কেমন কারো
পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ টাইপ এর বিচার। মানুষের বিচারে ভালো মন্দ টা ও
আপেক্ষিকতা তত্ত্ব মেনে চলে । ধরুন যে দেশের সৈন্যরা আক্রমন করে তারা যুদ্ধে
বীরত্বের স্বরুপ মেডেল সহ বিভিন্ন বীরত্ব সুচক সম্মাননা পেয়ে থাকেন। কিন্তু
আক্রমণকারী দেশের সৈন্যরা অযথা নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার সহ মানবতাবিরোধী
কর্মকান্ড সংঘটিত করবার পরেও তখন সে দেশের শাসক এবং জনগোষ্ঠী নারী পুরুষ
নির্বিশেষে তাদের ই বাপ ভাই ছেলেদের নিষ্ঠুর সব কাজগুলোকে কে নিয়ে গর্ববোধ করে, বীর বলে সম্মান করে। তাদের মানবতা
বোধ থাকে সম্পুর্ন শূণ্য। আমরা মানুষেরা এমন প্রবৃত্তির অধিকারী হই যে নিজের
বেলাতে যেটা অন্যায় অন্যের বেলাতে সেটাকে নিজের স্বার্থে অন্যায় বলিনা ।আমি যদি
নকল করে পাশ করি সেটাকে আমি নিজের চালাকি বলে মনে করি, নিজের ক্রেডিট অথবা সুবিধা
হিসেবে নিই, কিন্তু অন্য কাউকে নকল করে পাশ করার কথা শুনলে চোর নকলবাজ কতকিছু বলি,
যুদ্ধে আক্রমণকারী দেশের সৈন্যরা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলতে বিভিন্ন কায়দাতে জ্বালাও-পোড়াও
–ধ্বংশযজ্ঞ, নরহত্যা ও নারী নির্যাতন-সম্ভ্রমহানী
করে থাকে। আবার নির্যাতিত দেশের মুক্তিকামী মানুষদের কাছে আক্রমণকারী দেশের সৈনিক
দের কার্যক্রম হায়েনার থাবা, হানাদারের তান্ডব, নরপিশাচ বাহিনী কত কিছু নামে
অভিহিত হয়। তাহলে দেখুন কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ, এক দেশের গালি এক দেশের বুলি,
পৃথিবীটাই আপেক্ষিকতার খেলা ।
(139)
পৃথিবীর আপনার
কোন ভাই একদিন বাড়ি থেকে বের হল বা বাবা বাড়ি থেকে বের হল, কোন এক দুর্ঘটনাতে তিনি
নিখোঁজ হয়ে গেলেন , দিন যায় বছর যায় তিনি আর ফেরেননি, একবার যদি বাবা বা ভাইয়ের
দেখা পায় এটা ভাবতে আর এই আশাতে দিন অতিবাহিত করতে করতে একদিন আপনি বার্ধক্যে
উপনীত হলেন, আবার কোনদিন হয়তো আপনার সদ্যপ্রসূত নবজাতক ছেলে বা মেয়ে সন্তান টি
হাসপাতাল থেকে হারিয়ে গেলো, সন্তানটি হয়তো কার না কারো ঘরে মানুষ হবে, কিন্তু সারা
জীবন আপনার কি হবে জানেন ! আপনার যা হবে তা হল, আপনার সামনে আপনার সেই হারিয়ে
যাওয়া সন্তানটির বয়সের পৃথিবীর যে ছেলে বা মেয়েটি দাঁড়াবে তার ভিতর আপনি আপনার
হারিয়ে যাওয়া সন্তানটির ছায়া খুজে পাবেন। আজীবন এই হাহাকার নিয়ে আপনাকে চলতে হবে। জীবন
আপনাকে বা আমাকে এরকম পরিস্থিতি গুলোতে যা শেখাবে বা সারাজীবন বুকে একটা অব্যক্ত
যে কষ্টের যন্ত্রনা দিয়ে রাখবে সেটা অন্য কেউ বা কিছু বা পৃথিবীর কোন শিক্ষক বা বই
আপনাকে শেখাতে বা উপলব্ধি করাতে পারবেনা, অন্য কেউ সেটা আপনার মত করে উপলব্ধি করতে
পারবেনা। ভয়াবহ ভুমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ মরতে দেখেছেন কখনো ।আপনি সুস্থ ভাবে আপনার পরিবার সহ ঘুমিয়ে আছেন এমন সময় ভূমিকম্পে বিল্ডিঙের
নিচে চাপা পড়ে মারা যেতে পারেন এটা ভেবে কখনো কি ঘূমাতে যান, ভূমিকম্পের তো কোন
পূর্বাভাস নেই, এরকম কয়েকটা ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, আর ভূমিকম্প এমন একটা দূর্যোগ যে আপনি পালাতেই
পারবেননা , মানুষের জীবনকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয় এই দুর্যোগটি । ভূমিকম্প ০৪ থেকে
০৫ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয়না । তাহলে আমরা বেঁচে যাচ্ছি কি করে ? বলা যায়
আল্লাহর রহমত আর ভুমিকম্পের মাত্রা কম থাকে বলে । ০৬-০৭ মাত্রার একটা ভুমিকম্প ০৫
সেকেন্ড হলে আমাদের বিল্ডিং এর নিচে চাপা পড়বার জন্য ভাবতে হবেনা । ০৫ সেকেন্ড
স্থায়ী একটা ভুমিকম্প(খোদা না করুন ) ঢাকা শহর কে ০১ কোটি মানুষের মৃত্যুপুরী
বানাতে পারে , যদি সেটা হয় ০৭ মাত্রার ভুমিকম্প, আর ভুমিকম্প এমন একটা দুর্যোগ যে
আপনি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া বাঁচতে পারবেননা|
(140)
কারন ০৫ সেকেন্ড আপনি শোয়া, বসা বা
দাড়ানো বা অফিস এ কর্মরত যে অবস্থাতে আছেন না কেন সেই অবস্থা থেকে টের পাওয়ার আগেই
মারা পড়বেন। চাকরীর সুবাদে একবার আমাদের সরকারী আবাসনে পরিবার নিয়ে থাকা অবস্থাতে
রাত সাড়ে চারটার দিকে ভূমিকম্প হয়েছিল, মাত্রা ছিল প্রায় চার এর কাছে , ঘূমন্ত
অবস্থাতে টের পাচ্ছি আমার স্ত্রী আমাকে ডাকছে, আশেপাশের ফ্লাট গূলো থেকে লোকজনের
চিৎকার আর সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত দৌড়ে নামার শব্দ পাচ্ছি, আমি ঘূম থেকে ঊঠে ধাতস্থ হবার
আগেই ভূমিকম্প থেমে গেলো, আর একদিন আমি বাসাতে একা , কম্পিউটার এর সামনে বসে আছি ,
ভূতের ভয়টা বাসাতে একা থাকলে মোটামুটি পাই আমি , তো এমন সময় মনে হল চেয়ারটা কেউ
সজোরে ঝাঁকুনি দিলো, লা ঈলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ যালিমিন, আরো
বেশ কবার ঝাঁকুনি দিলো, ঝাঁকুনি গুলো এমন যে মনে
হচ্ছিলো কেউ যেন মেঝেতে কোন কিছু দিয়ে আঘাত করে একটা চাপা কম্পন তৈরি করছে, আর
একবার আমার মাতুলালয়ে গিয়েছিলাম, কয়েকজন মামা ও ভাই বোনদের সাথে খেলছিলাম, এমন সময়
মাটিতে যথারীতি কম্পন অনুভব, ভাগ্যিস খেলাটা করছিলাম আমাদের বাচ্চা ছেলেদের
কাদাছোড়াছুড়ি আর পানিতে ডোবাতে ডোবাতে চোখ লাল করে ফেলা নানা বাড়ীর পুকুরটার পাড়ে,
এমন সময় দেখলাম পুকুরের পানিটা প্রচণ্ড দুলছে আর ঝাঁকি খাচ্ছে , পানি ফুলে ঊঠছে আর
নেমে যাচ্ছে , সেই থেকে আর কোনদিন ভয়ে পুকুরে গোসল করিনি, পুকুরের পানি ভীতি শুরু
এখান থেকে। আলহামদুলিল্লাহ সবগুলোতে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন,এগুলো নিয়ে যদি একবার অবসরে
ভাবেন বা উপলব্ধি করেন তাহলে দেখবেন জীবনের এক লোমহর্ষক অধ্যায় থেকে ঘুরে এলেন যে
অধ্যায় আপনি কখনো দেখতে চাননা। জীবন আপনাকে বা আমাকে এরকম পরিস্থিতি গুলোতে যা
শেখাবে সেটা অন্য কেউ বা কিছু শেখাতে পারবেনা, অন্য কেউ সেটা আপনার মত করে উপলব্ধি
করতে পারবেনা । এটা হল জীবনের এক অদেখা অচেনা অধ্যায়। যেটা উপলব্ধি করলে আপনি কখনো
এক কথায় কিছু হয়না বা নেই বলবেননা কখনো আর ।ঠিক এভাবে ভৌতিক কিছু ঘটে মানুষের সাথে
।যেটা হয়তো বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে সে দেখে বা উপলব্ধি করে ।
(141)
যেমনটা নাতাশা ডেমীকনা দেখে কিন্তু আমরা
দেখিনা।ভৌতিক ব্যাপারটার বৈজ্ঞানিক বা আনুমানিক ব্যাখ্যাটাও সেইরকম যে ভূত দেখা বা
না দেখা ব্যাপারটা সার্বজনীন নয় । পুরো ব্যাপারটা হতে পারে কোন মানুষের স্রেফ
কল্পনা আর বাস্তবে একাত্ব হয়ে যাওয়া, কোন
স্থানে বিদ্যমান কোন চুম্বকীয় ক্ষেত্র, অদৃশ্য ডেল্টা লেভেলের মতো কোন অদৃশ্য কোন
তরঙ্গের প্রবাহ যা খালি চোখে দেখা যায়না, যেটা আমাদের মস্তিষ্ক বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়
কে প্রভাবিত করে । আর আমরা তো এখনো চারটি মৌলিক বল এর সন্ধান পেয়েছি মাত্র, বিজ্ঞানীরা
এখন পঞ্চম বল বা ফিফথ ফোর্স নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন, আবার কোন ব্যাক্তির চোখে বা মস্তিষ্কে বিশেষ
পৃথক কোন কোষের উপস্থিতির কারণে বাস্তব
জগত বহির্ভূত কিছু দেখা ।এটাই হল আমাদের
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা ভূতের সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা আমার মতে। বিজ্ঞানীরা
এক সমীক্ষাতে দেখেচ্ছেন যে মানুষ মারা যাবার বা দাফনের পরও অক্সিজেন বাদেই তার
মস্তিস্কের কিছু স্নায়ু সচল থাকে।তাহলে যখন আমরা দেখি সেই মানুষটি মৃত, দিব্যি
নাকে কানে তুলা দিয়ে দিই একজন মৃত কে, যখন ক্লিনিকালি সে ১২ ঘণ্টা আগে মৃত হয়ে
গেছে, শরীরের সমস্ত পেশী পচন ধরা শুরু করেছে, বরফ দিয়ে লাশটা তার আগত আত্মীয় সজনের
জন্য সংরক্ষিত করা রয়েছে ঠিক তখনো নাকি সে অনেক কিছু উপলব্ধি করছে, বা একটা লোক কে
খুন করা হল, তার লাশটা কোন পশু খাচ্ছে তারপরেও তার সুক্ষ কিছু স্নায়ু যদি টের পায়
ব্যাপারটা, মস্তিস্কের বিশেষ কোন অঞ্চল যদি মারা যাবার এক সপ্তাহ পর ও সচল থাকে
তাহলে কি হতে পারে একজন মৃত মানুষের সাথে
একবার ভেবেছেন ? তাহলে ভাবুন তো মারা যাবার পর কবরে মানুষ কিছু টের পাবেনা সেই
নাস্তিক্যবাদী কথা গুলো কতটা মিথ্যা হতে পারে, আর এই মস্তিস্ক সচল অবস্থা আর দেহ
পচন অবস্থাটাই যদি হয় কবরের আযাব, তাহলে স্রষ্ঠা বিশ্বাস ও যার যার ধর্ম অনুযায়ী স্রষ্ঠার আরাধনাটাই ভালো নয়
কি ? একটা কথা আছে পরকাল যদি না থাকে তাহলে তো নাস্তিক হয়েও বেঁচে গেলে, আর যদি
থাকে তাহলে উপায় কি হবে ?। বিজ্ঞান কেবল টের পাচ্ছে সেই ব্যাপারটা ।
(142)
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এর একদল
বিজ্ঞানীর গবেষণাতে দেখা যায় মানব মস্তিষ্ক মৃত্যুর পর ০৭ থেকে ১০ মিনিট পর সব
কিছু টের পায় মানে সচল থাকে। দু দিন পর যদি আবিষ্কার করে ০৫ দিন মরার পর সচল থাকে
তাহলে উপায় কি হবে ? মানব মস্তিষ্ক মৃত্যুর পর ০১ থেকে ০৫ মিনিট আগের
সময় দেখতে পায় বিভিন্ন অলৌকিক দৃশ্য।বিটা, আলফা, থিটা ও ডেলটা এই চার
প্রকার হল আমাদের মস্তিস্কের ধ্যান সাধনার চারটি স্তরের নাম।বিটা হল আমরা সাধারনত
সচেতন বা জাগ্রত অবস্থাতে যা করি, মানে আমাদের জাগ্রত অবস্থাতে কাজকর্ম চলাফেরা
সবই বিটা লেভেল এর কাজ আর ডেলটা হল ঘুম, মেডিটেশন, ধ্যান সাধনার সেই স্তর, যে
স্তরে গিয়ে মানুষ অপার্থিব কোন কিছু উপলদ্ধি করতে পারে। এটা হল সাধনার সর্বোচ্চ
স্তর। গভীর ঘুম, সপ্ন দেখা সবই এর উদাহরণ আর মানুষের মৃত্যুর পরের ২০ সেকেন্ড হল
ডেলটা লেভেলের সর্বোচ্চ স্তর। এই স্তরে জীবিত অবস্থাতে মানুষ খুব কমই পৌছাতে পারে।কারন
এই স্তরে পৌছাতে গেলেই মানুষ অবচেতন হয়ে ঘুমে তলিয়ে যায়। মানুষের শ্রাব্যতার সীমা 20-20000 hz , 20 hz এর নিচের শব্দ মানুষ শুনতে পায়না।সর্বোচ্চ
চেষ্টা করলে 13 hz এর শব্দ শুনতে পাবে ।কিন্তু মস্তিষ্ককে ধ্যানের মাধ্যমে ডেল্টা
ওয়েভ এ নিতে পারলে 0.5 hz এর শব্দ ও শোনা সম্ভব !!!!কোন ভাবেই সে আর
সচেতন থাকতে পারেনা ।নিজের ভিতরের নিজেকেই আমাদের দেখা হলনা, নিজের ভিতরের এক
বিচিত্র জগতই আমরা দেখলাম না।আমাদের মস্তিস্কের এই ডেলটা ওয়েভ পর্যায়টাই বোধ হয়
অদেখা জগতের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ।কারো যদি অদেখা জগত নিয়ে কৌতুহল থাকে
তবে তাকে ডেলটা ওয়েভে পৌছাতে হবে যেটা দীর্ঘকালের কঠোর সাধনার ব্যাপার ।পূর্বেই
একবার বলেছি যে আজ পর্যন্ত যত মুনি-ঋষি-সাধু-সন্ন্যাসী-বুজুর্গ এর জীবন কাহিনী
শুনেছেন দেখবেন ওনারা ধ্যান এর সাধনা করতেন বা ধ্যানে জীবনের কিছু না কিছু সময় অতিবাহিত করতেন ।
আমাদের
সামনে আবার বলা হয় বিজ্ঞান প্রমাণ দিতে পারেনি বলে কি সেটা সত্য নয়, সেটা মিথ্যা
হয়ে যাবে ? কারনটা হলো আমরা এখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম শিখরে বসবাস করলেও এই
নিশ্চয়তা পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানী দিতে পারবেনা যে বিজ্ঞান
(143)
যেটা
বলছে সেটাই শেষ কথা, কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এই মহাবিশ্বের বিশালতার কাছে সবে
শিশুমাত্র ।কারণ বিজ্ঞান যত দিন যাচ্ছে কল্পনার বাইরে নতুন অনেক কিছু আমাদের সামনে নিয়ে আসছে ।বিজ্ঞানের
সঙ্গা যুগে যুগে ভিন্ন হয়ে যায় ।আর বিজ্ঞান মানে এখনকার সুসজ্জিত ল্যাবরেটরী আর
কোটি টাকা বেতন পাওয়া বিজ্ঞানীদের বোঝানো হয়। বিজ্ঞান হলো মানুষের জানার দুর্নিবার
কৌতুহল আর পূর্ব প্রজন্মের রেখে যাওয়া একটা সিড়ির উপর আরেকটা সিড়ি যোগ করে
মানবজাতির জীবনযাত্রাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া ।একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা
বোধগম্য করে তোলা যাক। ধরুন একটা সময় আমাদের বিশ্বে ১৪০০ সালের দিকে লোক ছিল ৩৫
থেকে ৪০ কোটি, ১৭০০ সালে এসে দাড়ায় ৬০ থেকে ৬৮ কোটিতে, ২০০০ সালে এসে সেটা ৬০০ কোটিতে ঠেকে। মাত্র ১৭
বছরে সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০০ কোটিতে।জাতিসংঘের এক হিসাব মতে ১১০০ কোটি জনসংখ্যা
হবে আগামী ২১০০ সালে।তো এক সময় তথা ১৭৭০ সালে পুরো ভারতবর্ষের জনসংখ্যা ছিলো
সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ কোটির মত। এখন যদি দেখা
হয় তবে পুরো ভারতবর্ষের জনসংখ্যা ২০০ কোটির মত।কিন্তু এখন এত জনসংখ্যাতেও
দুর্ভিক্ষ হয়না।১৭৭০ সাল তথা বাংলা ১১৭৬ এর দূর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় ০১ কোটির মত
লোক ।যদিও এর পিছনে ব্রিটিশরা দায়ী ।তবে তার আগে পিছে অনেক দূর্ভিক্ষ হয়েছিল বা
তখন দুর্ভিক্ষ হতো ।১৯৪৩ এ ভারতবর্ষে ও ১৯৭৪ এ বাংলাদেশ দূর্ভিক্ষের স্বীকার হয় ।
উভয় ক্ষেত্রেই বেসরকারী হিসাব মতে মিলিয়ন মানুষের মৃত্যূ হয় ।তো এত কম জনসংখ্যা ও
তখনকার নির্মল বিষমুক্ত পরিবেশে খাদ্যভাব এ মরার কারণ কি।যেখানে শুধু ভারতের জনসংখ্যা
২০১৭ সালে ১৪০ কোটির কাছে। কারণ অনেকগুলো ।এক,-উন্নত উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত না
থাকা ও সেচ ব্যবস্থার জন্য প্রাকৃতিক জলাশয় নির্ভরশীলতা, দুই,- জাতিসংঘ ও বিশ্বায়ন
না থাকা, তিন,- উন্নত ও সর্বক্ষেত্রে কার্যকর ভ্যাকসিন না থাকা ।কিন্তু এখন এগুলো
হয়না কেন ? কারন হলো এখন আছে উন্নত ফলনশীল বীজ, বিশ্বায়ন তথা পুরো পৃথিবীর সকল
দেশের সাথে কমবেশি সকল দেশের কানেক্টিভিটি ও কয়েকটা রোগ বাদে ছোট-বড় সকল রোগের
ভ্যাকসিন ।
(144)
তো
এই উচ্চ ফলনশীল বীজ এর কথা বলছিলাম, সেটা কিভাবে উদ্ভাবিত হলো সেই ব্যাপারে একটু
বলি ।মানুষের ইতিহাস পাওয়া যায় এক সময় মানুষ খাদ্যের জন্য বনেবাদাড়ে ঘুরতো, তখন
তারা একসময় স্থায়ী বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভবের পর থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য শষ্য
বীজ ও পশু গুলো সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাড়িতেই পরিচর্যা ও পালন শুরু করলো । মানুষ
স্বভাবতই বেশি পেতে চায় যে কোন কিছু ।সেটা অল্প খাটুনিতে বেশি ফসল ঘরে তোলবার
আশায়ই হোক বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির চিন্তায়ই হোক ।যখন দেখলো তার বাড়িতে লাগানো কলা
গাছের থেকে আরেকটা কলা গাছের কাদিটা বড় ও খেতে সুস্বাদু হয় তখন সে তার বাসার
স্বল্প ফলনশীল ও পানশে জাত বাদ দিয়ে ওই গাছটা নিয়ে এসেছে। ধান নিজের জমিতে
বিঘাপ্রতি ০৫ মন হলে যদি আরেক এলাকায় তার আত্বীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখলো সেখানে
ধান হচ্ছে বিঘাপ্রতি ১৫ মণ । তখন সে ওই ১৫ মণ বিঘাপ্রতি ফলনের ধানই চাষ করবে ।
আবার দেখা গেলো দুই রকম জাতের বীজ এর বপন একই জমিতে চাষ করে সংকর একটা জাতের উদ্ভাবন
হলো ।যেটা অস্ট্রিয়ার ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল তার গীর্জার বাগানে করে
দেখান ।জীনগত বৈশিষ্ট ও জেনেটিক এর গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ আমরা সেখান থেকে পাই । নানান জাতের মটরশুটি গাছ একস্থান এ চাষ করে
ফলশ্রুতিতে মটরশুটির বিভিন্ন প্রকরন উদ্ভাবন করে তিনি বংশগতিবিদ্যার জনক হিসেবে
নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন ।সাধারন মানুষের সেই পর্যবেক্ষন , মেন্ডেলের মত বিজ্ঞানীর
পরীক্ষালব্দ্ধ ফলাফল সবই আজকের এই পৃথিবীর ফসল উন্নয়ন বা হাইব্রিড প্রজাতির
উদ্ভাবন ।আজকের পৃথিবীর IRRI(International Rice Research Institute), BRRI
(Bangladesh Rice Research Institute) এই সবই সেই সব ছোট ছোট পর্যবেক্ষণের ফসল।
যার ফলে আমরা এখন প্রতি বছরই পূর্বের বছরের থেকে উন্নত ফসল, পশুপাখির চাষপদ্ধতি ও
জাত পাচ্ছি ।ফলে কোন দেশে জনসংখ্যা ০৫
কোটি থেকে ২০ কোটি হলেও খাদ্যভাব হচ্ছেনা ।আবার বিশ্বায়ন এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশের ফল ফসল ১৫০০ শতাব্দীর দিক থেকে আমাদের দেশে এসে গেছে ।
(145)
বাতাবি
লেবু ইন্দোনেশিয়ার ফল, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার পূর্ব নাম বাটাভিয়া, শব্দটি
বাটাভিয়ার লেবু থেকে বাটাভি লেবু থেকে বাতাবী লেবু হয়ে গেছে, পেপের উৎপত্তি
মেক্সিকো ও দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে পর্তুগীজ নাবিকদের মাধ্যমে ভারতীয়
উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে । আজকের কাচা ঝাল ছাড়া বাঙালিরা যারা একটা দিনও তরকারি রান্না
করতে পারিনা সেই কাচাঝাল কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে ৫০০ বছর আগে ছিলোনা। ক্রিস্টোফার
কলম্বাস সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কার করেন আজকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ যাকে বলে সেখানে।সেখান থেকে দিয়েগো আলভারেজ
নামের এক নাবিক স্পেনে নিয়ে যান । যদিও দক্ষিন আমেরিকার ইকুয়েডরে ৭০০০ (সাত হাজার)
বছর আগে থেকেই মরিচ ছিলো সে প্রমান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা ।তারপর এটা ভারতবর্ষে আসে পাঁচশো
বছর আগে ।তার আগে মানে পাঁচশো বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ঝালের অভাব গোলমরিচ
দিয়ে পুরন করতো । আবার এখনকার যে শরবত এ ব্যবহারের লেবু মানে যেটা আমরা কাগুজী
লেবু, এলাচী লেবু শরবতী লেবু বলে বুঝি সেটার বিভিন্ন জাত কিন্তু ভারতের আসাম, উত্তর মায়ানমার ও চীন থেকে
২য় শতাব্দীতে দক্ষিন ইউরোপের ইটালীতে যায়, তারপর শতাব্দীক্রমে পারস্য, তারপর ৭ম
শতাব্দীতে ইরাক ও মিশরে যায় ।তারপর আরব এর বাদশাদের বাগানে দশম শতাব্দীতে । ১৪০০
সালের দিকে যায় দক্ষিন আমেরিকার স্পেন এ সেখান থেকে ১৭০০ সালের পর আমেরিকার
ক্যালিফোর্নিয়া ।বিষ্ময়কর ইতিহাস তাইনা । কিন্তু এখনকার সময়
হলে এতো সময় লাগতো না। কারন তখনকার দিনে মানুষের যাতায়াত ছিলো নিজ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ।এখন
যেমন ড্রাগন ফল মধ্য আমেরিকার ফল হয়েও পৃথিবীর সবদেশে মেলে, ড্রাগন ফলের মধ্য
আমেরিকান আঞ্চলিক নাম পিটাইয়া রোযা , আবার বাংলার পরিবেশে চাষ হওয়া শাকসবজি
প্রবাসীরা সৌদি বা কুয়েতের ঊষর মরুভূমিতে চাষ করে উষর মরুভূমি সবুজ করে তুলছেন।আর
বিশ্বায়নের আরো একটা উপকার মানুষের উদ্ভাবিত কোন টেকনোলজী এক দেশের নাগরিকের ভিতর
আটকে থাকছেনা, সেটার সুফল সবদেশ পাচ্ছে ।
(146)
আবার
কোন শাসক তারদেশে খাবার মজুদ করে রেখে দূর্ভিক্ষ করে ইচ্ছামত দু –তিন মিলিয়ন
মানুষ মারতে পারছেনা ।যেমনটা ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে করেছিল ।এখন এ রকম হলে
বিশ্বমিডিয়া জেনে যাবে, সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠবে, হিউম্যান রাইটস, WFP (World
Food Programme)সোচ্চার হবে, ত্রান বা জনমত একটা কিছু দিয়ে সমাধান হবে।এগুলোই হলো এখনকার
যুগে দূর্ভিক্ষ না হবার কারণ।যদিও আফ্রিকা মহাদেশের কথাটা ভিন্ন।ওখানকার খাদ্যভাব
এর কারনও ভিন্ন ।
এখানে
একটা ইন্টারেস্টিং বিষয়ে আলোচনায় আসা যাক ।বিষয়টা একান্ত আমার ধারনা থেকে আলোচনা
করি ।কথাটা হলো আমাদের মানব সভ্যতা বা মানুষের উৎপত্তি সম্বন্ধে । মূলত মানুষ কত
বছর আগে এসেছে পৃথিবীতে, এই বিতর্কের কোন শেষ নেই ।এটা একটা ভয়াবহ রহস্য, যার উত্তর
খুজতে জন্ম নিয়েছে বিবর্তনবাদ, ফসিলতত্ব তথা অনেক মতবাদই ।আর আমাদের ধর্মমগ্রন্থের
আদি মানব-মানবী তথা আদিপিতা-মাতার কথা তো উল্লেখ আছেই ।এই যেমন ধরুন ইসলাম ধর্মমতে
আদম-হাওয়া, হিন্দু ধর্মমতে মনু-শতরূপা, খ্রিষ্ট ধর্মমতে অ্যাডাম-ঈভ।এতো গেলো প্রধান
তিনটি ধর্মের উল্লেখিত কথা ।বিজ্ঞানীরা গবেষনালব্ধ ভাবে যেটা বলেন সেটা মূলত
বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত ফসিল ও বিবর্তনবাদী ব্যাখ্যার মাধ্যমে । মানুষের উৎপত্তির
যত বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা তত্ব উপস্থাপন করা হয় সবই কিন্তু প্রাপ্ত জীবাশ্ম, ফসিল,
অথবা বিবর্তনবাদ নির্ভর। ডারউইন এর বিবর্তন তত্ত্ব(১৮৫৯
সালে দ্যা অরিজিন অফ দি স্পিসিস গ্রন্থে সর্বপ্রথম প্রকাশিত ) অনুযায়ী মানুষ এর
পৃথিবীতে আগমন রাতারাতি কোন ঘটনা নয় । এটা এক দীর্ঘ
প্রক্রিয়া মাধ্যমে এক প্রকার প্রাইমেট বা
বানর জাতীও প্রানী হতে দীর্ঘ এক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে এসেছে ।এবং মানব আগমনের এই ইতিহাসটাও বেশ পুরাতন ও জটিল কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হবার
কথা নয় ।বিবর্তনের মাধ্যমে মানবজাতি সৃষ্টির পুরো ইতিহাস টা সংক্ষেপে এমন যে, গরিলা,
শিম্পাঞ্জী, এবং হোমিনিন বংশের মধ্যে প্রাপ্ত জীবাশ্মের প্রমান হিসেবে শুরু তে
প্রাপ্ত জীবাশ্ম এর প্রথম নমুনা, অর্রোরিন|
(147)
টিউগেনেসিস(০৫ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগের),
সালেন্থ্রপাস টিচডেনেসিস (০৭ মিলিয়ন পুরনো), আর্দিপিথেকাস কাদাব্বা (৫.৬ মিলিয়ন
বছর) আগের ।এই প্রজাতি গুলোর বিবর্তন শেষ হবার পর এলো হোমো
প্রজাতির প্রাথমিক সদস্য হিসাবে এলো হোমো হাবিলিস(২.`৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে), হোমো
ইরেকটাস (১.৩-১.৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে), আফ্রিকান হোমো ইরেকটাস এর বংশধররা
৫,০০,০০০(পাঁচ লক্ষ)বছর পূর্বে ইউরেশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে ।এভাবে আরো ক্রম বিবর্তনের মাঝ দিয়ে এসে মানুষ তার বর্তমান প্রজাতি তথা বর্তমান
মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo Sapiens) এ এসে পৌঁছেছে ।
হোমো হাবিলিস
(148)
পুরুষ হোমো ইরেকটাস -
(149)
এবারে আসি প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের কথায় ।আপনারা অনেকে
হয়তো হবুতি সন সম্বন্ধে পড়েছেন ।হবুতি সন বলা হয় ইসলাম
ধর্ম মতে মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) এর পৃথিবীতে অবতরনের বছরকে ।আমাদের প্রিয় নবী হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্ম গ্রহনের বছর ছিল হবুতি(৪৫৭৪) চার হাজার পাঁচশো চুয়াত্তর
সাল । বর্তমানে এর সাথে আরো ১৪৪৭ হবুতি সাল পেরিয়ে গেছে ।তার মানে মানুষ এসেছে পৃথিবীতে
৪৫৭৪+১৪৪৭=৬০২১ হবুতি বছর আগে ।আর হিব্রু বাইবেল অনুসারে হুজুর (সাঃ) পর্যন্ত ৫৯৯২ বছর । সে হিসাবে এখন হবুতি ৫৯৯২ +১৪৪৭ =৭৪৩৯ বছর
চলছে এই ২০১৭ তে একবার এখন দেখা যাক বিজ্ঞানীদের লক্ষ লক্ষ প্রাপ্ত বছরের
ফসিল তত্তের কাছে এই যুক্তি কতটুকু টেকে । উইকিপিডিয়ার
দেওয়া তথ্যমতে খৃস্টপূর্ব ১০,০০০ সনে মানুষ আনুমানিক ০১ থেকে ০৪ মিলিয়ন ছিল । যদিও সেখানে বলা আছে সেই সংখ্যাটা আনুমানিক । জোরাল এভিড্যান্স নেই এর পক্ষে ।খ্রিষ্টাব্দ ০১
এ এসে দাড়ায় ২৭০ থেকে ৩৩০ মিলিয়ন এর মধ্যে । ১৫০০ শতাব্দীতে ৪৪০ থেকে ৫৪০ মিলিয়ন
এর মাঝে এসে দাড়ায় । ১৯৫০
সালে ছিল ২৩৫ কোটির মত ।২০১৭ সালের দিকে এসে দাঁড়িয়েছে ৭৩৫ কোটির মত । তাহলে এখন যদি আমরা কেউ বর্তমান থেকে বা অতীত থেকে একটা আনুমানিক জনসংখ্যা
হ্রাস বা বৃদ্ধির হিসাব করি তাহলে কিন্তু আমরা মানবজাতির শুরুটা খুব সহজেই পেয়ে
যেতে পারি । আরো বড় সমস্যা কি জানেন মানবজাতি পূর্ব থেকেই তার পূর্ব পুরুষের বংশানুক্রমিক জন্ম
তালিকা সংরক্ষন করবার প্রয়োজনীয়তা বোধকরেনি । তাহলে হয়তো
আমরা সঠিক একটা তথ্য পেয়ে যেতাম মানবজাতির সঠিক উৎপত্তি কত বছর আগে ।তবে বিজ্ঞানিরা যে লক্ষ লক্ষ বছর আগের কথা বলেন সেটা কিন্তু মানবজাতির
জনসংখ্যার এই ধাপে ধাপে বৃদ্ধির পরিসংখ্যান এর দিকে তাকালে এটা স্পষ্টরূপে
প্রতীয়মান হয় যে আমাদের এই মানবজাতির শুরু বা আমাদের আদি পিতা লক্ষ লক্ষ বছর আগের
নয় , বিবর্তন ও নয় ,মানব জাতির আদি পিতা স্বর্গ থেকেই পৃথিবীতে এসেছেন , অবিশ্বাসী
যদি হন তবে বড়জোর বলা যেতে পারে তিনি এ গ্রহের নন ,ভিনগ্রহের থেকে এসেছিলেন ।তবে এলিয়েন এর
জেনেটিকস বা DNA আমাদের মাঝে আছে কিনা সেটা নিয়েও অনেক বিজ্ঞানী আশাবাদী গবেষক
হিসেবে চেষ্টা চালাচ্ছেন
(150)
মানবসৃষ্টির আরেকটি
নতুন তত্ব প্রতিষ্ঠার ।এবারে আসি হযরত আদম
(আঃ)এর উচ্চতা ছিল ৬০ কিউবিটস বা
৯০ ফূট লম্বা , মতান্তরে কোথাও কোথাও ঊল্লেখ আছে ১২০ ফূট এর কথা । এখন আমরা বর্তমানের অতিজ্ঞানীরা বলি এটা সম্ভব নয় বা হলেও আমরা হলাম না কেন ,
কেন আমাদের গড় উচ্চতা ০৬ ফূট মাত্র কেন ? ।এসব প্রশ্নের
উত্তর পেতে হলে আমাদের জানতে হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্বন্ধে ।আমরা কোন বস্তু যখন উপরের দিকে নিক্ষেপ করি তখন তা ভুমিতে ফিরে আসে ।মহাশুন্যে তো অসীম যায়গা রয়েছে , বস্তুটি কেন অসীম এ বিলীন হয়ে যায়না ?
পৃথিবীর নিজের দিকে একটা অদৃশ্য টান রয়েছে ।এই টান বা টানের
প্রভাব কেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বলে । মাধ্যাকর্ষণ
শক্তির এই প্রভাবে আমাদের পৃথিবীর সকল বস্তু পৃথিবীতে স্থির রয়েছে । ফলে কোন কিছু ইচ্ছা করলেই ভেসে বা মাটি থেকে শিকড় উপড়ে ভেসে উড়ে বেড়াতে
পারছেনা । স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের উপর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে বায়ুর চাপ ১৪.৫ পাউন্ড এর মত । অর্থাৎ ৬.৬ কেজি এর মত বায়ুচাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে মানুষের উপর রয়েছে । তাহলে এবার মোট কতটুকু বায়ুচাপ মানুষের উপর রয়েছে একটু হিসাব করুন ।এই বায়ুচাপ আবহাওয়া ,জলবায়ু , উচ্চতা ভেদে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন
হতে পারে । যত উপরে ওঠা যায় তত বায়ুচাপ এবং মাধ্যাকর্ষণ
শক্তির প্রভাব কমতে থাকে , অক্সিজেন কমতে থাকে । একটা নির্দিষ্ট উচ্চতার উপরে উঠলে আমাদের অক্সিজেন এর অভাব এবং নাক দিয়ে রক্ত
পড়বার মত সমস্যা হতে পারে । আমাদের রক্তের মানব শরীর ভেদে একটা নির্দিষ্ট
চাপ রয়েছে । অতি উচ্চতায় আমাদের রক্তচাপ বায়ুচাপ এর থেকে
বেশি হয়ে যায় । ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়বার মতো সমস্যা দেখা দেয় ।একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক । ÔÔ নরিশীগে কানাই ÕÕ নামে একজন জাপানী নভোচারী টুইট করেন মহাকাশ
থেকে ফিরে যে তাঁর উচ্চতা ২.৫ সেন্টিমিটার এর মত বেড়ে গেছে । কারণ নভোচারীরা যখন মহাকাশে অবস্থান করেন তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অনুপস্থিতি
বোধ করেন , অনায়াসে মহাকাশে স্পেসশীপ এর ভিতর ভেসে থাকতে পারেন । ২১ দিন মহাকাশে স্পেসশীপ এ থাকলে গড়ে ০২ থেকে ০৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা বাড়তে
দেখা গেছে মহাকাশচারীদের ।
(151)
কারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে সেখানে
নভোচারীদের মেরুদণ্ডের হাড় প্রসারিত হয় । পৃথিবীতে ফিরে
এলে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন তিনি । এবার আসি আসল
কথাতে । আমাদের আদি পিতা যদি স্বর্গ থেকে বা অন্য কোন এমন এক গ্রহ থেকে আসেন যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং বায়ুচাপ
দুটোয় স্রষ্ঠার বিশেষ রহমতে কম , ফলে সেখানে ৯০ ফিট উচ্চতা অর্জন করাটা স্বাভাবিক
ছিল । তারপর যখন পৃথিবীতে তাঁদের পাঠানো হল তখন তিনি তাঁর উচ্চতার ছিলেন কিন্তু তাঁর উত্তরপুরুষ বা পরবর্তী বংশধর দের
ক্ষেত্রে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং বায়ুচাপ এর সাথে অভিযোজিত বা মানিয়ে নিতে গিয়ে
কয়েক হাজার বছর শেষে আমাদের স্বাভাবিক এই ০৬ ফীট উচ্চতা তে এসেছে । এবং এই উচ্চতা বিগত ০৪ থেকে ০৫ হাজার বছর পূর্বের মানুষের থেকে বর্তমান
মানুষের ক্ষেত্রেও একই এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ।এটাই আমাদের
পৃথিবীর জন্য উপযুক্ত উচ্চতা মানুষের ।আর পিটুইটারি
গ্লাণ্ড এর HGH হরমোনের প্রভাবতো অবশ্যম্ভাবী উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে । আপাতত HGH প্রসঙ্গ থাক ।তাহলে ৯০ ফিট
উচ্চতা অর্জন করতে গেলে সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ এবং বায়ুচাপ অন্তত আমাদের পৃথিবীর
থেকে ১৫ গুণ কম থাকতে হবে ।এটা হল একটা আনুমানিক বা মানবজ্ঞানের কথা ।আসল কারন একমাত্র স্রষ্ঠা মহান আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন ।এখন কথা হল মানুষ সৃষ্টির জন্য সত্যি কি বিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি ?।থাকতেও
পারে , ধরুন খচ্চর নামের একটা প্রানী আছে সেটা হলও ঘোড়া ও গাধার মিলনে উৎপন্ন । বর্তমানের বিভিন্ন জাতের ধান , গবাদি পশু , পোল্ট্রি শিল্পের প্রানী গুলো
এগুলো তো মানব সৃষ্ট একপ্রকার বিবর্তন । আবার ধরুন আপনার শরীর কে যদি আপনি প্রচুর
ব্যায়াম কোরআন তবে আপনার শরীরের নির্দিষ্ট কিছু পেশি অধিক খাটুনির জন্য তৈরি হয়ে
যাবে । এবং অন্যদের থেকে আলাদা রুপ ধারন করবে ।যেমন পার্থক্য সাধারন মানুষের থেকে একজন
বডিবিল্ডার মাঝে দেখা যায় ।এখন মানুষ যদি ১০০% লোকই ব্যায়াম করতো তবে দেখতেন বাই
জেনেটিকালী ২০০ বছর পর জন্মগতভাবে ছেলেরা ০৬ মাস ব্যায়ামের মাধ্যমে পাওয়া মাসলস
পিউবার্টিতে বাই বার্থ পেয়ে যেতো ।
(152)
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বা চিকিৎসকরা এটা
ভালো বলতে পারবেন । তবে এটার স্বপক্ষে উদাহরণ দেখুন শহুরে অফিস করা মানুষ ও তাদের
ছেলে বা মেয়েদের শারিরীক গঠন নমনীয় , পরিষ্কার ও কোমল চামড়া এবং পেশীবহুল নয় ।
কিন্তু গ্রামের কয়েকগোষ্ঠী খেটে খাওয়া মানুষ বা আফ্রিকান নিগ্রোদেরকে দেখবেন
জন্মগতভাবেই রুক্ষ , চেহারা , পুরু চামড়া ও পেশীবহুল শরীর জন্মগত ভাবে ওরা পেয়ে যায় । কারণ মাঠে চড়া রোদে খাটুনি , স্বল্প পুষ্টিকর খাদ্যতে প্রচুর
ভারবহন , বেশি দম ও অক্সিজেন নেবার জন্য মোটা নাক , মরুভূমিতে চড়া তাপমাত্রা ও
খাদ্য পানিবিহীন প্রতিকুল পরিবেশে বেঁচে থাকবার জেনেটিকস টা কিন্তু তারা
জন্মগতভাবে পেয়ে যান । আবার বিবর্তন আর অভিযোজন আলাদা হলেও প্রায় এক জিনিস । অভিযোজন
হলো প্রতিকুলতার সাথে মানিয়ে নেওয়া আর বিবর্তন হলো প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া ।
যেমন ধরুন উষ্ণ স্থানে বসবাসকারী ভাল্লুক এর চামড়ার নিচে অত চর্বি থাকেনা , কিন্তু
যখন মেরুতে শ্বেত ভাল্লুক বসবাস করছে তখন তার চামড়ার নিচে বেশ কয়েক ইঞ্চি পুরু
চর্বির আস্তরন রয়েছে । আবার মানুষের নাকি এক সময় লম্বা
ধারালো দাঁত ছিলো । কারণ তখন মানুষ কাঁচা মাংস খেতো । যখন কাঁচা মাংশ খাবার দরকার
পড়লোনা তখন আস্তে আস্তে দাঁত ছোট ও ভোতা হলো । এক সময় মানুষ গাছের পাতা ও মুল খেতো
, তখন এগুলো যেহেতু হজমের জন্য সেলুলোজ ভাঙার ও হজমের প্রয়োজনীয়
ব্যাক্টেরিয়া দরকার , সেই ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হতো মানুষের এপেনডিক্স নামক
অঙ্গে , আস্তে আস্তে মানুষ পাতা খাওয়া বাদ দিলে এপেনডিক্স তার কার্য্যক্রম বন্ধ
করে দেয় । ফলে এটি এখন আমাদের কাজবিহীন বিপদজনক অঙ্গ । মানবের আগমনের প্রকৃত সাল
খুজতে ইসলাম ধর্মে উল্লেখিত হবুতি সন দিয়ে প্রথম মানবের গোড়াতে পৌছালেও মোটামুটি মানব আসার ক্ষেত্রে কোরআন হাদীসের তত্ব সত্য হচ্ছে ।অন্যদিকে
বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার মতে বত্রিশ লাখ বছর আগের লুসি মানবও আজকালকার
মানুষের মতই উঁচু ছিলেন। আজ পর্যন্ত সত্তর
ফিট উঁচু কোন মানুষের ফসিল পাওয়া যায়নি। সব'চেয়ে বড় কথা আদম আঃ জন্মের
একত্রিশ লাখ চুরানব্বই হাজার বছর আগেও মানুষ পৃথিবীতে ছিল।
(153)
এ বিষয়টা হলো এমন যে আমরা বিজ্ঞানের যা
অকাট্য বিশ্বাস করছি সেটা কিন্তু অনুমান , তত্ত্ব এবং উপাত্ত নির্ভর একটা
সিদ্ধান্ত ।যদি বলি বিজ্ঞানের তিনটি ভাগ আছে একটা হলো আপনি বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত যা
কিছু দেখছেন সেগুলো তো অকাট্য সত্য , এতে কোন সন্দেহ নেই , এবং আগামীতে আবিস্কার
হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে সেগুলো তে তো আর ভুল নেই , কারন এর প্রমান চক্ষের সামনে
উপস্থিত । আর একটা বিজ্ঞান হলো যেটা সুদুর অতীত নিয়ে গবেষণা করে , সুদুর অতীতে কি
ছিলনা বা কি ছিল , মানব জাতি বা অন্যন্য প্রাণী কোথা থেকে এলো
সেগুলো নিয়ে গবেষণা করে , এই গবেষণা খাতিরে যে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলো আমাদেরকে
অতীতের কৌতূহল মেটাতে একটা উত্তর জোগাড় করে দেয় বটে , কিন্তু আমাদের আয়ুর
সীমাবদ্ধতা , জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ,
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা আমাদের কে অতদুর ভাবতে দেয়না , আমি আপনি কি ৫০০ কোটি বছর
আগে ছিলাম ? পৃথিবীর বয়স ৫০০ কোটি বছর এটা গ্রহণযোগ্য কিছু তথ্য , উপাত্ত এবং
অনুমানের সমষ্টি মাত্র । কিন্তু কখনো বলা যাবেনা এটাই অকাট্য সত্যি ।কারন যা কিছুই
বলা হচ্ছে সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানের
মাধ্যমে সেটা আমাদের মানবজাতির তৈরি করা একটা নির্দিষ্ট স্কেলে , বলা হচ্ছে সেটা
যেটা যুক্তিতে টেকে এবং গবেষণালব্ধও ।একটা জিনিস কি জানেন তুরুপের তাস বলে একটা
কথা থাকে , আপনার আমার ভাবনা , আপনার আমার যা আইডিয়া সেটা হয়তো শুধু মাত্র আইওয়াশ
, মুল সত্যের সন্ধান আমরা কখনো পাবোনা , কারনটা কি জানেন ? আপনি আমি যত বলি ৫০০
কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে , সেটা শুধু আইডিয়া বা যুক্তি বা গবেষণা নির্ভর
, সঠিক কিভাবে বলি বলুন তো ।আমরা যেটা বলি সেটা অকাট্য সত্য কিনা সেটা একমাত্র
যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি জানেন ।আমরা যেগুলো সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন বলে দাবি করি
সেগুলো আসলে এমন একটা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল যেটার অধিকাংশ নির্দিষ্ট রহস্য ভেদের
ক্ষেত্রে বেশ কিছু এবং বেশিরভাগ যৌক্তিক প্রমান ও দাবির সমষ্টি মাত্র , শতকরা ১০০
ভাগ সত্যি মানুষের দেওয়া সৃষ্টি মতবাদ গুলো এটা বলা বোকামি , তিনি যতবড় বিজ্ঞানী
হোননা কেন ।
(154)
আসল সত্যটা জানেন যিনি আমাদের সৃষ্টি
করেছেন ।হয়তো আমাদের গবেষণা লব্ধ ফলাফল বা বোকামি অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স ৫০০ কোটি
বছর শুনে স্রষ্ঠা শুধু মানুষের জ্ঞানস্বল্পতার নজির দেখছেন বা মানব সৃষ্টি হয়েছে
দশলাখ বছর ধরে বিবর্তন হয়ে শুনে ও মানুষের জ্ঞান স্বল্পতার আস্ফালনের বেশি আর কিছু
ভাবছেনইনা, কারণ যে উদ্দেশ্যে মানবের সৃষ্টি সে উদ্দ্যেশ্যে মানবের সৃষ্টি সেটা
শুধু তিনিই জানেন, মানব সৃষ্টি ও স্রষ্ঠা নিয়ে ভুল বা সঠিক যে তত্বই দিকনা কেন তার
বিন্দুমাত্র মূল্য স্রষ্ঠার কাছে নেই । আমাদের দেওয়া বিবর্তন বা বিগব্যাং তত্ত সবই
আমাদের মানব জ্ঞানে পরিক্ষালব্ধ, আর এই ফলাফল সঠিক না ভুল তাতেও স্রষ্ঠার কিছু যায়
আসেনা , কারন তিনি জগত ও তাঁর সমস্ত সৃষ্টি যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন সেটা তাঁর
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের তত্ত্বগুলো যুক্তি, পরীক্ষা এবং অনুমান
নির্ভর মাত্র, সঠিকটা একমাত্র আল্লাহই জানেন ।আদম ও হাওয়া থেকে মানবজাতির সৃষ্টি
সম্পর্কিত ধর্মীয় তত্ব যদি বিজ্ঞানীদের কাছে মিথ্যা হয় , তবে বিবর্তন ও বিগব্যাং
বা মহাবিষ্ফোরণ তত্বও মিথ্যা বলা যায়, কারণ এগুলোর কোনটাই আপনার বা আমার চোখের
সামনে ঘটেনি বা এগুলোর কোন ভিডিও চিত্র ও নেই ।আর মানুষের পরীক্ষা বা যুক্তির কথা
যদি বিবর্তন, বিগব্যাং বা মহাবিষ্ফোরণের
কথা সত্য প্রমাণ করতে বলেন তবে বলতে হয় মানুষের যুক্তি দিয়ে দিয়ে সিগারেট , মদ্ , মাদকের , নারী পুরুষের অবাধ
মেলামেশার উপকারিতা ও পক্ষে হাজারটা যুক্তি দাড় করানো যাবে । তাই সৃষ্টি ও স্রষ্ঠা
সম্বন্ধে আমরা মানুষেরা যে যত বিশ্বাসযোগ্য
তত্ব দিইনা কেন সত্য একমাত্র স্রষ্ঠাই জানেন এটা নিশ্চিত । আমাদের সকল সৃষ্টি ও স্রষ্ঠাতত্ব
ধারণা ও সময়ের অপচয় মাত্র । আসুন উদাহরণ দিয়ে বিবর্তন তত্ব মিথ্যা জেনেও সত্য করি,
ওই যে একটু আগে বললাম মানুষের একদল সিগারেট ক্ষতিকর বললেও আরেকদল সিগারেটের গুণাবলী বা ভালোদিক বের করতে পারবে ।
সুতরাং এবার আমরা বিবর্তন সত্য প্রমাণ করবো - বিবর্তন টা একেবারে ফেলে দেবার মত ও
নয়, ধরুন আমাদের সামনেই কিন্তু সংকরায়ন এর প্রচুর
উদাহরণ আছে ।ধরুন আগে ছাগল গরু সহ বিভিন্ন পশুপাখি সামান্য পরিমাণে দুধ ও
মাংস উৎপাদনক্ষম ছিলো ।
(155)
কিন্তু বিজ্ঞানের লাগাতার গবেষণাতে,
লাগাতার উচ্চ ফলনশীল উৎপাদক জাত গুলো খোজা এবং সংকরায়নের পর সংকরায়নের বা যাকে ক্রস
ব্রিড বলি এর ফলে ফ্রিজিয়ান, জার্সি, লিমুউজিন, ব্রাহমা এর মত উন্নত দুধ ও মাংশ
উৎপাদনকারী জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত পেয়েছি , বছরে ৫০ টা ডিম দেওয়া মুরগীর থেকে আমরা
৩০০ টি ডিম দেওয়া মুরগী পেয়েছি , ফল-ফসল-ফুল এর ব্যাপারটাতো দেখতেই পাচ্ছি ।আর
মানুষের ক্ষেত্রে দেখুন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মিশ্রনে মানুষের চেহারা , বুদ্ধিমত্তা
ও স্বতন্ত্র জাতিস্বত্তার উদ্ভব ঘটেছে । চাইনিজরা নৃত্বাত্তিক ভাবে বেশি অন্য জাতির
সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়নি সেজন্য তারা একরকমই থেকে গেছে বলে ধারনা করা হয় ,
সংকরায়ন সবথেকে বেশি বাঙ্গালীর ভিতর বোধ হয় , এত বেশি সংকরায়ন পার্সেন্টেজ কোন
জাতিতে নই , ধারনা করা হয় বাঙালি জাতি মোট ২১টি জাতির রক্ত মিশ্রন বা জেনেটিক্স
বহন করছে , এর মধ্যে আদি অস্ট্রেলীয় ডেড্ডিড , মঙ্গোলীয় বা মেলানাইড , মিশরীয় ,
গ্রীক , আফ্রিকান বা হাবশী , পর্তুগীজ , সাদা ব্রিটিশ চামড়া , আদি দ্রাবিড় ,
সাওতাল বিভিন্ন রক্ত আছে বলেই আমাদের চেহারা , উচ্চতা , চামড়া ও মতপার্থক্যে অমিল
এত বেশি । এটাও কিন্তু এক কায়দার বিবর্তন , তবে এটাকে বলে সংকরায়ন , সংকরায়ন আর
বিবর্তন এক নয় । এটা কিন্তু আংশিক বিবর্তন , সম্পূর্ণ বিবর্তন হয়ে গরু থেকে বা
বানর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দেখতে কোন
প্রাণী সৃষ্টি কি সম্ভব ? যেমন বাঘ ও সিংহের মিলনে লাইগার , ঘোড়া ও গাধার মিলনে
খচ্চর , ১৯১০ সালে ভারতের কলাহপুর চিড়িয়াখানাতে জন্ম নেওয়া লিউপন যেটা ছিল পুরুষ
চিতা আর স্ত্রী সিংহীর জন্ম , দেখতে মাথাটা সিংহের কিন্তু দেহ চিতাবাঘের ,গরু ও
মহিষের মিলনে বিফালু , ১৯৯৮ এ দুবাইতে উট ও লামার মিলনে কামা যেটা দেখতে উটের মত
তবে উটের মত কুজ হয়না , প্রাচীন গ্রীক
মিথোলজিতে উল্লেখিত সেন্টর যেটার বুক পর্যন্ত মানুষ আর পেট থেকে পা পর্যন্ত ঘোড়ার
, আর মিশরীয় মিথোলজিতে আনুবিস এর মত শেয়াল মাথা দেবতার ছবিসহ অদ্ভুত দর্শন প্রাণীর
উল্লেখ পাওয়া যায় । এ রকম ভাবে বিবর্তনের পক্ষে যেমন বলা যায় আবার নাকচ ও করে
দেওয়া যায় । তাই আমাদের স্বল্পজ্ঞানে সৃষ্টি ও স্রষ্ঠাতত্ব ১০০% সঠিক বলে দাবি করা
বোকামী ।
(156)
এবার বিবর্তন কে মিথ্যা করে দিই, অনেক
মানুষতো পশুকামী, তাহলে মানুষ আর ওই পশুর সংকর তো আজ পর্য্যন্ত হতে দেখা যায়নি,
তাই কিছু পশুপাখি আছে যাদের ডিএনএ বা জেনেটিক বিন্যাস সম্পূর্ণ সতন্ত্র এবং এদের
থেকে সংকরায়ন সম্ভব নয়, তাহলে এরা নিশ্চই সৃষ্টিকর্তার থেকে আলাদা ভাবেই সৃষ্টি
হয়ে এসেছে । এই দেখুন এভাবে বিবর্তন তত্ব মিথ্যা হয়ে গেলো ।দেখুন আমাদের মানব
জাতির ইতিহাস বিগত ১৫০০ বছর আগে থেকে যথেষ্ট পরিমানে সংরক্ষিত আছে, একজন তো নয়ই,
বিগত ১৫০০ বছর আগের ইতিহাসের সত্যতা প্রমানের জন্য ০২ থেকে ০৫ জন ঐতিহাসিক এর দেওয়া তথ্য প্রমান
রয়েছে তারপরেও আমাদের তর্ক-বিতর্ক শেষ হচ্ছেনা এই যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তার
জীবনীর ঘটনা ও মোজেজা সত্য কিনা , বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ের রাজা বাদশা দের
জীবনীর ঘটনা গূলো সত্য না অসত্য সে বিষয়ে তর্ক বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে, যেমন ধরুন
আলাউদ্দিন খিলজী (১২৫০-১৩১৬ খ্রিস্টাব্দ ) বাংলাতে জন্ম গ্রহণ করা একজন দিল্লীর
সুলতান, তাঁর শাসনামলে রাণী পদ্মাবতী কে নিয়ে সুলতান খলজীর সাথে জড়িয়ে আছে এক
মুখরোচক কাহিনী বা মিথ । আসলে কী রাণী পদ্মাবতীর সাথে খলজীর কাহিনী কতটুকু সত্যি
তা নিয়ে যুক্তি তর্কের শেষ নেই ।মালিক মূহাম্মাদ জায়সীর লেখা পদ্মাবতী কতটুকু সত্য
তা নিয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু এখনও কাটেনি, কারণ সুলতানের শাসনামলের ইতিহাসে পদ্মাবতীর
নাম পাওয়া যায়নি । ১৩০৩ সালে আলাউদ্দিন খিলজীর চিতোর আক্রমণ ঐতিহাসিক ঘটনা হলেও রাণী
পদ্মিনী বা পদ্মাবতীর কোন নাম একবারের জন্য ও ঐতিহাসিক কাহিনীতে আসেনি । রাণী
পদ্মিনীর ঊল্লেখ পাওয়া যায় সর্বপ্রথম মালিক মুহাম্মাদ জায়সী রচিত পদ্মাবত (১৫৪০
সালে রচিত) এ । তাহলে কেন সুলতান খিলজীর মৃত্যুর ২০০ বছর পর এ রকম একটা কাহিনী
রচিত হলো সেটাই তো বূঝে আসেনা।
(157)
আলাউদ্দিন খিলজী ivbx পদ্মাবতী
আর সেটা নিয়ে হিন্দু মুসলমানে ৫০০ বছর
তর্ক লেগে রয়েছে , অদ্ভুত আর বিচিত্র নয় কী বিষয়টা ।২০১৮ তে সেটা নিয়ে রণবীর সিং
আর দিপীকা পাড়ুকোন অভিনীত পদ্মাবত মুক্তি পায় । যেখানে আলাউদ্দিন খলজীকে এমনভাবে
দেখানো হয় যে সকল খারাপ গুনযুক্ত একমাত্র মানুষ তিনি । অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়
ভারতের ইতিহাসে জনহিতৈষী শাসক ছিলেন তিনি । এই ধরুন মাত্র ৪৬ থেকে ৪৭ বছর আগে
আমাদের দেশে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ।
(158)
সব রকম তথ্য উপাত্ত প্রমান থাকা স্বত্তেও কে কি করেছেন ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে (ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা , রাজাকার )তার বিতর্ক থেকেই যায় আমাদের , ঘটনা তো মাত্র অর্ধ শতাব্দীর তারপরও মুক্তিযুদ্ধের অনেক সত্য বা মিথ্যা জিনিস প্রমাণে বা জানতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের , আবার ধরুন ওই যে বললাম যে সম্রাট যখন যে শতকে যে জনকল্যাণ মূলক কাজ করেছেন , যে যে মহামানব এসেছেন পৃথিবীতে তারা সকলেই একই সাথে যেমন খ্যাতিমান তেমন সমানে তারা বিতর্কিতও । এর মুল কারন হল একটা ঘটনা ঘটবার সময়ের পরিপ্রেক্ষিত যেমন থাকে পরবর্তীতে সেই পরিপ্রেক্ষিত একরকম থাকেনা ।আবার মানুষের মনের খবর সবাই জানেনা যে তিনি কি উদ্দ্যেশ্যে কি করেছেন । এজন্য মহামানব বা ধর্ম প্রবক্তাবা অবতারদের সম্বন্ধে কাদাছোড়াছুড়িরত একদল লোকের উদ্দ্যেশ্যে অটোমান সুলতান মুরাদের সময়ের একটি কথিত কাহিনী বলি , কথিত আছে তবে ঐতিহাসিক সত্যতা আছে কিনা জানিনা , তবে বহুল প্রচলিত এই গল্পটি । গল্পটি এ রকম যে , একদিন অটোমান সুলতান মুরাদ (মুরাদ যেহেতু অটোমান সাম্রাজ্যের শাসন ইতিহাসে ০৪ জন আছেন , এই কারনে গল্পটির ঐতিহাসিক সঠিক তথ্য দেওয়া গেলোনা ) তার অনুচরদের সাথে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন । হঠাৎ দেখলেন একজন মহিলা রাস্তায় একজন পুরুষ লোকের লাশ নিয়ে বসে আছেন আর আহাজারি করছেন । তখন সুলতান মুরাদ বললেন আমার রাজ্যে কি এত অভাবী ব্যাক্তি আছে যে যার লাশ নিয়ে তার স্ত্রী কে পথে বসে কাদতে হবে ? তার কি স্বামীর লাশ দাফনের টাকাটা ও নেই ? তখন তিনি মহিলার সামনে গেলেন , নিজের পরিচয় না দিয়ে বলতে শুরু করলেন , কি হয়েছে এভাবে স্বামীর লাশ নিয়ে পথে বসে কাদছ কেন ? তখন মহিলাটি বলতে শুরু করলেন আমার স্বামী কে সবাই জানে তিনি চরম মদখোর ও চরম ভাবে নারী আসক্ত ব্যাভিচারি । তাই তাকে সমাজ বেশ আগেই বয়কট করেছে , আর মৃত্যুর পর ঘৃণায় কেউ দাফন করতে আসছেনা , তাই আমি পথে বসে কাদছি । কিন্তু বিশ্বাস করুন তিনি এরকম টি ছিলেন না , আমার স্বামী যথেষ্ট সম্পদের অধিকারী ছিল , এবং তিনি যে টুকু সম্পদ রেখে মারা গেছেন সেটুকু সন্তানাদি নিয়ে আমার বাকি জীবন কাটাবার জন্য যথেষ্ট ।
(159)
-আমার
স্বামী প্রত্যেক দিন মদের দোকানে যেতেন , এবং বেশ কয়েক বোতল মদ কিনে নিয়ে আসতেন ।
আর বাড়িতে এসে মদের বোতল গুলো নর্দমাতে ফেলে দিতেন আর বলতেন হে আল্লাহ আপনাকে
ধন্যবাদ আমাকে আর্থিক সামর্থ্য দেবার জন্য , আপনার দেওয়া আর্থিক সামর্থ্য দিয়ে আমি আজ
আপনার ০৫ থেকে ০৬ জন বান্দাকে মদ পান থেকে বিরত করেছি , কারন ১০ জনের জিনিস একজন
কিনলে কেউ না কেউ এসে পকেটে টাকা নিয়ে এসেও জিনিস পাবেনা । আর তিনি প্রত্যেক দিন
পতিতালয়ে এসে একজন করে মেয়েকে কিনে নিয়ে যেতেন চড়া দাম দিয়ে হলেও । আর সেই মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসতেন , ঘরে নিয়ে
এসে তিনি মেয়েটিকে পবিত্র কোরআনের বানী আর পরকালের কথা শোনাতেন ।সকালে মেয়েটিকে
কিছু টাকা দিয়ে হয়তো তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হতো বা সুস্থ জীবনে ফেরবার
ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো । প্রথম প্রথম আমি খুব বিরক্ত হতাম । কারন কোন স্ত্রীর
পক্ষে সম্ভব নয় অন্য একটা মেয়েকে স্বামীর সঙ্গে দেখা । তো এলাকার মানুষেরা আমাকে
নানা কটু কথা বলতো , সমাজ আমাদের একঘরে করে দিয়েছে । আমার সন্তানদের কথা ভেবে আমি
স্বামীকে বলতাম তুমি এগুলো বাদ দাও বা লোকেদের বল যে তুমি কেন কর এসব , তখন স্বামী
বলতেন আমি ভালো কাজ সমাজে লোক দেখাবার জন্য করিনা , আমার আল্লাহ শুধু জানলে হবে
আমি ভালো । আমি অবশ্য সবাইকে আসল ব্যাপারটা বলতাম , কিন্তু গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া আর
কেউ আমার কথাগুলো বিশ্বাস করতোনা । আর তার মৃত্যুর পর কয়েকজন আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী
ছিল , কিন্তু তারা সমাজের অন্য মানুষের ভয়ে আমাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে
পারেনি । কিন্তু আমার স্বামী মরবার আগে একটি কথা মাঝে মাঝে বলতেন কেউ যদি আমার
মৃত্যুর পর সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসে তবে তুমি মহান সুলতান মুরাদের কাছে যেও ,
তিনি নিশ্চয় আমার ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করবেন । আমার লাশ দাফনে সহায়তা করবেন ।
সুলতানের কাছে ব্যাপারটা হৃদয়বিদারক লাগলো , সাথে সাথে তিনি তার কয়েকজন বিশ্বস্ত
সৈন্য দিয়ে ওই মহিলাকে স্বামীর মৃতদেহ সহ এলাকাতে লাশ দাফনের জন্য পাঠিয়ে দিলেন ।
(160)
এটা বুঝতে হবে যুদ্ধের সময় বা সম্পূর্ণ
নতুন ধর্মমত প্রচারের সময় এর সিচুয়েশন আর আমাদের যুদ্ধবিহীন শান্তিময় সমাজ জীবনের
সামাজিকতা ও সিদ্ধান্ত , প্রেক্ষাপট এক রকম হবেনা ।আপনি নিজেকে তাদের যায়গায় ,
তাদের পরিবেশ এর প্রেক্ষাপটে কল্পনা করলেও অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন । আবার ধরুন
পরিস্থিতিতে পড়ে মানুষ অনেক কিছু করে বা করতে পারে যেটা স্বাভাবিক সময়ে সম্ভব নয় ।
আপনি নদীর পানি ভয় পান , দেখা গেলো লঞ্চ ডুবি হলে আপনি প্রান বাঁচাতে প্রমত্তা নদী
পার হয়ে যেতে পারবেন , খাদ্যের অভাবে কখন বা কেন একটা ছিন্নমুল শিশু বা মানুষ
ডাস্টবিনের খাবার খায় সেটা যদি আপনি আমি না বুঝি বা বোঝবার জ্ঞান না থাকে তাহলে
মনে করবো বা বলবো ওই ছেলেটি বা লোকটি বিকৃত রুচির , কুকুরের মত
উচ্ছিষ্ট খায় , কোন ঘৃনা বা পিত্ত নেই ওর , আপনার শরীর খুব মোটা ঠিক মত
নড়তে চড়তে পারেননা , একটুতেই হাপিয়ে ওঠেন , শামুক বা কচ্ছপের মত আপনার চলার গতি ,
এমন একটা মানুষকে ধরুন যদি বিশাল একটা ছোরা হাতে কেউ খুন করবার উদ্দেশ্যে তাড়া করে
তখন সে প্রান বাঁচাতে ১০০ কি.মি প্রতিঘন্টা গতিতে দৌড় লাগাবে । তখন তার প্রাণ
বাঁচাতে দৌড়ানোর গল্প বোঝবার মত এলেম যাদের মাথাতে নেই তাদের কাছে অবিশ্বাস্য
লাগারই কথা । আবার ধরুন আমাদের দেশে বা আমাদের যুগে বহুবিবাহ এবং বহু সন্তান , যৌথ
পরিবার প্রথা পুরোপুরি বন্ধ বা বর্জনীয় হয়ে গেছে বলা চলে । কিন্তু ধরুন এই এখনকার
এক বিবাহ , এক সন্তান , অণু পরিবার এগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত ও যুগ যুগ ধরে যুদ্ধ চলছে
এমন দেশে মেইনটেইন অসম্ভবই বলা চলে । যে দেশে যুদ্ধের কারণে পুরুষের সংখ্যা নারীর
থেকে কমে যাবে সে দেশে স্বাভবিক ভাবে একজন পুরুষের কয়েকজন স্ত্রী থাকতে পারে ,
আবার যে সব দেশে ব্রোথেল নেই বা নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ নেই সেখানে
বহুবিবাহের হারটাও বেশি । আবার ধরুন যে
দেশে ঘন ঘন যুদ্ধ হয় এমন দেশগুলোতে শিশু জন্ম এবং মৃত্যূর হার বেশি । কারণ একটা
সন্তান যদি কারো থাকে আর যদি সে কখনো মারা যায় তাহলে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য
যুদ্ধবিদ্ধস্ত জনগোষ্ঠী অধিক সন্তান নিতে পারে , রোহিঙ্গা দের ভিতর লক্ষ্য করলেই
ব্যাপারটা আপনার কাছে পরিষ্কার হবে ।
(161)
আগের যুগে আমাদের দেশেও সন্তান বেশি
ছিলো কয়েকটি কারণে , জন্ম নিয়ন্ত্রন
সামগ্রীর প্রচলন একেবারে না থাকা , নারী
শিক্ষা ও ঘরের বাইরে কর্মজীবি নারীর অভাব , গোষ্ঠীর জনবল বাড়ানো , পুত্র সন্তানের
প্রত্যাশা ও এখনকার যুগের মামুলি রোগগুলির ওষুধ না থাকাতে সন্তানের মৃত্যু ।ইতিহাসের
অধিকাংশ মহামানবদের আমরা বিতর্কিত করি তাদের জীবনের অনেক ঘটনা নিয়ে ।কিন্তু
সেগুলোর পিছনের কারণ বা সময়ের প্রয়োজনীয়তা আমরা দেখিনা । মহামানবেরা কিন্তু যেটা
করেছেন , সেটা হয়তো আমাদের বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কাছে সঠিক বা উত্তম
না হতে পারে । কিন্তু অবশ্যই তারা তাদের সময়ের বিচারে সর্বোত্তম ইনসাফটি করেছিলেন
, মোটেই নিকৃষ্ট কিছু করেননি । যেমন ধরুন মানবজাতির আদিপিতা হযরত আদম আঃ সময় তার
দুই পুত্র হাবিল কাবিল এর কাবিল যে কারণে
হাবিলকে হত্যা করেছিল সেটা মুসলিম বলতেই জানি । কিন্তু তৎকালীন সময়ের ঐশ্বরিক
বিধান , ভাই বোনে বিবাহ কিন্তু এখন যুগে অবাস্তব , চোখ কপালে ওঠানো আর
সামাজিক ও বিশ্বজনীন ভাবে একই সঙ্গে প্রচন্ড ঘৃণিত ও নিন্দিত কাজ বা অজাচার । সুতরাং , যে কোন একজন মহামানবকে নিয়ে কটুক্তির আগে এবং
সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় ভেদাভেদ উস্কে দেবার আগে আমাদের এগুলো ভাবা উচিত ।আর আগের
যুগ কে ব্যাঙ্গ না করা ভালো । কারন যার যুগে সে উন্নত । যুগের পরিবর্তনে আগের
যুগের উন্নত জিনিস বর্তমানে এসে সেকেলে , বাতিল বা বা ব্যাকডেটেড হয়ে যায় । একজন মানুষের মতামত বা মতবাদ সবার স্বার্থে বা
সবার পক্ষে বা সর্ব যুগোপযোগী থাকেনা বা
নাও থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক ।বৌদ্ধ ধর্মে যেখানে মূলনীতিই জীবহত্যা মহাপাপ সেখানে বৌদ্ধ অধ্যুষিত
মায়ানমার , চীন , ভিয়েতনাম এ জাতিগত কারনে কত লক্ষ মানুষ হত্যা হল , আর মাংশের
জন্য কুকুর , বিড়াল , গরু ছাগল হত্যার পরিসংখ্যান তো দিলামই না । মানুষের মুখে মুখে , যুগ থেকে যুগান্তরে ঘটনা রঙ
চড়িয়ে বা রঙ বদলিয়ে আস্তে আস্তে মুল কাহিনী থেকে অনেক দূরে সরে যায় মুল ঘটনা ।আর
মানব জাতির আদি পিতার ইতিহাস তো সুদুর থেকে সুদুর অতীতের কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া
এক মহাসত্য , দিন যত যায় ইতিহাস হারাতে থাকে তার রঙ এবং গুরুত্ব ।
(162)
গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের
যায়গা দখল করে নেই নতুন ইতিহাস নতুন ঘটনা । এ ব্যাপারে বিস্তারিত এবং আকর্ষনীয়
আলোচনা করা হবে শেষ কয়েকটি অধ্যায়ে । আরেকটা বিজ্ঞান হলো গুপ্ত
বিজ্ঞান , যেটা কখনো জন সাধারণের সামনে আসেনা বা জন
সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়া নিরাপদ নয় ।এটা নিয়েও শেষের দিকে আলোচনায় আসছি । এ
ব্যাপারে বিস্তারিত এবং আকর্ষনীয় আলোচনা করা হবে শেষ কয়েকটি অধ্যায়ে ।
*****জ্যোতিষবিদ্যা কি সত্যি নাকি পুরোটাই ভন্ডামী ? *******
Astronomy(জ্যোতির্বিদ্যা),
astrology (জ্যোতিষবিদ্যা), astrophysics (জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান - নক্ষত্রের ভৌত ও
রাসায়নিক অবস্থা সংক্রান্ত বিদ্যা )তিনটি শব্দই শুনতে এক রকম এবং অনেকে এদের
পার্থক্য সম্বন্ধে বলতে পারেননা ।প্রায় এক বস্তু মনে করেন । কিন্তু এটা একেবারে তা নয় ।এই তিনটার পার্থক্য বুঝতে
আসুন একটা প্রাচীন ইতিহাস জেনে আসি । কিভাবে এলো জ্যোতিষবিদ্যা ও জ্যোতিষি । তাহলে
এই তিনটি শব্দের শব্দের পার্থক্য ও বুঝে যাবেন এবং সাথে জানা হবে জ্যোতিষবিদ্যার
ইতিহাস । আজ থেকে ০৫ হাজার বছর আগে মানে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে প্রাচীন মিশর এ
কিছু জ্ঞানী শ্রেণীর মানুষ আকাশের গ্রহ
নক্ষত্রের সাথে পৃথিবীর আবহাওয়া এবং জলবায়ুর একটা সম্পর্ক খুজে পান ।তাদের কাজ ছিল
শুধু গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা এবং এর সাথে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর সম্পর্ক খোজা ।
এটাকে বলা হয় astronomy- এ্যাস্ট্রোনমি বা জ্যোতির্বিদ্যা
।এভাবে তাঁরা এখনকার মত টেলিস্কোপ বা কোন
প্রযুক্তি না থাকা স্বত্তেও রহস্যজনক ভাবে মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ ও
নক্ষত্রের কার্য্য , গতিবিধি সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষণ
করেন । মিশরের নীলনদে বন্যা আসতো বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ।ব্যাপারটা এমন ছিল যে
লুব্ধক(Sirius – পৃথিবী থেকে ৮.৬ আলোকবর্ষ দুরত্বে অবস্থিত)
নামে একটা নক্ষত্র যদি বছরের কোন সময়ে সূর্য ওঠার একটু আগে উদিত হতো তবে নিশ্চিত
ভাবে নীলনদের বন্যা হতো । আবার ধুমকেতু দেখা গেলে যে কোন কায়দাতে ফসল নষ্ট হতো বা
রাজার পতন হতো।
(163)
আর আকাশের চাঁদ এবং সূর্যের আলোর
প্রভাবে জোয়ার ভাটার সাধারন ব্যাপারটা তো খেয়াল করলোই ।আবার নদীতে সমুদ্রে বা মরুভুমিতে রাতে পথ হারিয়ে ফেললে বিভিন্ন
তারার সাহায্য নিয়ে দিক ঠিক করে গন্তব্যে ফিরে আসতো ।সূর্যের ছায়া ব্যবহার করে সময়
ঘড়ি বানাল । ফলে এতগুলো বাস্তব এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান পেয়ে গ্রহ এবং নক্ষত্রের
প্রতি তাঁদের বিশ্বাস বেড়ে গেলো ।এবার তাঁরা খুজতে লাগলো মানুষের উপর ও এই গ্রহ
নক্ষত্রের কোন প্রভাব আছে কিনা ।এতদিন গ্রহ নক্ষত্র শুধু প্রকৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট
মনে হলেও এবার যখন গ্রহ নক্ষত্র মানুষের জীবনের উত্থান ও পতনের সাথে জড়িত মনে করে
যারা নতুন শাস্ত্র উদ্ভাবন করলো এদের কে বলা হয় এ্যাস্ট্রোলজার বা জ্যোতিষী ,
শাস্ত্রের নাম astrology-এ্যাস্ট্রোলজি বা
জ্যোতিষবিদ্যা।
রাশিচক্রের প্রচলিত নকশা – পশু পাখির বা মানব প্রতীক হলো রাশির প্রতীক , অক্ষরের মত
পতীকগুলো হলো রাশি অনুযায়ী গ্রহের সংকেত , আর সর্বমাঝে সূর্য্য , পুরোটাই সৌরজগতের
সাথে মিল রেখে করা রহস্যময় প্যাটার্ণ
(164)
আর astrophysics-এ্যাস্ট্রোফিজিক্স- জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান
হল নক্ষত্রের ভৌত এবং রাসায়নিক অবস্থার বিদ্যা ।এটি আধুনিক যুগে নক্ষত্র
সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষনার একটি শাস্ত্র । জ্যোতিষবিদ্যার রত্ন পাথর নির্নয়র সাথে
এর কোন সম্পর্ক নেই , এখানে এর বিস্তারিত আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক তাই ফিরে আসছি মূল
আলোচনায় ।মানব জন্ম অনুযায়ী এবং গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী মানুষের ১২ টি রাশিতে
বিভক্ত করা আছে
বর্তমান
অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমান করেছে মানুষের জন্ম মাস অনুযায়ী মানুষের আচরন ,
বাক্তিত্ত্ব এবং খাদ্যাভ্যাস এ ভিন্নতা দেখা যায় । আসুন দেখি জন্ম তারিখ অনুযায়ী
রাশি গুলোর নাম আর আপনার যদি সঠিক জন্মতারিখ মনে থাকে তবে মিলিয়ে নিতে পারেন আপনার
রাশি ।
মেষ ২১
মার্চ-২০ এপ্রিল //
বৃষ ২১ এপ্রিল-২১ মে // মিথুন ২২ মে-২১ জুন // কর্কট ২২ জুন-২২ জুলাই// সিংহ ২৩ জুলাই-২৩ আগস্ট// কন্যা ২৪
আগস্ট-২৩ সেপ্টেম্বর// তুলা ২৪
সেপ্টেম্বর-২৩ অক্টোবর// বৃশ্চিক ২৪
অক্টোবর-২২ নভেম্বর// ধনু ২৩
নভেম্বর-২১ ডিসেম্বর//মকর ২২
ডিসেম্বর-২০ জানুয়ারি// কুম্ভ ২১
জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি// মীন ১৯
ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ// তবে এখানে ভুল হতেও পারে তারিখে , আপনারা দেখবেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়
রাশিফল থাকে । সেখান থেকে সঠিকভাবে
আপনার রাশি মিলিয়ে নিতে পারেন ।
তো প্রাচীন মিশরে তৎকালীন
উদ্ভাবিত আইডিয়াকে প্রচলন করে মানুষের জীবনের সাথে ছক মিলানো হলো । আশানরূপ ভাবে
অনেকের সাথে মিলতেও লাগলো । ফলে এই শাস্ত্র টিকে যায় । এবং আজো চলছে । ভবিষ্যতেও
চলবে বলে মনে হয় । পৃথিবীতে জ্যোতিষবিদ্যা এবং তাবিজ বা কালোজাদু টিকে থাকার একটা
বিশেষ কারণ আছে ।কারণটা হলো পৃথিবীর প্রাণীজগৎ
এবং মানুষের জন্য একটি নির্দিষ্ট ইকো সিস্টেম আছে বা একটি চেইন সিস্টেম বা চেইন অফ
কমান্ড আছে । সেই সুত্রানুযায়ী একটা ক্লাসে পড়াশুনাতে সবাই প্রথম হবেনা , তবে সবাই
প্রথম হতে চাইবে , কিন্তু প্রথম সেই হবে যার পড়াশুনা ও সাধনা এবং ইচ্ছা ক্লাসের
সবার থেকে বেশি হবে ।
(165)
তদ্রুপ সমাজে সবাই ধনী ও
আর্থিক সচ্ছল জীবন চাইবে , কিন্তু সবাই
পাবেনা , পৃথিবীটাই প্রতিযোগীতার ভয়াবহ মাঠ , টিকে থাকবার শক্তি না থাকলে পৃথিবী
নকআউট করে দিতে কারো জন্য সময় দেবেনা , প্রমত্তা-খরস্রোতা নদী স্রোত হারিয়ে ফেললে
সাথে সাথেই বিন্দু বিন্দু বালিকনা আর কোথ্থেকে কচুরিপানা এসে জড়ো হয়ে যায় তার কাছে
, ব্যাপারটা আমাদের হার্টের যখন রক্ত পাম্প করার তেজ বয়সের সাথে কমে যায় তখন ভেইনে
কোলস্টেরল জমে যেমন মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকি তেমন। সমাজে আমরা সবাই সবক্ষেত্রে
শীর্ষস্থান দখল করবার চেষ্টা করি , কিন্তু চেষ্টা করলে কি হবে , আমাদের ৯৯% এর
চিন্তা ও কর্ম সফলতাকে ধরবার জন্য সম্পূর্ণ অকেজো , ০১% পুরুষ বা মহিলা সেই
সফলতাকে বন্দী করার আইডিয়া নামক মণির সন্ধান পায় । আর এই ০১% রাষ্ট্রের ও সমাজের
কর্তাস্থানীয় ব্যাক্তি ও সেলিব্রিটি ।আমরা এনাদের জীবন কাহিনী জানি , কি করে সফল
হলেন তাও জানি । কিন্তু কিসের যেন আমাদের একটা ঘাটতি থেকে যায় , সে কারণে সুত্র
জেনেও সফল হতে পারিনা । যখন মানুষ নিজ কাজের ভুলে ও প্রকৃত পরিশ্রম অভাবে সফল হতে
না পারে তখন ভাগ্য ও তাবিজের বিশ্বাস এসে যায় । কেউ কেউ হয়তো এই জ্যোতিষ বা তাবিজে
সফল হয়ে যায় তখন এই জিনিসগুলোর পসার বেড়ে যায় । এভাবে জ্যোতিষবিদ্যা টিকে থাকবে ।
এবার দেখি আমাদের ইসলাম ধর্ম কি বলছে
এব্যাপারে , ইসলামে জ্যোতিষচর্চা ও জ্যোতিষবাণী বিশ্বাস সম্পূর্ণ হারাম । এটা শিরক
ও কুফর এর আওতাতে পড়ে ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ “তিনি আলিমূল গায়েব (অদৃশ্যের জ্ঞানী) বস্তুতঃ তিনি স্বীয় গায়েবের
(অদৃশ্য) বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করেন না।” (আল জ্বিনঃ ২৬)তাহলে জ্যোতিষশাস্ত্র কি মিথ্যা , একেবারে মিথ্যা বলা যাবেনা । এর স্বপক্ষে
ইসলামিক গ্রন্থগুলোতে কিছু ঘটনার বর্ণণা আছে ।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর
নবুয়্যতের পূর্ব পর্যন্ত জ্যোতিষিরা যা বলতো সবই প্রায় ফলে যেতো বাস্তবে ।
(166)
কারণ সেই খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০
অব্দ থেকেই মিশরীয়রা এটা শুরু করে , তারা যা হোক কোন এক বিশেষ সাধনার মাধ্যমে বা
কোন গুপ্তবিজ্ঞানের জোরে হোক তারা জ্বীন আয়ত্ব করা শুরু করে এবং অদৃশ্য সেই সব
জ্বীনদের মাধ্যমে খবর পেতো । ফলে একজন লোকের ভবিষ্যত বা আসন্ন বিপদ বা সে এখান
থেকে শত মাইল দুরে কি করছে সহজে বলে দিতো ।যেহেতু ইবলিশ এর সিজদা না করার ঘটনা
থেকেই জ্বীনেরা মানবজাতিকে বিপথে চালানোর শপথ নিয়েছে সেহেতু বিশেষ কিছু অবমাননাকর
কাজের পর জ্বীনেরা সাধক বা জ্যোতিষীদের কিছু কিছু উপকার করে । হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ) এর নবুয়্যতের পূর্ব পর্য্যন্ত জ্বীনরা প্রথম আসমান পর্যন্ত পৌছাতে পারতো ,
এবং ফেরেশতারা পৃথিবী এবং পৃথিবীর ব্যাক্তিদের সম্বন্ধে কি বলা হচ্ছে জেনে নিত এবং
সে মোতাবেক হিসাব করে খবর দিতো এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতো , ফলে জ্যোতিষীদের প্রভাব
এতটাই বেড়ে গেলো যে কোথাও কোথাও তাদের
পূজা হতো পর্য্যন্ত ।কিন্তু বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ইসলাম প্রচারের কাজ শুরুর পরই আল্লাহতায়ালা
প্রথম আসমানের কাছে জ্বীনদের চলাচলের ক্ষমতা নষ্ট করে দেন । কারণ তারা সেখানে
পৌছাতে গেলেই তাদের দিকে(জ্বীনদের দিকে) উল্কা ছুটে আসে । তবুও কিছু কিছু জ্যোতিষী
বা তাবিজ প্রদানকারী কবিরাজ এখনো হয়তো জ্বীনদেরকে খুব কষ্টে ও অপমানজনক পথে
সামান্য পরিমানে বশ করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন ।জ্যোতিষবিদ্যা যে ভয়াবহ সত্য ছিল এটা
অস্বীকার করা যাবেনা , কারণ হলো এর সাথে ভারতবর্ষের খনা(৮০০ থেকে ১২০০
খ্রিস্টাব্দের মধ্যে) , বরাহ- মিহির(খনার শ্বশুর ও স্বামী , আবার বরাহ মিহির নামে
একজনকেই শুধু মাত্র পাওয়া যায় যিনি (৫০৫-৫৮৭)প্রাচীন গুপ্ত সাম্রাজ্যের একজন
জ্যোতির্বিদ , সেক্ষেত্রে খনা ৮০০ নয় ৫০০ সালের ভিতরের বিদ্বুষী রমণী , যার স্বামীর নাম পরাশর , পরাশরের বাবার
নাম বরাহমিহির , এই কিংবদন্তী মনিষী বরাহমিহির কিভাবে বলেছিলেন সেযুগে যে মঙ্গল
গ্রহে পানি আছে , লোহার অস্তিত্ব আছে , আর এই মনিষীই নাকি রাজসভাতে প্রতিপত্তি
হারাবার ভয়ে নিজ পুত্রকে আদেশ দেন পুত্রবধু খনার জিহ্বা কেটে নেবার জন্য এই মিথ বা
ঐতিহাসিক সত্য বা বিতর্ক যা বলুন বরাহমিহিরকে নিয়ে আছে )
(167)
মিশরের জ্যোতিষী ব্যাবিলাস ,
গ্রীসের গণিতবীদ পিথাগোরাস(খ্রিস্টপূর্ব ৫৭০-৪৯৫ অব্দ) , জন এফ কেনেডীর মৃত্যূ ,
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যূ(ডেবি ফ্রাংক রিড নামে এক জ্যোতিষীর গণণামতে মৃত্যূ) , ভারতবর্ষের
বুযুর্গ শাহ নিয়ামতউল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী(১১৫২ সালে রচিত একটি কবিতাতে বিবৃত যা
কাশফ যোগে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান , যেটাকে জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে মিলানো অন্যায় ,
তবুও এটা অনেক জ্যোতিষী উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে , মহান এই বুযুর্গের প্রত্যেকটি
ভবিষ্যদ্বাণী ফলেছে বলা হয় ), নস্ট্রাদামুস(১৫০৩-১৫৬৬) , মায়ান ক্যালেন্ডার (১১
আগষ্ট ৩১১৪ BCE- ২১শে ডিসেম্বর ২০১২ ইং , মোট ১৮,৭২,০০০
দিন ) এর মত প্রমাণিত সত্যের নাম জড়িয়ে আছে ।
আর একটা কথা রত্নপাথর কি সত্যিই উপকার করে ? কিছু কিছু বিজ্ঞানমূলক গবেষনা বলে
কিছু কিছু ধাতু বা পাথর শরীরের উপর উপকারী বা অপকারী যে কোন প্রভাব ফেলতে পারে
।যেমন স্বর্ণের পুরুষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব আছে হয়তো সেজন্য পুরুষের জন্য স্বর্ণের
অলংকার ইসলামে ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে । তেমনি হীরা ও রুবির
উপকারী প্রভাব থাকতে পারে । তবে আপনার ভাগ্য বা আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে
কিনা সেটা সবার ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা দেওয়া যাবেনা ।আসলে ব্যাপার হলো
একেবারে কোন উপকার না পেলে মানব সমাজে কোন কিছু টিকে থাকতে পারেনা । ধরুন হোমিও ঔষধে সবাই উপকারিতা পায়না , এবং এটা কাজ করে বেশ ধীরে ,
কিন্তু তাতে কি হোমিও ডাক্তার এর পসার কমে গেছে ? কিছু লোক উপকার পায় বলেই তো সেটা
টিকে আছে , তেমনি কবিরাজি বা আয়ুর্বেদিক ঔষধ ও তাই , আবার হাতুড়ে ডাক্তার বা
গ্রাম্য ডাক্তার যাদের বলি তাদের থেকে আমাদের কে সাবধান থাকতে বলা হয় এবং এটাও বলা
হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে , কিন্তু বিশেষজ্ঞ বা এম বি বি এস ডাক্তার এর
থেকে হাতুড়ে বা গ্রাম্য ডাক্তার এর কাছে দশগুণ বেশী রোগী যায় , একেবারে অকেজো হলে
পৃথিবীতে সেই জিনিসটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে , মোটেই সেটাকে আপনি সমাজে দেখতে পাবেননা
, জ্যোতিষবিদ্যার ব্যাপারটাও ঠিক তাই ।
(168)
তাহলে আমি আর কি বলবো ? সত্য
না মিথ্যা বলতে পারলামনা । তবে একটা পরামর্শ দিতে পারি , তা হলো নিজের ভাগ্য যদি
উন্নয়ন করতে চান তবে প্রচুর পরিশ্রম করুন আর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন , ভাগ্য উন্নয়নে পরিশ্রমের বিকল্প নেই , সাফল্যের শর্টকাট পথ হয়না ।তারপরে যদি সফলতা কে ছুতে
না পারেন তবে সেটা আপনার নিয়তি , জ্যোতিষবিদ্যাও এটা স্বীকার করে যে আপনার ভাগ্যের
৯০% আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে বা পরিবর্তন করতে পারেন , বাকি ১০% হল নিয়তি , যার উপর
আপনার আমার কোন হাত নেই ।
ÔÔ সৃষ্টি রহস্য ও স্রষ্ঠার অস্তিত্ব সৃষ্টিকর্তা
বলে কেউ কি আছেন ÕÕ?
আল্লাহ , ঈশ্বর , ভগবান , গড , সৃষ্টিকর্তা যে নামে ডাকিনা কেন
তিনি একজনই তা আমরা সবাই মানি , মানব অস্তিত্ব এর সাথে একটা প্রশ্ন জড়িত যে আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা আছেন কিনা , তিনি কি
সত্যিই আছেন ?তার সৃষ্টি কত আগের , তিনি
কি অনাদি অনন্ত ?যদি অনাদি অনন্ত হন তবে সেই অনাদি অনন্ত
বলতে কি বোঝায় বা কত আগের বোঝায় (উইকি , হিন্দু ও মুসলিম
ধর্মগ্রন্থে পাওয়া রেফারেন্স ভিত্তি করে ) ।মানুষের সাথে স্রষ্ঠার
যোগাযোগের সব থেকে বড় মাধ্যম হলো মানুষের এক বাক্যের একটা চিন্তা সেটা হলো আমি
কোথা থেকে এলাম কিভাবে এলাম কে আমাকে সৃষ্টি করলো , এই চিন্তাটা
সহজাত ভাবে আমাদের মাথায় আসে বলে আমরা স্রষ্ঠাকে খুজি
, স্রষ্ঠাকে পাবার চেষ্টা করি ।এই চিন্তাটা মাথাতে না থাকলে
বা আমাদের মাথায় যদি না আসতো তবে আমরা স্রষ্ঠাকে নিয়ে
ভাবতামনা বা স্রষ্ঠাকে পেতামনা ।স্রষ্ঠাকে
যেখানে সেখানে খালি চোখে দেখা যায়না , সবার দেখার চক্ষু থাকেনা । তিনি ধরা দেন
অনুভূতিতে উপলব্ধিতে ।স্রষ্ঠাকে বিশ্বাস নিয়ে দুটো শ্রেনী
আছে ।একদল হলো স্রষ্ঠাতে বিশ্বাস করে আরেকদল হলো স্রষ্ঠাতে বিশ্বাস করেনা ।স্রষ্ঠাতে
বিশ্বাসীরা হলো আস্তিক আর অবিশ্বাসীরা হলো নাস্তিক ।সব যুক্তি
অস্বীকার করে স্রষ্ঠাকে অস্বীকার করে দিলে হয়ে গেল নাস্তিকতা ।
(169)
তাই নাস্তিকতা নিয়ে বলার বিশেষ কিছু নেই
, তবে মানুষ কেন নাস্তিক হয় বা নাস্তিকতাতে বিশ্বাসী হয় সে ব্যাপারে এই স্রষ্ঠার অস্তিত্বের
অধ্যায়ের শেষে কয়েকটি বাক্যে আলোচনা করবো ।এখন স্রষ্ঠাতে
বিশ্বাসী হই আর অবিশ্বাসী যাই হইনা কেন
আসুন সৃষ্টিতত্বের কিছু ব্যাপার স্যাপার নিয়ে ভাবি ।নিরপেক্ষ মনে
ভাববো অবশ্যই , আস্তিক হই আর নাস্তিক হই কোন পক্ষে যাবোনা । শুধু কি বলছি শুনে যাব আর গভীর থেকে ধরবার চেষ্টা করে যাবো ,
বিবেকের থেকে সত্যি বা মিথ্যা বোঝার চেষ্টা করে যাবো । আসুন শুরু করা যাক , কার
ইশারাতে আমি ও আমার শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো সুনির্দিষ্ট ছন্দ মেনে চলছে , দিনের পর দিন পৃথিবীতে একই নিয়মে দিন এর স্থানে দিন আর রাতের স্থানে রাত
হচ্ছে । সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত
এর কোন বাত্যায় ঘটেনি ।আচ্ছা মানুষ স্রষ্ঠার অগনিত সৃষ্টির মধ্যে একটা সৃষ্টি
মাত্র ।মানুষ সৃষ্টির ভিতর সেরা এটা যেমন সত্য তেমনি মানুষের মস্তিষ্ক সবার থেকে
উন্নত এটাও আমরা জানি , বিজ্ঞানীদের দ্বারা সেটা প্রমাণিতও । কিন্তু কথা হলো বিজ্ঞান মানুষের ব্যাপারে যতটা
না জেনেছে অন্যান্য প্রানী , কীটপতঙ্গ , গাছপালা এর মস্তিষ্কে বা মনে কি খেলা চলছে
, তারা কি জানে , তাদের মস্তিষ্কে কি সব চিন্তা খেলা করে, তাদের চোখে তারা এমন
কিছু দেখতে পায় কিনা যেটা মানুষ দেখেনা , কিন্তু তারা দেখে এরকম বাপারে গবেষণা বা
জানার ব্যাপার মানুষের শূন্য এর কোটায় ।আমাদের পৃথিবীর বাইরের মহাবিশ্বের ব্যাপারে
জানার মত সমান গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্র ও বৃহৎ কীটপতঙ্গ থেকে
শুরু করে সকল পশু পাখির ভাষা বোঝবার কোন যন্ত্র আবিষ্কার করা । একেকটা কীটপতঙ্গ ,
একেকটা প্রাণী হল বিজ্ঞানের অজানা ও অদ্যাবদি অনাবিস্কৃত সুবিশাল জ্ঞানের ভান্ডার
। পশুপাখির ভাষা আপনি আমি বুঝতে পারছিনা ঠিক আছে , তাতে কোন সমস্যা ও নেই , কিন্তু
একটা কাজ করবেন , কাজটা হল যে কোন কীটপতঙ্গ , পশুপাখির জীবনাচরণ খেয়াল বা গভীরভাবে
পর্যবেক্ষণ করবেন । তারা কিভাবে খাবারের খোজ পায় , কোন ধরনের খাবার কোন প্রাণী
বেশি খায় ? বিজ্ঞান ওই খাবার গুলোর ব্যাপারে কি বলে ?
(170)
কিভাবে বাসা বাধে , ডাকের ভিতর সুরের
ভিন্নতা আছে কিনা , কিভাবে বাচ্চা উৎপাদন করে ইত্যাদি ইত্যাদি । একটা জিনিস খেয়াল
করুন ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের যন্ন একটা মুরগী বা কবুতর কতদিন ডিমে তা দেয় , তা
দেবার সময়ে দিনে কবার ডিম রেখে কতক্ষনের জন্য ওঠে , বাচ্চাদের কি কি খেতে দেয় এসব
পর্যবেক্ষণ করলেই আপনার কাছে অনেক কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে ।তো এরা যদি শুধু
কীটপতঙ্গই হয় তবে , এদের জীবনাচরণের ভিতর এত বিজ্ঞান আসে কোথা থেকে ? কথা হলো কবুতর এর কাজ কি খাওয়া আর ওড়া ? তাকে সৃষ্টির কি আর কোন উদ্দেশ্য নেই
, শুধু মাত্র খাওয়া আর ওড়ার জন্যই কি স্রষ্ঠা তাদের সৃষ্টি করেছেন ? ছাগল শুধু খায়
আর জবাই হয়ে মানুষের পেটে যাবার জন্য কি ওর সৃষ্টি , ঘোড়া কি শুধু দৌড়ানোর জন্য
জন্ম গ্রহন করেছে , এই প্রানী গুলো সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি শুধু এই ঠুনকো কাজ গুলো ,
নাকি আমরা শুধু এই সব প্রানীগুলো বা গাছ গুলো আমাদের যে যে কাজে লাগে শুধু সেই কাজ
গুলোতে এদের শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যবহার করে যাচ্ছি বলে এদের ক্ষমতা আমরা শুধু এই
দুই একটা কাজে আবদ্ধ করে রেখেছি , সাথে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি আমাদের জ্ঞানের জগতকে
ও।ধরুন আপনি সুন্দরবনে বেড়াতে গেলেন , সেখানে একটা বাঘ আপনাকে আক্রমন করলো , আপনি
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব--এই কথাটাও কিন্তু আপেক্ষিক ভাবে ব্যাখ্যা করে
বিতর্কিত করে দেওয়া যায় , কারণ বাঘ সিংহ দের কি মানুষের থেকেও বেশি হিংস্র মনে হয়
? বনের পশু কি মানুষের মত বিকৃত যৌনকামী ? । আপনার অনেক জ্ঞান গরিমা
আছে , কিন্তু বাঘের কাছে আপনি খাদ্য মাত্র , আপনার জ্ঞান –
বিদ্যা সবই বাঘের দৃষ্টিতে অজানা অর্থহীন এবং একই সাথে তা মূল্যহীন ও বটে । বাঘের কাছে আপনি এই সৃষ্টির সেরা জীব
মানুষ শুধু মাত্র সুস্বাদু মাংশপিন্ড মাত্র । অন্যদিকে কথিত আছে হযরত সুলাইমান আঃ সকল জীবজন্তুর ভাষা
বুঝতেন । আর বর্তমানে কিছু বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পশুপাখির ডাকের ভিতর ভেরিয়েশন
খোজবার জোরদার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।যাতে করে পশু পাখির ডাকের অর্থ খুজে বের করা যায় ।পশুপাখির ডাক ও
আমরা শুধু একটা ধ্বনি তে শুনি মাত্র , ধরুন গরু ডাকলে আমরা শুনি হাম্বা , কিন্তু
একেক সময় এই হাম্বা একেক রকম অর্থ বহন করে । মানুষের ভাষাও এই অনর্থক এক ধ্বনির
কিচিরমিচির
(171)
ছাড়া আর কিছু নয়
আমি এই বইএর শুরুর দিকের ভাষা অধ্যায়ে
একবার এ বিষয়ে বলেছি , আবার ও বলছি|
আপনি আমি বাংলা
ভাষা ভাষীরা চাইনিজ বা তামিল দের ভাষা মোটেই বুঝবোনা , এদের কথাবার্তার সময় যদি
আমরা পাশে থাকি তাহলে আমরা শুনবো কি
অনর্থক একরকম শব্দে কিচিরমিচির এরা করে যাচ্ছে । কিন্তু যদি ওই ভাষা দুটো
বুঝি তাহলে ওই কিচিরমিচির তখন বিরাট জ্ঞান বা গল্পের ভাণ্ডার হয়ে যাবে । বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা করছেন এই শুধুমাত্র এই
হাম্বা ডাক বা কুকুরের ঘেউ ঘেউ থেকে সময় ও পরিস্থিতি ভেদে অর্থের ভিন্নতা বের
করে আনতে ।মানুষ আমরা শুধুমাত্র যেটুকু বুঝি শুধু সেটুকু নিয়ে আমরা মাতামাতি করি ,
মনে করি শুধু আমাদের এই জানাটাই সবকিছু
জেনে ফেলা, এই জ্ঞান এর বাইরে আর কিছু নেই । আমাদের
এই ধারনাটাই বড় ভুল , অসীম মহাবিশ্ব এর অসীম শক্তি ভাণ্ডার আর জ্ঞান ভাণ্ডার এর
সন্ধান লাভ এর ক্ষেত্রে এটাই আমাদের সংকীর্ণতা । আমাদের ইসলাম ধর্মমতে স্রষ্ঠা সবকিছু
সৃষ্টি করেছেন ০৭ দিনে । হিন্দুদের ধর্মমতে ব্রহ্মা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন । আমরা
ঠিক মত মানব জীবন এবং পৃথিবী সম্বন্ধে ধারনা রাখিনা , আর পৃথিবী এবং তার বাইরের
জগত তথা সুবিশাল মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীর বাইরের জগতের এবং পৃথিবীর ভিতরের সমস্ত
মাখলুকাত বা সৃষ্টির প্রত্যেকটি সৃষ্ট জীবের জীবনযাত্রা একেকটা অজানা মহাজ্ঞান এর
ভাণ্ডার । এই জ্ঞান ভাণ্ডার কি কখনো আমাদের জন্য উন্মোচিত হবে ? হবেনা বোধহয়ই কখনো
। কারন ব্যাপারতা এত সহজ নয় । যদি আমরা বা
আমাদের সভ্যতা প্রাণীর ভাষা বোঝবার মত উন্নত হবার আগে আমরা ধবংশ হয়ে যাই ।যদি কিছু
মানুষ বেঁচেও থাকি তবে আবার এরকম উন্নত হতে দু হাজার বছর লাগবে ।যত উন্নতই হোন
কতদুর মানবজাতি যাবে , কতদূর বিজ্ঞানের উন্নতি করবে তার সিদ্ধান্ত বা নিশ্চয়তা
মানুষের হাতে নেই । এটা অদৃষ্টের লিখন বা স্রষ্ঠার লেখা নিয়তি এটা মানতেই হবে ।
বিশ্বাস হবেনা আপনাদের , তাই স্বল্প জ্ঞানে কিছু উদাহরন দিই । আপনি বা আমি এই যে
মৌমাছি দেখি এগুলোর মধু আহরন থেকে শুরু করে মৌচাক বানানো , এদের একেকটা চাক এ
পরিচালনাকারী মাছি পর্যন্ত কত বিজ্ঞান মেনে চলে একবার ভেবে দেখেছেন ? মৌমাছির চাক
কেন ষড়ভুজ জানেন , চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে মিল রেখে এবং অজানা
(172)
কিছু কারনে এরা
এদের চাক ষড়ভুজ করে রাখে । বাবুই পাখির বাসা বোনার আর্ট দেখেছেন ? কিভাবে সে বাসা
বানায় । তালের পাতাতে এমন ভাবে বাসা বানায়
যে ঝড় বৃষ্টিতেও সেটা ভেঙে পড়েনা , সেটা না হয় বাদ দিলাম , কিন্তু বাসার বুনন টা
দেখেছেন কখনো । আপনি মানুষ আপনার শরীরটা নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন ? এই যে আপনি হাত
নাড়াতে চাইলে নড়ে এটা কিভাবে হয় একবার ভেবে দেখেছেন ? আপনার শরীরে কত্ত জটিল সব
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ চলে ভেবেছেন কখনো ? আপনি খিদা লাগলে খান , সেটা হজম হতে
পাচক রস ক্ষরন থেকে অন্ত্রে শোষণ থেকে বজ্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত কত জটিল সব
প্রক্রিয়া চলে ভাবেন তো , আপনার পেটে যে এসিড তৈরি হয় খাদ্য হজমের জন্য সেটা যে আপনার
পাকস্থলি কে খেয়ে ফেলেনা কার ইশারাতে বোঝেন ?আপনি ঘুমিয়ে থাকলে আপনার নাক এবং
কানের ছিদ্র তোঁ খোলা থাকে , কিন্তু সেখান দিয়ে ক্ষতিকর কোন পোকামাকড় ঢোকেনা কেনো
ভেবেছেন কখনো ? অনেক ছোটখাটো সামান্য একটা পোকাও তোঁ আপনার কান বা নাক দিয়ে ঢুকে আপনার
মগজ টা খেতে পারে কিন্তু তা করেনা কেন , কখনো ভাবেন ? মনিষীরা বলেছেন ঈশ্বর কে
চিনতে হলে আগে নিজেকে চেনো , যে নিজেকে পুরো চিনতে পারে সে সৃষ্টি তত্ত্ব অনেকটা
বুঝতে পারে । আপনার গায়ের চামড়া নিশ্চয় পেটের ভিতরের থেকে বেশি জব্দ ,
কিন্তু আপনার গায়ের চামড়াতে ঝাল লাগিয়ে দিলে আপনি চেচিয়ে দৌড় দেবেন , অসহ্য
যন্ত্রনাতে ছুটোছুটি করবেন , কিন্তু আপনার পেটের ভিতরের অতি সংবেদনশীল এবং কোমল
চামড়া কিন্তু ঠিকই গুরুপাক তরকারির প্রচুর
ঝাল সহ খাবার বিনা যন্ত্রনাতে হজম ও করে
নিচ্ছে । আপনার চোখ এমন একটা নিয়ামত এর
সাথে কিছুর তুলনা হয়না , শত ঠাণ্ডাতে কিন্তু আপনার চোখ বা চোখের পানি জমে যাচ্ছেনা
, গরুর কাচা মাংশ সিদ্ধ করতে চুলাতে কত তাপ দিতে হয় , কিন্তু এই কাচা মাংশ মানুষ
কে খাইয়ে দিলে সেটা পেষ্ট এর মত হয়ে হজম হয়ে যাবে । আপনি যে যে জিনিস খান তাতে থাকে অনেক সুস্বাদু
মসলা , আপনি ধরুন একটা তরকার খেলেন , সেটা ধরুন হালাল কোন পশুর মাংশ , এই মাংশ
রান্না করতে গিয়ে আপনি মাংশে মসলা , লবন ,তেল , ঝাল ,পিয়াজ , রসুন কত কি দিয়েছেন ,
এগুলো রান্নার পর আপনার পেটে যায়
(173)
যখন জিহবা হয়ে , তখন জিহবা কি স্বাদ টাই
না পায় , কিন্তু জিহ্ববার এই বোধ যে আপনি পাচ্ছেন এই বোধ টা আপনার মস্তিস্কে
কিভাবে পৌছাচ্ছে , জিহ্ববাতে কি এমন সেট করা আছে যে আপনি স্বাদ লাভ করছেন কোন কিছু
জিহ্ববাতে পড়ার সাথে , আপনি খাবারটা হাতে নিলে তো আর সেই স্বাদ পাচ্ছেননা , কারন
খাবারের স্বাদ নেবার যন্ত্র শুধু জিহ্বাতে তে সেট করা আছে । আপনার যৌন সুখ নেবার
জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ আছে , নির্দিষ্ট চিন্তা আছে , নির্দিষ্ট হরমোন আর নির্দিষ্ট
অঙ্গের মাদ্ধ্যমে আপনি রতিসুখ লাভ করতে পারেন , আপনি যদি ফলমুল বা গাছপালা নিয়ে
ভাবেন নিশ্চয় আপনার ভিতর তাতে যৌন চিন্তা বা তাড়না আসবেনা । আপনি যে তেল , ঝাল মসলা সহযোগে খাবার পেটে পুরছেন
সেই খাবার পেটে হজম হয়ে পুষ্টি হয়ে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় অংশে গিয়ে শক্তি , রক্ত
ও বীর্য , দুধ তৈরি হচ্ছে । এটা কি ভাবে হয় কখনো ভেবে দেখেছেন । আপনি এই যা খাবারটা খেয়ে এত স্বাদ পেলেন , এত
শক্তি লাভ করলেন সেটা কার ইশারাতে বা কি জটিল কাজ হওয়া সত্তেও কিভাবে আপনার শরীরে
বিনা যন্ত্রনাতে শোষন হয়ে যাচ্ছে ভেবে দেখেছেন কি , এই খাবার গুলোর একটা উপাদান
মানে তেল বা যে কোন মসলা ইঞ্জেকশনের মাদ্ধ্যমে আপনার শরীরে ঢুকিয়ে শরীরে শোষন করতে
পারেন কিনা দেখুন তো , পারবেন তো না বরং সাথে সাথে রক্তে বিষক্রিয়া বা হার্ট ব্লক হয়ে
মরবেন , সামান্য খাবার পানি শরীরে সিরিঞ্জ দিয়ে ঢুকালেও ইনফেকশন হয়ে মরবেন , যদি
সেটা ডিস্টিলাইজ পানি না হয় আচ্ছা আমরা
যদি কোন ময়লা বা বিষ্ঠা গায়ে মেখে বসি বা খেয়ে ফেলি তবে আমাদের শরীর সাথে সাথে হোক
বা দেরিতেই হোক ভয়াবহ জীবানু আক্রান্ত হয়ে মরবার দিকে যাবে , যদি আপনি সামান্য
ঘেমে যাওয়া একটা নোংরা জাঙ্গিয়া কয়েকদিন পরেন তাহলেও আপনার প্রাইভেট বা গোপন
অঙ্গগুলতে ফোড়া বা ইনফেকশন হতে পারে , কিন্তু কখনো ভাবেন আপনার মুত্র বা বর্জ্য ত্যাগের রাস্তা সবসময় নোংরা মল মুত্র পুর্ন থাকা
সত্ত্বেও কেন সেখানে চুলকানি বা ঘা পাচড়া হচ্ছেনা , আপনার নিম্নাঙ্গ পচে যাচ্ছেনা
, আপনি তোঁ প্রসাব বা বর্জ্য ত্যাগের পর হাত জীবানু
মুক্ত করার জন্য লাইফবয় দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেন , তা না হলে নানা রোগাক্রান্ত হবেন ,
(174)
কিন্তু শরীরের ভিতর যে মুত্রথলি আর
মলাশয় এ বর্জ্য জমা হচ্ছে সেখানে কোন জীবানুনাশক বা স্যাভলন দিয়ে জীবনে কি একবার ও
আপনার বা আমার মুত্রথলি বা মলাশয় ধুয়ে ফেলতে হয়েছে , এই দুই যায়গা তো জীবানুর মহা
কারখানা , আপনি বা আমি হলুদ , লাল ,সবুজ নানা রঙের ফলের জুস খাই , সেটা যখন প্রসাব
আকারে বের হয় তখন কিন্তু হলুদ বা সবুজ হয়ে বের হয়না ,বের হয় স্বচ্ছ পানির রঙ এ , তাহলে
আপনার কিডনি টা কত বড় নিয়ামত , কত উন্নত ছাকনি , যে , যে ছাকনি রঙ পর্য্যন্ত আলাদা করে রাখে , আপনি
ভাত-মাছ –তরকারি সহযোগে ০৫-০৭ পদে খেয়ে পানি পান করেন
,একবার ভাবুন তো আপনি গোশ , মাছ ,ভাত ,তরকার ,ডাল , মিষ্টি , দই একসাথে যদি একযায়গায়
একটা পাত্রে ভাল করে চটকে মেশান তবে সেটা কেমন দেখা যাবে , কি বিশ্রী না , এবার
ভাবুন তো আপনি বা আমি যখন ০৫-০৭ ভাগে মজা করে খাবার গ্রহন করি তখন এটাতো আমাদের পেটেও
এই ভাবে থাকে , আর এই জিনিস গুলো ওই অবস্থাতে সরাসরি রক্তে মিশে যায়না , একটা কল
যদি মাটিতে পোতা থাকে আর সেই কলের পাশ দিয়ে পচা নর্দমা থাকে সেই নর্দমার পানি
পর্যন্ত মাটি ছুয়ে ঠিকই কলের পানির সাথে মিশে যায় । কিন্তু আপনার শরীরটার ভিতর
পুরাটাই পানি ভেদ করবার মত মাংশের স্তর হওয়া সত্তেও খাবার ওই চটকান অবস্থাতে আপনার
হার্ট এ বা ফুসফুসে ঢুকে পড়েনা , নির্দিষ্ট ভাবে তৈরি হয়ে , নির্দিষ্ট রুপান্তর
শেষে তারপর আপনার সেই খাবারগুলোর বিভিন্ন উপাদান যেটুকু রক্তে যাবার দরকার রক্তে
যাচ্ছে , যেটুকু যে হারে যাবার দরকার সে হারে শোষিত হয়ে যাচ্ছে , যেটুকু রক্ত হবার
দরকার রক্তে রূপান্তর হচ্ছে , যেটুকু
বীর্য্য হবার দরকার হচ্ছে , উচ্ছিস্ট টুকু চলে যাচ্ছে মলাশয়ে । কিন্তু আপনার
শরীরের ভিতর বিষাক্ত প্রসাব বা মল কখনোই আপনার রক্তে বা শরীরের ভিতর ছড়িয়ে পড়ছেনা
, যদি পড়তো দু একদিনের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনার সাথে পচন ধরে আমরা মরে যেতাম । ইচ্ছা
মত তো শরীরটা নিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন , ইচ্চা মত চলন শক্তি নিয়ে বেড়াচ্ছেন , ইচ্ছা মত
মেকাপ করছেন , রুপ প্রদর্শন করছেন , কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার এই যে সুন্দর চেহারা
কিসের ভিত্তিতে , নাক মুখ চোখ তো সৃষ্টিকর্তা সবাইকে দিয়েছেন ,
(175)
কিন্তু আপনি কেন অতি রুপবতী , আপনার
রুপে পুরুষ কেন একটু বেশি মাতাল হয় , অন্য নারীদের থেকে আপনার রূপ দর্শনে তারা
অনেক বেশি প্রশান্তি পায় কারন আপনি সুন্দরী বলে , ওই যে বললাম আপনি সুন্দরী ,
কিন্তু কেন , অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা কেন , নাক মুখ চোখ তো সবার আছে , তাহলে কি ?
কারন টা হল স্রষ্ঠার উপহার , আপনার মুখের ত্বকের নিচে উপরে এবং চোয়ালের হাড়ে আর
মুখের মাংশপেশীতে স্রষ্ঠা এমন জটিল এক বিন্যাস করে সাজিয়ে দিয়েছেন যে সেজন্য আপনি ঐশ্বরিয়া
,মাধুরী ,শ্রীদেবীর মত বা ক্ষেত্রবিশেষে
তাদের থেকে সুন্দরী , হ্যাঁ ওনাদের থেকেও সৌন্দর্য্যের অধিকারী বাস্তবে হয় ।সেলিব্রিটি
মানে সৌন্দর্যের শেষ কথা নয় সেলিব্রিটি হতে হলে সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি অভিনয় প্রতিভা বা ক্ষেত্র অনুযায়ী গুণাবলী থাকতে
হয় ।জানেন একটা মানুষের জীবনে ০৯ বার তার
চেহারার বা রূপের পরিবর্তন ঘটে ?আপনি সুদর্শন বা শক্তিশালী পুরুষ
ইচ্ছা মত ধুমপান করছেন , জগত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন , কজন ভেবে দেখেছেন কত জটিল
প্রক্রিয়াতে আপনার শরীরের এই শক্তিদায়ী , যুবকত্বদায়ী প্রয়োজনীয় হরমোন এল ।শুক্রাণু
থেকে কত জটিল প্রক্রিয়াতে মানবজন্ম হল সেটা কি কখনো ভাবেন , ব্যাপারটা নারীপুরুষের মেলামেশার কারণে স্বাভাবিক ফলাফল
মনে হলেও কত জটিল প্রক্রিয়ার ভিতর দশ মাস দশদিনে একটু একটু করে মানবশিশু পূর্ণতা
পায় , আকৃতি পায় , লিঙ্গ পরিচয় পায় সেটা কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকা সত্ত্বেও
বিস্ময়কর এবং একই সাথে রহস্যময় ব্যাপার ।আপনি ঘুমিয়ে যান আবার স্বাভাবিক নিয়মে উঠে
যান , কিভাবে সেটা হয় ভাবেন কখনো , ঘুমের ভিতর আপনার টয়লেটে যাবার দরকার হলে ঘুম
ভেঙ্গে যায় কখন ভাবেন সেটা , যদি ঘুম না ভাঙ্গত কি হতো ? আপনি যে হাড়িতে ভাত
খাচ্ছেন সেই একই হাড়ির ভাত খেয়ে আপনি দিনকে দিন বুড়ো হচ্ছেন আর একই খাবার খেয়ে
আপনার ছেলে জোয়ান মরদ হচ্ছে , আপনার সেই ছোট্ট মেয়েটি সবুজ লাউডগার মত সতেজ হয়ে
বেড়ে উঠছে , দিনকে দিন গোলাপের মত রুপবতী
হচ্ছে কেন ভাবেন একবার , যদিও স্বাভাবিক চোখে উত্তরটা সহজ , বয়স বাড়ছে আর আপনার ভিতরের কলকব্জা উৎপাদন
ক্ষমতা হারাচ্ছে যদিও বলে দেওয়া যায় , কিন্তু তারপরেও ভাবার ও জানার অনেক কিছু
বিস্ময় হয়েই থেকে যায় ।
(176)
আচ্ছা এত ধুলাবালি এই যে বাতাসে , আপনি
এই যে চলাচল করেন নিশ্বাস নেন , সেখানে দেখা যায় দু একদিন আমাদের বাড়ি ঘর ঝাড়ু না
দিলে আমাদের ঘরের মেঝে এবং আসবাবপত্রের উপর ময়লা এবং ধুলাবালির পুরু আস্তরন জমে যায়
। কিন্তু আমরা অনবরত শ্বাস নিশ্বাস নিচ্ছি তাতে আমাদের ফুসফুস তো ধুলাতে পুর্ণ হয়ে
আমাদের দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়া উচিত ,কিন্তু আমাদের ফুসফুসে তো কোন ধুলা বালি ঢোকেনা
, বা জমা হয়েও নেই । কখনো একটু ভাবুন তো আপনার হার্ট , মস্তিষ্ক এবং কান কত জটিল
মেশিন , এর কার্য্য সম্বন্ধে ভাবলে বা বেশ কিছুক্ষণ যদি নিজের হার্ট এর সোজা বুকে
হাত দিয়ে হার্ট এর বিট বা স্পন্দনটা কিছুক্ষণ একাগ্রভাবে উপলব্ধি করেন তবে দেখবেন
আপনার ভিতর একপ্রকার ভয় আর ঈশ্বর আছেন বলে
উঠবে মন , নাস্তিকতা এমনিতেই মন থেকে চলে যাবে । আচ্ছা এই যে আপনি বা আমি পৃথিবীতে
বা পৃথিবির ভূপৃষ্ঠে কত দুষিত পদার্থ রয়েছে
, মানব বর্জ্য ,পশুপাখির বর্জ্য , কলকারখানার বর্জ্য সহ ক্ষতিকর অনেক দুষিত
পদার্থ রয়েছে , আমরা টিউবওয়েল দিয়ে পানি উত্তোলন করে খাচ্ছি ।এই পানি তো দুষিত হয়ে
যেতে পারে ,দুষিত হয় , দেখা যাই আর্সেনিক দুষণের কবলেও পড়ে । কিন্তু দেখুন এই পানি
চক্র অনুযায়ী আমাদের খরচ করা পানি , সাবান মিশ্রিত পানি ,বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্য
মিশ্রিত পানি কত সুন্দর করে ফিল্টার হয়ে মাটির নিচে গিয়ে জমা হচ্ছে । মলমূত্র বা
টয়লেটে যাওয়া পানি সেটাও তো মাটির নিচে যাচ্ছে সেটাও ফ্রেশ হয়ে আমাদের টিউবওয়েল
দিয়ে উঠে আসছে । আমরা বুঝতেও পারছিনা । আবার পানি আকাশেও উঠে যাচ্ছে । মেঘ আকারে
আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে । আপনার বাসাতে একটা সুমিষ্ট আম বা যেকোন ফলের গাছ রয়েছে ।
কিন্তু সেই ফলের গাছ বৃদ্ধির জন্য আপনি দেন বিভিন্ন সার । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে
বাড়ির আঙিনাতে শখ করে লাগানো গাছে আমরা দিই জৈব সার ।মানে বিভিন্ন জিনিশ পচা
কম্পোষ্ট , গোবর বা মুরগীর বিষ্ঠা ইত্যাদি । কখনো যদি আপনি গাছের গোড়া গভীর গর্ত করে গোবর পুতেও দেন বা মুরগির বিষ্ঠা পুর্ণ করে দেন ,
বা আপনার টয়লেটের হাউস এর পাশেও পুতে দেন গাছ টা তবুও আম গাছ আপনাকে দুর্গন্ধ
যুক্ত আম আপনাকে দেবেনা । সুমিষ্ট আর সুস্বাদু ,জীবানুমুক্ত
আমই দেবে আপনাকে ।
(177)
আবার বিজ্ঞানীরা পানি তোলার মোটর
আবিষ্কার করেছেন , যার কল্যানে আমরা কষ্টকর পানি বহন ও উত্তোলন থেকে বেঁচে গিয়েছি
।কিন্তু সৃষ্টির শুরু থেকে কিছু গাছ মোটর হিসেবে আমাদের পানি তুলে খাওয়াচ্ছে ।
যেমন ধরুন একটা নারকেল গাছ কত উচু হয়ে
থাকে , সর্বোচ্চ ০৫-০৭ তলার সমান ও নারকেল গাছ হয় ।সেই ৬০-৭০ ফুট উপরের নারকেল গাছ
এর মাথাতে ডাব ঝুলে থাকে , সেই ডাবের ভিতর সচ্ছ ,এবং একই সাথে জীবানুমুক্ত ,
কাদামাটি ও ধূলাবালি মুক্ত , ইলেকট্রোলাইট ও এন্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ ১০০ ভাগ
ফ্রেশ পানি তুলে রাখছে ডাব গাছ আমাদের জন্য । খেজুর গাছ শীতকালে কত সুন্দর ভাবে
সুমিষ্ট রস নামক পানি তুলে রাখছে আমাদের জন্য ।তাতে খেজুর গাছের বা নারকেল গাছের
গোড়াতে যত লবন , বা যত বর্জ্য পরে থাকুক না কেন খেজুর গাছ বা নারকেল গাছ বা
পৃথিবীর কোন গাছই আপনাকে দুর্গন্ধ যুক্ত কিছু খাওয়াবেনা ।আপনার অত্যাধুনিক উন্নত
পানির ফিল্টার এর উপরের চেম্বারে পানির সাথে মুরগীর বিষ্ঠা দিলে কি সেটা
জীবানুমুক্ত পানি আপনাকে দিতে পারবে ? আপনি কি নিঃসংকোচে ও নির্ভয়ে সেই পানি পান
করতে পারবেন ? উত্তর হবে মোটেই না এবং এ রকম পানি খেলে ওইদিনই ডায়রিয়াতে মরবেন । তাহলে
ভাবুন একেকটা গাছ কত উন্নতমানের ফিল্টার মেশিন ? যেটা আধুনিক বিজ্ঞানীদের কাছেও
নেই । আর একটা জিনিস আল্লাহ তায়ালা আমাদের খেদমতের জন্য অগনিত ফেরেশতা নিয়োজিত
রেখেছেন । আচ্ছা এই ফেরেস্তারা যে নুরের
তৈরি বলা আছে । কিন্তু সেই নুর বা আলো কি আমাদের কারো চোখে ধরবার ক্ষমতা আছে
। আর ফেরেশতাদের কাজ যে শুধু নবী রাসুলের
কাছে অহী নিয়ে আসা কাজ তা নয় । মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অসংখ্যা অগনিত ফেরেস্তা আমাদের খেদমতের জন্য নিয়োজিত করেছেন
। ধরুন বিদ্যুৎ শক্তি , চুম্বক শক্তি কাজে
লাগিয়ে আমরা কত কিছু করছি । হতে পারে এগুলো আল্লাহর তরফ থেকে মানবজাতির আরাম আয়েশে
থাকবার জন্য মানুষের খেদমতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিজ্ঞান সাধনার উছিলাতে অধীন করে
দিয়েছেন । হ্যাঁ এখন হয়তো বলবেন যে আমি
ইচ্ছামত একটা গাজাখুরি কথা বলে দিলাম আর হয়ে গেল তাইনা ।
(178)
আচ্ছা ভাবুন তো আপনি আমি ক্যান্সার বা
এইডস এর প্রতিষেধক খুজছি , এগুলো নিয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলার ও খরচ করে ফেলেছি । হয়তো আমাদের বিজ্ঞানীদের অনবরত পরিশ্রম একসময়
এটা আবিস্কার ও করে ফেলবে । এই যে রোগের প্রতিষেধক গুলো ও কি হতে পারেনা আমাদের
খেদমতের জন্য নিয়োজিত অসংখ্যা ফেরেশতা বাহিনীর একজন । বিষয়টা বোঝালাম রুপক অর্থে ।
সরাসরি নিশ্চিত ফেরেশতা বলছিনা না । শুধু আপনার আমার ভেবে দেখার জন্য বললাম । জ্বীন
বা ফেরেস্তা বলতে শুধু যে মহান আল্লাহ তালা শুধু আলিফ লায়লার দৈত্যর মত মানবাকৃতির
বা দানবাকৃতির মত কিছু সৃষ্টি করে রেখেছেন এমন নয় ।এগুলো তো অন্য রুপেও থাকতে পারে
। যেমন জ্বীন , সাপ , বা কুকুর এসব রুপে থাকতে পারলেও আল্লাহতায়ালার নিয়ামত
বিভিন্ন শক্তি মানুষের খেদমতে বিভিন্ন রুপে থাকতে পারেনা ? জ্বীন মানেই যে আপনার
সামনে আগুনের গোলা বা মাথাতে দুটো শিং নিয়ে হাজির হওয়া কেউ হবে এমন কথা নেই ।আপনি
রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন ।পথে চলতে আমরা কত নারী পুরুষ দেখি । শতকরা ৯৯ জন থাকে
আমাদের অপরিচিত । কেও কাউকে চিনিনা । কে কোথায় যাচ্ছে ও জানিনা আমরা ।একসময় শুনতাম
আমরা যে খালে বিলে মাঠে ঘাটে বা গভীর রাতে বাড়ির আশেপাশে ও বিভিন্ন আজগুবি জিনিষের
কথা । কিন্তু সেগুলো এখন নেই বলা চলে ।
বলা হয় বিজলি বাতি আবিষ্ককারের পর থেকে এগুলো নেই । হতে পারেনা মানব রুপ ধারন করে
আমাদের সাথেই মানববসতি করে এরা আছে আমাদের সহকর্মী ,বন্ধু বা প্রতিবেশীর রুপ ধারন
করে । ভাল ভুতের গল্প হয়ে গেলো তাইনা । হতে পারে । শোনা যায় যে নোংরা যায়গাতে
বিভিন্ন ক্ষতিকর জ্বীন থাকে । হতে পারেনা নোংরা যায়গাতে যে সব ময়লা বা বিষ্ঠা থাকে
বা পচা কাদাতে যে সব ডায়রিয়া জীবানু থাকে বা ক্ষতিকর জীবানু থাকে এরা এক কায়দার
জ্বীন । হতে পারাটা বিচিত্র কিছু নয় । কারন এগুলো জীবন্ত আর অনুবীক্ষন যন্ত্রের
নিচে থেকে এগুলোর নড়াচড়া বোঝা যায় । এজন্য বলি আমাদের মানবজ্ঞানের সল্পতায় আমরা
আল্লাহ কে খুজি আকাশে তাকিয়ে , জ্বীন খুজি মাঠে আর অন্ধকারে , ভুত খুজি বাঁশবাগানে
, ভুত তো থাকে আমাদের মনে|
(179)
আল্লাহ তো আছেন আমাদের ভিতরেই , আমাদের
ভিতরেই মহান স্রষ্ঠার অস্তিত্ব বিরাজমান । এজন্য পবিত্র কোরআনে লেখা আছে আমি তোমার সাহ রগের ও কাছে আছি ।নাহনু আক রাবু ইলাইহি মিন হাবলিল ওয়ারিদ –সুরা কাফ – আয়াত-১৬ , অর্থ হে আমার প্রিয় বান্দা আমি তোমার সাহরগের কাছে থাকি ।আমরা মানুষেরা
সবকিছু ভুল যায়গাতে খুজি বলে স্রষ্ঠার অস্তিত্ব , জ্বীন ,ভুত , কালোজাদু এগুলো
খুজে পাইনা । খোজার যায়গাতে খুজিনা বলে আমরা কিছু দেখিনা । স্রষ্ঠা কে খুজতে বনে
বাদাড়ে বৈরাগী হয়ে খুজে বেড়ানো লাগেনা ।কিছু সময় পৃথিবীর সকল খেয়াল ছেড়ে দিয়ে একাগ্র
মনে ধ্যানে বসে নিজেকেও যদি ভুলে গিয়ে স্রষ্ঠা কে নিয়ে ভাবা যায় , নিজের হৃদস্পন্দন
অনুভব করা যায় তাহলে আপনি অনেককিছু উপলব্ধি করতে পারবেন । আমরা যাদু খুজি , অলৌকিকত্ব
খুজি ।কামরূপ কামাক্ষা আর সাধু সন্তুদের কাছে , আরে ভাই কালো যাদু কি মুর্খদের কাজ
, আমরা নিজেরাই তো সাইন্স নামক এক মহাযাদুর যুগে বাস করছি । সাইন্স নামক এক
মহাযাদুর মধ্যে ডুবে আছি , মোবাইল ,টিভি ,
ইন্টারনেট , বিমান এগুলো যাদু মনে হয়না আপনার ?।পৃথিবী আর মহাজগত হল এক মহাশক্তির
ভাণ্ডার সাধনা আর সময় নিয়ে খুজলে এটা কিছু না কিছু সাইন্স নামক নতুন কাল যাদু
আপনাকে উপহার দেবে ।অং ভং মন্ত্র পরে কোন কাজ হবেনা । তাহলে গাছের
বয়স বোঝার জন্য গাছের ভিতর বর্ষবলয় থাকছে । প্রকৃতি কত মহাবিজ্ঞানের সাথে মহাজ্ঞানের
ভাণ্ডার রেখেছে আমাদের জন্য । সেখানে দেখুন এটা কার নিয়ামত । এই যত উদাহরন দিলাম
সবকিছু সকল প্রানী এবং সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । কোন প্রানী কখন সৃষ্টি হল ,
কার থেকে কি সৃষ্টি হল এই নিয়ে আমাদের তর্কের শেষ নেই , কিন্তু সঠিক করে কি বলা যায় কখন কি হলো । আমাদের কাছে কি
পৃথিবীতে যত পশু পাখি আর গাছ আছে তার তালিকা আছে ? আমার জানামতে আছে , কিন্তু
তালিকা থাকা সত্বেও মাঝে মাঝেই খবর পাওয়া যায় অমুক প্রানী বিলুপ্ত , আবার খবর
পাওয়া যায় হঠাৎ করে যে এক জাতীয় পাখি বা পশু পাওয়া গেছে যেটা এর আগে কখনো দেখা
যায়নি , আচ্ছা এটা যদি স্রষ্ঠা মাত্রই সৃষ্টি করে ততক্ষনাৎ এটা ছেড়ে দেন হঠাৎ করে
(180)
তাহলে কি আমাদের বোঝার উপায় আছে যে এই
প্রানীটি বা পাখিটা যে এই মাত্র আবিষ্কৃত হল এটা লক্ষ বছর ধরে বিবর্তনে হলো নাকি
রাতারাতি তৈরি হলো এর নিশ্চয়তা কে দেবে । এত জটিল ব্যাপারগুলো দেখা বা শোনার পর
এবার আপনি একটু ভাবুন তো , আপনার বিবেক কি বলে , আপনি কি নাস্তিকদের ব্লগ বা নাস্তিক বই পত্র বা লেখা পরে নাস্তিক
হয়ে যাবেন না আস্তিক থাকবেন ? এত বিজ্ঞানমূলক ও ছন্দপতনবিহীন প্রক্রিয়াগুলো কি স্রষ্ঠাবিহীন
চলছে বা স্রষ্ঠাবিহীন চলা কি সম্ভব ? কারো
ব্যাক্তিগত ব্যাপারে বা ব্যাক্তিগত বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা বা প্রভাবিত করবার অধিকার
ও আমার নেই । কিন্তু একটু অবসর সময়ে গভীর ভাবে ভাববেন তো একজন সীমাহীন মহাজ্ঞানীর নিয়ন্ত্রন
ছাড়া এত কিছু বা এত জটিল বিষয় গুলো চলা কি সম্ভব ? এই গুলো ভাবলে এবং উপলব্ধি করলে
আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন আমাদের একজন স্রষ্ঠা আছেন ।আপনি যদি নাস্তিক হন এবার হয়তো
আপনি ভাববেন বা বলবেন তাহলে স্রষ্ঠা যদি থাকেন তাহলে স্রষ্ঠাকে কে সৃষ্টি করলেন ,
তিনি কি অমর ? তিনি কি অনাদি অনন্ত , তার কি শুধুই শুরু আছে শেষ বলে কিছু
নেই ? এই রকম অন্যায় নানা রকম অবান্তর প্রশ্ন আমাদের মনে জেগে ওঠে ।কিন্তু
এই প্রশ্নের কোন মনমতো উত্তর আমরা পাইনা । সৃষ্টি সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলেই দেখা
যাবে কোন কিছু সৃষ্টি হতে গেলে তার স্রষ্ঠা লাগে , একজন স্রষ্ঠা ছাড়া কোন কিছু
সৃষ্টি হয়না এটাই সৃষ্টির নিয়ম । কিন্তু একসময় দেখা যাবে প্রশ্ন করতে করতে যে একজন
স্রষ্ঠা আছেন যাকে কেউ সৃষ্টি করেননি । তিনি হলেন পরম স্রষ্ঠা ,মহা স্রষ্ঠা , ধরুন
আপনার পিছনে গেলে আপনি পাবেন আপনার বাবা কে , এরকম করতে করতে একসময় পৃথিবীর সকল
প্রানী পশুদের গোড়া পাওয়া যাবে যে একজন স্রষ্ঠা তাদের সৃষ্টি করেছেন , এখন যদি আপনি
আপনার জানার কৌতুহলের খাতিরে আপনি প্রশ্ন করেন যে এই যে সকল প্রানীজগতের স্রষ্ঠাকে
কে সৃষ্ঠি করেছেন ? এবারেও যদি ধরে নিই উত্তরের খাতিরে যে এই স্রষ্ঠাকে কে সৃষ্টি করেছেন ? তখন যদি উত্তরে বলি ওনাকে আরেক
জন স্রষ্ঠা সৃষ্টি করেছেন , তাহলে আপনি আবার প্রশ্ন করবেন তাহলে ওনার সৃষ্টিকর্তাকে
কে সৃষ্টি করেছেন ?
(181)
এভাবে প্রশ্ন করলে একসময় একটা
সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি , তিনি আপনা
থেকে সৃষ্টি হয়েছেন , তিনি সৃষ্টি যখন থেকে তখন থেকেই আছেন , আমাদের মানব জ্ঞান
অবশ্যই এটা বলে , আপনা থেকে একজন কে উদয় বা সৃষ্টি হতে হবে যিনি এই অসীম মহাজগতের
বা মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্ঠা ।আমরা নিজেরা যেহেতু অজ্ঞ এবং অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানের
অধিকারী সেহেতু এ ব্যাপারটা “ঈশ্বরের স্রষ্ঠা কে এবং তিনি কি অনাদি অনন্ত হলেও কেন তিনি
অনাদি অনন্ত ” সেটার ব্যাখ্যা বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ , যুক্তি ও রেফারেন্স ও উইকি বা বিশ্বকোষ এর আলোকে দিতে
চেষ্টা করবো ।এখানে কোনটাই আমার মনপ্রসূত নিজস্ব উক্তি বা চিন্তা নয় ।কোন ধর্মের
মানুষই বিষয়টা নিয়ে উগ্রতা খুজবেন না এবং ধর্মীয় ভেদ খুজবেননা আশা করি যেহেতু সকল
মানুষই এক আল্লাহর সৃষ্টি , পৈতৃক বা জন্মসুত্রে পরিচয়ে কেউ মুসলমান , কেউ হিন্দু
, কেউবা খ্রিষ্টান , কেউবা বৌদ্ধ এবং বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ , এখানে সব
ধর্মের মানুষ একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে এবং আশা করি এবং ভূল হলে ক্ষমাসূন্দর দৃষ্টি
রাখবেন সেটাও আশা করি । তো শুরু করা যাক ,আমাদের ইসলাম ধর্মমতে তাওহিদ বলা হয় এই
বিশ্বাসকে যে মহান আল্লাহতায়ালা ইবাদাতের যোগ্য একক সত্ত্বা , তিনি স্ত্ত্বাও
গুণগতভাবে একক , মহান আল্লাহতায়ালার কোন শরীক নেই , তিনি মানুষের চিন্তা ও ধারণার
ঊর্ধে , তিনি অনাদি অনন্ত , তিনি চিরঞ্জীব ও
চিরস্থায়ী ।কয়দিনে কি সৃষ্টি হলো সেটা লিখে সময় নষ্ট করলামনা । আবার হিন্দু ধর্ম বলে ব্রহ্মা বা ব্রহ্মান্ডের
স্থায়ীত্বকাল একপ্রকার সীমিত , কিন্তু সেই সীমিত বা সীমাকাল সেটা এতটাই সুবিশাল যে সেটা আমাদের কল্পনার ও অতীত । হিন্দু ধর্ম মতে
ব্রহ্মার একেকটি দিন কে একটি কল্প বলা হ্য় ।এই এক একটি কল্প হল সত্য
,ক্রেতা ,দ্বাপর ও কলি নামক চারটি যুগের সমষ্টি ।সত্য যুগ ১৭ লাখ ২৮
হাজার বছর , ক্রেতা যুগ ১২ লাখ ৯৬০০০ বছর , দ্বাপর ৮ লাখ
৬৪ হাজার বছর , কলিযুগ ৪ লাখ ৩২০০০ বছর ।এরকম ভাবে ১০০০ বার এই চার
যুগের আবর্তনে স্রষ্ঠার এক কল্প হয় , এই রকম এক কল্প হল ব্রহ্মার এক দিনের সমান ,
(182)
এরকম এক কল্প বা দিনের সমন্বয়ে নিয়ে ১০০
বছর বেঁচে তিনি বিলীন হন যা পৃথিবীর হিসাবে ৩১১,৪,০০০,০০,০০,০০০(৩১লক্ষ১৪হাজার কোটি) বছরের সমান । এই
হিসাবে ব্রহ্মা বা স্রষ্ঠার আয়ু সীমাহীন এবং কল্পনাপ্রসুত ও অক্ষয় মনে হলেও তার নিশ্চয়তার বা নিত্যতার ভিত্তিতে এটা সৃষ্টির
সীমাহীন কালের কাছে বিদ্যুৎ চমকের মত
ক্ষণস্থায়ী ।এটা হলো হিন্দু ধর্ম মতে স্রষ্ঠার সৃষ্টিরহস্য সম্বন্ধে মতামত ।এই হিসাবটা
নিশ্চিত বলা যাবেনা , বলা যেতে পারে সৃষ্টি জগতের সৃষ্টির
শুরুর সময় ও স্রষ্ঠার বিশালতা বোঝাতে
প্রাচীন বৈদিক মুনি ঋষিদের মতে এই হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে , ভাবুন
এর মাঝে মহাজগত , সৃষ্টিজগৎ
, ধর্ম কতবার পরিবর্তন হবে তারকি কোন ঠিক
আছে ? সময়ের এই অসীম বিশালতা এবং বিপুলতার কারণে স্রষ্ঠা রহস্যময়
, এবং আদি ও অনন্ত , আর সময় বলে কি কিছু আছে
প্রকৃত অর্থে ? , সময়
তো সূর্য্য আর ঘড়ির মাপে বেধে মানব গড়া একটা
মাপ বানিয়েছি মাত্র , কিছু গ্রহে বা নক্ষত্রে বা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে এমন পাওয়া যেতে পারে যে সেখানে দিন বা রাতের
কোন ব্যাপার নেই ।মানবকে বা প্রাণীকে বার্ধ্যককে ঠেলে ফেলার নিয়ামক নেই সেখানে ,
তাহলে সময়ের কি দাম থাকলো সেখানে । সবকিছু
মিলিয়ে দেখলে মনে হয় ব্যাপারটা এমন যে পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব সকল ক্ষমতাশালী বস্তুতে
পরিপুর্ণ , আবিষ্কার অভাবে সবকিছু আমাদের অজানা থেকেই যায় , পৃথিবী ও মহাবিশ্বের
সবকিছু নিয়ে যেমন নাড়াচাড়া করলে কিছু না কিছু আবিষ্কার হয় ঠিক তেমন , এই মহাশূণ্য
বা একেবারে শূন্য থাকে যখন , যখন কোন কিছুর সৃষ্টি হয়না , মহাশূণ্য গ্রহ , নক্ষত্র
বিহীন শূন্য থাকে তখন সেখান থেকে মানে পরম শূন্য থেকে (পরম শূন্য মানে যেখানে বা
যখন মাধ্যাকর্ষণ , গ্রহনক্ষত্র , কিছু না
থাকে , সমস্ত শক্তি বিহীন বস্তু বিহীন শুধু শূন্যতা –যেমনটা
বলা হয় আমাদের পাক কোরানে যে সবকিছু গুটিয়ে নেওয়া হবে )কোন কিছু সৃষ্টি হতে গেলে
একজন সৃষ্টিকর্তার উদয় হতে হবে এবং মেনে নিতেই হবে , যিনি আপনা থেকে সৃষ্ট ,তাকে
কেউ সৃষ্টি করেননি , তিনি তার নিয়মমত , ইচ্ছামত একটি মহাজগতের সৃষ্টি করবেন ,
নির্দিষ্ট নিয়মে চলবে , আবার যদি কখনো ধংশ হয়ে আবার সৃষ্টি হয় তবে পরম শূন্যতা
আবার থাকবে ,
(183)
সেখানে না থাকবে সময় , না থাকবে দিন রাত , শুধু থাকবে শূণ্যতা , সেখানে
সর্বপ্রথম একজন ঈশ্বরের উদয় হতে হবে , কারন এই যে মহাবিশ্বের বালুকনা থেকে গালাক্সি
পর্যন্ত সবকিছু একটা নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন সেই নিয়ম অনুযায়ী মহাবিশ্ব পরিচালিত
হওয়ার জন্য অবশ্যই একজন ঈশ্বর থাকতে হবে ।নিয়ম ছাড়া কখনোই সৃষ্টি জগত থাকবেনা ।
নিয়ম এবং স্রস্ঠার উপস্থিতি আবশ্যিক , আর কেউ কেউ বলছেন স্রষ্ঠার কি ধবংশ বা শেষ
নেই , এটা অবান্তর ও অযৌক্তিক প্রশ্ন , স্রষ্ঠার শুরু শেষ বা ধবংশ সম্বন্ধে কৌতুহল অবান্তর বলছি তার পিছনে কয়েকটি কারন আছে বলে
মনে করা হয় –
১)প্রথমেই
আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এর মতবাদটি
সম্বন্ধে জেনে নিই আসুন – ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এর মতে
আত্বা ও সৃষ্টির রহস্য এবং আল্লাহর অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্কে মীমাংসা করার
বিষয় নয় ।এটা হলো অনুভূতির বিষয় ।পরম সত্য ও অনন্তকে যুক্তি দিয়ে বোঝার কোন অবকাশ
নেই ।তার মতে যুক্তি দিয়ে আপেক্ষিকতা বোঝা যায় মাত্র ।এই জ্ঞান সাধকের মতে আত্বা
কখনো ধ্বংশ হয়না , কিন্তু দেহ ধ্বংশ হয় ।আত্বা মৃত্যূর পরেও জীবিত থাকে
।হৃৎপিন্ডের সাথে আত্বার কোন সম্পর্ক নেই , হৃৎপিন্ড মৃত্যূর পর দেহে অবশিষ্ট থাকে
, কিন্তু মৃত্যূর পর আত্বার পরিপূর্ণ উৎকর্ষ ও মুক্তি সম্ভবপর হয়ে থাকে ।-(মাইকেল
এইচ হার্টের দি হানড্রেড এর প্রচলিত বঙ্গানুবাদ থেকে ) ।
তো আমাদের
আলোচনাতে আসি , সৃষ্টি হতে গেলেই স্রষ্ঠা থাকতে হবে ।স্রষ্ঠা ছাড়া ভয়াবহ এই
বিজ্ঞানময় সৃষ্টি সম্ভব নয় ।স্রষ্ঠা ছাড়া সৃষ্টি
সম্ভব নয় এই কারনে বলছি যে সৃষ্টি হবার আগে অবশ্যই স্রষ্ঠার উপস্থিতি কাম্য , এবং
কে কাকে সৃষ্টি করেছে এই খুজতে খুজতে আপনাকে একসময় মহাশূণ্যতা এবং আপনা থেকে একজন
ঈশ্বরের আদিতে থাকা মেনে নিতে হবে । এ হিসেবে এক ঈশ্বর তিনি ছিলেন , আছেন , থাকবেন
, তিনি আদি ও অনন্ত এবং চির বিরাজমান হিসেবে থাকবেন ।এ হিসাবে হলেও ঈশ্বরকে কে আদি
অনন্ত চির বিরাজমান বলা যায়
(184)
আর যে ৩১১,৪,০০০,০০,০০,০০০(৩১লক্ষ১৪হাজার
কোটি) বছরের হিন্দুধর্মে বর্ণিত মিথ এর
কথা বলা হল সেটা হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয় বরং স্বাভাবিক । কারন বিজ্ঞানীদের
মতে পৃথিবীর বয়শ ৫০০ কোটি বছর ।৫০০ কোটি বছর এ কত কি হতে পারে তাইনা ।যেহেতু স্রষ্ঠার
সৃষ্টির একটা পৃথিবীর বয়স যদি ৫০০ কোটি বছর হয়ে থাকে তবে অনন্তকাল আর অনাদি
অনন্তের হিসাব টাও বিচিত্র কিছু নয়
একেবারে স্বাভাবিক । একেবারে জিরো বা শূণ্য
থেকে শুরু বা শেষ সীমানা বলে একটা কিছু থাকে , কিন্তু সেটা ক্ষুদ্রের কাছে
অনাদি অনন্ত বটে , এবং সেই অনাদি আর অনন্ত চিরকাল অনন্ত থাকবে , সেটা কখনো শেষ হবেনা
,শক্তির নিত্যতার সুত্রের মত রুপ বদল করবে মাত্র , এজন্য লক্ষ লক্ষ সৃষ্টি সৃষ্টি
হবে , শেষ ও হয়ে যাবে , কিন্তু স্রষ্ঠা থেকে যাবেন তার নিজের স্থানে ।তার ধংশের
কোন সম্ভাবনা নেই ।একটা উদাহরন দিই , যদিও পৃথিবীর কোন রুপ , কোন ,সৃষ্টি , কোন
কিছুই স্রষ্ঠার রুপের , অস্ত্বিত্বের বা সত্ত্বার সাথে তুলনীয় নয় , (আল্লাহ মাফ
করুন ,আস্তাগফিরুল্লাহি রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাইহি) তবুও সামান্য
জ্ঞানে বোঝার সুবিধার্থে বলছি , ধরুন মিস্টার এক্স পৃথিবীর সব থেকে ধনী ব্যক্তি , এখন ধরুন ওনার এত সম্পদ আছে যে আজ থেকে তিনি সমস্ত
কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে শুধু আরাম আয়েশে জীবন অতিবাহিত করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে
ফেললেন । এত পরিমাণ সম্পদ ওনার যে প্রতিদিন ০১ কোটি টাকা খরচ করলেও ওনার সম্পদ শেষ
হতে প্রয়োজন ৫০০ বছর সময় । মানে বছরে ৩৬৫ কোটি টাকা খরচ করবেন , তাহলে ৫০০ বছর গুন
৩৬৫ কোটি টাকা = ১৮২৫০০,০০০০০০০/= (০১ লক্ষ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ) এই হলো আপনি তার সম্পদের না হয় একটা সীমা পেলেন
, কিন্তু তারপরেও এটা অসীম সম্পদ বলতে হবে ? তাহলে এই অসীম সম্পদের শেষ আছে ,
যুক্তিতে আসে এটা , কিন্তু হবেনা সম্পদের শেষ , কারন ওটা তো কতদিন খরচ করলে শেষ
হবে তার একটা হিসাব , কিন্তু ওইভাবে তো শেষ হবেনা ভাই ।কারন মিস্টার এক্স তার জীবনযাত্রাতে যত বিলাসীতা করুক অত খরচের দরকার নেই ,
প্রবৃত্তি ও প্রকৃতি গত কারনে কেউ এভাবে টাকা খরচ করবেনা এবং তার মৃত্যূর সাথে ওই
সম্পদ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিস্থানে হোক আর
(185)
ওনার সন্তানদের ভিতর হোক বেঁচে থাকবে ।আপনার
প্রতিদিন ৫০ কেজি খাবার কেনার সামর্থ্য থাকতে পারে , কিন্তু প্রতিদিন ৫০ কেজি
খাবার খেতে তো পারবেননা , খাবেনও না । স্রষ্ঠা
এবং মহাশক্তি হল বোঝার সুবিধার্থে একটা প্রায় এই সুত্রের কাছাকাছি একটা বিষয় ।যদিও
আপনি স্রষ্ঠার আদি বা অন্তের একটা শেষ সীমা অজ্ঞতার কারণে বেধে দেন তবুও সেই
সীমাটাকেই আপনি অনাদি অনন্ত বলতে বাধ্য হবেন ।কারন এই অনাদি সময়ের শেষ(৩১১,৪,০০০,০০,০০,০০০(৩১লক্ষ১৪হাজার
কোটি) বছর) দেখার জন্য আপনার আমার মত ক্ষুদ্র সৃষ্টি মানুষ বেঁচে থাকবেনা , সে যুক্তিতে সময়ের সীমা থাকা সত্ত্বেও এটি অনাদি
এবং অনন্ত বলা চলে এবং যিনি এত কোটি বছরের চক্র নিয়ে মহাকাল নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি
নিঃসন্দেহে অনাদি এবং অনন্ত হবার যোগ্যতা রাখেন এবং মহাস্রষ্ঠার শেষ বা শুরু বলে
কিছু নেই এটা নিঃসন্দেহে ধর্ম ও তত্ব নির্বিশেষে প্রমানিত হয়ে যায় । আপনি যদি
হিন্দু মিথোলজির ৩১১,৪,০০০,০০,০০,০০০(৩১লক্ষ১৪হাজার
কোটি) বছরের তত্বটাও মেনে নেন , বা বিজ্ঞানের বিগব্যাঙ তত্ব ও মেনে নেন তবেও
এই সময়টাও অনাদি অনন্ত ও আদি অন্ত বিহীনতার প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেবে আপনার চোখে , এই
কথাটার ভিতর আপনি যদি কোন অর্থ খুজে পান বা প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারেন তবে আপনি অনেক
কিছু বুঝতে পারবেন সৃষ্টি ও স্রষ্ঠাতত্বের । একজন ধনী লোক দেউলিয়া হতে পারে বা
ধবংশ হতে পারে , কিন্তু টাকা ধবংশ হয়না , হাত বদল হয় মাত্র , যেমন ধনসম্পদে বিল
গেটসকে টপকে বর্তমানে অ্যামাজন ডট কম এর মালিক জেফ বেজোস শীর্ষস্থান দখল করেছেন ।
পৃথিবীতে শক্তির নিত্যতার সূত্র এমন যে পৃথিবীতে মোট শক্তির পরিমাণ অপরিবর্তনীয় ,
শক্তির কোন ধবংশ নেই , শক্তি এক রূপ থেকে আরেকরূপে রুপ বদল করে মাত্র আর টাকা
পৃথিবীতে এক রকম থেকেই যায় যুগে যুগে ধনীর হাতবদল হয় মাত্র ।তাই ধনীরা পৃথিবীতে
আসবে যাবে , কিন্তু টাকা থেকে যাবে , সম্পদ বা টাকা মরবেনা , যুগে যুগে কালে কালে
সে দরকার বা যোগ্যতা অনুযায়ী মানুষের হাতে শোভা পাবে ।
(186)
সৃষ্টি আর স্রষ্ঠার ব্যাপার বা
সম্পর্কটাও প্রায় তাই । যুগে যুগে নানারকম
সৃষ্টি বা সৃষ্টজীব পৃথিবীতে আসবে
যাবে বা বিলুপ্ত হবে ।কিন্তু স্রষ্ঠা ঠিকই অতীতে যেমন সৃষ্টির স্রষ্ঠা ছিলেন ,
বর্তমানে যেমন আছেন ভবিষ্যতে ও থাকবেন । হয়তো এক সৃষ্টির সৃষ্টির বিলুপ্তি হবে
আরেক নতুন সৃষ্টি হবে , ডাইনোসর এর পর হয়তো জ্বীন এল , জ্বীনের পর মানুষ এলো তাতে
কোন পরিবর্তন হবেনা স্রষ্ঠা তত্ত্বের,
সর্বকালেই স্রষ্ঠার স্থান আদিতে ও চিরঞ্জীব হিসেবে থাকবে । স্রষ্ঠা চিরকাল
তার স্বমহিমায় বিদ্যমান থাকবেন , অনাদি ,
অনন্ত , নিজ স্বত্তাতে এভাবে চির বিরাজমান হিসেবে ।আরো একটা কথা, স্রষ্ঠা একজনই তার প্রমান খুব সোজা যদি তিনি একজন
না হতেন তবে আরেকজন স্রষ্ঠা সাথে রেষারেষিতে রাতারাতি সবকিছু ধংশ হয়ে যেত ।এত
সুন্দর ভাবে সুর্য্য –তাঁরা –গ্রহ-নক্ষত্র
সব কিছু চলতোনা ।দেখুন সৃষ্টির সবকিছু চলছে মিলিটারীদের নিয়মের থেকেও কঠিন ভাবে
।এক সেকেন্ড বা একটু এদিক সেদিক নেই অনিয়ম
, সবই স্রস্ঠার রহমত । কখনো দেখেছেন হাঁসের ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা বের হতে , বা
মুরগির ডিম থেকে সাপের বাচ্চা বের হতে , যদি নাস্তিকতাবাদীদের কথা মত সৃষ্টি নিজে
নিজে এক স্রষ্ঠা ব্যাতিত হত তবে নিশ্চয় স্রষ্ঠার মত আর কয়েকজন স্রষ্ঠা তৈরি হতো ,
একেক সৃষ্টি একেক গাছপালা একেক রকম আচরন করত , খেয়াল খুশি মত আপনার আমার উপর বা একেকজন
একেকজনের উপর চড়াও হয়ে চেইন অফ কমান্ড বা এক সিস্টেম ধংশ করে দিত , কখনো দেখেছেন
বৃষ্টির সাথে কাঁদাপানি পড়তে , বনে তো বাঘ ভাল্লুক ,সাপ কত হিংস্র প্রানী থাকে
,কখনো দেখেছেন তারা জনে জনে পুরো জঙ্গল ধরে শক্তিশালী এই প্রানী গুলো আমাদের মানব
বসতি দখল করতে আসছে , যদি আসতো তাহলে আপনি আমি কি আস্ত থাকতাম ,তাদের কি আমরা
জঙ্গলে গিয়ে ভয় দেখিয়ে এসেছি যে আমরা মানুষ আমাদের কাছে বন্দুক আছে ? তারাতো অবুঝ
প্রানী হলেও তাদের নিজস্ব একটা সভ্যতা আর জ্ঞান আছে , তা না হলে যদি বনের পশু কিছু
না বুঝতো তারা একেকজন কে আমরা প্রায়ই লোকালয়ে দেখতাম এবং হয় তারা আমদের মারত না হয়
আমরা তাদের মেরে ধংশ করে দিতাম ।চিড়িয়াখানাতে দেখবার মত বাঘ , ভাল্লুক ,সিংহ,
থাকতোনা ।
(187)
আসলে ভাই এজন্য বলি স্রষ্ঠার অস্তিত্ত্ব
প্রমানের জন্য চোখে দেখিনা বলে নাস্তিক হয়ে যাওয়া লাগেনা , কারন যিনি এই সীমাহীন
জগতের অধিষ্ঠাতা তিনি আমাদের মত এই সামান্য মানুষের চোখে ধরা দেবার মত অবস্থার
কিছু নন । নাস্তিকেরা বলেন পৃথিবীর সবকিছু আপনাআপনি সৃষ্টি হয়ে গেছে , পৃথিবীর সকল
সৃষ্টিজগৎ বা প্রাণীকুল ও মানুষ লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ফলে মডিফাই বা জীবের বিবর্তন হয়ে আজকের এ প্রাণীজগৎ , এখানে ঈশ্বরের
উপস্থিতি থাকার দরকার নেই । আপনা থেকে সৃষ্টি । বিবর্তন সেটা না হয় মানলাম ,
কিন্তু কথা হলো আপনার আমার মত মানুষ বা প্রাণীজগতের বেঁচে থাকার জন্য সূর্য্যের
আলো , গাছে গাছে জটিল প্রক্রিয়াতে সৃষ্ট খাবার , সংরক্ষিত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা
করে রাখা , বৃষ্টির পানি জংগলের হিংস্র প্রাণীর লোকালয়ে না আসার বুদ্ধি দান করা
এগুলো কি আপনি মানুষ তাই এসব সুবিধা আপনাকে দেবার জন্য বিবর্তনের দায় পড়ে গেছে ।
মহান স্রষ্ঠা নামক কেউ একজন না থাকলে হয় বাঘ , ভাল্লুক , হাতি এরাতো যখন তখন এসে
আপনাকে খেতে পারে । এরা যে মানুষকে একসঙ্গে দশজন দেখলেও ভয় পায়না তার প্রমাণ তো
বনে গেলেই পাওয়া যায় । বনে গেলে খায় কিন্তু লোকালয় থেকে দূরে নিজেদের জঙ্গলে একটা
সিস্টেমে চলে এটা কার ইশারায় বলুনতো ? এই সহজ ব্যাপার নাস্তিকেরা বোঝেনা ।আবার স্রষ্ঠাকে
দেখার একটা কথা প্রচলিত আছে , এর সত্যতা হলো , যদিও কালে ভদ্রে কোন বুজুর্গ যদি স্রষ্ঠা বা আল্লাহকে দর্শনের কথা বলেন তবে সেটা হয় ভুয়া কথা অথবা বেশি হলে
উপলব্ধি করবার মত পর্যায়ের ছোট খাটো দেখা । সরাসরি চর্ম চোখের দেখা নয় । কারন ০১
পোয়া পানি ধরবার ঘটিতে কি সমুদ্রের পানি ধরা যায় কখনো ? ,সমুদ্রের সকল জীব ধরা যায়
ওই এক পোয়ার ঘটিতে কখনো ? , ঘটি তে হয়তো পানি কি জিনিস সেটা উপলব্ধি করা যায় মাত্র
, আর একটা কথা ঘটি কি বোঝে পানি কি ,ঘটিতে যদি গোবর রাখা হয় তাও কি তার বোঝার
ক্ষমতা আছে ঘটিতে কি রাখলাম , স্রষ্ঠা
হলেন সেই সমুদ্র আর আমরা মানুষেরা হলাম এই ০১ পোয়ার ঘটির মত ,তাই এই ০১ পোয়া ধারন
ক্ষমতার ঘটি হয়ে স্রষ্ঠা নামক সমুদ্র কে দেখতে চাওয়া বা বুঝতে চাওয়া বোকামি মাত্র
।
(188)
আমরা মনে করি মানবজাতির সামনে সামনে যা
দেওয়া হোক সে বূঝবে , কিন্তু আমাদের বোঝার ক্ষমতার বাইরের জিনিসও আছে , আমাদের
বোঝার ক্ষমতাও সীমিত , ধরুন আমরা পৃথিবীতে
যত জ্ঞান আছে সেটাই তো আমরা বুঝিনা । সবাই পদার্থবিজ্ঞান ভালো বোঝেনা , কেউ রসায়ন
ভালো বোঝেনা , গণিত আর ইংরেজীতো আমাদের বেশিরভাগ লোকেরই মাথাতে ঢোকেনা , এগুলো তো
সামান্যতর ব্যাপার । তাহলে স্রষ্ঠা যে আপনার বোঝা বা উপলব্ধির সামর্থ্যের বাইরের কিছু
নয় সেটা বোকার মত কথা হয়ে যায়না ? আমাদের দেখার ক্ষমতার বাইরের রং , রশ্মি ও জিনিস
রয়েছে ।ধরুন বাতাস আমাদের গায়ে লাগে আমরা সেটা অনুভব করি মাত্র , দেখতে পারিনা ,
গাছের পাতা নড়ে ,কাপড় ওড়ে বাতাসে , এসব দেখে বুঝি বাতাস বইছে , কিন্তু বাতাস কে আমরা দেখতে পারিনা , তাহলে কি বলব বাতাস বলে
কিছু নেই , এরকম হলো আমাদের মানবের ক্ষমতা , আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে , সেজন্য
সবকিছু , দেখা ,বোঝা বা অনুধাবন সম্ভব নয় আর ঈশ্বর তো নয়ই । স্রষ্ঠার
অস্তিত্ত্ব নিয়ে আর একটা প্রচলিত প্যারাডক্স হল শূন্য(জিরো) নামক সংখা ।
শূন্য কি ? একটা আবিষ্কৃত গানিতিক সংখ্যা ।আর্যভট্ট ৫০০ খ্রিস্টাব্দে
শূন্য আবিষ্কার করেন । মুলত প্রাচীন গনিতবীদেরা এমন একটি সংখ্যা আবিষ্কার
করতে চাচ্ছিলেন যার মান শূন্য এবং এটি সংখ্যার পিছনে বসে প্রয়োজনে মান বৃদ্ধি করতে
পারে । মুলত ইনফিনিটি বা অসীম একটা ব্যাপার বা রহস্যময় একটা
সংখ্যা বা প্রতীক বলতে পারেন শূণ্যকে আপনি । শূন্য মানে কিছু
নেই , শূন্য মাত্র শূণ্যতা , আবার এই শূন্য ছাড়া কোন সংখ্যা হয়না । শূণ্যকে যা দিয়ে গুন দেন তার ফল আসবে শূন্য , যা দিয়ে
ভাগ দেন ফল আসবে শূন্য , আর কোন সংখ্যার পিছনে যত বসাবেন তার মান তত বাড়বে , শূণ্যের
কোন মুল্য নেই কিন্তু আবার তাকে ছাড়া ক্ষমতাবান সংখ্যা হয় না । না থেকেও থাকা যায় , হেরেও জেতা যায় , মরেও মানুষের মাঝে জীবিত থাকা যায়
।এরকম রহস্যময় আর অদ্ভুত না শূন্য সংখ্যাটা
, ঠিক তাই না ! ।কোন সংখ্যার আগে কোটিবার থাকলেও শূণ্যের দাম নেই আর কোন
সংখ্যার পিছনে প্রতি একটা শূণ্যের জন্য মান কত বাড়ে ভালোভাবে বোঝা যায় ।
(189)
আর নাস্তিকদের একটা তুলনা
আছে তা হল ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হন তাহলে তিনি কি এমন কোন পাথর বানাতে পারবেন
যেটা তিনি নিজে তুলতে পারবেননা ? আর যদি এমন ভারি পাথর বানাতে পারেন তবে তিনি কেমন
সর্বশক্তিমান যে সেটা কখনো তুলতে পারবেন
না , এই প্রশ্নটাও এসে যায় একই সাথে ? তাহলে তার ইনফিনিটি বা অসীম শক্তি কোথায়
থাকলো , এর উত্তর একজন মার্কিন নাস্তিক গনিতবিদ
আলবার্ট রবিনসন দিয়েছিলেন , তিনি বলেছিলেন এর উত্তরতা হবে এমন যে ঈশ্বর হবার প্রথম
শর্ত হলো তিনি যা খুশি করতে পারবেন বাস্তব ও অবাস্তব সবকিছু সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে
হবে , এবং যা খুশি সৃষ্টিও করতে পারবেন । এ শর্তমতে তিনি প্রথমে আপনার শর্তমতে তিনি নিজে
উচু করতে পারবেননা এমন একটা পাথর বানালেন । এখন তিনি সেটা উচু করতে পারবেননা এ কারনে যে
আপনি বলেছেন যে ওই পাথরটি ঈশ্বর নিজেই উচু করতে পারবেননা এমন ভার বানানো হোক তাই
তিনি বানিয়েছেন । কিন্তু যখন
আপনি বলবেন এটা যদি তিনি উচু করে দেখাতে পারেন তবেই তিনি ঈশ্বর , তখন ঠিকই তিনি
উচু করে ফেলবেন । যুগের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস এর ÔÔ a brief history
of short time ÕÕ (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) বইএর বাংলা অনুদিত(ইফতেখার রসুল জর্জ প্রকাশকাল- সাল ২০০২ ইং) গ্রন্থের ,
১১৩ পৃষ্ঠাতে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিনতি অধ্যায়ের শেষের হুবহু কয়েকটি লাইন
আপনাদের জন্য তুলে ধরি – “স্থান এবং
কাল একটি সীমানাহীন বদ্ধ পৃষ্ঠ(closed surface)গঠন করতে পারে
, মহাবিশ্বের ব্যাপারে ঈশ্বরের ভুমিকা বিষয়ে এই চিন্তনের ফলশ্রুতি হতে পারে গভীর । ঘটনাবলী ব্যাখ্যাতে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলির সাফল্যের ফলে অধিকাংশ লোকই এখন
বিশ্বাস করেন ঈশ্বর একগুচ্ছ বিধি অনুসারে মহাবিশ্বের বিবর্তন অনুমোদন করেন এবং এই
বিধি ভঙ্গ করে তিনি মহাবিশ্বে হস্তক্ষেপ করেননা । কিন্তু শুরুতে মহাবিশ্বের চেহারা কি
রকম ছিল সে বিষয়ে এ বিধি গুলো কিছু বলেনা । এই ঘড়ির মত গতি বন্ধ করা ঈশ্বরের দায়িত্ব এবং
কি করে এটি তিনি আবার শুরু করবেন সে পদ্ধতি নির্বাচনের দায়িত্ব ও ঈশ্বরেরই যতক্ষন
পর্যন্ত মহাবিশ্বের শুরু ছিল
(190)
ততক্ষন পর্যন্ত আমরা অনুমান করতে পারতাম
মহাবিশ্বের একজন স্রষ্ঠাও ছিল।কিন্তু মহাবিশ্ব যদি সত্যিই পুর্ণরুপে স্বয়ংসম্পুর্ণ
হয় এবং যদি এর কোন সীমানা কিংবা কিনারা না থাকে ,তাহলে এর আদিও থাকবেনা অন্তও
থাকবেনা , থাকবে শুধু অস্তিত্ত্ব , । তাহলে
স্রষ্ঠার স্থান কোথায়?” । এর অর্থ টা বা উদ্দ্যেশ্য
আমি বুঝলাম না , তিনি কি নাস্তিক বলে এটা বললেন ? আসা করি স্রষ্ঠার অস্তিত্ব বা স্রষ্ঠা
কি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে । মানুষের জানা বোঝা ও দেখার ক্ষমতার বাইরে ও
জিনিস রয়েছে । আর একটা বিষয় বলছিলাম যে হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ
আটলান্টিস নামে একটা মহাদেশের নাম আপনারা শুনেছেন । এই মহাদেশ নাকি আজ থেকে ১১ হাজার ৫০০ বছর আগের
।আয়তনে এশিয়ার সমান ছিল । দর্শন গুরু প্লেটোর বর্ননাতেও এই মহাদেশের উল্লেখ আছে ।প্লেটোর টিম্যাউস’ এবং
ক্রিটিয়াস’
গ্রন্থে এই মহাদেশের নাম ঊল্লেখ আছে। বলা হয় এই
মহাদেশ উন্নত ছিল এখনকার আধুনিক যুগের মত জ্ঞান বিজ্ঞানে হতে পারে তার থেকেও বেশি
উন্নত ছিল , একটা ইংরেজি কথা আছে আটলান্টিস ,আটলান্টিস , হোয়্যার ইজ আটলান্টিস , আটলান্টিস ইজ কলিং ।
এক রাতে নাকি এত বড় মহাদেশটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল । এত বছর আগে উন্নত থাকে যদি তবে
পৃথিবির আজকের সভ্যতাও পৌছাতে এত সময় লাগলো কেন ,এই প্রশ্নের উত্তর আমি এই বইয়ে এর যায়গায় আর একবার দিয়েছি
সেটা হলো বিশ্বায়ন । একটা ক্ষমতা আবিস্কার
হলে বর্তমানে সেটা মানব জাতির কল্যানে সব দেশে চলে যাচ্ছে , সবাই এর সুবিধা পাচ্ছে
। তারপরে ও এই পৃথিবীতে বুশম্যান , অ্যামাজনের নাম না জানা , আফ্রিকার জঙ্গলের নাম না জানা নগ্ন
জংলি অসভ্য মানুষদের আমরা এত সভ্যতাতে বসবাস করে সভ্য করে তুলতে পেরেছি কি , ওরা
তো আমাদের থেকে লাখ লাখ গুন পিছিয়ে সকল দিক থেকে । উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞানীদের মাঝে একটা
তত্ব আছে যে , এখন আমাদের মানব সমাজে অনেক
যায়গাতে যে সব দেব দেবীর বা অবতারের প্রচলন আছে তারা কি কোন ওইরকম আটলান্টিস এর মত
উন্নত সভ্যতা থেকে এসে আমাদের উন্নত করতে চেয়েছিলেন ¸হতে পারে সেটা ।
(191)
আমরা যদি এখন অ্যামাজনের আদিবাসীদের
আধুনিক অনেক বিজ্ঞানের সংস্পর্ষে নিয়ে আসি আর আধুনিক বিজ্ঞান গ্রহণ না করার গোড়ামী
থেকে বের করে আধুনিক বিদ্যা ও যন্ত্র ব্যবহর করাতে পারি তবে তারা নিশ্চয় আমাদের
দেবতা জ্ঞান করতে ভুল করবেনা । তবে ঢালাও ভাবে এই মতবাদ আমিও সাপোর্ট করিনা ।কারণ
একটা মনগড়া ধারণা তো সত্য হতে পারেনা, হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে, আর
এ রকম স্টান্টবাজী বা প্রতারকের দেখা সব ধর্মেই মেলে ।পৃথিবীতে মহান স্রষ্ঠার পক্ষ
থেকে যেমন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে বা জাতিতে নবী-
রাসূল –অবতার-দেব-দেবী এসেছে তেমনি মানুষের সমাজের
ভিতর ক্ষমতাশালী বিষ্ময় বিজ্ঞানধারী কিছু মতলববাজ ভন্ড গোষ্ঠীও কালে কালে নবী
রাসুল বা দেব দেবীর অনেক স্ট্যান্টবাজিও করেছে ।যেমন আমাদের আখেরী নবী হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পর মুসাইলিমা কাযযাবের মত বহু লোক নিজেকে ভন্ড নবী দাবি
করেছে এবং দাবীর স্বপক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছে, কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয়নি, আর
হিন্দুদের মিথোলজির দেব দেবতার স্ট্যান্টবাজি তো আরো সোজা, কারণ আমাদের নবী সাঃ এর
জীবনী নিয়ে যদি কোন সিনেমাও তৈরি হয় তবে সেখানে সরাসরি অভিনেতার মুখ দেখানো যাবেনা,
ব্যাপারটা হয়তো আপনারা বিশ্বখ্যাত ইসলামী চলচ্চিত্র দি মেসেজ এ খেয়াল করেছেন, আর
হিন্দুদের দেবদেবীর স্ট্যান্টবাজী করে ধোকাতো কঠিন ব্যাপার নয় , কারণ সনাতন ধর্মে
সে নিষেধাজ্ঞা নেই বা বিধিনিষেধ নেই, এ জন্য হরহামেশা আমরা ভারতীয় মঞ্চ নাটক,
স্টেজ শো এবং টিভি সিরিয়াল ও সিনেমাতে শয়ে শয়ে হরহামেশা রাম, রাবণ,মহাদেব শিব,
কৃষ্ণ রূপধারী অভিনেতাদের যেমন দেখতে পাই, তেমনি দূর্গা, লক্ষী,স্বরস্বতী রূপধারী
অভিনেত্রীদেরও হরহামেশা দেখতে পাই। এই সব স্ট্যান্টবাজীর কারণে একটু চটুল বুদ্ধি
সম্পন্ন মতলববাজদের মানুষের মনের ধর্মভক্তির সুযোগ নিয়ে আখের গোছাতে সূবিধা হয় ,
এদের স্ট্যান্টবাজীতে আসল ঠাকুর দেবতাই নির্বাসিত হয়ে যায় ।বাস্তব উদাহরণ দেখুন
একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আছে এমন
কিছু মাথা মস্তিষ্ক আর এমন কিছু বিজ্ঞানের আবিষ্কার যার কারণে বিশ্বের সকল দেশ
তাদের কাছে পদানত ।
(192)
আপনার যুদ্ধবিমান থাকতে পারে কিন্তু
আমেরিকার মত ক্ষমতাবান নয় । এই সিক্রেট বা গুপ্তবিদ্যা বা স্ট্যান্টবাজীর কারণেই
তারা মানে আমেরিকা পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করছে ।বিশ্বে আমরা যদি এখন অ্যামাজনের
প্রত্যন্ত জঙ্গলের মানুষের কাছে গিয়ে আমাদের আধুনিক জীবনের সব ক্ষমতা দেখায় তবে
সেটাও তারা মনে রাখবে আমাদের কে অতি ক্ষমতাশালী মানুষ হিসেবে , হয়তো একদিন তারা
সভ্য হয়ে গেলেও আমাদের ছবি তাদের কাছে থাকবে । সভ্যতা ধবংশ হয় যেমন নদীর এককুল ভাঙ্গে মত আরেককুল গড়ে , শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা যেমন
ছিল ,সমুদ্র গর্ভে বিলুপ্ত হয়েও গেছে , তো বলছিলাম ,আটলান্টিস , ইনকা , মায়ান
সভ্যতা , অ্যামাজনের হারানো স্বর্ণের শহর
, ইরাম নগর ,ট্রয় ,মহেঞ্জোদারো , সবই কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে । কিন্তু
এগুলো সত্যিই ছিল এটা বিজ্ঞানের কাছে পরিস্কার , কেন হারিয়ে যায় বললে বলা হয় হয়তো
দুর্যোগ বা কালের আবর্তে গুরুত্ত হারানো ।
এক সময় আমরা ব্রিটিশ দের অধীনে ছিলাম ,কিন্তু এখন কি আমাদের কাছে ব্রিটিশ এর শাসন এর
ইতিহাস বই পত্রে পড়ানোর এত গুরুত্ত আছে , সেই দ্রাবিড় ,আর্য ,শক ,হুন , মৌর্য
,গুপ্ত , পাল এই সব শাসন এর ভিতর দিয়ে তো গেছে আমাদের উপমহাদেশ । এখন কি আর আমরা
এসব গুরুত্ত্ব দিয়ে পড়ি ? , আমাদের বর্তমান জেনারেশন কি জানে দ্রাবিড়
,আর্য ,শক ,হুন , মৌর্য ,গুপ্ত , পাল এদের শাসনকাল সম্বন্ধে ? এখন আমরা বেসিক্যালী যে ইতিহাস গুরুত্ব দিই
সেটা বিগত ঊর্ধে গেলে ৭০ বছর , কদাচিৎ ১০০ বছর পিছনের ইতিহাস টানি । আর ৫০০ বছর পর
বা ৫০০০ বছর পর ১৯৭১ এর স্বাধীনতার ইতিহাস হয়তো যাদুঘরেও পাওয়া যাবেনা , কারন এই
৫০০ থেকে ৫০০০ বছরে বাঙালির ভাষা ও ইতিহাস ও মানচিত্র সম্পুর্ণ
পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে ,
নিচে কয়েকটি
মানচিত্রর ছবি দিচ্ছি , ছবিগুলো খেয়াল করলেই
পরিবর্তন বুঝতে পারবেন –
(193)
০২ হাজার বছর বা তার ও আগের প্রাচীন ভারতের মানচিত্র-০১
০২ হাজার বছর বা তার ও আগের প্রাচীন ভারতের মানচিত্র -০২
(194)
(195)
বর্তমান ভারতের মানচিত্র , পুরনো
মানচিত্র আর বর্তমানের সাথে মিলিয়ে দেখুন একটু সব ম্যাপ এ আপনি বঙ্গ বা বাংলাদেশ
এর অবস্থান বুঝতে পারছেন, অঙ্গ(বিহারের ভাগলপুর ,মুঙ্গের এবং বাংলার কিছু অংশ)বঙ্গ(বাংলাদেশ
আর পশ্চিম বঙ্গ), কলিঙ্গ(বর্তমান উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ এর সামান্য কিছু
অংশ ,গান্ধার বর্তমানে আফগানিস্তানের
জালালাবাদ থেকে পাকিস্তানের তক্ষশীলা, কুরু বর্তমানের হরিয়ানার একটি শহর, মগধ
বর্তমান বিহার), এছাড়া প্রাচীন ভারতে
বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ নিয়ে ছিল গঙ্গারিডি, তৎকালীন সময়ের
বিখ্যাত গ্রীক মণিষী প্লুটার্ক(৪৬-১২০ খ্রিস্টাব্দ অথবা ৪৫-১২৭ খ্রিষ্টাব্দ) এর
মতে গঙ্গানদী প্রস্থ্যে ছিল ০৬ কিলোমিটার আর গভীরতাতে ছিল ৫৮০ ফুট ।আবার পুরানে সরস্বতী নদীর উল্লেখ আছে ।কিন্তু বর্তমান ভারতে
সরস্বতী নদীর বলতে গেলে অস্তিত্ব নেই।ঋগবেদ, স্কন্ধপুরান ও দ্বাদশ শতকের বাঙালি
কবি কানা হরিদত্তের মনসামঙ্গলে সরস্বতী নদীর উল্লেখ আছে ।এই নদি নাকি ৩৫০০ বছর আগে
বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তখন নাকি এই নদী পৌরাণিক কি একটা কারনে মরুভুমিতে অদৃশ্য হয়ে
যায়, মানে মরুভুমির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় ।এটাকে বলে ফল্গু নদী (মাটির নিচ দিয়ে
প্রবাহিত হয়ে যদি আরেক যায়গাতে গিয়ে দৃশ্যমান হয়)।এত গুলো পৌরাণিক বড় গ্রন্থে উল্লেখিত
নদী কি তাহলে কি শুধুই মিথ। আবার উল্লেখ আছে এই সরস্বতী নদী নাকি গঙ্গা এবং যমুনা
থেকেও বড় ছিল ।তাহলে এত বড় একটা নদী শুধুই মিথ এটা কি হতে পারে ।হুগলীর সপ্তগ্রামে
নাকি ষোড়শ শতাব্দী তেও সরস্বতী নদী প্রবাহিত ছিল।সপ্তম শতাব্দীতে এই সরস্বতী নদীর
সংযোগ মোহনাতে পলি পড়া শুরু করে ।আস্তে আস্তে পুর ১০০০ বছরে এই নদী পুরো নিশ্চিহ্ন
হয়ে যায়।১৬৬০ সালের ভ্যান ডেন ব্রুকের পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রেও সরস্বতী নদী ছিল
।কিন্তু তারপর থেকে আর নেই ।তাহলে পুরান আর বাস্তবের ইতিহাসে কিছুটা পার্থক্য
থাকলেও সরস্বতী নদী ছিল।তবে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার আন্দুল নামে একটা
শহরাঞ্চল আছে, সেখানে আন্দুল কলেজ এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বলতে গেলে মজে যাওয়া
যে একটা নদীর ধারা দেখা যায় সেটাই সেই স্বরসতী নদী ছিল(সরস্বতী রেল ব্রিজ যেটার
উপর) ।
(196)
আবার এই যে আমাদের বাংলাদেশে যে যমুনা
নদী দেখি এটা কিন্তু সৃষ্টি এমনিতে বা আদিতে হয়নি। ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের ভয়াবহ
ভুমিকম্প ও বন্যাতে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ নামক যায়গাতে
ব্রহ্মপুত্র নদ তার গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিনে যাত্রা শুরু করে বর্তমান আরিচাতে
এসে মিললে সেটাই হয়ে যায় বর্তমানের যমুনা ।তাহলে ভাবুন এবার ব্যাপারটা। আবার আসি
প্রাচীন জনপদ প্রসঙ্গে গ্রীক মনিষী
মেগাস্থিনিস (৩৫০-২৯০ খ্রিষ্টপূর্ব) এর ইন্ডিকা নামক গ্রন্থেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
গঙ্গারিডির সেনাবাহিনীতে দুই লাখ সৈন্য, ৮০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য, ৮০০০ যুদ্ধরথ
বা যান এবং ৬০০০ হাতি ছিল । এর ফলে সম্রাট আলেকজান্ডার ও আক্রমন করতে এসে ফিরে যান
বিনা আক্রমণে, বিশাল আয়তনের গঙ্গা নদী এবং বিশাল শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী এই দুটোই
ছিল ওনার ভয়ের কারণ। আর ময়নামতি বিহার(কুমিল্লাতে অবস্থিত ১২০০ বছরের পুরাতন) ,
মহাস্থানগড়(বগুড়াতে , ২৫০০ বছরের পুরাতন) আর উয়ারি-বটেশ্বর(আজ থেকে ২৪৫০ বছরের
পুরনো নগর মোহাম্মাদ হানিফ পাঠান(১৯০১-১৯৮৯) ও তার ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান এর
প্রচেষ্টাতে আবিষ্কৃত) –নরসিংদীর বেলাব উপজেলাতে
অবস্থিত । এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা তো করলামই না ।মানুষের বসবাসের যায়গা সীমাবদ্ধ, কোথাও
কোন নগর গড়ে ওঠে প্রয়োজনে, আবার সেই নগর বাণিজ্যিক বা দুর্যোগের কারনে গুরুত্ত
হারালে মানুষ অন্যত্র বসতি গড়ে । ফলে পুরাতন স্থাপনা
গুরুত্ত হারায়, আবার সেটা সুযোগ পেলে কেউ দখল করে পুরাতন কে ভেঙ্গে নতুন কে গড়ে ।
পুরাকৃতির গুরুত্ব ও নদীর গুরুত্বের থেকে মানুষের কাছে মানুষের কাছে নিজের
বসতবাড়ির যায়গা ও নদী দখল করে নানান স্থাপনা তৈরির মূল্যটা বেশি। ধরুন জঙ্গি সংগঠন
আই এস এর হামলাতে ইরাক ও সিরিয়ার অনেক প্রত্নততাত্তিক নিদর্শন ও স্থান ধবংশ হয়ে
যায় । সিরিয়ার পালমিরার ৩০০০ বছরেরও বেশি রোমান প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ধ্বংশ করে
আইএস এবং ইরাকের নিনেভাতেও আসিরীয় সভ্যতার ৩০০০ বছরের পুরাতন স্থাপনা ধ্বংশ করে ।
(197)
এভাবে মিথ এ থাকা অস্তিত্ব ও
অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। আবার ধরুন যদি বিগত ৫০০০ বছরের সকল পুরাতন স্থাপনা টিকে
থাকতো তবে আমাদের বর্তমান যুগের অনেক যায়গা অযথা দখল করে থাকতো পুরাতত্ত্ব, তখন
নতুন স্থাপনার যায়গা অভাব ও হতে পারতো ।
তো আগামী ৫০০ বা ৫০০০ বছরে বাংলাদেশ পানির নিচে
বিলীন হয়ে যেতে পারে ,সৌদি আরবের মত মরুভুমির দেশ হয়ে যেতে পারে, পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যেতে পারে, ১৯৭১ এর মত ১০ টা যুদ্ধ হয়ে যেতে
পারে, ÔÔ ঠিক এই ভাবে পিছনের ইতিহাস হারিয়ে যায়, কালে
কালে গুরুত্ত্বহীন হয়ে পড়ে, কালে কালে মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, ÕÕভৌগলিক ও জলবায়ুর পরিবর্তনে
মানচিত্রের পরিবর্তন হয়, আর যুদ্ধ ও রাজনীতি করে ইতিহাসের পরিবর্তন”।ফলশ্রুতিতে ইতিহাস এককালের প্রমত্তা পদ্মার যায়গায় ধু ধু
বালুচর নিয়ে হাহাকার করে এইখানে এক নদী
ছিল জানলোনা তো কেউ, এভাবে একসময় সুদুর অতীতের মহাগুরুত্বপূর্ণ আর বর্তমানের গুরুত্ত্বতহীন
ইতিহাস অবহেলিত হতে হতে হয়ে যায় পুরাণ গ্রন্থ, তাতে থাকা দেবতাদের অস্ত্র, অলৌকিক
কাজ গুলো অবুঝ মানুষের কাছে হয়ে যায় গাজাখুরি গল্প, বলা হয় মানবরচিত গল্প না ভাই
সত্যিই ইরাম, ট্রয়,আটলান্তিস, প্রাচীন পম্পেই নগরী (ইতালিতে
অবস্থিত ছিল, ভিসুভিয়াসের অগ্লুৎপাত, গ্ল্যাডিয়েটর ফাইট নামক
অমানবিক নিষ্ঠুর খেলার আয়োজন ও সমকামিতার অপরাধে ৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে
আগষ্ট ধ্বংশ হয়, ১৭৪৮ সালে স্প্যানিস মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ার রক জোয়াকুইন ডি আলকুবিরে
এই নগরী মাটির নিচে প্রোথিত অবস্থার থেকে আবিষ্কার করেন, বিস্ময়কর
ব্যাপার বলুন বা পাপাচারে লিপ্ত হবার কারনে স্রষ্ঠার রাখা পরবর্তীতে
সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য নিদর্শন যাই বলুন না কেন, এখানে সেই দিনে ওই নগরীতে যে যে
অবস্থাতে মারা গেছিলো তাদের কে সেই অবস্থাতে জমাট ভাস্কর্যের রুপে পাওয়া গেছে ),
সাদুম নগরী(বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রে অবস্থিত, হযরত লুত আঃ এর
সময়ে(প্রায় ৪০০০ বছর আগে হযরত ইবরাহীম আঃ এর সময়ে, হযরত লুত আঃ ছিলেন
হযরত ইবরাহীম আঃ এর ভাতিজা) সমকামিতার জন্য ধ্বংশ হয়েছিল
(198)
বর্তমানে এখানে আছে ১০৬ কি.মি লম্বা ও
১৫ কি.মি চওড়া ডেডসি বা মৃত সাগর, ডেডসিতে অতি লবনাক্ততার ঘনত্বের কারণে কোন কিছু
ডোবেনা, কোন জীবিত প্রানী ও নেই এর পানিতে, এটাও সিমালঙ্ঘঙ্কারীদের
জন্য আল্লাহর নিদর্শন ) দ্বারকা ছিল (বর্তমান ভারতের উত্তর
পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের সমুদ্রে অবস্থিত ৭৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তন ছিলো, ২০০০ সালে
অনুসন্ধানী এক অভিযানে সমুদ্রের আনুমানিক স্থানে পুরাতন কিছু স্থাপনার ধ্বংশাবশেষ
পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীদের পরীক্ষাতে স্থাপনাগুলো ৩৫০০ বছর আগের মনে হয়, শ্রী কৃষ্ণের
মৃত্যূর কিছুকাল পর প্রবল ভূমিকম্পে সমুদ্রগর্ভে ডুবে যায় এই নগরী ), অযোদ্ধার
রাজা রাম ও ছিল এবং তারঁ সত্যযুগও ছিল,
কিন্তু বাবরি মসজিদের কাছে ছিল কিনা সেটা কে জানে, হয়তো উগ্র হিন্দুরা ভাল
বলতে পারবে, মুসলিম হিন্দু ,খ্রিস্টান,বৌদ্ধ,ইহুদীদের নবী বা অবতারেরা সবাই একই
বাণী দিয়েছেন জীবের সেবা ঈশ্বর সেবা ,সব মানুষ এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, আল্লাহর
প্রেরিত পুরুষদের ভিন্ন স্থানে প্রেরনের কাছে তাদের অনুসারীরা ভিন্ন ধর্মের হয়ে
গেছে, ইহুদীদের নবী মুসা আঃ,আর খ্রিস্টানের যীশু বা ঈশা আঃ কে কি আমরা নবী মনে
করিনা মুসলমানেরা ? তাই আসুন সব ধর্ম কে শ্রদ্ধা করি ,ধর্ম বা মানুষকে ঘৃনা নয়,
ঘৃনা করুন যিনি অপরাধ করেন তাকে, সব ধর্মের এক বানী মানুষের সেবা, যে গৌতম বুদ্ধ
একটা পিপড়া মারতে পারতেন না তার অনুসারী বার্মিজ বৌদ্ধরা যদি ০১ লাখ রোহিঙ্গা মেরে
ফেলে সে দোষ গৌতম বুদ্ধের নয়, দোষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয়েও পথভ্রষ্ট মানুষটির, কোন মুসলমান বিনা অপরাধে মানুষ হত্যা , বিশৃঙ্খলা, সুদের
কারবার, মানুষকে অযথা অত্যাচার, মজুতদারী,
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অত্যাচার করলে সেটা নবী ও আল কোরআনের দোষ একেবারেই
বলা যাবেনা। পৃথিবীর মানুষের যত ইতিহাস, জনশ্রুতি, কিংবদন্তী, লিখিত ইতিহাস বা সভ্য মানুষের ইতিহাস টা এই বিগত
০৬ হাজার বছর ।আমরা আজ পর্য্যন্ত সৃষ্টি নিয়ে যত তত্ব দিয়েছি বা পরিক্ষীত ও
প্রমাণিত তত্ব বলছি সেটা একেবারে মিথ্যাও হতে পারে । যত কিছু হতে পারে সেটা ০৫ লাখ
বিশ্বকোষ এ লিখে ও শেষ করা যাবেনা।
(199)
একটা জিনিস অবশ্যই মেনে নিতে হবে এই সৃষ্টির
জন্য স্রষ্ঠা কে মানব হিসাবের সময়ের প্রচুর সময় নিতে হয়েছে আর একেকটা সৃষ্টি
একেকটা মহাবিজ্ঞানের একেকটা প্যাকেজ ।আচ্ছা আমরা এই যে এত বিখ্যাত হচ্ছি যাতে মারা
যাবার পরেও আমাদের কে পৃথিবীর ভবিষ্যত মানুষেরা হাজার বছর ধরে মনে রাখে। এর জন্য আমরা কবি সাহিত্যিক, দেশপ্রেমিক, নেতা,
গায়ক-গায়িকা ,নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড়,দার্শনিক,বিজ্ঞানী কত কিছু হতে চাচ্ছি। একটা জিনিস ভেবেছেন যদিও ভাবাটা অনর্থক, বা ফালতু
বলবেন বটে, সৌরজগতে হাজার কোটি গ্রহ নক্ষত্র আছে। সেই হাজার কোটির
ভিতর পৃথিবী একটি গ্রহ মাত্র। এখানে গড়ে উঠেছে মানবজাতি নামক এক অতি বুদ্ধিমান
প্রানীর এক সভ্যতা। কোন কারনে হোক এই মানবজাতি বা পৃথিবী যদি পুরোপুরি ধংশ হয়ে
যায় তবে মহাকাল কি আমাদের সক্রেটিস, প্লেটো,
উত্তম, সুচিত্রা, শাহরুখ খান,
আইনস্টাইন , মেসি , নেইমার এর কোন চিহ্ন রখবে। পৃথিবীর
মানবজাতির এত বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস একেবারেই ডিলিট হয়ে যাবে। আর আপনি লক্ষ
করুন মানবজাতির প্রাচীন যত সভ্যতার উল্লেখ আমরা পাই সেগুলো তো যখন উন্নতির চরম
শিখরে উঠেছে তখন ধংশ হয়ে গেছে। তাহলে আমরাও কি ধংশের দারপ্রান্তে।
পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ, বিভিন্ন দেশে জাতিগত নিধন, গনহত্যা, গাজওয়াতুল হিন্দ,
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা, বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও এন্টার্কটিকার বরফগলা ,
ভুমিকম্পের সম্ভাবনা এ সব কিছুই কি এসবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একবার এভাবে ধবংশ
হলে মহাকাল পরবর্তী সৃষ্টির কাছে আমাদের কে বিস্মৃত করে রাখবে।পরবর্তী
সৃষ্টি বলতে ধরুন মানবজাতির আগে থাকতে পারে এমন কোন সৃষ্টি যারা ধবংশ হবার পর আমরা সৃষ্টি হয়েছি ,যাদের কথা
আমরা জানিনা। ধর্মগ্রন্থ মতে শোনা যায় মানব জাতি সৃষ্টির বহু পুর্বে জ্বীন
জাতির সৃষ্টি। তাহলে জ্বীন জাতি যদি মানব জাতির থেকে ৩০ হাজার বছর আগেও
তৈরি হয় আর তারা মানুষের মত জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করে তাহলে তাদের অবস্থানটা কি প্রযুক্তির
পর্যায়ে একবার ভাবুন তো, আমাদের মানুষদের জিন প্রকৌশল ধরুন এখন এমন পর্যায়ে যে
ইচ্ছা মত একজন মানুষ কে বলতে গেলে সুপার পাওয়ার দেওয়া সম্ভব।
(200)
ধরুন এমন জিনোম আছে যেটার বদৌলতে একজন মানুষ একঘন্টা ঘুমিয়ে
০৮ ঘণ্টা ঘুমানোর মত শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। আবার এমন জিনোম আছে যা
মানুষের হাড় এত শক্ত করতে পারে যে লোহার হাতুড়ি পেটা করেও হাড় ভাঙ্গা যাবেনা । আবার
যদি বর্তমানের বিজ্ঞান ক্রম উন্নত হচ্ছে যেহেতু এবং এর সাথে যদি মানবজাতি টিকে
থাকে আরো ০৫ হাজার বছর মাত্র, তাহলে মানুষ
হয়ে উঠবে তথা কথিত জ্বীন জাতির থেকে উন্নত বা সুপারম্যান এর থেকে উন্নত কিছু।
কিন্তু মানবজাতি দিনে দিনে যে যুদ্ধবাজ,
স্বার্থলোভী, মায়ামমতাহীন ও প্রফেশনাল হচ্ছে তাতে করে আগামী ১০০ বছরের ভিতর
৩য় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে মানবজাতি ধ্বংশ হবেনা এর নিশ্চয়তা কি ? এ রকম হলে আমাদের
আবার সেই গরুর গাড়ি আর মশালের যুগে চলে যেতে হবে পৃথিবীটা রহস্যময় ভাঙ্গা গড়ার
খেলার চক্র ছাড়া আর কিছু নয়, এই চক্রটাই অকাট্যভাবে মেনে চলে পৃথিবী,সব যায়গাতে এর
নিদর্শন পাবেন, পৃথিবীতে আজ যে রাজা কাল সে ফকির, জন্ম গ্রহন করে বাচ্চা হিসেবে ,
নিজে নড়তে পারেনা, কোন কাজ করতে পারেনা, ঠিক সেই বাচ্চা সক্ষম যুবক বয়স পার করে
আবার ফিরে আসে সেই শিশু বয়সের মত অক্ষম বয়সে মানে বার্ধ্যকে, নদীর যেমন এক কুল
ভাঙ্গে আরেক কুল গড়ে, তেমনি শূন্য(০) থেকে ১০০ তে পৌঁছালে ১০১ এ যাওয়া যাবেনা, ১০০
এর পর শূন্যতে ফিরতে হয় এটাই পৃথিবীর নিয়ম, রাতের অন্ধকার শেষ করার জন্য উদয় হয়
সূর্য, আবার সূর্য রাতের অন্ধকার এ বিলীন
হয় সন্ধাতে ,তেমনি মানব সভ্যতা ও সমাজ ব্যবস্থা অনুন্নত থেকে উন্নত হয় আবার উন্নত
থেকে আবার অনুন্নত তে নেমে আসে, এটা যে কোন কারনে হতে পারে , মানব সভ্যতা ও সমাজ
ব্যবস্থা এবং বিজ্ঞান বার বার এই একই চক্রে ঘুরতে থাকে। আর যদি বর্তমান ধারাতে টিকে থাকে, পৃথিবীতে
কোনরকম ধ্বংসযজ্ঞ বা ব্যাঘাত ছাড়াই যদি মানুষ আরো ১০ হাজার বছর বিজ্ঞান চর্চা করতে
পারে তবে ৩য় মাত্রার মানুষ তখন আরো কয়েক মাত্রা অগ্রসর হয়ে যাবে । কি হবে তখন ভেবেছেন ? তখন জিনোম এর এডিটিং মানুষ নিজে
ঘরে বসে নিজের উপরই অ্যাপ্লাই করবে, মানুষ উড়তে পারবে বিমান ছাড়াই, সর্বগুণের
অধিকারী হতে পারবে|
(201)
কম্পিউটারর বাদে নিজের ব্রেন
দিয়ে সব করতে পারবে, যাদু করার মত নিজের দেহ বদলে মূহূর্তের মধ্যে যে কোন প্রাণীর
রূপ ধারণ করবে, চোখের পলকে যে কোন দূরত্ব, স্থান এবং কাল অতিক্রম করবে, মরে গিয়ে
আরেকজনের স্মৃতি আরেকজন জীবিত মানুষের মস্তিষ্কে ঢোকান যাবে, ফলে একদেহে না হোক স্বাভাবিক নিয়মে জন্ম নেওয়া
আরেকজন মানুষের শরীরে মানুষ বেচে থাকতে পারবে, ফলে মৃত্যুটা হবে নামে মাত্র, যত
মানুষ জন্ম গ্রহন করে সবার ই দেহ একরকম থাকে, পার্থক্য শুধু ফেস আর মস্তিস্কের। তো ফেস তো এখন প্লাস্টিক সার্জারি করে ইচ্ছামত রুপ দেওয়া সম্ভব , শুধু
স্মৃতির ব্যাপারটা বাকি থাকে , সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষনা চলছে, তবে পৃথিবীর সমাজ ও
সভ্যতার ভাঙাগড়ার সুত্রানুযায়ী বিজ্ঞান গবেষনা এগোবার সুযোগটা পেলে হয়। কারণ সব
থেকে বড় সমস্যা মানবঘটিত যুদ্ধ ও প্রকৃতির উপর মানুষের নিয়ন্ত্রন না থাকা । তো মস্তিষ্কের স্মৃতির ব্যাপারটা অনেকটা হিন্দু ধর্মের
পুর্নজন্মের মত,একজন নতুন মানুষের মাথাতে আরেকজনের স্মৃতি প্রবেশ করাতে করাতে
একসময় সে পঞ্চাশ বার মরার পর (স্মৃতি ভরা মস্তিষ্ক নতুন দেহে প্রবেশ করালে) বলবে আমার বিগত পঞ্চাশ জন্মের কথা আমার মনে আছে । হাত পা দেহ তো সব মানুষের এক, স্মৃতি(মস্তিষ্ক) আর চেহারার(মুখমন্ডল বা ফেস
এর ভিন্নতা) কারণে মানুষ একজন থেকে আরেকজন আলাদা । তাহলে যদি জ্বীন জাতি থাকে তাহলে তারা কত টা উন্নত হতে
পারে আন্দাজ করুন তো, আবার তারা মানুষ থেকে লাখ বছর আগে সৃষ্ট সেটাও উল্লেখ পাওয়া
যায়, এমন হতে পারে যে জ্বীন জাতিদের আগে হয়তো মানুষ দেখতো এজন্য যে তাদের পৃথিবীতে
দরকার ছিলো , এখন হয়তো তারা এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে মানবজাতি বা পৃথিবীর দিকে
তাদের কোন কিছুর প্রয়োজনে না তাকালেও চলে ।এটা তো গেল জ্বীন জাতির কথা
যারা মোটামুটি আচার ব্যবহারে মানুষের কাছাকাছি। দৃশ্য আর অদৃশ্য
বলে কথা বা পার্থক্য। কয়েকদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে দেখলাম যে কোন এক
বিজ্ঞানী গবেণাতে বলেছেন, পুরো মহাবিশ্বে মানুষ ছাড়া আর কোন বুদ্ধিমান প্রানী থাকা
সম্ভব নয় , মানুষই একমাত্র প্রানী ।
(202)
এই কথাটা আমার সম্পুর্ণ গাজাখুরি বলে মনে হলো, দুঃখিত আমি
এজন্য যে ব্যস্ততার কারনে আমি পেপার কাটিং বা স্ক্রিনশটটা সংরক্ষন করতে পারিনি। জীবনের সঙ্গা যে হুবহু মানুষের সাথে মিলতে হবে এমনটা
নয় বা পৃথিবীর প্রানীর সাথে মিলবে এমন নয়। ধরুন গাছকে আমরা ২০০ বছর আগে
জানতাম এক জড়বস্তু বলে । স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমান করেন এটা জীব, এর
খাদ্য গ্রহন এবং অনুভুতি আছে । তাহলে
জীবনের সঙ্গা যে মানুষের গঠনের সাথে মিলতে হবে এমন নয় অথবা যদি মানুষের সাথে
মিলাতে যান তবে সেটা হবে মানব এর মত মানব অন্য কোন গ্রহে আছে কিনা এরকম খোজা।
সমুদ্রতলে অত্যন্ত সুন্দর দেখতে গাছের মত প্রানিগুলো কি, বা বক্স জেলি ফিশ গুলো
দেখে হঠাৎ কে প্রানী মনে করবে তারপরেও তারা প্রানী। অন্য গ্রহে জীব
থাকলেও আপনি আমি শুধুমাত্র খালি চোখে বা টেলিস্কোপ এ দেখতে না পারি। ধরুন
একটা গ্রহে একটা জীব ,আছে যে ভাত না খেয়ে আগুন খায়, থাকে এসিড এর ভিতর, সেই
গ্রহটার ভিতর এমন এক রশ্মি আছে যেটা মানুষের চোখ ধারন বা সনাক্ত করতে পারেনা। জীব হতে গেলে মানুষের মত সব কিছু করতে হবে, মানুষের সব
কাজের সাথে মিলতে হবে এমন কথা নেই । তাহলে
আপনি কিভাবে বুঝবেন যে সেখানে জীব আছে বা মানুষ ছাড়া আর কোন জীব কোথাও নেই এটা কি
বলা সম্ভব হয় যদি সঠিক বিজ্ঞান দৃষ্টিকোন থেকে ভাবেন ? ।
২) পুরো সৃষ্টি
জগত কে তিনি কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন ,সেই নিয়মের বাইরে কিছু হয়না
কদাচিৎ হয়তো কিছু ব্যাতিক্রম ঘটতে পারে” –ঈশ্বর ভয়ানক ভাবে নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ।আমরাই উপযাচক হয়ে নিয়মের বাইরে তার কাছে অনেক কিছু দাবি করে বসি ।একটা
উদাহরণ দিই-তিনি নিয়ম করে দিয়েছেন পড়িলে পাশ না পড়িলে ফেল কিন্তু আমরা
অধিকাংশই পড়াশোনাতে ফাঁকিবাজ, পড়াশোনার থেকে আমাদের অন্যান্য কাজ যেমন পড়ার সময়
নষ্ট করে সিনেমা ,গান, গল্পের বই, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি, অকালে প্রেম এগুলো করে
সময় নষ্ট করি, যখন হুশ হয় তখন আমরা তাড়াহুড়ো করে পড়তে বসি আর নামাজ পড়ে বা পুজা
দিয়ে বা পীরের দরবারে মানত করে আল্লাহ বা ভগবানের কাছে সাহায্য চাই।
(203)
ফলশ্রুতিতে যখন ফাকিবাজির কারণে এত
নামাজ, পূজা বা মানতের পর আমরা ফেল করি তখন বলা শুরু করি আল্লাহ বা ভগবান দিলেননা।
কিন্তু কথা হলো তিনি চাইলেই আপনাকে পাশ করিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি অগণিত
সৃষ্টি অথবা অগণিত মানুষের রিযিকদাতা ।আল্লাহ তিনি সবার জন্য আল্লাহ, সবার কাছে
আল্লাহ। সবাই ই নিঃসংকোচে সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইতে পারে ।তাহলে আপনি আল্লাহর
কাছে চাইলে যদি আল্লাহ আপনাকে পাশ করিয়ে দেন তাহলে আপনার বড় যে ফাকিবাজটা আছে সে
কি দোষ করলো? কারণ সেই ফাকিবাজটাকে যদি না পাশ করানো হয় তাহলে হয়ে যাবে সে আল্লাহর
কাছে বঞ্চনার শিকার , আল্লাহর কাছে সব বান্দা সমান । এজন্য কোন বান্দা যাতে বঞ্চিত
না হয় সেজন্য পড়াশুনা বা কর্ম নামক সুযোগ দিয়ে দিয়েছেন যাতে কোন বান্দা বঞ্চিত না
হয় ।তোমাকে সময় এবং সূস্থ মস্তিষ্ক আল্লাহ দিয়েছেন ।যে বান্দা যতটুকু পড়বে সে
ততটুকু নাম্বার পাবে , যে যতটুকু সু কর্ম বা কু কর্ম করবে সে ততটুকু ফল পাবে।এতে
আল্লাহকে দায়ী করার কিছু নেই।আল্লাহ এরকম কঠোর নিয়মানুবর্তিতার ভিতর সৃষ্টিজগৎ
পরিচালনা করছেন। আমরাই ফাকিবাজি করি ,ঘটা করে
প্রার্থনা করি , পূজা করি আর আল্লাহর বা ভগবানের কাছে চাই আর কাঙ্খিত বস্তু
না পাবার জন্য আল্লাহকে বা ভগবানকে দায়ী করি ।কিন্তু মূল কর্ম বা পরিশ্রমটাই করিনা।
দেখুন পৃথিবীতে তিনি প্রত্যেক জীবের একেকটি জোড়া
ও গাছ পালা সৃষ্টি করে স্ব প্রজনন এর ক্ষমতা দিয়েছেন এজন্য যে বার বার যাতে
না গড়তে হয় , আপন থেকে গাছ এবং প্রানী যাতে তৈরি হয় সে জন্য এ ব্যাবস্থা। কখনো মরা
মানুষ বাঁচতে দেখেছেন বা মরা গাছে পাতা গজাতে, না দেখেননি, হয়ত ২০০-৫০০ বছরে ও
শোনা যায়না, লাখ বছরেও শোনা যায়না, নিয়মের একচুল এদিক সেদিক হয়না। তিনি কি পারেননা
মরা গাছ বা মানুষ কী মুহুর্তে জীবিত করতে, অবশ্যই পারেন, তিনি কি পারেননা গরীব কে
ধনী করে দিতে, অবশ্যই পারেন, কিন্তু কেন নয়, এজন্যই নয় যে সবাই ওনার বান্দা
,সৃষ্টির পিছনের উদ্দেশ্য উনিই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন ভাল জানেন, একজন কে
দিলে আরেকজনকে না দেওয়াটা অন্যায় যেহেতু সবাই আল্লাহর বান্দা|
(204)
সে জন্য এরকম আলাদীনের দৈত্য টাইপের
ম্যাজিক সর্বশক্তিমান দেখান না। আপনি সাহায্য চেয়ে পেলেননা মানে এটা নয় যে আল্লাহ
নেই, তিনি আদি,অনন্ত,সর্বজ্ঞ, সকল স্থানে বিরাজমান। সমস্ত সৃষ্টি জগত কে তিনি
নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন বলেই আপনি আমি সব কিছু চাওয়া মাত্র পাইনা , তবে মহান স্রষ্ঠার রহমতের দৃষ্টি কার উপর পড়বে আর কে কি পাবেন সেটা
একমাত্র আলিমুল গায়েব মহান আল্লাহ ভাল জানেন। বলা যায় ক্ষমতাতে আছে কিন্তু দেওয়ার
নিয়মে নাই ।
৩) মহাবিশ্বের শেষ কোথায় বা মহাবিশ্ব আসলে কতটা বড় ? - প্রথমে বলতে হবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ ভাল জানেন , তিনি
সর্বজ্ঞ। তবে কয়েক বছর আগে আল্লামা ইবনে কাসীর ও আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রহঃ
(১৪৪৫-১৫০৫ -মিশর) এর লেখা একটি বই যেটার বাংলা অনুবাদ জ্বিন ও ফেরেশতাদের
বিষ্ময়কর ইতিহাস – মাওলানা আজিজুল হক আনসারী সম্পাদিত ” বই এ পড়েছিলাম সাত আসমান সাত জমিন
নিয়ে আমাদের মহাবিশ্ব জগত। এক জমিনে আছি আমরা ।বিজ্ঞানমতে সেই জমিনের বা
মহাবিশ্বের শেষ মাথা আমরা এখনো আমরা খুজে পাইনি। এই বই মতে সাহাবী ও তাবেয়ীগনের মতে
আরশ ও কুরসী দুটি আলাদা।ইবনে জারীরের তাফসির অনুযায়ী কুরসী হলো আরশের নিচে। সপ্ত
আসমান ও পৃথিবী কুরসীর ভিতর অবস্থিত ।আর কুরসী আরশের সম্মুখে। ইবনে জারীর ও ইবনে
আবু হাতিম যাহহাক সুত্রে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে সাত আসমান ও সাত
জমিনকে যদি এক সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় তবে তা কুরসীর তুলনায় বিশাল মরু প্রান্তরের
মধ্যে পড়ে যাওয়া হাতের আঙুলের আংটির সমমান। আবার আবুযর (রা.) থেকে বর্ণিত হুযুর
(সাঃ) কে বলতে শুনেছি আরশের মধ্যে কুরসী ধু ধু প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত লোহার আংটির
চাইতে বেশি কিছু নয়। আর সেই সাত আসমান সাত জমিনের এক জমিনে অবস্থিত এক জমিনের
বেহিসাবী ১০ থেকে ২০ হাজার কোটি গ্রহের ভিতর আমরা পৃথিবী নামক সামান্য এক গ্রহের
বাসিন্দা মাত্র। আর এই ১ম জমিনের ই শেষ মাথা আমরা পাইনি। বর্তমান সময়ের রকেটের গতি
দিয়ে কয়েক বিলিয়ন বছর চললেও আমাদের আসমানের শেষ সীমাতে পৌছা সম্ভব নয়।
(205)
মহানবী সাঃ এর মিরাজ এর একটি ঘটনাবলী
সম্বন্ধে এক যায়গাতে বলা আছে ফেরেস্তারা এবং রুহ ঊর্ধালোকে এমন এক যায়গায় আল্লাহর
দিকে আরোহন করে যেখানে একেকটি দিন পৃথিবীর ৫০ হাজার বছরের সমান। মিরাজ এর আলোকে
সর্বশেষ সীমা সিদরাতুল মুন্তাহার কথা বলা হয়েছে সুরা নযম এ ।আর সাধারন ভাবে বলা
হয়েছে বেহেস্ত বা দোজখের একেকটি দিন পৃথিবীর ১০০০ বছরের সমান। বিজ্ঞানের ভাষাতে মহাবিশ্বের
বিশালতা তো পড়েছেন অনেক, ধর্মীয় ভাবে মহাবিশ্বের বিশালতার বর্ণনাটা ব্যতিক্রম ও
বিষ্ময়কর মনে হলো বলে এই ব্যাখ্যাটা দিলাম, এতেই বোঝা যায় মহাবিশ্ব কত সুবিশাল।
বিজ্ঞান ও মহাবিশ্বের বিশালতা সম্বন্ধে তাই ই বলে ।
০৪) বেহেস্তে
থাকবে এমন সব নিয়ামত যা আমাদের চোখ কোনদিন দেখেনি, কান কোনদিন শোনেনি। আমরা হয়তো
পুন্য কর্ম করছি একদিন আমরা মারা যাবো, তখন যাতে কর্মফল দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার
একান্ত করুনাতে বেহেশতে যেতে পারি, সেখানে ইচ্ছা মত খাওয়া, যা চাওয়া হবে তাই পাওয়া
এবং আছে হুর ।আবার বলা হয়েছে বেহেস্তে
থাকবে এমন সব নিয়ামত যা আমাদের চোখ কোনদিন দেখেনি, কান কোনদিন শোনেনি। সব কিছুর
রহস্য জানেন মহান আল্লাহ তায়ালা আলিমুল গায়েব, কারো কাছে হয়তো পৃথিবীতে থাকা
উপাদেয় পদের সকল খাদ্য মূল্যবান, কারো
কাছে নারীর সৌন্দর্য মুল্যবান, কিন্তু আল্লাহ
বেহেস্তে এমন কিছু সৃষ্টি করে রেখেছেন যে গুলো
পাবার জন্য আপনার কাছে পার্থিব রমণীকুলের সৌন্দর্য,খাবার, টাকা, হীরা জহরত সব
মিথ্যা হয়ে যাবে।সেরা আনন্দ, পানীয়, বা নর নারীর প্রেম হয়তো আপনি তখন চাইবেননা(আল্লাহতায়ালা
সর্বজ্ঞ তিনিই ভালো জানেন, শুধুমাত্র আলোচনা উদাহরণের সুবিধার্থে), এমন অসংখ্য
জিনিস হয়ত আপনি দেখবেন যেগুলো আপনি কোনদিন দেখা তো দূরে থাক ,শোনেনওনি, কল্পনাও
করেননি। সে গুলো হয়তো পৃথিবীর এই সব পানীয়, নারী এবং গাড়ি বাড়ি থেকে আকর্ষণীয় কিছু
দেখবেন, তখন আপনি পৃথিবীর সকল দামী জিনিস ফেলে বেহেসতী জিনিস বা নিয়ামত চাইবেন,
পৃথিবীর মূল্যবান জিনিস হয়ে যাবে আপনার কাছে মূল্যহীন
(206)
এত কিছু পাবার পর ও হয়ত সেখানে সব কিছু ফেলে কোন একজন সৌভাগ্যবান
বেহেস্তী ব্যক্তি চাইতে পারেন মহান আল্লাহ তায়ালার দর্শন, নিজের চর্মচোখে মহান স্রষ্ঠা
কে দেখে মানব জন্ম ধন্য করা , যে চাওয়ার
কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানীয় , নেশা বা রমণীর সৌন্দর্য বা বেহেস্তের হুর ও
মূল্যহীন হয়ে যাবে” ।মানুষের কৌতূহল এবং কোন জিনিস
নিয়ে আদিখেতা শুধু জিনিসটা পাবার আগ পর্যন্ত, তারপর সে জিনিসে আর মানুষের ততটা
আকর্ষন থাকেনা। এ রকম পরিস্থিতিতে মানুষ পৌছে যায় জাগতিক লোভ বা আবেগ থেকে সরে
বাস্তবতা ও আত্বিক মুল্যবোধ এর দিকে । ধরুন আপনার প্রেম বিয়ে নিয়ে সুখ কল্পনা কিন্তু বিবাহের দিন পর্যন্ত , বিবাহ
হয়ে গেলে আপনার ভিতর থেকে পূর্ব সমস্ত আবেগ বা কল্পনা রোমান্টিসিজম বাদ দিয়ে হয়ে
যান বাস্তবতাবাদী ও খটখটে। ঈদ নিয়ে আমরা খুব মাতামাতি করি রোজার প্রথম থেকে।
কিন্তু ঈদের দিন এলে কিন্তু মনে সেই ঈদ আসবে পুলকটা আর থাকেনা। বরং রোজার ত্রিশটা
দিন যখন চলমান ছিল তখন ঈদকে বেশি আনন্দদায়ক মনে হতো ঈদ দুরে ছিলো বলেই। মিষ্টি
আপনার আমার প্রিয় হতে পারে , কিন্তু সেটা কাছে
না পাবার কারণে আর দুরে থাকে বলে , মিষ্টির দোকানদাররা কত পদে মিষ্টি তৈরি
করে কিন্তু তাদের কাছে মিষ্টি অতটা আকর্ষনীয় কিছু নয়। এ জন্য দেখবেন মানুষ অলৌকিক
সাধনা করতো জীবনে যাই খুশি তাই পাবার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে তারা যখন সাধনার
মাধ্যমে সব পাবার যোগ্য হতো তখন কিন্তু সংসারত্যাগী বৈরাগী হয়ে যেতো, কারন তখন
পার্থিব সকল আনন্দের থেকে বৈরাগে মজা পেয়ে যেতো আধ্যাত্মিক সাধকেরা, এজন্য আমাদের
মনে প্রশ্ন জাগতো যে সাধুরা সন্ন্যাসীরা যদি এত ক্ষমতার মালিক হতেন যে যে কোন কিছু
চাইলেই তাদের সামনে হাজির হতো, বহু রাজাবাদশার রাজ্য অটুট থাকার জন্য দোয়া করেছেন,
তাদের দোয়াতে গরীব ধনী হয়েছে কিন্তু তারা কেন এত সুখ হাতে পেয়েও ছেড়া কাপড় আর
জটচুলে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন আর অধিকাংশ সময় ধ্যানমগ্ন থাকতেন ? পৃথিবীতে পর
জগতের সব নিয়ামত নেই, পৃথিবীতে আমরা হিতকরের থেকে ক্ষতিকর জিনিসটা নিয়ে মাতামাতি ও
প্রতিদ্বন্দিতা করি আমরা।
(207)
এই যে
পৃথিবীতে আমরা আলেক্সান্ডার, সহ পৃথিবীর যত দিগ্বীজয়ী বীর দের মনে রেখেছি অধিকাংশ
লোকই তো অযথা আরেক দেশ দখল করার নিমিত্তে নিষ্ঠুর আক্রমন করে, লাখ লাখ লোক মেরে
পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে আছে, পৃথিবীর
ইতিহাসে যারা বীর তারা কি আসলে কি বীর ,অযথা
তারা কেন পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আক্রমন করেছিল, এমন নয় যে তারা যে সব রাষ্ট্র
আক্রমন করেছিল তারা শিক্ষা দীক্ষাতে উন্নত ছিলোনা, চেঙ্গিস খান আর হিটলার, স্টালিন
এদের আক্রমনে কি কোন সভ্যতার উন্নতি ঘটেছে ? তারা দু জন কোটি কোটি
মানুষ হত্যা করেছে, এই দুজনের আক্রমনে পৃথিবী আরো ৫০০ বছর পিছিয়ে
গেছে ? অথচ তাদের কে তাদের জাতি বীর
হিসেবে ,আদর্শ হিসেবে স্মরণ করছে, যে জাতিগোষ্ঠী বা দেশগুলোতে এরকম খুনী
রাষ্ট্রনায়ক এসেছে এবং যে জাতি তাদের রাষ্ট্রনায়কেরা কোটি মানুষ খুন করার পরও
তাদেরকে আদর্শ মানে তারা মানবতার সঙ্গায় জানেনা ।মানবতার চশমা দিয়ে শুধু নিজ জাতিগোষ্ঠী দেখলে হবেনা সব জাতিগোষ্ঠীকে এক রকম
দেখতে হবে। মূলকথা হল এসব কিছুনা, মানুষ হল
পরিস্থিতি নামক এক দৈত্যের হুকুমের অধীন, পরিস্থিতি আর কর্ম আমাদের কে নিয়মের
বাইরে নিয়ে যায়, বুঝেও অবুঝ এর মত কাজ করতে বাধ্য করে। ধরুন আপনি ১০ বছর ঘুরে
প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি বা একটা কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি, এমতাবস্থাতে,
আপনি এই দশ বছরে বিভিন্ন আত্ত্বীয় স্বজন,বন্ধুদের কাছে অবমাননাকর কথা শুনে শুনে
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে কোন উপায়ে হক আপনি এই অবস্থা থেকে উঠে আসবেন, যখন অবৈধভাবে এই লাঞ্ছনা থেকে বাচার উপায় আসবে
তখন আপনি ভাববেন আগে তো বেঁচে নিই, কে
জানছে আমি অসৎ পথে কার্যোদ্ধার করলাম ? পৃথিবীতে শতকরা ৯০ভাগ নীতিবান মানুষই
পরিস্থিতি দোষে ও জীবন জটিলতাতে এক সময় বিপথগামী হয়ে যায়।আমি একা ভাল হয়ে কি লাভ
হয়েছে, আমার মত নগন্য মানুষের একার সততাতে কি এসে যায় ।বাস্তবতার
যাতাকলে একসময় সে নীতি হারিয়ে ফেলে। পৃথিবীতে সততা ও নীতি নিয়ে চলবার মত কঠিন কাজ
আর নেই এটাই অধিকাংশের অভিমত ।
(208)
অনেক সময় দেখা যায় বিশ্বে এ পর্যন্ত যত
মহামানব এসেছেন তাদের অধিকাংশ মহামানবই তাদের সুনাম, খ্যাতি, কর্মের সাথে সমান
বিতর্ক ও তাদের সাথে থাকে ।শুধু মহামানব কেন, অতি সাধারন কোন মানুষ এর ছোটখাটো দোষ
পেলেই ব্যাস চেঁচামেচি শুরু করবেন না, কুৎসা রটাবেননা, গুরুতর দোষ হলে ভিন্ন কথা ।ধরুন
কদিন আগে ফেসবুক এ একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, ভিডিওটার বিষয় বস্তু হল নাটোর জেলার
কোন এক গ্রামে স্বামী স্ত্রী আম চুরি করেছিল, তার জন্য গ্রামবাসী তাদের জনসম্মুখে
বেঁধে কি মারটা না মারলো। এই সামান্য ব্যাপারে এরকম নৃশংস হওয়াটা ভয়ংকর বাড়াবাড়ি। যত
বড় মহামানব হোক না কেন সব শেষে তিনি একজন রক্ত মাংশের মানুষ, আর মানুষ হলে ভুল বা
বিতর্ক হওয়া বা থাকাটা স্বাভাবিক ।হতে পারেন তিনি ধর্ম গুরু, হতে পারেন তিনি
রাষ্ট্র প্রধান, হতে পারেন বড় একজন সেলিব্রিটি। স্বর্ণে যেমন খাদ থাকে, ধানে যেমন
চিটা থাকে, চাঁদে যেমন কলংক থাকে, তেমনি মহামানব হলেই ভুল থাকতে নেই এমন নয়। কোন
মহামানবের জীবনে বিতর্ক থাকলে হুজুগে ০৫ জনের সাথে সুর না মিলিয়ে ওনার জীবনের
ইতিহাস এবং পরিস্থিতি ঘাটুন, আর ভাবুন ওনার যায়গাতে আপনি থাকলে কি করতেন বা কতটুকু
করতেন, দেখবেন আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন। অযথা ধর্ম, সমাজ বা আদর্শ
নিয়ে বিতর্ক করে সংঘর্ষ বা বাদানুবাদে জড়াবেন না ।
এতক্ষন যা লিখলাম তা এজন্য যে আমরা মুক্তমনা লেখা বা কিছু নাস্তিক যুক্তি পড়ে আল্লাহ বা স্রষ্ঠা বা ঈশ্বরকে
অস্বীকার করে বসি, এর মত বোকামি আর নেই। চোখে যেটা দেখা যায়না, বুদ্ধিতে যেটা
আসেনা সেটা নেই বলাটা কোন বুদ্ধিমানের কথা হতে পারেনা।আর যুক্তি দেখাবেন যে আপনি
আমি না খেয়ে আছি সেটাও আল্লাহর দোষ, এটা আল্লাহ নেই এর প্রমান হতে পারেনা। দেখা
যায় আমরাই হয়তো সবকিছু তে আল্লাহ কে যুক্ত করে ফেলেছি,তিনি যে অনিয়মের ভিতর নেই
সেটা তে ও আমরা তাকে যুক্ত ফেলেছি আমাদের খেয়াল খুশিমত । দেখুন তিনিও
নিয়মের বাইরে কোন কিছু পরিচালনা করেননা
(209)
তা না হলে একটা মানুষ মরে আবার ফিরে আসতে দেখেছেন কখনো ? জগৎ একটা ভয়াবহ
আকারের নিয়মের ভিতর দিয়ে পরিচালিত এর নিয়মের দেখুন কোন বাত্যয় নেই। ধরুন আপনি একটা মেয়েকে ভালবাসন।মেয়েটা
কে একদিন না দেখলে থাকতে পারেননা । এখন আপনাকে যদি বলি আপনি যে ভালবাসেন, সেটা কি,
আপনি তো আমাকে ভালবাসা কোন বোতলে ধরে দেখাতে পারবেননা, তেমনি ধরুন আপনার একটা
সন্তান আছে, তার প্রতি আপনি যে মায়া অনুভব করেন সেই মায়া বা স্নেহ ও কি কোন বোতলে
ভরে দেখাতে পারবেন ? আপনার গায়ে বাথা লাগলো, আপনি ব্যাথা কে দেখাতে পারবেন? আপনি
ঘুমের ভিতর সপ্ন দেখেছেন, গল্প যদি করেন, আর আমি যদি বলি আপনি যে সপ্ন দেখেছেন তার
ভিডিওটা দেখানতো, তা কি পারবেন পারবেননা। আবার আপনার বা আমার যে চোখ সেটা ৩০০ ন্যানোমিটার
দৈর্ঘ্যর কম এবং ৭০০ ন্যনোমিটার দৈর্ঘের বেশি আলো দেখতে পায়না। আমাদের এই চোখ অনেক
রঙ অনেক রশ্মি ধরতে পারেনা। এই সীমাবদ্ধতার কারনে সৃষ্টি জগতের অনেক কিছু আমরা
দেখতে পারিনা শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হয়েও, সেখানে অন্য নগন্য ইতর প্রানীরা যে সে সব
অদৃশ্য দেখেনা সেটাই বা বলি কি করে ? সৃষ্টি জগতের বিশালতা এবং এর পিছনের
মহাবিজ্ঞান সম্বন্ধে সামান্যতম উপলব্ধি থাকলে সৃষ্টি হয়ে স্রষ্ঠার প্রমান চাইবার
আগেই আপনি স্রস্ঠার অস্তিত্ত্ব টের পেয়ে যাবেন এর জন্য আপনার সামনে একটিও যুক্তিবিদ্দ্যা বা বিজ্ঞানের বই আনবার দরকার নেই
।
কিভাবে ধবংশ হতে
পারে পৃথিবী ও সভ্যতা ? একি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসা অনুন্নত থেকে উন্নত
এর চক্র ?
অনেক সময় মানুষ
উন্নত জিনিস রেখে সনাতন ধাচে ফেরে কেন বলতে পারেন ?, হতে পারে নতুন জিনিসটা পুরনোটার থেকে উন্নত কিন্তু মানসিক শান্তিদায়ক নয়
বা মিমাংসাকারী হিসেবে অকার্যকর সেজন্য ।
(210)
ধরুন দুটো মানুষকে মানব সীমাবদ্ধ
ক্ষমতার বাইরে নিয়ে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হলো আর কোন লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া হলো, কিন্তু
তাতে হবে কেউ কাউকে হারাতে পারবেনা, তখন বাধ্য হয়ে উন্নত ক্ষমতা বাদ দিয়ে সনাতন
মানব ক্ষমতায় আসতে হবে যার শেষ আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। একটা সময়ের কথা বলছি , সময়টা ৯০ দশকের শেষ দিকের কথা, ১৯৯৬-১৯৯৭ এর কথা বলছি ।
ওই সময়ে শৈশবকাল পেয়ে আমরা যারা ৯০ দশকের প্রজন্ম তারা সত্যিই ভাগ্যবান। এখনকার মত
ইন্টারনেট ব্যবহার করে অবাধ ভিডিও গেমস বা ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহার করে ঘরে বসে বিশ্বের
সব দেশে বিচরণের আমরা পাইনি ঠিকই কিন্তু ওই সময়ের অত্যন্ত সাধারণ মানের বিনোদন
গুলো তখনকার বাচ্চাদের মনে যে উৎসব আর উত্তেজনার ভাব তৈরি করতো, সেই উত্তেজনাটা
কিন্তু এখনকার চার দেয়ালে বন্দী, স্কুল, কোচিং আর বই এর বোঝাতে বন্দী বাচ্চারা
কল্পনাও করতে পারবেনা । তখন বিনোদন বলতে শুক্রবারের বাংলা সিনেমা আর আলিফ লায়লা।
ধরুন বিকাল সাড়ে তিনটার কয়েক মিনিট আগে
বাংলা সিনেমা শুরু হবে, সেজন্য টিভি সেটের সামনে সে কি ভীড়, আমাদের যশোর শহরের বাড়ি গুলোতেও সব বাড়িতে টিভি ছিলোনা
।প্রতি চার পাঁচ বাড়ি প্রতি একটা টিভি সেট ছিলো, এর ৯০% ই ছিলো সাদাকালো , রঙিন
টেলিভিশন কদাচিৎ দেখা যেতো, ন্যাশনাল, নিপ্পন , সনি এগুলো ছিল তখনকার টপ টেলিভিশন
ব্রান্ড । আর গ্রামে তো এক গ্রামে একটা থেকে দুইটা টেলিভিশন থাকাটা বিরাট ব্যাপার।
তো গ্রামে ওই যে সারা গ্রামের বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ যে আলিফ লায়লা
দেখে মজা পেতো, সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করতো সেই আলিফ লায়লার এনিমেশন ও গ্রাফিক্সের
কাজ দেখে এখনকার বাচ্চারা হাসবে, চাইলে এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন সেটে ছোটখাটো
সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আলিফ লায়লার ওই ইফেক্ট ও দিতে পারবে , তৈরিও
করতে পারবে । কিন্তু প্রতি শুক্রবারের ওই আমেজ বা উৎসবটার আবহটা আর আসবেনা । কারন টা হল আকর্ষণীয় / বিনোদনমূলক/ উত্তম
জিনিস যদি বার বার ব্যবহার হয় তবে সেটা তার আকর্ষণ, আনন্দ দেবার ক্ষমতা এবং
উপযোগিতা হারায় ।
(211)
ধরুন সাধারনত আমরা অধিকাংশ মানুষেরা
স্বাস্থ্য গত কারনে সপ্তাহে ০১ দিন মাংশ খাই(গরু-খাসি-মুরগী)। সকল খাবারের ভিতর
মানুষের কাছে প্রাণীজ মাংশের তৈরি বিভিন্ন খাবার আইটেম গুলো বেশি পছন্দের , কিন্তু
স্বাস্থ্যগত কারন হোক আর আর্থিক কারনে হোক মাংশ আমাদের প্রতিদিন খাওয়া হয়না বলেই
মাংশ আমাদের মুখে রসনার পূর্ণ পরিতৃপ্তি এনে দেয় ।কিন্তু এটা যদি প্রতিদিন খেতাম
তাহলে মাংশতে আর এত স্বাদ পেতাম না ।তখন শাকপাতা বা সবজি আমাদের কাছে ভালো লাগতো ।ঠিক
এরকম আগের যুগের এবং ৯০ দশকের বিনোদন গুলো ছিল মানুষের সীমিত ধরাছোঁয়ার ভিতরে।
বিনোদন সবসময় পাবার মত সহজলভ্য ছিলনা, এখন যেমন স্মার্ট ফোনের কল্যাণে বাসায়,
স্কুলে, অফিসে, শুইতে বসতে সবসময় যে কোন ধরনের বিনোদন ইন্টারনেট ব্যবহার করে পাওয়া
সহজ, তখন কিন্তু বিনোদন পাওয়াটা এত সহজ ছিলনা, সে জন্য মানুষ অল্প বিনোদন এ অনেক
আনন্দ পেতো। কিন্তু এখন বিনোদন মাধ্যমের সহজলভ্যতা এবং বিনোদনের আধিক্য এর কারনে
মানুষ বিনোদন এ সেই অকৃত্তিম ও সামাজিক মজা হারিয়েছে ।ধরুন আমি একটা টেবিলে
ইন্টারনেট লাইন সংযোগ দেওয়া পিসি নিয়ে বসি, আর পাশের টেবিলে টেলিভিশন রেখেছি। এবার
পিসিতে ফেসবুক আর ইউটিউব নিয়ে আছি , আর টেলিভিশনে সনি আট এর ক্রাইম পেট্রোল বা
সিআইডি বা স্পোর্টস চ্যানেল বা ডিসকভারীতে দিয়ে ননস্টপ বিনোদন চলছে । হঠাৎ
বিজ্ঞাপন শুরু হলো তো অন্য চ্যানেল এ দিলাম। এ ভাবে কোন প্রোগাম থেকে পূর্ণ মজা নিতে পারছিনা ।এটা হলো বিনোদন বা সুখ
বেশি করবার সুযোগের বিড়ম্বনা বা কুফল যাই বলুন না কেন। এটাই আমাদের এখনকার অবস্থা
। এখন ঘরে ঘরে গ্রামে বিনোদন মাধ্যম থাকার কারনে একসাথে বসে হইহুল্লোড় করেও
অনুষ্ঠান দেখেনা। মানুষে মানুষে সামাজিকতা কমছে ও দুরত্ব বাড়ছে। শিল্পের যায়গাটা
যান্ত্রিকতা এসে দখল করে নিচ্ছে। আধুনিকতার হাজারটা উপকার ছাপিয়ে এই সমস্যাগুলোও
মানুষের চোখে প্রকট হয়ে দাড়াচ্ছে ।ধরুন মানুষ আগে সিনেমা শুটিং একটা রহস্য মনে
করতো, সব সত্য মনে করতো , এজন্য এগুলোর দর্শক ও ছিল।
(212)
কিন্তু এখন ইন্টারনেট এ ইউটিউব এবং
ফেসবুক এর কল্যাণে দেশ বিদেশের প্রত্যেকদিন আপলোড হওয়া সত্য ভিডিও গুলোর দিকে
ঝুঁকছে। এগুলতে মানুষ ভেরিয়েশন পাচ্ছে। তখন
যেহেতু সকল সিনেমা হলের ও বাংলা
সিনেমার বাজার রমরমা, বাবার পকেট কেটে হোক, বাড়ির ডিম বেচা ধান বেচা টাকা হোক আর
টিফিনের পয়সা বাচিয়ে হোক হলে গিয়ে সুস্থধারার আর সুন্দর কাহিনীর সিনেমা দেখার
অনুভূতিই আলাদা । আর সাথে স্কুলের মাঠ থেকে কেনা নানা রকম গল্পের বই
(ভূত-গোয়েন্দা –রূপকথা) পড়ার মজা তো ছিলোই, আবার গ্রীষ্মে আর শীতে স্কুলের পরীক্ষা
শেষ হওয়া মাত্র বাবা-মার কাছে বায়না ধরে ভাইবোন সহ নানী বাড়ি বেড়াবার মত প্রধানতম এক মহা আনন্দদায়ক সংস্কৃতির কোন বিকল্প ছিলোনা।মনে
হতো যেন সূদীর্ঘকাল কারাবরনের যন্ত্রনা শেষে এক স্বর্গভ্রমনে যাচ্ছি ।এটাও ছিলো
বাচ্চাদের আত্ত্বিক সম্পর্ক গঠনের এক অন্যতম সংস্কৃতি।একটা কবিতার কথা মনে পড়ে
গেলো । নানীবাড়িতে মেজোমামার ঘরের দেয়ালে একটা ক্যালেন্ডারে ওই কবিতাটা শোভা পেতো,
কবিতাটি বিখ্যাত কবি আল মাহমুদের লেখা , ওই কয়েকটা লাইনই গ্রীষ্মের ছুটির গ্রামে
বেড়ানোর মজা বহুগুণে বাড়িয়ে দিতো –
গাঁয়ের শেষে বটের তলে
আমিও ছিলাম ছেলের দলে
উদোম দেহে গাছের ভীড়ে
খেলেছিলাম নদীর তীরে
আজ মনে হয় মনের ছায়া
সেই সুদুরের সজল মায়া
বুকের নিচে রোদন করে
চোখের পাতায় বৃষ্টি ঝরে
(213)
যদিও শহরের স্কুলের ছেলে বলে গ্রামের
ছেলেদের সাথে গ্রাম বাংলার খেলাগুলোতে পেরে উঠতাম না । তবে ভরসা পেতাম আমার সমবয়সী
ছোট মামা সাথে থাকলে । গ্রামের কোন ছেলে বা মেয়েদের তখন আর ভয় পেতামনা । সমানে
খেলা আর গায়ের জোরে পারদর্শী ছিলো আমার ছোট মামাটি । যদিও এখন হ্যাংলা
পাতলা শরীরের শিরোমণি তিনি। অন্যদিকে গ্রামের সমবয়সী শিষ্ট ছেলে মেয়েদের
দেখলে অন্য রকম একটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়ে যেতো । এখন তাদের প্রায় সবাই কর্মক্ষেত্রে
মহা ব্যস্ত, মেয়েরাতো পুরোপুরি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসারী ।এতদিন পর এগুলো মনে হলো
এজন্য যে , সময় যখন অতীত হয়ে যায় তখন মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যায় স্বর্ণালী অতীত।
রেশ থেকে যায় তার শুধু নিজের মাঝে । এ ইতিহাস আর কেউ জানেনা । অধিকাংশ মানুষের
জীবন কাহিনী সাহিত্যিকের লেখা উপন্যাসের
চেয়ে বেশি কিছু, অনেক মানুষের জীবন ও সংগ্রামের কাহিনীতো অষ্কার পাওয়া
চলচ্চিত্রকেও হার মানিয়ে দেয় ।আজ নানী গত হয়েছেন কয়েক বছর, সেই ছোটবেলার খেলা
ধুলার বন্ধু গুলো কর্মজীবন সুত্রে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে । কর্মজীবন আর
সংসারজীবনের ব্যস্ততাতে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনা শৈশবের স্বর্ণালী দিনগুলো ফেলে আসা
গ্রামে । অনেক বছর যাওয়া হয়না । গেলেও কেমন যেন মনে হয় সেই সময়টা হারিয়ে গেছে,
এখনকার গ্রামতো সেই গ্রাম নয়। এ আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত এক গ্রাম । আমাদের হারানো
সেই যায়গাটা দখল করেছে সেই সময়ের নবজাত শিশুরা, আজ তারা বিশ এর যুবক।তাদের থেকে আমাদের বয়স দূরত্ব মাত্র ১০ বছর তাই এতটা দূরত্ব। আসলে
পৃথিবীতে আপনার আমার একটা নির্দিষ্ট কাজ আছে, নিজের একটা সময় আছে । তারপর আর কেউ
আমাদের মনে রাখেনা, সময় তার প্রয়োজন ফুরালে আমাদের ছুড়ে ফেলে । আপনি টিনেজ বা যুবক
বয়সে অনেক আশা দেখছেন, আপনার এখন স্বণালী সময়, আত্বীয় – বন্ধু – বান্ধবী – স্ত্রী
সন্তান পরিবেষ্টিত কত সঙ্গময় জীবন , কত বর্ণালী রঙ্গিলা জীবন। কিন্তু যত বয়স হয়ে
যাবে দেখবেন আপনি কেন জানি একা হতে থাকবেন। অনেকটা (যদি পরিমাপের মেশিন থাকতো তবে
দেখতেন অন্তত ৮৫% ) একা হয়ে যাবার পর দেখবেন
(214)
পৃথিবীটা এ রকম আসা
যাওয়ার খেলা বটে। সমাজ পৃথিবী পরিবার নামক স্টেজটা ঠিক থাকে।পরিবর্তন হই আমরা,
পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে যাওয়া আসার খেলায় প্রক্সি দিই আমরা আমরা একেকজন মানুষ নামক
অভিনেতা ।কোন এক মনিষী কৌতুক করেই হোক আর বাণীতেই হোক বলেছিলেন পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ
আমরা সবাই অভিনেতা ।আর এই আসা যাওয়ার খেলাতেই গৎবাধা অভিনয়ের বাইরে কেউ চায় একটু
অমর হতে । বিভিন্ন ব্যাতিক্রম কর্মের কারণে হয়ে যায় সে অমর , কিন্তু কখনো কি
ভেবেছেন যদি কখনো এই পৃথিবী ধবংশ হয়ে যায়, তখন কি হবে ? আপনার আমার অমরত্ব , শিল্প
সাহিত্য কোন কিছুরই কি দাম থাকবে ? মানব জাতির এত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য শিল্প
সংস্কৃতির কি কোন মূল্য থাকবে ? কখনো কি মনে হয়না যে এই পৃথিবী ধবংশ হয়ে গেলেও
পৃথিবীর মানব জাতির ইতিহাস ও কৃতি যদি এই মহাবিশ্বের আর কেউ জানতে না পারে তাহলে
কতটা আফসোস লাগে ? এটা কি সংরক্ষিত হওয়া উচিত নয় ? আজকে গুগল আর ইউটিউবে যে পরিমাণ
সংরক্ষিত আশ্চর্য্য জ্ঞান ভান্ডার রয়েছে সেগুলো তো বিস্ময়ের এক অষ্টম মহাশ্চার্য
বলাও কম হয়ে যায় ।আপনি যদি ইচ্ছা করেন পৃথিবীর সব মানুষকে আমি দেখবো, তাহলেও সেটা
এই যুগে সম্ভব । যদি বলেন এটা কিভাবে সম্ভব ? আপনিতো ফেসবুক ব্যবহার করেন, তো
পৃথিবীর সব থেকে বড় স্যোশাল মিডিয়া হলো ফেসবুক। ৭৫০ কোটি
মানুষের ভিতর ৩০০ কোটি
মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে।এই তিনশত কোটি মানুষের ছবি দেখতে পারা বা একটা নেটওয়ার্কে থাকাটাও
বিষ্ময়ের ব্যাপার বটে। কি নেই গুগল আর ইউটিউবের এই
জ্ঞানভান্ডারে।সাধারণ জ্ঞান থেকে অসাধারণ জ্ঞান সবই আছে। কিন্তু
এতকিছু মানবজাতির হাতে থাকার পরও আমাদের কাছে কিছুই নেই বলা চলে। আমাদের ব্যাপারটা
হলো সেই টিভিসি টার মত। টেলিভিশনের অ্যাডটাতে দেখাতো স্যার গাড়ি একেবারে নতুন, কোন
ডিস্টার্ব নেই , শুধু মাঝে মাঝে ব্রেক ফেল করে। আমরা অনেক উন্নত হতে পারি, কিন্তু
যখন তখন আমাদের ডাটা সেন্টারগুলো আগ্নেয়গিরির অগ্লুৎপাতে ধবংশ হয়ে গেলে কিছু করার
থাকবেনা,
(215)
যদিও গুগল বা ফেসবুকের রয়েছে মাল্টিপল ডাটা সেন্টার, মানে আপনি গুগল বা ফেসবুকের
আমেরিকান ডাটা সেন্টার ধবংশ করলেই বা বন্যার পানিতে ডুবিয়ে দিলেই গুগল বা ফেসবুক
ধবংশ হবে তা নয়। এটা ধবংশ করতে গেলে এর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সব লোকেশনের ডাটা সেন্টার ধবংশ করতে হবে। একটা বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে সব লোকেশনের গুলো ধবংশ
হওয়া বিচিত্র কিছু নয় এবং তখন এই ধবংশের কারণ শুধু বোমা বা দর্যোগ নয়, সাথে যোগ
হবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গুগলের প্রত্যহ ব্যয়ভার বহনের সুবিশাল খরচের যোগান
বিহীনতা। বলতে পারেন গুগলের যা টাকা জমা আছে তা আগামী ৫০০ বছরেও শেষ হবেনা। কিন্তু
হলে হবে কি, যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধ তো আর শত্রু সৈন্যরা অফিস বা মানুষ চিনে করবেনা
বা মানবজাতির স্বার্থেও যুদ্ধ করবেনা । যুদ্ধ করবে ধবংশের ভুত ঘাড়ে নিয়ে, উন্মক্ত
থাকবে রক্ত আর ধবংশের লীলায়। ফলে যত সুরক্ষা থাকুক না কেন আমাদের সভ্যতার ধবংশ
আমরা ঠেকাতে পারবোনা। আর যদি কিছু কিছু দেশ বা অঞ্চল যুদ্ধের বাইরে থাকে
তবে সেটা ভিন্ন কথা ।সব থেকে বড় কথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর কাছে যে পরিমাণ
পারমানবিক অস্ত্রের মজুদ আছে সে দেশগুলোর নাম ও বললাম না, পারমাণবিক অস্ত্রের
পরিমাণ অজ্ঞাত, সঠিক পরিসংখ্যান তো নেইই, ২৬ শে এপ্রিল ১৯৮৬ তে সাবেক সোভিয়েত
ইউনিয়নে সংঘটিত হওয়া চেরনোবিল দূর্ঘটনাতে (বর্তমানে ইউক্রেনের একটি স্থান)
ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া স্থানটির আশেপাশের ৫০ মাইল অন্তত হাজার বছরেও মানব বসবাসের
উপযোগী হবেনা ।এটা তো গেলো ছোটখাটো ব্যাপার ।মহা বড়
একটা ব্যাপারে আসি। ধরুন আপনি একজন বড় মাপের অতি বিখ্যাত মানুষ। আপনার নাম
সক্রেটিস বা এরিস্টটলের মত উচ্চারিত হবে হাজার হাজার বছর ধরে। এমন অবস্থায় আপনি
নিশ্চিত খবর জানতে পারলেন পৃথিবী ধবংশ হয়ে যাবে , একেবারে নিশ্চিন্হ হয়ে যাবে
মানবজাতি, সাথে সাথে ধবংশ হবে GOOGLE বা ইউটিউব এর মত জায়ান্টরা তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়াবে
পরিণতিতে –
(216)
**** ব্যাপারটা হলো এমন যে পৃথিবী নামক এই গ্রহে যে এক সময় এ রকম মানব সভ্যতা ছিলো
, এটা কেউ কোনদিন জানবেওনা , হয়তো ভবিষ্যতে পৃথিবী যদি আবারও সৃষ্টি হয় আর সেই
পৃথিবীতে মানব থেকে কোন উন্নততর প্রাণী
সৃষ্টি হলে তারাও জানবেনা কোনদিন ব্যাপারটা ।
**** WIKIPEDIA, GOOGLE , YOUTUBE এই
তিনটি হলো মানুষের অতীত এবং বর্তমান এর সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া এক সীমাহীন মহা
জ্ঞানভান্ডার, বিভিন্ন স্থানে বা ব্যক্তিবিশেষের কাছে গোপনে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন যত বিদ্যার বই
লুকিয়ে থাকুক না কেন তা যদি পাওয়া যায় তা হয়তো মানবজাতি কিছু সময় নিলে আয়ত্ব করতে
পারবে। কিন্তু WIKIPEDIA, GOOGLE, YOUTUBE এই তিন জ্ঞান
ভান্ডার কে কখনো আয়ত্ব বা দেখা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয় । কারণ এগুলোতে নিয়মিত নানা
জ্ঞানমূলক নতুন নতুন ইউনিক কন্টেন্ট যোগ হচ্ছে। ফলে এগুলো আয়ত্ব করা আমাদের
সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটাতো গেলো
আমাদের প্রকাশ্য ও উন্মুক্ত ইন্টারনেট জগতের কথা। গত দুই এক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে
আবার ডার্ক বা ডিপ ওয়েবের কথা। যেখানে নাকি
অনেক অদ্ভুত ও অবৈধ কিছু দেখা, পাওয়া, ও কন্ট্যাক্ট এর কথা শোনা যায়। খুব বেশি
কিছু আমি এ ব্যাপারে জানিনা তবে শুনেছি এর ডোমেইন এক্সটেনশন অনিয়ন, ব্রাউজ এর জন্য
টর নামক একটা ব্রাউজার নাকি ব্যবহার করতে
হয়। দেখুন আমি কিন্তু এই বইয়ের লেখাতে অনেকবার বলেছি আমাদের অধরা কিছু না কিছু
থেকে যাবেই, আর সেই অধরা কিছুই পরবর্তীতে অশোকের দি নাইন, এরিয়া-৫১ এ রকম মিথ হয়
যায়। সাইবার জগতে ডার্ক বা ডিপ ওয়েব ও তাই। তো পৃথিবী ও মানবসভ্যতা ধবংশ হলে এই
লিজেন্ডারী বা কিংবদন্তী মানব সভ্যতার কথা কেউ জানবেনা। শুধু সাক্ষী থাকবেন স্রষ্ঠা
আর চির অমর সময়। এই কিভাবে ধবংশ হতে পারে পৃথিবী ও সভ্যতা ? এই অনুচ্ছেদটির লেখা অপ্রাসঙ্গিক ভাবে শৈশবের স্মৃতিকথা থেকে শুরু করলাম কেন জানেন ? এ জন্য যে বা
এটা বোঝানোর জন্য যে, ধরুন আমি একটা বই লিখলাম সে কারনেই জানলেন প্রসঙ্গে|
(217)
আপনাদের মাঝে আমার শৈশব স্মৃতির কিছু
কথা আপনারা জানলেন, সত্য না মিথ্যা সেটা এক মাত্র আমার আপন যারা তারা ছাড়া আপনাদের
বোঝার ক্ষমতা নেই, আবার এমন অনেক কিছু থাকবে যেটা আপনারা তো জানতে পারবেননা কোনদিন,
আমিও জানাবোনা কোনদিন আর আমিও একদিন তা ভুলে যাবো, আবার ধরুন আমার বা যে কোন একজন
মানুষের বর্তমান স্বভাব বা ব্যবহার ধরে আপনি আমাকে বা সেই লোকটি কিভাবে বা
মোট কত বছরের ঘটনাপ্রবাহে সে এই স্বভাবের
মানুষে পরিণত হলো বলা যাবেনা। এখন আমি নিজেকে বা একটা মানব মস্তিষ্ককে ধরলাম একটা
মহাবিশ্ব। এবার ধরুন আমি কিন্তু জন্মতারিখ ৯০ সাল অনুযায়ী এবং ৯৪ বা ৯৫ সাল এ ২০১৬
থেকে ২০১৮ লিখছি সে অনুযায়ী আমি কিন্তু ৯০ থেকে ২০১৮ পর্য্যন্ত আল্লাহর রহমতে আমি
জীবিত, তা না হলে লিখছি কি করে। এখন আপনি একজন চরম যুক্তিবাদী বিজ্ঞানবিশ্বাসী
লোক, আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ১৯৯৮ সালের ২২শে আগষ্ট আমার স্কুলে ক্লাস নিয়েছিলেন
কোন ম্যাডাম, কি খেয়েছিলাম, কোন রঙের জামা পরেছিলাম, বা আদৌ ক্লাস না করে ওইদিন
মামা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম কিনা এটা বলতে না পারার কারনে আপনি ভাবলেন আমি যদি তখন
জন্মাই বা জীবিতই থাকি তাহলে বলতে পারলাম না কেন, বলতে পারাটাই তো স্বাভাবিক কারণ
আমার স্মৃতিশক্তি তো গুগল থেকে কয়েকশো গুণ বেশি, আবার একটা ছেলে এখন সিগারেটখোর
এটা দেখে যদি আপনি বলেন সেই লোকটা নিশ্চত ছাত্রজীবন থেকে লুকিয়ে সিগারেট খেতো,
আচ্ছা ইতিহাসের ভিত্তিতে সম্রাট অশোক কে শেষ জীবনে ভালো দেখে কি বলা যাবে তিনি
একেবারে শৈশব থেকে ও রকম সাধু সন্ত ছিলেন । যদি এগুলো না বলা যায় তাহলে মানুষ বানর
থেকে সৃষ্টি বা দশ লাখ বছরের বিবর্তনে সৃষ্টি অথবা পৃথিবী ৫০০ কোটি বছর সৃষ্টি এটা
অকাট্যসত্য কিভাবে বলা যেতে পারে ? । আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আমি কিন্তু শৈশবের
দিনক্ষন অনেককিছুই বলতে পারবোনা। হয়তো সেটা আমার সঙ্গের লোকের মনে আছে কিন্তু আমার
মনে নেই। বিজ্ঞান বলতেই পারে যুক্তি বা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মেনে নেবার মত
পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান সাপেক্ষে যে মানুষ কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে
(218)
দশ লক্ষ বছর ধরে, পৃথিবী জলন্ত আগুণ
থেকে কত বছরে সৃষ্টি হলো, পৃথিবীর বয়স ৫০০ কোটি বছর কত কি। কিন্তু সেটা সমাজ ও
বিজ্ঞানসাপেক্ষে মেনে নিলেও পরম সত্য বলে ধরে নেওয়া আমার মতে নিরেট বোকামী ছাড়া
কিছুনা, জানি আপনি এটা পড়ে হাসছেন , কিন্তু হাসবার আগে একবার গভীরভাবে ভাবুন
এবং তারপর যতখুশি হাসুন, আপনার হাসবার
অধিকারে বাধা দেবার আমি কে ? আবার ধরুন কিয়ামতের আগে বলা হয় ইয়াজুজ মাজুজ নামক
একটা জাতিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আসলেই কি তারা আসবে ? মুসলিম মাত্রই এটা বিশ্বাস করবো
ইনশাআল্লাহ, যেহেতু ভবিষ্যদ্বাণীর অনেক কিছুই সংঘটিত হয়ে গেছে , আর অনেক কিছুই
হচ্ছে কিন্তু আমাদের মাত্রা বা মানবজ্ঞানের স্বল্পতায় সব কিছু বোঝা সম্ভব হচ্ছেনা
, কিন্তু কারা তারা, কোথায় লুকিয়ে আছে ? স্যাটেলাইট বা গুগল ম্যাপের আওতার বাইরে
তো এখন কিছু নেই, তাহলে তাদের আমরা পাচ্ছিনা কেন ? এ প্রসঙ্গে আরো একটা তর্ক
প্রচলিত আছে, সেটা হলো সিকান্দার জুলকারনাঈন কি সম্রাট মহাবীর আলেকজান্ডার দি
গ্রেট কে বলা হয় ?
আমাদের এই মানব সভ্যতা কিন্তু চরম উৎকর্ষতার
সাথে সাথে আমাদের বোঝা ও সীমাবদ্ধতার আড়ালে ধ্বংশের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমরা আমাদের
বোঝবার ও দেখার সীমাবদ্ধতার কারণে তা বুঝতে পারছিনা। সাময়িক সুযোগ সুবিধা আরাম
আয়েশ এর বিনিময়ে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমরাই ধ্বংস করে চলেছি । আমার মনে হয় এ রকমভাবে
মানবসভ্যতা যতবার উন্নতির চরম উৎকর্ষে পৌছেছে ততবার ধ্বংশ হয়ে গেছে । গোটাকয়েক মানুষ বেঁচে থেকেছে, তারাই
উন্নত সময়ের গল্প বলে গেছে , স্মৃতিচারণ করেছে , মিথ রচনা করে গেছে । এভাবে মানুষ
শূণ্য থেকে ধ্বংশ স্তুপের উপর আবার মানব সভ্যতা ও বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ গড়ে তুলেছে। আবার ধ্বংশ হয়েছে আবার গড়ে তুলেছে
শুরু থেকে। এ জন্য এই ভাঙা গড়ার প্রতি চক্রে মানুষ পূর্বের ইতিহাস লিখেছে অনুন্নত,
কিন্তু কিছু মিথ আর পুরাতন নমুনা আকস্মিক আমাদের ও ব্যাখ্যাবিহীনভাবে মনে করিয়ে
দিয়েছে আমাদের আগে কি কেউ ছিলো ?।
(219)
এটা হলো সাময়িক ধ্বংশ, আর কিয়ামাত বা
মহাপ্রলয় বা মহাধ্বংশ হলে কি হতে পারে ? অনাদি আর অসীমকালের এই মানব ইতিহাসের
ধ্বংশ ঘটবে, আমি আপনি আপনি যা আশা করছি, যা ভাবছি, শত কোটির প্রজেক্ট আর
ইনভেস্টমেন্ট মূহূর্তের ভিতর ধ্বংশ হয়ে যাবে। বিজ্ঞান যতই বলুক পৃথিবী ৫০০ কোটি
বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে আরো ৫০০ কোটি বছর টিকবে এটা হয়তো বিজ্ঞানভিত্তিক হিসাবের
কথা, অপরদিকে যে কোন মূহূর্তে ধ্বংশ হবেনা
এটাও বলা যাবেনা , পৃথিবী সৃষ্টি বা ধ্বংশ হোক তাতে আমার ও কিছু আসে যায়না, ধ্বংশ
হলে তো আমার একার হবেনা, পৃথিবীর সব মানুষের হবে, আমি তো অতি সাধারণ খেটে খাওয়া
একটা মানুষ বা বেশি হলে অতি স্বল্প বেতনে দিনাতিপাত করা একটা মানুষ ।আমার বেতনে
অনেক ধনী লোকের ছেলের চাইনিজে একঘন্টার বিল ও হবেনা এমন আছে । কিন্তু আমার থেকে বড়
বড় ক্ষতি হবে এমন মানুষও অগণিত। অবশ্য লাভ ক্ষতির হিসাবই থাকবেনা মহাপ্রলয়ে আমাদের অঞ্চলে একটা কৌতুক শুনেছিলাম (হোগল-বোগল
ও মিতুল এর কোন অ্যালবাম), বলা হচ্ছে শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করছেন, শোন ফজা,
কাল যে ভূমিকম্প হলো তখন তুই কি করলি । ছাত্র বলছে স্যার আমি তখন দেখলাম সবাই ঘর
থেকে বেরিয়ে দৌড়াচ্ছে, আমি কোন দিকে দৌড়ালাম না, সোজা খাটের নিচে পালালাম। এবার
স্যার বলছেন খাটের নিচে পালালাম, ঘর ঘাড়ের উপর পড়লে বুঝতে, ছাত্রের উত্তর ঘর পড়ে
পড়ুক , ধ্বসে পড়ে পড়ুক, ক্ষতি হয় হোক, আমি তো ভাড়াতে থাকি, ঘর ভাঙলে বাড়িওয়ালার ভাঙবে”।
কৌতুকটা এই জন্য বললাম যে বাড়িওয়ালার ঘর
ভাঙলে আমার মত ভাড়াটিয়ার কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আমি বা আমার পরিবার নামক
মানুষগুলো বা তাদের জীবন নামক উপন্যাসের পাতা অটোমেটিক্যালি ক্লোজ হয়ে যাবে সেই
হারানোর আক্ষেপটা যে যাবেনা। পৃথিবী বা প্রকৃতির ধ্বংশ না হয় হলো কিন্তু এই বিশাল
মহাবিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর
এই মূল্যহীন পৃথিবী ছিলো, তাতে ছিলো ছবির মত স্বগীয় প্রকৃতির প্রাকৃতিক
দৃশ্য, ছিলো সুন্দর সুন্দর সৃষ্টি, কত রঙের প্রাণী, কত সুদর্শন পুরুষ, অপ্সরীসম
নারী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি
(220)
নজরুল, শরৎচন্দ্র, সত্যজিৎ, সক্রেটিস, প্লেটো,
মানব সৃষ্ট অসংখ্যা সুরেলা গান, কুমার শানুর গান, সুরস্রষ্ঠা তানসেন, বিটোভন,
লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, শেক্সপিয়ার, এডগার এলান পো, জ্যাক লন্ডন, রোম্যান্টিক আর
হিট সিনেমা ও জুটি, প্রকৃতির নাম না জানা
অসংখ্যা শক্তিকে যুগের পর যুগ ধরে চেষ্টা করে মানবের জন্য ধরে নেওয়ার মাধ্যমে করা
বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার সবই মূহুর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাবে । কত কষ্ট
করে , কত দিনের পর দিন রাতের পর রাত জেগে,
কত সাধনা করে , কত সুখ পরিত্যাগ করে কীর্তিমানেরা সুর,সংগীত, সাহিত্য আর
সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলেছেন এর মূল্য বা মর্ম কখনো ধ্বংশলীলা বা মহাপ্রলয় বুঝবেনা,
সময় হলে সে সবকিছু ধ্বংশ করে দেবে । কোনদিন কেউ বা মহাবিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের কেউ
সুন্দর পৃথিবী আর এই সুন্দর পৃথিবীর এত সৌন্দর্য্য, মানুষ নামক জীব ও তার জ্ঞান
বিজ্ঞানের ইতিহাস মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাবে, কোন গ্রহবাসী বা মানবজাতি ধ্বংশের
পর ভবিষ্যতে সৃষ্ট কোন বুদ্ধিমান সৃষ্টি
বা জাতিও জানতে পারবেনা, সাক্ষী থাকবে শুধু বোবা মহাকাল। দুঃখ বা আফসোস শুধু এটাই
থাকবে যে, হিসাবের ও অতীতকাল থেকে পৃথিবীতে তিলে তিলে গড়া কৃতিমানদের কৃতিত্ব
ধুলিসাৎ হয়ে যাবে , মহাকালে বিলীন হয়ে যাবে, ধ্বংশের পর যদি কেউ এই কৃতিমানদের
কৃতিত্ব, মানবজতির ঘরবাড়ি, গঠনশৈলী, এগুলো জানবার কেউ না থাকে তবে মন উদাস হয়ে
যাবার কথা। শুধু পৃথিবী ধ্বংশ হলে হয়তো তবুও ভবিষ্যতে মানুষ অন্য গ্রহে বসতি করে
মানবজাতির এই রূপকথা টিকিয়ে রাখবে , কিন্তু মহাপ্রলয়ে ধ্বংশ হবে পুরো মহাবিশ্ব ও
বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড । তখন কে বলবে একদিন এ রকম সুসজ্জিত প্রকৃতি, ঘর বাড়ি মানুষ ও
তাদের বিজ্ঞান আবিষ্কার কর্ম ও জীবনগাথা ছিলো
? এ গুলো নিয়ে গর্ব , কদর বা স্মৃতিচারণের কেউ থাকবেনা, না জানি পৃথিবী
কতবার এরকম ধবংশ হয়েছে, যুগে যুগে কতবার তার এ রকম মূল্যবান সন্তানদের লালন করেছে,
কতবার এ রকম উন্নত সৃষ্টি সভ্যতা আর জ্ঞান উৎকর্ষতা হয়েছে কে বলতে পারে ? স্রষ্ঠাকে টানছিনা , কারণ তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি
আলিমুল গায়েব|
(221)
এই সৃষ্টিজগতের সবকিছুই ওনার কাছে
মুল্যহীন, হও বলামাত্রই সবকিছু যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ওনার হুকুমে হযরত ঈসরাফিল
ফেরেশতার সিংগার ফুঁকে সব ধ্বংশ হয়ে যাবে, কিন্তু বলছি এখানে শুধু আমাদের মানুষদের
অনুভূতির কথা। বয়স একদিন চলে যায়, যুবক বুড়ো হয়, মরেও যায়, পৃথিবীতে আসার আগে যেমন
আপনি বা আমি মিস্টার অমুক সাহেব নামে কেউ ছিলামনা তেমনি মরার পরে অমুক সাহেব নামে
কেউ ছিল তার অস্তিত্বও থাকবেনা। মানে সৃষ্টির আগে অস্তিত্ব বা আকারবিহীন যেমন এক “কিছু নেই” ছিলাম মরার পরে তেমন মরার পরে
অস্তিত্ব ও আকারবিহীন এক “কিছু নেই”
হয়ে যাবো। তবে কর্মগুণ আর মানুষটির ছবি থাকলে কেউ কেউ হয়তো স্মরণ করে ।কৃতিত্বের
বা রেকর্ড গড়ার কাজ করার পর যদি সেটা করা
বা সম্মান করার মত লোক না থাকে, কৃতিত্ব আর বীরত্ব যদি দেখা বা কদর করার মত লোক না থাকে তবে সেই
অব্যক্ত দুঃখটা প্রকাশের ভাষা থাকেনা । ১৯৭৭ সালে ভয়েজার-১ ও পরবর্তীতে ১৯৮১ তে
ভয়েজার-২ নামক দুটি স্বচালিত মহাকাশযান ছেড়ে দেওয়া হয়, উদ্দেশ্য ছিলো পৃথিবীর
বাইরের মহাবিশ্বের খবর জানা, মহাবিশ্বের ও আমাদের সৌরজগতের, এতদিন এরা আমাদের হাই
রেজুলেশনের সব ছবি পাঠিয়েছে ।আর দু এক বছর হয়তো ছবি পাঠাতে আর তথ্য পাঠাতে পারে,
২০২০ থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ এর জ্বালানী সব শেষ হয়ে যাবে , তারপর আর কোন খোজ পাবোনা
এর, কিন্তু অসীম মহাকাশের পানে অনন্ত ছুটে চলবে , ধ্বংস হবার সম্ভাবনা নেই এর, এটা
এখন আমাদের সৌরজগৎ পার হয়ে ওর্ট ক্লাউড নামক এক মেঘের রাজ্য পার হচ্ছে, এই মেঘের
রাজ্য পার হতে লাগবে ৩০০০০ বছর, আমাদের কাছের সোলার সিস্টেম প্রক্সিমা সেন্টরাই এ
পৌছাতে লাগবে ৭৪৪০০ বছর, যদিও ৮০০ কেজি ওজনের ভয়েজার প্রতি ঘণ্টাতে ৬২১৪০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার গতিতে
যাচ্ছে তারপর ও এতদিন লাগবে, আর মহাবিশ্বের তো কোন শেষ নেই, আর ভয়ঙ্কর কথা হল
মহাবিশ্ব আয়তনে দিন দিন বাড়ছে, ৩০০০০ বছর বা ৭৪৪০০ বছর কি আমরা মানব জাতি বা
পৃথিবী থাকবে, থাকবেনা বোধ হয়|
(222)
সে কথা ভেবেই বিজ্ঞানীরা এতে পৃথিবীর
প্রকৃতির ১১৬ টি ছবি, বাচ্চা একটি মেয়ের কণ্ঠে hello from the
children of earth নামক স্বাগত বানী , বাংলায় নমস্কার
বিশ্বের শান্তি হোক, বাচ্চার কান্না, আরবী বাংলা ইংরেজী হিন্দী সহ ৫৫ টি ভাষাতে
স্বাগত বানী, মোজার্টের সুর, আজারবাইজান এর ব্যাগিপাইপ , ভারতের সুরশ্রীর গান,
উইলি জনসনের ডার্ক ওয়াজ দ্যা ব্লাইন্ড , পেরুর ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান , বুলগেরিয়ার
ইজিয়েন জে ডেলিওর মত মন বিরহী করা বিরহের সুর সহ পৃথিবী সম্বন্ধে জানার হাইড্রোজেন
প্যাটার্ন আকা গোল্ডেন সিডি যেটা মানুষের মত কোন সম বা অতি বুদ্ধিমত্তার কারো হাতে
পড়ে তবে তারা বুঝতে পারবে বেশ ভালোভাবেই যে আমরা ছিলাম ।
ভয়েজারে পাঠানো সেই গোল্ডেন ডিস্ক , যদি কখনো আমাদের ভিনগ্রহী কোন পূর্বপুরুষ
অথবা আমাদের মত কোন বুদ্ধিমান এলিয়েনের হাতে পড়ে তবে তারা আমাদের সম্বন্ধে ধারনা
পাবে ।
তবে এই সিডিতে
আমাদের অর্জনের বা কীর্তিমানদের কীর্তির বিন্দু মাত্র কিছুই
(223)
বোঝানো সম্ভব নয়
, এটা অতি সামান্য , এতে পৃথিবীর সেরা সুরেলা গান গুলো ও নেই । তবে পৃথিবীবাসী ও তার প্রিয় পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে
গেলে এমন কি কোন গ্রহ বা জাতি থাকবে যারা একদিন পৃথিবীবাসীদের নিয়ে তাদের জাতির
কাছে বা অনুজ বা উত্তরসূরীদের কাছে কি গল্প করবে , পৃথিবীবাসীর অমূল্য অর্জন আর কর্ম মূল্যায়ন করবে ? কেউ কি থাকবে এই অসীম
ব্রক্ষ্মান্ডে , আমরা যে ছিলাম এই পৃথিবীর সন্তান হয়ে , কেউ কি জানবে , কেউ কি আছো , ???????
ব্ল্যাক ম্যাজিক - গুপ্ত বিদ্যা
কালো জাদু না বিজ্ঞান !
১) চোর ধরার চাউল পড়া - আচ্ছা আমরা অনেক সময় শুনে থাকি অমুক কে তাবিজ করা হয়েছে, অমুককে বান মারা
হয়েছে। এগুলো বেশী শোনা যেতো আগের যুগের গ্রাম প্রধান জীবনে ।এগুলো ছিল অনেকটা আগের
যুগে সাধারন একটা ঘটনা । কেউ হয়তো চুরি করলো, চলো অমুক ফকিরের কাছে, তিনি তদবির
দিতে পারবেন বা পড়া চাউল দিতে পারবেন যা দিয়ে চোর ধরা সম্ভব হবে । আমি নিজের এই
কয়েক বছর আগে এরকম একটা চুরির ঘটনাতে একটি সরকারী অফিসে এরকম একটা ঘটনার অভিজ্ঞতা
পাই । কথা হল সেই অফিস এ তখন সিসি ক্যামেরার প্রচলন আসেনি।খুব কম অফিস এ সিসি
ক্যামেরা দেখা যেতো । তো ঘটনা হল অফিস থেকে একজন এম এল এস এস এর সাইকেল চুরি হয়ে গেলো ।সাইকেল হারানো এম এল এস
এস এর অভিযোগ আরেকজন এম এল এস এস এর দিকে। তখন পাঁচ সাতজন সন্দেহভাজন কে ডেকে নিয়ে
চাল পড়া এনে খাওয়ানো হল। বলা হয়েছিলো এই চাল পড়া খাওয়ানো হলে যদি এর ভিতর কেও চোর
থাকে তবে সে চাল গিলতে পারবেনা বা গলাতে বেঁধে যাবে, আর যে চুরি করেনি তার খেতে
অসুবিধা হবেনা। তো দেখা গেলো সবাই বেশ একটা গম্ভীর আর নিঝুম ভাব নিয়ে চাল খেলো। তবে কারো গলাতে বাধলোনা। একজনের
অবশ্য কিছুটা মুখটা নার্ভাস দেখাচ্ছিল ।তারপর যথারীতি চাল খাওয়ানো হল । অ্যাট
লাস্ট কারো কোন সমস্যা হলনা বটে, তবে আমি কিছুটা মুল দোষীর আভাষ
(224)
পেলাম। তার মুখটা বেশ মলিন এবং অস্বস্তির
আভাসযুক্ত দেখাচ্ছিল, কিন্তু তার গলাতে সহ কারো গলাতে যেহেতু মন্ত্রপুত পড়া চাল
আটকে যায়নি তো সেখানে চোর থাকা সত্ত্বেও কেউই চোর সাব্যস্ত হলনা।তো এখানে মুল
রহস্যটা কি জানেন এই মন্ত্র পড়া চাউল দিয়ে বাস্তবিক কেউ চোর হিসেবে ধরা পড়ুক আর না
পড়ুক, এই চাউল পড়া দিয়ে চোর ধরবার ভিতর একটা ব্যাপক মাইন্ড গেম রয়েছে।গেম টা হল এই
যে মুলত যে কোন অপরাধের বিষয়ে যে মুলত অপরাধী হয়ে থাকে স্বাভাবিকত সে তদন্ত বা
প্রশ্নের সম্মুখীন হলেই একটা ভীত, নার্ভাস ভাব, ঘেমে ওঠা, গলা শুকানো ভাব এসে যায়
, কালে ভদ্রে ঠাকুর ঘরে কেরে আমি কলা খাইনির মতো ঘটনা ঘটে। এই গলা শুকানো ভাবটা
ব্যবহার করেই এই চাল পড়া দিয়ে চোর ধরা হয়। ধরুন যে চোর সে চাল পড়া খেতে ভয় পাবে।
এই ভয় পাবার কারন হল সে এর আগে শুনেছে নির্ঘাত তারই গলায় বেঁধে যায় চাল শুধুমাত্র
যে চুরি করেছে। অতএব সেই চোর বেটা ভাববে যে আমি তো চুরি করেছি, আমি ধরা পড়বো , এতে
তার শরীরের আভ্যন্তরীণ হরমোনের পরিবর্তন হয়। মুখ গহ্বর ভেজা রাখতে সাহায্য করে যে
স্যালিভারি গ্ল্যান্ড থেকে ক্ষরিত স্যালাইভা সেটার ক্ষরণ উত্তেজনা এবং ভয়ে কমে আসে।
ফলে গলা শুকিয়ে যায়, আর চাউল হল একটা কঠিন খাদ্য, শুকনা চাউল স্বাভাবিক কারনেই
চিবাতে এবং গিলতে গেলে গালে পর্যাপ্ত লালার দরকার আছে । ঠিক এই কারনেই চোরের গলাতে
চাউল বিধে যায়, ভয়ে মুখ, গলা শুকিয়ে যায় , স্যালাইভার অভাবে । এখন আমরা যারা এটা
জানবোনা তারা এটাকে যাদু বলে জানবো । আর যদি যাদু বলি তবে এর ভিতর এই যে অজানা যে
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা দিলাম সেটা না জানাটাই হল যাদু ।
২) গাছের ডাল ভাঙ্গা – এক কথিত ভুত তাড়ানো ফকির এর কাছে শুনেছিলাম কারো ঘাড়ে জ্বীন বা ভুত লাগলে তিনি ছাড়িয়ে দেন ।তার কথা হলো ভুত
বা জ্বীন যে চলে গেছে তা কি করে বুঝবো, তিনি বললেন গাছের ভুত বা জ্বীন চলে যাবার সময়
কোন এক গাছের ডাল ভেঙে রেখে যাবে বাড়ির আশেপাশের কোন গাছের । এটা হয় কি না সামনে প্রমান দেখিনি, কিন্তু আমি পরপর আমার বাসার পাশের দুটো গাছের
ডাল ভেঙ্গে আমার বাসার পাশে পড়তে দেখেছি ।একটা গাছের আম
গাছের ডাল অবশ্য বেশ পুরনো, গাছ মরে গেছে, সে জন্য ভেঙ্গে পড়তে পারে ।
(225)
আর একটা ডাল ভেঙ্গে পরল একটা মেহগণি গাছের, এই
ডালটা ভেঙ্গে পড়ার কোন
যুক্তি পেলামনা
,আপনারা জানেন মেহগণি গাছের অনেক উচুতেও ডাল থাকে, তো সে ডালটাতে ভারি কিছু তো উঠে
বসা সম্ভব নয়। এটা ভেঙ্গে পরলো কেন।না কোন বানর ,না কোন হনুমান কিছুই তো বসেনি।তারপরেও হয়ত বিনা কারনে এমনিতেই ওরকম
কাচা ডাল ভেঙ্গে পড়াটা অদ্ভুত লাগে। আমি এখন এই
যুক্তিতে ভাবি হয়তো আমার বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে কেউ কালোজাদু অভ্যাস বা
প্রয়োগ করছিল।কারো ঘাড়ে লাগা জ্বীন ভুত তাড়াচ্ছিল কেউ। চরম হাসি লাগার
একটা গল্প বললাম না । এটা স্বাভাবিক প্রকৃতির নিয়ম বা গাছের ডাল
ভাঙ্গা হিসেবে নিন। অন্য কিছু নয় ।
৩)চোর ধরার বদনা ঘোরান -- আমার নানা বাড়ির গ্রামে (পুখুরিয়া -বাঘারপাড়া, যশোর) একজন বেশ শতবর্ষী মানুষ
ছিলেন।ওনার আসল নামটা ধরে কাউকে ডাকতে শুনিনি।সবাই ওনাকে ওনার
ছেলের নাম ধরে অমুকের আব্বা বলে ডাকতো ।তিনি খুব ইবাদাত ধর্ম কর্মে ব্যাস্ত
মানুষ ছিলেন। সারাদিন ঘরের ভিতর থেকে বের হতেননা । সব সময় জায়নামাযে তসবিহ নিয়ে বসে থাকতেন ।তো একদিন গ্রামের
আমাদের এক পরিচিত নানার ওয়াক ম্যান চুরি হলো ওয়াক ম্যান হলো আগের যুগের ক্যাসেট এর
ছোট সংস্করণ।ওটা পকেটে রেখে নেওয়া যেতো ।তো হলো কি এখন সেই ওয়াকম্যান চোর কে ধরতে হবেই। সেই নানা গেল ওয়াকম্যান চোর ধরতে, কোথায় যেতে হবে, গেল সেই বয়স্ক মানুষটির
কাছে, উনি চোর ধরতেন এক বিশেষ কায়দাতে,
বদনা ঘুরিয়ে ওনার কাছে একেবারে ছোট হাতের পাতার সাইজ এর একটা বদনা ছিল।এই বদনাটা তে মন্ত্র পরে তিনি ফু দিতেন আর চারদিকে থাকতো সন্দেহমুলক চোরদের
নাম কাগজে লেখা । যে চোর তার নাম লেখা কাগজের দিকে বদনার নল ঘুরিয়ে গিয়ে স্থির হয়ে যেত । অনেক টা কম্পাসের মত ।তো সেই নানা ০৫ টা সন্দেহভাজন নাম লিখে ওনার
কাছে দিল ।উনি ঘরের ভিতর দরজা বন্ধ করে বদনা ঘোরালেন। একটু পর বেরিয়ে
এসে দেখালেন বদনা কারো নাম নির্দেশ করছেনা ,দুটো নামের মাঝে নল স্থির হয়ে আছে।তার মানে এই ০৫ জনের ভিতর কেউ চোর নয় । সে দিন তিনি
বদনা ঘুরিয়ে এসে বললেন যে কয়টা নাম দিয়েছিস তারা কেও চোর নয় ।
(226)
চোর এই নামের
বাইরের কেউ। বলা উচিত চোরের নাম আমরা কয়েকজন জানতাম । কিন্তু ওই চোর সেদিন বদনা ঘুরানোতে ধরা পড়েনি, বদনা ঘোরান টা সঠিক বলে মেনে নিতে
হবে ।কারন তিনি তো ঠিক বলেছিলেন, কারন যে চোর, ওই নানার ওয়কম্যানটা জানালা দিয়ে হাত
গলিয়ে যে নিয়ে যাচ্ছিল আর তখন আমরা কয়েকজন
বাচ্চা পোলাপান আসছিলাম ঘরের পিছনের মুসুরি ক্ষেত দিয়ে। কিন্তু শত্রুতা হবে ওনাদের
ভিতর বলে নাম বলিনি সেই নানাকে, সামান্য ৫০০ টাকার একটা ওয়াকম্যান চুরি করার কারনে
কারো ভিতর শত্রুতা হোক এমন কথা বলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় । এখন আপনারা বলুন যে তিনি কি করে বুঝলেন
যে ওই ০৫ জনের ভিতর কেউ চোর নেই । ব্যাপারটা রহস্য ।এরকম রহস্যময় অনেক কিছু ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা
আসেনা ।
৪) কালী সাধনা = গ্রাম বাংলাতে আর একটা যাদুর সাধনার গল্প
কথা আপনারা শুনে থাকবেন যে একটা মরা লাশ নিয়ে কালি সাধনার কথা । ব্যাপারটা হলো এমন
যে কেউ একজন একটা কুমারী মেয়ের লাশ কবর থেকে
উঠিয়ে নিয়ে শ্মশ্মানে যেত আর সেখানে গিয়ে লাশটা রেখে কিসব মন্ত্র পরতোআর
মন্ত্র পড়তে পড়তে মেয়েটার উপর শয়তান ভর করত, ফলে সে চোখ খুলে তাকিয়ে থাকতো, তখন ছোলা
বা বুট ভাজা বা মিষ্টি তার দিকে ছুড়ে মারা লাগতো । আর ওই মন্ত্র হাজারবার পড়তে হবে
ভোরের আলো ফোটবার আগে বা আযান পড়ে যাবার আগে ।তখন সেই লোক
মন্ত্র পড়তো ওই লাশের সামনে দাড়িয়ে বা বসে, খাবার যদি
পর্যাপ্ত না নিয়ে যায় আর মন্ত্র
পরা একবারের জন্য ভুল হয়ে যায় তবে তো তাকে ওই লাশের হাতে মরতে হবে, আর ওই লাশ ওই
জীবিত হয়ে মানব সমাজে পৌছে গিয়ে মানুষের ক্ষতি করবে ,অপদেবতা হয়ে যাবে সে, এ জন্য
নাকি পর্যাপ্ত ছোলা বুট আর মিষ্ট দ্রব্য নিতে হবে।আর এটা সফলভাবে কাজটা যদি সেরে আসতে
পারে তবে সে বেশ কিছু অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হবে, খুবই কুসঙস্কার আর আজগুবি
ব্যাপার, এটা হয় নাকি, গ্রাম বাংলার প্রাচীন মিথ এ প্রচলিত গল্পটা ।
৫) কালি সাধনে আয়ু ধরে রাখা -- একবার একটা
গল্প শুনেছিলাম যে আমাদের ওই গ্রামের পাশের গ্রামে একজন লোক ছিল নামটা বলা
মানহানির ব্যাপার তাই বললাম না। তিনি মারা গেলেন একদিন,জীবিত অবস্থাতে তিনি
নানারকম তুকতাক,
(227)
ঝাড় ফুক, বশীকরন,
বাণ করে বেরাতেন । তো একদিন তিনি মারা গেলেন, সবাই বলতো তিনি
নানা রকম শিরকি কুফরি করতেন, একটা জিনিস লক্ষনীয় ছিল যে ওনার গলার কণ্ঠ এর যায়গা
দপদপ করছিল, সবাই আশ্চর্য হচ্ছিল,কম বেশি কানাঘুসা চলছিল, লাশ দাফন করতে পারছিলোনা।এমন
সময় তার ই এক শিষ্য টাইপ এর লোক এসে বলল আপনারা যদি কিছু মনে না করেন একটা কালো
রঙের পাঠা যোগাড় করেন, কারন গলা কাপছে এরকম একটা মানুষ তো আর দাফন করা যায়না । তখন কি একটা জিনিস মনে মনে পরে তিনি ছাগলের কানে ফু দিলেন, ছাগল একেবারে
ভয়ানক চেচিয়ে দৌড় দিল যে ছাগলের গায়ে কেউ ধারাল ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে বা ছাগল কে
বাঘে দাবড়াচ্ছে এমন দৌড় দিল পাঠাটি । আওয়াজটাতে উপস্থিত লোকেরা সামান্য ভয়ও অনুভব করলো ।
৬) বিড়ালের হাড় সাধনা - আর একটা মন্ত্র সাধনার কথা শোনা যায় যে আমরা
বিভিন্ন যাদুকরের হাতে বিড়ালের হাড় দেখি, সেই হাড়টা নাকি মন্ত্র সাধনার মাদ্ধ্যমে
বিশেষ কায়দাতে সাধনা করে প্রাপ্ত, সাধনাটা হলো এমন যে কোন এক অমাবস্যার শনি বা
মঙ্গলবার রাতে একবারে কালো একটা বেড়াল এক বাড়িতে মারতে হবে ।বিড়ালের গায়ে
একটি লোম সাদা হলে হবেনা। এবার বিড়ালটিকে চার রাস্তার মাঝখানে পুতে রেখে
আসতে হবে । জনকোলাহলের চৌরাস্তাতে পুতে আসতে গেলে আপনি আটকে
হবেন পুলিশের হাতে ।তো গ্রামের মাঠের ভিতর অনেক সময় এরকম চার রাস্তা
থাকে ,সেখানে ধরুন সেই লোকটি পুতলো, এবার আবার এক অমাবস্যার শনি বা মঙ্গলবারে রাত
একটার পর সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে লোকচক্ষু এড়িয়ে সেই বিড়াল মাটির নিচ থেকে উঠিয়ে একটা
স্রোতস্বিনী নদীর পাড়ে যেতে হবে, এ সময় অনেক কিছু শুনবেন, কেউ আপনার পরিচিত জনের
গলাতে ডাকবে ,কিন্তু পিছনে ফিরবেন না খবরদার,পিছনে ফিরলে মরবেন, সামনে দেখবেন
গলাকাটা ঘোড়া বা মানুষ দাড়িয়ে আছে।ভয় পাবেননা,
ছুতে যাবেন না, সোজা হেটে চলে যান, কিছু বলবেননা, এবার নদীতে সেই মরা বিড়ালটার
পিছনের দুই পা ধরে নাড়াতে থাকুন নদীর জলে
বিড়ালের মাংশ ধুয়ে হাড় বেরিয়ে পড়বে, তারপর ইচ্ছামত পছন্দের হাড়টি রেখে দিন এবং
আবার পিছনে না তাকিয়ে চলে আসুন। এবার এই যাদুর হাড় দিয়ে
অনেক অসাদ্ধ্য সাধন করেন নাকি তথাকথিত ফকিররা।
(228)
৭) তাবিজ এ বশীকরন - তাবিজ এর দ্বারা কারো ক্ষতি বা বশীকরন এর কথা
আগে আমরা শুনতে পেতাম, আজগুবি বলে উড়িয়ে দিতো । বিজ্ঞান ও এগুলো
ভুয়া বলে দিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু এখন যে টিভিতে বিভিন্ন বাবারা বিজ্ঞাপন
দিয়ে নানা সমস্যার সমাধান করছে, তারপর ভারতীয় টিভিতে দেখানো ধনলক্ষী যন্ত্র ৩৬০০/=
টাকা দিয়ে মানুষ ক্রয় করছে সেটার কি বলবেন।এরা তো প্রচুর
কাস্টমার পাচ্ছে তা না হলে এই যুগে টিকে থাকতো কেমন করে এই সব, আবার বিভিন্ন
তাবিজের বিভিন্ন নিয়ম আছে, নানা উপকরন দরকার হয়, কোনটা মানুশের বলিশের নিচে রাখতে
হয়, কোনটা বাড়িতে পুতে দিতে হয় ,কোনটা আবার মানুষের
বাড়ির চুলাতে পুতে দিতে হয়, চুলাতে পুতলে এমন হয় যখন চুলা জ্বলে তখন তার সারা দেহে
জ্বালাপোড়া ভাব হবে, আবার ক্ষুরচালক দিলে নাকি নির্দিষ্ট চোরের মাথাতে চুল কেটে
ন্যাড়া বা টাক হয়ে যাবে, সর্ষে বান মারলে নাকি পেটের নাড়ি গলে যাবে।আপনি কি তাবিজ এর নকশা দেখেছেন, ওতে কাদের নাম থাকে, কিসের সাংকেতিক চিহ্ন
থাকে জানেন?, কয়েকটা তাবিজের ছবি আপনাদের কাছে দিচ্ছি, দেখুন একটা গল্প শুনেছিলাম
আর একটা রাজমোহিনী তাবিজের নকশা দেখেছিলাম ,সেটা গ্রামের মাঠের ভিতর বড় একটা গাছে
ঝুলছিল । সুতা দিয়ে এটা বেধে রেখেছিল কেউ ,সেটা বেধে রাখার কারন হলো ওই তাবিজ যখন
বাতাসে উড়বে তখন নাকি আকাঙ্খিত মেয়েটির মন ছেলেটির দিকে আকৃষ্ট হবে বিলিভ ইট ,.হ্যাভ
ইউ এ লাভার গার্ল ? !! আর শত্রু ধংশের জন্য একটা টোটকার কথা বলতো যে একটা
নির্দিষ্ট মন্ত্র কাগজে বা নির্দিষ্ট একটা ফুলের উপর লিখে পুরাতন কবরে পুতে দিলে
সেই শত্রু দ্রুত ধংশ হয়ে যায়। এরকম অনেক কিছ শুনেছি
, কিন্তু এগুলো সত্য বা বিশ্বাস করবার দরকার নেই এবং ভাবুন রুপকথার গল্প পড়ে বা
প্রেমের উপন্যাস পরে যেমন মজা পান, সিনেমা সত্যি না জেনেও যেমন দেখে মজা পান, ঠিক
তেমন আমার লেখা গুলো ও সেই ভাবেই পড়ুন সত্যি বা মিথ্যা হতেই পারে। ধর্ম-অধর্ম কোন
যুক্তিতে না গিয়ে শুধু বিনোদনের জন্য পড়ুন, কারণ গল্পগুলো আমার বিভিন্ন যায়গাতে
শোনা এবং সে অনুযায়ী লিখেছি। তাই মিথ্যা ও যদি হয় আপনাদের জন্য বিনোদনের অভাব
হবেনা ।আর তাবিজ এর সাংকেতিক লেখাগুলো কোন টেলিপ্যাথিক(টেলিপ্যাথি হলো কল্পনা বা মনের
শক্তি দিয়ে কোন
(229)
মানুষের সামনে
না গিয়েও তাদের মনকে তাদের থেকে অনেক দুরে থেকে প্রভাবিত করার বিজ্ঞান, এই বিদ্যার
সর্বশেষ পর্যায়ে নাকি মানুষ আরেকজনের মনে নিজের ইচ্ছামাফিক কাজ ঢুকিয়ে দিতে পারে) অজানা
কোন বিজ্ঞানের কাজ না তো এই তাবিজের নকশা ? কয়েকটা ছবি দিলাম, এই লেখাগুলো কোন
শক্তির প্যাটার্ণ না তো ?।যেটা মুর্খ ফকিররা না বুঝেই করেন? কারা এই
অদ্ভুত নকশা গুলো তৈরি করেছে , কি অর্থ লুকিয়ে
আছে অদ্ভুত এসব নকশাতে। আচ্ছা পবিত্র কোরাআন তো অসীম জ্ঞানের ভান্ডার ।কিন্তু আপনি আমি নামাজের সময় কি পড়ছি বা অর্থ করে পড়লেও তো বুঝতে পারিনা
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে কি লেখা আছে ?কোন আয়াত এর অর্থ কিসের ইঙ্গিত বহন করছে ?কোরআনের
আয়াতের বাংলা অর্থ বুঝলেও কি আয়াতের আসল মর্মার্থ বা বিজ্ঞানমূলক অর্থ খুজে কি বের
করা সম্ভব আমাদের পক্ষে বা আমাদের স্বল্পজ্ঞানে
?আয়াতের অর্থের ব্যাপারটা আসলে ধাঁধাঁর মত । কোরআনে আমরা নামাজ রোজা এবং সুন্নাত
পালনের বাইরে অন্য কোন কিছু না পেলেও বড়
বড় স্কলার রা বলেন কোরআন থেকে অনেক জ্ঞান বা থিম আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা গুরুত্ত্বপুর্ণ
আবিষ্কার করে ফেলেছেন । কিন্তু আপনি আমি কোরানের হাফিয বা মুসলমান হয়েও
তা ধরতে পারিনি, মুসলিম বাদে অন্যান্য জাতির জ্ঞানীরা পেরেছে, মুসলমান হয়ে এটা আমাদের
আফসোসের কারন হওয়া উচিত ।রেইকি কি জানেন ? এটা হলো এমন বিজ্ঞান যেটা নিয়ে সেই রেইকিস্ট একটা লোকের গায়ে
স্পর্ষ করে অনেকটা সুস্থ করতে পারেন মানুষ কে। আকুপাংচার হলো প্রাচীন এমন এক
চিকিৎসা পদ্ধতি যা মানুষ কে তার শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্ট এ গিয়ে চাপ দিয়ে মানুষের
সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াই, নানাবিধ শারিরীক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়,এক সময় নব
আবিস্কৃত বিজ্ঞানের কল্যানে এগুলো ও হারাতে বসেছিল, ০২ হাজার বছরের ও বেশি পুরাতন
এসব বিজ্ঞান আবার আসছে কিছুটা হলেও। এগুলো অপ্রচলিত হয়ে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছে।
চোখের সাধনা দিয়ে মানুষ কে অবশ করে আপনার দিকে নিয়ে আসাটা হলো হিপ্নোটিজম বা
মেসমারিজম বা সম্মোহন, এই সম্মোহনের কিছু অংশ বা নমুনা পুরুষ বা নারী মাত্র একজন
আরেকজনের চোখে তাকিয়ে পান মাত্র, এটা
সামান্য উদাহরন মাত্র, প্রতারক আর টাউটরা আরো বড় বড় সম্মোহক, তা না হলে আপনি
জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে লাখ লাখ টাকা বা স্বর্নের গয়না স্বামী
বিদেশ থাকাতে
(230)
পরিবার, সন্তান
ও স্বামীর কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে ২০ লাখ টাকা প্রতারক অথবা জ্বীনের বাদশার হাতে তুলে দেন কিভাবে ?। হোক সেটা নারীর দোষ বা গুন বা পরিস্থিতিতির শিকার , কিন্তু এটা কি সম্মোহন এর
ভালো উদাহরণ নয় ? ।
০৪) বাটি চালান – বাটি চালান হলো প্রাচীন আমল ধরে চলে
আসা এক টোটকা ও এর মাদ্ধ্যমে গ্রামে এমন কিছু করা হয় বা চোর ধরা হয় যে আপনার
গয়নাগাটি হারিয়েছে সেটা ধরবার জন্য আপনি বাটি চালক ফকির কে ডাকবেন, বাটি চালক ফকির
নির্দিষ্ট রাশির লোক ছাড়া হতে পারেনা ।একমাত্র তুলা রাশির চালক করতে পারবেন এই বাটি চালানের কাজ।তুলা রাশি না হলে হবেনা, ইঁদুরের গর্তের তোলা মাটি আর কি কি জিনিশ যোগাড় করে
মন্ত্র পড়ে তুলা রাশির ফকির বা লোক ওই বাটি ধরলে বাটি টি তাকে চুরি যাওয়া জিনিস
যেখানে লুকানো আছে বা যেখানে চোর আছে সেখানে চলে যাবে শর্ত হলো বাটিচালক ফকির বাটিতা
কখনো ছাড়বেননা,এই অবস্থাতেই সেখানে তাকে নিয়ে যাবে।আসলে বাটি দৌড়াই নিজ থেকে নাকি ফকির অভিনয় করে কে জানে ?
০৫) কারো উপর জ্বীন ভর করে কথা বলে তা যদি দেখে
থাকেন তবে জানবেন তিনি এক উচ্চস্তরের ভোকাল সাধক। কারন তিনি মুখে কথা না বলে গলা দিয়ে কথা বলা রপ্ত করেছেন। আপনিও আজ একটু
চেষ্টা করে দেখুন না দেখুন কিছুটা হবে । তাই আবার বলি
যাদু বলে কিছু এখন যদি কেঊ বলে সত্যি না হতে পারে, তবে সেটা যে হারানো বিজ্ঞান এটা
অনায়াশে বলা যায় । একেবারে কিছু না থাকলে কিছু প্রমান পেতেননা। কিছু
কিছু লোকের কাজ হতোনা এই সব এর মাধ্যমে। হয়তো ব্যাপারটা পুরোটাই বিশ্বাসের
ব্যাপার, একটা কথা আছেনা বিশ্বাস এ মিলাই বস্তু ।
আবার বলছি তাবিজ আপনার উন্নতি করতে পারবেনা,সমস্যা সমাধান বা সচ্ছলতা
দিতে পারবেনা যদি আপনার উন্নতি হয় তবে এটা হবে আপনার পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম
বলে, তাবিজ নিলে পড়িলে পাশ না পড়িলে ফেল গল্পের মত হতে পারে ।আবার তাবিজ ভূমিকম্প হলে এবং যে বাড়িতে কেউ মারা গেছে সেই মৃত মানুষকে শেষ
দেখা দেখতে গেলে নাকি এর কার্যকারিতা হারায় ।অদ্ভুত !!!
০৬) খুর ওয়ালা বা ছাগল পা খরগোশ – ছোটবেলা থেকে একটা ব্যাপার আমার কাছে রহস্য হয়ে আছে, রহস্যটার বিষয়টা অত বড়
কিছু নয়। বিষয়টার সুত্রপাত
(231)
একটা ছোট গল্পের শুরু থেকে, মাধ্যমিক এ পড়ার
সময়ে সম্ভবত ক্লাস নাইন এ পড়ি ,আমি তখন একদিন
বাবার কাছে বার্ষিক পরীক্ষার সময়ে বায়না ধরলাম বাবার কাছে আমাকে একটা খরগোশ কিনে
দিতে হবে বাবা।খরগোশ আর টিয়াপাখি এই দুটো প্রাণী আমার কাছে অসম্ভব প্রিয় ।মাঝে
মাঝে ভাবি টিয়াপাখিটা রেখে দোয়েল কে কেন জ্ঞানী গুণীরা বাংলাদেশের জাতীয় পাখি
বানালেন ! ।টিয়াপাখিই জাতীয় পাখি হবার উপযুক্ত ক্যান্ডিডেট।কারন তার গায়ে সবুজ আর
ঠোটের লাল মিলে যায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে । হা!হা!হা!, না পাঠক জাতীয় পাখি
বা ফল জাতীয় কিছু হতে গেলেই তার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আছে , সেটা আলোচনা করতে গেলে
মুল আলোচনা থেকে সরে যেতে হতে পারে।আর টিয়াপাখি নিয়ে একটা ট্র্যাজিক গল্প আছে
আমাদের কয়েক ভাইবোনের জীবনে। ১৯৯৮ এর
বিধ্বংসী বন্যাতে যখন সারা বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা বন্যার করাল গ্রাস এ আক্রান্ত
তখনো আমাদের যশোর জেলাতে কোথাও আল্লাহর ইচ্ছাতে বন্যার আক্রমন হয়নি, এমনিতেই যদিও
যশোর এ কোন তেমন প্রমত্তা নদী নেই , দূর অতীতের প্রমত্তা ভৈরব মৃতপ্রায়।তো এই ১৯৯৮
এর বন্যার সময় একদিন বিকালে একটা টিয়াপাখি এসে উঠানে পড়ল । হই হই করে আমরা
ভাইবোনেরা বাবাকে ফার্মেসী থেকে ডেকে আনলাম।যথারীতি বাবা মা সামান্য প্রাথমিক
চিকিৎসা দিতে টিয়াটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো।একটা খাঁচা এনে টিয়াটা কে আমাদের ভাইবোনদের
হাতে ছেড়ে দিলেন। খাঁচাতে ভরে আমরা টিয়াটাকে আদর যত্ন করে ছোলা , কাচাঝাল এসব খেতে
দিতাম । তো ২০০০ সালের বন্যাতে যশোর জেলার সদর বাদ দিলে প্রায় সব উপজেলা প্লাবিত
হয়। শার্সা, ঝিকরগাছা, মণিরামপুর থেকে দলে দলে লোক এসে যশোর সদর এ এসে আশ্রয়ের
জন্য উপস্থিত হল। যশোর জিলা স্কুলের ছাত্র তখন আমি, আমাদের স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র
হিসেবে ব্যাবহারের জন্য স্কুল প্রায় এক মাসের মত বন্ধ হয়ে গেল। মানুষের দুর্দশা
চোখে না দেখলে আন্দাজ করা যায়না । আবার প্রত্যেকটি স্কুল কলেজের মতো আমাদের বাড়ির
পাশের বিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হল।আমার বাবাকেও
মাঝে মাঝে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্য্য সহায়তার জন্য যেতে হত।
(232)
তো এরকম সময়ের দুমাস আগে থেকেই আমরা
টিয়াটা ছেড়ে দিয়ে পোষা শুরু করেছিলাম।এ ঘর ও ঘর হেটে বেড়াতো, কিন্তু একদিন দেখি
উড়ে গাছের ডালে চলে গেল, আর ফেরাতে পারলাম না। কয়েকদিন এলাকাতে যাদের বাড়ি টিয়া
আছে তাদের ওখানে খোঁজখবর নিলাম, কিন্তু কোথাও আমাদের টিয়া পেলাম না। এক বন্যাতে
যেমন এসেছিল তেমন আরেক বন্যাতে চলে গেল। এরকম বন্যার সময় টিয়া পাওয়াটা তখন
স্বাভাবিক ছিল, কারন তখন মিনা কার্টুন এর মিঠু নামক টিয়া দেখে শখের বশে মানুষ টিয়া
পুষত। আর বন্যার সময় ছেড়ে দিত এজন্য যে নিজেদের যেখানে থাকবার যায়গায় নেই, সেখানে অবলা
প্রানিটিকে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত হত মানুষ । টিয়াটার কথা চিরকাল মনে থাকবে, কারন
টিয়াটা একটা কথা বলতে পারত, বলতো “মিঠু
আমি টিয়াপাখি”। অনেকে এগুলো অনেকে বানান গল্প মনে করতে পারেন,
কিন্তু ভাই জানেন তো প্রত্যেক মানুষের জীবন একেক্তা রহস্য , একেকটা উপন্যাস এর থেকে
বেশি কিছু, স্রষ্ঠার অস্তিত্ব, জীবনের সৌন্দর্য, ভুত প্রেত, স্বর্গ-নরক সবই
মানুষের মাঝে খুজে পাবেন, ভয়াবহ কর্মব্যাস্ততার কারণে আপনি নিজের পিছনের জীবনে বা
নিজের ভিতর কখনো ডুব দেবার সুযোগই পাননা ,সুযোগ পেলে দেখবেন কত গল্পের নায়ক আপনি
নিজে। সিনেমা নাটক তো মানুষের জীবন থেকে নেওয়া। তবে প্রত্যেকটি মানুষের জীবন
কাহিনি নামক উপন্যাস এত ব্যাপক ও সীমাহীন যে সিনেমা বা নাটকে বা উপন্যাসে মানুষের
জীবনকে চিত্রায়িত করা সম্ভব নয়। হয়ত কিছুটা কল্পনা আর ছোট একটা কাহিনী নিয়ে দর্শক কে সিনেমা
হল বা টেলিভিশন এর রুপালী পর্দায় সাময়িক আটকে রাখা যায় মাত্র। যাক এসব, তো সাদা
রঙের খরগোশও আমার অসম্ভব প্রিয় একটি প্রাণী।সাদার সাথে ঝিক করে জ্বলা লাল কমলা
রঙের কি সুন্দর চোখ ।কোলে নিয়ে পুষতেও ভাল লাগে, ব্যাপক পোষও মেনে যায়। তো কিনে
দেবার কথা বলতে বাবা প্রথমে কিনে দিতে চাইলেননা, যেহেতু শহরের বাসা গুলোতে কিছু
পোষা পরিস্কার পরিচ্ছনতার ক্ষেত্রে অন্তরায় আর ঝামেলা।গ্রামের মত শহরের বাসাগুলোতে
তেমন একটা খোলামেলা যায়গা নেই বললেই চলে।
(233)
তো পরে জোরাজুরিতে বাবা কিনে দিলেন।বেশ
ছোট খরগোশের বাচ্চা, একেবারে তুলতুলে, দিব্যি আমাদের ঘরের খাটের উপর উঠে আসতো,
মাঝে মাঝে মানুষের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকতো, তো একদিন বিড়ালের আক্রমণে মারা গেছিলো
বাচ্চা খরগোশটি মাস দেড়েকের মাথায়।একদিন এবার শখ হলো খরগোশের মাংস খাবো । তো
বাবাকে এবং মাকে বলতেই বললেন বাজারে পাওয়া যায় যে খরগোশ সেই খরগোশ খাওয়া যায়না, কারন
এই খরগোশ হল বিড়াল এর মত পা, আর একটা খরগোশ আছে কুকুর পা মানে বিড়াল পা খরগোশ এর
পা খাটো যেটা আমরা বাজারের দোকান গুলোতে দেখি, এর পায়ে নখ থাকে বলে এটা হারাম
খাওয়া যাবেনা, আর কুকুর পা মানে ওটা বসলে কুকুরের মত দেখা যায়, পা টা বিড়াল পা
খরগোশের থেকে দিগুন লম্বা, এটার ও পায়ে নখ আছে এটাও হারাম, একটা খরগোশ খাওয়া যাবে
সেটা যদি কখনো পাওয়া যায় তবে তোকে খরগোশের মাংশ খাওয়াবো। এবার আমি জিজ্ঞাসা করলাম
বাবাকে, তাহলে সেটা কোন খরগোশ, এবার বাবা বললেন লাফা(কোন অঞ্চলে লাফারু নামে
পরিচিত) নামে এক রকম খরগোশ বাবাদের ছোটকালে গ্রামের মাঠে মাঠে চরে বেড়াতো। খুব
ছুটতে পারতো, স্বাভাবিক ভাবে দাবড়ে বা কুকুর দিয়েও ধরা সম্ভব ছিলনা, শুধু যেখানে
দেখা যেত সেই যায়গার চারপাশ জাল দিয়ে ঘিরে ধরা যেতো। একেকটা তথাকথিত ছাগল পা খরগোশ এ
১০ কেজির মত মাংশ পাওয়া যেতো। তো আমি তখন থেকে বিগত ১৪ বছরের মত সময় হয়ে
গেল ছাগল পা খরগোশ খুজছি। কিন্তু খরগোশের
বড় বড় দোকান এবং প্রত্যন্ত গ্রামীণ সমাজের বাগদী সম্প্রদায়ের লোকের কাছেও ০৪ হাজার
টাকা আগাম দিয়েও এই খরগোশ পাইনি, যদিও তারা সমস্ত বিরল জিনিস যেমন কচ্ছপ, কুইচা,
মাছ,শামুক, ঝিনুক এসব যোগাড়ে সিদ্ধহস্ত । আমি যতই আগের মানুষের কাছে শুনেছি এই খরগোশের
ব্যাপারে সবাই কিন্তু অকাট্য ভাবে স্বীকার করেছে এই খরগোশ মানে ছাগলের মত খুর পা
খরগোশ আছে। কিন্তু আসলেই কি আছে, এ পর্যন্ত বিজ্ঞান ছাগলের মত পায়ের খরগোশ পায়নি,
যদিও জনশ্রুতি এই খরগোশের পক্ষে। আসুন এই মিথের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান কি
বলেছে দেখি –
(234)
আসলে যেটা আমরা বাজার
থেকে কিনি সেটা হল RABBIT খরগোশ, এটা বেশি হলে দেখা
যায় ০২ কেজি হতে পারে, আর যেটা আমরা বনে জঙ্গলে দেখি সেটা হল
HARE, এটাকে আমরা লাফা, খয়রা বা খুর বা ছাগল পা খরগোশ বলি,
কিন্তু এটার পায়ে খুর নয়, আছে নখ। তাহলে কি ছাগল পা খরগোশ কি মিথ এর প্রাণী ?
প্রথমটা হলো HARE আর দ্বিতীয়টা হলো RABBIT, তবে দুটোই খরগোশ,
আর দুইটারই পায়ে নখ আছে ।
(235)
পুডু হরিণ
বিজ্ঞানীরা বলেন PUDU
নামে একপ্রকার ক্ষুদ্রতম হরিন যেটার মুল উৎপত্তি আন্দিজ পর্বতমালা অঞ্চল এবং আর্জেন্টিনা
তো এই PUDU যদি কখনো বাংলাদেশে থেকেও থাকে, যদিও আজ পর্যন্ত
বাংলার ইতিহাসে এরকম কোন প্রাণীর উল্লেখ নেই, তারপরেও যদিও থেকে থাকে তো এই প্রাণী
বা এই প্রাণীর সাথে বন্য পরিবেশে খরগোশের
সাথে PUDU এর সংকরায়ন হয় তবে এরকম খুর ওয়ালা খরগোশ পাওয়া
যেতে পারে । হয়তো আমাদের পূর্বসূরিদের আমলে এগুলো থাকতে পারে। আমাদের কাছে প্রমান
নেই এজন্য হতে পারে যে, আমাদের বিশ্বকবির ভাষাতে বলতে হয় দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু, দেখা হয়নাই দু চোখ মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি
ঘাসের উপর একটি শিশির বিন্দু।এই পৃথিবীর বাইরের রহস্য ভেদের জন্য আমরা বিলিয়ন
বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি ,
(236)
কিন্তু আমাদের পৃথিবীর ভিতরের অনেক
রহস্য আমাদের কাছে অজানা ও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে, ধরুন আমাদের ইসলাম ধর্মে উল্লেখিত
কিয়ামতের আলামত ইয়াজুজ মাযুজ নামক মানব জাতি পৃথিবীতেই আছে কিন্তু তারা কারা আমরা
জানতে পারছিনা বা পারিনি আজও, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, ফ্লাইং সসার এগুলো নিয়ে এখন
সামান্য ধারণা দিতে গেলে বই এর কলেবর আরো ৫০ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি পাবে । এ জন্য এ
আলোচনাতে যাবোনা। তবে ইউএফও বা UNIDENTIFIED FLYING OBJECT ফ্লাইং সসার নিয়ে আমার কিছু ভাবনা
আছে, ব্যাপারটা হলো এটা শুধু আমেরিকা ও তার আশেপাশের দেশ গুলোতে দেখা যায় কেন ?
এরকম আকাশ যানের কথা প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতাতেও উল্লেখ আছে, তাহলে এই প্রাচীন গুপ্তবিদ্যার কোন সুত্র ব্যবহার করে কোন মানব
বা মানবগোষ্ঠী এই প্রাচীন যান নিয়ে কোন পরীক্ষা বা গবেষণা পরিচালনা করেছিলনাতো ?
সত্তর থেকে নব্বই এর দশকে এগুলো বেশি দেখা গিয়েছে। এগুলো বিগত বিশ বছর তেমন দেখা যায়নি। তবে কয়েকবার
দেখবার কথা অফিসিয়ালি কয়েকটি দেশ বিগত বিশ বছর স্বীকার করেছে।১৯৭৬ এ ইরানের
রাজধানী তেহরান এ এরকম একটা ইউএফও দেখা গিয়েছিল। এর পরও বেশ কবার দেখা গেছে,
ভারতের ছত্রিশগড়ের চারামা, কানকের এ
প্রাগৈতিহাসিক পাথরচিত্রেও (যেটা ১০ হাজার বছরের পুরাতন) এরকম যানের অদ্ভুত চিত্র
অংকিত আছে। কয়েকবার ভারতের মানুষ ইউএফও স্বচক্ষে দেখার বিষয়টা দাবি করেছে। কিন্তু
ইউএফও অমিমাংসীত রহস্য আর মিথ হিসেবে
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই রহস্য হয়ে আছে ।
০৭)নাগমনি ও ইচ্ছাধারী নাগ – সিরিয়াল বা সিনেমাতে আমরা নাগমনি বা ইচ্ছাধারি নাগ দেখে অভ্যস্ত।কিন্তু
বাস্তবে কি সেটা সম্ভব ? বিজ্ঞান কিন্তু এটা একেবারে গাজাখুরি বলে উড়িয়ে দিয়েছে
।কারন এটি সরীসৃপ জাতের বিষধর প্রাণী ছাড়া আর কিছু নয় , কিছুদিন আগে ভারতের
বিখ্যাত মহিলা প্রযোজক ও পরিচালক একতা কাপুর এর নির্মিত সিরিয়াল নাগিন এ মৌনী রায়
কে নাগমনি পাহারা দিতে দেখে এবং যখন তখন মানুষ থেকে সাপে রুপান্তরিত হতে দেখে মনে
হল ব্যাপারটা নিয়ে লিখবো।
(237)
আগেই বলেছি বিজ্ঞান সরাসরি এরকম নাগমনি
বা ইচ্ছাধারি নাগের ব্যাপারটা নাকচ করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মেও কিন্তু
বলা হয়েছে একপ্রকার জীন কিন্তু সাপের রুপ ধারন করে বসবাস করে।আর কুকুর, উট, গাধা
এরা কিন্তু জীনদের তাদের নিজস্ব আকারে দেখেতে পারে । যেটা আমরা মানুষেরা পারিনা ।আবার
সাপ জিনিসটা কিন্তু রহস্যময় চলাফেরার অধিকারীও। যে কেউ এটাকে হঠাৎ দেখলে অবশ বা
বাকরুদ্ধ হয়ে যেতে পারেন ।আবার হিন্দুধর্মে দেবী মা মনসার পুজাতো আছেই , সুতরাং
ধর্মীয় দিক থেকে দেখলেও সাপের একটা রহস্যময়তা আছে । সাধারনত সাপের বিষ তাদের
মাথাতে মানে তাদের লালাক্ষরণ কারি গ্রন্থি বা বিষ থলিতে থাকে । এই বিষ থলি যখন
বয়সের ভারে শুকিয়ে যায়, তখন এটা শক্ত হয়ে চকচকে কাল পাথরের রুপ ধারন করে, তখন
এটাকে ভণ্ড লোকেরা বা সাপুড়েরা সাপের মনি বলে চালিয়ে দেয় ।ভারতীয় পৌরাণিক
কাহিনী বা মিথলজি অনুযায়ী শ্রী কৃষ্ণের এরকম মনিধারি নাগের সম্মুখিন হতে হয়েছিল,
বৃহৎ সংহিতা (বরাহমিহির)নামে একটি গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে ।এই গ্রন্থ অনুযায়ী এই
মনি যদি কোন রাজার কাছে থাকে তবে তার রাজ্যে সময়মত বৃষ্টি হবে, প্রজারা সুখে থাকবে
এবং মণি ধারী কে পৃথিবীর কোন রোগই স্পর্শ করতে পারবেনা ।বরাহমিহির(৫০৫-৫৮৭)ছিলেনপ্রাচীন
গুপ্তসাম্রাজ্যের রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও জ্যোতিষী ।পশ্চিমা
কয়েকজন গবেষক এর মতে ক্লোরফেন নামক এক প্রকার পদার্থের কারনে সাপের মণি তৈরি হতে
পারে, তবে সেটা কালো,তবে বরাহমিহির এর মতে এক ধরণের কালি নাগ সাপ আছে, ভারতের নাগাল্যান্ডে
পাওয়া বিরল প্রজাতি, বর্তমানে বিলুপ্ত বলা যেতে পারে, যেটা ১০০ বছর আয়ু পেতে পারে,
যদিও সাধারণত কোন সাপ ৩০ বছরের ঊর্ধে আয়ু পাওয়ার কথা নয়, তবে সেই এই কালিনাগ সাপ
যদি ১০০ বছর আয়ু পায় তবে এর মাথার মণি কালো থেকে রংধনু আকারে দ্যুতি ছড়াবে, আর এই
সাপটিও হয়ে উঠবে ইচ্ছাধারী, তখন সে মানুষসহ যে কোন প্রাণীর রুপ ধারণ করতে পারবে।
এটাও একটা প্রাচীন গল্প , ইতিহাস আর বর্তমান সিনেমা সিরিয়ালে প্রচলিত ভয়ানক
অমিমাংসীত মিথ কথাটা গুরুত্বহীন নাও ভাবা যেতে পারে|
(238)
কারণ এই মিথ সম্বন্ধে আভাস কিন্তু
বরাহমিহির এর মত প্রাচীন জ্যোতির্বিদই দিয়েছেন। যিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মঙ্গলে
পানি আছে আর গ্রহ নক্ষত্রের আধুনিক যুগের হিসেবে সে যুগে যন্ত্রবাদেই ৮৯% নিখুত
তথ্য দিয়েছিলেন । আরো একপ্রকার প্রাচীন নারীদের কথা শোনা যায় , ভারত সহ বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে। যারা নাকি বিষাক্ত বিষ শরীরে বহন করে চলতেন। তাদের সংস্পর্শে কেউ
এলে মারা যেতো।এই নাগকন্যা হতে গেলে প্রথম শর্ত হিসেবে তাকে সুন্দরী হতে হতো,
তারপর তাকে অল্প অল্প মাত্রাতে সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করিয়ে আস্তে আস্তে বিষ
সহ্যক্ষম হিসেবে তৈরি করা হতো। এবার এই নাগকন্যাদের নাকি বিভিন্ন রাজা বাদশার
সেবাদাসী করে পাঠাতো তাদের শত্রুরা । এই ঘটনার ঐতিহাসিক তেমন কোন প্রমান পাওয়া
যায়না। তবে প্রাচীন জনশ্রুতি ও মিথই এর একমাত্র শ্রুতির যায়গা ।
০৮) ত্রাটক বা থার্ড আই রেডিয়েশন –আগের যুগে মুনি ঋষিরা ধ্যানের মাধ্যমে অলৌকিক শক্তির অধিকারী
হতেন।বনে জঙ্গলে নির্জনে বছরের পর বছর ধ্যান সাধনা করে শক্তির সন্ধান পেতেন।ধ্যান
মানে কি , ধ্যান বলতে আমরা বুঝি চোখ বন্ধ করে একাগ্র চিত্তে ধৈর্য্যের সাথে সাধনা
।অনেকে বলেন এই ধ্যান শুধু মানসিক প্রশান্তি দেয় , মনকে স্থির করে , কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতা দেয় ত্রাটক বলে। ত্রাটক সাধনার
মাধ্যমে আপনি আপনার মনের চোখ বা তৃতীয় চোখকে জাগিয়ে তুলতে পারবেন। তখনঈ আপনি একটা
মানুষকে দেখে বা আপনার সামনে কোন মানুষ কে দেখলে তাকে বা তার মনের খবর বুঝতে
পারবেন। অনেক অনেক দূর দেশ থেকে মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সেখানে উপস্থিত
না থেকেও। একে বলে থার্ড আই রেডিয়েশন। এটি এখনো শতাব্দীর সেরা মিথ হয়ে আছে ।কারন
যে পরিমান ধ্যানের প্রতিষ্ঠান আছে তাতে এরকম সাধক তো প্রচুর দেখবার কথা। কিন্তু
সেরকম কিছু তো দেখা যায়না। দুটো কারনে হতে পারে ।যদি এরকম কিছু থেকেও থাকে তবে
হয়তো দেখা গেলো থার্ড আই ওপেন হবার পর আপনার কাছে পৃথিবীর কোন কিছুর প্রতি তেমন
আকর্ষণ থাকলোনা|
(239)
আপনার
কাছে পৃথিবীর সমস্ত ব্যাপারগুলো অর্থহীন মনে হলো, আর নয়তো ক্ষমতাটা খুব বেশি
পাওয়ারফুল কিছুনা যেটা বর্তমানের প্রযুক্তির মারণাস্ত্রের সাথে যুদ্ধ করতে পারে ।
০৯) দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে মৃত্যু হয় – দুধ ও
আনারস খেলে কি মৃত্যূ হতে পারে । একেবারে ছোটবেলা থেকে বাড়ির মুরব্বীরা কিন্তু
আমাদেরকে দুধ খেলে আনারস খেতে দেননি, আর আনারস খেলে দুধ খেতে দেননি । কিন্তু কেন ?
কারণটা হল দুধ আর আনারস খেলে মারা যেতে হবে নাকি। বিজ্ঞানীদের মতে এটা হল ফুড
ট্যাবু বা খাদ্যের কুসংস্কার। বিজ্ঞানীদের মতে এটা খেলে বেশি হলে আপনার পেটে বদহজম
হতে পারে, দুধ ফেটিয়ে যেতে পারে । হজম ক্ষমতা দুর্বল হলে ভয়াবহ বদ হজমের শিকার হতে
পারেন বা গ্যাস ফর্ম করতে পারেন । উন্নত দেশের রেস্টুরেন্ট গুলোতে হরহামেশা পাইনঅ্যাপল
ও দুধ মিশিয়ে জুস তৈরি হয়। সাধারণত মানুষের হজমের যে সমস্যা হয় তা দুধের ক্যাসিন
প্রোটিন ও আনারসে উপস্থিত বিভিন্ন এসিডের(এসকরবিক, ম্যালিক,বি মিথাইল পোপাইনিক
এসিড) কারণে । সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ—আমি যেটা বলছি আনারস এবং
দুধের ব্যাপারে সেটা হলো বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে পাওয়া রেফারেন্স আর মতামতের
ভিত্তিতে, আপনারা কৌতুহলী হলে নিজ দায়িত্বে খাবেন আশেপাশে ডাক্তার ও বন্ধুদের সাথে
রেখে যাতে আপনার বড় ক্ষতি হবার আগেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারেন, আপনার অসুস্থতা,
কোন প্রকার ক্ষতি বা মৃত্যূর জন্য আমি দায়ী নই)। কিন্তু জানেন কি এত অভয়বাণী থাকা
সত্ত্বেও আমি আজ পর্যন্ত দুধ এবং আনারস একসাথে খাবার সাহস পাইনি ।আপনাদের আবারও
নিষেধ করছি দুধ আনারস একসঙ্গে খেতে ।
১০) যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় তবে কি হতে
পারে ? – ১ম বিশ্বযুদ্ধ
এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ দুটোই হয়ে গেছে পৃথিবীতে ।
(240)
১ম বিশ্বযুদ্ধ(২৮ জুলাই ১৯১৪-১১ নভেম্বর
১৯১৮ ইং) তে পৃথিবীতে ৯০ লক্ষ যোদ্ধা এবং ৫০ লক্ষ সাধারন মানুষ নিহত হয় এবং যুদ্ধ
পরবর্তী নানা রোগে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা তে ০৫ কোটি সাধারন মানুষের মৃত্যু হয়|এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ (০১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ - ০২
সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ ইং) তে ০৮ কোটি মানুষ প্রান হারায় আর যুদ্ধ পরবর্তী হিসাব তো বাদই
দিলাম ।এগুলো তো মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান আর নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা এবং স্থাপনার
ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপার তো বেহিসাবী ।তো পৃথিবীতে বেশ কবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা
বেজে উঠতে গেছে ।এর পিছনে ছিল বেশ কিছু সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আধিপত্য বিস্তারের
আকাঙ্ক্ষা ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরব ইসরায়েল যুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়ন এর ভাঙ্গন,
ভিয়েতনাম যুদ্ধ, পৃথিবীতে অনেক দেশের স্বাধীনতা লাভ, গণহত্যা, জাতিগত বিরোধ, চীন
,কোরিয়া , কিউবার মত মার্কিন বিরোধী শক্তির উথান অনেক কিছু হয়ে গেছে ।এর যে কোন
একটিই হতে পারতো ৩য় বিশ্বযুদ্ধের কারন, কিন্তু রহস্যজনক ভাবে এই মহাযুদ্ধ আর হয়নি।
আচ্ছা যদি হয় কখনো তবে কি হতে পারে ? আসুন একটা কল্পিত চিত্র কল্পনা করে নিই ।তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে এবার তার পরিনতি হবে ভয়াবহ ।কারন পরাশক্তি গুলোর কাছে যে
পরিমান পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে তা পৃথিবীকে প্রাণী বেচে থাকার মত অক্সিজেন
শূন্য করে দিতে যথেষ্ট।আর সাধারন সামরিক শক্তিধারী দেশগুলোর কাছেও যে পরিমাণ
বিভিন্ন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফায়ারিং অস্ত্র , রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্র মজুদ আছে
সেটা পৃথিবীকে বিরানভূমি বানিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমন হবে যুদ্ধে জয়ী হয়ে মজা নেবার
কেউ থাকবেনা। পক্ষ এবং বিপক্ষ দুজনই ধ্বংস হয়ে যাবে । যদি যুদ্ধে জয়ী হয়ে পৃথিবীর
নিয়ন্ত্রক হবার ইচ্ছা কারো থাকে তবে অবশ্যই অস্ত্রের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে যুদ্ধ
শুরু করতে হবে, এমন অস্ত্র ব্যবহার করা যাবেনা যা শত্রু আর মিত্রের পার্থক্য
বোঝেনা ।আগের যুদ্ধাস্ত্রের কাছে সাধারন মানুষ তো পালিয়ে বাচতে পারতো, কিন্তু
এখনকার যুদ্ধাস্ত্র গণহত্যাতে ব্যবহার করলে কারো পালানর সুযোগ নেই। আর যদি খেয়াল
খুশি মত অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধ শুরু হয় তবে হয় পুরো মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে
আর না হয় |
(241)
যদি কিছু মানুষ বেঁচে থাকেও তবে
মানুষদের আবার প্রাচীন আমল থেকে সব কিছু শুরু করে আবার ০২ হাজার বছর চেষ্টা করে
বর্তমান অবস্থাতে ফিরে আসতে হবে ।আবার গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান ভাণ্ডার আর ডাটা সেন্টার
গুলো যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখতে হবে ।কারন যুদ্ধে হয়তো পক্ষ বিপক্ষ আছে কিন্তু
পৃথিবীর লাইব্রেরী গুলোতে সংরক্ষিত বই আর জ্ঞান এবং এবং গুগল , ইউটিউব ফেসবুক বা
সোশ্যাল মিডিয়া গুলো দেশ, জাতি, ধর্ম – বর্ণ
নির্বিশেষে মানবজাতির সম্পদ । যুদ্ধ শেষে
যদি এগুলো টিকে থাকে তবে মানব জাতি আবার দ্রুত দাড়াতে পারবে ।এখনকার যুদ্ধাস্ত্রের
কাছে এরকম আসা করাটা বোকামি, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানে ধরে নিতে হবে মানব জাতির শেষ
পরিনতি এক মহাধংশ, ৭০০ কোটির ৫০ কোটি মানুষ বেঁচে থাকবে কিনা সেটাই বলা যাবেনা ।এই
হল সংক্ষেপে আমার দেওয়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিনতি সম্বন্ধে বর্ণনা ।জটিল সব
তথ্যাদি ও পরিসংখ্যান দিয়ে লেখা বড় করতে পারতাম , কিন্তু সেসবে আর গেলাম না সাধারন
ভাষাতে আর অতি সাধারনভাবে আপনাদের বোঝালাম তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি কল্পিত ভয়াবহতা
আর পরিনতি ।
১১) চোরাচালানে
কিছু মিথ -
বজ্রপাতে মারা
যাওয়া মানুষের কংকালে কি ম্যাগনেট বা চুম্বক ক্ষমতা থাকে –
সত্যজিৎ রায় এর ফেলুদা সিরিজের রয়েল বেঙ্গল রহস্যের কথা মনে আছে ? এতে তড়িৎ নামে
একজন চরিত্র থাকে , যিনি হাতে তরবারি থাকার কারনে বৃষ্টির ভিতর জঙ্গলে গুপ্তধনের
সন্ধানে বের হলে বজ্রপাতে মারা যান । সাধারনত বজ্রপাতে যারা মারা যান তাদের
মৃত্যুর জন্য কিছু অসচেতনতা যদিও দায়ী , কিন্তু তা বলে তাদের অতটা দায়ী করা যায়না।
কিন্তু একতা মিথ আছে যে যদি কোন মানুষ বজ্রপাতে মারা যায় তার শরীরের হাড় নাকি চুম্বক
হয়ে যায়। আর এই মিথ এর কারনে বজ্রপাতে নিহত মানুষের কঙ্কাল বা মৃতদেহ চুরির ঘটনার
অভাব নেই, এখনো এমন হয় যে রাত জেগে বজ্রপাতে নিহত বাক্তির কবর পাহারা দিতে হয় যদি লাশ
চুরি হয়ে যায় এই ভয়ে।
(242)
আরো একটা বিশ্বাস আছে একশ্রেণীর লোকের
ভিতর, যারা কালজাদু সাধনা করেন তাদের ভিতর, যে বজ্রপাতে নিহত মানুষের কংকাল তাদের
ঝাড়ফুঁকের কাজে ভাল কাজ দেয় । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা একটা মিথ, বিজ্ঞানীদের মতে
সাধারন মৃত মানুষের হাড়ের সাথে এর বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই, ম্যাগনেট বা অলৌকিক
শক্তি থাকাটা তো পুরাই বোগাস একটা কথা ।এই বজ্রপাতের সাথে সম্পর্কিত আরও একটি
জিনিস আছে সেটি হল ব্রিটিশ সীমানা পিলার ।ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ শাসকেরা লোহা ,তামা
, পিতল , চুম্বক এবং টাইটেনিয়াম ধাতুর সহযোগে তৈরি একজাতীয় পিলার মাটিতে পুতেছিল
উপজেলা এবং মৌজার সীমানা নির্ধারণের জন্য ।এটা বজ্রপাত শোষণ করতেও সহায়তা করতো ,
মানে আকাশ থেকে পতিত বজ্র বা বিদ্যুৎ কে শোষণের ক্ষেত্রে আরথিং বা আর্থ ইন এর কাজ করতো , কিন্তু ব্রিটিশ শাসন শেষে এটা
টাকার লোভে মাটির নিচ থেকে তুলে বিক্রি করে দেবার কারনে নাকি বজ্রপাতে মৃত্যুর হার
বেড়ে গেছে । ২০১৭ সালের একটা আন্তর্জাতিক হিসাব মতে সারা বিশ্বে যত মানুষ মারা
বজ্রপাতে যায় তার এক চতুর্থাংশ বাংলাদেশে ।প্রতি কোটিতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশে ০৯
থেকে ১০ জন । এছাড়া মাঝে তক্ষক নিয়ে কোটি টাকা দামের গুজব ছড়িয়ে গেলো । মানুষ
হন্যে হয়ে তক্ষক খুজতে লাগলো , কোটি টাকা দাম হতে হলে শর্ত হলো হাস পা হতে হবে ,
ওজন ৩০০ গ্রাম হতে হবে আরও কত কি । কিন্তু তক্ষক কেন এত মুল্য । এর পিছনে নাকি আছে
অনেক কারন , কেও বলেন এর থেকে ক্যান্সার এর ঔষধ তৈরি হয় , কেউ বলেন এর তেল
পুরুষদের জন্য উত্তম মালিশ , কিন্তু আসল কারন বের হলনা । এরকম মাঝে মাঝে কত অদ্ভুত
হুজুগ আসে, আর কেনইবা আসে কে জানে ! একসময়
শুনেছিলাম এক টাকার সোনালি মুদ্রা বিক্রি ও
পাচার , দুই টাকার চকচকে নোট পাচার
হয় , কালো বিড়াল , হুতোম পেঁচা আরো কত কি। কি জানি এগুলোর রহস্য। এ জন্যই
বোধ হয় বলে হুজুগে বাঙালি। আমরা যখন স্টেজ এ কোন যাদু শো দেখতে যায়, তখন যাদুকরেরা
কিন্তু শুরুতেই বলে নেন আপনারা এটা কে যাই বলুন না
(243)
কেন জাদু কোন ভেল্কিবাজি নয়, এটা
সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত এবং এবং দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে অভ্যাস করা একটা
খেলা মাত্র, এতে ভুত প্রেতের কোন ব্যাপার নেই, অতিপ্রাকৃত কোন ব্যাপার নেই। আসলে
যাদু কি আর বিজ্ঞান বলতে আমরা কি বুঝি । এই দুই এর ভিতর পার্থক্য কি ? বিষয় হল
আমাদের সকল সৃষ্টি জগত এর আবিষ্কৃত সকল রহস্য , সৃষ্টি জগতের অগণিত এবং অসীম
শক্তির যে ক্ষুদ্র শক্তি বা অংশটুকু আমরা আবিস্কার এবং করায়ত্ত করতে পেরেছি, এবং
যে জ্ঞানটুকু সবাই জানি, যে জ্ঞানটুকু এবং যে শক্তিটুকু আমরা সবাই ব্যবহার করতে
পারছি, মানবকল্যানে এবং এবং আমাদের সাচ্ছন্দের জন্য ব্যবহার করতে পারছি, যার
ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত সেটাই হল বিজ্ঞান, আর যে জ্ঞানটুকু আমাদের অজানা, যে
শক্তিটুকু আমাদের করায়ত্ত নয় সেটাই যদি কারো হাতে থাকে , কারো আয়ত্তে থাকে তবে
সেটা হয়ে যায় জাদু , তাকে বলা হয় জাদুবিদ্যা , কালজাদু , ভুডু বিদ্যা, শামান,
ডাকিনী বিদ্যা, ইন্দ্রজাল যাই বলিনা কেন । কালো যাদু কোন সূত্র মানেনা, কিন্তু
ম্যাজিক বিজ্ঞানের সুত্র মেনে চলে । আমরা আসলে রহস্যের ব্যাখ্যা দিই এ রকমভাবে যে
যে যুক্তির বা ব্যাখার ঘটবার সম্ভাবনা বেশি সেটাই , আর সেটাই বইপত্র পড়ছি, হয়তো
হতে পারে সেটা বেমালুম ভুল , কিন্তু সেটা সত্য বলে মেনে দিনের পর দিন মেনে চলছি,
হতে পারে এমন সব উদ্ভিদ আমরা আমাদের উপকারে ব্যবহার করছি, সেগুলোর উপকার জানি
কিন্তু ক্ষতিকর দিক আছে কিন্তু আমাদের চোখে পড়েনি, এই যে ধরুন সয়া বড়ি বা সয়া
নাগেট আমরা খাই প্রোটিনের ব্যাপক সোর্স হিসেবে, কিন্তু এক সমীক্ষায় প্রকাশ হয়েছে
এটা অত্যাধিক পরিমানে দীর্ঘদিন খেলে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন কমতে থাকে, তেলে
ভাজা, গরু-খাশির মাংস মানে রেড মিট ক্ষতিকর জেনেও তো খাচ্ছি ।তাই আমাদের
বিজ্ঞানলব্ধ কিছু জ্ঞান আগামীতে বিতর্কে
যাবেনা বা রহস্য সমাধান হয়েছে বলা যাবেনা। ধরুন আজকের এই মোবাইল বা সিসি ক্যামেরা, বন্দুক,
যদি কারো হাতে কুক্ষিগত থাকতো, অর্থাৎ বিজ্ঞানী, গবেষক বা কোন গোষ্ঠীর হাতে এটি
আবিষ্কার হলো এবং এগুলোর ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলোনা। এগুলোর
আবিষ্কারের পর ব্যবহার সীমাবদ্ধ রইল
(244)
সেই নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর হাতে মাত্র ।
তখন বিষয়টা কি দাড়াবে একবার ভেবে দেখেছেন । আজকে যে জিনিষ অতি সাধারন মনে হচ্ছে
আপনার আমার কাছে , সেই জিনিসটাই হয়ে উঠতো দৈবিক বা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা সম্পন্ন একটা
বিষয় । ধরুন সারা পৃথিবীর মানুষেরা যুদ্ধ করতো লাঠিসোটা, তলোয়ার নিয়ে, কোথাও যুদ্ধ
লাগলো আমরা নেমে পড়লাম লাঠিসোটা, ঢাল-সড়কি হাতে নিয়ে, এবার দেখা গেলো আমাদের
বিপক্ষ সেই গোষ্ঠী অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর আক্রমন করে বসলো। তখন আমরা
কি আমাদের বিপক্ষ সেই দল কে দেবতা ভাবা শুরু করবনা? সবাই কি তাদের অধীনতা মেনে
নিতোনা । যেহেতু বন্দুক আমাদের কাছে অসাধারন কিছু নয়, কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে এটা
হয়ে যাবে দৈব, স্বর্গীয়, ব্রহ্মাস্ত্র, ইত্যাদি অস্ত্র নামে। মোবাইল তো কানে
লাগিয়ে ভালোই কথা বলেন, যখন খুশি কল দেন, আগে তো বাটন প্রেস করা লাগত , এখন তো
সেটাও লাগেনা। টাচ করলেই হল । ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করছি , নিজেকে হেভি স্মার্ট আর মহাজ্ঞানী ভাবছি অবশ্যই।
তো কখনো যদি এই টেকনোলজি সাতদিনের জন্য ধংশ হয়ে যায় তবে আপনার বা আমার মত যে
ছেলেটা স্মার্টলি ফোন রিসিভ করে , যে মেয়েটা বা ছেলেটা রাতের পর রাত ফোনে কথা বলে সময় এবং ঘুম দুইটায়
নষ্ট করে, যারা বেশ স্মার্টলি এন্ড্রয়েড বা আইফোন এর সমস্ত ফাংশন মেইনটেইন করেন,
বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করেন তাদেরকে বলছি যদি আপনাদের এই টেকনোলজি ধবংশ হয়ে
যায় কোন আকষ্মিক কারনে , তখন এই ওভারস্মার্ট জেনারেশন বলি আর আর আমাদের উন্নত
বিশ্বের লোক বলি কারোরই ক্ষমতা হবেনা একটা মোবাইল ফোন আবিস্কার বা মোবাইল ফোন
তরঙ্গ রিসিভ করবার টাওয়ার আবিস্কার করবার মতো ক্ষমতা কারো হবেনা । অনেকদিন আগে কোন একজন বিখ্যাত লেখকের
হিপনোটাইসিস ও মেসমেরিজম নিয়ে লেখা একটি বই এর কয়েকটি লাইন ছিল এরকম প্রাচীন ভারত
, মিসর , সহ বিভিন্ন যায়গাতে অদ্ভুত ক্ষমতাশালী কিছু বিদ্যার আবিস্কার তৎকালীন
যুগে হয়েছিলো তৎকালীন বিজ্ঞানী বা সাধু সন্তুদের হাতে
(245)
- যেটা
তারা সরল মনে মানবকল্যানে ব্যবহার করেছিলেন এবং সরল মনে মানুষ কে শিক্ষা ও
দিয়েছিলেন যাতে মানুষ নিজেই তার নিজের প্রয়োজন মেটানো এবং বিপদ এড়াতে পারে ।
কিন্তু একটা সময় তে দেখা গেলো জিনিস গুলো মানবকল্যানের পরিবর্তে বুমেরাং হয়ে দেখা
দিলো । যে হিপটোনাইজেশন এবং বশিকরন জানে
সে খুশিমত যে কাউকে তার অবৈধ প্রয়োজনে বশীভূত করে তার অনিচ্ছাসত্ত্বেও কার্য্য
সিদ্ধি করে নিলো ।ফলে সরকার বাধ্য
হয়ে সেই বিদ্যাগুলি নিষিদ্ধ করে দিলেন সাধারন মানুষের জন্য ।
কয়েকটা উদাহরণ
দিলে বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে আপনাদের কাছে। ধরুন আগ্নেয়াস্ত্র তথা বন্দুক বা
পিস্তল হলো আমাদের কাছে অতি সাধারন একটা
বিষয়, যদিও সবার নাগালের বা সাধ্যের ভিতরে নেই, তারপরেও এটা আশ্চর্য কিছু নয়
আমাদের কাছে। এখন এই পিস্তল বা বন্দুক যদি আমাদের সবার হাতে থাকতো তবে আমাদের ভিতর
চলে আসতো এক ধরনের উগ্রতা, কারো উপর রাগ হলেই আমরা হয়তো গুলি চালিয়ে দিতাম। যখন
তখন ন্যায় বা অন্যায়ের পক্ষে বা বিপক্ষে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যোদ্ধা হয়ে
উঠতাম, ফলে দেখা যেতো সমাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুরোপুরি হুমকির মুখে
পড়ে যেতো। কারন তখন সবাই অস্ত্রের ক্ষমতাতে ক্ষমতাবান। ফলে একসময় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে
যেতো। কারন পৃথিবী চলছে একটা উচু নিচু কম্যান্ড সিস্টেম এর মাধ্যমে ।দেখুন স্রষ্ঠা
যে ক্ষমতাতে ক্ষমতাবান তার অসংখ্যা অনুভাগের এক ভাগ ক্ষমতা পুরো সৃষ্টি জগতের
সমস্ত সৃষ্টির নেই। সে রকম ভাবে আমাদের ক্ষুদ্র পৃথিবী ও সমাজ চলছে সেই একই
সিস্টেম এ, আধুনিক যুগের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান হবার চাবিকাঠি এই অস্ত্র , কিন্তু
দেখুন কত সুন্দর আইন নামক এক সিস্টেম এর মাধ্যমে এই অস্ত্রের ব্যবহার সীমাবদ্ধ
রাখা হয়েছে শাসক, সেনাবাহিনীর মধ্যে। তার ভিতর কেউ কেউ ওভার দি রুল হিসেবে অস্ত্রের
অধিকারী হয়ে ওঠে তারপরেও। তারাই আমাদের সমাজে চাঁদাবাজ , খুনি, অরাজকতা সৃষ্টিকারী
হিসেবে তথাকথিত অপরাধী হিসেবে পরিচিত আমাদের কাছে।
(246)
এখন দেখুন প্রত্যেকটি রাষ্ট্রে রয়েছে
ভয়ানক সব অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী। এখন মানুষের ভিতর আনুগত্য বলে যদি কোন জিনিস
না থাকতো তবে নিশ্চয় এই লক্ষ লক্ষ লোক (সেনাবাহিনী বা মিলিশিয়া)নিশ্চয় কথা শুনতোনা
, ফলে ধ্বংস হয়ে যেতো রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ।দেখা দিতো ঘন ঘন বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধ।
সুদান, আফগানিস্তান, সোমালিয়া এই সব রাষ্ট্র গুলো তো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তো
মানুষের মধ্যে এই যে আনুগত্য, দেশপ্রেম, বিবেক এই গুলা না থাকতো তাহলে আমরা কেউ কি
কারো কাছে সমাজে , রাষ্ট্রে ও পরিবারে কারো কাছে কি নিরাপদ থাকতাম? এই আনুগত্য,
দেশপ্রেম, বিবেক এই গুলা কি মানুষ বশীকরণ , বা সমাজে শৃঙ্খলা রাখার জন্য এক প্রকার
‘সাইকোলজিক্যাল হিপনোটাইজেশন বিদ্যা নয় কি ? এটা ও এক প্রকার যাদু বিদ্যা । এখন যদি কোন দেশের সরকার মনে
করতো আধুনিক যুগের এই মিসাইল , বন্দুক , রাইফেল এগুলো কারো কাছে নিরাপদ নয় , তখন
দেখা যেতো তার সেনাবাহিনীর হাতে দিতেন আদি যুগের ঢাল-তলোয়ার-তীর। আর নিজেদের হাতে
থাকতো এখনকার অত্যাধুনিক অস্ত্র আর সেগুলো আবিস্কারের ফর্মুলা। ফলে লাভ হতো
বহুমুখী । সৈনিক দের বললেই তারা ভয়ে যুদ্ধ করত আর যারা বিদ্রোহ করতো তারাও দমন হতো
অতি সহজে । কারন আধুনিক যুগের এসব অস্ত্রের কাছে ঢাল তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে বন্দুক ,
রকেট লাঞ্চার ধারীরা হতো ঢাল তলোয়ার ধারী সৈনিক ও সাধারন মানুষের কাছে হয়ে যেতো অতিমানব
, অবতার এবং দেবতার সমান। অতি উৎসাহী কিছু
মানুষ তখন খুব সহজে এদের কে দেবতার আসনে বসাত। এই ধরুন আমাদের এই যুগের একটা
প্রয়োজনীয় বস্তু হল ক্যামেরা । চাকুরির পরীক্ষার জন্য হোক , স্কুলে ভর্তি , বৈষয়িক
কাজ , ভ্রমন এবং যে কোন অনুষ্ঠানে হোক এর ব্যবহার অনস্বীকার্য । আজ থেকে দশ বছর
আগেও ক্যামেরা আমাদের কাছে এতোটা সহজলভ্য বাপার ছিলোনা । কিন্তু এখন প্রত্যেক
মোবাইল সেট এর সাথে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা থাকার কারনে এটি এখন ঘরে ঘরে , হাতে হাতে । এবং এর ফলে আমরা যেমন
প্রচুর উপকৃত হচ্ছি , পাশাপাশি এর অপব্যবহার ও কম হচ্ছেনা ।
(247)
প্রায়ই শোনা যায় মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে
ভিডিও করা আপত্তিকর সব ভিডিও ক্লিপ্স এর কথা, বিভিন্ন অপহরন, পরকিয়া, সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ডে যোগসাযোগ সহ নানা রকম অপব্যাবহার এর কথা ।আবার এই মোবাইল এর আবিস্কারের
না হলে কত সুন্দর মুহূর্ত গুলো মিস করতাম আমরা, প্রিয়জন চোখের আড়াল হলে আর কথা
বলতে পারতাম না, প্রবাসে গিয়ে পরিবার পরিজনদের সাথে দেখা হতোনা, আপনি মিস করতেন রাতের পর রাত প্রিয়তমার
সান্নিধ্য , যোগাযোগ ব্যাবস্থা হতো না এত উন্নত আর এত দ্রুত। ভাবুন তো যদি সরকার
মোবাইল এর উপর অতিষ্ঠ হয়ে নিয়ন্ত্রন করতে
না পেরে মোবাইল ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতো তাহলে কি হতো ! ভাগ্যিস মোবাইল এ জালিয়াতি
বন্ধ করবার জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করা হয়, ফলে আশাতীত ভাবে হ্রাস পায়
মোবাইল এর মাধ্যমে সব অপরাধ ।যদিও এর জন্য তৎকালীন ডাক ও টেলি যোগাযোগ
প্রতিমন্ত্রী (তারানা হালিম ম্যাডাম) এর
বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনার ঝড় ওঠে, কিন্তু
অচিরেই এর সুফল পেতে শুরু করে জনসাধারণ, অনেকে আবার একটা আশঙ্কার কথা বলেছিলেন যে
বিদেশি কোম্পানির কাছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট চলে যাবার ভয় আছে, তবুও সিস্টেম টা ভালো। ফলে
ফোন দিয়ে কিডন্যাপ ও হুমকি, নারীদের উত্যক্ত করা , একজনের অনেকগুল সিম এরকম ভেজাল
গুলো বন্ধ হয়ে যায় । আবার ঘন ঘন শোনা যায় ফেসবুক এ প্রশ্ন ফাস এর কথা, ফলে মাঝে
মাঝেই সাময়িক ভাবে ফেসবুক বন্ধের প্রস্তাব আসে ।আবার ধরুন
এখনকার সময়ে মানুষ ইচ্ছামত ভিডিও এডিটিং করতে পারে , কিন্তু তবু ভিডিও এডিটিং এ
কিছুটা প্রযুক্তিগত ঘাটতি আছে ।কিন্তু ধরুন ভিডিও এডিটিং যদি এমন
পর্যায়ে চলে যায় যে, একটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এ দেখা গেলো মিস্টার ক
মিস্টার খ কে হত্যা করলো, কিন্তু মিস্টার ক কে বাঁচাতে গিয়ে গ
নামক একজন ব্যাক্তিকে দেখা গেলো খুন করতে
।এবং এই নিরপরাধ গ কে ফাঁসানো হল সম্পূর্ণরূপে ভিডিও এডিটিং করে ।ভিডিও
এডিটিং যদি কখনো এই পর্যায়ে যায় তাহলে দেখা যাবে ভিডিও করবার সমস্ত যন্ত্র সাধারন
মানুষের থেকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে ।
(248)
এবং আদালতে কোন অপরাধের প্রমান হিসাবে
ভিভিও আর গ্রহণযোগ্য হবেনা, যেমন এখন কোন অপরাধের ফটো তেমন একটা বিশ্বাসযোগ্য নয় ।কারন নিখুত ফটো এডিটিং এখন সামান্য স্মার্ট ফোন দিয়ে করা যায় ।কিন্তু
ভিডিওটা এখনো এতটা এগোয়নি। এবার বলুন এরকম কোন
ঝুকি তে পড়ে নিরুপায় হয়ে কোন দেশের সরকার
যদি প্রযুক্তির ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে নিয়ে আসে , শুধুমাত্র কখনো যদি সেই
প্রযুক্তি শাসক শ্রেণীর ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকে তবে দেখা যাবে ওই প্রযুক্তির
ক্ষমতা টা শাসক শ্রেণীর নির্দিষ্ট কিছু মানুষ বংশানুক্রমিক ভাবে ব্যবহার করবে এবং
এক সময় তারা হয়ে যাবে ওই বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী , সেই গোষ্ঠী হয়ে যাবে
এক মহা ক্ষমতাশালী জ্ঞানের অধিকারী । এবার তারা নিশ্চয় চাইবে ওই ক্ষমতা, ওই জিনিস,
ওই বস্তু আবিস্কারের ফর্মুলা নিজেদের ভিতর লুকিয়ে রাখতে । বিষয়টা বোধ হয় এখনো
পরিস্কার বোঝেননি আমি কি বুঝাতে চাইছি, আপনি শুনলেন শাসক এর কাছে এক জাতীয় যন্ত্র
আছে যেটা দিয়ে দুরের লোকের সাথে কথা বলা যায় , আপনি কি করছেন সেটা দেখা যায় দূর
থেকে (টি ভি বা সিসি ক্যামেরার কথা বলছি) এক যাদু আয়নার মাধ্যমে ।আচ্ছা এক
আয়নমণ্ডল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নাম্বার ভিন্ন নাম্বারে করা কল কিভাবে পৌছে
দিচ্ছে সেটা কি এক বার ভাবেন , এটা কি মহা জাদু নয় ? বাতাসে কত শত চ্যানেল এর
অনুষ্ঠান হচ্ছে সেগুলো কিন্তু আয়নমন্ডল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে , আপনি আমি কি খালি
চোখে সেগুলো আয়নমন্ডল দিয়ে যাচ্ছে কখনো সেগুলো দেখতে পেয়েছি ? তাহলে সেগুলো আপনার
আমার বসান টি ভি সেট এ আসে কি করে ?সাধারন ভাবে দেখি বলে সবার জানা বলে এটা আমাদের কাছে কিছুই মনে হয়না ।এটা কি জাদু
বলে মনে হয়না ? মনে হতো এটা যদি নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর বা সঙ্ঘের ভিতর গুপ্ত থাকতো,
যদি মোবাইল নামক যন্ত্র আবিস্কার করে আমাদের মতো সাধারনের ব্যাবহারের জন্য
উন্মুক্ত করে দেওয়া না হতো , ধরুন একজন রাজা বা বাদশা বা বিশেষ কোন সঙ্ঘ বা গোষ্ঠী
পৃথিবীর সর্বোচ্চ লেভেল এর জ্ঞানী-গুণী ও বিদ্বান দের নিয়ে গঠিত। গবেষনার জন্য তো
প্রচুর অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়|
(249)
সেটা সরবরাহ বা বিনিয়োগ করছে কয়েকজন
বিশিষ্ট ব্যাক্তি ,বিজ্ঞানীদের পরিবার পরিজন সবার সাত পুরুষ বসে খাবার মতো ভবিষ্যৎ
গড়ে দেবার দায়িত্ব সেই ধনী বাক্তিদের। শর্ত শুধু একটাই যা গবেষণা হবে এবং গবেষণার মাধ্যমে
যা আবিষ্কার হবে তা সাধারন জনগন এর
সুবিধার্থে ব্যবহার করা যাবেনা, সাধারনের ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত করা যাবেনা,
সেই গুপ্ত গবেষণার মাধ্যমে হওয়া সব আবিষ্কার ব্যবহার করবে গবেষনাতে যারা অর্থ
বিনিয়োগ করেছিলো শুধু তারা ।এই তত্ত্বের সব থেকে বড় প্রমান হল ‘দ্যা নাইন মিথ যার প্রতিষ্ঠাতা
ছিলেন সম্রাট অশোক(খ্রিস্ট পূর্ব ৩০৪-২৩২ অব্দ) এবং মিসরের পিরামিড, মমি, মমির
অভিশাপ এবং ফেরাউন(৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে -৩০ খ্রিস্টপূর্ব ) পদবীধারী শাসকেরা। তাহলে এগুলো যার হাতে থাকতো তাদের কাজ কর্ম আমরা
অলৌকিক বলে মনে করতাম । তাদের একেকজন কে আমরা অবতার বলে ভাবতে পারতাম। আমাদের এই
সৃষ্টি জগত টাই অপার শক্তির আধার ।লাগাতার গবেষণার মাধ্যমে এই সৃষ্টি জগতের অগনিত
শক্তির থেকে দুই একটা শক্তি ধরতে পারলে বা আয়ত্ব করতে পারলেই মানব জীবন পৌছে যায়
এক অসীম উচ্চতায় ।খুলে যায় অসংখ্যা সম্ভাবনা ও কষ্ট লাঘবের পথ । পৃথিবীতে লক্ষ
লক্ষ গাছ রয়েছে । এর ভিতর গোটা কয়েক গাছ এর কাজ আমরা জানি, আর ৯৯% এর কাজ আমাদের
কাছে অজানা , হয়তো দূর ভবিষ্যতে এগুলো থেকে আমরা পেয়ে যাবো চির যৌবন রক্ষার ঔষধ ,
দুরারোগ্য রোগের সহজ সমাধান ।এই ধরুন ব্রাজিলের স্থানীয় ভাষায় কুবাই বা কেবিসমো
নামে একটা গাছ আছে, যার বৈজ্ঞানিক নাম (copaifera langsdroffii) , এই গাছটিকে ডিজেল গাছ ও বলা হয় ।কারণ গাছটি ১৫ বছর বয়স থেকে
বছরে ৩০ থেকে ৪০ লিটার ডিজেল দিতে পারে ।পৃথিবীর ভিতরই তো ছিলো
চুম্বক শক্তি, চুম্বক পাথর বা ম্যাগনেট এশিয়া মাইনর এর এক রাখাল ছাগল চরাতে গিয়ে
জুতার লোহার পেরেক টেনে ধরাতে তা আবিস্কার করেছিল এক রাখাল,বালক ম্যাগনাস, তার নাম অনুসারে এর নাম হয় ম্যাগনেট। আবার এই চুম্বক মেরু প্রতি ০৭
লাখ ৮৬ হাজার বছরে দিক পরিবর্তন করে ফেলে।
(250)
তবে বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে ০২ থেকে ০৩
লাখ বছরে পর ও এর পরিবর্তন ঘটতে পারে। এভাবে ধরুন আজ কে আমাদের আবিষ্কৃত শক্তি যদি
কখনো তাঁদের পরিচিত ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলে তখন কী হতে পারে , হতে পারে অনেক কিছু। আজকে যে শক্তি গূলো
আমরা ব্যাবহার করে উন্নত জীবনযাপন করছি , সেই শক্তি গুলোর যদি বিকল্প না থাকে তবে
আমরা পড়ে যেতে পারি বিপদে ।ধ্বংস হয়ে যেতে পারে মানব সভ্যতা , এক টানে আমরা ফিরে
যেতে পারি কূপি-বাতির যুগে ।এখনকার বিদ্যুৎ শক্তি যদি অচল হয়ে পড়ে তাহলে বলা যেতে
পারে বর্তমানের যত ডিভাইস আছে কোনটাই কাজ করবেনা ।অচল হয়ে যাবে পুরো সভ্যতা ।
বিদ্যুৎ শক্তি কে বলা যেতে পারে সভ্যতার প্রান শক্তি ।কখনো যদি বিদ্যুৎ শক্তি তার
কার্যকরীতা হারায় তবে কি হবে ভেবে দেখেছেন, কে দিয়েছে এই গ্যারান্টি যে বিদ্যুৎ বা
চুম্বক তার কার্যকরীতা বা ধর্ম চিরকাল এক রকম রাখবে এটা ও তো কোথাও লেখা নেই। যে
কোন সময় যদি প্রকৃতির আপন খেয়ালে যেমন এটা আবিষ্কার হয়েছে তেমন যদি প্রকৃতির আপন
খেয়ালে এই চালিকা শক্তি গুলো যদি কখনো কার্যকারিতা হারায় তবে কি হবে ভেবে দেখেছেন
কি হতে পারে , পৃথিবী চলে যেতে পারে এক প্রাচীন অবস্থাতে ।প্রতি ০৭ লাখ ৮৬ হাজার
বছরে পৃথিবীর চুম্বক মেরু উল্টে যায়, মিনিমাম প্রতি ০২ থেকে ০৩ লাখ বছরের ভিতর এটা
ঘটবার সম্ভাবনা থাকে, চুম্বক মেরু উল্টে গেলে অনেক কিছু ঘটতে পারে পৃথিবীর ।পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের কারন
হল পৃথিবীর ভিতরের বিভিন্ন গলিত তরল ধাতু । পৃথিবীর সৃষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রথমে
গ্যাসীয় গোলক থেকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে হতে আজকের পৃথিবী , কিন্তু পৃথিবীর
ভূগর্ভের গভীরের দিকে এখনো জমাট হয়ে
পারেনি।এই কারনে চুম্বক ক্ষেত্রের কোন বিরুপ সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা ।পৃথিবীর
সকল পরিবর্তন হল বেশ ধীর।যেমন ধরুন পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ পানির উপর ভাসমান ।পানি
বলতে সে এক মহাসমুদ্র ।বলা চলে প্রত্যেকটি মহাদেশ একেকটা ভাসমান মহাদেশীয় প্লেট ।এই প্লেট গুলো কয়েক কোটি বছর আগে এক
যায়গাতে ছিল । আবার ভুকম্পন বা যে কোন কারনে হোক না কেন এগুলো আলাদা হয়ে যায় ।
(251)
আপনি আমি টের পাচ্ছিনা বটে, কিন্তু এই প্লেট গুলোকে বোঝার সুবিধার্থে তুলনা করা যেতে পারে যে একেকটি
মহাদেশ ধরুন একেকটি জাহাজ , আর এই জাহাজের প্রত্যেকটি কক্ষ একেকটি দেশ, জাহাজ যেমন
সাগরে স্থির থাকেনা ,স্থান পরিবর্তন করে তেমন আমাদের মহাদেশ নামক জাহাজটি বিভিন্ন
দেশ নামক কক্ষ নিয়ে ঘোরাফেরা করছে ।এই পরিবর্তন
লক্ষ করলে দেখা যাবে ১০০ মিলিয়ন বছর আগে দক্ষিন আমেরিকা মহাদেশ আর আফ্রিকা
এক যায়গায় ছিল ।কিন্তু এখন দুটো মহাদেশ এর ভিতর দূরত্ব হাজার মাইল ।আবার দেখা গেলো
১০০ মিলিয়ন বছর পর আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ মানে বাংলাদেশের সাথে লেগে আছে
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ।এই পরিবর্তনটা সর্বপ্রথম লক্ষ করেন আলফ্রেড ওয়েজেনার নামক
একজন বিজ্ঞানী ।তার এই তত্ত্বের নাম দেওয়া হয় কন্টিনেন্টাল ড্রিফট তত্ত্ব ।
এভাবে আমাদের মহাদেশ গুলো প্রতি বছর স্থান পরিবর্তন করছে । আমাদের খালি চোখে সেটা
দেখা বা বোঝা সম্ভব নয় ।দেখা যাচ্ছে এই সরে যাওয়ার হার হল প্রতি ১০০ বছরে মাত্র ০২
ইঞ্চির মত বা সর্বোচ্চ ০১ ফুটের মত।এ জন্য বিবর্তন ও ভূপ্রকৃতির পরিবর্তন
মানুষ টের পায়না ।এই প্লেটের সঞ্চারন ভুমিকম্পের ও কারন।তেমনি এই
চুম্বক ক্ষেত্রের ব্যাপার । চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব বা পরিবর্তনটা ওইরকম অনেক বছর পর হয় , পরিবর্তন টা ০২ থেকে ০৭ লাখ বছরের মধ্যে হয়।
চুম্বক ক্ষেত্রের যে প্রভাব পৃথিবীর উপর বিরাজ করছে সেটার প্রভাব পৃথিবীর উপর
সুদূরপ্রসারী ।এই চুম্বক ক্ষেত্র না থাকলে সৌর ঝড় সংঘটিত হয় , পৃথিবীর উপর ক্ষতিকর
বিভিন্ন রশ্মির পতন , বিদ্যুৎ শক্তির গরমিল পরিলক্ষিত হতে পারে । আমার মনে হয় যে
একেকটা পরিবর্তনে একেকটা ইতিহাস তৈরির পরিবেশ তৈরি হয় পৃথিবীতে । এই লাখ বছর পর
একেকটা পরিবর্তনে পৃথিবীতে একেকটা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর রাজত্ব তৈরি হয়েছে। এভাবে
ডাইনোসর থেকে মানুষ অগনিত প্রাণী এসেছে
, আবার এভাবে বিলুপ্তি বা ধংশের ধারাতে আমরাও একদিন বিলুপ্তও হয়ে যাবো হয়তোবা।আবার
এই যে চালিকা শক্তির কথা বলি , সেই চালিকা শক্তি যে যুগে আবিষ্কার হয় দেখা যায় যে
সেই শক্তিকে সেই যুগের মানুষ ব্যাবহার করে যতগুলো কাজে লাগানো যায় মানুষ সেই সব
রকম কাজে লাগায় ।
(252)
ধরুন একসময় ঘোড়া কে মানুষ আবিষ্কার
করেছে যাতায়াতের দ্রুতগামী মাধ্যম হিসেবে ।তখন মানুষ তাড়াতাড়ির সব কাজে দেখুন ঘোড়া কে ব্যাবহার করতো ।দ্রুত
যাতায়াতের জন্য মানুষ ঘোড়াতে চড়ে যেতো, যেহেতু ঘোড়ার গতি ঘণ্টাতে ৪০-৮৮ কি়মি ।দ্রুত
কোথাও যেতে ঘোড়ার পিঠে যেতো , অনেক মালামাল বহনের জন্য, যুদ্ধ ক্ষেত্রে দ্রুত
আক্রমন এর জন্য ঘোড়া, দলেবলে কোথাও বেড়াতে যাওয়া সবকাজেই ঘোড়ার ব্যাবহার ছিল ,এর
বিকল্প নিরাপদ ও দ্রুত কিছু ছিলোনা ।এখনকার যুগের দিকে খেয়াল করুন ,জেমস ওয়াট এর বাস্প
ইঞ্জিন আবিষ্কার এর পর বর্তমান পৃথিবীর পরিবহন ব্যবস্থাতে বিপ্লব ঘটে, পুরো
যোগাযোগ ব্যবস্থা পালটে যায়। ধরুন বর্তমানে রুপকথার সকল যাদুর জিনিস বিজ্ঞান
আমাদের উপহার দিয়েছে, উড়ে যাবার রথের বা গালিচার যায়গা পুরন করেছে বিমান, দূর
থেকেই কোন স্থান দেখতে পাবার যাদুর আয়নার যায়গা নিয়েছে সিসি ক্যামেরা । ঘোড়া দিয়ে
যত কাজ করা হতো সবগুলো দখল করে নেয় বর্তমানের বাষ্পীয় ইঞ্জিন। আস্তে আস্তে এই থিম
ধরে বিভিন্ন ইঞ্জিন আবিষ্কার হয়ে বর্তমানের যান্ত্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে , আসলে কি
পৃথিবী কখনো অনুন্নত ও প্রাচীন ছিলো, মানুষ কি কোন দিন প্রাচীন ছিল কিনা সেটা ও
বিতর্কিত , মানুষের উৎপত্তি, পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চলে আসা তত্ত্ব সবই বিতর্কিত, যতই সেটা আমাদের বই পত্রে লেখা
থাকুক না কেন। ডারউইনের বিবর্তনবাদ (১৮৫৯-অন দ্যা অরিজিন অব স্পিসিস গ্রন্থ)
তত্ত্ব মতে মানুষের উৎপত্তি বানর জাতীয় প্রাইমেট থেকে ধাপে ধাপে বিবর্তনের মাধ্যমে
আজ এসেছে মানুষ , এতদিন এই তত্ত্ব বিশ্বাস করে এসেছে মানুষ , আবার ২০১৮ তে এসে
বলা হচ্ছে মানুষ হল শিম্পাঞ্জী এবং শূকরের ক্রস বা সংকরায়নের মাধ্যমে আসা এক নতুন
প্রাণী(জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেসিস্ট ইউজিন ম্যাকার্থীর তত্ব-সংকরায়নের
ক্ষেত্রে এনার খ্যাতি বিশ্বজোড়া )।তবে যে তত্বের কথা বলা হোক না কেন মানুষের
উৎপত্তি সম্বন্ধে সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে এবং মানুষের উৎপত্তির ক্ষেত্রে মানুষ
এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে, সেটা হতে পারে ভিনগ্রহ থেকে এসেছে বলুন আর বেহেশত থেকে
এসেছে মানুষ এটাই সত্য, বানর বা শুকর থেকে নয়|
(253)
আর মানুষের ভিতর কত শত প্রকরণ,
মূলত মানুষের নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য অনুযায়ী তিন প্রকার মানুষ দেখা যায়, মঙ্গোলিয়ান(চাইনিজ, এই মানবজাতির উৎপত্তি ও বর্ণ সম্বন্ধে ইসলামিক মতবাদ হলো হযরত নুহ আঃ এর চারপুত্র সাম,হাম,ইয়াফিস ও ইয়াম , ইয়াম বা কেনআন প্লাবনে মারা যায় , ইয়াফেসের পৌত্র ছায়েন এর থেকে চীনা বা মঙ্গোলয়েড জাতির শুরু ,এদের ধর্ম ছিল সাবেয়ীন ,ছায়েন এর নাম থেকে চীন নাম হয়তো ),ককেশীয়ান(আরব-এশিয়ান, সাম আরবদের আদিপিতা ),নিগ্রো(কালো-শ্বেতাঙ্গ , হাম কালো মানুষদের আদিপিতা , সাম আরবদের আদিপিতা , ইয়াফেস রোমান ও গ্রীকদের
আদিপিতা ), এই তিন রকম পার্থক্য
প্রধানত চোখে পড়ে আমাদের। বর্তমান মানুষ এই তিন প্রজাতির মানুষের সংকর , হযরত আদম আঃ আদিপিতা হলেও হযরত নুহ আঃ এর বংশধরেরাই শুধু মহাপ্লাবনে বেঁচে
ছিল , সে আমরা বর্তমান মানবজাতির সবাই হযরত নুহ আঃ এর বংশধর।প্রাচীন
ধর্ম গ্রন্থ , পুরাণ সহ প্রাচীন সকল উপকথা
এবং সর্বশেষ আল কোরআন মতেও মানুষের উৎপত্তি পৃথিবীর বাইরে থেকে।আসলে দেখা যায়
পৃথিবীর বাইরে থেকে মানুষের উৎপত্তির পিছনে যতো কথা বলা হয় তাঁর পিছনে যুক্তি হল
মানুষের অনুন্নত জীবনের কোন লেখা পাওয়া যায়না, যতো ইতিহাস পাওয়া যায়, সর্বোচ্চ যতো
পিছনের ইতিহাস পাওয়া যায় সেখানেই পাওয়া যায় মানুষ ঘর বাড়ী, পোশাক পরিহিত এবং
সামাজিক জীবনের অধিকারী ।বলা হয়ে থাকে মানুষ যে জংলি –গুহা এবং প্রাগৈতিহাসিক জীবনের অধিকারী ছিলো সেটা
কোথাও পাওয়া যায়না । আর পৃথিবীর সকল জাতিগোষ্ঠীর ভিতর মানুষের উৎপত্তির কাহিনী এক
রকমই (এক জোড়া মানব মানবীর স্বর্গ থেকে আসা )। আর হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে আছে বেশ
কজন মনুর আসবার কথা, হতে পারে এনারা একেকজন নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে ভিন্ন বৈশিষ্টের
অধিকারী ছিলেন, ধর্মগ্রন্থের সব কথা মিথ্যা এবং বানোয়াট বলতে হবে জোর করে এই এই
বিশ্বাস করানোটা অযৌক্তিক ।গ্রীক পুরানের ট্রয় নগর বা ট্রয়ের যুদ্ধ ১৮৬৫ সালের আগে
মানুষের কাছে ছিল নিছক গ্রীক মহাকবি হোমার(খৃষ্ট পূর্ব ১১০০ সালের দিকে মানে এখন থেকে
৩০০০ বছর পূর্বে) রচিত কল্প কাহিনী মাত্র ।কিন্তু ১৮৬৫ সালে ফ্রাঙ্ক কালভার্ট নামে
একজন প্রত্নতাত্তিক বর্তমান তুরস্কের হিসারলিক শহরে ট্রয় নগরীর সন্ধান
(254)
পান। তিনি একজন কৃষকের কাছ থেকে একখন্ড জমি কিনে খনন কার্য্য শুরু করেন।
কিন্তু তিনি খনন কার্য্য জীবদ্দশায় সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। ১৮৭০ সালে জার্মান
প্রত্নতত্তবিদ হাইনরিখ শ্লীম্যান এই এলাকায় খনন কাজ শুরু করেন এবং হারিয়ে যাওয়া
ট্রয় নগরী আবিষ্কার করেন। এর বর্তমান অবস্থান হল তুরস্কের আনাতলিয়ার হিসারলিক নামক
যায়গাতে।এখনকার কানাক্কাল প্রদেশের সমুদ্রসৈকত এর কাছে এবং আইডা পর্বতের নিচে
দার্দানেলিসের দক্ষিন পশ্চিমে হিসারলিক এ ইলিয়াড এর সেই ট্রয় । ১৯৯৮ সালে এই
যায়গাটি ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষনা করে। আবার ধরুন
পবিত্র কুরানে বর্ণিত ইরাম শহর, যেটার ব্যাপারে বলা আছে এটি ছিল এমন এক শহর যেটা
ছিল পাহাড়ের ভিতর, এর ভিতর ছিল আধুনিক যুগের মতো সকল অবকাঠামো ।বলা হয় সেই শহরের
যে অবকাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছিল তা বর্তমানের অনেক আর্কিটেক্ট এর কাছেও বিস্ময় । ১৯৭৩
সালে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক এটি আবিস্কার করেন, তৎকালীন প্রত্নতাত্ত্বিক দের মতে
শহরটি ৪৩০০ বছরের পুরনো । মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পার সভ্যতার আবিষ্কার ঘটে রাখালদাস বন্দোপাদ্ধ্যায়ের(১৮৮৫-১৯৩০)
হাতে।সেখানেও আধুনিক যুগের মতো অবকাঠামো বা নগর সভ্যতার প্রমান পাওয়া গেছে । বর্তমান গবেষণার একটি ধারা বলছে সিন্ধু ,হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর সভ্যতা আর্যদের
প্রতিষ্ঠিত নয় ।অধিবাসীরা ছিলো অন্য কোন জাতি ।
আচ্ছা এবারে আসি
মিথের একটা বাস্তব উদাহরণ এ, মিথের যে উদাহরণটি আমাদের সামনে একেবারে জীবিত এবং
সত্য হিসেবে এবং সত্যের নিদর্শন হিসেবে
রয়েছে ।সেটা হল আমাদের সকল মুসলমানের
বা ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের প্রিয় জমজম কূপ । এটি
বর্তমানে কাবাশরীফ থেকে দূরত্ব কুড়ি মিটারের(ষাট ফুটের একটু বেশি) মতো ।এই কূপের কিছু অত্যাশ্চর্য বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হল –
১) জমজম কূপের পানির স্তর মাটি থেকে ১০.৬ ফূট
নিচে মাত্র ।বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে
প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি উত্তোলন করা হয় ২৪ ঘণ্টা ধরে কখনো হজ মৌসুমে । এতে
পানির স্তর নেমে যায় ৪৪ ফূট পর্যন্ত ।প্রতি সেকেন্ড এ ৮০০০
লিটার পানি উত্তোলন মানে দিনে ৬৯০ মিলিয়ন লিটার পানি ওঠানো ।
কিন্তু পাম্প বন্ধ করার মাত্র ১১ মিনিট এর মাথায় এই পানি আবার পূর্ণ হয়ে যায় !!! ।
(255)
২) এই পানিতে
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর আধিক্য আছে । ফলে এই
পানি পানে হাজী সাহেবরা দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠেন ।
৩)৪০০০ বছর এই
কুপের বয়স হওয়া সত্ত্বেও এর পানি কমেনি বা দুষিত হয়নি ।
৪) প্রাকৃতিক
ভাবে ফ্লুরাইড থাকার কারণে এতে শ্যাওলা জন্মায়না বা পানি দুষিত হয়না ।
৫) জাপানি
অধ্যাপক মাসারু ইমোটো এর মতে জমজমের পানির স্ফটিকের গঠন সাধারন পানির থেকে আলাদা,
এই পানির একফোঁটা সাধারন পানির হাজার ফোঁটার ভিতর পড়লে সবটুকুই জমজমের পানির মত
হয়ে যায় এবং জমজমের পানির সমতুল্য কোন পানি পৃথিবীতে নেই ।
৬) মাইক্রোস্কোপ
এর নিচে পরীক্ষা করেও বা ল্যাব পরীক্ষায় এই পানিতে কোন জীবানু পাওয়া যায়নি ।
আরবী ভাষাতে জমজম অর্থ অঢেল
পানি আর তিবরানী ভাষাতে জমজম অর্থ থামো থামো ।এর নামকরনের পিছনের কাহিনী হলো হযরত
ইবাহীম (আঃ) মহান আল্লাহর নির্দেশে বিবি হাজেরা কে জনমানবহীন ও পানীয় জলবিহীন
মরূভূমিতে নির্বাসনে পাঠান। ঘটনাটি প্রায় ৪০০০ বছর আগের । তো হযরত ইব্রাহীম আঃ এর
চলে যাবার পরে সাথে আনা খাদ্য এবং পানীয়
শেষ হয়ে যাবার পর বিবি হাজেরা সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করতেই
শিশুপুত্র ঈসমাইল আঃ এর ক্রুন্দন শুনে ছুটে এসে দেখেন ঈসমাইল আঃ এর পায়ের আঘাতে
মাটি থেকে অনবরত অবিরত ধারায় পানি উঠছে ।তখন যদি বিবি হাজেরা পানি দেখে জমজম বলেন
তবে আরবিতে বলেছিলেন আর যদি অবিরত পানির ধারা দেখে থামতে বলেন তবে প্রাচীন তিবরানী
ভাষাতে বলেছিলেন । এই হলো জমজম নামকরণের ইতিহাস। থামতে বলে তিনি যখন পানি ওঠার
ধারার চারিদিকে পাথর দিয়ে ঘিরে দেন তখন এই কুপ তার সীমায় বন্দী হয়ে যায়। কথিত আছে
তিনি যদি এই পাথর দিয়ে একে না ঘিরতেন তবে এটি সীমাহীন হয়ে যেতো। এই কুপের বদৌলতে
এখানে জনবসতি গড়ে উঠলো। কারণ উষর মরুর বুকে যেখানে পানি থাকে সেখানে মানুষ
মানববসতি গড়ে তোলে ।এ সময় জুবহাম বা জারহাম নামের
(256)
এক গোত্রের
লোকেরা বিবি হযরত হাযেরা আ. এর সাথে চুক্তিসাপেক্ষে এই কুপ নিয়ন্ত্রণ করতো । কালের
আবর্তনে দীর্ঘ প্রায় ২০০০ বছর এই গোত্রের লোকেরা নিয়ন্ত্রনের পর এই জারহাম গোত্রের
লোকেরা হয়ে যায় অত্যাচারী ও পাপাচারী। এই সময় তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে খোজায়া
গোত্রের লোকেরা তাদের ধ্বংশ করে দেয় এবং তাদেরকে বিতাড়িত করে।ফলে কেউ বলেন এ সময়
কুপটি আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাতে শুকিয়ে যায়, কেউ বলেন খোজায়ারা বন্ধ করে দিয়ে যায়।
সূদীর্ঘ ৫০০ বছর এই কুপটি বন্ধ থেকে নাম নিশানা হারিয়ে ফেলে ।আরবের মানুষের গল্পকথাতে বা মিথে স্থান পায় কুপের কথাটি।
কিন্তু পঞ্চম খ্রিস্টাব্দে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ
সাঃ এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব নিজর কৌতুহল থেকে ও মহান আল্লাহর ইচ্ছাতে ও মহান আল্লাহর তরফ থেকে স্বপ্নযোগে
পাওয়া নিশানা অনুযায়ী তার বড়ছেলে হারেসকে নিয়ে স্বপ্নের ইঙ্গিতযুক্ত যায়গাতে খনন
করে এই কুপ পুনরায় চালু করেন। যা অদ্যাবদি চালু আছে, যার এক আজলা পানি পান
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সারাজীবনের স্বপ্ন। কিন্ত এবার ভাবুন যদি নবী সাঃ এর দাদা
নিশ্চিহ্ন হবার ৫০০ বছর পর এই উদ্যোগটি না নিতেন তাহলে এই জমজম কুপ কি হযরত
ইব্রাহিম আঃ, হযরত ঈসমাঈল আঃ এবং বিবি হাজেরার জীবনীতে উল্লেখিত জমজম নামক একটি
কুয়ার মিথ হিসেবে রয়ে যেতোনা।অনেক বিজ্ঞানীরা একে ফল্গু নদী বলে থাকেন।সাধারণত নদী
আমরা ভূপৃষ্ঠের উপরিপৃষ্ঠে প্রবাহিত দেখি , কিন্তু ফল্গু নদী হলো বালি বা মাটির
নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া অন্তঃসলিলা নদী, কিন্তু ফল্গু নদীর সাথে জমজম এর পার্থক্য হলো
এর পানি নদীর পানির মত ময়লা নয় বা ঘোলা বা দুষিত নয় এবং এর পানি উদগত হবার স্থানে
অবস্থিত পাথরটিতে স্পষ্টভাবে আরবীতে বিসমিল্লাহ লেখা আছে এবং এই কুপের পানি যেখান
থেকে আসে সেখানকার মাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধনের কাজ করে এবং ৪০০০ বছর ধরে একই
কাজ করে চলার পর এখনো পানি দুষিত হয়নি বিন্দুমাত্র । এই কুপের গভীরতা মতভেদে ১০০ থেকে ১২০ ফুট।কাবাঘর থেকে ৬৬ ফুট দুরে অবস্থান পবিত্র জমজম কুপের ।
আসল প্রসঙ্গে ফিরি আবার ,
ধরুন যুগ পরিবর্তনের সাথে ধর্মের যুগের
উল্লেখিত কাজের বা প্রযুক্তিরও পরিবর্তন হয় । সেটাই স্বাভাবিক , নবী (সাঃ)এর যুগে
ঢাল তলোয়ার যুদ্ধাস্ত্র হলেও বর্তমান কালের যুদ্ধ এক মহা বিজ্ঞানের
(257)
খেলা।এই
বিজ্ঞানে কি নেই বলতে পারেন ?মহা শক্তিশালী সব অস্ত্র এর অসুরিক
ধ্বংশের খেলা
এখন আমরা দেখতে পাই সকল যুদ্ধে।ভোগান্তি হয় শয়ে হাজারে লাখে সাধারন মানুষের ।আমার
কি মনে হয় জানেন এই যে আজকের এই যুদ্ধাস্ত্র গুলো , আজকের এই উন্নত সব যন্ত্রপাতি
বা আবিষ্কার গুলোর মত ব্যাপার সুদুর ০৫ থেকে ১০ হাজার বছর আগে থেকে ছিল। এই কথাটা
শুনেই আপনার গাজাখুরি বলে মনে হচ্ছে ।কোনভাবেই এটা হতে পারেনা বলে মনে হচ্ছে
।সুদুর অতীতের সেই কোরআনের ইরাম শহর , মিশরের পিরামিড ও মমির রহস্য ,মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, ইলিয়ডের ট্রয়
নগরী এগুলো যদি বিজ্ঞানীদের গবেষণাতে প্রমাণিত না হতো তাহলে এগুলো আমাদের কাছে
গাজাখুরি হিসাবে চিরকাল থেকে যেতো । এটা বুঝতে হবে যা রটে তা কিছুটা বটে ।মাঝে
কোথাও বলছিলাম সম্রাট অশোকের কথা ।ওনাকে নিয়ে কয়েকটি মিথ এর ভিতর শতাব্দী পর
শতাব্দী ধরে চলে আসা একটি মিথ হল উনি ‘দি
নাইন বা নয় নামে একটি গুপ্ত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা। নয় জন মহাজ্ঞানী ব্যাক্তি যারা
বিজ্ঞানের নয়টি বিষয়ে মহাজ্ঞানী ছিলেন ।কিন্তু
পার্থক্য ছিল ওনারা তাদের দীর্ঘকালের গবেষণালব্ধ সেই জ্ঞান গুলো সাধারনের জন্য
উন্মুক্ত করতেন না। অতি সন্তর্পণে সেই জ্ঞান গুলো গ্রন্থকারে অতি গোপনীয় যায়গায়
লুকিয়ে রাখতেন। বলা হয় বর্তমান পৃথিবীর যত আধুনিক আবিষ্কার তার সুত্রের সুত্রপাত
ওই নয়জন জ্ঞানী বাক্তিত্বের সংকলিত গ্রন্থের সামান্য কিছু অংশ মাত্র। ওই মিথ এর
সুত্র ধরে আরো বলা হয় যে মহাভারত নামে আমরা হিন্দুদের বর্তমানে যে গ্রন্থ দেখি
তাতে নাকি সুদুর অতীতে একটি পর্ব মানে বিমানা পর্ব নামে একটি পর্ব ইচ্ছাকৃত ভাবে
মুনি ঋষি দের দ্বারা হোক আর সম্রাট অশোক এর দ্বারা হোক মানবজাতির কল্যাণে আলাদা
করে রাখা ছিল। যদি বলি যে তখন যদি বিমানা পর্বের সুত্র থেকে যদি বিমান আবিষ্কার
হতো তাহলে মানবজাতির ক্ষতিটা কি হতো । মানবজাতি অনেক আগেই উড়াল দেওয়া যন্ত্র
আবিষ্কার করতে পারতো । ফলে মানবজাতি অনেক অগ্রসর হতে পারত বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কিন্তু তখন কার মাস্টার মাইন্ড রা ভেবেছিলেন হয়তো যে এটা যদি আবিষ্কার হয় এবং
সর্বসাধারণে এটা পেলে কি হতে পারে সেটার একটা ক্ষতিকর দিক বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে
কয়েকটা উদাহরন দিয়ে বোঝায় ।
(258)
ধরুন এখন যুগে যদি বিমান বা উড়ুক্কু কোন
যন্ত্র বা ডিভাইস আমাদের সবার হাতে হাতে থাকতো তবে সেটার কি অপব্যবহার হতো একবার ভাবুন
তো।উবার কিন্তু উড়ন্ত ট্যাক্সির ঘোষণা দিয়ে
ফেলেছে। ইচ্ছা মত মানুষ যে কোন দেশের সীমান্ত অতিক্রম
করে ফেলতো । সীমান্তরক্ষী বাহিনী গুলো কজন কে ঠেকাত তখন ? ইচ্ছা মত দুর্বৃত্ত
টাইপের লোকেরা যার তার বাড়িতে ঢুকে পড়তো, বাড়ীর সীমানা প্রাচীর, নিরাপত্তা রক্ষী
কোন কাজে আসতো না তখন। নির্বিঘ্নে দুর্বৃত্তরা সামরিক বেসামরিক সকল গুরুত্বপূর্ণ
আস্তানা গুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতো । ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হলে আরো পরিস্কার
করে দি ব্যাপারটা।মোবাইল আবিষ্কার নিঃসন্দেহে মানবজাতির যোগাযোগ ব্যবস্থাতে
রাতারাতি শত শত মাইলের দূরত্ব কে দূরত্ব শূন্য করে দিয়েছে, হাজার মাইলের দূরত্ব
আমাদের কাছে কিছুনা । হাজার মাইল ও আমাদের কাছের দুরত্বের ভিতর কোন পার্থক্য নেই
।আবার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বসেই পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের যে
কোন দেশে অবস্থানরত প্রিয়জন এর সাথে কথা
বলা এবং তাকে দেখা যাচ্ছে । স্কাইপি, ইমো , ফেসবুক মেসেন্জার দিয়ে ভিডিও কল করে
আমরা যে প্রিয়জন দু বছর পর দেশে না এলে দেখতে পেতাম না তাকে যখন খুশি তখন দেখতে
পাচ্ছি । কিন্তু এর অপব্যবহার গুলো কি আপনি জানেননা বা দেখছেন না । অল্পবিদ্যা
ভয়ংকরী বলে যে কথা প্রচলিত আছে বা বাদরের
গলাতে মুক্তোর মালা শোভা পায়না বলে যে কথা প্রচলিত আছে তার স্পষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব
তো আমরা আমাদের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি । মোবাইল এবং ভিডিও কল দিয়ে পরকিয়া, ধর্ষণের
ভিডিও ধারন, গোসলের ভিডিও ধারন, টিনেজ মানে একেবারে ক্লাস সেভেন থেকে প্রেম,
এডাল্ট সিনেমা নাটক, পর্ণোগ্রাফী সবই তো সহজলভ্যর
থেকে ও সহজলভ্য হয়ে গেছে মোবাইল এর মাধ্যমে।ফলে নীতি নৈতিকতার দিকটা এখনকার
প্রজন্মের কাছে অনেকটা ঠুনকো হয়ে গেছে । এখন যদি সরকার এই সব অনৈতিকতা রোধকল্পে আঠারো বছরের নিচে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দেয়
তবে আপনি আমি অনেকেই বলতে শুরু করবো প্রযুক্তির যুগে এটা সম্পূর্ণ অন্যায় । এটা আমাদের বাচ্চাদের কে উন্নত বিশ্বের স্টুডেন্ট
দের থেকে পিছিয়ে দেবে । এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন সরকার কি
আঠারো এর নিচে মোবাইল ব্যবহার যদি কখনো বন্ধ করে দেন তবে সেটা কি খারাপ হবে না ভাল
হবে ?।
(259)
ঠিক সেই জন্যই
বোধহয় তখনকার যুগে রাজা বা সম্রাট দের নিজস্ব জ্ঞানী লোক বা সভাসদেরা এই গুলো সাধারন
জনতার জন্য উন্মুক্ত করতেননা। তলোয়ার বা পিস্তল বন্দুক এর বাবহারের বৈধতা বা
সীমাবদ্ধতা যদি নির্দিষ্ট করা না থেকে সর্ব সাধারনের জন্য উন্মুক্ত থাকতো তবে কি
হতো একবার ভাবুন তো।আবার যদি প্লাস্টিক সার্জারী সহজলভ্য হলে কি হতো একবার ভেবে
দেখুন। তখন ইচ্ছামত অপরাধীরা রুপ বদল করতে
পারতো । একজন অসুন্দর লোক দেখা গেলো শুধুমাত্র টাকার জোরে একজন সুন্দর মানুষের রুপ
ধারন করত ।নৈতিক শিক্ষাহীন মানুষের কাছে
প্রযুক্তি বা ক্ষমতা দিলে সে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে পশুত্ত্বের পরিচয়
দেয়। মিশরের মমি বিদ্যা বা মৃত্যুর পর মৃত দেহ সংরক্ষন কৌশল ও ছিল অসাধারন এক
আবিষ্কার। যে কৌশল শুধু জানতো শুধু তৎকালীন ফারাও রাজা ও তাদের চিকিৎসকেরা। এটা
আজো বিস্ময় বলা চলে। কারন আধুনিক যুগেও মিশরের পিরামিড এবং মমি দুটোই বিস্ময় ।তবে মমি ও পিরামিড এর পরবর্তীতে চীনা ও ইনকারা সহ অনেক জাতি তৈরি করেছে ।
এগুলোর তৈরি বিজ্ঞান ও ছিল ভিন্ন ।উদ্দেশ্য ও ছিল ভিন্ন । দুর মহাকাশ থেকে
পিরামিডের ভিউটা কিন্তু বলে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক গণিতের হিসাবের কথা , অনেকে বলেন
এটা নিছক মানব স্থাপত্য নয় ।এটা একটা বর্তমান বিজ্ঞানের অনাবিষ্কত এনার্জি ধারণের
প্যাটার্ণ , দুর মহাকাশের কোন অজানা গ্রহের অধিবাসী ও কিছু সংখ্যাক মানবের সিক্রেট
প্রজেক্ট ছিল এই পিরামিড ।গবেষনা গুলো দিন দিন এই ধারনায় পরিষ্কার করছে । ১৯২২ সালে বৃটিশ প্রত্নতত্ববিদ
হাওয়ার্ড কাটার এবং লর্ড কার্নারভন এর হাতে আবিষ্কার হয় মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা
যাওয়া প্রাচীন মিশরের ফারাও তুতা খামেন এর মমি ।হিসাব করলে দেখা যায় মমিটি
আবিস্কারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ওনার মৃত্ত্যু থেকে সময় হিসাব করলে দাড়ায় (১৩৪১-১৩২৩)খ্রিষ্টপূর্ব
থেকে ১৯২২ পর্যন্ত ৩২৫০ বছর সময়। এই ৩২৫০ বছর ওনার মৃতদেহ মমি অবস্থাতে ছিল। এত
বছর পর যখন এই মমি উদ্ধার হলো তখনো কিন্তু এই মমি বা মৃতদেহ অক্ষত অবস্থাতে ছিল ।
যদিও জীবিত অবস্থার মানবদেহের যে অবস্থা থাকে বা সদ্য মৃত অবস্থাতে যে অবস্থাতে
মানব
দেহ যে অবস্থাতে
থাকে সে অবস্থাতে সম্পূর্ণ রুপে যদিও প্রায় ৩৩০০ বছর পর সেভাবে থাকেনি কিন্তু
তারপরেও পচন রোধ করে অজ্ঞাত কোন রাসায়নিক বা দ্রব্য গুনে তারা বছরের পর বছর বললে
ভুল হবে, হাজার হাজার
(260)
বছর মৃতদেহ
সংরক্ষন কৌশল আবিষ্কার করেছিল সেটাই বিস্ময়কর ব্যাপার।মমি করার পর পার্থক্য শুধু
এটুকুই পাওয়া যেতো যে সাধারণত সদ্য মৃতদেহ গুলোর সাথে জীবিত ঘুমন্ত মানুষের কোন
দৃশ্যমান তেমন কোন পার্থক্য পাওয়া যায়না । কিন্তু মমি হাজার হাজার বছর বিস্ময়কর
কৌশলের কারনে টিকে থাকে। কিন্তু একটা প্রাণী দেহ সতেজ থাকতে যে রস থাকতে হয় সেটা
শুকিয়ে যায় মমি করার পর। আর মমি গুলোতে একটা জিনিষ কমন দেখা যেতো যে প্রত্যেকটা মমি কাল কোন বস্তুর প্রলেপ দেওয়া। হতে পারে এ পদার্থ টা
হল বিটুমিন জাতীয় কিছু । কিন্তু এই ধারনা ও ভুল। কারন বিটুমিন কোন কিছু সংরক্ষন করতে পারেনা ।যদিও বর্তমানে
অন্য প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে মৃতদেহ সংরক্ষনের ক্ষেত্রে । এখনকার যুগে যদি আপনি
কোন প্রাণী বা মানুষের মৃতদেহ ফরমালিন এ ভিজিয়ে রাখেন বছরের পর বছর সেটা ভাল থাকবে
।ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষন করার আরেকটি পদ্ধতি হল এম্বলেমিং। এক্ষেত্রে ফরমালডিহাইড
৩৫% , মিথানল ০৯ % , বাকি ৫৬% হলো গ্লুট্যারালডিহাইড এবং হিউম্যাকট্যান্স। আবার এই
মমি গুলোর সাথে জড়িয়ে আছে নানা অভিশাপ। এই অভিশাপ গুলো হলো যারা এই মমি গুলো
উদ্ধার কাজে জড়িত থাকতো তারা বিভিন্ন রোগ ,আত্মহত্যা, বা নানাবিধ দুর্ঘটনাতে মারা
গিয়েছেন। মমি গুলোর উদ্ধার কাজে যারা যেতেন অনেক সময় তারা পেতেন এরকম একটা বার্তা
তাহলো যে যারা এই সব মমির ঘুম ভাঙায় তারা মরুর বুকে বিলীন হয়ে যায় ।আসলেই কি এই
মমির ঘুম ভাঙানো মানে হাজার বছর ধরে পিরামিড ও তার আশেপাশে পড়ে থাকা সমাধি ক্ষেত্র
থেকে গুপ্ত মমি গুলো উদ্ধারকারীরা ভয়ানক সব অভিশাপে পড়তো ? যদি অভিশাপে পড়তো তবে
অভিশাপ ফলতো কি করে ? এর পিছনে থাকতে পারে বৈজ্ঞানিক কোন কারন, থাকতে পারে মানসিক
ভয় এর ব্যাপার, থাকতে পারে কোন কেমিক্যাল এর রিএ্যাকশন।তবে বেশ কিছু কাহিনী থেকে
এটা প্রমান হয় যে মমির অভিশাপ একেবারে মিথ্যা বা ফেলনা নয়। বিশেষ করে আমেনরার মমি
(টাইটানিক জাহাজডুবি সহ পূর্ববতী আরো কিছু দূর্ঘটনা তার রক্ষনাবেক্ষনকারী
কতৃপক্ষের সাথে )তুতা খামেন এর মমি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে (১৯২২ এ আবিষ্কারক প্রত্নতত্ত্ববিদ ও তার দলের অধিকাংশ সদস্যের মৃত্যূ, ভাগ্যক্রমে
শুধু তিনি বেঁচে যান
(261)
বাকি অধিকাংশ লোক মারা যায়, বিস্তারিত
কাহিনীটা এখানে দিলাম না)। এই অভিশাপ এতো বছর পরেও কাজ কেনো করে, কি ভাবে করে এটা
একটা বিস্ময়।এর বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। হতে পারে এটা কোন অজানা বিজ্ঞান বা
অজানা কোন কেমিক্যাল এর অজানা কোন গুণ। আর ধরুন এই যে পিরামিড এর কথা , পিরামিড গুলো
নির্মাণ হয়েছে শত শত যেসব পাথর দিয়ে, সেগুলোর একেকটার ওজন ১০০০ কেজি বা ০১ টন ।তো কথা হল সেগুলো বহন করাটা আসলেই তৎকালীন
প্রযুক্তিতে অসম্ভব হতে পারে, আর যদি সম্ভব হয় তবে প্রযুক্তি হতে হবে এখনকার থেকে
উন্নত , অনেকে বলেন মানুষ অনেক বড় ছিল , ১০০০ কেজি ওজনের পাথর অনায়াসে বহন করবার
মত মানুষ হতে গেলে তাকে হতে হবে সেই রকম দীর্ঘদেহী ।কিন্তু
তখনকার ফারাওদের উচ্চতা সব ০৬ ফুট এ সীমাবদ্ধ ।তাহলে এটা কি
করে হল, অনেকে বলেন মিসরের পিরামিড গুলো ভিন গ্রহ থেকে আসা এলিয়েনদের সাময়িক
বসবাসের কক্ষ, অনেকে বলেন ভিন গ্রহ থেকে
আসা এলিয়েনদের অতি বৃহদাকার মহাকাশ যান গুলো অবতরনের জন্য নির্মাণ হয়েছিল ।মরুভুমির ভিতর এত বৃহদাকার স্থাপনা নির্মাণের কারন হিসাবে আরো বলা হয় ,
মরুভুমি হল মনুষ্য বসতি থেকে প্রতিকুল ও জনবিরল স্থান ।ফলে
মহাশূন্য থেকে সহজে স্থাপনা গুলো চিহ্নিত করা যায় , এবং মানব চক্ষুর আড়ালে বিভিন্ন
পরীক্ষা চালানো সহজ হয় ।আব্বাসীয় খলিফা
মামুন এর ৮১৩ সালের একটি ঘটনা এবং ১৯৮৮ সালে
মিসরের গিজার পিরামিড এ ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক চ্যাপেরাট এর ঘটনা মিলে যায় ।কথিত আছে এনারা দুজনই এমন একটি মমি আবিষ্কার
করেছিলেন যেটা ছিল এলিয়েনের।সেই মমির চেম্বার এ লেখা ছিল এই
কক্ষে প্রবেশ নিষেধ, এখানে শায়িত আছেন এমন একজন যিনি দূর আকাশের নক্ষত্র থেকে নেমে
এসেছিলেন ।১২৫৮ সালে হালাকু খান এর বাগদাদ আক্রমন(২৯জানুয়ারী-১০ফেব্রুয়ারি
১২৫৮) এর ফলে বাইতুল হিকমা নামের তৎকালীন পৃথিবীর সুপ্রাচীন ও অগ্রসর এবং
গুপ্তবিদ্যার বহু গ্রন্থ ধ্বংস হয়ে যায় সম্পূর্ণরূপে ।বলতে
পারি যে হালাকু খান এর বাগদাদ ধ্বংস এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ দুটোই পৃথিবীর অগ্রগতিকে
৫০০ বা ১০০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে।
(262)
আর পিরামিড শুধু মিশরে ছিলোনা , চীনা
সভ্যতাতে মিশরের পিরামিড এর আগে পিরামিড ছিলো ।অনেকে দাবি করেন বরফে ঢাকা
এন্টার্কটিকাতেও ছিলো পিরামিড ও উন্নত মানব সভ্যতা।ইনকা সভ্যতাতেও পিরামিড ছিল ।আমাদের জানা ও ব্যবহৃত অনেক দ্রব্যের গতানুগুতিক ব্যবহারের বাইরে অনেক ব্যবহার
আমাদের অজানা। হতে পারে তখন মিশরীয়রা বিজ্ঞানের এমন একটা পর্যায়ে পৌছেছিলো যে রসায়ন
বিদ্যাতে তারা সিদ্ধহস্ত হয়ে গিয়েছিল ।অনেক দ্রব্যের ব্যাবহার সম্বন্ধে তারা সচেতন
ছিল। আচ্ছা একটা কথা ভেবে বিস্ময় লাগে যে প্রাচীন
ভারতীয় এবং মিশরীয় সভ্যতাতে স্বর্ণের ব্যাবহার ছিল অবারিত পরিমাণে । তখন তো এতো
স্বর্ণও ছিলোনা । স্বর্ণের খনিও ও ছিলোনা । তাহলে এতো স্বর্ণের যোগান কোত্থেকে
আসতো ।তাহলে কি এই দুটি সভ্যতার রাজপুরুষেরা পরশ পাথরের আবিষ্কার করে ফেলেছিল। সেই
পাথরের ছোঁয়াতে তারা এই সব মূল্যবান ধাতু যখন খুশি তৈরি করতো ।হতে পারে, অসম্ভব
বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। অনেকদিন আগের একটা হেয়ালী মনে পড়লো এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে।
হেয়ালী টা হলো এই যে, যৌবন রক্ষাকারী ঔষধ আবিষ্কার করতে গিয়ে মানুষ আবিষ্কার করেছে
যৌন শক্তি বর্ধক ঔষধ , পরশ পাথর আবিষ্কার করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছে রসায়ন শাস্ত্র।
তার পর ধরুন হীরক বা হীরা সেটার ইতিহাস ও অনেক পুরাতন। ধরুন কোহিনূর নামক হীরাটি এটা
হিন্দুরা বিশ্বাস করে এটা অর্জুন এর হাতে শোভা পেতো। মহাভারতের পঞ্চপান্ডব এর অন্যতম
অর্জুনের হাতে এই আংটি শোভা পেত বলে শোনা যায়। আবার শোনা যায় রাজা কর্ণ গোদাবরী
নদীর তীরে এটি পেয়েছিলেন, এগুলো হল হিন্দু মিথোলজির কথা। তবে নিকট অতীতে
সুনির্দিষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় এটির অন্ধ্রপ্রদেশের কাকাতীয়া রাজবংশের(১১৬৩-১৩২৩)কাছে
ছিল।সেখান থেকে হাত বদল হতে হতে ৭৫৬ ক্যারেটের হীরাটির ওজন বর্তমানে ১০৫ ক্যারেটে
এসে ঠেকেছে। কাকাতীয়া রাজবংশের হাত থেকে হাত বদল হয়ে তুর্কী ,মোঘল,পারস্য ,আফগান
সকল শাসকের হাত ঘুরে এটি বর্তমানে ব্রিটিশ দের কাছে রক্ষিত আছে ।
(263)
এই হীরাটি নিয়ে প্রচলিত একটা
মিথ আছে কি জানেন ? মিথ টা হল এই হীরাটি যাদের কাছেই ছিল , যার হাতে গিয়েছে বা যে
এই হীরাটি ধারন করেছে তার বা সেই রাজবংশের পতন হয়েছে। সেটা কর্ণ থেকে তুর্কী ,মোঘল
,পারস্য ,আফগান, ব্রিটিশ সবার ক্ষেত্রে কাকতালীয় ভাবে একই মিল পাওয়া যায় ।যার হাতে
এই কোহিনুর হিরা গেছে তারই পতন হয়েছে কোন না কোন সময়। এই অভিশাপের আপনি কি
ব্যাখ্যা দেবেন । আসলে এই অভিশাপ কি করে ফলে, যদি
ধরি ফারাও দের মমি যেই উদ্ধার করতে গিয়েছে তারাই প্রথমত কোন না কোন অভিশাপ এ পতিত
হয়েছে । হতে পারে এটা ফারাউ দের আবিষ্কৃত কোন অজানা মৌলের বা পদার্থের অপগুন বা
মারাত্বক ক্ষতিকর প্রভাব ।আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ নানা
রকম দুরারোগ্য রোগ বিশেষ করে ক্যান্সার , টিউমার, পঙ্গু সন্তান জন্মগ্রহন,
মস্তিস্ক বিকৃতি সহ অজানা অনেক রোগের জন্য
দায়ী ।হতে পারে এরকম কোন অজানা তেজস্কর পদার্থের সন্ধান তারা সেকালে পেয়েছিলো আর
সেগুলো তাদের মমি করা চেম্বার এ রেখেছিল । ফলে যদি কেউ কখনো তাদের ওই চেম্বার
গুলোর সন্ধান পায় তবে সে নিজের অজান্তে ওই সব ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থ এবং বিষ
এর ক্ষতিকর প্রভাবের সম্মুখীন হবে ।ফলে তাদের করা ভবিষ্যৎ বানী ফলে গেল,
ফলশ্রুতিতে মানুষের তাদের প্রতি ভীতি বাড়লো, মানুষ মনে করলো ফারাউরা অলৌকিক শক্তির
অধিকারী।আসলে অলৌকিক, ভৌতিক বা কালো জাদু বা সাদা জাদু বলে কোন কথা হয়না, সবকিছুর
পিছনে থাকে বৈজ্ঞানিক বা গানিতিক সুত্রের খেলা ।সবটাই বিজ্ঞান, জানা অথবা অজানা। আমরা
বিজ্ঞানের যে অংশটুকু জানি, যেটুকু ব্যবহার করতে পারি, যে টুকুর ব্যবহার সার্বজনীন
বা সবার হাতে হাতে আছে সেটুকু আমরা বিজ্ঞান বলি। আর বিজ্ঞানের যে অংশটুকু আমরা জানিনা, যে টুকুর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা
অজ্ঞ , যে টুকুর ব্যবহার সার্বজনীন নয় তাকে যাদু বলি , আর সেই বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞান
যদি কারো কাছে থাকে তবে আমরা তাকে মহা শক্তিশালী, অলৌকিক গুনধর বলে মনে করি ,
কামরুপ-কামাখ্যা সিদ্ধ তান্ত্রিক বলে মনে করি ।
(264)
আসলে কি জানেন দ্রব্য গুন বলে
একটা জিনিস আছে , গোটা কয়েক উদাহরন দিয়ে দিই , তাহলে আপনাদের কাছে বিষয় টা আরো
পরিষ্কার হবে । ধরুন চা একটি কমন বা সাধারন পানীয় আমাদের কাছে । এই চা এর গুনাগুন
সম্বন্ধে আমাদের যথেষ্ট ধারনা আছে। চা আমাদের কর্ম ক্লান্তি দূর করে শরীরে ও মনে
চাঙা ভাব আনয়ন করে ।আজ থেকে ০৫ হাজার বছর আগে মানুষ চা এর ব্যবহার জানতোনা ।তখন
এটা পাহাড়ী অঞ্চলের সাধারন গাছড়া বলে বিবেচিত হতো । কিংবদন্তী অনুসারে কোন এক
চৈনিক রাজা কিছুটা শ্রান্ত অবস্থাতে তার আঙিনাতে গোসলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন
সময় তার সেই গোসলের ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে গিয়ে পরলো চায়ের পাতা। পানির রঙ লাল হয়ে
ওঠাতে রাজা ঈষৎ কৌতূহলী হয়ে উঠলেন, কিছুটা
পান করলেন সেই পানি । কয়েক মুহূর্ত পরে উনার ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর চনমনে হয়ে উঠলো,
তখন থেকে শুরু হল চা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে পান।সার্বজনীন ভাবে চা এর ব্যবহার
আমাদের এই আধুনিক যুগের সার্বজনীনতা বা ঘরে ঘরে স্থান পেতে চলে গেছে অনেক অনেক বছর
।চা তে থাকে ক্যাফেইন নামক এক উপাদান, যেটা আমাদের আমাদের কে কর্ম উদ্দীপ্ত করে ,
ক্লান্তি দূর করে , আসলে কি তাই ? আসলে চা পান করার পর চা তে থাকা ক্যাফেইন আমাদের
মস্তিস্কে একটা ভুল সিগন্যাল দেয় , আর তা হলো আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্ক যখন কর্ম
ক্লান্ত হয়ে যায় তখন আমাদের মস্তিষ্ক দেহ এবং মনকে জানান দেয় যে আমাদের শক্তি শেষ
। খাবার গ্রহন বা বিশ্রাম ছাড়া আমরা শরীরে এবং মস্তিষ্কে শক্তি পাবনা । এই সময় যদি
চা পান করা হয় তবে চা একটা ভুল সিগন্যাল(শক্তি না থাকলেও শক্তি আছে) দিয়ে নার্ভ কে
সচেতন করে নতুন করে কর্ম স্পৃহা জাগে। তাহলে
চা কি একটা ড্রাগ নয়, চা ক্লান্তিনাশক গুন কে কি যাদুকরী বলা যায়না । যদি এটা সবাই
খেতে না পেতো । এবার আসি আরো কিছু ড্রাগ এঁর যাদুকরী অনুভূতি সম্বন্ধে কিছু বলতে, যে গুলোকে সোজা বাংলাতে আমরা নেশা বা ড্রাগ বলি। এই নেশা
জাতীয় জিনিষ গুলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষাতে সাইকোডেলিক ড্রাগ বলা হয় ।
(265)
আমরা যাকে সোজা বাংলাতে মাদক
দ্রব্য বলে চিনি ।মাদক দ্রব্য বা সাইকোডেলিক ড্রাগ আমাদের ভিতর একপ্রকার মানসিক
বিভ্রম সৃষ্টি করে ।আপনি সুস্থ ও সজ্ঞানে রয়েছেন , এমন সময় ধরুন সাইকোডেলিক ড্রাগ নিলেন , ড্রাগ গ্রহনের পর আপনি টেরই
পাবেন না যে আপনি কিভাবে এই জগত থেকে ভিন্ন কোন অনুভূতি বা রঙ এর জগতে পৌছে গেছেন
।এজন্য এবং এই ড্রাগ এর দুর্নিবার আকর্ষণ এবং অনুভূতির কারনেই একবার ড্রাগ এর
ফাঁদে পা দিলে আর ফিরে আসা সম্ভব হয়না । ধরুন যেমন এল,এস,ডি নামে একটা মাদক আপনাকে
বর্ণিল কোন জগত থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারে ।আপনার পরিচিত স্বাভাবিক জগত টি তখন
আপনি দেখবেন খুব কালারফুল একটা জগতে আপনি চলছেন। আপনি যে জগতে চলছেন সেটা যেন কোন
এক রঙ্গিন ও বর্ণময় শিল্পের জগত ।এছাড়া পিয়েতি বা মেস্কালিন এবং ডি এম টি বা
আয়াহুয়াস্কা হলো মনে আধ্যাত্মিক ভাব জাগ্রতকারী বা এমন একটা অনুভূতি দেবে যে আপনার
তৃতীয় নয়ন খুলে গেছে । আর এই তৃতীয় নয়ন হল সুফি , দরবেশ , মুনি ঋষিদের মতে আধ্যাত্মিক জগতের সাথে
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম । আমাদের দুটি চোখ এই দুইটি চোখ দিয়ে আমরা দৃশ্যমান
সবকিছু দেখতে পাই। কিন্তু এই চোখে আমরা দেখতে পাইনা সেই সব কিছু যা আমাদের দেখার
বাইরে, যেটা আধ্যাত্মিক জগত । সুফি-দরবেশ এবং মুনি-ঋষিদের মতে যদি আমাদের তৃতীয়
নয়ন জাগ্রত করা যায় তবে আমরা এসব আধ্যাত্মিক জিনিষ তথা অদৃশ্য জীন জাতি , কারো মুখ দেখে মনের খবর বলে দিতে
পারা, অনেক দুরের কোন কিছু হাজার মাইল দুর থেকে বসে দেখতে পাওয়া, কারো অতীত
বর্তমান ভবিষ্যত নিখুতভাবে বলতে পারা
সবকিছুই জাগ্রত তৃতীয় নয়নের কাজ ।আমাদের সাধারন মানুষেরা পার্থিব নানা কাজ এবং
মোহে ব্যস্ত থাকাতে আমাদের তৃতীয় যে একটা অন্তর্দৃষ্টি ভেদী চোখ আছে সেটা আমরা
ভুলে যাই, খালি চোখে যে আমরা যা দেখি সেগুলো হল আমাদের দুই জাগ্রত চর্ম চক্ষুর
নয়ন, এটা দিয়ে দৃশ্যমান সবকিছু , যা কিছু বাস্তব তা আমরা দেখতে পাই।
(266)
আর আমাদের তৃতীয় নয়নের
নমুনাটা আমরা কিছুটা পাই যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি। ঘুমের সময় আমরা চোখ বুজে ঘুমাই।
চোখ বুজে ঘুমালে আমাদের চর্ম চক্ষু দুটো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও আমরা কি
কিছু তখন দেখিনা । দেখি অবশ্যই তবে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে নয়, কেমন যেন ইতস্তত,
খাপছাড়া বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু দেখি ।ঘুমালে আমার দেহটা পড়ে থাকে বিছানাতে, কিন্তু
আমি বা আপনি কোথায় যেন চলে যাই। ঘুমের ভিতর আমার আর মনে থাকেনা কে আমি, থাকেনা
আমার সেই বাধাধরা গণ্ডি । আমি তখন মুক্ত ও
স্বাধীন, আমি তখন কখনও হয়ে যাই উড়বার ক্ষমতা সম্পন্ন এক মানুষ। কখনো দেখি আমি অচেনা
কোন স্বজন দের ভিতর মহা আদর যত্ন পরিবেষ্টিত হয়ে আছি, পরম যত্নে তারা খাওয়াচ্ছে,
কখনো বাল্যকালের ৩০ বৎসর আগে ফেলে আসা কোন স্কুলের বাল্যবন্ধু এসে হাজির হল সপ্নে,
কিরে সোহেল কেমন আছিস, বা দেখছি হুবহু সেই দিন এ ফিরে গেছি , ভুলেই গেছি ৩০ বৎসর
আগে সেই স্কুল ফেলে এসেছি, কখনো সপ্নে দেখি কেও আমাকে তাড়া করছে, অতঃপর মেরে ফেলছে,
কখনো অপরিচিত কোন নারীর সাথে সপ্নে ভ্রমন করছি, কথা হচ্ছ , সিনেমার থেকে বর্ণিল
কোন রোম্যান্টিক দৃশ্যের অবতারনা হচ্ছে। এগুলো
কি শুধুই সপ্ন নাকি এটাও সেই তৃতীয় নয়নের খেলা ।যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন আমদের দু চোখ
ঘুমিয়ে যায়। জেগে ওঠে আমাদের তৃতীয় নয়ন। কিন্তু আমরা যেহেতু সাধক নই ,সেহেতু আমাদের
তৃতীয় নয়ন নিয়ন্ত্রণ এ থাকেনা। নিওন্ত্রনহীন ভাবে ঘোড়া ফেরা করে। স্থান, সময়, কাল
কোনটার সীমারেখাতে সে বাঁধা থাকেনা। সুফি-দরবেশ,মুনিঋষিদের থেকে আমাদের পার্থক্য
এখানে। অধিকাংশ আধ্যাত্মিক মানুষদের জীবনী পড়লে আপ্নারা দেখবেন ওনারা নির্জনে
ধ্যানমগ্নই থাকতেন সবসময়।এবং ওনারা নানা রকম অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারীও ছিলেন।তাদের
সময় থেকে ৫০০ বছর পরের ভবিষ্যদ্বাণী তারা
করে গেছেন, যার অনেক কিছুই পরবর্তীতে ফলে গিয়েছে বা সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। ওনাদের
থেকে আমাদের পার্থক্য হল
(267)
আমরা যখন চোখ বুজি বা ঘুমাই
তখন আমাদের মন বা মস্তিষ্ক ও ঘুমিয়ে পড়ে ফলে আমরা যা দেখি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ
থাকেনা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্মরণ ও থাকেনা ঘুম থেকে ওঠার পর। কিন্তু ওনারা যখন চোখ
বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন হতেন তখন হুশ হারান না। চোখ বন্ধ থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কিন্তু
জাগ্রত অবস্থাতে অন্ধকার দেখেন তারা, আর আমরা চোখ বন্ধ করলে ঘুমিয়ে যায়। যা দেখি
তা ঘুমিয়ে দেখি, আর ওনারা চোখ বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে থাকেন, সচেতন মনে সব
দেখেন, বন্ধ চোখে অন্ধকার জগতের সব দেখেন, সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থাতে । চোখ বন্ধ করে
ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে এক নিবিষ্টে দৃশ্যমান জগতের সব কিছু ভুলে মস্তিষ্ক সচেতন
রেখে যাওয়ার নামই মেডিটেশন বা ধ্যান ।এর ফলে অজানা কোন কিছু দেখা বা পাওয়া বোধ করি
যেতে পারে। হয়তোবা মহা রহস্যময় মানব শরীরের কোন অজানা ক্ষমতা এর মাধ্যমে জাগ্রত হয়ে
যায় । থার্ড আই রেডিয়েশন এর পাওয়ার বোধ হয় এভাবে পায়। ইতিহাস বা ধর্মগ্রন্থগুলোর
মহামানবেরা সবাই কিন্তু এই ধ্যান দিনের পর দিন করতেন, কেন এটা তারা করতেন, এর
মাধ্যমে যদি কোন কিছু না মেলে, তবে কি শুধু রিলাক্সিং বা টেনশন মুক্ত থাকতে এটা
করতেন তারা ? তবে অবশ্যই তারা ধ্যান করতেন দীর্ঘদিনের ধৈর্য্য, একাগ্রতা, ও
অভ্যাসের মাধ্যমে, কোন সাইকোডেলিক ড্রাগ দিয়ে নয় । সাইকোডেলিক ড্রাগ ভ্রম তৈরি
করতে পারে, মেডিটেশনের অভ্যাস ও ক্ষমতা অর্জন করাতে পারেনা ।মানসিক ভ্রম এক জিনিস
আর মেডিটেশন সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেক জিনিস । আসলে কি আমরা দিন কে দিন কর্মব্যস্ত হতে
হতে আমাদের নিজের ভিতর লুক্কায়িত মানবক্ষমতার বা রহস্যের বিরাট একটা কিছু মিস করছি
না তো ? ত্রাটক , ব্ল্যাক ম্যাজিক , ভুডুইজম , জম্বি , তন্ত্র মন্ত্র
সত্যিই কি আছে বা ছিল কি এগুলোর অস্তিত্ব কখনো ?আসুন বেশ ক বছর আগে মানে ১৪ থেকে ১৫ বছর আগের কথা , একটি গল্প পড়েছিলাম
, গল্প নয় বলা চলে সত্য কাহিনি , আফ্রিকার
কোন এক দেশের কাহিনী ছিল এটা ।
(268)
জম্বি সম্বন্ধে আপনাদের ধারনা
আছে হয়তো অনেকের । জম্বি মানে ধরুন আমাদের সহজ বাংলাতে আপনি জানেন একজন মানুষ মারা
গেছে , হঠাৎ আপনি বেশ কিছুদিন পর দেখলেন সেই মানুষটি জীবিত অবস্থাতে কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে ।এটা এমন ভাবে হতে পারে যে
, বেশ খানিকটা দুরত্বের আপনি আপনার কোন বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছেন ।বেড়াতে গিয়ে আপনি
দেখলেন যে আপনাদের গ্রামে যে লোকটি মারা গিয়েছিলো সেই লোকটি এখানে মাঠে দিব্যি কাজ
করে যাচ্ছে ।আপনাকে দেখে তার কোন ভাববোধ হলোনা।সে তার মত আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে
।আপনি তো বেশ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে গেলেন । এই ভেবে যে কদিন আগে আনোয়ার কে মারা যেতে
দেখলাম , ওর জানাযাতে শরিক হলাম , দিব্যি হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ওকে দাফন করে
এলাম , এতদিন তো ওর পচে হাড় থেকে মাংশ আলাদা হয়ে যাবার কথা । দিব্যি শালা এখনো
ঘুরে বেড়াচ্ছে ৫০ মাইল দুরের এই গ্রামে এসে ।এটা কিভাবে সম্ভব !এরকম কিছু হলেই সেই
মৃত থেকে জীবিত অবস্থাতে ফিরে আসা লোকটিকে জম্বি বলা হয় ।এরকম কিছু হয়েছিল আফ্রিকান
সেই যুবকটির ক্ষেত্রে । যুবকটির তার ভাই এর সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল ।সেই
বিরোধের সুত্র ধরে ওই যুবকের ভাই বোকোর (বোকোর বলতে আফ্রিকান ভাষাতে তান্ত্রিক কে
বোঝানো হয়)এর কাছ থেকে বিষ নিয়ে আসে ।সেই বিষ খাবারের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয় ।ফলে
ওই যুবকটির মৃত্যু ঘটে ।অকালে যুবক বয়সে মারা যাবার কারনে তার পরিবারে শোকের ছায়া
নেমে আসে।এরপরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ ।ওই যুবকটি নিজেকে আবিষ্কার করে একদিন এক মেলাতে
।তারপর তার মনে পড়ে যায় মারা যাবার কথা , বাড়ীর কথা সবকিছু। কিন্তু এখানে কিভাবে
এলো বুঝে ওঠার আগে দেখে শ্বেত চামড়ার কয়েকজন লোক এসে তাদের কে একটা ফার্ম হাউসে নিয়ে
গেলো ।সেখানে তাদের কে অমানুষিক খাটা খাটুনি করান হতো আখের ক্ষেতে ।শরীরে কষ্ট
সহ্য না হওয়াতে সে সহ আর কয়েকজন পালিয়ে এলো ।
(269)
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে
এটা কিভাবে সম্ভব। এরকম গাঁজাখুরি গল্প না বললেই হতোনা ।কিন্তু মুল ঘটনাটা
বিজ্ঞানীদের মতে এমন যে , আফ্রিকাতে বনে জঙ্গলে এক বিশেষ প্রজাতির শসা পাওয়া যায়
।এই শসার দুই মাথাতে পাওয়া যায় এক বিশেষ প্রকারের বিষ ।আপনারা খেয়াল করে দেখবেন
আমরা যখন বাসাবাড়িতে বা কোথাও শসা খেলে শসার দুই মাথা কেটে ফেলা হয়। তারপর ছিলে
খাওয়া হয়।আফ্রিকান বিশেষ জাতের ওই শসাতে থাকে এক প্রকার সাংঘাতিক মারাত্মক বিষ।এই
বিষের বিশেষত্ব হল এটি মানুষের হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস এতটা ধীর করে দেয় এবং
অজ্ঞান করে দেয় যে আপাতদৃষ্টিতে খালি চোখে সেই মানুষটি কে মৃত ভেবে ভুল করে তার
আত্বীয় স্বজন এবং তাকে দাফন করে দেয় । এই বিষের ক্রিয়াতে মানুষটি বলতে গেলে খুব কম
অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।ফলে কবরের বন্দি যায়গাতেও তার শ্বাস প্রশ্বাস চালু
থাকে ।বিষের ক্রিয়া শেষ হবার আগেই লোকটিকে সেই যাদুকরের(বোকোর) দল লাশ উত্তোলন করে
নিয়ে আসে ।এতক্ষন কম অক্সিজেন এ বেঁচে থাকবার কারনে লোকটির মস্তিষ্কের উপর যে একটা
চাপ পড়ে, সে কারনে সে তার পূর্বের অনেক স্মৃতি হারিয়ে ফেলে ।বলতে গেলে স্মৃতি
শক্তি হারিয়ে ফেলে ।তখন ওই লোকটিকে দিয়ে দশজনের পরিশ্রম একা করানোর সাথে সাথে যে
কোন অপরাধ ও নির্দ্বিধায় করানো সম্ভব ।কিন্তু এই যাদু বিষ এর একটা দুর্বলতা আছে
।সেটা হলো আক্রান্ত বাক্তি যদি কখনো লবন খেয়ে ফেলে তবে তার উপর থেকে বিষ এর প্রভাব
কেটে যাবে । ওই যুবকটির ক্ষেত্রে হয়েছিল এমন কাজ।ওই যে কাজের ছুটির ফাকে মেলাতে
গিয়ে নোনতা বিস্কুট খেয়েছিল তারা কয়েকজন ।আর সেই বিস্কুট এর লবন তাদের কে বিষের
প্রভাব কাটিয়ে স্মৃতি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিল ।আপাতদৃষ্টিতে এটা যাদু মনে হলেও এটার
পিছনে কত বড় বিজ্ঞান কাজ করছে সেটা কি বুঝতে পেরেছেন ?।এগুলো প্রযুক্তি জিনিস টা
এমন যে মানব সমাজে প্রযুক্তি এই এখন আমরা যেমন দেখছি মানে এখন আমরা নিজেদের যেমন অতি
আধুনিক মনে করছি তেমন টা কিন্তু নয়। কি বিস্মিত হলেন তাইনা, পাগল ও বলতে পারেন
আমাকে।
(270)
কিন্তু একটা জিনিস ভাবুন তো
আপনার বাসাতে যদি ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়স্ক আপনার কোন মুরব্বী ব্যাক্তি বেঁচে থাকেন
তবে তার কাছ থেকে তার বোঝা শেখার শুরু থেকে এ পর্যন্ত আলোচনা করলে দেখা যাবে তিনি
কল্পনা করেননি এমন প্রযুক্তির সুবিধা এখন তিনি ভোগ করছেন । তিনি কি কখনো আজ থেকে
৭০ বছর আগে মোবাইল এর কথা ভেবেছেন ?কম্পিউটার এর কথা ভেবেছেন তিনি তখন ? আমরা ভাবি
যে আমাদের এই যুগের থেকে উন্নত কিছু
ছিলোনা তবে সেটা বলা ভুল হয়ে যায় ।আমি মনে
করি মানুষ যখন যেটার প্রয়োজন বোধ করেছে সেটাই আবিষ্কার করতে পেরেছে, সেই প্রয়োজনের
বিপরীতে কিছু না কিছু আবিষ্কার হয়ে তার প্রয়োজন মিটিয়েছে ।আবার যুগের সাথে সাথে সেই জিনিষটির যায়গাতে নতুন তার থেকে উন্নত
বা সমমানের কিছু জিনিস আবিষ্কার হয়ে পুরাতন জিনিসটির ব্যবহার বিলুপ্ত হয়ে পুরাতন জিনিসটির
স্থান হয় যাদুঘরে বা ইতিহাসের পাতাতে, বা কালের অতলে হারিয়ে যায় ।এই ধরুন চিঠি
বহনে ডাকঘর ছিলোনা যে যুগে, এখনকার মত ইন্টারনেট বা জিমেইল ছিলোনা তখন কি করে দ্রুত
যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্ভব হতো, দেখুন তখন কিন্তু কবুতরের মাধ্যমে দ্রুত চিঠি আদান
প্রদান করা হতো। কোথায় কোন বাড়িতে চিঠি পৌছে দিতে হবে তা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কবুতর ঠিকঠাক পৌছে দিতো ।এটা এখন আপনি কি ভাবতে
পারবেন ? সামান্য একটা কবুতর কে প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনি সুনির্দিষ্ট ঠিকানাতে চিঠি
বহনের কাজটি করাতে পারবেন ?এটাও কি এখনকার বিজ্ঞানের থেকে কম বিস্ময়ের ? ধরুন
একসময় বিনোদনের জন্য মানুষ উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা, যাত্রাপালা ইত্যাদির উপর নির্ভর ছিল ,
এক সময়ের রোমান গ্ল্যাডিয়েটর, নাচের গানের আসর, পুথি পাঠের আসর সবই ছিল সরাসরি পর্যায়ের বিনোদন ।কিন্তু এখন এই
গুলো নেই, কিন্তু দেখুন এর যায়গা নিয়ে নিয়েছে বর্তমানের টেলিভিশন প্রোগ্রাম গুলো,
যে গুলো পূর্ব থেকে শুটিং করা থাকে , যা
কিছু সব ক্যামেরা এর কল্যানে ।কিন্তু দেখুন বিজ্ঞান বর্তমানে যাত্রাপালা বাদ দিয়ে
টিভিতে সিনেমা দেখালেও বিনোদনের বেসিক কিন্তু পরিবর্তন হয়নি ।উন্মুক্ত নাচ গানের
পর্যায় থেকে এটা এখন টি ভি তে পৌছেছে ।
(271)
কিতু সেটা কিন্তু নাচ গান
বাদে অন্য কিছু হয়নি।প্রচারের মাধ্যম বদলেছে মাত্র ।যে গুলো আগের মানুষেরা
বিনোদনের জন্য তাদের দেশে স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজন করে দেখতো সেগুলো এখন টিভি ও
ইন্টারনেটের বদলে স্থানীয় পর্যায়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে
ছড়িয়ে পড়েছে ।খেয়াল না করলে একবার খেয়াল করে দেখুন বর্তমানে টি ভি ও ব্যাকডেটেড
হয়ে গেছে ।তার যায়গা ও দখল করে নিয়েছে ইন্টারনেট ।এভাবে মাধ্যম বদলায় মাত্র
।কিন্তু বিনোদনের ধারা , ধরন ও মাধ্যম একই আছে । কথাটা সেই রকম হাকিম নড়ে কিন্তু
হুকুম নড়েনা ।আবার দেখুন মানুষের হিংস্র যত প্রবৃত্তি তা কিন্তু বদলায়নি একদমই ।এক
সময় মানুষ যুদ্ধ বিগ্রহ করেছে , ইতিহাস সাক্ষী দেয় আজ থেকে ০৫ হাজার বছর আগেও মানুষ
যুদ্ধ বিগ্রহ করেছে নানা কারনে। তখন তো মানুষের অফুরন্ত সবকিছু ছিল । তারপরেও
মানুষ যুদ্ধ করেছে ।জনসংখ্যা ও তো কম ছিল আজকের থেকে শতগুণ ।খুন ,নারী- নির্যাতন,
ধর্ষণ , ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক , সব কিছু আজ থেকে
হাজার থেকে শত শত বছর আগেও ছিল, এখনো ভিন্ন ভিন্ন রুপে বিরাজমান । পার্থক্য
একটাই আগে শিক্ষার হার কম ছিল। এখন ঘরে ঘরে সার্টিফিকেটধারী মানুষ ।কিন্তু আদিম
মানুষ আর এখনকার অতি আধুনিক মানুষের ভিতর নিষ্ঠুরতাতে কোন পার্থক্য
দেখছিনা।পত্রিকা ও টেলিভিশন, ফেসবুক
খুললেই দেশে বিদেশে শয়ে শয়ে মানুষ খুন, হত্যা, যুদ্ধ বিগ্রহ ধর্ষণ, বিকৃত
যৌনাচার এর যত সব খবর শোনা যায় । তাহলে আদিম, মধ্যযুগীয় মানুষ দের সাথে আমাদের
পার্থক্য টা হল তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সার্টিফিকেট বিহীন বর্বর ছিল।আর
এখনকার অপরাধীরা সার্টিফিকেট ধারী শিক্ষিত,সজ্ঞানে করা জ্ঞানী অপরাধী। তাহলে দেখুন
যুগ-কাল বদলেছে কিন্তু অপরাধ তার ধরন বদলে ভিন্ন রুপে অতি মাত্রাতে ভিন্ন মাত্রাতে
বিরাজমান ।সব কিছুতে দেখুন পৃথিবীর শুরু থেকে ধারা ঠিক থেকে যাচ্ছে। একটা জিনিস
লক্ষ করুন পৃথিবীতে রোগব্যাধির ব্যাপারটা খেয়াল করলে আপনার কাছে ব্যাপারটা আর
পরিষ্কার হবে।
(272)
যুগে যুগে মানুষের কাছে
দুরারোগ্য রোগ এসেছে ।সেটা মানুষকে দু দশ বছর থেকে দু পাঁচশো বছর ও ভোগাচ্ছে ।আবার
সেটার প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে না করতেই আরেকটা দুরারোগ্য রোগ চলে আসছে ।ধরুন আগের
যুগে জ্বর, ডায়রিয়া, যক্ষা, বসন্ত এসব সামান্য রোগে গ্রামের পর গ্রাম শত শত মানুষ
মারা গেছে ।অনেক গ্রাম পুরো মানুষ শূন্য হয়ে গেছে এই রোগে ভুগে ।কিন্তু এখন এগুলোর
ঔষধ আবিষ্কার হয়ে এগুলো কোন রোগের ভিতর পড়েনা ।এই রোগ গুলোতে এখন সেই মরবে যে
ইচ্ছা করে ঔষধ খাবেনা ।কিন্তু দেখুন এই মহামারী গুলো নির্মূল হতে না হতেই কান্সার ও এইচ,আই,ভি এইডস মহামারী ধারন করেছে
। এগুলো হলে সাক্ষাৎ মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় নেই ।ঔষধ পত্র বা চিকিৎসা যেটুকু আছে
সেটুকু দিয়ে হয়তো কদিন বেশি পৃথিবীর আলো
বাতাস ভোগ করা যায় মাত্র ।আবার কয়েকদিন আগে শুনলাম শাবিপ্রবি এর একদল গবেষক
নন লিনিয়ার অপটিকস নামে একটা পদ্ধতিতে ১০ মিনিটে ক্যান্সার হবার বেশ কবার বছর আগে
থেকে আপনাকে সাবধান এবং সুস্থতার নিসচয়তা দেওয়া যাবে ।এটা কিন্তু বাংলাদেশী
বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব । ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে মানবজাতি এগিয়ে গেলো বিরাট একটা পথ
।কারন ক্যান্সার ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে গিয়ে যখন আর কিছু করার থাকেনা , শাবিপ্রবি এর
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমিন হক এর মতে এটা ক্যান্সার বিপদজনক হবার অনেক
আগেই সনাক্ত করে ফেলবে। ফলে ক্যান্সার আর প্রাণঘাতী
রোগ হিসেবে থাকবেনা, যদি আপনি সচেতন হন । অতএব শেষ কথা দাড়াচ্ছে যে পৃথিবীর ধারা ঠিক থেকে যাচ্ছে ।আগে যেমন
ঔষধে সারেনা এমন রোগ ছিল , তেমনি আপনি আজ
এত উন্নত তবু আজ ঔষধে সারেনা এমন রোগ আছে, আবার আজকের অপ্রতিরোধ্য রোগ গুলোর ঔষধ
আবিষ্কার হতে হতে নতুন অপ্রতিরোধ্য রোগ এসে যাবে । আপনি যত গনতন্ত্র
, সমাজতন্ত্র , রাজতন্ত্র যাই বানাননা কেন ধনী-গরীব-শোষক শ্রেণী , বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে ।
(273)
কেউ খেয়ে ফুরাতে পারছেনা
আর কেউ ডাস্টবিন খুজে খাবার পাচ্ছেনা এটা যেমন আজ থেকে হাজার বছর আগেও ছিল এখনো
তেমন আছে । বিজ্ঞান ও ঠিক তাই, যুগের সাথে সাথে বিজ্ঞান ভিন্ন রুপে আদি থেকে ছিল[[{(বিশ্বাস
করুন আর নাই করুন আদি যুগেও বিজ্ঞান ভাল ভাবেই ছিল, তার উদাহরন গুলো বিভিন্ন গ্রীক উপকথা, মিসরীয় ইতিহাস,
ভারতীয় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ,পারসিক, রোমান , আমরা যারা মুসলিম ধর্মের আছি তাদের কাছে
তো এই আদি যুগের বিজ্ঞান আরো পরিষ্কার ভাবে আছে। কিভাবে যদি বলি, তাহলে দেখুন,
আমাদের নবী (সাঃ)এসেছিলেন আজ থেকে ১৪৪৮ বছর আগে – যদি ৫৭০
থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধরি ।নবীর জন্ম গ্রহনের সময়ের যত মুজিযা, নবীর পার্থিব
জীবনের যত ঘটনা , যত গুলো যুদ্ধ , নবীর রেখে
যাওয়া ঐশী মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, হাদিস গ্রন্থ , নবীর জীবনী , ০১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী
মতান্তরে ০২ লক্ষ ২৪ হাজার নবীর ভিতর যে ২০-২৫ জন নবীর জীবনী সম্বন্ধে সামান্য
কিছু তথ্য পাওয়া যায় এবং সেই তথ্য মতে তাঁদের সময়ের জনপদ, বাজার, জীবনযাত্রা
সম্বন্ধে যা পড়বেন বা যেটুকু জানবেন তাতে করে দেখবেন সভ্যতা তখনো বেশ ভাল ভাবেই
ছিল ।এগুলো আপনি যদি ভাবেন নুহ আঃ এর মহাপ্লাবন, ঈসা আঃ মুজিযা, হুদ আঃ এর সময়ের
ইরাম শহর ও আদ জাতি, লুত আঃ এর সময়ের লোহিত সাগর সৃষ্টি যা এখনো বিদ্যমান
,সুলাইমান আঃ এর পশুপাখির ভাষা বোঝবার ক্ষমতা, জ্বীন জাতি বশীভূত করার ক্ষমতা,
উড়ন্ত গালিচা, এরকম অনেক উদাহরন দেওয়া যাবে ।আচ্ছা আপনারা সেটা না হয় বিশ্বাস না
করতে পারেন কিন্তু যদি বলি এই যে যাদুকর যারা ছিলেন তারা তো আর আল্লাহর মুজিযা
প্রাপ্ত নয়, তারা কি করে বিভিন্ন ক্ষমতার কাজ
করতো, সেটাই গবেষনার বিষয়।কোন গুপ্ত বিজ্ঞানি ছিল কি তারা, কোন গুপ্ত
বিজ্ঞান সংঘের সদস্য ছিল কি তারা, তারা যে বিজ্ঞান চর্চা করতো সেটা সাধারন এর জন্য
উন্মুক্ত করতোনা এটা হতে পারেনা ?। যাদু বলে সত্যি কিছু হয় সেটার ভুরি ভুরি উদাহরণ
দেওয়া যাবে। নবী সাঃ এর লাবিদ নামক ইয়াহুদির যাদু সহ নানা রকম কিছু উদাহরণ দেওয়া
যায়।
(274)
বর্তমানের ডাইনামো যাদুকর এর
যাদুগুলো বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য বটে। সবাই বলেন তিনি পেশাদার যাদুকর, সবই হাত
সাফাই, অনেকদিনের প্র্যাকটিস এর কৌশল , কতকিছু বলবেন। কিন্তু ওনার যাদু দেখে আপনি
নিজেই বিস্মিত হয়ে যাবেন ।আচ্ছা একটু বলি ডাইনামো টেমস নদীর পানির উপর দিয়ে হেটে যান, নিন্দুকেরা
বলেন কোন অদৃশ্য কাচের উপর দিয়ে তিনি হেটে যান, এবং সেই কাচের প্রস্তুত প্রনালি
তিনিই হয়তো জানেন, হা এবার আসল কথাতে আসুন, অদৃশ্য কাচের মাধ্যমে হাটেন বলে সেটা
অলৌকিক হতে পারেনা, সেটা কে বলা যেতে পারে ম্যাজিক ।এটা যে জাস্ট আনন্দদায়ক
ম্যাজিক মনে করে সে আসলে একটা সেই লেভেলের বোকা , সেই লেভেলের গর্দভ ।আরে বোকা যেটা কিভাবে হয় জানিনা সেই রহস্যময়
ব্যাপারটায় হল যাদু , টার মানে এই নয় যে
আধুনিক কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি কেউ আশ্চর্যজনক কিছু করে দেখাই তবে সেটা
যাদু নয়, সেটা ঠুনকো , এরকম ভাবা বোকামির পরিচয়। আপনার বাড়িতে ভাজাপোড়া বানানোর
জন্য যে বেকিং পাউডার রয়েছে তার আর কয়টা ব্যবহার জানেন, সেটা যে মুখের দাগ
ওঠাতে পারে জানেন কি ? আপনি যে কাগুজি বা
সরবত খাবার জন্য লেবু খান সেটার আর কি কাজ আছে জানেন ? ওই লেবু চুলে কন্ডিশনার এর
বিকল্প হিসেবে ,ছুলি সারাতে, মুখের দাগ ওঠাতে, মশা তাড়াতে এবং কালো যাদুর
শাস্ত্রমতে যে ঘরে লেবু থাকে সে ঘরে জ্বীন জাতির প্রবেশ বাধাপ্রাপ্ত হয় ।এখন আপনি
যদি লেবুর সরবত খাওয়া ছাড়া আর এই ব্যবহার না জানেন আর বাকি ব্যাবহার গুলো
গাঁজাখুরি বা ম্যাজিক বলেন সে দোষ তো আর যাদুকরের নয় ।মোবাইল বানানোর ব্যাপারটা
ব্যাপক এক অলৌকিক আর জাদুকরী ব্যাপার এবং সেটা যে বিজ্ঞানি আবিষ্কার করেছেন এবং
তিনি যদি এটা সাধারন জনগণের ব্যাবহার এর জন্য উন্মুক্ত করে না দিয়ে এটা যদি কোন এক
বিশেষ তান্ত্রিক শ্রেণী বা কোন এক শাসক
শ্রেণীর হাতে দিয়ে যেতেন বা বিজ্ঞান
গবেষণা , বা বিজ্ঞান শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত না থাকতো তবে আজকে আমরা থাকতাম
গো-মূর্খ।
(275)
আর হয়তো এসব প্রযুক্তি
ব্যাবহার করে এক শ্রেণীর লোক আজকের ভিডিও কলিং টা যাদুর আয়নাতে দুরের মানুষ দেখার
মন্ত্র বলে চালিয়ে দিতো।আজকে যে রকমটা বলছি পৃথিবীটা চলছে সেই রকম। আজ আমরা আধুনিক
যুগে বিস্ময়কর যত প্রযুক্তি ব্যাবহার করছি তার মত বা তার থেকে অনেক উন্নত
প্রযুক্তি , উন্নত পদ্ধতি অতীতে অনেক গোষ্ঠীর হাতে ছিল, সেটা হারিয়েও গেছে নিজের
ক্ষমতার কথা অমরত্তের পাতাতে স্থান দিতে পরবর্তীতে কারো কাছে সেই বিজ্ঞান কার কাছে
না দেওয়া এর কারন হতে পারে ।আবার এক যুগে যে কোন একটা ক্ষমতাধর শক্তি আবিষ্কার হল,
সেটা ব্যবহার করে সে যুগের মানুষ উন্নত হয়। কখনো দেখা যায় সেটা তার কার্যকরিতা
হারায়, বা যে কোন সময় যদি সেই শক্তি তার আন্তঃ গঠন ও কার্যকরিতা হারায় তবে সেই
যুগের সেই বিজ্ঞান হারিয়ে যেতে পারে। বইয়ের কোন এক যায়গাতে তাড়িৎ চৌ্বক তরঙ্গ ও
চৌম্বক ক্ষেত্রের কথা বলেছিলাম । বর্তমান যুগে আমাদের চালিকা শক্তি হলো বিদ্যুৎ।
এই বিদ্যুৎ শক্তি তার শক্তি হারাতে পারে ,
তাড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ অথবা চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে। যদি কখনো পৃথিবীর এই চৌ্বক
ক্ষেত্রের বড় আকারে গরমিল হয় তবে আমাদের বিদ্যুৎ শক্তি কার্যকরীতা হারাবে আর
আমাদের নতুন শক্তি আবিষ্কার করতে হতে পারে। আর বিদ্যুৎ অকেয হলে কি হতে পারে সে
চিত্র আমার বর্ণনা করতে হবেনা নিশ্চয়। তো যেকোন একটা শক্তির প্রভাবেও পানি
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নামক দুটো গ্যাস হয়েও একসাথে মিশে আছে , যদি কখনো এই
প্রভাবক শক্তি বাতিল হয়ে যায় তবে পানি( H2O) ভেঙে দুটো আলাদা গ্যাস হয়ে যায় সেটা না ভেবে পানি না থাকলে কি হতে পারে
ভাবুনতো। আমরা তো পানি কি দিয়ে গঠিত সেটা আবিষ্কার করেছি, কিন্তু এটা কি ভেবেছি যে
কেন বা কোন শক্তির প্রভাবে দুটো গ্যাস হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এক হয়ে থাকছে ও পানি
রূপে আমাদের কাছে সস্তা হয়ে আছে?, যেখানে অক্সিজেন আলাদা পাওয়া যায় প্রকৃতিতে,
আমরা কি গ্যারান্টি দিতে পারি যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন কোনদিন একে অপরের থেকে
আলাদা হবেনা|
(276)
-বিদ্যুৎ কখনো তার কার্যকরীতা হারাবেনা ?।
হয়তো এজন্য পৃথিবীতে তন্ত্র মন্ত্র গুপ্তবিদ্যা টিকে আছে। কিন্তু তাদের অদৃশ্য
প্রভাবক এর অনুপস্থিতি বা পরিবর্তন এর কারণে এগুলো আর কাজ করেনা বা লুপ্ত হয়ে গেছে
এখন । আবার বর্তমানে আমরা যত প্রযুক্তি ব্যাবহার করছি তার থেকে অনেক ভালো
প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের বিশেষ কোন শ্রেণীর হাতে থাকতে পারে ।যেটার ব্যাবহার শুধু
তারা ছাড়া কেও জানেনা ।আমি আপনি সাধারন জনগণ ।আজকে যত প্রযুক্তি আমরা ব্যাবহার
করছি সারা পৃথিবীতে সেগুলো বিজ্ঞানিরা না দিলে আজকে আমাদের কার সাধ্য ছিল আমাদের
নাগালের মদ্ধে থাকা অতি অসাধারন এই সব যন্ত্রপাতি গুলো ব্যাবহার করার ক্ষমতা ।কয়েক
বছর আগে একটা পত্রিকাতে পড়েছিলাম জাপানি বিজ্ঞানীরা এমন
একটা পদার্থ আবিষ্কার করেছেন যেটার প্রলেপ কোন পদার্থের উপর দিলে যেটুকুর
উপর প্রলেপ দেওয়া থাকবে সেটা আর দেখা যাবেনা । যা ব্যাবহার করছি না জানি তার থেকে
আর কত কিছু মানুষের থেকে গোপন বা গুপ্ত আছে কে জানে । ইলমুনাতি , সম্রাট
অশোকের দি নাইন এগুলো যদি সত্যিই থেকে থাকে তবে আপনি আমি ভাবতেই পারবনা যে কত
ক্ষমতাবান জিনিস আমাদের হাতে নেই ,আমরা আধুনিক যে সব প্রযুক্তি ব্যাবহার করে
গর্বিত সেটা গুপ্ত ওই বিজ্ঞান এর তুলনাতে কিছু নয় । কারন সাধারনের হাতে দেওয়া জিনিস যদি এত
পাওয়ারফুল হয় তবে গোপন যেটা করে রাখা আছে সেটা প্রকাশ্য ক্ষমতাবান ডিভাইস এর থেকে
অনেক ক্ষমতাবান এবং বিপদজনক এতে সন্দেহ নেই । আচ্ছা মঙ্গোলরা যখন বাগদাদ আক্রমন
করে বাইতুল হিকমা ধংশ করে সেখানকার হাজার হাজার প্রাচীন বিজ্ঞান গ্রন্থ ধংশ
করে সেই বই গুলো থাকলে মানব সভ্যতা অনেক
উন্নত হতো সন্দেহ নেই ।কি ছিল সেই সব বইয়ে এটা কি আমরা জানি ? এমন হতে পারে তখনকার
মানুষের বিলাশ জীবনের জন্য এত যন্ত্রের দরকার হয়নি , আমরা এখন যে বিজ্ঞান এর উপর
দাড়িয়ে আছি সেটা কিন্তু বিভিন্ন কেমিক্যাল , ধাতু উপর নির্ভর এবং বিদ্যুৎ শক্তি এর
চালিকা শক্তি ।
(277)
কিন্তু যদি তখনকার কিছু গোষ্ঠীর মানুষ ধ্বনি বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের অন্য কোন শাখা আয়ত্ত্ব করে কাজ চালিয়ে নিত তাহলে কি এখনকার মত
ধাতু-রসায়ন-বিদ্যুৎ নির্ভরতার দরকার আছে উন্নত জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ?ধ্বনি বিজ্ঞান,
টেলিপ্যাথি , মেস্মেরিজম , হিপনোটিজম ,রেইকি ,আকুপাংচার ,জ্যোতিষবিদ্যা,
তন্ত্র-মন্ত্র এগুলো কি তখনকার বিজ্ঞান নয়
।এগুলো হারিয়ে যাওয়া বিজ্ঞান। আপনি এখন অবশ্যই ভাবছেন যে এবার এই বই পড়া বাদ দেওয়া যাক । উদ্দেশ্য
আপনি বুঝতে পেরেছেন । আপনি হয়তো বুঝেছেন আমি যত ভণ্ডামি এবং কুসংস্কারের পক্ষে
।এবং মানুষ কে জ্যোতিষ এর কাছে টানছি আমি, জ্যোতিষ বিদ্যা এবং ভণ্ড সাধুদের কাছে
নিয়ে যেতে আসছি আমি আপনাদের। তবে বলছি আপনাদেরকে দাঁড়ান এখনো কথা আছে , এখন যত
সাধু বাবা, পীর বাবা, জ্যোতিষ বাবা, আছেন এনাদের কাছে এসব বিদ্যা নামে মাত্র টিকে
আছে । এগুলো মোটামুটি আজ থেকে অন্তত পক্ষে ২০০-৩০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন
আপনি বাবা, তান্ত্রিক , সাধু যাকে বিশ্বাস করবেন নিজ দায়িত্বে করবেন।এর জন্য আমি
লেখক দায়ী নই। আপনার যে কোন সমস্যা তে
ডাক্তার আছেন , সাইকোলজিস্ট আছেন সেখানে যান এটা আমি বলতে পারি ।বর্তমানে এনারা
খাটি। আমি যা বলছি সেটা কোন একটা সময়ের কথা বলছি।ধরুন প্রশ্ন জাগতে পারে
তন্ত্র-মন্ত্র বলে কি কিছু আছে ।তন্ত্র মন্ত্র কি ? তন্ত্র মন্ত্র হল এমন কিছু কথা
বা ছন্দের সমষ্টি যার মাধ্যমে যে ছন্দ-শব্দ-বা ধ্বনি সমস্টির মাধ্যমে কোন কিছু
হাতের স্পরশ ছাড়া কোন যুক্তি ছাড়াই সম্পন্ন করা , কোন অসাধ্য কাজ সাধন করা যায় ,
দূর থেকে কে কি করছে সেটা জানা যায় , মানে মুখে মুখে কোন কাজ কে উদ্দেশ্য করে কিছু পড়লাম আর হয়ে গেলো সেই কাজ ।মানে কেউ
সারাদিন খেটে ১০ কেজি মিষ্টি বানালো আর আপনার কাছে মন্ত্রশক্তি আছে , আপনি একটা ০৪
থেকে ০৫ লাইনের ‘’আয় মিষ্টি ঝেপে ,পারবনা ধান দিতে টাইপের
একটা মন্ত্র পরলেন ঠ্যাং এর উপর ঠ্যাং তুলে বিছানাতে চিত কাত হয়ে , আর ওমনি সামনে
হাজির হয়ে গেলো পানতোয়া , সন্দেশ ,রসগোল্লা ,ছানার জিলাপি ইত্যাদি ইত্যাদি ।
(278)
অলস আর জ্ঞান এর গভীরতা বিহীন মানুষের কাছে মন্ত্র বলতে শুধু এটুকুই । কিন্তু
সত্যি যদি মন্ত্র বলে কিছু থেকে থাকে তবে সেটা হতে হবে গবেষনার মাধ্যমে আবিষ্কৃত
এক ধ্বনিবিজ্ঞান।তন্ত্র-মন্ত্র-কালযাদু-জ্যোতিষ বলে যদি কিছু থাকতে হয় আর যদি তা
দিয়ে কোন কাজ প্রকৃত অর্থে হতে হয় তবে সেটা হতে হবে অবশ্যই বিজ্ঞান ও গবেষণালব্ধ
বিষয় এবং এই মন্ত্র যারা প্রয়োগ করবে তাঁদের
বেশভূষা ধুতি হোক আর কোর্ট প্যান্ট যাই পরিহিত থাকুক না কেন , চুল সিল্কি হোক আর
জটা হোক মাথাতে ব্যাপক মাল থাকতে হবে , বিদ্যা ,ঘিলু বা মগজ থাকতে হবে ।অন্তত
কলেজের বিজ্ঞানের প্রোফেসর লেভেলের বিদ্যা থাকতে হবে ।চিকিৎসার নামে নারী
নির্যাতনকারী সাধু গোছের কিছু হলে বা হাত দেখার নাম করে ২০ হাজার টাকার পাথর বেচে
নিজের ০৫ তলা বাড়ি গড়া জ্যোতিষ হলে ও হবেনা ।শুধু শুধু তন্ত্র মন্ত্রের দোষ দিয়ে
দিয়ে লাভ নেই ।বর্তমানে বহুকাল পুর্বে আবিষ্কৃত হারবাল বা ইউনানি গাছ এর মাধ্যমে
আবিষ্কৃত ঔষধের গুন বলে হারবাল চিকিৎসা এই আধুনিক আলোপ্যাথির যুগে টিকে আছে তেমনি, তন্ত্র-মন্ত্র –জ্যোতিষ এককালে ছিল ।বাই জেনারেশন সঠিক ভাবে উত্তরসূরিদের হাতে অর্পণ না
করার কারনে এবং বিকল্প সহজ অন্য কোন পথ আবিষ্কার হবার কারনে সেটা তার কার্যকরীতা
হারাতে হারাতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তন্ত্র-মন্ত্র নামক ধ্বনি বিজ্ঞানের বিস্ময়কর একটা
শাখা। ধরুন আপনি স্কুলে যাবেন,সেটা একসময় মানুষ ১০ কিলোমিটার হেটেও গেছে, কিন্তু এ
যুগের আমরা যারা আছি তাদের কাছে এটা বলা চলে অসম্ভব।তাই বলে পারা যাবেনা বলা
যাবেনা ।একজন দৌড়বিদ এর দৌড়ের গতি ঘণ্টাতে ১০০ কিমি. ।আপনি আমি দৌড়ালে সেটা আসবে
ঘণ্টাতে হয়তো ১০ কিলোমিটার ।তাহলে দৌড়বিদ কি যাদু জানে ? তাকে যে অতিমানবীয়
ক্ষমতার দেখছেন তার পিছনে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অনুশীলন ও খাদ্য নামক মন্ত্র কাজ
করেছে ।ধ্বনি বিজ্ঞানের উদাহরণ দিয়ে দিই কিছু ।তাহলে পরিষ্কার বুঝবেন তন্ত্র
মন্ত্র বলে কিছু আছে কিনা বা ছিল কিনা বা ভবিষ্যতে হতে পারে কিনা । ধরুন আপনি পথ
দিয়ে হেটে যাচ্ছেন ।
(279)
আপনার পিছনের থেকে আপনার নাম ধরে কেউ আপনাকে ডাকলো ।আপনার বা একজনের নাম আসিফ
।আসিফ বলে ডাকলো বলেই আপনি বা সে হয়তো পিছন ফিরে তাকালেন ।এখানে আপনার নাম আসিফ
ধ্বনির বা শব্দ বিজ্ঞানের উদাহরণ ।অন্য কোন নামে ডাকলে সাধারণত আপনার ফিরে তাকানোর
কথা নয় ।কেন নয় , সেটার কারন হল এটা এমন একটা শব্দ যেটা আপনার খুব পরিচিত যেটা
আপনি আপনার নিজের ভাষাতে শুনে শুনে পরিচিত ,আপনার ভাষা যাই হোক না কেন । হতে পারে
সেটা পৃথিবীর যে কোন ভাষা , হতে পারে ভিনগ্রহের অজানা কোন ভাষা , হতে পারে সেটা
এখনো আমাদের অনাবিষ্কৃত , অদৃশ্য কোন
জগতের ভাষা ।সাড়া দেবার শর্ত হিসেবে আপনাকে বা ওই বাক্তিকে হতে হবে উপরোক্ত যে কোন
জগতের সদস্য ।ধরুন আপনার বাসাতে একটা বিড়াল আছে তাকে মিনি বলে ডাকেন , মিনি বললেই
সে চট করে আপনার কাছে হাজির হয়ে যায় , সে যদি কয়েকশ হাত দুরেও থাকে , আপনার উঠানে
যদি চাউল বা খাবার হাতে করে আয় আয় তিতি বলে ডাক দেন তাহলে দেখবেন হাস বা মুরগী
গুলো এমনিতে ছুটে চলে আসে ।তাহলে আমরা মানুষ হয়ে এদের কে ডাক দিলে এরা আমাদের ভাষা
বুঝে কি করে ।এরা তো অবলা জীব ।আপনার কুকুর টা কে যদি টমি বলে ডাক দেন তবে সে ছুটে
চলে আসে ।আপনার দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়াতে থাকে ।অনেক সময় নানা রকম কসরত করে দেখায় ।
আপনার বাড়ির গরুটা , আপনার বাড়ির মুরগীটা সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে কিভাবে বাসা চিনে
ঘরে ফেরে । আপনার কবুতর গুলো অনেক দূরে ঝাঁক ধরে খাবারের জন্য উড়ে চলে যায় । আবার
২০-৫০ মাইল দূর থেকে খাবার খেয়ে আবার ফিরে আসে আপনার বাসাতে । আচ্ছা এই কবুতর বা
যে কোন গৃহপালিত পশু এরা কিভাবে শত মাইল দূর থেকে আপনার বাসাতে আপনার বানান তাদের
বাসাতে চলে আসে তা কখনো ভেবেছেন কি ।তারা তো পারে অন্য কোথাও চলে যেতে , কারন একটা
সময় তো তারা সবাই আপনার বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বা আপনার আওতা থেকে মুক্ত হয়ে যায় ।
(280)
আর ফিরে না আসলে তো পারে । মুক্ত ভাবে বনে জঙ্গলে ফিরে গিয়ে
মুক্ত জীবনযাপন করতে তো পারে ।কিন্তু কেন ফেরে তারা ।হতে পারে ওদের ওই ছোট মাথাতে
ও অনেক কিছু ধরে , ওদের চোখ গুলো ভিন্ন গঠনের কারনে অনেক অদৃশ্য রঙ বা বর্ণ ধরে
।অনেক কিছু দেখে , আমাদের শ্রাব্যতার সীমার বাইরের অনেক কিছু শোনে। আপনি তো সেভাবে
খেয়াল করেন না যে সকাল বেলা ছেড়ে দেওয়া পশু পাখি গুলো কোথায় গেলো ।কিন্তু দেখবেন
সন্ধ্যা হতে না হতেই তারা আপনার বাড়ির ভিতর হাজির ।তো এগুলো কি কারনে হয় এত কিছু
কি আমরা কখনো ভেবে দেখি ? ধরুন আপনি আপনার পোষা টিয়ার সামনে কিছু বললেন , সে
ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় এটা সে শিখে বা মুখস্ত করে ফেলে । অনেক প্রাণী হতে
পারে মানুষের থেকে বেশি ক্ষমতাশালী চোখ ও মস্তিস্কের অধিকারী ।আচ্ছা একটা জিনিস
চিন্তা করুন আকৃতিতে বড় হলেই সেটা বেশি ক্ষমতাশালী বা বেস্ট হবে এটা কিভাবে বলা
যেতে পারে ।আগের যুগের ৫০০ টা ফিতা ক্যাসেট এ যে পরিমাণ গান রাখা যেতো তার থেকে
অনেক বেশি পরিমাণ গান একটা ০৮ গিগাবাইট এর মেমোরি কার্ড এ কি রাখা যায় না ? আজকের
যুগে একটা মেমোরি কার্ড কতটুকু , ধরুন আপনার গায়ের জামার বোতামের দ্বিগুণ সাইজ
মাত্র । এত টুকু আয়তনের একটা মেমোরি কার্ড এ
আগামীতে যে পরিমাণ তথ্য উপাত্ত রাখা যাবে তাতে করে বর্তমানের বেশ বড় সাইজ
এর মানে একেকটি ইটের মত সাইজ এর হার্ড ডিস্ক অদূর ভবিষ্যতে যাদুঘর এ স্থান নেবে
এটা বলে রাখা যায় ।তো আকারে বড় হলেই যে ক্ষমতা বেশি কিছু হয় এটা বলা যাবেনা ।০৫ মণ
ওজনের একটা পাথরের থেকে নিশ্চয় আমলকী বা বট ফলের সাইজের একটা স্বর্ণের খণ্ড , বা
একটা হীরক টুকরার দাম কয়েকশো গুন বেশি সেটা নিশ্চয় বলে দেওয়া লাগবেনা ।মানুষ ছাড়া
অন্যান্য প্রাণীর মস্তিষ্কে বুদ্ধি বেশি থাকতে পারে , অসম্ভব কিছু নয় । কিন্তু
মানুষ অন্যান্য সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে শুধু মানুষের হাত পা এবং
মেরুদণ্ডের ঈশ্বর প্রদত্ত গঠনের কারনে ।
(281)
মানে মানুষ নামক প্রাণীটি তার মাথাতে যা আসে সেটা ইচ্ছা মত প্রয়োগ করতে পারে
যে কোন কাজে বা মানে তার হাত পা এমন গঠনের যে সে ইচ্ছা করলে একটা জিনিস ধরা বা
ছেড়া , কাটা সব কিছুর উপযুক্ত । মানে আমাদের হাত পা ও শরীর গড গিফটেড ভাবেই
বহুমুখী কাজে ব্যাবহারের উপযোগী ।এবং মানুষের মস্তিষ্ক যদি ১০০ রকম কাজের ইচ্ছা
করে তার হাত দিয়ে দেখা যায় অন্তত সে ৯৫ % কাজে তার হাত কে ব্যাবহার করতে পারে
।কিন্তু একটা পশু বা পাখির কর্মকাণ্ডের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে পশু পাখি
ভেদে সে তার হাত বা পা কে হাতে গোনা কয়েকটা কাজে ব্যাবহার করতে পারছে । ধরুন একটা ছাগলের
বা খরগোশের মাথাতে মানুষের চেয়ে উন্নত যত বুদ্ধি থাকুক না কেন সে ইচ্ছা করলেই
মানুষের মত গাছের ডাল ধরে ঝুলতে পারবেনা ।ইচ্ছা করলে গাড়ীর স্টিয়ারিং ধরতে পারবেনা
, কারন ওদের হাতে কোন কিছু আকড়ে ধরবার ক্ষমতা নেই ।ইচ্ছা করলে আমার আপনার মত কলম
ধরতে পারবেনা , ইচ্ছা করলেই ক্রিকেট বল নিয়ে দৌড়ে এসে বল করতে পারবেনা ।কারন হল
তাদের হাত পা মেরুদণ্ড গুলোর গঠনের কারনে ইচ্ছা করলেও এক ধরনের বেশি দুই ধরনের কাজ
করতে পারছেনা ।কিন্তু মানুষের হাত পায়ের গঠনগত কারনে তারা যে কোন কোয়ালিটির কাজ
করতে পারছে ।এখন ছাগল বা খরগোশের ইচ্ছা
হলেও আপনাকে বন্দুক ধরেও গুলি করতে পারবেনা , যদি খোদা না করুন ওদের মন মস্তিষ্কে যদি কখনো সেটা চাইও
।একটা ছাগল কে আপনি গলাতে রশি বেধে আপনি পোষেন । ছাগলটার ছোটবার ইচ্ছা তো
হয়ই ।কিন্তু ওর হাত পা দড়ি ছেঁড়বার জন্য এতটা অনুপযুক্ত যে গলার আলগা একটা দড়ি
খুলবার জন্য সে শুধু শরীর ও গলা টানাটানি করতে থাকে কিন্তু ছুটতে পারেনা । কিন্তু
আপনাকে যদি ওই রকম একটা আলগা দড়ি গলাতে বেধে কোন খুটির সাথে
বেধে রাখা হয় তাহলে আপনি বা আমি আমাদের হাত দিয়ে অনায়াসে গলার দড়িটা খুলে চলে আসতে
পারবো ।কারন হল আমাদের হাতের গঠন। যেমনটা হলো ওড়বার ইচ্ছা হলেও আপনি উড়তে
পারেননা । কেন আমি পারলাম আর ছাগল পারলনা ? হাতের কারনে ,যা অন্যান্য প্রাইমেট থেকে অধিক উন্নত ।এবার আসি সেই ধ্বনি বিজ্ঞানের
কথাতে ।
(282)
ধ্বনি বা শুধু শব্দ দিয়ে অনেক কিছু বা অনেক কাজ সম্ভব করছি আমরা কিভাবে সেটা
দেখুন , ধরুন কাউকে ডাকছেন সেটা ধ্বনি বিজ্ঞান , আপনি একা ঘরে রাতে আছেন সেখানে
হঠাৎ শুনলেন ভয়ানক একটা চাপা হাসি সেটা
আপনার মনে ভয় ধরিয়ে দিল , ক্ষেত্রবিশেষে সেটা আপনাকে সংজ্ঞাহীনতা বা মৃত্যুর মুখে
ঠেলে দিতে পারে , আবার আপনার বাবার কণ্ঠস্বরে এক রকম অনুভূতি পান , আপনার মার
কণ্ঠস্বরে একরকম অনুভূতি পান , আবার আপনার বন্ধু , প্রেমিকা , বা জীবনসঙ্গীর কণ্ঠস্বরে
একরকম অনুভূতি পান । এনাদের কণ্ঠস্বর একেক রকম ভিন্ন ।আবার ধরুন বাঁশির সুর নিয়ে
নানা কথা শোনা যায় ।বাশের বাঁশির সুর একটা ইউনিক ও ভিন্ন জিনিস । এই বাঁশির সুর
নিয়ে বহু কথা ও কাহিনী প্রচলিত আছে আমাদের বাংলা সাহিত্যে ও গ্রামীণ জনশ্রুতিতে
।বাঁশির সুর কখনো গ্রীষ্মের খাঁখাঁ রোদে মানুষের মনে এক সুরের মূর্ছনাতে ঘুম এনে
দেয় , কখনো নারীর মন উদাস করে দেয় , কখনো গভীর রাতে বাঁশির সুরের ফ্রিকোয়েন্সি
বংশী বাদকের চারপাশে পরীদের নেমে এসে নাচ করায় , কখনো বাঁশির সুর বংশী বাদক কে এমন
অনুভূতি দেয় যে তার পাশে বসে কেও বাশি বাজালে বসে বসে শুনছে , হতে পারে সে অপদেবতা
।সে রকম ভাবে কেউ যদি বিশেষ করে আমাদের
পূর্বপুরুষেরা যদি এই ধনিবিজ্ঞান বা এমন কোন বিশেষ কিছু শব্দভাণ্ডার গবেষণার
মাধ্যমে আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন যা পশুপাখির সামনে বললে পশুপাখি কথা শুনত , অদৃশ্য
কোন প্রাকৃতিক শক্তি থেকে সাহায্য পাওয়া যেতো এমন
টা তো হতেই পারে ।অসম্ভব কিছু নয় ।শোনা
যায় যে সম্রাট আকবরের সভাতে তানসেন(১৫০৬-১৫৮৯,গোয়ালিওর , মধ্যপ্রদেশ ,ভারত ) নামের যে কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন তিনি
এমন এমন সুর বাজাতে পারতেন যার কোনটা মানুষকে বিমোহিত করে ফেলত , কোনটা মানুষ কে
ভীত করে ফেলতে পারতো , কোন সুর প্রচণ্ড খরার সময়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি আনয়ন করতে
পারতো , কোন সুর বাতি জালাতে পারতো কোন দিয়াশলাই বা আগুনের সাহায্য ছাড়াই , কোন
সুর কখনো কখনো মন্দির , বৃক্ষ , বা পাথরের দেয়াল কে আন্দলিত করতে পারতো ।
(283)
কোথায় সঙ্গীতের সেই অলৌকিক সেই সুর ? আজকের যুগ হলে না হয় সেটা রেকর্ড করে
রাখা যেতো ।আবার রেকর্ড করে রাখা সম্ভব হলে কি ভয়ানক কান্ড ঘটাতো মানুষ সেটা ভাবুন একবার । কেও কি আছেন , আছেন কোন
সুরকার যিনি এই ভয়ঙ্কর ও অলৌকিক সুর গুলো জানেন ? আচ্ছা এসব বাদ দিলাম , কিন্তু
ভাবুন তো ৮০-৯০ দশকের বাংলা ও হিন্দি রোম্যান্টিক সিনেমা গুলোতে যত সুরেলা গান
আমরা পেয়েছি সেটা কিভাবে সম্ভব হল , সেটা হয়তো
আপনারা বলবেন আলম খান ,সত্য সাহা , নাদিম-শ্রাবণ , আনন্দ-মিলিন্দ এর মত গুনীদের কথা । হ্যা সেটা ঠিক আছে । কিন্তু কখনো ভেবে
দেখেছেন বা চেষ্টা করে দেখেছেন একটা সুর তৈরি করতে , সিনেমা তে বা কোন শিল্পীর
গলাতে শোনা প্রিয় কোন গান এ হয়তো গলা মেলান বা ষ্টেজে বা ফাংশন এ গাইতে চেষ্টা
করেন , কিন্তু একটা গান সুর ছাড়া শিল্পী ও কথা রচয়িতার মূল্য নেই । গানে যদি কোন
বিশেষ কিছু থাকে তবে সেটা হলো গানের সুর । সুর ও সুরকার হলেন গানের প্রাণ । আমরা
সারাজীবন শিল্পীর ভক্ত হই কিন্তু গানের প্রান সুরকারকে চেনেননা । আপনি আমি ১০০ গান
হয়তো মুখস্ত বলতে পারবো কিন্তু একটার ও সুরকারের নাম বলতে পারবোনা ।আপনি বা আমি যে
কেউ একটা গান লিখতে পারবো একজন শিল্পী ভাড়া করতে পারবো গানটা গাইবার জন্য কিন্তু
একটা নতুন সুর দিতে পারবেন গানে । যখনই নতুন
একটা গান লিখে সুর দিতে চাইবেন কোন গানে দেখবেন হাজারটা পরিচিত গানের সুর
এসে আপনার মাথাটা হ্যাং করে দিচ্ছে । আপনি সুর রচনা করতে গেলেই দেখবেন আপনার পরিচিত
কোন না কোন গানের সাথে সুরটা মিলে যাচ্ছে বা গানটা বেসুরো হয়ে যাচ্ছে ।একবার নিজে
কোন গানে সুর করতে গেলেই বুঝবেন হেলাফেলাতে মোবাইল ছেড়ে দিয়ে শোনা ০৫ মিনিটের প্রিয় গানটি কত বড় ধ্বনি
বিজ্ঞানের খেলা । কত বড় অসাধারন একটা বিজ্ঞান আপনি আপনার সিডিতে বা মোবাইলে
মেমোরিতে রেখেছেন । দেখুন এই প্রত্যেকটি গানের পিছনের পরিশ্রম অকল্পনীয় ও বিষ্ময়কর
এক বিজ্ঞান যা আপনি আপনার ২০ বা ৪০ বছরের জীবনে একটিবারের জন্য ভাববার প্রয়োজন ও
বোধ করেননি ।
(284)
একেকজন সুরকার যে কত বড় কল্পনীয়
প্রতিভা কত বড় যাদুকর তা আপনি বুঝতে পারবেন একটা নতুন সুর তৈরি করতে গেলে ।ধরুন
আপনি একজন সুরকার ।একজন শিল্পী একটা গান গাইবেন , গানের সুর তা আপনাকে তৈরি করতে
হবে । ধরা যাক পৃথিবীতে এক লক্ষ ইউনিক ভিন্ন সুরের গান রয়েছে । এই এক লক্ষ গানের
একটির সাথে আরেক টির একেবারে মিল নেই ।এখন আপনাকে একটা গানের জন্য সুর তৈরি করতে
হবে , এই সুরটা এই এক লক্ষ গানের সুরের কোনটার সাথে মিললে হবেনা ।সম্পূর্ণ নতুন এক
সুর তৈরি হবে আপনার হাতে , ব্যাপারটা কি
সোজা কোন কাজ ? যখন মোবাইল বা মিউজিক প্লেয়ার এ গান ছেড়ে দিয়ে সুরের মূর্ছনা এবং ছন্দে মাতাল হয়ে যান তখন কি একবারের জন্য
ভেবে দেখেন একজন সুরকার কত বড় বিজ্ঞানী , তার সুর কত বড় এক ধ্বনি বিজ্ঞানের উদাহরণ
?সবকিছু বোঝার পর সুরকার ছাড়া আর গানের সকল কলাকুশলীদের আপনার অর্থহীন মনে হবে । আচ্ছা
এবার আসি জ্বীন জাতির কথাতে । তানসেন যদি সুরের
মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দিতে পারতেন , বৃষ্টি নামাতে পারতেন , তবে আজকে আমরা যে
তন্ত্র-মন্ত্র গুলো ভুয়া বলে মনে করি সেটা হয়তো কোন এক কালে কোন এক গোষ্ঠীর হাতে
থাকা এক মহা ক্ষমতাশালী ধ্বনি বিজ্ঞান ছিল আজকের বই পত্রে টিকে থাকা তথা কথিত
তন্ত্র মন্ত্র । ভ্যাটিকান সিটি এর গোপন লাইব্রেরি তে কি আছে কাউকে সেটা আজো জানতে দেওয়া হয়নি । , মুজিযা , অলৌকিক , ম্যাজিক , যাদু ও কালজাদু ,
বিজ্ঞান এগুলোর ভিতর যে পার্থক্য সেটা এখন বললে প্রিয় পাঠক আপনি আমার কালোজাদু
বইটি লেখার মুল উদ্দেশ্য বা আপনাকে কি বোঝাতে চাচ্ছি , বা কেন কালজাদু বইটি
লিখলাম , কেন এত কথা বলছি সেটা আপনি পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারবেন আশা করি । মুজিযা=
মুজিযা বলতে বোঝান হয় এমন এক ক্ষমতা যার মাধ্যমে কেও বিস্ময়কর এবং ধারনার বাইরে
এবং মানব ক্ষমতার অসাধ্য কোন কাজ করতে পারেন , এক্ষেত্রে যিনি অলৌকিক এসব কাজ করে
দেখাচ্ছেন|
(285)
তাকে মোজেজার শর্ত মোতাবেক আল্লাহর নবী রাসুল হতে হবে , তিনি এই অলৌকিক ঘটনা
দেখাবার ক্ষমতা পান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ।তিনি নিজে অবশ্যই যাদুকর নন
।অলৌকিক= অলৌকিক বলতে বঝায় এমন কোন ব্যাপার বা ঘটনা যার কোন ব্যাখ্যা নেই , যার
ব্যাখ্যা মানুষের বর্তমান জ্ঞানে অজ্ঞাত । ম্যাজিক= ম্যাজিক বা হাতসাফাই যাদু দেখান
হয় মুলত স্টেজ বা কোন প্রদর্শনীতে ।এটার উদ্দেশ্য থাকে মুলত মানুষকে কোন কিছু
বিস্ময়কর ভাবে করে দেখিয়ে মজা দেওয়া । ধরুন আপনাকে দেখান হলো একটা বক্স , তাতে
দেখানো হলো কোন কবুতর নেই , একটু পর লাল কাপড় খাচার উপর পেচিয়ে কাপড় ওঠানোর পর দেখা গেলো ওই বক্স এ কবুতর , এটা
দেখে আপনি বিস্মিত হয়ে গেলেন ।এটা কিভাবে সম্ভব হল ।এর পিছনে থাকে একটা বিজ্ঞান
সম্মত কৌশল ।দর্শক কে মজা দেওয়া এর মুল উদ্দেশ্য , জাস্ট ফর ফান , নট এনিমোর ।কালযাদু
সব থেকে রহস্যময় ব্যাপার বোধ হয় এটা ।কালো যাদু নিয়ে বহু জনশ্রুতি শোনা যায় । কি
থাকেনা এতে , টেলিপ্যাথি , মেসমেরিজম , হিপনোটিজম , রেইকি , তন্ত্র-মন্ত্র,দ্রব্য
গুন , অদ্ভুত সব কুপ্রথা , বলি , রক্ত , মাদক , পুজা , তাবিজ সব কিছু থাকে এতে ।
সত্যিই কি এতে কোন কাজ হয় বা এর কোন কার্যকরিতা কখনো আছে ?। তো কথা হল এসব তন্ত্র
, মন্ত্র বা যাদু এগুলো হল এক প্রকার সীমাবদ্ধ জ্ঞান যা আপনার আমার সবার জন্য
উন্মুক্ত নয় ।রসায়ন শাস্ত্র ও তাতে যত দ্রব্য গুন আছে সেগুলো কি যাদু নয় ,পদার্থ
বিজ্ঞান , জীব বিজ্ঞান শাস্ত্রে উল্লেখিত সকল জ্ঞান ,তত্ত্ব , কথা এগুলো কি
বর্তমান পৃথিবিতে প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা অতি বিদ্যা গুলোর বিরাট সংগ্রহ নয় ।সবাই এগুলো আমরা জানি বলে আমাদের
কাছে এগুলো যাদু মনে হয়না , কিন্তু এক কালে এই জ্ঞান
গুলো নির্দিষ্ট কিছু মানুষের ভিতর ছিল বলে এগুলো ছিল অতি বা যাদুবিদ্যা , আর
বিজ্ঞান চালিয়ে খেতে গেলে যে ০৫ বছর ভার্সিটিতে পড়তে হবে এমন কথা নেই , গেরুয়া
সন্ন্যাসীও এটা পারবে যদি তাকে শেখানো হয় ,
(286)
ধরুন মাঝে মাঝে আমরা পত্রিকাতে দেখি ভন্ড ক্লাস এইট পাস কোনরকম পল্লিচিকিৎসক
ডিগ্রি ও নেই , এরকম হাতুড়ে ডাক্তার রা দিব্যি
বড় বড় অপারেশন করে ফেলছে দীর্ঘ ২০ বছরেও মানুষ তাদের কে ধরতে পারেনি , তারা কত
দক্ষ তাহলে বুঝুন যে অভিজ্ঞ শিক্ষিত মানুষেরাও একটু আচ করতে পারেনি তাদের ব্যাপারে , সন্দেহ করেনি তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার , এরকম ব্যাপারটা হলো তখন
ঘটেছিল , এই সব আবিষ্কৃত বিজ্ঞান তখন ছিল গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী ,পীর দরবেশদের ভিতর সীমাবদ্ধ , পরম্পরাতে তারা এগুলো তাদের উপযুক্ত শিষ্যের কাছে
দিয়ে যেতেন , ধরুন আপনি বলতে পারেন যদি তারা জ্বীন বা অপদেবতা ডাকতে পারতো কোন কায়দাতে তাহলে সেটাও তো তারা
হয়তো অদৃশ্য কোন জগতের সাথে বা আমাদের অদেখা বা আমাদের মাত্রার বাইরে কোন জগতের জীব দের সাথে সম্পর্ক
তারা স্থাপন করতে পেরেছিল ,স্থাপন করতে পেরেছিল যোগাযোগের কোন লিংক ও হতে পারে ,
বিশ্বাস করতে বলছিনা , পরে এই বিভিন্ন যায়গা বনের
সন্ন্যাসী , কোন শহরের জ্ঞান পিপাশু ব্যাক্তি
সবার আবিষ্কৃত বিদ্যা ক্রমান্বয়ে সবার
কল্যানে ও বাবসায়িক স্বার্থে চলে এসেছে মানুষের মাঝে ,
তাই এখন আমাদের বর্তমান যুগে আমরা বিজ্ঞান নয় সেই আদিকালের যাদুর মদ্ধ্যে আছি আপনি বা আমি বুঝতে পারছিনা সেটা । ধরুন টেলিভিশন
অন করতে সুইচ টিপতে হবে , সাউন্ড বাড়াতে বা চ্যানেল ঘোরাতে অনেক কিছু করতে হবে , কিন্তু আপনি ভাবছেন যদি
এখন বিছানা থেকে উঠে না ঘোরাতে হতো টিভিটা , এমন কিছু পাওয়া যেতো যে দুর থেকে
টিভি চালানো যাবে , তাহলে ভাবুন আপনার হাতের রিমোটটি কত বড় যাদুর জিনিস ।আপনি তো
শুধু রিমোটের সুইচটা টিপ দেন ।কিন্তু ওতে টিপ দেবার সাথে অদৃশ্য কে বা কি আপনার
হয়ে টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছে বলুন তো , খালি চোখে ওই রশ্মিকে আপনি দেখতে পাননা
। এটা যাদু মনে হয়না ? যাদু মনে হয়না এজন্য যে এটা আপনার বা সমাজের সবার জন্য
সহজলভ্য হয়ে গেছে তাই ।
(287)
পৃথিবী ও মহাজগত অসীম
শক্তিরও জ্ঞানের আধার, এখানে যা নিয়ে
ভাববেন , যা নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন কিছু না কিছু আবিষ্কার হয়ে যাবেই, এখানে পাথরে পাথরে ঘষা লেগে আগুন জ্বলে ,হাতে হাতে বাড়ি দিলে শব্দ
হয়, পানিতে পড়লে মানুষ ডুবে যায় , আবার কৌশল জানলে পানিতে ভেসে জলজ প্রাণীর মত মানুষ ও চলতে পারে , আপনার হাতের স্পর্ষ না পেলে বৈদ্যুতিক টেস্টার জ্বলেনা , কত কিছু হয় আপনি আমি খেয়াল করিনা ,। একটা মাছি মেরে কোথাও ফেলে রেখে খেয়াল করবেন কিভাবে
প্রথমে একটা পিঁপড়া কিভাবে মরা মাছি তার সন্ধান পায় ,তারপরে বিভিন্ন যায়গাতে গিয়ে
একেকটা করে পিঁপড়া কে খবর দিয়ে সারিবদ্ধ লাইন দিয়ে এসে মাছিটা কে নিয়ে যায় ,
পিঁপড়া পিঁপড়ার সাথে কিভাব কথা বলে বা পরামর্শ করে সেটা খেয়াল করবেন , এভাবে খেয়াল
করলে দেখবেন কত কিছু আপনার দেখা নেই । আবার
পৃথিবীতে যত পিঁপড়া আছে তা মানুষের থেকে ও সংখ্যাতে বেশি । আবার সবকিছু আপনি বা আমি সবকিছু
বুঝি বলা ভুল । পিপড়া কবর দেয় কোন পিপড়া মরলে সেটা জানেন ? । আমরা অন্যান্য প্রাণীর কিছু জিনিস বা
মহাবিশ্বের বাইরের অনেক কিছু বা যেটুকু জেনেছি সেগুলো হলো আমাদের শেখা ও বোঝা ও
আমাদের মানব জীবনের সাথে যেগুলো মেলে সেগুলো , বা পৃথিবীর রুপের সাথে যেগুলো মেলে
সেগুলো সম্বন্ধে আমরা শুধু বুঝতে বা জানতে পারি , আর এই জানা বোঝার সীমাবদ্ধতা
দিয়ে আমরা পৃথিবীর বাইরের বসবাস যোগ্য পৃথিবী ও প্রানের সন্ধান করতে যাই , স্বয়ং
নাসাতে ও এই থিম কাজে লাগিয়ে সব কিছু খোজা হচ্ছে , কিন্তু এভাবে খুজলেই যে পাওয়া
যাবে বা মানুষের জ্ঞান বা মানুষের বোঝাতে সবকিছু জ্ঞান এ আটবে বা পৃথিবীর মত আবহাওয়া
না থাকলে বসবাস করা যাবেনা বা মানুষের মত না চললে বা না খেলে যে জীবন ধারন করা
যাবেনা এই থিম মানুষের মাথাতে আসবেনা , এ জন্য মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির অনেক কিছু
দেখতে পাবেনা , মানুষের বোঝার এবং দেখার একটা সীমাবদ্ধতা আছে,
(288)
আল্লাহ এই সীমাবদ্ধতা দিয়েছেন এবং আমি এই সীমাবদ্ধতাকে বলি মাত্রা , এর কারনে আমরা অনেক কিছু
দেখতে পাইনা , আমাদের বোঝার বা দেখার সীমাবদ্ধতা আছে , আমরা মানব চোখে যা
দেখিনা ,মানব কানে যা শুনিনা ,আমাদের চামড়া যা বোধ করেনা আর তার বাইরে আর কিছু নাই
এটা ভাবা চরম ভুল এর বাইরে অনেক কিছু আছে সে গুলো আমরা দেখতে পারবোনা । আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা , একটা উদাহরন দিয়ে
বুঝায় ধরুন আমরা তো সবাই মানুষ , কেউ নারী বা পুরুষ এই পার্থক্য , প্রেম ,যৌনতা বা
দেহ মিলনের ব্যাপারে বা আনন্দ সম্বন্দে আমাদের কোন কিছু অজানা নেই , কিন্তু ০৫
বছরের একজন বালক বা বালিকার শরীরে তো আপনার বা আমার মত সব অঙ্গ আছে তাহলে তাদের
পক্ষে কি এগুলো বোধ বা বোঝা সম্ভব ? দেখেছেন একই মানুষ হওয়া স্বত্বেও আপনি আমি
একটা মাত্রা তে বন্দী , তাই যদি পাঁচ বছরের ছেলে বা মেয়ে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা
এবং চোখের দেখাতে বলে ঋতুস্রাব , প্রেম , যৌনতা নেই তার মানে সব নেই হয়ে যাবে বা
সেটা নেই এমন বলা যাবেনা । কারন চরম এই বাস্তবতা যেটা তার জীবনেও আসতে
যাচ্ছে শুধুমাত্র সময়ের মাত্রার কারনে সে সেগুলো দেখতে পাচ্ছেনা , বা উপলব্ধি করতে
পারছেনা । আবার
ভেবে দেখুন আপনার আমার শরীরে লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়া নামক অনুজীব আছে ,খালি চোখে আমরা
তাদের দেখিনা , কিন্তু তারা আমাদের শরীরে বসবাস করছে ,এখন আমাদের শরীরের বাইরে
কিছু আছে কিনা , কোন জগত আছে কিনা এই ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এর কাছে তা অজ্ঞাত ।এদের কাছে আমাদের
শরীরটা হলো এক ব্যাপক বিশ্ব, যেখানে আমাদের আয়ু তাদের থেকে কয়েক হাজার গুন বা লক্ষ
গুন বেশি ।সে হিসাবে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেখবে
আমরা অমর , আবার আমাদের দেহ ধংশ হলে মাটিতে পচলে তখন তারা যে পচাগলা দেহ থেকে
মাটিতে ছড়িয়ে পড়বে সে সম্বন্ধে তাদের কোন আইডিয়া নেই । এ জন্য মানুষ হিসেবে একটু বুদ্ধি বলে যেটা দেখিনা সেটা নেই বলাটা ঠিক নয় ।
(289)
আচ্ছা এই যে বিভিন্ন ভাইরাস মানব শরীরের বাইরে ০৫ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের বেশি
বাচেনা ,তাহলে সে কি করে বুঝবে বাইরের জগতের ব্যাপারটা ? অন্যান্য জীব , গাছপালার জ্ঞান কি তার আছে ? কত
পশু আছে সে জ্ঞান কি লাভ তার পক্ষে সম্ভব ।আবার পৃথিবীতে
যাই ঘটুক তার গুরুত্ত্ব কি তার কাছে আছে ? এসব না ভেবেই হয়ত আমরা বা আপনি আমি প্রায় বলেই দিয়েছি মৃত্যুর পরে জীবন
নেই , পৃথিবীর বাইরে আর জীবন নেই , মানুষের থেকে বুদ্ধিমান বা উন্নত ক্ষমতার
কিছু নেই ।একটা জিনিষ ভাববেন যে আমাদের চোখের থেকে সামান্য দুরত্বে আমদের ভুরু ও
কান অবস্থিত তাই আমরা দেখতে পাইনা খালি চোখে , যদি আয়না বা পানিতে আমাদের ছাপ না
পড়তো তাহলে ব্যাপারটা কি হতো বলুন তো ।আবার দেখুন আপনার
ছেলে বা মেয়েকে আপনি এত কষ্ট করে , নিজে না খেয়ে মানুষ করছেন
, কিসের জন্য ? অদৃশ্য একটা মায়া
বলে , আবার আপনার ০২ বছরের বাচ্চাটা চলতে ফিরতে বা কথা বলতে বা জ্ঞানে
বুদ্ধিতে আপনার ধারে নেই , কিন্তু আপনার থেকে ভাল খাবার খায় সে , আপনি কষ্ট করে হলেও তাকে খাবার দিচ্ছেন
, সে কি আপনাকে জোর করছে ? আপনার স্ত্রী থেকে অনেক সুন্দর বা ভাল মহিলা আপনি দেখেন
কিন্তু তাকে ত্যাগ করেননা বা করতে পারেননা কেন , একঘেয়ে লাগেনা কেন ? একঘেয়ে লাগতো
যদি দাম্পত্য জীবন শুধু দেহের সম্পর্ক হতো , এরকম অদৃশ্য অনেক কিছু আছে , আমাদের বোঝার
সীমাবদ্ধতা আছে , জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে কিছু জীবের কাছে কিছু জীব তো
জড়বস্তু ধরুন মাইক্রোস্কোপে আবিষ্কার না
হলে আপনি আমি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জীব এটা কোনদিন আছে বুঝতে পারতাম না , ক্রেস্কোগ্রাফ
না হলে গাছ জড়বস্তু হয়ে থাকতো আমাদের কাছে , মহাবিশ্বে প্রান খোজার ক্ষেত্রে
মানুষের জ্ঞান ও সেই রকম সীমাবদ্ধ আমরা যেভাবে বুঝে প্রান খুজছি তাতে আমদের সাথে
চেহারা ,চলন বা দেহে মিলে না গেলে বা আমাদের
মত কিছু না হলে আমরা কোনদিনই মহাবিশ্বে প্রান পাবোনা যদিনা আমাদের মত
কথাটা বা ব্যাপারটার বাইরে যাবার জ্ঞান লাভ না হয় ।
(290)
আর এই জ্ঞান মানবজাতির নেই বলেই তথাকথিত একটা জগত , বা পরকাল সব আমাদের আড়ালে
থেকে যায় , এভাবে বোঝার এবং জীবনধারনের পরিবেশের সীমাবদ্ধতা আমাদের কে
কতকিছু দেখতে দিচ্ছেনা , এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা মানুষ । এই জন্য চামড়ার চোখে দেখিনা বলে ঈশ্বর নেই বলে নাস্তিক হয়ে যাওয়াটা ঠিক নয় ,
আপনাকে মুসলমান ,হিন্দু , খ্রিস্টান কিছু হতে বলছিনা ।আমরা মহান সর্বশক্তিমান স্রষ্ঠা দর্শন
, বা সাধারণ জ্বীন কেন দেখিনা ?
দেখিনা আমাদের এই জ্ঞান এবং বোঝার সীমাবদ্ধতার কারনে ।বৈজ্ঞানিক ভাবে আমাদের শ্রাব্যতা ও দেখার সীমানা আছে এটা প্রমানিত ।আবার আমাদের সব কিছু কল্পনা বা উপলব্ধি ও করবার ক্ষমতা নেই । আপনি যে ঈশ্বর
কি সেটা উপলব্ধিও করবেন তার আগে ভাবুন তো আপনি পুরুষ হয়ে কখন আপনার স্ত্রীর প্রসব
বেদনা উপলব্ধি করতে পারবেন ? আপনি নারী হয়ে পুরুষ নারী দেখে কি আনন্দ বা পুলক লাভ
করে তা কি বুঝতে পারবেন , যদি আপনি সমকামীও হন তবুও উপলব্ধি করতে পারবেননা , কারন
বিপরীত লিঙ্গের চোখে উপলব্ধি আর মেয়ে হয়ে মেয়ের দেহে আকর্ষন লাভ বা পুরুষ হয়ে পুরষ
দেহে আকর্ষন লাভ করেও বোঝা সম্ভব নয় যে নারী পুরুষ দেহে কি আকর্ষন লাভ করে ? এই দেখা ও বোঝার সীমাবদ্ধতা কেমন সেটা আগে
বলেছিলাম ওই যে বললাম আপনার শরীরে যৌবন আসবে , দেহ মিলনে স্বর্গসূখ পাবেন ,
কিন্তু সেই একই শরীরে ০৫ থেকে ১০ বছর বয়সে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে পড়া ফাকি
দেওয়া ও মাঠে গিয়ে খেলার থেকে আনন্দের কিছু আছে আপনি কল্পনাও করেননি । এই জন্য বলি আপনি ধর্মবিহীন হয়ে যান সমস্যা নেই , কিন্তু এটা বলবেননা যে কেউ
নেই , কিছু নেই , কেউ সৃষ্টি করেননি ।এটা ১০০ বছর আগের লোকেরা বললেও হতো , কিন্তু আপনার আমার মত এই আধুনিক বিজ্ঞান
নামক মহা কালজাদুর যুগে ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই বলা মহা বোকামি ।আচ্ছা আপনি তো একটা মানুষ , আপনার বাবার ঔরশ থেকে মায়ের গর্ভ ত্থেকে ভুমিষ্ঠ
হবার পরের বেশ কয়েক বছরের ব্যাপারটা কি আপনার মনে আছে ? আপনি মনে করতে পারেননা অথচ
আপনি দিব্যি আপনার বাবা মায়ের সন্তান
(291)
এটা মেনে চলেছেন , আবার বলবেন প্রমান
করার জন্য তো আপনার জন্য ডি এন এ পরীক্ষা আছে
, আমি সেটা বলছিনা ,বলছি মনে করার ব্যাপারটা ।তাহলে দাড়ালো ব্যাপারগুলো এরকম যে বাস্তব আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনারই
প্রমান বা ব্যাখ্যা বা স্মরন/স্মৃতি আপনার নেই , আপনার জীবনে ঘটা স্বত্তেও আপনার
মনে রাখার ও বোঝার সীমাবদ্ধতার কারনে আপনি কোন প্রমান দেখাতে পারছেননা । কারন এই মহা আধুনিক যুগের জ্ঞান ও মহাবিশ্বে প্রান এবং ঈশ্বর খোজার জন্য
মহাসাগরে এক ফোটা পানির মত নগণ্য, সহজ
উদাহরণে বলি পৃথিবীর অনেক যায়গা এবং অনেক যায়গার রহস্য আমাদের কাছে তাই এখন অমিমাংসীত
, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল , গ্যালাপোগাস দ্বীপ, ,মারিয়ানা ট্রেঞ্চ(প্রশান্ত মহাসাগরের তথা
পৃথিবীর সবথেকে গভীরতম খাদ , ১৫৮০ মাইল লম্বা , ৪৩ মাইল চওড়া , ১১ কিলোমিটার গভীর
, পুরো এভারেস্ট পর্বত কে এনে এই যায়গাতে ফেলে দিলে সেটাও ডুবে যাবে , এখানে পানি
এতটাই চাপ সৃষ্টি করেছে যে এর নিচের দিকে স্বাভাবিক এক লিটার পানি যতটুকু যায়গাতে
ধরে ঠিক ততটুকু যায়গাতে এই যায়গাতে ০৫ লিটার পানি ধরবে ) , জাপানের ডেভিল
ট্রায়াঙ্গল , অজন্তা ইলোরার গুহা , এরিয়া-৫১ , মরুভুমি , এভারেস্ট এর রহস্য ,
আগ্নেয়গিরি , ডেথ ভ্যালি , ইউ এফ ও এই গুলোই তো ভেদ হলনা । এখন যদি এই বিজ্ঞান অগ্রসরতার ধারা নিয়ে মানব সভ্যতা আরো কয়েক হাজার বছর থাকে তাহলে হয়ত মানব জাতি অনেক রহস্য ভেদ
করে ফেলবে । কিন্তু বর্তমান পৃথিবীর যে অবস্থা , সেটা হোক রাজনৈতিক এবং ভৌগলিক কোনটাই ভালোনা ,
সেক্ষেত্রে কতদিন টিকবে পৃথিবী , দেখা
যাবে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ বেধে ধংশ হয়ে যাবে ,বা আটলান্টিস বা ইরাম বা দ্বারকার মত
হারিয়ে যাবে । আর যে কোন কারনে বিপর্যয় হলেই আবার গোড়া থেকে
সব শুরু করতে হবে মানবজাতির আর সকল ধর্ম
গ্রন্থে উল্লেখিত কিয়ামত হয়ে গেলে তো এত কালের মানব সভ্যতা এবং মানবজাতির সমস্ত কীর্তি
, বিখ্যাত মানুষেরা মহাকালের গর্ভে চিরকালের মত নেই হয়ে যাবেন ।
(292)
মানে মহাবিশ্বে কোনদিন পথিবী এবং এর ভিতর মানব জাতি নামক কিছু ছিল এতা স্মরণীয়
করার কিছু থাকবে ? বিমানের ব্লাক বক্স এর মত পৃথিবীর কোন ব্লাক বক্স আছে কি
পৃথিবীর , বা এই যে মহাবিশ্বে সষ্ঠার কতকালে কত কিছু সৃষ্টি করলেন , এই অগনিত
কিছুর ভিডিও কি থাকবার দরকার আছে ? ধরুন এখন আমাদের স্মৃতি এবং ইতিহাস ধরে রাখবার
জন্য মেমরি কার্ডের মত অনেক উন্নত চিপ আছে । কিন্তু যদি কখনো সভ্যতা ভয়াবহ
ধংশপ্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তীতে আমাদের সভ্যতাকে কে আবার পুনরুজ্জীবিত করবার মত
প্রযুক্তিগুলো টিকে নাও থাকতে পারে , মানে ধ্বংস প্রাপ্তির পর মেমরি কার্ড হয়তো
কেউ পেলো , কিন্তু সেটা চালাবার যন্ত্রটা পাবেন কোথায় ? এক্ষেত্রে কথিত
প্রাগৈতিহাসিক মানবদের গুহা চিত্রের মত এখনকার
মূল্যবান তথ্য গুলো যদি ছবি ও লেখনীর মাধ্যমে গুহা চিত্রে এবং বিভিন্ন ধাতব
পাতে অঙ্কন করে রাখা সম্ভব হয় তবে সেটা নিরাপদ হয় বেশি , কথাগুলো শুনতে হাস্যকর
শোনালেও একটু ভেবে দেখুন সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ এর সুযোগ সুবিধাতে থাকা মানুষেরা কিন্তু
এখন ২৪ ঘণ্টা লোডশেডিং এ পড়লে মোবাইল গুলো অচল হয়ে পড়ে , ফ্রিজ এর মাছ মাংশ নষ্ট
হতে শুরু করে , ঘরের অন্ধকার নিবারনে সে যুগের মোমবাতির খোজে আমরা মোড়ের দোকানের
উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি । একটা হারিয়ে যাওয়া শহরের কথা বলি , শহরটির নাম ছিল
হেরাক্লিয়ন , খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সাল মানে আজ থেকে ২৮০০ বছর আগের কথা , মিসরের
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ২০ মাইল উত্তর পশ্চিমে এক শহর ছিল হেরাক্লিয়ন ।এর ৪০০ বছর পর মানে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে হেরাক্লিওন শহরটি , হঠাৎ একদিন জনকোলাহল আর ব্যস্ততার মাঝে ডুবে
যায় ।নিস্তব্ধ হয়ে যায় বন্দর ও দেবতা আমেনরার
মুর্তি , পুজা জন্য বিখাত শহরটি ।২০০০ সালে ফরাসি প্রত্নতত্তবিদ ফ্রাঙ্ক গুডি ও তার দল ।এটাও তিনি পান আবার অপ্রত্যাশিত ভাবে , ফরাসি সম্রাট নেপলিয়ানের ডুবে যাওয়া জাহাজের
সন্ধানে মিসরের আবু কির উপসাগরে সন্ধান চালাচ্ছিলেন তিনি ।হঠাৎ করে তিনি মিসরীয় দেবতা হাপির মুর্তির কিছু ভাঙ্গা অংশের সন্ধান পান ।
(293)
এতে তিনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান । এ যে হেরোডটাস
এবং মিসরীয় পুরান এবং রুপকথার গল্পের বইএ স্থান পাওয়া নিছক কবি সাহিত্যিক আর মানুষের কল্পনা মনে করা আমন দেবতার শহর উল্লেখিত ডুবে যাওয়া , শহর হেরাক্লিয়ন এর প্রমান ।এরপর ১৩ বছর ধরে সন্ধান চালিয়ে তিনি আমন , ৬৪ টির জাহাজের ধংসাবশেষ , ৭০০ নোঙর
,প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা ,তামা পাথরের বাটখারা আর অগনিত নমুনা ।ভুতত্তবিদ দের মতে এই হেরাক্লিয়ন শহর হারিয়ে যাবার কারন হল এর ভুপৃষ্ঠস্ত ছিল
বেলে কাদামাটিতে ঘঠিত । ফলে ভয়াবহ
ভুমিকম্পে এটি সাগরের নিচে তলিয়ে যায় । আচ্ছা আমাদের
এই সভ্যতা তার পরে আমাদের করে সাধের বড় বড় বিলাশ বহুল অট্টালিকা ।মায়ান অ্যাজটেক আর ইনকাদের স্বর্ণের শহর এল ডোরাডো আরেক মিথ ।স্বর্ণের
শহর এল ডোরাডো নিয়ে বহুকাল ধরে একটা মিথ চলে আসছে । অ্যামাজনের গভীর জঙ্গলে এক
বিশাল শহর ছিল । সে শহরের সব কিছু স্বর্ণের তৈরি । এই স্বর্ণের শহর মিথ এর পিছনে
কতজন ছুটলো , কত অভিযাত্রী গেলো কিন্তু কেউ সেই স্বণের শহর আর পেলোনা । এক
অমিমাংশীত মিথ হয়েই থাকলো এই শহর আজকের এই যুগেও ।মায়ানদের ক্যালেন্ডারে ২০১২
সালের ২১ শে ডিসেম্বর তারিখটা তো পৃথিবী ধ্বংশের এক মিথ হয়েই থাকলো , মায়ান
ক্যালেন্ডারের পূর্বের কোন ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হয়নি বা বিফলে যায়নি , কিন্তু ২০১২
সালের ২১শে ডিসেম্বর মিথটা কি মনগড়া , ধ্বংশ না হোক ওইদিন পৃথিবীতে কোন বিশেষ
ঘটনার সুত্রপাত হয়নি তো , যেটা পৃথিবীকে আস্তে আস্তে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।এ
রকম একটা মিথ আছে ।মিথ এর ব্যাপারটা কতটুকু সত্যি আসলে অনেক বছর পর এসে আসলে এটা
বোঝা যায়না ।কাহিনীর সময়কালে কোন পরিপ্রেক্ষিতে কি হয়ছিল এটা রহস্যই থাকে ।
কয়েকহাজার বছর পর এসে এর রহস্য উদঘাটন আমাদের কাছে এক ধাধা আর অবাস্তব কাহিনীই মনে
হয় । তবে মনে রাখবেন মিথ এর সত্যতার আপনি প্রমাণ পান আর না পান মিথগুলো এমনি রচিত
হয়নি ।
(294)
প্রত্যেক মিথ এর পিছনে সুনির্দিষ্ট সত্য কাহিনী ছিলো ।ধরুন মহাবীর হারকিউলিস ,
একিলিস এদের কথা গ্রীক পুরাণে লেখা আছে ।মহাবীর একিলিস এর নাকি গায়ে কোথাও তীর
বিধলে মরবেনা , কিন্তু শুধুমাত্র পায়ের গোড়ালী বা একিলিস টেন্ডনে তির বিধলে মরবে ।এটাও
একটা আশ্চর্য কথা এবং মিথ । ট্রয় নগরী যদি পাওয়া যায় , এবং বিজ্ঞানীরা সত্য বলে
মেনে নিয়েছেন যেহেতু , সেহেতু একিলিস টেন্ডনের মিথটাও সত্যি হওয়াটা বিচিত্র কিছু
নয় । হয়তো তার শুধুমাত্র গোড়ালী কেন দূর্বলতা সেটাও একটা গবেষনার অতীত বিষয় । আচ্ছা
এই যে গরুঢ় পাখি নামে আমরা একটা পৌরাণিক পাখির কথা শুনি সেটার সাথে কিন্তু
বর্তমানের অ্যামাজনের হার্পি ঈগল এর যথেষ্ট মিল আছে ।পৌরাণিক কাহিনীতে ধর্মীয় আবহ
দেওয়া হয়েছে পাখিটি নিয়ে কিন্তু সেটা বাদ দিলে বনজঙ্গল পরিবেষ্টিত ভারতীয় উপমহাদেশে চার পাঁচ হাজার বছর আগে এ রকম অতিকায়
পাখি থাকাটা বিচিত্র কিছু নয় ।কারণ কালের বিবর্তনে বিশ্বের অনেক
দেশে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে , অতিকায় ঘোড়া আর অতিকায় হাতি যদি আপনাকে আমাকে
বহন করে নিয়ে যেতে পারে , কবুতর যদি চিঠি বইতে পারে , সার্কাসে হিংস্র প্রাণী যদি
খেলা দেখাতে পারে তাহলে পুরাণে উল্লেখিত গরুঢ় হয়তো অতিকায় পাখি ছিলো , যেটাকে মানুষ
পোষ মানিয়েছিল আর তাকে বাহন হিসেবে হয়তো ব্যবহার ও করতো , হতে পারে মিথ তবে তিন
চার হাজার বছর আগের হিসেবে অযৌক্তিক নয় ।আপনার চোখের সামনে দেশী প্রজাতির
হাঁস,মুরগী ও মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেটা কি আপনি খেয়াল করছেন ? যদিও দেখুন
আমি তর্কে বেশিদুর যাবোনা , কিন্তু আমিই যদি আপনার জেলার ২০০ বা ৩০০ বছর আগের কিছু
ইতিহাস বই পত্র ঘেটে বের করি তবে সেটা আপনার কাছেই মিথ্যা লাগবে ।কিন্তু যদিও
সেগুলো ইতিহাসে আছে তারপরেও মিথ্যা লাগবে ।আমাদের সব স্থাপনা তো দাড়িয়ে আছে মাটির উপর , আমরা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রনে এত কিছু আবিষ্কার
করেছি ,কিন্তু আমাদের ঘরবাড়ি , তারপর এই যুগ উন্নত যে গবেষনাগার এর জন্য সেসব তো
এই মাটির উপর অবস্থিত ,আর এই মাটি কিন্তু পানির উপর ভেসে আছে
(295)
যদি কখন আমাদের এই উন্নত সভ্যতা সহ সব এই রকম পানির নিচে চলে যায় । অনেকে বলবেন গেলে সবার যাবে , একার কিছু যাবেনা , কিন্তু তারপরেও বলছি একটু
ভাবুন তো এভাবে এরকম একটা সভ্যতা হারিয়ে গেলে কি খারাপ লাগবেনা । আমরা এত উন্নত বলে দাবি করি নিজেদেরকে , এত যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছি , ১০০
তলা বিল্ডিং বানাচ্ছি , কিন্তু আমরা কিন্তু আমাদের স্থাপনাগুলো স্থায়ীত্ব দেবার
জন্য ভুপৃষ্ঠস্ত পানির নিচে যাবেনা এমন কিছু আবিষ্কার করতে পারিনি । এটা যে উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট এর মত হয়ে গেল ।মানুষ এর থেকে উন্নত ক্ষমতার অনেক কিছু আছে , কিন্তু
মানুষকে কেন সেরা সৃষ্টি বলে জানেন ?কোন যুক্তিতে বলে জানেন, বাঘ তো মানুষের থেকে
শক্তিশালী , মানুষের অত শক্তি নেই , পাখি
উড়তে পারে , মানুষ পারেনা । মানুষ আচরনে অন্য সকল হিংস্র প্রানী থেকেও হিংস্র ,
কিন্তু তারপরে কেন মানুশ কে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হল জানেন ? এর কারন হল , সহজ
একটা উদাহরন দিয়ে বোঝায় , মোবাইল সেট হল
দুই প্রকার আগের যুগের বাটন সেট আর এখনকার এন্ড্রয়েড সেট , এখন অন্যান্য প্রানী হলো সেই বাটন সেটের মত ফিক্সড কিছু অ্যাপ্লিকেশন
এর অধিকারী বলে ক্ষমতাবান আর মানুষ হল
এন্ড্রয়েড এর মত ,মানুষ তার প্রয়োজনে আবিস্কার করে গুগল প্লে স্টোর এর মত অসীম
, অ্যাপস স্তর থেকে সফটওয়্যার খুজে বের
করে সংযোজন করে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে পারে , নিজেকে ডায়নামিক , এক্সট্রা স্ট্রং করে
তুলতে পারে , আল্লাহর দেওয়া মানুষের ব্রেন
তা হল এন্ড্রয়েড সিস্টেম এর সাথে তুলনীয়।আর
আমাদের ব্রেন ফিক্সড অ্যাপস এর হতো তাহলে আমরা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতাতে
আবদ্ধ থাকতাম । এটা অনুমান নির্ভর । কিন্তু ওই যে বললাম শ্রাব্যতার সীমার
কারনে আমরা পিপড়ার কথা শুনতে পাইনা । খাবার খুজে পেয়ে পিপড়া যা বলে তার সঙ্গীদের
বা ডেকে আনে সেটা কিভাবে শুনবেন ? আমরা ভিনগ্রহে প্রান বা বসবাস উপযোগী পরিবেশ যা
খুজিনা কেন আমরা খুজছি আমাদের সাথে যেটা মেলে সেটা । আমাদের মাত্রার বাইরে কিছু
আমাদের খোজা সম্ভব নয় , কিছু শোনাও সম্ভব নয় ।
(296)
আচ্ছা আমাদের এই যে মহাবিশ্ব মানে পৃথিবী থেকে শুরু করে সকল গ্রহ উপগ্রহের
একটা নির্দিষ্ট শব্দ আছে । সেগুলো কিন্তু
আমরা শুনতে পাইনা ।কারণ সেই শব্দগুলো বের হচ্ছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এ । আমরা
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এর সৃষ্ট শব্দ শুনতে পাইনা । এটাকে যদি মেকানিক্যাল ওয়েভ
এ কনভার্ট বা রূপান্তর করি তবে অদ্ভূত ও
বিষ্ময়কর অনেক শব্দ শুনতে পাবো । ভয়ে গা শিউরেও উঠতে পারে ।পৃথিবীর শব্দ শুনলে মনে
হবে হালকা ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা ঝিঝির ডাকের মিউজিকের সাথে অজানা কোন পাখির ডাক
, শনি গ্রহের শব্দ শুনলে মনে হবে শো শো শব্দে বাতাস বইছে , বুধ গ্রহের শব্দ শুনলে মনে হবে আপনার পাশ দিয়ে
কেউ হালকা শব্দে মোটরসাইকেল চালিয়ে গেলো বা কেউ শব্দ করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে ,
শুক্র গ্রহের শব্দটা অনেকটা গা শিউরে ওঠা ভৌতিক শব্দের কাছাকাছি অথবা বলা যেতে
পারে গীর্জার ঘন্টার কাছাকাছি । তো
বলছিলাম আমাদের মাত্রার বাইরের(আমাদের জ্ঞানের , বিজ্ঞানের ও আবিষ্কারের সীমাবদ্ধতাকে আমি মাত্রা বলি , মাত্রা বলতে
অন্য কিছু বুঝিনা ) যদিও কিছু খুজে পাই
সেটা অনেক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অভিজ্ঞতার ফসল । বাইরের পৃথিবীতে বা এই
পৃথিবীতে । যদি অদেখা কিছু খুজতে হয় তবে আমাদের কে আমাদের চিন্তার বাইরে এবং জ্ঞান
এবং দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে । তাহলে নাসা কিছু পেতে পারে , বা মানব জাতি কিছু
অজানা কিছু দেখতে বা সন্ধান পেতে পারে । কথা হলো মানুষ সব যুগে কিছু না কিছু বিজ্ঞান আবিষ্কার করে নিজের জীবনের অনেক
সংকট মোচন করে নিজের পার্থিব জীবনের বিলাশিতা ,আরাম এর বাবস্থা করেছে খুব ভালভাবে
। কালের বিবর্তনে তা আবার হারিয়ে গিয়েছে ।তার যায়গা দখল করেছে নতুন কিছু ।তাই যাদু-তন্ত্র-মন্ত্র বলে কিছু হয়না , যদি যাদু-তন্ত্র-মন্ত্র বলে কিছু থাকে
সেটা হলো বিজ্ঞানের অজানা কোন অধ্যায় ।
(297)
আসুন প্রচলিত কিছু তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করি , এই তন্ত্র মন্ত্র গুলি ২০০
বছর আগের বিভিন্ন প্রাচীন বই গুলো থেকে নেওয়া হয়েছে , বিশেষত কোকা পণ্ডিত , আদি
বিভিন্ন পুস্তক গুলি থেকে নেওয়া , এই বই গুলো বাজারে খুজলেও আপনি পেয়ে যাবেন
হয়তোবা ।জানি এগুলো এখন অচল তারপরেও সাবধানতার খাতিরে মন্ত্র গুলোর পুরো অংশ দিলাম না
, এবং প্রয়োগ বিধি ও পুরো দিলাম না । কেউ কৌতূহল বশত এগুলো চেষ্টা করবেননা । যদি
এতে কোন বিপদ হয় তবে তার জন্য লেখক বা প্রকাশক কেউই কোনমতে দায়ী নয় । আপনাদের আবার অনুরোধ করছি এগুলো এক যুগে বহুল
প্রচলিত হয়তো ছিল , কিন্তু এখন এগুলো খাটেনা । এই বিদ্যা বিলুপ্ত । এগুলো যদি
ব্যাপক অর্থে খাটতো তবে মানুষ রাতারাতি রাজা বাদশা বনে যেতো ।অনেক অসম্ভব সম্ভব
হয়ে যেতো ।সুতরাং এগুলো একদমই বিশ্বাস করবেননা । শুধু মাত্র অনুসন্ধিৎসূ চোখে কিছু
প্রাচীন বিষয় নিয়ে আলোচনা আর রোমাঞ্চকর বিনোদন প্রদানই আমার উদ্দেশ্য । পূর্বে
যদিও কয়েকটা গল্প দিয়েছিলাম তবুও আবারো এগুলো নিয়ে আর গ্রাম বাংলার বিভিন্ন
প্রচলিত অশরীরী আর অদ্ভুত কিছু গল্প আর মন্ত্র নিয়ে এই আয়োজন ।
****২০১৮ সালের ১৮ বা ১৯ মে । তিস্তা নদীর কাকিনা
মহিপুর ঘাটে জেলেদের জালে কিছু শিং মাছ ধরা পড়ে । দুটো শিং মাছ পাওয়া যায় যাদের কাটা
দুটো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে আর গলাতে বেশ সক্ত করে তাবিজ সহ নাইলনের টাইট সুতা গিট
দেওয়া । এটাকে গ্রামের লোকে বলে মেয়াদি বান । মানে ওই শিং মাছ যত বড় হবে তত শিং মাছের গলাতে
সুতা টাইট হবে আর তার সাথে সাথে যে লোকের বিরুদ্ধে এই বান করা হয়েছে তার গলা আটকে
আসবে , দম বন্ধ হতে থাকবে , একপরযা লোকটা মারা যাবে ।
**** একবার একটা গল্প শুনেছিলাম ,যশোরে বাঘারপাড়া
উপজেলার একটা গ্রামের বাজারে একটা মিষ্টির দোকান ছিলো । বড় ঠিক বলা যাবেনা । গ্রামের
বাজারের মিষ্টির দোকান কত বড়ই বা হতে পারে ।
(298)
তবে হাট বাজার যাকে বলি আমরা
সেই গ্রাম্য হাট বসতো সপ্তাহের যে কোন দুদিন ।সালটা ছিলো ১৯৯৫ সালের দিকে । ওই
দুইদিন লোকটি হাটে প্রচুর মিষ্টি বানিয়ে নিয়ে আসতো এজন্য যে হাটে দশ গ্রামের লোক
হতো ।হাটের দুইদিন বাদে অন্য কদিন সামান্য মিষ্টিই বিক্রি হতো , হাট বাদে বাকি কটা
দিন মিষ্টি অল্প বানাতো । কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলো হাটে প্রচুর লোক হয় ,
কিন্তু সেই তুলনায় মিষ্টি বিক্রি হয়না । এমন অবস্থা যে প্রতি দশজন লোকে একজনও যদি কেনে
তাহলে দোকানে মিষ্টি থাকেনা । বাধ্য হয়ে লোকটি বেঁচাবিক্রি বৃদ্ধির জন্য শরণাপন্ন হলো একজন লোকের কাছে যিনি তাবীজ তদবীর
দিয়ে বেড়ান ।আমি যখনকার কথা বলছি তখন কিন্তু এগুলো হরহামেশা চলতো আর গ্রমের মানুষ
বিশ্বাসও করতো । যদিও এগুলোর কোন বিজ্ঞানসম্মত প্রমান বা সত্যতা নেই । [[বই আর
সিনেমা মানে লেখকের বা পরিচালকের খেলার
যায়গা , কাহিনীর প্রয়োজনে সত্য মিথ্যা বাস্তব আর অবাস্তবের মিশেল দিতেই পারেন আর
সেটা স্বাভাবিক , আর এই মিথ্যাটাই পাঠক ও দর্শক সত্য বলে গ্রহণ করে , এজন্য তর্ক বিতর্ক বা মাথা গরম করে সময় নষ্ট
না করে বিনোদন নেওয়াটাই সবদিক থেকে সুন্দর , যদিও আমি গ্রামের তখনকার মানুষের কাছে
শোনা ও তাদের ভাষায় সত্য গল্পই বলছি , কিন্তু আপনাদের জ্ঞাতার্থে বললাম এটুকু ]] আবার জনশ্রুতি ছিলো তিনি জ্বীন চালান ও দিতেন
তিনি । তো মিষ্টির দোকানদার কে সেই তদবীর প্রদানকারী লোকটি সত্যিই একটা মাদুলী
দিলেন । তো সেই মাদুলী যখন উনি গলায় ধারণ
করলেন তখন কিছু বুঝতে পারলেননা । বিশেষ কিছু পাবেন বলেও মনে করলেননা । কিন্তু ফল
দেখা গেলো পরবর্তী সপ্তাহের হাটবারে ।প্রচুর বেচাকেনা হতে লাগলো , একেবারে
অকল্পনীয় , বিষ্ময়করভাবে ওনার দোকানের মিষ্টি বিক্রির চোটে আরো অনেক খদ্দের খালি
হাতে ফিরে যেতো । ফলে এবার মিষ্টি বানানো আরো বাড়িয়ে দিলেন । ফলে দিন দিন অর্থ
বৃদ্ধিতে ওনার ভিতর একটু আরাম আর অহংকার ভাব এসে গেলো ।
(299)
বিড়ি সিগারেটের নেশা বেড়ে
গেলো , নামাজে আলস্য এসে গেলো , মাংশ ছাড়া খাওয়াতে অরূচি , দোকানে যে খরিদ্দার আসবার জন্য সারাক্ষন মনে
মনে আল্লাহর কাছে চাইতেন সেই খরিদ্দার দেখলে মনে মনে বিরক্তি আসে । জ্বীনের ফকির
কিছু জিনিষ বলে দিয়েছিলেন যেমন বিড়ি সিগারেট না খেতে , মাংশ কম খেতে , ফকির মিসকিন
কে দান ছদকা করতে , নামাজ পড়তে , কিন্তু টাকার প্রাচুর্য্যে সব ভুলে গেলো লোকটি ।
এমন সময় একদিন হাটবার এ মাগরিব এর আজান এর ওয়াক্ত পার হয়ে গেছে ।আবছা ফর্সা ভাব
আছে , সন্ধ্যার অন্ধকার পুরো নেমে আসেনি । বলে রাখা ভালো দোকান থেকে হাত বিশেক
দুরে ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরাতন একটা বটগাছ আছে । ওই বটতলাতেও কিছু দোকান বসতো ,
তারাও গুছিয়ে বাড়ি রওনা দিয়েছে । এমন সময় একটা সাধারণ সাজের আলেম-মাওলানা গোছের
একটা লোক এসে মিষ্টির জন্য দোকানে দাড়ালো । দোকানদারের তেমন ভ্রক্ষেপ নেই । সামনে
টিম টিম করে একটা লন্ঠন জ্বলছে । দোকানদারের ছেলেটা বাইরে বসে হেরিকেন এর সলতে ঠিক
করছিল । বেশ কিছু সময় পর লোকটা বললো কি রে আর কতক্ষন দাড়াবো । মিষ্টি হবেনা ? ,
বেশ দুরে যাবো । দোকানদার মিষ্টি দিলো বেশ তাচ্ছিল্যের সাথে । খুচরা টাকা ফেরত
দিতেও দেরি করলো । এর কয়েক মুহুর্ত পর দোকানদারের ছেলেটা আব্বা বলে কাপা গলায়
ভয়ার্ত স্বরে চেচিয়ে উঠলো , বাপ ও ছেলে মিলে দু জনে যা দেখলো তা হলো , একটু আগের
সেই মাওলানা গোছের লোকটি বটগাছের ভিতর মিশে যাচ্ছে , আর এতক্ষন যেন বাপ ছেলেকে এটা
দেখানোর জন্যই অপেক্ষাতে ছিলো মাওলানা মত লোকটি , তো ইশারায় সে যেটা বুঝালো যে যা
দেখলো তা যেন কেউ না জানে , কাউকে না বলে , তারপর থেকে মিষ্টির ব্যবসা ছেড়ে দেয়
লোকটি । এই ঘটনাটার পিনে তেমন কোন যুক্তি
দেখছিনা , নিছক হতে পারে জনশ্রুতি ।নেহায়েত এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা করার জন্য
বানানো গল্প বা হতে পারে কারো হুমকিতে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হয়েছিল ।
(300)
**** আমাদের এক আত্বীয়ের গল্প বলছি । এটাও গ্রামের । ওনাদের বাড়ির পিছনে বেশ বড় একটা পুকুর ছিলো । সেই পুকুরের দুই
পাড়ে দুটো শিমুলগাছ ছিলো ।উনি প্যারালাইজড
হয়ে বছরখানেক বিছানায় শুয়ে মারা যান । গল্পে বা এলাকার জনশ্রুতিতে শুনেছি উনি যখন
পুকুরটা পুনঃখনন করতে যান তখন নাকি এক গাছের শিকড় কেটে ফেলেন । ওই দুটো গাছ জোড়া
শিকড় নাকি পুকুরের পানির নিচ দিয়ে এপার থেকে ওপার গিয়েছিল ।গাছ দুটো নাকি জ্বীন
দ্বারা পজেজড্ ছিলো । এটাও যুক্তিবিহীন মনে হলো ।
**** একজন বেশ পরহেজগার মাওলানা ছিলেন আমার মামাবাড়ির গ্রামে । তিনি সব সময় জ্বীন নিয়ে কারবার করতেন । ওনার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট
হবার আগে গর্ভেই মারা যেতো ।বড় বড় চিকিৎসক ফেল মারাতে সবাই বলতো এটা নাকি জ্বীনদের বন্দী করে কষ্ট
দেবার অভিশাপ ।উনি ওনার মাদ্রাসার ছাত্রদেরও বলতেন উনি যখন তখন মারা যেতে পারেন । তো
উনি একদিন ঈদের নামাজ পড়ে উঠেছেন মাত্র , সালটা মনে আসছেনা , হতে পারে ২০০২-২০০৪
সালের ভিতর একটা ঈদের সময়ে। কয়েক কদম হেটেছেন আর হাত পা কাপতে কাপতে মারা গেলেন ।
এর পিছনে বিজ্ঞানের যুক্তি থাকতে পারে । গর্ভে সন্তানমারা যাওয়া আর হার্টের রোগ
সময়মত গরজ না করলে এমন হতে পারে । তবে সত্য বা মিথ্যা আমরা বলতে পারিনা । তবে কিছু
লোক বলতো লাশবাহী খাটিয়ার আশেপাশে বাতাসের মত কিছুর চলাচল অনুভব করেছে কয়েকজন ।
**** গাছ নিয়ে মানুষের ভয় বা শ্রদ্ধা ব্যপারটা গ্রামে বহু দেখেছি । ইসলামী পরিভাষাতে শিরক বিদয়াত বলা যেতে পারে , আবার নেহায়েত ভয় পাবার ব্যপার
ও হতে পারে । নানা বাড়ির গ্রাম এ বিল জলেশ্বর এ একটা হিজল গাছ ছিল , যায়গাটা সবাই
এড়িয়ে চলতো , আবার চাকুরিসূত্রে দর্শনাতে গিয়ে সেখানে মাঠের ভিতর একটা বটগাছ না কি
একটা গাছ দেখিয়ে একটা ছেলে এমন কথা বললো যেটা অদ্ভূত ,
(301)
আবার আমার শ্বশুর বাড়ির গ্রামে এখনো একটা বহু পুরাতন হরিতকি গাছ
আছে সেটার ছায়াতে নাকি কোন এক বুযুর্গ বসতেন, সে জন্য এখনো কারো বাচ্চার গালেভাত
দিতে গেলে ওই গাছতলাতে কিছুটা ভাত তরকার রেখে আসা হয় । আমাদের গ্রামের পৈত্রিক
বাড়ির থেকে ১০০ গজ দূরে একটা মাদ্রাসার পাশেই একটা বিশাল প্রাচীন শিমুল গাছ ছিল ,
যেটা নাকি ২৫০ বছরের মত পুরাতন , গ্রামে একটা গল্প প্রচলিত আছে গাছ টি নিয়ে যে এই
গাছতা যেখানে সেখানে ২৫০ বছর আগে ছিল প্রমত্তা বুড়ি ভৈরব নদী , এই নদী দিয়ে
ইংরেজদের একটা মাঝারি গোছের বাণিজ্য জাহাজ যাচ্ছিল , তো এখানে এসে সেটা তিরের
কাছাকাছি এসে ডুবে যায় , আর এই ডুবে যাওয়া যায়গাটা চিহ্নিত রাখতেই তারা তার থেকে
সামান্য দূরে একটা শিমুল গাছের ডাল চিহ্ন হিসেবে রেখে যায় , সেটাই কালক্রমে এই মহা
শিমুল গাছ হয়ে উঠেছে , ইংরেজরাও আর কোনদিন এই জাহাজটা নিতে আসেনি । কি জানি যদি
ঘটনা সত্য হয় তবে এই স্থানের মাটির ৫০ ফুট নিচে হয়তো সেই জাহাজটা আছে । গাছটার
নাকি ডাল পালা আগুনে দিলে সেই বাড়ির লোকেদের ক্ষতি হতো । এগুলো আসলে গ্রাম বাংলার
একেকটা অঞ্চল বা গ্রাম ভেদে লোককাহিনী হিসেবে প্রচলন হয়ে গেছে । সত্য মিথ্যা যাচাই
করা হয়নি ।
*****যাদু তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দুজন ফেরেশতার নাম আসে , তারা হলেন হারুত ও মারুত । একদা
যখন দুনিয়ার মানুষেরা সীমাহীন নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল তখন ফেরেশতারা
আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ করেন মানুষ কেন আল্লাহ আছেন জেনেও এটা করে আমরা হলে এ
রকম কুফরী করতামনা । তখন আল্লাহতায়ালা বলেন তোমরা মানুষের মত হলে এগুলো করতে , এ
রকম কথোপকথনের এক পর্যায়ে হযরত সুলাইমান আঃ এর যামানাতে তৎকালীন বাবেল(বর্তমান ইরাক এর বাগদাদ বা প্রাচীন ব্যবিলন ) শহরে হারুত ও
মারুত নামক দু জন ফেরেশতা কে মানুষের শরীরে ও প্রবৃত্তিতে পৃথিবীতে পাঠানো হয় ।
প্রথমে তারা সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত থাকেন এবং মানুষকে মোযেজা ও যাদুর পার্থক্য শেখাতে
যাদু শিক্ষা দিতে থাকেন ।
(302)
কিন্তু মানুষ এগুলো শিখে ফেরেশতাদের নির্দেশ অমান্য করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে
বিচ্ছেদ ও নানা ক্ষতিসাধনের কাজে লেগে পড়ে ।এ দিকে মানুষের প্রবৃত্তি দিয়ে সৃষ্টি
করা স্বত্তেও দীর্ঘদিন আল্লাহর পথে অটল থাকবার পরও ফেরেশতাদ্বয় জোহরা নাম্নী নামে
এক অতি সুন্দরী মহিলার ছলনার ফাদে পড়ে মদ্যপান , ব্যাভিচার ও মানবহত্যার মত জঘন্য
কাজ করে বসেন (নাউযুবিল্লাহ)। মদ্যপ অবস্থায় যোহরা ফেরেশতাদ্বয়ের থেকে এমন একটা
মন্ত্র বা কথামালা শিখে নেন যেটা পড়ে ফেরেশতা দুইজন আকাশে উঠতেন । মাতাল অবস্থা
কেটে যাবার পর ফেরেশতা দুজন দেখেন আর ওপরে যাওয়া যাবেনা কারণ ওনারা মদ্যপ অবস্থাতে
হত্যা ও যেনার মত জঘন্য কাজ করছেন । তখন অপশন এলো দুনিয়ার শাস্তি না আখিরাতে
শাস্তি ? ওনারা বেছে নিলেন পৃথিবীর শাস্তি কারণ পৃথিবীর শাস্তি একদিন শেষ হবে ,
কিন্তু আখিরাতের শাস্তি অনন্ত , সে মোতাবেক ফেরেশতা দুজনের শাস্তি এখনো চলছে ।আর
যোহরা ঊর্ধাকাশে ওঠার মন্ত্র পড়ে উঠতে গিয়ে আকাশের তাঁরাতে পরিণত হন । শুক্রগ্রহ
বা শুকতারাকে যোহরা বলা হয় । অনেকে আবার বলেন যোহরা শুক্র গ্রহের বা শুকতারার মত
সুন্দর ছিলেন বলে ওই রমনির নাম হয় যোহরা ।
তবে অনেক তাফসীরকারক এটাকে বিতর্কিত ঘটনা বা বানোয়াট বলেন । কারণ হিসেবে
তরা বলেন ফেরেশতারা সম্পূর্ণ পাপ মুক্ত এসব পাপ কার্য্য ওনাদের দিয়ে হতে পারেনা ।
তবে যাই হোকনা কেন অধিকাংশ যায়গাতে হারুত মারুত ফেরেশতার বিতর্কিত এই ঘটনাটি
প্রচলিত । আসলে যাদুসম্পর্কীত উদাহরণ টেনেছি এবং এ সব যত ঘটনা এই বইয়ে বলেছি সবই
বিতর্কিত বলা চলে । প্রসঙ্গক্রমে আবারো বলছি উদাহরণ এর বেশি আর কিছু না ভাবা বা
বিশ্বাস না করাটাই আমার মত ।
****কালো যাদুর শেষ একটা ঘটনা বলি , গল্পটা মজার ও বটে ।ঘটনাটা ২০০১ থেকে ২০০৩ সালের ভিতরের । মার্কিন হামলাতে আফগানিস্তান আর ইরাক
ধ্বংস হয়ে গেলো , আমাদের মত সাধারন মুসলমানদের ভিতর হাহাকার , এই বুঝি পৃথিবী থেকে
ইসলাম গেলো গেলো বলে রব উঠলো ।
(303)
যুদ্ধ পূর্ব সময়ে তাদের অনেক কাজের সাথে মতের অমিল থাকলেও পরে পরে তো তাদের
আমেরিকার হাতে মার খাওয়া দেখতে ভাল লাগবেনা ,এটাই স্বাভাবিক , কারন যুদ্ধ যে কারনেই হোকনা কেন ভুক্তভোগী ও
নির্বিচারে মারা যাওয়া মানুষ গুলোর ৯০% হল নিরীহ নারী –শিশু ও পুরুষ। আর এই নিয়ে পুরো মুসলিম জাতির ক্ষোভ প্রেসিডেন্ট
বুশের উপর। পাড়ার মোড়ের দোকানে দোকানে ETV মানে একুশে টেলিভিশন নামক চ্যানেলে সন্ধ্যার পর
দুবার সংবাদে আফগানিস্তানের যুদ্ধের ভিডিও
খবর দেখে লোকজন মুখে মুখে বুশ কে শাপ শাপান্ত করতে ছাড়েনা । এমন সময় আমাদের
গ্রাম থেকে এক গ্রাম পরের এক গ্রামে একজন ফকির এর সন্ধান পেল আমাদের একজন পাগলাটে
টাইপ এর একজন বড় ভাই । সেই পাগলাটে বড় ভাই ফকিরের বাড়িতে হাজির হলোও ।ফকির যথারীতি
একজন ভুক্তভোগী মক্কেল পেয়ে মুস্কিল আসান , সব সমস্যার সমাধান টাইপ এর বক্তৃতা
দিতে শুরু করলো । তখন বড় ভাই এর প্রথম প্রশ্ন আচ্ছা আপনি তো যে কাউকে বান মেরে শেষ
করে দিতে পারেন তাইনা। ফকির বাবার চটজলদি উত্তর শুধু বাপের নাম আর ওই বদমাশ টার
নাম বল । আর কি রকম বান মারতে চাস বল , গলায় ফাস দেওয়া বান মারব , নাকি সরশে পড়া
বান মারব , এমন বান মারব পেটের নাড়ী গলে গলে বের হয়ে যাবে । বল বল চটপট বল ,
বদমায়েশ টার বাপের নাম আর বদমায়েশ টার নাম বল । বড় ভাই বলল বাপের নাম জর্জ
হারবাট ওয়াকার বুশ , আর ছেলে জর্জ ওয়াকার
বুশ । এই বুশ জুনিয়র কে মারতে হবে । দরকার হয় ০১ লাখ টাকা দেব কিন্তু একে মারতেই
হবে । বার কয়েক ঢোক গিলে ফকির হা করে চেয়ে রইলো বড় ভাইয়ের
দিকে ।হ্যাঁ বা না কিছু আর মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা । আর কন রকম সময় না দিয়ে বড় ভাই
এর সমস্ত রাগ গিয়ে পরল ফকির বাবার উপর ।ইচ্ছা মত অশ্রাব্য ভাষাতে গালাগালি দিয়ে
বলল আর কখন তোকে এই সব ভণ্ডামি আর বুজরকিতে
দেখলে আমার ঝাঁটা , জুতা পড়া বাণ একটাও মাটিতে পড়বেনা । অদ্ভূত কিছু
নকশা সংগ্রহ করলাম তাবিজ আর কালোজাদু বিষয়ক , এর ব্যবহার বা অর্থ কোনটাই জানিনা
(304)
আমার বা আপনার কারো জানারও দরকার নেই ,
কিন্তু কথা হলো এই বিচিত্র নকশার লেখাগুলো কি কোন সুত্র ব্যবহার করে করা হয়েছিল ?
এগুলো হতে পারে এযুগে অকেজো , কিন্তু তিন থেকে চার হাজার বছর আগে বা হতে পারে তারও
আগে এগুলোর সূত্রপাত এবং এগুলো তখন সমানে কার্য্যকর ছিল , সকল ধর্মের ধর্মগ্রন্থ ও
অনেক নবীদের জীবনী এর সত্যতা প্রমাণ করে । কালের আবর্তনে এই গুলো সম্পূর্ণ
কার্য্যকরী করার কোন একটা প্রক্রিয়া মিসড্ হতে পারে , সে জন্য হয়তো এগুলো কাজ
করেনা , কি সুত্র ব্যবহার করে এগুলো লেখা যে শুধুমাত্র কাগজের উপর লিখলেই এই লেখা
কাজ উদ্ধার করতো ? মন্ত্র কি ছিলো –
ধ্বনিবিজ্ঞানের এক চরম ক্ষমতার উদাহরণ ছিলো কি , ? উচ্চারিত শব্দ দিয়ে বাস্তব জগতের কোন কাজে
হস্তক্ষেপ এটাও হতো , তাহলে তাবিজের এই লেখা , তারপর এগুলোর কি অর্থ কি হতে পারে ? তাহলে কি
তাবিজ-টেলিপ্যাথি-মন্ত্র এগুলো এক প্রকার হারানো বিজ্ঞান হতে পারেনা ?
(305)
(306)
নিছক ভন্ডামী না ভেবে
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যদি দেখি তবে কি কোন গুপ্ত বিদ্যার সুত্র ব্যবহার করে এগুলো
লেখা হয়েছিল বা কি রহস্য এই লেখাগুলোতে
আমরা কি বুঝবো ?[ তাবিজ ব্যবহার করতে বা বিশ্বাস করতে সম্পূর্ণ নিষেধ করছি ,
প্রতারকদের কবলে পড়লে মোটেই আমি দায়ী নই , শুধু ছবি দিলাম এ জন্য যে কোন রহস্য কি
এ রকম নকশা গুলোতে আছে ? কোন সুত্র বা উদ্দ্যেশ্য ব্যবহার করে এগুলো লেখা ? নাকি
ব্যবসার জন্য নিছক সুত্রবিহীন ও অর্থবিহীন সুন্দর সুন্দর নকশা ? প্রশ্ন হলো এটাই”]
*****আরেকটা কথা প্রায়শই বলা হয় প্রাচীন কালের মানুষ অনুন্নত এবং জংলিছিল
,পরিধানের জন্য
কাপড় ছিলোনা , উন্নত কিছু ছিলোনা । কিন্তু এটা কেও
কি অকাট্য সত্যি বলে
মেনে নেওয়া যায় ? আজ এই আধুনিক যুগেও তো আপনার বুশম্যান ,রেড ইন্ডিয়ান ,জুলু , এরা
তো একই রকম জংলি রয়ে গেলো । তাদের এলাকায় গেলে বিজ্ঞানীদের তথাকথিত সেই প্রাচীন
যুগে পৌঁছে গেছি বলে মনে হয় । এসব উপজাতিরা আধুনিক মানুষের জীবনযাত্রার সব কিছু
দেখে , কিন্তু তারপরেও তারা প্রাচীন আর আদিম থেকেই গেলো । এখন পুরো সভ্য জাতির
সভ্যতা কোন দুরযোগে এক যোগে ধ্বংস হয়ে গেলে দেখা গেলো বনে বসবাসরত ওরা শুধু টিকে থাকল
, ওরা একদিন আবার উন্নত হয়ে লিখল প্রাচীনকালে
মানুষেরা এরকম ভাবে গাছের গুহাতে বসবাস করতো , পশু শিকার করে খেতো , গাছের
ছাল বাকল পরতো ইত্যাদি ইত্যাদি , লেখাপড়া জানতোনা এরকম কত কথা শোনা যায় ।কিন্তু এই যুগেই
দেখুন মানব সভ্যতার ভিন্নতা ।বর্তমান পৃথিবীতে ১৯৫ টি রাষ্ট্র বা দেশ আছে ।কিন্তু সব দেশ সমান উন্নত নয় ।আমেরিকার
মানুষের জীবনযাত্রার সাথে বাংলাদেশের
তুলনা যেমন হয়না , তেমন বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে আফ্রিকার
মানুষের ও আছে বিস্তর পার্থক্য ।তেমনি
বর্তমানের প্রাচীন এইসব নৃগোষ্ঠী গূলো এখনো জংলী জীবনযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
(307)
কিন্তু একই সময়ে তাদের
পাশাপাশি হাজার গূণ উন্নত আধুনিক মানুষ থাকা সত্ত্বেও তারা আধুনিক জীবনযাত্রা
গ্রহণ করেনি ।সারা পৃথিবীতে এই জংলীদের থেকে সংখ্যাতে কোটিগুন আছে সভ্য মানুষ ,
তারপরেও তারা উন্নত হয়নি , উন্নত জীবনযাত্রা গ্রহণ করেনি । সেই কারণে বলা যায় যে
প্রাচীন কিছু নুড়ি পাথর , ভোতা অস্ত্র , মাটির হাড়ি পেলেই বলা যাবেনা যে আগের যুগে
বা হাজার বছর আগে সভ্যতা বলে কিছু ছিলনা ।সভ্যতা সম্বন্ধে এরকম ভূল ধারণা হবার আরো
একটি কারণ হলো যতো উন্নত সভ্যতা ছিল যেমন আটলান্টিক এ হারিয়ে যাওয়া শহর আটলান্টিস
, মিশরের হেরাক্লীওন ,ইসরায়েল এ ডেড সী এর
স্থানে অবস্থিত নবী লুত আঃ এর শহর , কুরআনে বর্ণিত সিরিয়া এর ইরাম শহর , মহাভারতের
কৃষ্ণের কথিত দ্বারকা নগরী সবগুলোর ভিতর একটা অদ্ভুত মিল পাবেন , সেটা হল এগূলো ছিল
পরবর্তী হাজার হাজার বছর থেকে অগ্রসর প্রযুক্তি সম্পন্ন বা ওভার আডভ্যান্স একেকটি
সভ্যতা , এই সভ্যতা গূলো নিয়ে যতো কাহিনী বা মিথ প্রাচীন পুরাণ বা কাব্যগ্রন্থ বা
ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে পাওয়া যায় সেখানে এসব সভ্যতার যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে মেনে
নিতে বাধ্য হতে হয় এরা সেই রকম উচ্চ লেভেলের উন্নত ছিল ।প্রাচীন যুগ গূলো ছিল
অনুন্নত আর সেখানে বসবাস ছিল জংলী সব মানুষের এটা একেবারে গাঁজাখুরি তত্ত্ব বলে
মনে হয় ।সেটা যদি বলা হয় যে ১০ হাজার বছর আগের মানুষ ও জংলী ছিল সেটাও মেনে নেওয়া
ঠিক নয় বিজ্ঞানীরা বলেছেন বলে । এটা বলা যেতে পারে এখন যেসব প্রযুক্তি বা যন্ত্র
আছে সেটা আগে ছিলনা । আবার ২০ বছর পর গিয়ে এখনকার আমাদের ফাস্ট ক্লাস উন্নত জিনিসগুলোও
অনুন্নত মনে হবে , এটা লিখে রাখুন । আবার
লক্ষ করুন আজ থেকে ৩০-৪০ বছের আগে যখন সাদাকালো টি ভি এলো তখন সেটা ছিল তখনকার সে
যুগের জন্য ব্যাপক কিছু।তখন মানুষ সেটা কে ভাবতো
যে এর থেকে উন্নত কিছু আর হবেনা ।তখন টেলিভিশন এ আলিফ লাঈলা যখন মানুষ দেখত
তখন আলিফ লাঈলার তখনকার আনাড়ি গ্রাফিক্স গূলো তখনকার মানুষের কাছে উন্নত কিছু ছিল|
(308)
মানুষ তখন ভাবতো সিনবাদ বা
তালিব কীভাবে উড়ে যায় আর সেটা কীভাবে সম্ভব করে আলিফ লাঈলা যারা তৈরি করে তারা ? শাহনেওয়াজ
প্রধান তখন সীনবাদের নাম ভূমিকাতে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ।সিনবাদ
হিসাবে তিনিই ছিলেন একেবারে পারফেক্ট । আবার দেখুন এখন সঙ্গীতের কত উন্নত
ইন্সট্রুমেন্ট আবিষ্কার হয়েছে ।কিন্তু বর্তমানের এতো উন্নত প্রযুক্তি কি আমাদের
একজন জন লেলোন, একজন জীম মরিসন ,মাইকেল জ্যাকসন ,বব মারলে , টমাস এন্ডার্স ,
রবিশংকর , এসডি বর্মন, কুমার সানু , এন্ড্রু কিশোর , রুনা লায়লা, দিতে পারেনি।আর
বিটোভন ও মোজার্ট তো আরো অনেক আগের ।তাদের পর আর নতুন বিটোভন মোজার্ট আসেনি।
তানসেন তো মধ্যযুগের কিংবদন্তি। মানুষ এখন অনেক জ্ঞানী ও বিদ্যান কিন্তু একজন
হোমার , শেক্সপিয়ার , শরৎ চন্দ্র , রবীন্দ্রনাথ , নজরুল , সত্যজিৎ রায় কিন্তু আর
আসেনি। এখন মানুষ অনেক স্মার্ট হয়েছে
কিন্তু নতুন করে একজন নায়করাজ রাজ্জাক বা সালমান শাহর বিকল্প কেউ আসেনি ,ভবিষ্যতেও
হয়তো পাবেননা। বর্তমান সিস্টেম এর ভিতর দিয়ে পরবর্তীতে এরকম প্রতিভা পাবার
সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আমি আগেও এক যায়গাতে বলেছি যে মানুষ তার সৃষ্টিলগ্ন থেকে
উন্নত, তার কোন অনুন্নত কাল ছিলনা , দিনে দিনে যা হচ্ছে সেটা হল বা মূল কথা হল
মানুষ তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই একটা বেস(base) বা
ভিত্তি বা মূলধারা নিয়ে চলে আসছে ,যেটার কোন পরিবর্তন হয়নি আজ পর্যন্ত ।মূলধারা হল
মানুষের সভ্যতাতে মানুষ ক্রমশ পূর্বের থেকে পরবর্তী আবিষ্কারকে উন্নত মনে করে , সব
কালে সব যুগে মানুষের অসাধ্য বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু জিনিস থাকে , আগে মানুষ
ডায়রিয়াতে মারা যেত , এখন ক্যানসার এবং এইডস মানুষ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছে ,
আর পূর্বের থেকে পরবর্তীতে উন্নত হতে হতে এক সময় ধ্বংস হয়ে যায় , এই ধ্বংসের পিছনে
থাকে ঘুরে ফিরে হাতে গোনা কয়েকটি কারণ মাত্র , সব সভ্যতা ধ্বংসের পিছনে হয়তো
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঝড়- জলোচ্ছাস-বন্যা-ভূমিকম্প-অগ্লুৎপাত )আর নয়তো
(309)
মানুষের নিজের অসচেতনতা , আর
প্রত্যেক সভ্যতা একেকটি শক্তি বা বিজ্ঞান কে আশ্রয় করে উন্নতির শিখরে উন্নত হয়েছে , এই মহাবিশ্ব অসীম শক্তির
আধার , সেই অসংখ্যা অগণিত শক্তির থেকে একটি শক্তি ধরতে বা আবিষ্কার করতে বা আয়ত্ত
করতে পারলেই সভ্যতার বিরাট পরিবর্তন হয়ে যায় , কোন যুগে মানুষ ধ্বনি বিজ্ঞান কে
আয়ত্ব করেছিল যেটাকে বর্তমানে মন্ত্রতন্ত্র বলে জানি এবং যেটা বর্তমানে অচল হয়ে গিয়েছে
, এখন যুগে মানুষ আয়নমণ্ডল এবং বিদ্যুৎ এই দুটো শক্তিকে আয়ত্ত করে সভ্যতার শিখরে
উঠেছে , বর্তমান সভ্যতা ধ্বংস হবার সম্ভাবনা আছে পারমানবিক যুদ্ধ তথা ৩য়
বিশ্বযুদ্ধ অথবা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ(ভূমিকম্প বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মাধ্যমে
সভ্যতা সমুদ্রের পানির নিচে চলে যাওয়া ) ।আরো একটা জিনিস হলো সব যুগেই দেখবেন
সভ্যতার সকল আবিষ্কৃত জিনিস ব্যাবহারের বা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সাধারণ জনতা পায়না
।এটাও কোন সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলে সেই সভ্যতার আবিষ্কৃত জিনিস গূলো হারিয়ে যাবারও
কারণ।যেমন আপনি আমি ব্যাবহার অনেক কিছু করছি , কিন্তু আজ যদি কোন কারণে মহাযুদ্ধ
বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় , তবে তারপরেও আমরা যদি কেউ বেঁচে
থাকি তবে আমরা কি সারাদিন সময় কাটানোর অপর
নাম বা সাথী স্মার্টফোন বা মোবাইল , ইন্টারনেট , প্রিয় বাইক এগূলো কি আবার
ফিরে পাবো ? আমরা এগূলো ব্যাবহার করতে পারি , ঘন ঘন মডেল পরিবর্তন করতে পারি
।কিন্তু এগূলো কীভাবে তৈরি হয় সেটা কি জানি আমরা ?যদি ও জানি যে কি কি লাগে
তারপরেও যদি তৈরি করতে যায় তবে দেখা যাবে সেই যন্ত্রাংশ গূলো তৈরি করতে একেকটি
দুর্লভ কেমিক্যাল এর প্রয়োজন , সেই কেমিক্যাল গুলোর আহরণ পদ্ধতিও ভিন্ন , আহরণ বা
তৈরি ও জটিল ব্যাপার । তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমরা হারিয়ে ফেলবো এক মহাসভ্যতা ।তখন
আমরা হয়তো পাথরের শিলালিপিতে বা অন্য কোন পদ্ধতিতে লিখে যাবো আমাদের এই আধুনিক
মহাসভ্যতার কথা ।তখন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মেরা আমাদের কথা বিশ্বাস করবে, ০৭
পূরুষ যাবার পর বিশ্বাস ক্ষীণ হয়ে যাবে ।
(310)
আর ০৭ পুরুষ পার হলে ওটা
প্রাচীন লোককথা বা পুরাণ বা মিথ , ইলিয়ড বা মহাভারত হয়ে যাবে ।সামান্য আজ থেকে ১৫০০ বছর হতে পারেনি
আমাদের বিশ্বনবী হযরত মূহাম্মাদ (সাঃ)এর জামানা ছিল ।নবীর আমলের সব ইতিহাস ও নমুনা
সংরক্ষিত থাকার পর ও বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব চলে আসছে যুগ যুগ ধরে ।আবার
ধরুন আমাদের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা ।মাত্র ৪৭ বছর আগে সংঘটিত হওয়ার পর
ও এবং পক্ষে-বিপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই ।
পূরো প্রমাণ সহ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও
মুক্তিযুদ্ধে কার কি অবদান , প্রকৃত এবং ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বিতর্কের শেষ নেই ,
লেগেই আছে ।৪৭ বছরেও আমরা জাতি হিসেবে স্থির ইতিহাসে আসতে পারলাম না ।তাহলে বুঝুন
৪৭ বছরে যদি সঠিক ইতিহাস হারিয়ে যায় সেখানে দু হাজার বছর , পাঁচ হাজার বছর , ১০
হাজার বছর আগের প্রকৃত ইতিহাস কে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা আর পণ্ডিতেরা ইচ্ছা মত বদল
করে দিতে পারে , বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কালের আবর্তে অত পুরাতন ইতিহাসের কোন গুরুত্ত
থাকেনা , গুরুত্তহীন হতে হতে একসময় সেই সত্যি ইতিহাস মিথ এ পরিনত হয় ।আর সবাই তো
সবকিছু এক রকম নজর বা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেনা ।আমরা যতই আন্দাজ অনুমান করি আর ফসিল
নিয়ে গবেষনা করে বলি না কেন হতে পারে তো অন্য কোন কিছু ।মাটির নিচে তো কত কিছুই
পাওয়া যায় তাই বলে বলে দেওয়া যায়না যে মানুষ কে আজকের মানুষ হতে ১০ লক্ষ বছর ধরে
বানর থেকে মানুষ হতে হবে , বা হোমো হাবিলিস হয়ে থাকতে হবে,
(311)
এই তত্ত্ব যে আজকের মানুষ
হবার জন্য ব্যাপক জরুরি এটা কারা বা কাদের জন্য আজকে সমাজে প্রচলিত হল কে জানে আর
সেটাই তো ব্যাপক ভাবে আমরা গিলছি এই তত্ত্ব ।হা ডারউইন সাহেবের দেওয়া বিবর্তনবাদের
তত্ত্ব এ ক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী ।কিন্তু সেখানেও স্পষ্ট ভাবে মানুষ বানর থেকে তৈরি
এটা বলা হয়নি । বলা হয়েছে বানর জাতীয় মানে
প্রাইমেট জাতীয় মানে শিম্পাঞ্জী , গরিলা ,বানর এসবের থেকে মানুষের সাদৃশ্য আছে
।কিন্তু তাই বলে বানর থেকেই মানুষ হতে হবে এটা বিশ্বাস করতে হবে এমন কথা নেই ।
বিজ্ঞান যা বলে সত্য বললেও আজ যা সত্য আছে বিজ্ঞানে ২০
বছর পর সেই তত্ত্ব মিথ্যা হবেনা এটা বলা যাবেনা ।আপনি যত
গবেষণা করেন না কেন আগের ব্যাপার নিয়ে সেটা হয়ে যাই সাদা কাগজে ইচ্ছা মত কিছু আকার
মত ,সাদা কাগজে কিছু আপনি আকলেন সেখানে যা আঁকলেন সেটাই মানুষ দেখবে এবং বিশ্বাস
করবে যে ওই কাগজটাতে ওই ছবিটাই ছিল এবং ওই কাগজটা ওই ছবির জন্য উপযুক্ত ছিল ।ধরুন
একজন লোক খুন করে খুনের কোন প্রমান রেখে
গেলোনা ।এবার পুলিশ এসে তদন্ত করবে অন্ধকারে সুচ খোজার মত ব্যাপার হিসাবে । এখানে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা
গেলো খুনি কোন প্রমান রেখে যাইনি , অনুসন্ধানেও দেখা গেলো এই লোকটার মোবাইল কল
লিস্ট এবং বাক্তি জীবন কোথাও কোন ঝগড়া বা চুক্তির নমুনা নেই , এখন লাশটা রাস্তার
পাশে কোন ঝোপ এ খুনি রেখে গেলো , এরপর
একটা লোক (যে লোকটা খুনি নয় এবং এ খুনের ব্যাপারে সে কিছু জানেনা) রাতের অন্ধকারে
ঝোপের ভিতরে পড়ে থাকা লাশটা খেয়াল করলোনা । সে প্রসাব করার জন্য ওই ঝোপ এ বসলো , এ
সময় তার পকেট থেকে তার আইডি কার্ড পড়ে গেলো বা তার একটা সনাক্ত করন কিছু পড়ে গেলো
। এটার সুত্র ধরে পুলিশ দেখা গেলো নিরাপরাধ লোকটিকে নিশ্চিত প্রমান সহ ধরে নিয়ে
আসলো , ফলে তার আর কিছু বলার থাকলোনা , অযথা জেলে বা ফাঁসীতে যেতে হতে পারে । এরকম
যে কেস হয়না তা নয় ।
(312)
এরকম নজির পুলিশ কেস স্টাডি
তে বহু পাবেন ।পৃথিবীর জন্ম ৫০০ কোটি বছর হতে হবে বা মানুষ ১০ লাখ বছর ধরে তৈরি
হতেই হবে এটা কেন বিশ্বাস করবো ? এমন
কথাতে আমার বিশ্বাস নেই ।এটা যে বিজ্ঞানীরা বলেছেন সবই আনুমানিক ।প্রকৃত ব্যাপারটা
হলো আমরা যা জানি , বইয়ে যা পড়ি , বিজ্ঞানীরা যেটা মিলিয়ন ডলার খরচ করে গবেষনা করে
সিদ্ধান্তে এসে আমাদের পড়াচ্ছেন সেটা অনুমান নির্ভর । স্রষ্ঠার ভাবনার সাথে এবং
সৃষ্টিকৌশলের সাথে বিজ্ঞানীদের পৃথিবী ও মানুষের
সৃষ্টি ও উৎপত্তি সম্বন্ধে ভাবনা না মেলারই সম্ভাবনা ১০০% । আরেকটা কথা যেটা অনেক বিজ্ঞানী অনুমান করেন
সেটা হলো যে আমরা সব মানুষ যে একই মানুষ থেকে এবং সেই মানুষ বেহেশত বলি আর অন্য
গ্রহ থেকে এসেছে বলি এই তত্ত্ব সত্য ।কারন যা রটে তা কিছুটা বটে এবং হাজার হাজার
বছর মানুষ একজন মানব এবং মানবীর থেকে সকল মানুষ এবং তারা পৃথিবীতে এসেছিল অন্য
যায়গা থেকে এটা দেখবেন পৃথিবীর প্রাচীন সকল উপজাতীয় নৃগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সভ্য
সকল জাতির প্রাচীন গ্রন্থ গুলোতে প্রচলিত আছে । এটা কখনো মিথ্যা হবে এটা মানুষ
ভাবেনা । কিন্তু দেখা গেলো ১০০০০ বছর পরের মানুষ এসে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলো এই
যে এটা তো শুনে আসছি , আসলে কি এটা সত্য ,
কিভাবে এটা সত্য এরকম ভাবতে গিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক তত্ত্ব এসে যায় । দেখা যাচ্ছে
পৃথিবীতে এখন উন্নত যন্ত্রপাতি আছে , কিন্তু আগে নভোযান ছিলোনা , তাহলে মানুষ এলো
কি করে , বলি ভেবে দেখুন যিনি এরকম মানুষ সৃষ্টি করলেন তার কাছে কি নভোযান এমন
কঠিন কিছু , মানুষ বেহেস্তে থাকুক আর অন্য
গ্রহ থেকেই আসুক না কেন তাকে তো কিছু জ্ঞান দিয়ে পাঠানো হয়েছে ।আচ্ছা এখন একটা প্রশ্ন করি , উত্তর দিন তো দেখি । .পৃথিবীতে
আমরা যে এত আশা করে এত দালান কোঠা ,টাকা বা সম্পদ গড়ছি সেই পৃথিবীটা কি কোন
নিশ্চয়তার ভিতর দাড়িয়ে আছে ? হয়তো বলা যাবে পৃথিবী আরো ৫০০ কোটি বছর টিকে থাকবে , কিন্তু যে কোন একটা মহাজাগতিক বিপদ হতে কতক্ষন
(313)
ব্যাপারটা আপনার আমার শরীরের
মত , আপনার বা আমার শরীর মানে মানব শরীর ১০০ বছর বেঁচে থাকবার উপযোগী করে তৈরি করা
। কিন্তু রোগব্যাধি , ধুমপান বা দুর্ঘটনাতে পড়ে মানুষ ২০ বছর বয়সেও মারা যেতে পারে
।এখন বেঁচে আছেন , ০১ ঘণ্টা পর যে মরবেননা , এটা বলা যাবেনা । আমাদের পৃথিবী
মহাকাশ মহাবিশ্ব সব কিছুই এরকম , আমরা পৃথিবীতে যা কিছু করছি , এই ধরুন দালান কোঠা
করছি , পৃথিবীতে বিখ্যাত হবো , সেলিব্রিটি হবো , কত সপ্ন আমরা দেখি , আচ্ছা ভাবুন
তো পৃথিবী বিজ্ঞানীরা অনুমান করে বলেছেন পৃথিবী আরো ৫০০ কোটি বছর থাকবে ।এটা তো
গতানুগতিক হিসাব মাত্র , কিন্তু মহাজাগতিক আকস্মিক দুর্ঘটনাতে যখন তখন ধ্বংস ও তো
হওয়া কোন বাপারনা ।পৃথিবী আছে তাই তো যে বিখ্যাত হয়ে মরে , তাকে মানুষ কিছু দিন
মনে রাখে মরার পরেও । কিন্তু যে মানুষ টা বিখ্যাত হয়না সারাজীবন কর্ম করে , সংসার
করে , রোজ সকালে উঠে কাজে বেরিয়ে পরে , সারাদিন কর্ম করে রাতে বাসায় ফেরে , আবার
সকালে কাজে বেরিয়ে যায় , আবার রাতে বাসায় ফেরে , বছরে দু একটা ঈদ –পূজা-পার্বণ যখন আসে তখন একটু আনন্দ করে , অনেকের ভাগ্যে তাও
জোটেনা , তারপর কালে কালে মানুষ একদিন যৌবন চলে যায় , আসে প্রৌঢ় কাল , তারপর আসে
বার্ধক্য ।এভাবে একদিন আসে মৃত্যু নামক সপ্নের প্রিয় পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার ভিসা ।
সবার চলে যেতে হয় একদিন এভাবে , সবার জীবনের গল্প এই একই রকম । আমি এই পৃথিবীতে
এসেছি , দু বেলা দুমুঠো ভাত আর জীবনের কিছু না কিছু সপ্ন বা লক্ষ পুরন করতে করতেই
আমাদের মৃত্যু নামক যাবার সময় হয়ে যায় ।পৃথিবীতে লাখে ০১ জন লোকের জীবন হয়তো এর
বাতিক্রম হয় বা বিখ্যাত হয় ।আবার এই পৃথিবীতে
তো প্রতি বছর সেলিব্রিটি তৈরি হচ্ছে , মানুষ বিখ্যাত হচ্ছে , লেখক , খেলোয়াড়
অভিনেতা হচ্ছে , কিন্তু সব সেলিব্রিটি কি
অমর ?সব সেলিব্রিটির কর্ম টাকে সেই যুগে লাইম লাইট এ রাখে বটে , কিন্তু কজন
সেলিব্রিটি কালোত্তীর্ণ হয় ? পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত অন্তত ১০০০ কোটি মানুষ এসেছে
(314)
কিন্তু মানুষ এর বই পত্রে বা
শিক্ষা জীবনে অন্তত একবার হলেও যে মানুষ দের নাম পড়া হয় তাদের সংখ্যা হাতে গোনা ।অল্প
কয়েকজন নবী রাসুল আর অবতার , সক্রেটিস ,
প্লেটো , এরিস্টটল , অশোক , মুঘল , অটোমান , ব্রিটিশ , রবি ঠাকুর-সেক্সপিয়ার , নেতাজী
, উত্তম কুমার , সালমান শাহ অথবা যে দেশে যে হিরো মানুষের ফেভারিট ইত্যাদি ইত্যাদি এই সব ছাড়া আর কিছু তো আমরা
কালেভদ্রে ও স্মরন করিনা । আবার দেখা যাবে
এই তালিকা গুলো থেকেও অনেকগুলো নাম মহাকালের আবর্তনে গুরুত্ব হারিয়ে হারিয়ে যাবে
।আমি এই পৃথিবীতে এলাম , আমি কেন এলাম , আমি কি পেয়েছি , আমি কি দেখেছি , আমি কি
করে , কি দেখে , কি অভিজ্ঞতা নিয়ে পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি ? ।আমি কি খাগড়াছড়ির
পাহাড় দেখেছি ? আমি কি কাশ্মির দেখেছি ,
দার্জিলিং দেখেছি কি ? হিমালয় পর্বত
দেখিনি , অ্যামাজন জঙ্গল দেখিনি , মহাসাগর দেখিনি , উত্তর মেরু-দক্ষিন মেরু
দেখিনি , দেখা হবেওনা কোনদিন । কোন এক মনিষী বলেছিলেন নাম টা মনে করতে পারলাম না ,
উনি বলেছিলেন তুমি পৃথিবী তে আসার আগে যেমন কিছু ছিলেনা , তেমনি পৃথিবী থেকে চলে
যাবার পর ও কোনদিন কিছু ছিলেনা , এমন হবে যেন তুমি কোনদিন পৃথিবীতে আসনি এরকম ভাবে
তুমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ।পৃথিবীতে কোনদিন তুমি আসনি আর কোনদিন মারাও যাওনি মানে কোন দিন
তুমি যদি কালাম নামক একজন বাক্তি হউ এই পৃথিবীতে কালাম নামে কেউ এসেছিল এটা পৃথিবী
ভুলে যাবে । তোমার বাসস্থান কালের আবর্তনে কোন এক অপরিচিত ব্যাক্তির কাছে চলে যাবে
, কত কিছু হবে । পৃথিবী যেন এক আবাসিক হোটেল , আমরা বেড়াতে আসা পথিক , কদিনের জন্য
এই হোটেলে অবস্থান করে আমাদের বিলীন হয়ে যেতে হয় মহাকালের গর্ভে । আবাসিক হোটেলে
কত পথিক আসে , কত পথিক যায় কে তার খোজ রাখে । আর সেই পৃথিবীর জন্য আমরা কত কিছু
করছি । আমরা কি ২০০০ বছর পরে মনে রাখার মত সক্রেটিস বা প্লেটো হয়ে মরতে পারবো ? এক
জীবনে পৃথিবীর সব সুন্দর যায়গা গুলো দেখে যেতে পারবো ?মহাকাশের অসীমতা ভ্রমন তো
কল্পনার অতীত।
(315)
আল্লাহই সব , বাকি সব মিথ্যা
, এইটাই সব কথার শেষ কথা হয়ে থাকবে । পৃথিবীর এখন দেখা গেলো অনেক বছর আগের অনেক সভ্য
একটা জাতি যে গ্রহে বসবাস করতো , সেই গ্রহটা একেবারে এতটাই উন্নত ছিল বা তাদের
প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল যে ,তারা যা চাইতো সেই গ্রহে তাই পেতো ।কিন্তু সেই
গ্রহের কোন পরিস্থিতিতে বা মানুষ কে নিয়ে বসবাস উপযোগী অন্য কোন গ্রহ খুজতে গিয়ে
দেখা গেলো পৃথিবীতে মানুষ কে পাঠানো যেতে পারে ।পৃথিবীতে সেই গ্রহের থেকে মানুষ
এলে দেখা গেলো তাদের যা দরকার , মানে ওই গ্রহে তো মানুষ খেতে শিখেছে , পরতে শিখেছে
, তাহলে পৃথিবীতে এসেও তাদেরকে খেতে এবং পরতে হবে । তখন তাদের কে সেই প্রয়োজন
অনুযায়ী প্রয়োজন মেটানোর জন্য পৃথিবীতে খাবার এবং পরিধেয় খুজে বের করতে হয়েছে
।আবার সাথে সাথে তাদের ওই গ্রহ থেকে যারা রেখে গেছে তারা সেই মানুশগুল রক্ষা কল্পে
বিভিন্ন কিম্ভুত যানে করে উড়ে আসতো ।আচ্ছা এই যে ফ্লায়িং সসার নিয়ে অনেক বছর ধরে
গুজব শোনা যায় ।৫০০০ বছর আগের সভ্যতা গুলোর ছবিতে যেমন এগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়
তেমনি , এই যুগেও এগুলো দেখা যায় । কিন্তু এগুলো সারা বিশ্বের সব মানুষ দেখেছে
কিন্তু এক্তাও ধরতে পারেনি , বা এগুলো সম্বন্ধে কোন তথ্য পায়নি । তাহলে হতে পারেনা
এটা হয়তো ভিন গ্রহী কিছু বা সাধারনের জন্য
উন্মুক্ত না হয়ে বিশেষ কোন গোষ্ঠীর হাতে আবদ্ধ গুপ্ত কোন বিদ্যা , যার মাধ্যমে
উন্নত দেশের কোন বিজ্ঞানীরা এটা তৈরি করছে এবং একমাত্র তারাই জানে এর তৈরির
উদ্দেশ্য । তো যা নিয়ে কথা হচ্ছিল দেখা
যাচ্ছে আমাদের এই সৌরজগৎ এবং মহাবিশ্ব দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে , এই ক্ষেত্রে যদি
সেই আমাদের মুল গ্রহ থেকে সৌরজগৎ বহুদুরে সরে যায় যায় তখন এমন হতে পারে আমরা আমাদের
সেই মাদার গ্রহ কে হারিয়ে ফেলেছি ।ফলে আস্তে আস্তে আমাদের উতপত্তি আমরাই ভুলে গেছি
।তারা আমাদের আর হয়তো খুজে পাইনি বা খোজার
প্রয়োজন অনুভব করেনি ।
(316)
তবে ধর্ম মতে আমাদের কে সেখানে
আবার ফিরে যেতে হবে এবং স্রষ্ঠা আমরা যা করছি সব দেখছেন ।এই বইয়ে যা লেখা সেটা
নিশ্চিত ভাবে কোন কিছু বলা বা ধর্ম বা বিশ্বাসে আঘাত করা নয় ।শুধুমাত্র যুক্তি ,
বিজ্ঞান ও ধারনার ভিত্তিতে এলেমেলো আলোচনা মাত্র ।দয়া করে কেও বাজে ভাবে নিয়ে উস্কানি দেবেননা , বা ধর্মীয় সেন্সে নেবেন না । বিবর্তন বা ৫০০ কোটি বছর বা ১০ লাখ বছরের ধারনা সত্য বলা যাবেনা এই
জন্য , যে আপনি একটা খাবার গরম হতে চুলাতে ০৫ মিনিট যে সময় লাগবে , ওভেন এ সেটা
আপনি ০১ মিনিট এ করতে পারবেন । এটা শুধু আমাদের ব্যাপার না , এরকম ব্যাপার ঘটে
বলেই কালে কালে পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস গুলো হারিয়ে গেছে , যেটুকু আছে সেটুকু ওই মিথ
আর কল্পনার মিশেলে টিকে আছে মহাভারত আর ইলিওড হয়ে। যদি কেউ ক্ষমতার
দ্বন্দ্ব থেকে পরিশেষে ভয়ানক কোন যুদ্ধ সভ্যতার ও প্রযুক্তির চরম শিখরে থাকা
অবস্থাতে মানবজাতির উন্নতির সেই অধ্যায়ের
ধ্বংস ডেকে আনে বা মানব সভ্যতার উন্নতি নামক সিনেমার শেষে দি এন্ড লেখা
উঠিয়ে দেয় । এখনকার যুগ উন্নত একারণে যে এই যূগে যে দেশে যে ব্যাক্তি যা আবিষ্কার
করেছেন তা সেই ব্যাক্তির ভিতর বা তার গোষ্ঠীগত সীমাবদ্ধতার ভিতর কুক্ষিগত করেনি । যে দেশে যে ব্যাক্তি যা আবিষ্কার করেছেন সেটা
পৃথিবীর সব দেশে সবার ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে । মানে যেটা গ্লোবালাইজেশন
বা বিশ্বায়ন ।তাই বলা হয় যে বিজ্ঞান অতীতে ও ছিল , বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও
মানুষের প্রয়োজনে টিকে থাকবে ।কারন মানুষের প্রয়োজনে মানুষ যখনি কিছু খুজবে তখনি
সে এই প্রকৃতির অসংখা শক্তির ভিতর একটা না একটা শক্তি বা দ্রব্য গুন পেয়ে যাবে । আবার
দেখা যাবে একটা জিনিস আবিষ্কার করলো মানুষ
,পরবর্তীতে সেটার সহজ ভার্সন পেয়ে পুরাতন টা বাদ দিল , কিন্তু বিষয় হল যে কখনো
মানুষ বিজ্ঞান বিহীন থাকেনি । ধরুন মানুষ চকমকি পাথর দিয়ে আগুন জালান যায় এটা
একসময় আবিষ্কার করেছিল এবং তাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছিল , পরবর্তীতে দিয়াশলাই আবিষ্কার হয়ে মানুষ ম্যাচ ব্যাবহার করেছে , বর্তমানে অটো গ্যাস লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালাই বলে দিয়াশলই অনুন্নত
প্রযুক্তি এটা বলা যাবেনা ।
(317)
পরে আরও সহজ করতে গ্যাস লাইটার ও তৈরি করেছে ।এখানে লক্ষ করুন আগুন জ্বালানোর
জন্য মানুষ মাধ্যম পালটেছে মাত্র , আগুন বাদ দেইনি । তাই আবার জোরাল ভাবে বলি যে ‘’মানুষ সৃষ্টি লগ্ন থেকেই উন্নত সভ্যতার ধারক এবং বাহক , যুগ ভেদে এবং যুগে
যুগে বিজ্ঞান এসেছে ভিন্ন রুপ নিয়ে বা
একেক যুগে একেক শক্তি নির্ভর হয়ে ।
*****খ্রিস্টপুর্ব ৬৩ অব্দ , স্থান রোমান রাজসভা
, এখানে একটা বস্তু সেদিন প্রদর্শন করা হল , নাম হল “ভিট্রাম ফ্লেক্সিলে” মানে দাড়ায় নমনীও
কাচ , নমনীয় কাচ সেটা আবার কি জিনিস ? আসলে আমারা যেটা কাচ বলি বা চিনি সেটা
কিন্তু বালুকা থেকে তৈরি বিশেষ কায়দাতে , আর এই কাচ যায় ভেঙ্গে , কিন্তু ওই দিন
একজন আবিষ্কারক এমন এক কাচ দেখান যেটার সব বৈশিষ্ট্য কাঁচের মত , কিন্তু এটাকে
ইচ্ছা মত দুমড়ানো মোচড়ানো যেতো । রোমান রাজসভাসদ পেত্রনিয়াস এর ভাস্যমতে একজন
পণ্ডিত গোছের লোক সম্রাট টিবেরিয়াস এর দরবারে একটি কাচের পাত্র নিয়ে আসে , তিনি
সেটা সম্রাট কে উপহার দেন । সম্রাট এই কাচএর পাত্রটিতে অসাধারন কিছু না দেখতে পেলে
লোকটি কাচের পাত্রটিকে সজোরে মাটিতে আছড়ে ফেলে । সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাত্রটি না
ভেঙ্গে সামান্য বেকে যায় , সেটা আবার পিটিয়ে ঠিক করে ফেলা হয় । এরকম আশ্চর্য জিনিস
দেখে সম্রাট মনে করেন এরকম জিনিস জনগনের হাতে এলে রাজার হিরা জহরত এগুলোর বাজার
মুল্য কমে যাবে । ফলে রাজা ওই লোকটিকে হত্যা করেন , লোকটির মৃত্যুর সাথে সাথে হারিয়ে যায় কাচের এই
মুল্যবান এই সংস্করণটি ।
****প্রাচীন রোমান পনটাসের গ্রীক রাজা ষষ্ঠ মিথ্রিডেটস আবিষ্কার করেন ইউনিভার্সাল
.এন্টিডোটস বা সব বিষের এক প্রতিষেধক ,
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকাচার বিভাগের প্রভাষক আদ্রিয়ান মেয়ার ২০০৮ সালে
প্রকাশিত লেখাতে এটি সম্বন্ধে উল্লেখ করেন । এই মহামূল্য আবিষ্কারটিও রাজার
মৃত্যুর পর অন্য কাউকে না সেখানর জন্য বিলুপ্তও হয়ে যায় ।
(318)
**** বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস আজ
থেকে প্রায় ২১৫০ বছর আগে এমন এক রশ্মি নিক্ষেপণ
যন্ত্র আবিষ্কার করেন যেটা , ১০০০ ফুট দূর থেকে কোন কিছুর গায়ে এই আলো লাগলে
সেখানে আগুন ধরে যেতো , তৎকালীন সময়ে সেই রশ্মি গ্রীকেরা রোমানদের বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধে
ব্যাবহার করেছে । এটাকে আর্কিমিডিসের ডেথ রে বা মৃত্যূ রশ্মিও
বলা হতো । আর্কিমিডিস এর মৃত্যুর সাথে এটিও বিলুপ্তও হয়ে যায় ।
***** মসলিন নামক কাপড়ের কথা আমরা কে না শুনেছি , এটি আমাদের বাংলাদেশেই তৈরি হতো ।
এটা এতটা পাতলা ছিল যে একটি মসলিনের শাড়ি একটি ছোট দেয়াশলাই বাক্সে রাখা যেতো । ইজ ইট পসিবল !!!! কিন্তু
উনবিংশ শতাব্দীতে এটি ইংরেজদের আরোপকৃত বড় অংকের কর ( স্বাভাবিকের থেকে ৭০-৮০ গুন
বেশি কর) এবং মসলিন কারিগরদের আঙ্গুল কেটে
ফেলার কারনে আশ্চর্যজনক এই শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায় । সেই থেকে আর কখনো প্রচুর গবেষনা
করেও এটি আর আবিষ্কার সম্ভব হয়নি । তবে ২৮ প্রকার মসলিনের ভিতর বর্তমানে জামদানি নামক
এক প্রকার প্রকরন টিকে আছে ।ফুটি কার্পাস নামক তুলার ৩০০ কাউন্ট এর
সুতা দিয়ে অতি গোপনীয় এবং বিশেষ কায়দাতে এটা প্রস্তুত হতো ।
****** এক সময় ইউরোপের কোন রাষ্ট্রে এমন একটা তেল আবিষ্কার করা হয়েছিল যেটা সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেতো । কিন্তু এই
তেল নিয়ে এটা লেখার কারণ নয় , কারণটা হলো
সাস্থ্যসচেতন মানুষ মাত্রই তৈল এড়িয়ে চলি কারণ এটি ফ্যাট এবং এর অতিরিক্ত ক্যালরীর
কারনে । যারা তেল জাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের স্থুলতা ও হার্ট এর সমস্যা দেখা দেয় । তো এমন যদি কোন তেল থাকতো যার কোন
ফ্যাট বা ক্যালরী নেই । তাহলে তো খুব ভালো হতো ।এমনই একটা তেল তখন আবিষ্কার হয়েছিল
। এই তেলটি রান্না ও ভাজাভাজির কাজটা অন্যান্য তেলের মত সমানে করে দিতো । কিন্তু
এর একটা সমস্যার কারণে এটা বাতিল হয়ে যায় ।
(319)
সমস্যাটা হলো এমন যে এই তেলের
রান্না কিছুদিন খাবার পর মলত্যাগে একটা চরম সমস্যা হতো , সেটা হলো অনিচ্ছাস্বত্বেও
মল বেরিয়ে আসা শরীর থেকে । ফলে বিব্রতকর অবস্থাতে পড়বার ভয়ে এটির ব্যাপারে মানুষের
আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায় । ফলে এটি এর ফর্মূলা সহ বিলুপ্ত হয়ে যায় । এ রকম সমস্যা
বর্তমানে ওর্লিস্ট্যাট আই এন এন
নামে একটা স্লিমিং পিলের প্বার্শপ্রতিক্রিয়াতেও দেখা যায়।
**** ইরাকের বাগদাদে একটি ২০০০ বছরের পুরাতন পাত্র
পাওয়া যায় ।যেটা আয়রন রড ও কপার সিলিন্ডার যুক্ত । এর ভিতরটা ভিনেগার পরিপূর্ণ ছিল
। যেটা থেকে ০১ ভোল্টের উপর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতো ।তাহলে কি ২০০ বছর আগের মাইকেল
ফ্যারাডে অথবা ইতালীর লুইজি গ্যালভানীর বিদ্যুৎ আবিষ্কারের আগেই ২০০০ বছর আগে ইরাকে অজ্ঞাত জ্ঞানীদের হাতে
বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল ? আর এটা
গুপ্তবিদ্যা হিসেবে হারিয়েও গিয়েছিল । ঘটনাসূত্র তো তাই বলে ।
****যেমন একসময় বাইজেন্টাইন রা গ্রিক ফায়ার
নামে এক বিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কার করেছিল । এটা এমন এক পদার্থ যা পানিতে
পরলেও নিভতোনা ।কোন কিছুর মাধ্যমে এই পদার্থ ছুড়ে দিলেই হল , ব্যাস সাথে সাথে দাউ
দাউ করে আগুন জলে উঠতো , পরবর্তীতে এর আবিস্কারকদের মারা যাবার সাথে সাথে এটার
প্রস্তুত প্রনালী হারিয়ে যায় , পুনর্বার আর কোনদিন এটা আবিষ্কার সম্ভব হয়নি ।
এগুলো তো গেলো হারানো অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের কথা , আমাদের দেশেই দেখবেন মাঝে
মাঝে সামান্য শিক্ষিত কিছু মানুষেরা কিছু বিস্ময় যন্ত্র বা ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলে
। কিন্তু শুধু মাত্র সেটা পত্রিকাতে আসে । পরবর্তীতে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে
এরকম আবিষ্কার গুলো হারিয়ে যায় । যেমন জনশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের বাংলাদেশের
জিঞ্জিরার সাহাবুদ্দিন নামে একজন ব্যাক্তি ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে পুরাতন
হেলিকপ্টার এর যন্ত্রাংশ দিয়ে ০২ বছরের চেষ্টাতে ১৯৭৯ সালে উড্ডয়নক্ষম হেলিকপ্টার
তৈরি করে ফেলেছিলেন
(320)
আর মাঝে মাঝে আমরা বাড়িতে বসে
মোবাইল দিয়ে ০৫ কিলোমিটার দুরের স্যালো ইঞ্জিন
স্টার্ট দেবার কথা তো আমরা শুনেছি অনেকে ।আবার জিঞ্জিরার কারিগররা এতটাই দক্ষ যে
পৃথিবীর যে কোন কোম্পানীর জিনিসের হুবহু নকল তৈরি করতে পারে তারা ।আবার মাঝে মাঝে
এমন কিছু মামুলি কবিরাজ পাওয়া যায় যারা গাছড়া
দিয়ে দুর্লভ সব ঔষধ আবিষ্কার করে । যেটা কিন্তু হরহামেশা হতদরিদ্র লোকেরা
ব্যবহার করছে এবং আরোগ্যও হচ্ছে । আবার এ রকম লোককে বিশ্বাস করে হরহামেশা মানুষের
মৃত্যূ বা ক্ষতিও হচ্ছে । তবে পরিক্ষীত যদি কিছু পাওয়া যায় তবে সেটা পৃষ্ঠপোষকতা
পেলে মানব কল্যান ছাড়া অকল্যান হবেনা ।
এভাবে কোন কোন সময় সেটা
গোটাকয়েক লোকের ভিতর সীমাবদ্ধ থেকে তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে সেই আবিষ্কৃত বিজ্ঞান
লুপ্ত হয়ে গেছে , আবার কোন কোন বিজ্ঞানের সহজ বিকল্প আবিষ্কার হওয়াতে অপেক্ষাকৃত
কঠিন পথ বাতিল করে মানুষ সহজটি গ্রহন করেছে ।যেমন তার টানা টেলিফোন বাদ দিয়ে
মানুষ মোবাইল সানন্দে গ্রহন করেছে , ঘোড়া বাদ দিয়ে সাইকেল গ্রহন করেছে , সাইকেল
বাদ দিয়ে মোটর সাইকেল নিয়েছে , কিন্তু সবগুলোর উদ্দেশ্যই কিন্তু দ্রুত আরামদায়ক
ভাবে গন্তব্ব্য পৌঁছানো , ঘোড়া চালনাটাও
শিখতে হতো ,সেটাও একটা পশুর সেন্স বুঝে পোষ মানিয়ে চালনার বিজ্ঞান ছিল , ঘোড়া আবার যথেষ্ট দ্রুত বাহন ছিল
, ঘণ্টায় ঘোড়া ৪০-৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে পারে ।এখানে একটা মজার জিনিস বলি । বর্তমানে অতি
ক্ষমতাসম্পন্ন স্মার্টফোন বা মোবাইল আবিষ্কার হয়ে বেশ কিছু বিজ্ঞানের আবিষ্কার
বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা তাদের কার্য্যকরীতা হারিয়ে ফেলেছে ।যেমন ধরুন হাতঘড়ি,
টর্চলাইট ,ক্যলকুলেটর , ক্যমেরা , রেডিও-ক্যাসেট-সিডি-কাগজের বই এ রকম অনেক কিছু
।এখানে ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে উপরোক্ত
যন্ত্রগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়নি । ওই যন্ত্র গুলো দৃশ্যপট থেকে চলে গেছে ঠিকই ,
কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে সে গুলোর কাজ চলে যাচ্ছে
(321)
খুব ভালোভাবেই মানে মোবাইলের ভিতর এগুলো
জীবন্ত ।মানে মোবাইলের ভিতর উপরোক্ত যন্ত্রগুলোর ফাংশন থাকাতে মানুষ আর আলাদা করে
উপরোক্ত যন্ত্র গুলো আলাদা করে বহনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেনা । এখন কেউ যদি বলে
হাতঘড়ি, টর্চলাইট ,ক্যলকুলেটর , ক্যমেরা , রেডিও-ক্যাসেট-সিডি-কাগজের বই এগুলো
বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেটা বলা ভুল হবে । কারন উপরোক্ত যন্ত্রগুলো স্ব শরীরে বিলুপ্ত
হয়েছে ঠিকই কিন্তু মোবাইলে সফটওয়্যারের রুপ ধারন করে প্রত্যেকটি যন্ত্রই তাদের অস্তিত্ব
ও ব্যবহার ঠিকই টিকিয়ে রেখেছে ।কিন্তু স্মার্ট ফোন আসবার আগে উপরোক্ত যন্ত্র গুলোয়
ছিল মানুষের লেটেস্ট আবিষ্কার , তারা ভাবত এর থেকে উন্নত আর কিছু হবেনা , কিন্তু
এখন ভাবুন ! অনেকটা শক্তির নিত্যতার সুত্রের
মত ব্যাপারটা ।শক্তির বিনাশ বা ধবংশ নেই ,
এক রূপ থেকে অন্য রূপে শক্তির পরিবর্তন হয় মাত্র । পুরো জগৎই আপেক্ষিকতা ও এই
শক্তির নিত্যতার সুত্র দ্বারা আবর্তিত ও নিয়ন্ত্রিত । এভাবেই মানুষের প্রয়োজনীয়তা ,
যুগ ভেদে একটা না একটা নতুন সীমাবদ্ধতা এবং
বিজ্ঞান যুগে যুগে রুপ বদল করে একে অপরের পরিপুরক হয়ে চলছে ।যদি বর্তমান যুগের
সাথে অন্য যুগের বিজ্ঞানের কোথাও পার্থক্য থাকে সেটা হলো এখনকার বিজ্ঞানের .সুবিধা
সবার জন্য উন্মুক্ত ।বিগত যুগ গুলোতে যেটা .সমাজের একেবার নিম্নস্তরের মানুষের
ধরাছোয়ার বাইরে ছিলো ।
পুরো বিশ্বজগতে
অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত বা বাস্তব-অবাস্তব বলে কিছু নেই । সবটাই একটা ধাধা , একটা
আপেক্ষিকতা ছাড়া আর কিছু নয় । পরম সত্য একমাত্র স্রষ্ঠাই জানেন । আমরা জানি আলোর
গতি ১,৮৬,০০০ মাইল প্রতি সেকেন্ডে ।সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ০৮
মিনিট ১৯ সেকেন্ড ।মানে এই মুহূর্তে সূর্য বিস্ফোরিত হলে পৃথিবীর মানুষ সেটা দেখবে
০৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর ।মহাকাশে পৃথিবী থেকে এত দূরে তারা আছে যে তার আলো
পৃথিবীতে এসে পৌছাতে ০২ হাজার বছর লেগে যেতে পারে
(322)
তাহলে ব্যাপারটা হচ্ছে এমন যে , ওই তারা
যদি এখুনি বিস্ফোরিত হয় তবে তা আমরা দেখতে পাবো ঠিক আজ থেকে দু হাজার বছর পরে ,
তাহলে আমরা আসলে দেখছি কি ?যে তাঁরাটা আজ বিস্ফোরিত হতে দেখলাম সেটা আজ থেকে দু
হাজার বছর আগে বিস্ফোরিত হয়েছে ।তাহলে যা দেখছি তা পরম সত্য নয় , স্থান ও কাল ভেদে
তার ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে ।তার মানে যদি কেউ ওই রকম একটা নক্ষত্র থেকে পৃথিবীর
দিকে তাকাই তাহলে সে দেখবে দু হাজার বছর
আগের পৃথিবীর জীবনযাত্রা সেই রাজা রাজড়া তথা মৌর্য সেই শাসনামল , যান্ত্রিক
আবিষ্কার বিহীন জীবনযাত্রা ।আর যার গ্রহ বা নক্ষত্র থেকে পৃথিবীতে আলো পৌছাতে ০৭
কোটি বছর লাগবে সে তার গ্রহ থেকে দেখবে পৃথিবীতে অতিকায় ডাইনোসর চরে বেড়াচ্ছে ।
বর্তমানের আধুনিক কিছু সে দেখতে পাবেনা । সে শুধু দেখতে পাবে জলা জঙ্গলে পরিপূর্ণ
অতিকায় প্রাণীদের চরে বেড়ানো একটা গ্রহ ।
এই যেমন ধরুন এই আপনি যে দেশে বসবাস করছেন সেখানে এখন দিন , প্রখর রোদে বাইরে
বের হতে পারছেন না , খুব শান্তিতে ঘুমান তো কল্পনার ব্যাপার । কিন্তু এই একি সময় অন্য
কোন দেশে রাত , জ্যোৎস্নাস্নাত রাত , হালকা ঝিরি ঝিরি হাওয়া বইছে , হতে পারে কারো
কাছে সেটা খুবই রোম্যান্টিক একটি রাত , হতে পারে কারো কাছে সুন্দর ঘুমের জন্য
উপযুক্ত একটি রাত । এখানেও দেখুন একটি কিন্তু থেকে যাচ্ছে , একটি জ্যোৎস্নাস্নাত
রাত এর অর্থ বা একটি রোদ্র উজ্জ্বল দিনের অর্থ সবার কাছে এক রকম হচ্ছেনা । আবার
ধরুন ১০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দিন হতো ১৮ ঘণ্টাতে , এখন হয় ২৪ ঘণ্টাতে ,
ভবিষ্যতে হতে পারে ২৫ ঘণ্টাতে , ইউনিভার্সিটি অফ উইস্কন্সিন অফ ম্যাডিসন এর ভুবিজ্ঞানের
অধ্যাপক স্টিফেন মেয়ারস এর মতে সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে
যাচ্ছে , এতে পৃথিবীর আহ্নিক গতি প্রভাবিত হচ্ছে । নিজের চারদিকে একবার ঘুরতে বেশি
সময় নিচ্ছে পৃথিবী । এক সেকেন্ড মহাবিশ্বের ইতিহাসে অনেক সময় , এক
সেকেন্ড পৃথিবী ঘোরা থামালে পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংশ হয়ে যাবে , আপনি যখন হাচি দেন ,
এক সেকেন্ড আপনার হার্ট বন্ধ হয়ে যায় ।
(323)
ঠিক এই কারনেই দিন এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
পাচ্ছে । এবার বুঝুন ব্যাপারটা যদি দিনের দৈর্ঘ্য কম বা বেশি হয় তবে সেটা অবশ্যই
পৃথিবীর প্রাণী , আবহাওয়া এবং জলবায়ু কে ব্যাপক আকারে প্রভাবিত করবে ।বিদ্যমান
প্রাণী জগতের ধ্বংস ,বিবর্তন , এবং নতুন
সৃষ্টি হবে ।
তাহলে এই বইটি থেকে অমিমাংশীত ও দীর্ঘকাল ধরে সত্য না মিথ্যার বিতর্ক চলে আসা
বিষয়গুলোতে যে বিষয়ে যে সিদ্ধান্তে আসা গেলো -
**** কালযাদু বা গুপ্তবিদ্যা - এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন জনশ্রুতি ও কুসংস্কার মুলক
প্রচলিত কয়েকটি গল্প কালযাদু কি এবং কেন বোঝবার সুবিধার্থে দিয়েছি ।মুলত কালযাদু
বা ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে কিছু নেই সেটাই বলেছি । এবং বলেছি যদি এরকম কিছু থেকে থাকে
এবং সেটাতে যদি কারো জানামতে নিশ্চিত কাজ হয়ে থাকে তবে সেটা অবশ্যই বিজ্ঞানের
বর্তমান সংগ্রহের আড়ালে থেকে থেকে যাওয়া কোন বিদ্যা । এই বিদ্যার বড় উদাহরণ হ্যারি
হুডিনি , পিসি সরকার , ডায়নামো , ক্রিস এন্জেল । যদিও এই রহস্যময় বিদ্যাকে [[ হতে
পারে পিছনে থাকা ভিন্ন ডাইমেনশনের অদৃশ্য কোন সৃষ্টির সাহায্য কে বা অনাবিষ্কৃত
ফিফথ ফোর্সের কোন ধরন থেকে সাহায্য তারা পেয়ে থাকেন ]] তারা বার বার স্টেজের
কারিশমা , স্টেজ পার্ফর্মেন্স বা বিজ্ঞানের মজার খেলা বলে এড়িয়ে গিয়েছেন ।মূলকথা
এটা বলেছি যে “বিজ্ঞান আর কালোজাদু ভিন্ন কিছু
নয়” । বিজ্ঞান সেটাই যে বিদ্যার ব্যবহার বা সুবিধা আমাদের
সবার জানা এবং যখন তখন ইচ্ছা করলেই আমরা পাচ্ছি । আর বিজ্ঞানের যে সাইডটা মানুষ
জানেনা , মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত নয় , চিরকাল লোকচক্ষুর আড়ালে বা বিশেষ
কোন শ্রেণীর হাতে রহস্য হয়েই থাকছে সাধারনের কাছে যে সেটা আছে কি নেই ? কাজ হয় কি
না হয় ? মোট কথা বিজ্ঞানের আলোকিত , প্রকাশ্য ও সার্বজনীন ব্যবহারের অংশটাই আধুনিক
সভ্যতা , আর লোকচক্ষুর আড়ালে , গুপ্ত ও ব্যবহার সীমিত ক্ষতিকর ও ভয় এবং রহস্যে
ঘেরা অংশটুকুই কালোজাদু ।
(324)
**** জ্যোতিষবিদ্যা - বর্তমান বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মানবজীবনের উপর এর প্রভাবের কোন ভিত্তি নেই ।জ্যোতিষবিদ্যার
যে গ্রহ নক্ষত্র গুলো ভিত্তি করে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় সেটার পরীক্ষিত কিছু সত্য হল
প্রকৃতির কিছু দুর্যোগ এর উপর গ্রহ নক্ষত্রের কিছু প্রভাব , এবং এক এক ভিন্ন মাসে
জন্ম গ্রহণকারী মানুষের স্বভাবের ভিন্নতা। তবে প্রমানিত বিজ্ঞান্সম্মত সত্য না
থাকলেও দূর অতীতে এটার কার্যকরীতা ছিল এটার প্রমান ইতিহাসে অনেক আছে । খনা এবং
বরাহমিহির এর বিদ্যা এখনো সত্য বলে প্রমান হচ্ছে । মিসরের প্রাচীন ফেরাউনদের রাজসভাতে জ্যোতিষীর চরম কদর ছিল
।হজরত মুসা আঃ আসবেন এবং ফেরাউন কে ধ্বংস করবেন সেটাও কিন্তু ফেরাউনের স্বপ্নের
জ্যোতিষগণনা ছিল । ইসলাম ধর্ম মতে হুজুর সাঃ এর সময় থেকে জীনদের ১ম আসমানে যাওয়ার
নিষেধাজ্ঞার কারন থেকেই জ্যোতিষবিদ্যার পতন তরান্বিত হয়েছে তখনি । কিন্তু সেই
ঘটনার এত বছর পরও যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটা অবশ্যই কথিত অদৃশ্য শয়তান জীনদের
কাছে নির্দিষ্ট গুপ্ত কোন কায়দাতে নির্দিষ্ট ব্যাক্তি নতিস্বীকার করে , শয়তানের
উপাসক হয়ে এই বিদ্যা অর্জন করে , তারপরেও তার ভবিষ্যদ্বাণীর কিছুটা সত্য হয় আর
কিছুটা মিথ্যা হয় । মানুষ তার ভাগ্যের গঠন নিজে করে , নিজের অলসতাতে ,
দৃষ্টিভঙ্গির দোষে ও অসতর্কতাতে দুর্ভাগ্য ডেকে আনে ।হাতের রেখা তৈরি হয় মানুষ
মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতে হাতের মুঠি মুস্থিবদ্ধ করে রাখে বলে ।ব্যাতিক্রম উদাহরণ
দিতে গেলে হ্যা এবং না দুটোই পাওয়া যায় ।ভেবে দেখুন প্রত্যেকটি পত্রিকাতে রাশিফল
থাকে ।রত্ন পাথরের রমরমা ব্যবসাও থেমে নেই । এক বাক্যে সবাই জ্যোতিষবিদ্যা ভুয়া
বলে । কিন্তু এগুলো তাহলে ক্রয় করে কারা ? । আমি আর কি বলতে পারি বলুন। কিংবদন্তি অনুসারে সম্রাট অ্যালেক্সান্ডার যখন
উত্তর পশ্চিম ভারতে আসেন তখন নাকি একজন জ্যোতিষী মন্তব্য করেছিলেন ব্যাবিলনে
আলেক্সান্ডারের মৃত্যূ হবে। নিকট অতীতের প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুও জ্যোতিষবাণীর
সাথে মিলেছিল ।তারপরেও এগুলো না বিশ্বাস করা ভালো , ঠকবার সম্ভাবনাই বেশি।
(325)
বামের ছবিটি সম্রাট অ্যালেক্সান্ডার এর
প্রাচীন মূর্তি , আর ডান পাশের ছবিটি বর্তমানের 3D প্রযুক্তির মাধ্যমে ফটোশপ দিয়ে রিকন্সট্রাকশন করে তৈরিকৃত আলেক্সান্ডার দি
গ্রেটের কল্পিত সম্ভাব্য প্রকৃত ছবি
**** স্রষ্ঠাতত্ত্ব – স্রষ্ঠা
কে এ প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে কেউ হয়েছে সংসার বৈরাগী , কেউ হয়েছে আধ্যাত্বিক
ক্ষমতা সম্পন্ন বুযুর্গ , কেউ হয়েছে ভূল মতবাদের প্রবক্তা , কেউ হয়েছে শিরক ও
বিদয়াতকারী , আর কেউ হয়ে গেছে মহা নাস্তিক । যার বোঝবার দৌড় যতদুর আর কি । তবে যে
, যে ধর্ম আর মতের অনুসারী হোননা কেন এক বাক্যে এটা মানা উচিত “আল্লাহ বা ঈশ্বর যাই বলুন তিনি এক ও অদ্বিতীয় , অনাদি , অনন্ত
ও চিরঞ্জীব” । আসলে
মানুষের ছোট জ্ঞানে বা সীমাবদ্ধ জ্ঞানে স্রস্ঠা কি এটা বোঝা অসম্ভবই শুধু নয় , বিজ্ঞানসম্মতভাবে এটা প্রমাণিত সত্য যে
মানুষের দেখা , শোনা , ও কল্পনার ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে । তবে এখানে বিভিন্ন
ধর্মগ্রন্থে ও অনলাইন ঘেটে পাওয়া পাওয়া কিছু উদাহরণ বা মতবাদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ।
(326)
**** ভুত প্রেত রহস্য – ভুত প্রেত এসব বোঝানোর জন্য ও
কিছু প্রচলিত কুসংস্কার ও গল্পের উদ্ভব করেছিলাম। তড়িৎ চুম্বকীয় বিজ্ঞান মতবাদ ,
বিভিন্ন রশ্মির ভিতর দিয়ে পৃথিবীর ভিন্ন রুপ দেখা, মানুষের দৃষ্টিবিভ্রম , মনের ভয় , ভুতের এলাকার
ছদ্মবেশে কতিপয় মানুষের অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটন এর জন্য তৈরিকৃত যায়গার যুক্তি
ও তুলে ধরেছিলাম । যুক্তি তুলে ধরেছিলাম ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় , মানসিক বিকৃতি , এবং
সবশেষে ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো কেউ তাদের চোখ বা মস্তিস্কের গঠনের সুক্ষ বাতিক্রম বা
ত্রুটির কারনে এমন কিছু দেখতে পায় যেটা আমরা দেখিনা । সত্য হোক মিথ্যা হোক , ভুতের
ভয় একাকী মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি বা জেনেটিকালী । ভুতের গল্প , নাটক এবং সিনেমার
আবেদন আধুনিক যুগেও আরো অনেক বছর টিকে থাকবে বলে বিনোদনপ্রেমীদের মাঝে বলে আমি
বিশ্বাস করি ।
**** তাবিজ – এটা বিশ্বাস
করিনা বললেই চলে । তবে এটাও দীর্ঘকাল চলে আসছে মানুষের মাঝে । এর নকশা গুলোর
অদ্ভুত সাংকেতিক চিহ্নগুলোর কোন পাঠোদ্ধার করা যায় কিনা বা এগুলোর মানে কি সেটা
নিয়ে আলোচনা করেছিলাম ।
**** জন্মান্তর – জন্মান্তর এবং Doppelganger ব্যাপক আলোচনা ছবি
সহ করেছিলাম । এখন আপনার এটা জন্মান্তর বলে বিশ্বাস করবার দরকার নেই । শুধু মাত্র
কাকতালীয় মিল , প্রকৃতির খেয়াল বা একসিডেন্টালী রিপিট বলে মনে করুন ।
**** ভিনগ্রহী প্রাণী বা এলিয়েন – এটা নিয়ে ফ্লাইং সসার নিয়ে আলোচনা করে রসাত্মক গল্প বানিয়ে সময় নষ্ট করতে
পারতাম । কিন্তু তা না করে বলতে চেয়েছি কোরান সহ বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে ভিনগ্রহীদের
অস্তিত্ত্বের কথা উল্লেখ আছে । প্রশ্ন হল ভিনগ্রহীদের আমরা দেখতে পাচ্ছিনা কেন? এর
কারন হল আমাদের মাত্রার সীমাবদ্ধতা, আমরা যে মাত্রাতে বসবাস করি তারা হয়তো আরো
বেশি মাত্রাতে বসবাস করছে ।আবার একটা নিজস্ব যুক্তি দেখিয়েছিলাম যে আমরা যে এলিয়েন
খুজছি সেটা আমাদের মত করে না ভাবতে, এলিয়েন হতে আমাদের মত শরীর হতে হবে, খেতে হবে বা অক্সিজেন নিতে হবে এমন নয়। এলিয়েন সম্বন্ধে আমাদের খোজার ধরন ও দৃষ্টিভঙ্গি বদল করা উচিত ।
(327)
প্রাচীন সভ্যতাতে আকা কিছু অদ্ভুত
আকৃতির ছবিও দিয়েছিলাম । আবার তারা হয়তো মানুষের ছদ্মবেশে আমাদের সাথেই আছে । আবার
হতে পারে আমাদের থেকে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে লক্ষ বছর এগিয়ে ।পবিত্র কোরআন এ উল্লেখিত জ্বীন ই
হয়তো এলিয়েন ।
**** পৌরাণিক কাহিনী ও মিথ - পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ গুলো কিভাবে পুরাতন হয় , মানে জলজ্যান্ত সত্য ইতিহাস
কিভাবে হাজার হাজার বছর ধরে পড়ে থাকে , গুরুত্ত হারাতে হারাতে গুরুত্বহীন হয়ে
একসময় মিথ বা পুরান হয়ে যায় । পুরাতন সমাধিক্ষেত্র বা পুরাতন স্থাপনার উপর কিভাবে
নতুন সভ্যতার ইমারত গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে ০২ হাজার বছর পর আবার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া
যায় সেটাই দেখিয়েছি এবং মহাকাব্যগুলোতে উল্লেখিত মিথগুলো যে শুধু মিথ নয় সেটাও
দেখিয়েছি ।
**** ইসলাম ধর্ম প্রসঙ্গে - অনেকে ভেবে বসতে পারেন বইটিতে পুরাণ ও খ্রিষ্টপূর্ব ঘটনাগুলো নিয়ে সব লেখা
হয়েছে কেন । এটা বিজ্ঞান ও অতীতের রহস্যভেদ মূলক বই । অনেকে ভেবে বসতে পারেন
মুসলিম হয়েও ভারতীয় ও গ্রীক পুরাণ নিয়ে কেন এত বিশ্লেষন ।বিজ্ঞান ও নৃতত্ব এবং
নিজস্ব মতের ভিত্তিতে হারানো ইতিহাসের সত্যতা প্রমাণের গল্প এই বইটি । ইসলাম ধর্ম
যেমন হযরত আদম আঃ এর থেকে প্রচলিত যেমন সব থেকে আদি ও সুপ্রাচীন ধর্ম তেমনি আবার
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নবুয়্যতের মাধ্যমে আসা সবথেকে আপডেটেড ধর্ম । যে
ধর্মের ইতিহাস নবী সাঃ থেকে সর্বসাকুল্যে ১৫০০ বছরের বেশি নয় এবং ধর্ম প্রবক্তা নবী
হযরত মুহাম্মাদ সাঃ ও তাঁর সময়ের সকল নিদর্শন , ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থ অক্ষত আছে
সেখানে সব ঘটনা ও যুদ্ধ ঐতিহাসিক সত্য । এবং সে গুলো সব বর্তমানের বিদ্যালয় থেকে
বিশ্ববিদ্যালয় পর্য্যন্ত আলাদা বিষয়
হিসেবে পঠিত হচ্ছে । এ ধর্মের কোন কিছুই মিথ হয়নি বা হবার পর্যায়েও যায়নি ,
সুনির্দিষ্ট ভাবে ইসলাম ধর্মের সকল খুটিনাটি প্রত্যেকটি ঘটনা কোরআন , হাদীস ও
সাহাবী এবং ইতিহাসবেত্তাদের দ্বারা প্রমাণিত সত্য হিসেবে সংরক্ষিত আছে ।
(328)
ফলে প্রচলিত কোন বিতর্ক বা মিথ ইসলাম ধর্মে নেই। এবং এই ধর্মে
পুরাণের মত চিত্তাকর্ষক গল্প ও রহস্য নেই । সেজন্য হিন্দুধর্মের মহাভারত ও গ্রীক
ইলিয়ড নিয়ে বিশ্লেষন এলেও ইসলামধর্মের কোন পক্ষ বিপক্ষ বাদানুবাদ আনিনি । কারণ
ইসলাম ধর্মের সমস্ত ঘটনা বাস্তব ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে । এই ধর্মের
কোন অমিমাংসীত রহস্য নেই , কোন কিছু বা কোন নগরী মিথ হয়ে যায়নি , এবং কোন কিছুই
কোন ঘটনা , যুদ্ধ বা দলিল গুরুত্ব হারায়নি,
যেহেতু এটা রহস্য নিয়ে লেখা বই সে জন্য ইসলাম ধর্মের মত দিনের আলোর মত
পরিষ্কার প্রমাণিত সত্য ধর্মের কোন ঘটনা লিখবার ও স্বল্পজ্ঞানে বিশ্লেষনের প্রয়োজন
বোধ হয়নি ।দয়া করে ধর্মীয় বিভেদের কিছু খুজবেননা আশা করি ।কারণ পুরাণগুলো শুধু
ধর্মীয় গুরুত্বের বই নয় , সুদুর অতীতে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের দলিল ও বটে
যদি হতাম টাইম ট্রাভেলার
মানুষ হয়তো
কোনদিন আলোর গতিতে ছোটার কোন যান আবিষ্কার করবে , হয়তো টাইম মেশিন আবিষ্কার করবে,
হয়তো কৃষ্ণগহ্বর ব্যবহার করে সময় ভ্রমনকারী বা টাইম ট্রাভেলার হয়ে যাবে। কিন্তু
এটা বর্তমানে শুধুমাত্র খাতা কলমে তত্ত্বগত ভাবে সম্ভব মাত্র ।বাস্তবে সম্ভবপর
হওয়াটাও কল্পনার অতীত একটা বিষয় এখনো। যে যাই বলুক না কেন, যে মতবাদে বিশ্বাসী হোক
না কেন , আমার ধারণা বা বিশ্বাস এই
পৃথিবীর উপর সভ্যতা যে কতবার সৃষ্টি হয়েছে ,কত সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে, আবার নতুন করে
গড়ে উঠেছে, কত সৃষ্টি এসেছে , আবার বিলুপ্তও হয়ে গেছে সত্য হওয়া সত্ত্বেও তার কোন
প্রমাণ নেই, কেমন ছিল তারা, কি রুপের দেখতে ছিল কে জানে। বিজ্ঞান যে কত রহস্যের সন্ধান মানুষকে দেয়নি , এই কথাটাটাও কেউ বিশ্বাস
করবেনা ।কারন বিজ্ঞান এমন একটা শাস্ত্র আর তার নীতি এমন যে সে শুধু যতটুকু বাস্তবে
প্রমান করে দেখাতে পারবে শুধু সেটুকুই সত্য বলে আমাদেরকে দেখাবে , আমাদেরকে
বিশ্বাস করতে বলবে , এটাই বিজ্ঞানের একমাত্র থিম
। যেহেতু আমাদের দেখা ও শোনার সীমাবদ্ধতা আছে , সেহেতু আমরা যদি কোনদিন
ডাইমেনশন অতিক্রমকারী জ্ঞান কোনদিন অর্জন করতে পারি তবে আমরা অনেক কিছু দেখতে
পারবো । হয়তো দেখা যাবে ডাইমেনশন
(329)
অতিক্রমকারী জ্ঞান নেই
বলেই আমরা বর্তমানে মঙ্গল ও শুক্রগ্রহে ভীনগ্রহীরা আছে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছিনা
, তারা তাদের নভোযান গুলো নিয়ে আসছে আমাদের পৃথিবীতে কিন্তু ,আমরা দেখতে পাচ্ছিনা
। খোদ আমাদের পৃথিবীতে অনেক অজানা সৃষ্টজীব আমাদের পাশ দিয়ে ঘুরছে আমরা দেখতে
পাচ্ছিনা , পৃথিবীর অনেক সৃষ্টির অনেক কথাও শুনতে পাচ্ছিনা আমাদের ডাইমেনশন ,
দৃষ্টি ও শ্রাব্যতার সীমাবদ্ধতার কারণে ।আবার হয়তো অনেক সৃষ্টি আমাদেরকেও দেখতে
পাচ্ছেনা ।আবার শোনা যায় পৃথিবীতে যে ঘটনা ঘটছে , যে কথা বা শব্দ হচ্ছে সব নাকি
মহাকাল সেভ করে রাখছে ।পৃথিবীর যত স্মৃতিধারক যন্ত্র আছে সেগুলো সবই তড়িৎ ও চুম্বক
ব্যবহার করছে ।তাহলে মহাবিশ্বের তড়িৎ চুম্বক ক্ষেত্র কি সেই কাজ করছে , যদিও এই
ক্ষেত্রের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক কাজ আছে ।যদি কোনদিন টাইম মেশিন আবিষ্কৃত
হয় বা টাইম মেশিন আবিষ্কার অবধি মানবজাতির অস্তিত্ব থাকে তবে অনেক কিছুর সমাধান
হয়তো তখন হয়ে যাবে ।প্রাচীন হারানো অনেক সভ্যতা আটলান্টিস , ভারতীয় বা মিশর সভ্যতা
বা তাদের কালোজাদু শুধু বিজ্ঞান নয় , বিজ্ঞানের উপরে কিছু হয়তো ধরে ফেলেছিল ।যেটা
বর্তমান বিজ্ঞান বিশ্বাস করে , কিন্তু স্বীকার করেনা , লাগাতার প্রচেষ্টা হয়তো
বর্তমান বিজ্ঞান গোপনে সেটা ধরবার জন্য করে যাচ্ছে ।পৃথিবীতে বিজ্ঞান সব কিছুর
ব্যাখ্যা দিতে পারবেনা , কিন্তু তাই বলে , ভাগ্য , অদৃশ্য , অতিপ্রাকৃত ,
স্রষ্ঠা বলে কিছু থাকবেনা এটা আপনি আমি ও
বিজ্ঞান না মানলেও থাকবে , এই ধ্রুব সত্যগুলো
মিথ্যা হয়ে যাবেনা । মাঝে মাঝে নিজেকে ট্রাভেলিং সোলজার বা
কসমিক ট্রাভেলার মনে হয়, মন ও দৃষ্টি দুইই উদাস হয়ে যায় , মহাশূন্যের অসীমে
বিলীন হয়ে যায়। পৃথিবী নামক মহাউপাখ্যানের হারিয়ে যাওয়া পৃষ্ঠাগুলো
খুজে পেতে ইচ্ছে করে ।
মনে মহাকালের সীমা অতিক্রমকারী প্রশ্ন
জাগে, টাইম মেশিনে বসে টাইম ট্রাভেলার হয়ে পৃথিবীর হারানো সুরের শ্রোতা আর
মহাকালের গর্ভে বিলীন হওয়া সুদুর অতীতের হারানো সময়ের দর্শক হতে বড় ইচ্ছা হয় ,
অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পেতে ইচ্ছা হয় , আমার
পূর্বপুরুষদের মুখশ্রী , হাজার হাজার বছর আগের সম্রাট আলেকজান্ডার দি গ্রেট, টাইগ্রিস , ইউফ্রেটিস , পদ্মা , মেঘনা,
গঙ্গা , যমুনা
(330)
, স্বরস্বতী , ঝিলম ,
ইরাবতী , গোদাবরী , কাবেরী , জলঙ্গী , নীল
, অ্যামাজন , আমুর কি একই সুরে একই ছন্দে বয়ে যেত যেখানে ? রেবতী , স্বাতী , রোহিণী রাতের আকাশের অলংকার
হতো ? , ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান মরুর বুকে শ্যামল ছায়া , মিশরের ফারাউ এর যুগ , অঙ্গ –বঙ্গ-কলিঙ্গ
, গৌড় , বরেন্দ্র , সমতট ,চন্দ্রদ্বীপ , কামরুপ ,
এর সেই রূপকথার দিনগুলোতে ফিরে যেতে
ইচ্ছে হয় , সেই প্রাচীন তাম্রলিপ্তি বন্দর , মগধ , মিথিলা , অজন্তা-ইলোরার গুহা , উজ্জয়নি , বারানসি ,
গঙ্গারিডি , হস্তিনাপুর , হাজার হাজার বছর
আগের সেই অযোদ্ধার রামচন্দ্রের কথিত সত্য যুগ , দ্বাপর যুগের কৃষ্ণের দ্বারকা নগরী , অজন্তা ইলোরার গুহা
গুলো আর তার নকশা গুলো কে একেছিল কে জানে , হযরত মুসা আঃ আর ফেরাউন (২য় রামসেস
মতান্তরে কাবুস )এর শেষ লড়াই এ নীল নদের পানি দুভাগ হওয়া , হযরত নুহ আঃ এর
মহাপ্লাবন , সুলাইমান আঃ এর বিস্ময়কর সেসব মোজেজার যুগ ,
সর্বকালের সেরা মানব হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর জীবদ্দশার মক্কা-মদিনা , এক বারের জন্য
, এক পলকের জন্য সর্বকালের সেরা মহামানব এর মুখশ্রী দর্শন , মোঘল সাম্রাজ্যের সেই
দিনগুলি , আর আজকের বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসের রাজসাক্ষী হতে বড় ইচ্ছা করে । যদি
একটা টাইম মেশিন আবিষ্কৃত হতো ! টাইম ট্রাভেলার হয়ে পৃথিবীর আর মহাকালের হারানো
পাতাগুলো খুজে কি পাবে পিয়াসী মানব কখনো ? । হাজার লক্ষ বছর
বছর আগের কত বুদ্ধিমান সৃষ্টি এসেছে , আমি যে শহরে বসবাস করছি সেখানে কি ছিল
জানিনা , আজকে আমি যেখানের আলো বাতাসে লালিত , সেটা সুদুর অতীতের কোন লীলাক্ষেত্র ছিল কে জানে
, প্রবাহিত হতো কি নাইলের মত কোন খরস্রোতাস্রোতস্বিনী
নদী , পশুপাখির গর্জন আর কলতানে মুখরিত হতো কি নিবিড়
আর গহীন কোন অরণ্য , সেই
অদেখা , মহাকালের গর্ভে বিলীন হওয়া হারানো দিনগুলোতে ফিরে যেতে বড় ইচ্ছে করে ,
মনের গহীনে হারানো দিনের হারানো সুর তোলে কোন বাশরী , সে সুর আমার কত জনম জনমের
চেনা সুর , হারানো দিনের হারানো সুর । বিভূতিভূষণের আরণ্যক
এর অরণ্যপ্রেমী নায়ক এর মত ভরা পূর্ণিমার রূপালী চাঁদনী ভরা জ্যোৎস্না রাতে ঘোড়ার
পিঠে চড়ে দিগন্তবিস্তৃত মাঠে এখনকার যান্ত্রিক জগৎ ছেড়ে অকৃত্রিম প্রকৃতির
সৌন্দর্য্যে বিলীন হয়ে যেতে চায় এ উদাসী মন ।
(331)
আপনি এক ও অদ্বিতীয়,সারা পৃথিবীতে আপনার বান্দারা কত নামে আপনাকে ডাকি আমরা । হে আল্লাহ , হে প্রভু , হে ঈশ্বর , হে ভগবান , হে গড আপনি কে
আমরা জানিনা, কে আমি, কি আমার পরিচয় কোথা থেকে এলাম , কেন আমাদের উৎপত্তি রহস্যের আড়ালে লুকানো , কোন
নামে আপনাকে ডাকলে খুশি হন , সাড়া দেন তা আমরা জানিনা সর্বশক্তিমান মহাপ্রভু ,
আমরা কেউ কোনদিন আপনাকে দেখিনি,
অর্থ-বিত্ত বা পার্থিব বা মহাজাগতিক সবকিছুই মিথ্যা হয়ে যায় কয়েকটা প্রশ্নের কাছে
কয়েকটা রহস্যের কাছে তাহলো আমি কে ? কোথা থেকে এলাম ? কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন
? কেন এই জগতের সৃষ্টি ? মহাবিশ্বের শেষ কোথায় ?হে স্রষ্ঠা মানবজন্মে , মানবচক্ষে,
মানব মস্তিষ্কে আপনাকে দেখতে বা অনুধাবন করতে পারা যাবে কি কখনো, আপনাকে অনুধাবন
করতে পারাটাও কি সম্ভব, হে এই মহা সীমাহীন
বর্ণিল মহামায়াময়, অপার্থিব সুন্দর , অসীম মহা জগতের মহাস্রষ্ঠা, এ যে বান্দা হয়ে
আমাদের মহা চাওয়া, মহা ধৃষ্টতা, প্রত্যেক অনুসন্ধিৎসূ বান্দার মহাকালের মহা চাওয়া ।
সৃষ্টি জগত আর বিজ্ঞান নিয়ে যত ভাবি , আর যতই সৃষ্টি রহস্যের ভিতর ডুব দেই ,
মহাকালের সব অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো যখন মাথাতে এসে ভিড় করে আর তখন মানবের স্বল্পক্ষমতার
এই মানব মস্তিষ্কটা যেন রহস্য নিতে নাপেরে অবশেষে অবশ অকেজো
হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। আই জাস্ট এ কসমিক ট্রাভেলার , আই জাস্ট এ ট্রাভেলিং
সোলজার , নট মোর দ্যান এনিথিং ।
আমার ভাবনা, আমার কল্পনার ক্ষমতা যেখানে শেষ হয়ে যায় , সব কিছু ভুলে তখন মনে
চরম এক মহাসত্য আমার সামনে হাজির হয়ে বলে ওঠে
আল্লাহই সব বাকি সব মিথ্যা ,আনমনে গেয়ে উঠি রক লিজেন্ড আইয়ুব
বাচ্চুর কাফেলা অ্যালবামের সেই গানটা -Ò
আমি যে গুনাহগার, অধম ও বান্দা তোমার , দয়া করো হে প্রভু
আমারে, আমার এই জীবনটা রেখেছি তোমার পায়ে, ক্ষমা করো হে প্রভু আমারে , বুকে নাই
শান্তি , সারা মনে ক্লান্তি, কোন কিছু হয়নি করা এ জগতে হায়, যা কিছু করেছি ,
না বুঝে করেছি , অবুঝ ও শিশু ভেবে ক্ষমা করে দাও , জন্ম মৃত্যু সত্যি, বিশ্বাস
মুক্তি, সব কিছু তোমার হাতে তুমি যে মহান, তুমি সর্ব শক্তিমান, এ জীবন তোমার দান,
মানুষের কি সাধ্য আছে করে অসম্মানÓ
******সমাপ্ত******
(332)
.