Friday, June 3, 2022

টাইম মেশিন আর অমরত্ব আবিষ্কারের যত অসুবিধা

বিজ্ঞান তার আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের জীবন ব্যবস্থাকে করেছে অভূতপূর্ব সুবিধামন্ডিত ও সাফল্যমন্ডিত ।অভূতপূর্ব বললাম এ জন্য যে এই পৃথিবীতে আজ থেকে ৩০ বছর আগেও মানুষ যা আবিষ্কার হবে ভাবতোনা তা আবিষ্কার হয়েছে এবং মানুষ তা ব্যবহারও করছে ।১০০ বছর আগে যা আবিষ্কারের কল্পনা করাও ছিল অসম্ভব সেগুলো এখন আবিষ্কার হয়ে অলরেডি মানুষ ব্যবহার করছে ।এ প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ বলি , আমার নানা ছিলেন বিজ্ঞান ,ইতিহাস,ধর্ম এসব বিষয়ে আগ্রহী । আমার সাথে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞান প্রসঙ্গে আলোচনাতে বসতেন আমারও সমান আগ্রহ এই বিষয়গুলোতে ।তো নানার একটা কথা সব সময়ই আমার মাথায় খেলে , ((এই কথাটা যখন বলতেন তখন আমার বয়স ১৫ )) তোদের বয়সে আমরা কি কখনো ভেবেছি শেষ বয়সে মোবাইল নামক একটা আবিষ্কৃত যন্ত্র পাবো ?



 আমার নানার বয়স এখন ৭০ ।

তো পৃথিবীতে এখন এক সময়ের ঠাকুরমার ঝুলি বা আলিফ লায়লা এর হাজার বছর ধরে চলে আসা রূপকথা গুলোতে যেসব জিনিস গল্পচ্ছলে বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি মনোরঞ্জক কথা ছিল , সেগুলো কিন্তু আবিষ্কৃত হয়ে গেছে ।যদি বলেন কেমন করে তবে বলি --

ধরুন আলিফ লায়লাতে ডাইনি যাদুকরী মালিকা হামিদা যাদুর আয়নায় তালিব কদ্দুর এলো দেখতো বা আগের রূপকথা সাহিত্যে আমরা দেখতাম যাদুর আয়নায় ডাইনীরা কাউকে দেখছে , বা দুরের কোন দেশে কি হচ্ছে তা দেখতো ।যদিও এগুলো ছিল নিছক মিথ্যা আকর্ষনীয় গল্পকথা ,এগুলো অবশ্য অবহেলার কিছু নয়, বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সংকলনও বটে ।এখন দেখুন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা , টেলিভিশনের লাইভ ব্রডকাস্ট সেই যাদুর আয়নার বাস্তব রূপ দিয়েছে ।

আবার আমাদের সকল ধর্মগ্রন্থ গুলোতে বেহেশত-দোযখ//স্বর্গ-নরক//heaven and hell এর কথা উল্লেখ আছে ।যার মূল কনসেপ্ট বা থিম হলো ভালো কাজ করলে সৎ পথে চললে বেহেশত আর অসৎ কাজ করলে দোযখ । আপনার আমার সমস্ত কাজ ইসলাম ধর্মমতে দুজন ফেরেশতা কিরামান কাতিবিন আমাদের সমস্ত কাজ লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছেন যা আমাদের কে হাশর ময়দানে দেখানো হবে ।

ব্যাপারটা এক সময় শতাব্দী প্রাচীন অবিশ্বাসী মানুষ মাত্রই বিশ্বাস করতো ভিডিও ধারণ বা আমি যা করছি এই মূহুর্ত ধারণ করে রাখা সম্ভব না ।কিন্তু অনুসন্ধিৎসূ বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষের গবেষনাতে ভিডিও সিস্টেম আবিষ্কার হয়ে গেলো বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে । তো এবার ভাবুন যেটা বান্দার দ্বারা সম্ভব , সেটা স্রষ্ঠার কাছে কোন ব্যাপারইনা ।বিজ্ঞান যত ডেভেলপ করছে স্রষ্ঠাতে বিশ্বাস করা তত সহজ হচ্ছে ।

পনি আমি আস্তিক-নাস্তিক-মুসলমান-হিন্দু-খ্রিষ্টান-ইহুদী -সাদা-কালো নানা জাতির নানা পরিচয়ের হতে পারি ।আমাদের ধর্মভেদে নানা মত বিরোধ থাকতে পারে ,ধর্ম পালনে উদাসীনতা ও গাফিলতী থাকতে পারে।কিন্তু স্রষ্ঠার অস্তিত্ব সম্বন্ধে অবিশ্বাষ হলো অবৈজ্ঞানিক এবং স্বল্প জ্ঞানের পরিচায়ক ।

তো আজ যদি বা ভবিষ্যতে কখনো টাইম মেশিন আবিষ্কার হয় তবে কি কি হতে পারে আসুন কল্পনা করি ।আমরা এক টানে অতীত বা ভবিষ্যতের যে কোন সময় চলে যেতে পারবো । এতে হবে কি জানেন ৫০০০ বছর আগে কোন রাজা কি করতো ? মিসরের পিরামিড নিয়ে ইউটিউবের ভিডিওগুলো যা বলে তাই ঠিক ? না কি আসল সত্য অন্য ?আমি বা আপনি বিয়ের আগে কোন মেয়ের সাথে ডেটিং করেও দিব্যি বউয়ের কাছে ভালো সেজে আছি কিনা বা বউয়ের এ রকম কোন ফল্ট আছে কিনা সেটা আসবে , ইতিহাসের আসল সত্যটা কি ? কোন রাজা বা শাসক ভালো ছিলেন সেটাও আসবে ।কে কাকে মেরে ফেললো তার তথ্য আসবে ,সত্য উদঘাটন হবে , অন্যদিকে সাধারণের ব্যাক্তিগত প্রাইভেসি বলে কিছু থাকবেনা । তবে এসবের দিক থেকে টাইম মেশিন আবিষ্কারে লাভ আর ক্ষতি দুটোই 100 এবং 100 । তবে টাইম মেশিন আবিষ্কার না হবার সম্ভাবনাটা বেশি , কারণ এটা আবিষ্কারের থিম হলো আলোর থেকে দ্রুত গতিতে ছুটতে হবে , সেকেন্ডে ০১ লাখ ৮৬ হাজার মাইলের বেশি গতি , is it possible ? যদিও পসিবল হয় তবে সেটা চলার মত স্পেস কোথায় ? তাহলে এমন ম্যাটেরিয়াল খুজে বের করতে হবে যেটা কোন কিছুর সাথে সংঘর্ষ হবেনা , আর একটা কথা আছে আমরা আকাশে যে তারাটা আজ দেখছি বা দেখা যাচ্ছে সেটা থেকে সেকেন্ডে আলোর গতিতে পৃথিবীতে আলো আসতে ২০০০ বছর সময় লেগেছে ,এখন কথা হলো তারাটা কি এখনো জীবিত আছে ? আবার পৃথিবী থেকে বিচ্ছুরিত আলো যদি সমদুরত্বের গ্রহতে যায় , সেখানে যদি কোন মানুষ থাকে তবে সে পৃথিবীর এই ২০২০ সালের হিসেবের সময়ে দেখবে সেই যিশু খ্রিষ্টের যুগ , রোমান গ্রীক শাসনের যুগ , মানে আজকের আপনাকে আমাকে সে দেখবে ৪০০০ সালে গিয়ে , মানে আরো ২০০০ বছর পর !!!।এ না হয় অতীত বা বর্তমান দেখলো ,ভবিষ্যত কিভাবে দেখবে ? ভবিষ্যত তো তাই যা আপনি আমি নিজেও জানিনা ,আপনি আমি যা করবো তাই তো ভবিষ্যত ।যদি ভবিষ্যত দেখা যায় তবে বুঝতে হবে আপনি আমি এই পৃথিবীতে অন্য কোন গ্রহের মিরর ইমেজ ।মূল আপনি আমি সেই গ্রহে ।তবে টাইম মেশিন আবিষ্কার নাও হতে পারে ।বিভিন্ন আর্কিওলজিস্ট আর এনথ্রোপলজিস্ট গবেষণা করতে গিয়ে গত শতাব্দী থেকে একটা সিদ্ধান্ত মনে মনে সবাই পোষণ করেন , এই আমরা যে মানব তার অনেক আগে অনেক অনেক উন্নত মানবসভ্যতা ছিল , জ্ঞান বিজ্ঞানে আমাদের থেকেও সেসব সভ্যতা ডেভেলপ্ড ছিলো ।তারা ধবংশ হয়েছে জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম সীমাতে পৌছে ।আমরাও কিন্তু সেই পর্যায়ে পৌছে গেছি ।আমরাই হবো এবার আমাদের ধবংশের কারণ ।কারণ পারমাণবিক বোমা , মানুষের অসীম লোভ , মানবিকতা সামাজিকতার ক্ষয় , প্রযুক্তির অপব্যবহার যেমন ভিডিও এডিটিং এ ডিপ ফেক টেকনোলজির উদ্ভব । এখন তো ভাবছি এই পৃথিবী চাষ করতে এসেছে আবার চলেও গেছে অনেক আদম । আমরা এই পৃথিবীর কত নম্বর চাষী প্রজন্ম কে জানে ????পৃথিবী নামটা আসলেই সেই , নামটা শুনতেই নায়কের মত লাগে ।

বার বলি যদি মিলতো অমরত্বের ঔষধ ।কিংবদন্তী আছে হযরত ইলিয়াস আঃ এবং হযরত খিজির আঃ আবে হায়াতের(Elixir) সন্ধান পেয়েছিলেন ।তা পান করে তারা নাকি অমর ছিলেন ।যায়গাটা ছিল পারস্যের বা বর্তমান ইরানের পাশে কোন অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চল ।যেখানে জ্বীনরা বসবাস করতো আর অন্ধকার থাকতো ২৪ ঘন্টায় ।তো এই কাহিনী সত্য কিভাবে হতে পারে ।অসম্ভব বলে কিছু হয়না ।হতে পারে এই পৃথিবীতে সবই । প্রায় ০৪ হাজার বছর গ্রীক লোককথার ইকারুস এর আকাশে ওড়ার ডানা আর হযরত সোলায়মান আঃ এর আল্লাহর কুদরতে উড়ে চলা যানের কল্পনা রাইট ভ্রাতৃদ্বয় ১৯০৬ এ এসে বাস্তব রূপ দেন । ১০ হাজার বছর থেকে ০৪ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে যেখানে মহাসাগর ছিল সেই সাহারা মরুভূমি আজ রাশিয়ার আয়তনের মত সমান যায়গায় পাথরফাটা রোদ আর বালি নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।তো সেখানের প্রাচীন লোককথায় বা পূরাণে যদি বড় সাগর ,বন বা তিমি মাছের কথা থাকে তা অবাস্তব নয় ।আবার সুউচ্চ হিমালয় বা কৈলাশ পর্বতের নিচে মনুষ্য বসতের যেসব মিথ আছে সেগুলো কতটুকু সত্য কে জানে ? আবার এখন যেমন উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুতে মাসের পর মাস অন্ধকার থাকে ,আবার মাসের পর মাস আলো থাকে পর্যায়ক্রমে । এই যেমন ০৮ হাজার বছর আগে যশোর , ফরিদপুর এই অঞ্চলগুলোর মাটি ছিলোনা ।কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল ২৫০০০ বছর আগে গঠিত । তো বুঝুন এ রকম অন্ধকার অঞ্চল পৃথিবীতে কালেভেদে থাকা বিচিত্র কিছু নয় ।এই পৃথিবী একেবারে বোমার মত ব্লাস্ট হয়ে বাতাসে মিশে না গেলে পৃথিবীর জীবজগৎ ধবংশ হবেনা ।ধরুন পৃথিবীর বিভিন্ন দূর্গম বনের মানুষেরা এসে স্রষ্ঠার ইচ্ছায় সভ্যতার পত্তন করবে ।আমরা ধবংশ হয়ে যাবো , এ রকম হয়তো ব্যাপারটা । তো যদি অমরত্ব পাই তবে যা হবে ,বেঁচে থাকবো আজীবন ,মানুষ পরকালের ভয় করবেনা , চিরযৌবনা থাকবে ,একঘেয়েমী কাটাতে কত জীবনসঙ্গী চেন্জ হবে ঠিক নাই ,সন্তান জন্ম দিলে বাসযোগ্য অসংখ্যা পৃথিবী খুজতে হবে ,আপনি ভাবুন পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত জন্মগ্রহনকারী কেউ যদি না মরতো তবে অবশ্যই মঙ্গলগ্রহে যেতে হতো ।আবার এই পৃথিবীতে মানবজাতির ভোগ উপভোগ এর যত খাবার ,পোশাক ,সব কিছুরই কিন্তু একটা স্বাদের সীমাবদ্ধতা ও একঘেয়েমি রয়েছে ।।

তাহলে কি চিরকাল বেঁচে থাকতে না পারার আক্ষেপই মানবজীবনকে এত সুন্দর করে রেখেছে ?একটা সময় কি পরিসমাপ্তিই সুন্দর? ?আমার ব্যাক্তিগত অভিমতে তা মনে হয়না ।মনে হয় অমরত্ব থাকলে সমস্যা ছিলোনা ,যুগ বদলায় ,বদলায় মানুষের আবিষ্কার আর জীবনযাত্রা।। যুগে যুগে মানুষ নতুন জীবনধারা আর প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতো ।যুগে যুগে জীবনের আলাদা মানে আসতো ।তখন হয় জনসংখ্যা বংশবিস্তার রোধের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রাখতে হতো ,আর না হয় আবাসযোগ্য নতুন পৃথিবী খুজতে হতো ।আর পৃথিবীর মন্দ মানুষেরাও আপনার সাথে পেরে উঠতো না ,কারন আপনি তো মারা পড়তেন না । ফলে মন্দ মানুষেরা কোনভাবেই লাঠি বা জনবল দিয়ে আপনার নায্য অধিকার বঞ্চিত করতে পারতোনা ।। ...............................

আপনারাই বলুন অমরত্ব না দুদিনের দুনিয়া ?কোনটা ভালো ?

NO MORE TODAY , BEST OF LUCK