Friday, June 3, 2022

পীর হযরত বাগানশাহ (রহঃ)এর মাজার



পীর হযরত বাগানশাহ রহঃ এর মাজার শরীফ ,শাহপুর ,আড়পাড়া,যশোর


 কয়েক শতাব্দী প্রাচীন কিংবদন্তীর পীর হযরত বাগানশাহ (রহঃ) এর মাজার শরীফ এর কথা কেন জানিনা যশোর র কোন ইন্টারনেট ডাটাবেজ এ বা গুগল সার্চ এ কোন তথ্য পেলাম না ।শৈশব এর ফেলে আসা গ্রামের স্মৃতিতে ভাস্বর এই মাজারটির নাম দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে নিচের চিত্রর মত দেখাবে তা হয়না ।



সেজন্য প্রথম বোধ হয় আমিই এ ব্যাপারে পোষ্ট করলাম । মূল যশোর শহর থেকে ৩.৫ কি.মি ভিতরে আড়পাড়া গ্রামে কিংবদন্তীর এই বুযুর্গ ও মহান সাধক পীর এর মাজার অবস্থিত ।ঠিক কতদিন আগে এ গ্রামে এ মহান সাধকের আগমণ ঘটেছিল সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য কারো কাছে নেই ।তবে, স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী আনুমানিক ৫০০ বছর আগে এ মহান সাধকের এ গ্রামে আগমন । এই কিংবদন্তী সাধক কে নিয়ে গ্রামে লোকমুখে বহু জনশ্রুতি প্রচলিত আছে ।সর্বশেষ হযরত বাগানশাহ রহঃ বংশধর হিসেবে তাঁর উত্তরপুরুষ জয়নাল ফকির রহঃ স্থানীয় পর্যায়ে তার কামালিয়াত দ্বারা চিকিৎসা ও ঝাড় ফুক এ বিশেষ সুনামের অধিকারী ছিলেন ।তিনিও ইন্তেকাল করেছেন আজ ১৩ বছর হলো । তবুও প্রতি বছর ০৫ ও ০৬ পৌষ ও ০৭ ই মাঘ ওরস শরীফ পালিত হয় এই মাজার শরীফে সাথে থাকে তাফসীর মাহফিল , অনেক সময় আয়োজনের খাতিরে তারিখ ও সময়সূচীর সামান্য পরিবর্তন হতে পারে । আজো এই গ্রামের মানুষ ও দুর দুরান্তের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ওরস মোবারকের দিন এবং বছরের বিভিন্ন সময় ভক্তিভরে এই মহান পীর বুযুর্গ সাধক হযরত বাগানশাহ রহঃ মাজার যিয়ারতে আসেন ।এই মাজার শরীফ বা পীরের ওরস শরীফ এ একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি যে , এখানে ওরসের দিনের তবারক এ তেমন জৌলুস লক্ষ্য করা যায়না , সামান্য মোটা চালের সাদা ভাত আর সুস্বাদু করে রান্না ডাল মানুষ ভক্তিভরে আহার করে , অনেক সময় আমরা বিভিন্ন যায়গাতে ওরস উপলক্ষ্যে যেমন পীরপূজা দেখি এখানে তেমনটা মোটেই দেখা যায়না , বসতবাড়িতেও নেই কোন জৌলুশের ছোয়া , এক কথায় সবকিছু একেবারে সাদামাটা ।




মাজার শরীফের পিছন থেকে







                                                   ওরসের পোষ্টার
ওয়াজ মাহফিল 



                                                  ওরস উপলক্ষ্যে রান্না






                            মাজার যিয়ারত এর লক্ষ্যে আগত সম্মানিত মা বোনেরা

তবারক পরিবেশন


                                        পীরের বংশধরদের বর্তমান বসতঘর

পীর বাড়ির বাঁশ কাঠের নির্মিত মসজিদের সামনে ওরস উপলক্ষ্যে আয়োজিত তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের স্থান

এই গ্রামের পথ


পীর বাড়ির গ্রামের জলাভূমি
জলাভূমি বা বিল বা বাওড় যা খুশি বলতে পারেন,,ওই দুরে সবুজ গ্রামের রেখা ,সেখানে যেতে মন চায়
কালের আবর্তে নেই সেই জলপ্রবাহ , এখন শীতের সময়ে ধানের চাষ হয়
শাহপুর মাদ্রাসা
গ্রামের অখ্যাত এই মাদ্রাসাটির ছবি না দিলেও চলতো । ছবিটা দিলাম একটা গল্প বলার জন্য ।এই যে মাদ্রাসাটা এটার পিছনে শাহপুর(আড়পাড়া)এর বাওড়।এখানে ছিল দুইশত বছরের পুরাতন একটা শিমুল তুলা এর গাছ । স্থানীয় ভাষাতে যাকে বলে মান্দার গাছ ।গাছটি ছোটবেলাতে মানে ২০০০ সালের পর বেশ কবছর দেখেছি । গাছটি অনেক মোটা ছিল ।ধরুন কেউ এই গাছটাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে ০৫ থেকে ০৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে এটাকে ঘিরে হাতে হাত মেলাতে হতো । তো এই গাছটা কিভাবে এখানে এলো এই নিয়ে গ্রামে একটা জনশ্রুতি প্রচলিত ছিল ।২০০ বছর আগের তৎকালীন সময়ে এই জলাভূমি এরকম স্রোতহীন জলজবৃক্ষে আবৃত মৃত জলাভূমি ছিলোনা ,ছিল ভৈরব নদের অংশ ।তো সে সময় নাকি একটা ছোটখাটো ব্রিটিশ জাহাজ এখানে এসে ডুবে যায় ।তখন জাহাজের লোকজন সাতরে কুলে উঠে আশেপাশের কোথাও হতে একটা শিমুল গাছের ডাল যোগাড় করে পুতে যায় চিহ্ণ হিসেবে ,পরবর্তীতে উদ্ধারের জন্য।পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় এটা বিরাট মহীরুহতে রূপান্তরিত হয় ।শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে গেছে ,গল্পের সেই ইংরেজ সাহেবরা তাদের প্রমোদ ভ্রমণতরী হোক আর ছোটখাটো বাণিজ্য জাহাজই হোক তা উদ্ধারে আর ফিরে আসার প্রয়োজন হয়তো মনে করেনি । কালের আবর্তনে গ্রামের মানুষর লোককথায় আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে গল্প হয়ে গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে । আজ সেই শিমুল গাছটাও নেই ।গ্রামে যাতায়াত ছিলোনা বেশ কয়বছর ।সম্ভবত ১০ থেকে ১২ বছর হলো গাছটি মারা গেছে।আসলেই কি ব্রিটিশ সাহেবদের এই কিংবদন্তীর গল্পটা সত্যি ????


বিক্রি করে চলে আসা  বাগানবাড়ি // ভিটাবাড়ি ।বৃক্ষপ্রেমী বাবার হাতে রোপন করা সেই ছোট্ট চারা গুলো আজ পরিণত বৃক্ষ । চোখ বন্ধ করলে আজো নিউরনের সেলুলয়েডের ফিতাতে ভেসে ওঠে শৈশবের সেই রঙিন দিনগুলো, ,কান পাতলে শুনতে পাই ছোট ছোট ভাইবোদের সেই কোলাহল ,২১ বছর আগের এই গল্প । জীবনের প্রয়োজনে, যান্ত্রিকতাতে ও ব্যস্ততায় গ্রাম অনেক আগেই ছেড়েছি। আজ এখানে সেই ঘর ,উঠান, রান্নাঘর, টিউবওয়েল কিছুই নেই ।মাঝে মাঝে ভাবি পৃথিবীতে আসলে আমাদের আগমন এক দক্ষ ডিরেক্টরের সাজানো এক সিনেমা স্ক্রিপ্ট এ অভিনয়ের জন্য ।পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা ।অভিনয় শেষ হয়ে গেলে অজানা যে ঠিকানা থেকে এসেছিলাম সেখানে আবার ফিরে যাবো । না থাকবে বাঁশ , না বাজবে বাঁশরী ।