Friday, June 3, 2022

প্রেম করে বিয়ে করে কেউ সুখী হয়না

 আমাদের সমাজে দেখা যায় একটা বিতর্ক আছে।প্রেম এর বিয়ে ভালো নাকি দেখাশোনার বিয়ে? মানে এরেন্জ ম্যারিয়েজ না লাভ ম্যারিয়েজ?

এক্ষেত্রে আসলে দেখা যায় সংসারের ক্ষেত্রে এরেন্জ ম্যারিযেজটাই ভালো।

কেন ভালো এবার সেটা বলি।মুল কথা হলো 



সাংসারিক কাজ আর টাকা কে অস্বীকার করে শুধু রুপ সৌন্দর্য বা যৌবনকে ভিত্তি করে যে সংসারজীবন শুরু হয় তার স্থায়িত্ব বেশিদিন থাকেনা।প্রেমের বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক তাই।

ধরুন একটা ছেলে আর একটা মেয়ে তাদের ভালোলাগা থেকে প্রেম শুরু করলো।এরপর লুকিয়ে কথা বলা, রাত জেগে ফোনে বা মেসেঞ্জারে কথা বলা, পার্কে খুব সুন্দর করে ছেলেটা ও মেযেটার কয়েকঘন্টা দেখা সাক্ষাৎ, কথা বলা। দুজন দুজনের রুপ আর কথার সেরাটা দিযে যায় দিনের পর দিন।ফলে দুজনের প্রতি দুজনের দিনের পর দিন ভালোলাগাটা বেড়েই চলে, আকর্ষণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। ফলে বিয়েটা আবশ্যক হয়ে পড়ে।

এবার বিয়ে হয়ে গেলো প্রেমিক জুটির। প্রথম কযেকটা দিন কথার জাদু আর শরীরের যাদুতে আর সারাটি জীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতিতে কেটে যায় দিন, জীবনটা কত মধুময়। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে একসময় বাস্তবতার আগমণ ঘটে। যে ছেলেটা প্রেমিকাকে সময় দিতো, দিনের পর দিন সে সংসারের প্রতিমাসের প্রয়োজনীয় খরচ আর সংসারের ভবিষ্যৎ বড় অংকের ফ্ল্যাট বা প্লট কেনার টাকা যোগাড়ের চিন্তায় স্ত্রীকে সময় দিতে পারেনা, সারাদিনের কর্মজীবনের ব্যস্ততা শেষে পেটে দুটো দানাপানি পড়তেই নিদ্রাদেবীর কোলে নিজেকে সমর্পণ করে।বউ ভাবে মানুষটা আগে কত ভালো ছিলো, কত সময় দিতো কত রোমান্টিক কথা বলতো, আর এখন সামান্য তরকারিতে লবণ কম বেশি হবার কারণে দুর্ব্যবহার করে। আর অনেক সময় দেখা যায় বেকার প্রেমিকের সাথে বিয়ে হলে বিয়ের পর সংসার না চললে তার সাবেক প্রেমিকা মানে বিযের পর বউই তার সাথে আর ভালো ব্যবহার করেনা, কারণ সংসার চালাতে লাগে টাকা। টাকা না থাকলে সংসার কিভাবে চলবে?  একজন নারী চায় ডেয়ারিং, কেয়ারিং, সলভেন্ট স্বামী। বিয়ের পর প্রেমিকা হয়ে যায় বউ। তার তো তখন শাহরুখ খান ভালো লাগবেনা ,তখন বৈষয়িক আদর্শের কাকাবাবু মুকেশ আম্বানীকে ভালো লাগবে।।এদিকে বিয়ের আগের সুন্দরী প্রেমিকাটা বউ হয়ে আসার পর কেমন যেন আগের মত সুন্দরী লাগেনা ।কারণ এটা তো সংসার,সব সেজে থাকার যায়গা বা ডেটিং প্লেস নয়।মুখে হাসির পরিবর্তে কেমন একটা মন মরা ভাব, এটা লাগবে সেটা লাগবের বাহানা ছাড়া আর কোন কথা নেই। আসলে বউ কিন্তু বিলাসিতার কথা বলেনা, সে সংসারের স্বাভাবিক চাল, ডাল, নিজের প্রয়োজনীয় একটা কাপড়, সাবান, ক্রিম এর কথাই বলে। ব্যাস হয়ে গেলো কলহের শুরু, এরপর ডিভোর্স। বিয়ের পূর্বের প্রেমটা হলো রোজার মাসের ঈদের মত। প্রেম করা অবস্থায় মনে হয়, ঈদের দিন তথা বিযের দিন কবে আসবে?  রোজার ঈদে কিন্তু ঈদের দিনের থেকে ত্রিশটা রোজাই কিন্তু বেশি মজার, ঈদের দিন এসে গেলে নামাজ পড়া হয়ে গেলেই ঈদের আনন্দ শেষ, বড় জোর দুপুরের খাবার খাওয়া পর্যন্ত আনন্দ স্থায়ী হয়। বছরে একটা দিনই ঈদের দিন বাকি সব কযদিন শাক পাতা খাবার সাধারণ দিন, এই সাধারন দিনগুলো যারা ভুলে প্রতিদিন কে ঈদের দিন মনে করতে যাবে তারা স্বাভাবিক ভাবে তাদের কল্পনার জগতে থেকে বাস্তবে এলে হোচট খাবেই এটা স্বাভাবিক।প্রেমের বিযের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই হয়, প্রেমের বিয়েতে কল্পনা আর বাস্তবে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকে, সেজন্য শেষে ডিভোর্সে গড়াতে পারে ব্যাপারটা।

কিন্তু কেউ যদি তাদের আর্থিক ও মানসিক ম্যাচুউরিটি অর্জন করে প্রেম করে বিয়ে করে তাহলে সমস্যা হবেনা আশা করি। ভাবে যদি একটা ছেলে সব সময় ক্লিন শেভড বা রোমান্টিক মুডে থাকেনা ,একটা মেয়ের পক্ষে সব সময় মেকআপ এ থাকা সম্ভব সয়, একটা মেযের বাহ্যিক পোশাকের মত তার চামড়াটা রঙিন বর্ণিল নয় ,জীবনে প্রত্যেকদিন ঈদের দিন নয়, রোজা, আর সংসার সংগ্রামের প্রয়োজন পড়ে।জীবনটা সিনেমার  শ্যুটিং নয়, যে প্রতিদিন আপনার প্রেমিক মোটরসাইকেল থেকে নেমে শাহরুখ বা সালমানের মত একটা এটিচিউড নিয়ে আসবে, আপনার ওয়াইফ এরও প্রতিদিন সেজে শ্রীদেবী সাজা সম্ভব নয়, একটা বাচ্চা হলেই ব্যাপারটা তো আরো কঠিন হয়ে যায়,   এই বাস্তবতাগুলো বুঝলে প্রেমের বিযেও স্থায়িত্ব পাবে।।

আর মা বাবার দেখাশোনার বিয়েতে আগে থেকেই ছেলের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে নেওয়া হয়, মেযের পূর্ব জীবনের খোজখবর সাংসারিক কাজ পারা না পারার খোজখবর নেওয় হয়।। ফলে অনেক সময় দেখা যায় প্রেমের বিযের মত বিযের পর আবার আরো প্রেমের খবর মেলেনা। ফলে সংসারের স্ট্যাবিলিটি  অক্ষুন্ন থাকে। ব্যাতিক্রম যে হযনা তা নয। প্রেম বা এরেন্জ ম্যারিয়েজ দুটোতেই ভালো মন্দ দুই রকম থাকে। তবে প্রেমের বিয়েতে দুর্ঘটনার অস্থিতিশীলতার হার বেশি।তাই সাজেস্ট করি যুগের ট্রেন্ড প্রেম বাদ দিয়ে পড়াশুনা করুন, বা কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ুন, তাহলে জীবনসঙ্গীনি এমনিতেই মিলে যাবে, আর মা বাবার পছন্দে এরেন্জ ম্যারিযেজ করুন। বাঙালি এখন এমন যে ছেলের পেটে ভাত নেই, ক্লাসের পড়াশুনাই মন নেই, ভবিষ্যৎ এর ভাবনা নেই, অথচ একটা প্রেম মাস্ট লাগবে।। মেয়েদের অবস্থাও তাই পিউবার্টি আসতে না আসতেই টিকটক আর প্রেম শুরু করে। ছেলে হোক আর মেয়ে হোক সবাইকে মনে রাখতে হবে বাস্তবতা কে অস্বীকার করে প্রেম স্থায়ী হয়না, জীবন ফুলশয্যা নয়, আর টাকা না থাকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায় এই দুটো কথাকে ভালোনাবাসতে পারলে সংসার জীবনে কেউ সুখী হতে পারবেনা।। সবাই সুখী হোন,, প্রেম করে বিয়ে করে সুখী হোন,, মা বাবার পছন্দে বিয়ে করে সুখী হোন,, কিন্তু মাথায় ওই তেতো কথা দুটো রাখুন, তাহলে সুখী হবেন নিশ্চিন্তভাবেই।।কথা দুটো হজম করতে তেতো হলেও ফল মিষ্টি।